#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:২১
আন্টি বাসায় ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলেন।
পুরো বাসা অন্ধকার।উনি বার কয়েক ডাকলেন,
-“রোদ্দুর? কই তুই বাবা! ”
তাও উনি কোনো উত্তর পাচ্ছেন না।চারিদিক অন্ধকার। আবার ডাকলেন,
-“রোদ্দুরের আব্বু?রোদ্দুর? ”
হঠাৎ লাইটটা জ্বলে উঠলো।আর আমরা সবাই মিলে বলে উঠলাম,
-“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ!”
আন্টি অবাক হয়ে গেলেন আমাদের সবাইকে একসাথে দেখে।রোদ্দুর স্যার ওনার দিকে এগিয়ে গেলেন।আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-“হ্যাপি বার্থডে মা।”
আন্টিও ছেলেকে জড়িয়ে বললেন,
-“থ্যাংক ইউ।এত বড় সারপ্রাইজ পাব আমি ভাবতেও পারিনি।”
আন্টি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“কেমন আছেন আপা?”
আম্মুও হেসে উত্তর দিলো,
-“এইত আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?”
-“দেখতেই তো পারছেন।এমন ছেলে যার আছে সে কি আর খারাপ থাকতে পারে?”
আংকেল এসে আন্টিকে বললো,
-“আর আমি যে এত কষ্ট করে এতকিছু আরেন্জ করলাম?”
-“সে তুমি যাই করো।প্ল্যানটা যে আমার রোদ্দুরের এটা আমি খুব ভালো করেই জানি।”
রোদ্দুর স্যার হেসে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরলেন।আন্টি এগিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন।আমি সালাম দিলাম।তারপর আবারো উইশ করলাম।
-“বাহ!আমাদের অতসী তো বড় হয়ে গেলো। ”
আমি কবে ছোট ছিলাম!সেদিনও না দেখা করে গেলাম।হয়ত উনি আম্মুকে সেটা বুঝতে দিতে চান না।অবশ্য আম্মুও বকবে জানলে যে আমি এখানে এসেছিলাম।তাই আমিও চুপ করে রইলাম।শুধু হাসলাম।উনি দ্বীপকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“সায়ন্তিকে তো চিনলাম। ইনি কে?”
আম্মু এসে বলতে লাগলো,
-“এটা আমার ননদের ছেলে।সায়ন্তির বড় ভাই।”
-“ওহ আচ্ছা। তুমিই তবে দ্বীপ।”
আমি অবাক হয়ে তাকালাম।উনি কি করে ওর নাম জানলো?
পরক্ষণেই উনি বললেন,
-“রোদ্দুর বলেছে আমায়।”
আমি রোদ্দুর স্যারের দিকে তাকালাম।এই লোক বাসায় এসে এগুলো বলে।রোদ্দুর স্যার এসে আন্টিকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,
-“আম্মু তুমি এদিকে এসো আন্টি,আপানারা বসুন।এই অতসী,বসো।”
আমি চুপ হয়ে বসে গেলাম।উনি আন্টিকে অন্য পাশে নিয়ে কি যেন বলতে লাগলেন।দুজন সার্ভেন্ট এসে আমাদের সামনে নাস্তা রেখে গেলো আন্টি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন,
-“আপনারা নাস্তা করুন।আমি রেডি হয়ে আসছি।”
আন্টি চলে গেলেন।দ্বীপ আমার পাশেই বসে আছে।বারবার আমায় খোঁচা মেরে বলছে,
-“আজ আমার ভবিষ্যতবাণী সত্যি হলো তো।”
-“চুপ কর!”
-“না আমি চুপ করব না।আমি বলেছিলাম যে রোদ্দুরেরও তোর প্রতি ফিলিংস আছে।এজন্যই আমার বিষয়ে বলেছে নিজের মাকে।”
-“এমনিই হয়ত শেয়ার করেছে।এটাকে এতটা ডিপলি নেয়ার কিছু নেই।”
-“আলবাত আছে।তুই কি বুঝবি।তুই যে কত বোকা ভাই!কি বলব আমি।”
-“ভালো লাগছে না অফ যা!”
আমাদের ফিসফিস করার মাঝেই রোদ্দুর স্যার এসে উপস্থিত হলেন।হালকা কেশে বললেন,
-“আব..আমার একজন গেস্ট এখনো আসেনি।হয়ত জ্যামে আছে।ও আসলে পরে কেক কাটা হবে।”
একটু পর আন্টিও নেমে এলো।আমি দ্বীপকে বলছি,
-“জোনাকির জন্য অপেক্ষা করছে হয়ত”
-“আরে অন্যকেউও তো হতে পারে।জোনাকি নিয়ে কি সারাদিন পরে থাকে নাকি!”
-“তো তোকে কি আমি মিথ্যা বলছি।সারাদিনই পড়ে থাকে।”
-“তুই যা ভাবছিস তা হবে না।”
-“আমি ভাবছি তাই হবে।জোনাকিই আসবে!”
