#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:৩১
রোদ্দুর স্যারের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর পুরো দমে বাসায় উৎসব শুরু হয়ে গেছে।সবাই ব্যস্ত হয়ে গেছে বিয়ের আয়োজন নিয়ে।আজ মেহেদী অনুষ্ঠান। তাই আমি বিকাল থেকে বসে বসে মেহেদী দিচ্ছি। দুই পাশে দুই মেহেদী আর্টিস্ট বসে মেহেদী দিতে ব্যস্ত।আমার একপাশে সায়ন্তি বসে বসে ফোন চাপছে। আরেকদিকে টিনা বসে বসে ডিজাইন চুজ করছে ও মেহেদী দিবে তাই।টিনার বিয়েটা পিছানো হয়েছে। আমার বিয়ের এক মাস পর টিনার বিয়ে। দ্বীপ আমার সামনেই মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
আমি দ্বীপকে খোঁচা মেরে বললাম,
-“তুই মেয়েদের এদিকে কেন?”
দ্বীপ আমার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বললো,
-“মহারাণী!আপনার বরের কাজিনের জ্বালায় আমি অতিষ্ঠ। তাই এখানে বসে আছি।”
-“কাজিন মানে?দিয়া?”
-“হ্যা সে নয়ত কে!”
-“ও তোর বউ।”
দ্বীপ কিছু সময় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।তারপী বললো,
-“দূর্ভাগ্যবশত!”
-“মানে?এই না তোরা ভালোবেসে বিয়ে করলি।”
-“চুপ কর তো।”
-“ও আবার কি করলো!আর ওর তো এখানে থাকার কথা।তোর থাকার কথা সাজানোর ওদিকটায়।”
-“থাকার তো কথা।কিন্তু আমাকে সাজাতে দিলে তো।ওকে আমি আসতে না করছিলাম।কারণ ও আসলেই ঝামেলা করবে জানি।এসেছে ভালো কথা।ভালোমত থাকবে,মেহেদী দিবে।তা না করে আমার ওদিকে গিয়ে জ্ঞান দিচ্ছে কোনটা কোনভাবে সাজালে ভালো লাগবে।আমি বললাম বলে ঝগড়া শুরু করে দিলো।তাই শেষমেশ আমি রেগে চলেই এলাম।”
-“উফফো!বিয়ে বাড়িতে একটু আধটু তো কথা-কাটাকাটি হয়ই।তাই বলে তোর রাগ করতে হবে?”
-“ওহ আচ্ছা।তারমানে এখন থেকেই মহারানী শ্বশুরবাড়ির পক্ষে কথা বলছে!এই তোর ফ্রেন্ডশিপ!”
-“আরে না।আর ও তো এখন তোর বউ।”
-“বউ পরে।আগে তোর ননদ।”
-“আমি তো এমনিই…”
-“থাক!আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না।”
হঠাৎ টিনা বলে উঠলো,
-“দ্বীপ,আপনি অতসীর কথা শুনবেন না তো।এটা এখন থেকেই রোদ্দুর স্যারের ঘড়িতে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে!”
আমি হা হয়ে বললাম,
-“হোয়াট!ঘড়িতে?”
-“তো কি!ছেলেরা যদি বউয়ের আঁচলে বাঁধা পড়ে।তাহলে তুই মেয়ে হয়ে তো রোদ্দুর স্যার মানে তোর বরের ঘড়িতেই বাঁধা পড়বি।”(বোকা বোকা গলায়)”
আমি ওর দিকে হাত জোর করে একটু নুয়ে বললাম,
-“আপনার লজিক দেখে আমি আশ্চর্যিত!বিমোহিত!অবাকিত!”
-“কি এমন বললাম আমি?”
