#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:২৭
-“আপনি কি লুকিয়েছেন আমার থেকে?”
আমার এমন কথা শুনে রোদ্দুর স্যার আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন।তারপর বললেন,
-“কি লুকাব আমি?”
-“আপনি কাকে বাঁচাতে চাইছেন?”
-“কিসব বলছো।মাথা ঠিক আছে?”
-“আমার মাথা ঠিকই আছে।আমি শুধু শুধু আপনাকে এখানে ডেকে আনিনি।আপনি সেদিন হাসপাতালে আমাকে সমস্ত টাই মিথ্যা বলেছিলেন!”
-“আমি কোনো মিথ্যা বলিনি। ”
-“আপনি এখনো মিথ্যা বলছেন স্যার।আর আমি মিথ্যার কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাই না।”
-“মিথ্যা সম্পর্ক মানে!”(ভ্রু কুঁচকে)
-“মানে কোনো মিথ্যার জালে জড়িয়ে সম্পর্ক গড়তে চাই না।”
রোদ্দুর স্যার এগিয়ে এসে আমার বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন।ক্ষোভ নিয়ে বললেন,
-“তুমি আমায় ভালোবাসো না?”
-“ভালোবাসি,কিন্তু কোনো মিথ্যাবাদী কে নয়।”
উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে কিছু টা দূরে সরে গেলেন।রেগে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন,
-“এনাফ অতসী!এক জায়গায় রাউন্ড এন্ড রাউন্ড। আমি তো তোমায় বললাম যে তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য আমি এতকিছু করেছি।”
আমি ওনার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বললাম,
-“ওহ রিয়ালি!এটার জন্য আপনি আমাকে এত টর্চার করেছেন!এত রুড হয়েছেন।তাহলে তো দেখা যাচ্ছে অনেক সামান্য বিষয়ে বিয়ের পর আপনি আমার গায়ে হাতও তুলবেন।তাহলে তো আপনাকে আরো আগে বিয়ে করা যাবে না। আপনি একটা সাইকো।অতি সামান্য বিষয়ে রুড হয়ে যান।”
উনি আমার দিকে না তাকিয়েই রাগী গলায় বললেন,
-“তুমি এখন বেশি বুঝছো অতসী!”
-“আমার জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিবো আর আমি সত্যিটা জানব না?”
-“কিসের সত্যি!”
-“আপনি যেই পর্যন্ত না আমাকে সমস্ত সত্যি বলবেন আমি আপনাকে বিয়ে করব না।”
-“তারমানে কি তোমার ফুপির কথাই ঠিক?তুমি দ্বীপকে ভালোবাসো?”
আমি অবাক হয়ে তাকালাম রোদ্দুর স্যারের দিকে।উনি করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম,
-“মানেহ!”
-“তুমি দ্বীপকে ভালোবাসো বলেই কি আমাকে বিয়ে করতে চাও না!”
-“এসব কি বলছেন আপনি!”
-“আমি কখনোই চাইনি যে তোমার আর তোমার ফুপির মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হোক।এজন্যই আমি তোমাকে সেদিন মিথ্যা বলেছিলাম।আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়ত আমাকে ভালোবাসো,বিয়েতেও রাজি হবে।তাহলে আর দরকার কি তোমার ফুপির সাথে সম্পর্ক টা খারাপ করে।”
-“কিন্তু হয়েছে টা কি!”
-“তোমার ফুপি দ্বীপের জন্য তোমাকে ঠিক করে রেখেছিলো।এটা তো তুমি জানোই।আমার সাথে তোমার বিহেভিয়ার আর গিফটস দেয়া নেয়া,আমার জন্য পায়েস রান্না করা এসব দেখে ওনার সন্দেহ হয়েছিল আমাদের উপর।”
আমি ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
-“আপনি এখনও যে সত্যি বলছেন তার কি গ্যারান্টি আছে!”
উনি করুন চোখে তাকিয়ে বললেন,
-“আই সোয়্যার আমি সত্যি বলছি।”
-“আপনি আপনার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসের উপর হাত রেখে এটা বলুন।”
উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
-“আমি যা বলছি সত্যি বলছি।”
-“আমার উপর কেন!”(ভ্রু কুঁচকে)
-“কারণ প্রিয় জিনিস তো তুমিই!”