মুখের কথা মুখেই রয়ে গেলো। হঠাৎ সেই জোনাকি নামের মেয়েটা এসে রোদ্দুর স্যারকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“কেমন আছো রোদ্দুর! ”
আমি এতক্ষণ দ্বীপের হাতটা ধরে ছিলাম।সেটা এখন মোচড়াতে লাগলাম।দ্বীপ আর্তনাদ করে বললো,
-“আল্লাহ!চাঁদনী আমার উপর কেন রাগ ঢালছিস।”
আমি ওর হাতটা ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললাম,
-“আমি রাগ ঝাড়ছি না।”
-“সে তো দেখতেই পারছি।”
মেয়টার কি লজ্জা সরম নেই?এভাবে এতগুলো মানুষের সামনে এসে বয়ফ্রেন্ড কে জড়িয়ে ধরলো।আশ্চর্য! রোদ্দুর স্যার একবার আমার দিকে তাকালেন।আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।উনি জোনাকির দুই কাঁধে হাত রেখে বললেন,
-“যাক এতক্ষণ পর এলে তবে।”
-“তুমি ইনভাইট করবে আর আমি আসব না এ কি করে হয়।দেখো তোমার পছন্দের রং পড়েছি।”
আমি এবার মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকালাম।এটাও নীল রঙের সালোয়ার পড়েছে। সব হলো দ্বীপটার জন্য। আমার সাথে ড্রেসের কালার মিলে গেলো।আমি দ্বীপের হাতে খামচি দিয়ে বললাম,
-“তোর জন্য আমার ড্রেসের কালারের সাথে মিলে গেলো।”
দ্বীপ নিজের হাত ঘষতে ঘষতে বললো,
-“আমি কি জানতাম নাকি।”
মেয়েটাকে ভালো করে উপর-নীচ দেখে বললেন,
-“ওয়াও লুকিং গর্জিয়াস।”
আমি মুখ ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকালাম।জোনাকি আন্টির দিকে এগিয়ে গিয়ে উইশ করলো।তারমানে আন্টির সাথেও এটার পরিচয় আছে।আন্টি ওকে দেখে বললো,
-“জোনাকি তুমি এলে।কিন্তু দিয়া কই?”
-“আন্টি ও গাড়ি পার্ক করেই আসছে।”
বলতে বলতে পিছন থেকে একটা মেয়ে বললো,
-“এইযে আমি এসে গেছি।”
আমরা সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছি।আসলে ওর পরিচয়টা বোঝার চেষ্টা করছি।দিয়া নামক মেয়েটি এসে আন্টিকে উইশ করে বলতে লাগলো,
-“কেমন আছো আন্টি?শরীর ঠিকঠাক?”
-“হ্যা একদম।আয় তোদেরকে পরিচয় করিয়ে দিই।”
আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি।বলতে গেলে মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী। পরণে একটা সবুজ রঙের কূর্তি।এত সুন্দর লাগছে যে মনে হচ্ছে এটা ওর জন্যই বানানো।পুরো মানিয়েছে।চোখে কি সুন্দর মোটা করে কাজল দেয়া।
আন্টি এসে আম্মুর সাথে পরিচয় করালেন।
আমার সাথে করালেন,
-“দিয়া হলো জোনাকির ছোট বোন।জোনাকি আমার ভাইয়ের মেয়ে।মানে রোদ্দুরের কাজিন।একই ভার্সিটিতে পড়ে।”
জোনাকি আমাকে দেখে বললো,
-“আমি চিনি তো ওকে।”
আমি সৌজন্যমূলক হাসি দিলাম।দিয়া নামক মেয়েটি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে গেলো।যার করণে দ্বীপের সাথে ধাক্কা লাগলো।মানে আমার আর দ্বীপের মাঝে এসে দাঁড়িয়েছে।দ্বীপের গায়ে ধাক্কা লাগায় দ্বীপ বললো,
-“হোয়াট দা হেল!”
মেয়েটি ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“একটু সরে দাঁড়ান।”
-“মানেটা কি!”(দাঁতে দাঁত চেপে)
-“মানেটা বুঝতে পারছেন না?আমি অতসী আপুর সাথে কথা বলব।সরুন।”
বলেই মেয়েটি আমাকে উদ্দেশ্য করে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো,
-“তোমাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে আপু।ছবির থেকে বাস্তবে তুমি অনেক বেশি সুন্দর। পুরোই পুতুল পুতুল।”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-“ছবি মানে?”