এদিকে সবাই হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।টিনা আবার গোমড়ামুখে বললো,
-“ধূর ভালো লাগে না।”
-“তোমার কথা ঠিক টিনা।”(হেসে)
দ্বীপের এমন কথা শুনে টিনাও হাসি হাসি মুখে বললো,
-“তাই না?আমি বলেছিলাম।”
দ্বীপ সায় জানালো।টিনা আবার বললো,
-“চলুন দেখি ওই মেয়েটা থুক্কু আপনার বউ কি বলে।”
বলেই দ্বীপের সাথে যেতে লাগলো।
সেদিকে তাকিয়ে আমি কপাল চাপড়ালাম।এদের যন্ত্রণায় আমি অতিষ্ট।
সেদিন আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম রোদ্দুর স্যারকে ওভাবে প্রপোজ করতে দেখে।
আসলে রোদ্দুর স্যারের মত গম্ভীর মানুষের থেকে এটা আশা করা যায়ই না বলতে গেলে।
কিন্তু উনি আমার অভিমান ভাঙাতে এটা করলেন।
আমি এটাই দেখতে চেয়েছিলাম।আমি চেয়েছিলাম যেন উনি একটু রাক্ষস রূপ থেকে বের হয়ে আওয়ারা রূপ ধারণ করে।দেখতে চাচ্ছিলাম লোকটা আদৌ রোমান্টিক কিনা!
ভেবেছিলাম অভিমান না ভাঙালে আমি নিজেই সারপ্রাইজ দিবো।উনি তো আমার জন্য কম কষ্ট করেননি।একটা সারপ্রাইজ দিয়ে অবাক করে দিবো।কিন্তু তার আগেই উনি আমার ইচ্ছে পূরণ করে দিলেন আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে।
সুযোগ পেয়ে আমিও সেদিন অভিমান ভেঙে ওনাকে আপন করে নিয়েছিলাম।
আমার ভাবনার মাঝেই ফোনটা বেজে উঠল।
ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম রোদ্দুর স্যারের নাম্বার।কল রিসিভ করে কানে দিতেই বলে উঠলেন,
-“অতসী!তুমি কোথায়!”
ওনার গলাটা কেমন যেন ঘুম ঘুম মনে হলো।আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
-“আমি কই মানে!বাসায়!”
-“বাসায় কই।”
ওনার গলাটা কেমন যেন শোনাচ্ছে। আমি আবার বললাম,
-“আরে বাসায় খাটের ওপর বসে মেহেদী দিচ্ছি। আজ মেহেন্দী না?”
রোদ্দুর স্যার জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে বললেন,
-“মেহেদী কেন দিচ্ছ?মেহেদী দিয়ে কি হবে?”
-“মানেটা কি!আপনার মাথা ঠিক আছে? ”
উনি হঠাৎ কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,
-“না!আমার মাথায় কি যেন হয়েছে অতসী।ওরা আমায় কি যেন খাইয়েছে।আমার মাথায় মনে হয় কিছু নেই।”
-“এমা!আপনি এমন কাঁদো কাঁদো ভাবে বলছেন কেন।কি হয়েছে টা কি?বুঝতেই তো পারছি না।”
-“অতসী!তুমি কই হ্যা।এখনো আসছ না কেন।”
-“আরে আমি বাসায় বললাম না?আর আমি আসব কেন?”
-“আরেহ।তুমি না আমার বউ।তুমি আসোওওও।প্লিইইইজজজ।আই মিসসসস ইউউউ ব্যাডলি..”
আমি চোখ বন্ধ করে ছোট শ্বাস নিলাম।ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।
-“এটা কেমন মজা?”
-“মজা?কিসের মজা?তুমি না আসলে মজা হবে কেমনে।”
-“ছি।আপনি কল কাটুন তো।হয়েছে টা কি!”
-“কি হয়েছে? কার কি হলো?ধ্যাত।বাদ দাও তো।তুমি এসো না!”
-“আরে আমি কেমনে আসব।”
-“জানো অতসী?”
-“কি সমস্যা!”(চোখ-মুখ কুঁচকে)
-“আমার না একটা পা খুঁজে পাচ্ছি না।”
-“কিইইই!”