আমি আর কিছু না বলে ওনার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললাম,
-“আচ্ছা বলুন!”
-“তোমাকে পড়ানো অবধি বলা কাহিনীটা সত্যি ছিল ।কিন্তু তোমার জন্মদিনের কথাগুলো মিথ্যা!”(অন্যদিকে তাকিয়ে)
-“সত্যিটা কি?”
-“জন্মদিনের আগেই উনি আমার সাথে দেখা করতে আমাদের বাসায় আসেন।”
-“বাসায়?”(আশ্চর্য হয়ে)
-“হ্যা।”
-“ঠিকানা কিভাবে পেল?”
-“হয়ত আন্টির থেকে নিয়েছে কথার ফাঁকে!”
-“হুম হতে পারে।”
-“বাসায় এসে উনি আমাদের সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন।আমি ভেবেছিলাম তুমিও হয়ত এসেছ।কিন্তু উনি একা ছিলেন।আর এসে আমার মাকে বলেন যে উনি আমার সাথে আলাদা কথা বলতে চান।আমি সেদিন বাড়িতেই ছিলাম।
উনি আমাকে জানান যে তোমার আর আমার সম্পর্কে উনি সবটাই খেয়াল করেছেন।তারপর…
-“দেখো রোদ্দুর, তুমি অনেক ভালো আর ভদ্র একটা ফ্যামিলির ছেলে।তোমার বয়সের সাথে অতসীর বয়সের কিন্তু অনেক পার্থক্য। তুমি ভাবলে কি করে যে এমন একটা সম্পর্ক হতে পারে?”
-“ফুপি আপনি কোন সম্পর্কের কথা বলছেন!”
-“আমি সবটাই জানি রোদ্দুর। আমি সেদিন দেখেছি সবটা।তুমি অতসীর থেকে দূরে থাকো এতেই তোমার মঙ্গল!”
-“কাউকে ভালোবাসা অন্যায় না ফুপি।আর আমি যদি অতসীকে সত্যিই পছন্দ করে থাকি তাহলে আপনার এই দু-এক টা কথায় আমি অতসীকে ছেড়ে দিব না।”
-“এসব ফিল্মি ডায়লগ ফিল্মেই মানায়।কতটুকু জানো তুমি ওকে?”
-“দুই বছর ধরে প্রতিদিন যাচ্ছি, ওকে দেখছি,চিনছি।যতটুকু জানলে ভালো রাখা যায় অতটুকুই জানি।”
-“অতসী দ্বীপকে ভালোবাসে।”
রোদ্দুর স্যার তখন অবাক হয়েছিলেন।এমন নামের কারোর কথা সে অতসীর থেকে শোনেননি।তাই বলেছিলেন,
-“দ্বীপ কে?”
-“আমার ছেলে।অতসীর সাথে আমার ছেলের এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে।”
-“কিহ!অতসী তো আমাকে কোনোদিন বলে নি এসব।”
-“কারণ ওকে আমরা নিষেধ করেছিলাম দ্বীপ না আসা অবধি কিছু বলতে।”
-“মানেটা কি!”
-“হ্যা এটাই সত্যি।”
-“আপনার কথা আমি বিশ্বাস করি না ফুপি।মাফ করবেন।আপনি এখন আসতে পারেন।”
-“জানতাম বিশ্বাস করবে না।তাই তো প্রমাণও এনেছি।”(হেসে)
বলেই উনি নিজের ফোন থেকে বের করে কিছু ছবি দেখান যেখানে অতসী দ্বীপকে আংটি পড়াচ্ছিলো।
এছাড়াও আরো কিছু সুন্দর মুহূর্ত,যেমন দ্বীপ অতসীকে দোলনায় বসিয়ে দোল দিচ্ছে। অতসীর চুল বেঁধে দিচ্ছে। এমনকি জড়িয়ে ধরেও ছবি তুলেছে। রোদ্দুরের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
নিজের পছন্দের কারোর সাথে অন্য কাউকে দেখে সে মেনে নিতে পারছিল না।ফুপি তখন বলতে লাগে,
-“তোমার জন্য ভালো হবে অতসীর থেকে দূরে থাকা।”
বলেই উনি চলে যান।তারপর…
তারপর আমার মাথা কাজ করছিল না।আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না।মায়ের সাথে সবটা শেয়ার করার পর সে বলে যে হয়ত আসলেই পারিবারিক ভাবে তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
সেদিন আমি সারারাত কেঁদেছিলাম মায়ের কোলে।আমি ভুলতে পারছিলাম না ছবিগুলো।আমার মাথায় জং ধরে যাচ্ছিলো।
এতটুকু বলে থামলেন উনি। আমি তখনো আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছি।আমি বলতে লাগলাম,
-“ওই ছবিগুলো তো…”
উনি আমাকে থামিয়ে বললেন,
-“আমি বলছি।”
-“হু!”
