#প্রিয়_রোদ্দুর🤍(বোনাস)
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:২৬
-“ভাঙা পা ঠিক হয়েছে বেশিদিন হয়নি আর এখনই তুমি ছাদে লাফিয়ে লাফিয়ে আম পারছো!”
পিছন থেকে রোদ্দুর স্যারের গলা পেয়ে আমি হাতে থাকা লাঠিটা ফেলে দিলাম।পিছনে ফিরে বললাম,
-” আম খাব না?”
-“তোমাকে কি আমি খেতে না করেছি?তুমি এভাবে লাফাচ্ছ কেন।”
আমি হাতে হাত ভাজ করে বললাম,
-“তো এত উঁচু ডাল, আমি কি হাত দিয়ে নাগাল পাব।”
রোদ্দুর স্যার আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
-“আর তুমি এই বিকালবেলা ছাদে কি করছো?সামনে তাকিয়ে দেখো,পুরো রাস্তা দেখা যায়।”
-“তোহ!তাতে কি?”
বলেই আমি একটা কাঁচা আম নিয়ে কামড় বসালাম।উনি সেটা দেখে বলে উঠলেন,
-“এই তুমি এটা না ধুয়ে খাচ্ছো কেন?”
আমি ছাদের উপর রেলিং এর পাশ ঘেঁষে বসে পড়লাম।লবণের বাটি নিয়ে যে আমগুলো পেড়েছিলাম সেগুলো সাজিয়ে নিয়ে বসে পড়লাম।উনি কোনো উত্তর না পেয়ে আমার সামনে এসে আমার মত করেই বসে বললেন,
-“কি হলো?কি জিজ্ঞেস করলাম?”
-“আরেহ স্যার রাখেন তো।গাছ থেকে পারা আম,সাথে সাথে খেয়ে মজা বেশি।আপনি অবশ্য বুঝবেন না।”
-“রোগ-বালাই হলে পরে বুঝবে।”
-“এত বড় রোগ থেকে বের হওয়ার পর আমার আর এসবে ভয় করে না।”
-“এজন্য ছাদে লাফাবে?এবার পড়লে কিন্তু সোজা উপরে!”
আমি হেসে ফেললাম।আমে আরেকটা বাইট বসিয়ে বললাম,
-“আপনাকে নিয়েই যাব।”
-“আমি কেন যাব।আমার এখনো বিয়েও হয়নি।”
-“আমারো হয়নি।আপনি আমাকে মেরে ফেলার কথা বলেন কিভাবে!”
-“তুমি নিজেই পাকামো করছো।”
-“ধূর রাখেন তো!”
বলেই আমি আমার খাওয়া আমটা ওনার দিকে এগিয়ে বললাম,
-“খাবেন?”
উনি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললেন,
-“তোমার টা তুমিই খাও!”
-“ওকেহ!”
উনি চুপ করে গালে হাত দিয়ে আমার সামনে বসে আছেন।আর আমি আমার মত আম খাচ্ছি। নীরবতা কাটিয়ে উনি বললেন,
-“এত খেয় না,পেট খারাপ করবে।”
-“কেন!আপনি নজর দিচ্ছেন?”(কোণা চোখে তাকিয়ে)
-“দিলে দিলাম।”
-“আপনাকে তো সাধলাম।”
-“আমি এসব খাই না।”
কিছু সময় পর উনি আবার বললেন,
-“চলো,পড়তে চলো।”
-“আরেকটু পর।আপনি এত তাড়াতাড়ি এলেন কেন!”
-“তো কখন আসব?”
-“সন্ধ্যায়!”
-“এখন সন্ধ্যা নামবে।চলো!”
বলেই আমার হাত টেনে উঠাতে নিলেন।আমি হাতটা ছাড়িয়ে বললাম,
-“আমি আমার আমগুলো রেখে যাব না।”
-“ওকে,তাহলে এগুলো ওড়নায় নিয়ে নাও।ঘরে বসে খেও।”
-“আরে না।আমি এখন এগুলো শেষ না করে যাচ্ছি না।”
-“কিহহ!তুমি এখন এই সবগুলো খাবে?”(চোখ বড় বড় করে)
-“হ্যা অবশ্যই!”