-“হ্যা।আমি আমার একটা পা খুঁজে পাচ্ছি না।”(কাঁদতে কাঁদতে)
-“কিসব বলছেন আপনি।মাথা ঠিক আছে?ওয়েট ওয়েট।আপনি কি কিছু খেয়েছেন?”
-“না।তুমি তো আসছোই না।খাব কি করে।”
-“আবার বাজে কথা! আপনি কল কাটুন তো।”
-“আরে তুমি শুনো তো।”
আমি কল কাটতে যাব এমন সময় পাশ থেকে আওয়াজ এলো,
-“দে আমি কথা বলছি।”
আমি ফোনটা কানে লাগিয়ে রাখলাম।একটা ছেলে গলা ভেসে এলো,
-“আসলে রোদ্দুর ভুলে এক বোতল খেয়ে ফেলেছে। ”
-“ভুলে নাকি আপনাদের জোর করায়?”
-“ওই..আসলে..”
-“এগুলা ঠিক না বুঝছেন!ওনাকে ভালো করে সেন্সে এনে বাসায় দিয়ে আসবেন।ওনার বিয়ে।বলে দিলাম আমি।”
-“ভাবী আপনি…”
-“যা বললাম তাই করুন।”
বলেই কলটা কেটে দিলাম।উফফ!কই আছি আমি!এখনো হৃদপিন্ডটা কাঁপছে।একটুর জন্য হার্টবিট বন্ধ হয়নি।কিসব কথাবার্তা!
ছ্যাহহ!সায়ন্তির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও হা হয়ে তাকিয়ে আছে।আমি ঢোক গিলে বললাম,
-এমনে তাকায় আছিস কেন?”
-“কে কল দিলো?”
যাক কিছু শোনেনি!ভাবছি,সায়ন্তি এসব শুনলে তো পুরো পৃথিবী ছেড়েই বিদায় নিত।
।
গায়ের হলুদের সময় রোদ্দুর স্যার এসেছিলেন। কিভাবে এসেছিলেন জানি না।বিয়ের আগে এভাবে বর কিভাবে নির্লজ্জ ভাবে চলে আসতে পারে সেটা এনাকে না দেখলে বোঝাই যাবে না।আমি তখন লজ্জায় কিছু বলার মত ভাষা পাচ্ছিলাম না।উনি সবার সাথে হালকা-পাতলা কথা বলে সুন্দর করে আমার রুমে ঢুকে গেলেন।আমি তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হলুদের বাটিতে হাত দিয়ে নাড়াচ্ছিলাম।ওনাকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠে বলেছিলাম,
-“আপনি এখানে কেন হ্যা?”
উনি বিছানায় শুতে শুতে বলছিলেন,
-“আমি তোমার বর হব। কালকে বিয়ে।আর আমাকেই জিজ্ঞেস করছ আমি কেন!স্টেন্জ!”
-“আরে আপনি বিয়ের একদিন আগে এখানে!ছি ছি।সবাই কি ভাববে।”
-“আই ডোন্ট কেয়ার।”
-“আপনি কেন এসেছেন শুনি!আমাকে লজ্জা দিতে!”
-“একদম না তোমাকে হলুদ লাগাতে।”(বাঁকা হেসে)
বলেই উনি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
-“তুমি পিছাচ্ছো কেন?”
-“আপনি এগুচ্ছেন কেন?”
-“হলুদ লাগাব তাই।”
বলেই উনি আচমকা আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন। আমি বরাবরের মতই চমকে উঠে তাকালাম।তারপর বললাম,
-“ক..কেউ চলে আসবে।প্লিজ সরুন আপনি।”
-“তো আসুক।”
-“প্লিজ!”
উনি সরলেন না।ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতেই আমার নিঃশ্বাস ঘন হলো।উনার প্রতিটা নিঃশ্বাস আমার চোখে-মুখে পড়ছে।আমি হাসলাম।উনি অবাক হয়ে তাকালেন।আমি হাত নিয়ে ওনার গালে ছুঁইয়ে বললাম,
-“আমার বিয়ের হলুদ!”
উনি চমকে উঠলেন।আমাকে ছেড়ে আয়নায় তাকিয়ে বললেন,
-“এটা কি হলো?”