-“সেদিনের পর তোমার জন্মদিনে যেতে রাজি হইনি আমি।নিষেধ করে দিয়েছিলাম।রাতে তোমার সাথে আমার কলে কথা হয়।তারপর আমি ভাবি যে জন্মদিনে গেলে তো ক্ষতি নেই।কিন্তু সেদিন জন্মদিনে যাওয়াটা তোমার ফুপি আশা করেননি।
তোমাদের নাচার সময় উনি আবার আমাকে ডাইনিং এর পাশে নিয়ে আসেন আর বলেন যে তোমার থেকে দূরে থাকি।কারণ দ্বীপ দেশে ফিরছে।
তোমার ভালো চাইলে যেন তোমার থেকে দূরে থাকি।দ্বীপ চায় তুমি পড়াশোনা করো,ভালো মানুষ হও।আমার জন্য নাকি তোমার পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। তাই সেদিন যাওয়ার সময় আমি তোমাকে ওই কথাটা বলি।জানি,তোমার কাছে একটু রহস্যজনক লাগে।”
-“এরপরের দিন থেকেই তো শুরু হয় আপনার নাটক।”
-“নাটক না।বাসায় আসার পর ফোন চেক করে দেখি তোমার আর দ্বীপের অনেক ছবি আমার ফোনে দিয়েছেন উনি।আর সেই এঙ্গেজমেন্টের ভিডিও টাও।এরপর আমার মাথায় রাগ উঠে যায়।উনি বারবার বলছিলেন যেন খারাপ ব্যবহার করে হলেও তোমার থেকে আমি দূরে থাকি।”
-“আর এজন্য আপনি…”
-“আমি কিছু সময়ের জন্য ভেবে নিয়েছিলাম যে দ্বীপ তেমার হাসবেন্ড। আমাকে এমন ভাবেই ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছিল।তার মধ্যে মা ও বলছিল যে মেয়েটাকে ভুলে যা।হতে পারে ও বিবাহিত। তোর জন্য ওর পড়াশোনার ক্ষতি হবে।তারচেয়ে তুই ওকে ভুলে যা।কিন্তু তোমাকে ভোলা অসম্ভব ছিল অতসী।তাই আমি শেষ অবধি তোমার সাথে রুডলি আচরণ করতে শুরু করি।তোমার হাতে মেরেছিলাম সেই এঙ্গেজমেন্টের ঘটনাটা দেখে। আমার রাগে শরীর জ্বলছিলো।তুমি এই হাত দিয়ে দ্বীপকে আংটি পড়িয়েছ।ভাবতেই আমি জোরেই আঘাত করে ফেলেছিলাম।এরপরের দিন আমি আসতে চাইনি তোমাদের বাসায়।তোমার জ্বর ছিল।আমি তাই এসেছিলাম।তোমাকে দেখতে।তুমি ভালো করে খেয়াল করলে হয়ত দেখতে পেতে আমার হাতও কাটা ছিল।কিন্তু তেমার এতটাই অভিমান ছিল যে তুমি আমার দিকে তাকাওনি অবধি।”
-“আপনি আমাকে চড়ও খাইয়েছেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম আমি।”
-“আমার মধ্যে কি চলছিল অতসী?তুমি, আমাকে আর জোনাকিকে দেখে যতটা কষ্ট পাচ্ছিলে তারচেয়ে বেশি আমি কষ্ট পাচ্ছিলাম।কারণ তেমার আর দ্বীপের এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে।এটা আমার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল।সেদিন আমার উপর পানি পড়ায় তুমি তা শুকিয়ে দিচ্ছিলে।আমি আবার তোমার প্রতি উইক হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই আবারো রুড বিহেভিয়ার করি।আমি চাচ্ছিলাম না আর কিছু হোক।তুমি অন্যকারো।এরপর দ্বীপ আসে হঠাৎ। তোমার প্রতি আমার আরো রাগ বাড়ে।দ্বীপের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোয় তোমাকে হাসিখুশি দেখে আমি ধরেই নিই যে,হ্যা ফুপি ঠিকই বলেছে।