ঠিক তখনই জোনাকি বলে উঠলো,
-“দিয়া!এদিকে আয়।”
-“আসছি।”
বলেই দিয়া ওর আপুর দিকে চলে গেলো।আমি বিষয়টা বুঝলামই না।দ্বীপ চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,
-“অসভ্য মেয়ে একটা।”
-“কি বলিস!মেয়েটা তো ভালোই।”
-“তোমার তো ভালো লাগবই।তোমারে সুন্দর বলসে।”
-“চুপ কর।আমার কাছে ওকে অনেক মিশুক লাগলো।দেখলি না কিভাবে কথা বললো!মনে হচ্ছিল আমরা কতদিন ধরে পরিচিত।”
-“ডিজগাস্টিং! “(অন্যদিকে তাকিয়ে)
আমি দ্বীপের নাকটা টেনে দিয়ে বললাম,
-” এত রাগ ভালো না খোকা।”
আস্তে আস্তে আরো অনেক গেস্ট এলো।কেক কাটার পর সবাই কে খেতে বসতে বলা হলো।
আমার পেট ভরা ছিলো তাই আর খেলাম না।আন্টি আমাকে অনেক জোর করার পরেও খেলাম না।আন্টি জোর করে আমার জন্য খাবার বক্সে ভরে দিলেন।
এবার সবাই সোফায় ছিলাম।ঠিক তখনই আন্টিআর আংকেল এসে দাঁড়ালেন। আন্টি এসে বলতে লাগল,
-“আজ আমাদের পরিচিত অনেকেই এখানে উপস্থিত আছেন।তাই আজ সবাইকে সাক্ষী রেখে আমি একটা এনাউন্সমেন্ট করতে চাই।”
বলেই রোদ্দুর স্যারের দিকে তাকালেন।রোদ্দুর স্যার মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেন।আন্টি আবার বলতে আরম্ভ করলেন,
-“আমরা ঠিক করেছি, আমাদের একমাত্র ছেলে রোদ্দুরের সাথে আমার ভাইয়ের বড় মেয়ে জোনাকির বিয়ে দিবো।খুব শীঘ্রই তাদের এঙ্গেজমেন্ট ডেট ফাইনাল করা হবে।”
সবাই উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে লাগলো।আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আন্টি রোদ্দুর স্যার আর জোনাকির হাত মিলিয়ে দিলেন।
আমার মনের মধ্যে কে যেন হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে।মনে হচ্ছে বুকের মধ্যে কেউ ভারী পাথর রেখে দিছে।
এতটা কষ্ট আমি কোনোদিন পাইনি।জোনাকি রোদ্দুর স্যারকে জড়িয়ে ধরলেন।আমার বুকের বা পাশটা কেমন ধক করে উঠলো।
দ্বীপ আমার পাশ থেকে বলে উঠলো,
-“নিজেকে সামলা অতসী।আমরা সবসময় যা দেখি সেটা সত্যি হয় না।”
আমি ছলছল চোখজোড়া নিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
-“আমি নিজেকে সামলেছি।আমার তো কিছু হয়নি।”
-“তোর মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি অতসী।”
আমি চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বললাম,
-“আমি ঠিক আছি।”
-“তুই ঠিক নেই অতসী।নিজেকে সামলা।”
আমি আর কিছু না বলে সবাইকে আড়াল করে বের হয়ে এলাম বাসা থেকে।
দ্বীপ হয়ত ভাবলো একা থাকতে দেয়া উচিত কিছু সময়।তাই আর পিছনে এলো না।
আমি ধীর পায়ে চলছি।কখন রাস্তায় চলে এলাম টেরও পাইনি।চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামছে।চোখের সামনে ভাসছে তার সাথে কাটানো আমার সমস্ত ঘটনা।তার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত অনুভব করছি।
গাড়ি চলছে।আমি নিজের ভাবনায় ডুবে গাড়ি চালাচ্ছি। আর বলছি,
-“কেন এমন হলো রোদ্দুর স্যার?আমি কি আপনার যোগ্য নই?নাকি ভালোবাসলে এই শাস্তি পেতে হয়!আমার কি ভুল ছিলো?আপনাকে ভালোবাসাটা আমার অন্যায়?আমি ভুল করেছি?সৃষ্টিকর্তা কি চায় না আপনি আমার হোন!কেন আপনাকে আমি ভালোবাসলাম স্যার।কেন এমন হলো।আমি কে কষ্ট পাচ্ছি। আমি কষ্ট পেতে চাই না।আমি দূরে সরে যেতে চাই আপনাদের মাঝখান থেকে।তাহলে কেন এত কষ্ট হচ্ছে।”
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ হর্নের আওয়াজ এলো কানে।আমি সামনে তাকাতেই দেখলাম অনেক বড় একটা ট্রাক আসছে।আমি সরে যাওয়ার আগেই গাড়িটা আমাকে ধাক্কা মারলো।আমার মাথায় কেমন যন্ত্রণা অনুভব করলাম।পা টা ভারী হয়ে গেলো।পায়ে ব্যাথায় চেঁচিয়ে উঠলাম আস্তে আস্তে সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে রক্ত।দেখলাম,আমার সামনে এগিয়ে আসছে রোদ্দুর স্যার।আর ওনার পিছনেই দ্বীপ।আমি শুধু আস্তে করে বললাম,
-“আপনি আমার নয় স্যার!ভালো থাকবেন।”
চলবে….