আমি হাতজোড়া উঠিয়ে বললাম,
-“আমি হলুদের বাটিতে হাত দিচ্ছিলাম।”
উনি আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালেম।আমি হো হো করে হাসছি।উনি বাঁকা হাসলেন।আমার হাত ধরে পিছন দিকে ঘুরিয়ে নিলেন।আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন।আমার পিছনে উনি।আমার কাঁধে থুতনি ঠেকালেন।নিজ গালে হাত দিয়ে হলুদ নিলেন।আমি বুঝতে পারছি না যে উনি ঠিক কি করতে চাচ্ছেন। হঠাৎ পিঠে ঠান্ডা কিছু অনুভব করলাম আমি।চোখ বড় বড় করে স্ট্রেইট হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।উনি শয়তানি হেসে পুরো হলুদ লেপ্টে দিয়ে বললেন,
-“আমার বিয়ের হলুদ।”
উনি গালে গাল ঘষে বললেন,
-“এটা এক্সট্রা।”
আমি ওনার বুকে হাত দিয়ে সরিয়ে বললাম,
-“আপনি কি বাসায় যাবেন?”
-“গেলাম না।কি করবে?”
-“অনেককিছু করতে পারি।”
-“যাব না।কি করবে দেখি।”
আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে ছিলাম।আসলে এই লোক যে কি দিয়ে তৈরী আমি সেটাই বুঝতে পারি না। তবে ওনার মাতলামির বিষয়টা নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম।বলতে গিয়েও থেমে গেলাম।এই মাতলামোটা কাজে লাগানো যাবে।ওয়াও দারুণ একটা আইডিয়া এসেছে। রৌদ্দুর আবরার!বি রেডি।দেখাচ্ছি মজা।
চলবে…
#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:৩২
বাসর ঘরে সাজানো বিছানায় বসে আছি আমি।পরনে ভারী সাজ।ঘুমে আমি কাঁদা।আসলে নিজের বাসা থেকে নাচতে নাচতে বিদায় নেয়ার কারণে পা ব্যাথা আর ক্লান্তি তো আছেই।এদিকে এই লোকের আসার খবর নেই।এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে আমি ঘোমটা টেনে বসলাম।
রোদ্দুর স্যার দরজাটা লাগিয়ে দিলেন।আমার বুকে অনবরত ঢোল পিটাচ্ছে কেউ।
উনি এসে আমার সামনে বসলেন।আমি প্ল্যান মোতাবেক ঘোমটার আড়াল থেকে বের হয়ে এলাম। তারপর বাচ্চা বাচ্চা গলায় বললাম,
-“স্বামী!আপনি কোথায় ছিলেন স্বামী?”
রোদ্দুর স্যার কিছু সময় হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন।তারপর বললেন,
-“কিহ?”
আমি ওনার দিকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলাম।তারপর একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম,
-“আপনি আমার স্বামী না?”
-“হ..হ্যা!”
আমি হু হু করে কেঁদে উঠলাম।নাকিকান্না করতে লাগলাম।উনি তা দেখে থতমত খেয়ে বললেন,
-“এ কি!তুমি কাঁদছো কেন অতসী?কি হয়েছে? ”
আমি তবুও হাত-পা ছড়িয়ে কান্না করছি।উনি আমাকে সামলানোর চেষ্টা করতে করতে বললেন,
-“অতসী!কি হয়েছে? বলো!”
আমি এবার কান্না বন্ধ করে তাকালাম।তারপর আবার বললাম,
-“আমার একটা পা খুঁজে পাচ্ছি না। ”
-“কিসব বলছো!”
আমি আমার একটা পা দেখিয়ে বললাম,
-“দেখুন এটা আছে।কিন্তু আরেকটা যে কই গেলো!”
বলেই উঠে দাঁড়ালাম। তারপর এদিক-ওদিক খুঁজছি। উনি তা দেখে বললেন,
-“আরে বসো তুমি।কি খুঁজো? ”
-“আমার পা।কই বলুন তো!”