কিন্তু আমি আরো অবাক হই এটা দেখে যে আমাকে আর জোনাকিকে একসাথে দেখে তোমার এত সমস্যা কেন হচ্ছিল।আর এগুলোর জন্যই আমি দ্বীপে আসার দিন তোমার ফুপির খোচা মারা কথার কোনো জবাব দিইনি।তুমি হয়ত আমাকে ভুল বুজেছিলে।বেয়াদব ভাবছিলে।তারপর আমি মায়ের জন্মদিনে তোমাদের ইনভাইট করি।সব ঠিকই ছিল।শুধু বিয়ের কথাটা বানোয়াট ছিল।সেটা যে আম্মু বলবে এটা জোনাকি জানত না।এমনিতেও জোনাকি তো বিবাহিত।আমি দেখতে চেয়েছিলাম তোমার ফুপি আর তোমার রিয়াকশন টা কেমন হয়।কিন্তু তোমার ফুপি আসেননি।তুমি তো দৌড়ে বের হয়ে গেলে।এরপর আমার খটকা লাগে।তোমার আর দ্বীপের কথাগুলো আমি শুনতে পাই।দ্বীপ তোমাকে বলছিল নিজেকে সামলাতে।কিন্তু কেন!”
-“কারণটা তো এখন অজানা নয়।”(চোখ মুছতে মুছতে)
-“তোমাকে ওই অবস্থায় দেখে আমার পাগলপ্রায় অবস্থা হয়।কারোর তোয়াক্কা না করে আমি তোমার সাথে সবটা ক্লিয়ার করব বলে হাসপাতালে দৌড়ে যাই।পিছনে আসে মা ও।আর সেটা বলতে গিয়ে দেখি তুমি দ্বীপকে বিয়ের কথা বলছ।আর তোমার ফুপি এসে সায় দিচ্ছে। সবার রিয়াকশন দেখে আমার মনে হচ্ছিল ফুপি এতদিন সব মিথ্যা বলেছে।আগের থেকে বিয়ের কথাটা ঠিক করা থাকলে সবার এমন কথা কাটাকাটি কেন!
তাই আমি সবাইকে বাইরে পাঠিয়ে তোমাকে প্রপোজ করে বসি রাগের বশে।কিন্তু কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।কারণ আমি তখনও সিউর হয়নি।তাই কোনোমতে বানোয়াট কথা বলে আমি রেগে বের হয়ে যাই দ্বীপের সাথে কথা বলব বলে।”
চলবে…
#প্রিয়_রোদ্দুর🤍(গল্পের নতুন মোড়)
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:২৮
-“বাহিরে এসে দেখি দ্বীপ সবাইকে বোঝাচ্ছে যে তোমার আর আমার মধ্যে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।আমাদের কিছু সময় একা থাকতে দিতে।কিন্তু তোমার ফুপি মানছিল না।তাই আমার মাকে যা ইচ্ছে তাই শোনাচ্ছিল।সেদিনও আমার মাকে অনেক কথা শুনিয়েছেন।আমি সেদিন প্রতিবাদ করি।আর দ্বীপকে বলি আমার ওর সাথে আলাদা কথা আছে।তারপর…
-“কি হলো?আপনি কি বলতে চান আমাকে। ”
-“দেখো দ্বীপ,আমি শুধু তোমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করব।আমার জানাটা খুব দরকার।”
-“আপনি এখনো চাঁদনীকে প্রপোজ করেননি?”
আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলেছিলাম,
-“মানে?তুমি চাও যেন আমি অতসীকে প্রপোজ করি?”
-“হ্যা অবশ্যই। অতসী আপনাকে ভালোবাসে।আর আপনি অতসীকে।আমি সবটাই বুঝতে পেরেছি। এখনও সময় আছে আপনি অতসীকে প্রপোজ করে দিন।”
-“তারমানে তোমার সাথে অতসীর এঙ্গেজমেন্ট হয়নি?”
দ্বীপ যেন আকাশ থেকে পড়ে।আশ্চর্য হয়ে বলে,
-“হোয়াট!এনগেজমেন্ট!”