ঠিক এমন সময় ছাদের দরজা খুলে ঢুকলো দ্বীপ।
আমাদের উদ্দেশ্য করে বললো,
-“তোমাদেরকে মামী নিচে যেতে বলেছে।”
রোদ্দুর স্যার দ্বীপের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“আমি তো একে এখান থেকে সরাতেই পারছি না।”
দ্বীপ আমার দিকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বললো,
-“তুই রেলিং ঘেঁষে বসছিস কেন?পড়ে যাবি তো।”
রোদ্দুর স্যার উত্তর দিলেন,
-“আমি বললাম বলে আমাকে কতগুলো কথা শোনালো।”
-“এটা আসলেই পাগল মেয়ে!”
বলেই আমার সামনে থেকে একটা আম নিয়ে নিলো।আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম রেগে বললাম,
-“তুই এটা নিলি কেন?”
ও আমে কামড় বসিয়ে বললো,
-“বাহ রে!তুই একা খাবি নাকি!”
-“তো কি!তুই পেড়েছিস আমগুলো?”
-“একটাই তো নিলাম।”
-“শয়তান ছেলে!”
-“তুই এতগুলো খাবি কিভাবে।”
-“দ্বীপের বাচ্চা “(নাকিকান্না কেঁদে)
-” এত কথা না বলে চলতো নিচে।মামী ডাকছে।”
আমি উঠে দাঁড়ালাম। হাতে হাত ভাজ করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললাম,
-“আমি যাচ্ছি না।”
দ্বীপ আমগুলো নিয়ে নিলো। লবণের বাটিটা নিতে নিতে স্যারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আমি এগুলো নিচ্ছি, আপনি অতসীকে নিয়ে আসুন।”
রোদ্দুর স্যার মাথা চুলকে হাসলেন।দ্বীপ চলে গেলো। আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম,
-“আমি এখানেই থাকব।যখন মন চাইবে তখন যাব।”
-“ওকে!”
বলে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আচমকা আমার হাতে হাত রাখলেন। আমি চমকে উঠে তাকালাম ওনার দিকে, মিষ্টি হেসে বললেন,
-“এখনো আমি আমার উত্তর পাইনি অতসী!”
আমি ঢোক গিলে বললাম,
-“কোনটার?”
-“হসপিটালে যেটা বলেছিলাম।”
আমি চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস ছাড়লাম।হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। উনি আবার বললেন,
-“তুমি না চাইলে কিছুই হবে না।কারণ,তোমার থেকে কথা বের করতেই তো এতকিছু হলো।এখন তুমি রাজি না থাকলে তো আর কিছু করার নেই।”
বলেই উনি চলে যাচ্ছিলেন।কিন্তু ওনার হাতটা এখনো আমার হাতে আটকে।তাই উনি যেতে যেতেও দাঁড়িয়ে গেলেন।তারপর বললেন,
-“নিচে আসো,পড়তে বসবে।”
আমি এগিয়ে এলাম ওনার দিকে। হালকা হেসে পা উঁচু করলাম।একদম ওনার কান অবধি।তারপর নিম্নস্বরে বললাম,
-“আপনি আমাকে কি বলেছিলেন?”
-“জানি না!”(অন্যদিকে তাকিয়ে)
বুঝলাম!উনি আমার উপর রেগে।আমি মুখ টিপে হেস বললাম,
-“আহ!বলুনই না।”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলেন।তারপর কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।আমি কেঁপে উঠলাম।
ওনার হাতে হাত পড়লো। উনি হেসে বললেন,
-“আমি তো কিছু বলিনি।”
-“মজা করছেন?আচ্ছা হাত সরান।ছাদ থেকে সব দেখা যায় নিচে।”
-“তুমি আটকেছ আমায়।”
-“ভুল করেছি।সরুন সরুন।”
উনি আরেকটু আঁকড়ে ধরে বললেন,
-“ওকে আই লাভ ইউ ঠু!”
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।অবাক হয়ে বললাম,
-“আমি তো কিছু বলিইনি।”
উনি আমার গালে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিতে দিতে বললেন,
-“কি বলোনি তুমি?”
-“আই লাভ ইউ!”