উনি মাথায় হাত দিয়ে বসে গেলেন।ওনাকে দেখে আমিও পাশে বসে বাচ্চা বাচ্চা গলায় বললাম,
-“কি হলো স্বামী?আপনার কি হয়েছে? ”
উনি আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন,
-“ইচ্ছে করে করছো?কেমন মজা এটা?”
আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,
-“এটা কি পড়েছেন?”
উনি নিজের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকালেন।গাল টেনে বললেন,
-“শেরওয়ানী!”
-“এটা আমি পড়ব।খুলুন।”
-“হোয়াট!”
-“খুলুন বলছি।”
-“অতসী।বেশি হচ্ছে। ”
আমি আবার হাত-পা ছড়িয়ে কান্না করছি। উনি এবার আমার দিকে এগিয়ে এসে মুখ চেপে ধরে বললেন,
-“চুপ চুপ।একদম চুপ।তোমার কান্না বাহিরে গেলে কি হবে ভাবতে পারছ।সবাই কি ভাববে।মনে করবে তোমায় আমি টর্চার করছি।”
আমি ওনার হাতে কামড় দিয়ে বললাম,
-“আপনি আমার স্বামী হয়ে আমাকে মেরে ফেলতে চান স্বামী।”
-“প্রথমে তুমি তোমার স্বামী স্বামী বন্ধ করো।প্লিজ!”
-“ওকে স্বামী।”
-“উফফ!”
আমি গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছি।উনি আমার সামনাসামনি বসে বললেন,
-“কিছু খেয়েছ?”
-“হ্যা।”
-“কি?”
আমি পিছন থেকে একটা বোতল বের করে বললাম,
-“এটা”
-“এটা কি?”(ভ্রু কুঁচকে)
বলেই উল্টে পাল্টে দেখলেন।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বললেন,
-“এটা তো বিয়ার।”
আমি ওনার হাত থেকে বোতল নিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললাম,
-“এটা বিয়ার?”
-“হ্যা।”
-“এটা গাঁ*জা না?”
-“কিসব বলছো।”
-“আমি তো গাঁজা খেয়ে রাজা হতে চাই।”
-“তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?ওহ গড!তুমি বিয়ার খেয়েছ?”
-“হোয়াটটটট!বিয়ার?সেটা আবার কি?আমি তো গাঁজা খেয়েছি।”
-“আল্লাহ!এই মেয়েটা!বসো।আমি এক্ষুণি লেবু পানি আনছি।আর কে খাওয়ালো তোমাকে এসব?”
-“আপনিই তো।”(ঠোঁট উল্টে)
-“কিহ!আমি?”
-“হ্যা।”
উনি বিরবির করে কি যেন বলে বাহিরে চলে গেলেন।আমি ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানায় উঠে সেই নাচা নাচছি।সেইদিন আমাকে কল করে লজ্জায় ফেলেছিল।সবার সামনে হলুদ লাগাতে চলে এসে লজ্জা দিয়েছিল।আজ এমন জ্বালানো জ্বালাব।বাসর ছুটাচ্ছি।
ওনার ওই পা হারানোর কথাটা কাজে লাগলো।ভেবেই হাসতে লাগলাম আমি।
এমন সময় উনি হাতে করে গ্লাস নিয়ে ঢুকলেন।
আমি চুপচাপ বসে পড়লাম আবার।উনি আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললেন,
-“এটা খাও।”
-“কি এটা?”
-“লেবু পানি।”
আমার আবার লেবুর শরবত হেব্বি লাগে।তাই ওনার হাত থেকো নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলাম।একটা ঢেঁকুর তুলে বিছানায় বসতেই উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন।আমি বললাম,
-“কি?”
উনি তারপর বলতে লাগলেন,
-“তুমি বমি করতে যাচ্ছো না কেন?”