-“হ্যা।আপনার মা ই তো বললো।”
-“মা?কি বলেছে আপনাকে?”
আমি তারপর দ্বীপকে সমস্ত ছবিগুলো দেখাই।তা দেখে ও বলে,
-“এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে অতসী আমাকে আংটি পড়াচ্ছে।কিন্তু আমি যে পড়াচ্ছি সেটা তো নেই।”
-“তাহলে বলতে চাচ্ছো তোমাদের এঙ্গেজমেন্ট হয়নি? আমার সন্দেহই ঠিক?”
-“এঙ্গেজমেন্টের প্রশ্নই উঠে না।আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড। তাই আগে এমন নানাভাবে ছবি তুলেছি।অনেকবার কাপলদের মত করেও ছবি তুলেছি।আমরা তো বন্ধুু। অতসী তুলতে চায়নি।আমিই জোর করেছিলাম। আর এই আংটির বিষয়টা হলো,অতসী আমার বার্থডেতে এই আংটি টা গিফট করে।এজন্যই চারিদিকে এত সাজানো।আমিই ওকে বলেছিলাম যেন আমাকে আংটি টা পড়িয়ে দেয়। এরপর আমি বিদেশে চলে যাব।এটা স্মৃতি থাকবে।নিজে দিয়েছে, নিজেই তো পড়বে।তাই ও বিনাবাক্যে পড়িয়ে দেয়।আর এটারই ক্লিপ।”
-“তারমানে আমাকে মিথ্যা বলেছে তোমার মা।”
-“মানে?”(ভ্রু কুঁচকে)
তারপর আমি সমস্ত ঘটনা খুলে বলি দ্বীপকে।
দ্বীপ তো শুনে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারে না যে তার মা এমন করবে।কোনো ছেলেই করবে না স্বাভাবিক। তারপর আমি ওকে বলি যে এসব বলার কি কি কারণ থাকতে পারে।তোমাকে বউ বানাতে চান উনি।দ্বীপ আমার কথায় বিশ্বাস করে।
আমি তোমাকে আবারো সমস্ত সত্যি জানাতে কেবিনে যেতেই দেখি তোমার ফুপি সযত্নে তোমার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন আর তোমরা কত সুন্দর করে বন্ধুর ন্যায় কথা বলছ।আমি ভাবলাম,অতসী আমাকে পছন্দ করে।বিয়ে এমনিতেও হবে।যা হয়েছে, তা হয়ে গেছে।এবার এসব বলে তোমার ফুপির সাথে তোমার সম্পর্ক খারাপ করে লাভ নেই।তাই দ্বীপকে আর মাকে কিছু বলতে নিষেধ করে দেই।”
এতটুকু বলে উনি থামলেন।আমি এতক্ষণ মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কাঁদছিলাম।এখন মুখ তুলে তাকালাম।উনি আবার বললেন,
-“আমাকে ক্ষমা করে দিও অতসী।আমি তোমাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।আমি নিজেও ভালো ছিলাম এমনটা নয়।”
উনি আরো কিছু বলবেন তার আগেই আমি দৌড়ে গিয়ে ওনার কলার চেপে ধরে বললাম,
-“একদম চুপ।অনেক নাটক হয়েছে। একদম মুখ বন্ধ!”
উনি আমার হাতের দিকে লক্ষ্য করে বললেন,
-“কলার ছাড়ো।এটা বেয়াদবি।”
-“রাখেন আপনার বেয়াদবি।আপনি একবার আমার সাথে কথা বলেছিলেন বিষয়টা নিয়ে?বলেননি।”
-“তুমিও আমাকে আর জোনাকি কে একসাথে দেখে কিছু বলোনি অতসী।ভেবেছ,আমি জোনাকিকে বিয়ে করব।তাই মাঝখান থেকে সরে যেতে চেয়েছ।ঠিক এটাই আমিও ভেবেছিলাম আর তোমাদের ভালো চেয়ে দূরে যেতে চেয়েছিলাম ।”
-“ভালো চেয়েছেন আমার?”
বলেই কলার টা ছেড়ে দিলাম।বিছানায় বসে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
-“আমার ভালো চাইতে গিয়ে আপনি আমাকে মরণ যন্ত্রণা দিয়েছেন। সেটা আমি ভুলে যাব?”