-“আই লাভ ইউ ঠু!”
বলেই কপালে চুমু এঁকে দিলেন।ভেজা স্পর্শে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।উনি হাসলেন মনে হয়।গাল টেনে নিচে যেতে যেতে বললেন,
-“তাড়াতাড়ি এসো।”
আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম ফ্রীজড হয়ে।সবটা কি স্বপ্ন? এই বুঝি আম্মু ডাক দিবে আর সবটা ভেঙে যাবে।নাকি পুরোটাই সত্যি!
আমার স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেলো?
আমি নিঃশব্দে হাসলাম।নিজেকে আগে অনেক বেশি অসহায় লাগত।আর এখন মনে হয় আমার এই গল্পে আমিই হয়ত সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবতী।
।
পরীক্ষা শেষ হয়েছে একমাস হয়ে যাচ্ছে। বাসায় ভালোই তোড়জোড় চলছে আমার আর রোদ্দুর স্যারের বিয়ের।বিয়ে ঠিক হয়নি।প্রস্তাব দেয়া হয়েছে শুধু।আমি হ্যা না কিছুই বলিনি।ফুপিও বাসায় নেই।নিজের বাসায় গেছে।ফুপা এসেছে অফিস কাজ সেরে অন্যদেশ থেকে।সেজন্যই। এদিকে সেই বিকাল থেকে আমি বসে বসে শরবত বানাচ্ছিলাম।দাদী দরজা খুলে ঢুকলো। আমার সামনে বসতে বসতে বললো,
-“কতটুকু হইলো!”
-“এইত শেষ!”
দাদী হঠাৎ আমার মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগল,
-“রোদ্দুর-আর তোর যে এমন কিছু হইতে পারে আমি ভাবতেও পারি নাই।আসলেই বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে অনেক অনেক অবাক হয়েছি।তাও, ছেলেটা ভালো বলে না করে পারিনি।”
আমি দাদীর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললাম,
-“তাই না?তুমি প্রস্তাব দেয়ার পর সবটা জেনেছ?”
-“হ্যা!”(স্বাভাবিক ভাবে)
-“তুমি তো সব আগে থেকেই জানতে।”
-“কি বলছিস এসব।আমি কি সর্ব জান্তা যে সব জানব।তুই বিয়েতে রাজি কিনা সেটা বল!”
-“এসব বাদ দাও।তোমাকে না রোদ্দুর স্যার সব বলেছিল!”(ভ্রু কুঁচকে)
-“কি বলেছিল!”
-“আরে বুড়ি,তোমার জন্যই তো এত কাহিনী।তুমি এত পাকামো করে কেন বলতে গেছিলে আমার মনের কথা জানতে।”
-“কিসব আজগুবি কথা বলছিস তুই।আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছে না।”
-“দাদী তুমি আসলেই কিছু জানতে না?”
-“কি জানব?কি বলছিস তুই!”
এরমধ্যে দাদীর ডাক আসায় দাদী চলে গেলো।আর বলতে লাগলো,
-“বিয়ের আগে আমার নাতনিটা পাগল হয়ে গেছে।”
আমি দাদীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। কি বলছে এসব!সে এমন ভাব করছে যে সে কিছু জানেই না।তাহলে রোদ্দুর স্যার কি আমাকে মিথ্যা বললো?কেন!
আমি রোদ্দুর স্যারকে কল দিব তার আগেই বাহির থেকে আওয়াজ শোনা গেলো।আমি কলটা কেটে বাহিরের দিকে চলে গেলাম।গিয়ে দেখি ফুপি ঘরে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিয়েছে।
আমি এগিয়ে গিয়ে যা শুনলাম তাতে বুঝতে পারলাম,ফুপি এই বিয়েতে একদমই খুশি নন।তাই নিজ বাসা থেকে এসেই একপ্রকার ঝামেলা শুরু করে দিয়েছে।
কিন্তু কেন!তারমানে কি আমার সন্দেহই সঠিক!
রোদ্দুর স্যার আমার থেকে কিছু লুকিয়েছেন!উনি সেদিন হাসপাতালে পুরোটা সত্যি বলেননি।এখানে আরো কিছু লুকিয়ে আছে।
চলবে…