এই রে!এখন বমি হবে কেমনে!আমি জোরপূর্বক হাসলাম।উনি বলতে লাগলেন,
-“বোতল টা দেও তো।”
আমি বোতলটা লুকিয়ে বললাম,
-“স্বামী।আমি ঘুমাই কেমন!”
-“ঘুম পাড়াচ্ছি তোমায়।”
আমি বিছানা থেকে নেমে দৌড় দিতে নিলেই পিছন থেকে হাতে টান অনুভব করলাম।জিভে কামড় আমার।এবার অতসী তুই শেষ!
আমি হাসি হাসি মুখ করে বললাম,
-“কি হয়েছে? ”
-“কি হয়েছে না?”(হেসে)
-“হ্যা!”
উনি আমাকে আচমকা নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমার।
কোমড়ে ওনার হাতের কোমড় স্পর্শে কেঁপে উঠলাম আমি। থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছি ওনার চোখে।
উনি আস্তে করে বললেন,
-“এটা কি ছিল?”
-“ক..কোনটা?”
-“নাটকটা?”
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-“আপনিও সেদিন মাতাল হয়ে কল করেছিলেন।”
-“কোনদিন?”(অবাক হয়ে)
-“মেহেন্দির দিন।”
-“আরে ওটা জোর করে আমায় খাওয়ানো হয়েছিল। তোমায় কল করেছিলাম?”(অবাক হয়ে)
-“হুম।”
-“কিছু উল্টাপাল্টা বলিনি তো?”
-“বলেছেন বলেই না প্রতিশোধ নিলাম।”
-“তুমি আমার এতটা সময় নষ্ট করলে।”
উনি আমার পেটে চিমটি কেটে বললেন,
-“পেটে পেটে এত।”
-“আউচ!”
-“লাগলো তাই না?”
উনি আরো জোরে খামচে ধরলেন।আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম।আমার হাত ওনার কাঁধ স্পর্শ করেছে।অনুভব করলাম,আমার ঠোট কাপছে।প্রচন্ড ভাবে।হার্টবিট বেড়ে গেছে।
পরক্ষণেই সেদিনের মত উষ্ণ ছোঁয়া অনুভব করলাম আমি।তৎক্ষনাৎ চোখজোড়া খুলে গেল।
নিজের ওষ্ঠ জোড়া তার মধ্যে আবদ্ধ।
অনুভূতি রা আমার মনে দানা বাঁধছে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে ওনার ভালোবাসা ছুঁয়ে দিচ্ছে। উদরে ওনার হাতের ছোঁয়া পেতেই আমি চোখ খুললাম। উনি আমার কপালে কপাল ঠেকালেন।আমি আবারো চোখ বন্ধ করলাম।উনি আমার চুল খুলে দিতেই চুলগুলো এলোমেলো হয়ে বিছিয়ে পড়লো।
কিছু সময়ের মধ্যেই নিজেকে ওনার কোলে আবিষ্কার করলাম আমি।উনি আমার চোখে চোক রেখে বললেন,
-“ভালোবাসি অতসী। নিজের চেয়েও বেশি। এই ভালোবাসার পূর্ণতার প্রমাণ হিসেবে আজ এই চাঁদকে সাক্ষী রেখে তুমি আমার হবে?”
লাইট নিভে গেলো।এত বড় জানালাটা যেটা রোদ্দুর স্যারের বিছানার একদম পাশে।ওটা থেকে আসা চাঁদের আলো আর দমকা বাতাসে আমার দেহের শিরা-উপশিরায় শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আমি ঢোল গিললাম।উনি আবার বললেন,
-“কি হলো?হবে না আমার?”
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে মাথা উপর-নিচ নাড়ালাম। উনি হয়ত হাসলেন।গলদেশে ঘন ঘন নিঃশ্বাস অনুভব করলাম। আমার শ্বাস ঘন হয়ে উঠলো।ওনার নেশাতুর কন্ঠ,
-“একবার নাম ধরে ডাকবে?”
-“আ..আমি পারব না।”
-“একবার।”
-“আ..আসলে..”