-“অতসী,আমার মিথ্যাটা শুনে তো তুমি এতটা হাইপার হওনি।তাহলে সত্যিটা শুনে কেন এমন করছ?”
-“কারণ আমার প্রিয় মানুষদের উপর মন উঠে গেছে। বিশ্বাস উঠে গেছে।”
রোদ্দুর স্যার আমার সামনে এসে বসলেন।দুইহাতে আমার মুখ ধরে তুলে বললেন,
-“আচ্ছা কেঁদো না।তাকাও আমার দিকে।তাকাও।”
-“কেন থামাতে এসেছেন?কত কান্নাকাটি করেছি আমি লুকিয়ে।তখন কই ছিলেন আপনি?”
-“আমি যে কত ব্যাথা পেয়ে লুকিয়েছি?তুমি তো আমাকে আর জোনাকিকে কথা বলতে দেখেছ।আমি তো দ্বীপ আর তোমাকে অনেক হাসি-খুশি মুহূর্ত কাটাতে দেখেছি। তোমার পায়ে নুপুর পড়ানো থেকে শুরু করে তোমাকে কোলে নেয়া।আমার বুক কাপেনি?রাগে জিদে নিজের উপর ক্ষোভ ঢেলেছি।দেয়ালে ঘুষি দিয়ে হাত কেটেছি,কেমন লেগেছে আমার?”
-“আপনি কি চেয়েছিলেন? আমি আর দ্বীপ বিয়ে করে ভালো থাকি তাইত।আপনি আর ফুপি এটাই চেয়েছিলেন তো।আমার পছন্দের দুজন মানুষ এতকিছু করেছে এটার জন্য। একজন মিথ্যা বলে।আরেকজন মহান সাজতে গিয়ে আমাকে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছিল।”
-“…”
-“আমি বিয়ে করব।দ্বীপকেই বিয়ে করব।আমার পছন্দের দুজন এটা চায়।আমি এটাই করব।”
উনি আবার আমার হাত চেপে ধরে বললেন,
-“কি বলছ টা কি তুমি।”
আমি ওনার হাত ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললাম,
-“যা সত্যি তাই বলছি।আপনি অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমার মনে।অনেক অনেক।আর আপনার চেয়েও বেশি কষ্ট দিয়েছে ফুপি।মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। আমার মনটা বোঝার চেষ্টাও করেনি।আর না আপনি চেষ্টা করেছেম।আপনও ওনার কথাতে রাজি হয়ে গেলেন।”
-“আমাকে বুঝিয়েছেন এভাবে।তুমি কেন বুঝতে চাইছ না।তোমাকে আমার এমন টাইপ ছবি দেখালে তো তুমি কারোর কথাই শুনবে না।ছবি দেখেই কেঁদে কেটে ধরে নিবে যে আমার বিয়েও হয়ে গেছে।”
-“আমি আর আপনি এক হলাম?”
-“কেন অতসী?তোমার মন আছে,আমার নেই?তোমার ফিলিংস আছে।আমার নেই?
তুমি আমাদের দেখে যেমন কষ্ট পেয়েছ,তারচেয়ে দ্বিগুণ আমি পেয়েছি।তুমি দ্বীপ,টিনার সাথে শেয়ার করেছ।হালকা হয়েছ।আমার কেউ ছিল না।মাকেও যে বলব সেই উপায়ও নেই।মা তো আগেই না করেছে তোমার কাছে যেতে।মাকে এত কথা যে শুনিয়েছেন ফুপি।”
আমি উঠে দাঁড়ালাম। দরজার দিকে যেতে যেতে বললাম,
-“আমি এতকিছু জানি না।আপনারা যা চান তাই হবে।আমি দ্বীপকেই বিয়ে করছি।”
-“অতসী শোনো তো..”
ড্রইংরুমে এসে দেখতে পাই সবাই থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে।ফুপির ঝগড়াঝাটিতে সবাই ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। আমাদের বের হতে দেখে ফুপি বললো,
-“কথা হয়ে গেছে?বিয়ে ঠিক?এজন্য এক রুমে বসে গল্পও করা হচ্ছিল?”