-“একবার।”
আমি চুপ করে রইলাম।উনি আবার বললেন,
-“তুমি শুধু আমার অতসী।শুধু আমার।”
-“আপনিও শুধু আমার #প্রিয়_রোদ্দুর। শুধু আমার।”
ওনার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।চাঁদের আলোয় তা স্পষ্ট দেখলাম আমি।আবারো অনুভব করলাম তার গভীরতম স্পর্শ। তার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে সাড়া দিলাম।হয়ত অবশেষে হাজারো বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে আজ থেকে আমাদের নতুন-জীবনের শুরু।নতুন পথচলা শুরু।ওনার আর আমার ভালোবাসা ময় মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রইলো ওই চাঁদ।
।
পর্দা টেনে সরিয়ে দিতেই আলো এসে পড়লো রোদ্দুরের চোখে-মুখে। বিছানার উপরেই এত বড় জানালা কিনা।আলো তো সরাসরি মুখেই পড়বে।রোদ্দুরের ভ্রু – কুঁচকে গেলো। বালিশ নিয়ে মুখের উপর দিয়ে দিলো।আমি পর্দাগুলো সরিয়ে দিয়ে বসে পড়লাম।এতক্ষণ হাঁটুর উপর ভর দিয়ে দাড়িয়ে পর্দা সরাচ্ছিলাম।পিছনে তাকিয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।তারপর ওনার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,
-“মাস্টারমশাই? উঠুন!”
পরমুহূর্তেই ওনার ঘুম ঘুম গলা ভেসে এলো,
-“হুমম…আরেকটু।”
আমি হেসে বললাম,
-“তাড়াতাড়ি উঠুন।আপনার চা ঠান্ডা হচ্ছে।”
উনি মুখ থেকে বালিশ সরিয়ে বললেন,
-“আরেক..”
বলতে বলতে থেমে গেলেন।আমি ওনার দিকে ঝুঁকে ছিলাম।এখন বসলাম ভালো করে।তারপর বললাম,
-“কি?”
উনি আমার হাত ধরে টেনে নিতেই আমার চুলগুলো ওনার মুখে বিছিয়ে পড়লো।আমি থতমত খেয়ে ওনার বুকে হাত রেখে বললাম,
-“এসব কি!উঠুন।”
উনি আমার চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিতে দিতে ঘুম ঘুম গলায় বললেন,
-“তুমি অপ্সরী অতসী।তুমি আমার হৃদয় বিধ্বংসীনী,তুমি মায়াবিনি,সর্বনাশিনী।”
আমি ওনার ঘুম ঘুম গলা শুনে ওনার চোখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।আসলে ওনার গলাটা এতটা সুন্দর। এতটা মায়া আছে ওনার চোখে।
উনি আমাকে আরেকটু কাছে টেনে নিতেই অবস্থা বেগতিক দেখে ওনাকে ছাড়িয়ে উঠে যেতে নিলাম আমি।
কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।উনি আমার গালে হাত দিতেই কেঁপে উঠে বললাম,
-“ক..কি হ..হচ্ছেটা কি।”
-“কিছু না।”
-“আপনি..”
নাহ শেষ রক্ষা হয়ত হলো না।পরমুহূর্তেই আবারো সেই চিরচেনা স্পর্শে মত্ত হলাম আমি।
কিছু সময় যেতেই ওনার বুকে মাথা রেখে জোরে শ্বাস ছেড়ে বললাম,
-“আমার মনে হয় আপনি একটা পাগল।”
উনহ আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
-“আর তুমি পেত্নী।”
আমি মুখ ভেংচি কেটে ওনার বুকে শুয়ে রইলাম।মনে হলো,এই বুঝি আমার সবচেয়ে শান্তির জায়গা।মনে হলো আবার বলি,
-“খুব ভালোবাসি আপনাকে আমার #প্রিয় রোদ্দুর!”
আজ তবে সেই স্বপ্ন টাও সত্যি হয়ে গেলো।হুম…হয়!
কিছু কিছু স্বপ্ন আসলেই সত্যি হয়!
চলবে….