-“হ্যা বিয়ে ঠিক।আমি দ্বীপকে বিয়ে করছি।”
আমার এমন কথা শুনে দ্বীপ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।আর বলতে লাগে,
-“হোয়াট!কি বলছিস তুই।”
ফুপি খুশি হয়ে বলে,
-“এতদিনে তোর সুবুদ্ধি হলো তবে।তাহলে আমি বিয়ের আয়োজন করি।”
দ্বীপ আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
-“এক সেকেন্ড মা।এসব তুই কি বলছিস অতসী।রোদ্দুর থেকে কিছু শুনেছিস?”
বলেই ওনার দিকে তাকায়।উনি হ্যাবোধক মাথা নাড়ালেন।দ্বীপ আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
-“লিসেন চাঁদনী।তুই ঝোঁকের বশে,জেদের বশবর্তী হয়ে কিছু করিস না।”
-“আমি যা বলছি ভেবেই বলছি।আমার পছন্দের দুজন মানুষ চায় এই বিয়ে হোক।তাহলে হবে।”
বলে আমি স্যার আর ফুপির দিকে তাকালাম।স্যার আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছেন। ফুপি খুশি হয়ে বললো,
-“আমার আর দ্বীপের কথা বলছিস তো?আমি জানতাম আমার মেয়ে আমাকে চিনবে।আমাকে চাইবে।সব রেখে পরের বাড়ি যাবে কেন।”
-“মা তুমি একটু চুপ করবে!”(বিরক্ত হয়ে)
দ্বীপের এমন কথা শুনে ফুপি বলতে লাগে,
-“তুই চুপ কর।এতদিনে আমার মনের আশা পূরণ হলো।”
বলেই দাদী,আম্মুর দিকে এগিয়ে গেলো।আর বিয়ের কথা বলতে লাগল।আম্মু সব শুনে বললো,
-“যার যার পছন্দ। আমাদের আর কি বলার থাকতে পারে।কিন্তু আমার মনে হয় এদের আরেকটু সময় দেয়া উচিত ভাববার।এত তাড়াতাড়ি বিয়ে…”
-“তুমি এত চিন্ত করো না তো।বিয়ের ডেট ফাইনাল করব। ভাই আসুক।”(খুশিতে গদগদ হয়ে)
আমি সেদিকে তাকিয়ে দ্বীপের পাশে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম।দ্বীপের হাতে নিজের হাত ঢুকিয়ে তাকালাম রোদ্দুর স্যারের দিকে।উনি সেদিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন।ওনার চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। আমি হালকা হেসে বললাম,
-“এটাই দেখতে চেয়েছিলেন না আপনি?”
দ্বীপ বলতে লাগলো,
-“বেশি হচ্ছে চাঁদনী।সবকিছু অতিরিক্ত করলে ভালো লাগে না।”
-“উনি করেননি?আমাকে কম কষ্ট দিয়েছেন? মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম আমি।”
-“উনিও অনেক কষ্ট পেয়েছেন।আর সব হয়েছে আমার মায়ের জন্যই।”
-“রোদ্দুর স্যার আমাদের দুজনকে হ্যাপি দেখতে চেয়েছিলেন। আর আমরা হ্যাপি থাকব।ব্যাস!”
রোদ্দুর স্যার হঠাৎ আটকে আসা গলায় বললেন,
-“আমায় তুমি ভুল বুঝলে অতসী।আমার ভালোবাসা মিথ্যা নয়।শুধু মাত্র তেমার আর তোমার ফুপির সম্পর্ক ভালো রাখতে আমাকে মিথ্যা বলতে হলো।”
-“কিন্তু আপনি তো আমার ভালো চেয়েছিলেন। আমাদের ভালো চেয়েছিলেন।তাই না আমাকে এত মারধর,এত টর্চার করলেন।”
-“এরজন্য নিজেকেও অনেক কষ্ট দিয়েছি অতসী।তুমি আমাকে ভুল বুঝে কেন দূরে সরাচ্ছ!”
-“…”
-“ইচ্ছে করে কষ্ট দিচ্ছ আমায়?”
-“…”
-“আচ্ছা দাও। আ..আমার মনে হচ্ছে আমার বু..বুকের উ..উপর কেউ ছু..ছুড়ি চা..চালাচ্ছে। আ..আমিও দেখি তু..তুমি কতটা কষ্ট দি..দিতে পারো আমায়।”(ছলছল চোখে,হেসে)
চলবে…