প্রিয় সুখ-১
________
আজ নীহারিকার বিয়ে।তিক্ত মেজাজে সে তাকিয়ে আছে দক্ষিনের জানালার দিকে।পালাবে সে!হুম পালাবে।নিজের বিয়ে থেকে।কাঠের জানালা।সামনে বাউন্ডারি।খোলা জানালায় কোনো গ্রীল নেই।ছিল।কিন্তু কাল সে ছলে বলে কৌশলে এটা খুলিয়ে নিয়েছে।লোহার গ্রীল যুক্ত জানালা তার পছন্দ না।কেমন যেন বন্দী বন্দী মনে হয়।সে হচ্ছে উড়ন্ত পাখি।ধরে বেঁধে এসব পাখিকে রাখা যায় না।সে উড়তে জানে।তাহলে তাকে উড়তে না দিয়ে বাবা মা কেন যেন দু’টি সাদা শুভ্র ডানা ভেঙ্গে দিতে চায়?নীহারিকা তার বাবা মায়ের অবাধ্য মেয়ে।এর একটাই কারণ।সে উড়ন্ত পাখি।ডানা ঝাপটে উড়তে পছন্দ করে।কিন্তু তার বাবা!প্রচন্ড এক রোখা মানুষ।সে এখন বড় হয়েছে।ঘুরাঘুরি একাই করতে পারে।সেই ছোট থেকে! একদম ছোট থেকে তার পিছনে পিছনে ঘুরাই যেন বাবার বিনা বেতনে চাকরি।স্কুল জীবনে এক সেকেন্ডের জন্যেও বাহিরে একা যেতে দিতেন না।নিজে স্কুলে নিয়ে যেতেন, নিয়ে আসতেন।ইশ্ কি বিশ্রী ব্যাপার স্যাপার।বান্ধবীরা তাকে নিয়ে কত মজাই না করেছে।শুধু করেছে বললে ভুল হবে।করছে।কারণ এখন সে ভার্সিটির স্টুডেন্ট।অথচ তিনদিন আগেও তার বাবা তাকে নিজের বাইকের পিছনে চড়িয়ে ভার্সিটিতে নিয়ে গিয়েছে।ছোট থেকেই সে এসব সহ্য করতে করতে বিরক্ত।মেয়ে হয়েছে বলে কি স্বাধীনতা নেই?কই তার ছোট ভাই প্রিয়মকে তো এই বয়সেই একা একা চলা ফেরা করতে দেয়।যেখানে প্রিয়ম সবে পড়ে কলেজে।সে তো সব কাজই একা করে।তবে তার বেলায় এত নিয়ম নীতি কেনো?কখনো বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতে দেয়নি।মেয়ে বন্ধুদের সাথেও না।সব সময় যেখানে যাবে বাবা মায়ের সাথে।একদিন একটা ছেলে ফ্রেন্ড বাসায় এসেছিল।তার খাতা দিতে।বাবা তো দেখেই তাড়িয়ে দিলেন।কি জঘন্য ব্যাপার।ছিঃ কি ভেবেছে কে জানে?ছেলেটা আর তার সাথে কথাই বলেনি।খুব খারাপ লেগেছে তার।তারপরে নিয়ম বাঁধা।এটা করতে হবে।ওটা করা যাবে না।আরো কত কি। এমন পরাধীন জীবন সে কিছুতেই মানতে পারছে না।মেয়ে বলে সব কিছুতেই বাঁধা।কেন??কেউ ভালোবাসে না তাকে।কেউ না।বাবা মায়ের এমন এক চোখা ব্যবহার তার একদম সহ্য হচ্ছে না আর।সব কিছুকে ছাঁপিয়ে তারা এবার জীবন সঙ্গীও বেছে দিতে চাইছে।এটা কেমন কথা??বিয়ে করবে সে?তার পছন্দের গুরুত্ব আছে কি নেই?মাত্র ভার্সিটির প্রথম বর্ষ তার।এখনই বিয়ে??যদিও ছেলেপক্ষ না কি বলেছে পড়াবে।এত শত সে বোঝে না।যেখানে ছেলের মুখই দেখলো না।কিন্তু যা বর্ননা শুনেছে?মাথা ঘুরে গেল।ফুফাতো বোন মিতা বলেছে ছেলে না কি দারুন কালো।যাকে বলে পাতিলের নিচ।ঠিক আছে কালো ছেলে সমস্যা কি?আল্লাহ বানিয়েছে, চলবে।কিন্তু টাক!বাবা কিনা তার মেয়ের জন্য টাক খুঁজে নিয়ে আসলো?সেটাও ছাড় দিল।সর্বশেষ বুড়ির ব্যাপারটা একদম মেনে নিতে পারলো না নীহারিকা।মোটা মানুষ একদম পছন্দ না তার।ডাক্তার হয়েছে তো তার বাপের কি? নীহারিকা জিভ কামড়ে ধরে।মুখে উচ্চারণ করে,
’ ধ্যাৎ।এখানেও বাপ!’
সব মিলিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে আজ সে পালাবে।বিয়ে তো সে নিজের পছন্দের ছেলেকেই করবে।যদি করে।তা না হলে নাই।বাবা মায়ের সব কথাই শুনেছে সে।এবার আর শুনছে না।
একটা লম্বা শাড়ি নিয়ে আসে সে।এটা বিয়ের শাড়ি।কিছুক্ষণ পরেই তাকে সাজাতে আসবে।ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হচ্ছে।শেষ সময়।শাড়িটা ঝুলিয়ে দেয় নিচের দিকে।একটা সাদা কাগজে সুন্দর করে লিখে রাখে পালিয়ে যাওয়ার পত্র।আচ্ছা পালিয়ে যাওয়ার পত্রে কি কি লেখে?নীহারিকা কিছুসময় ভাবলো।পরে সময় নেই ভেবে দ্রুত কাজে লেগে পড়লো।ধীরে সুস্থে নেমে পড়ে সে।কালো বোরখা মুখে নিকাব।কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সে ছুঁটছে।বাড়ির পিছনের দিকে পূজাদের বাড়ি।পূজার মা ফুল ছিড়ছে জবা গাছ থেকে।ভয়ে আঁতকে ওঠে দেয়ালের পাশে লুকিয়ে পরে নীহারিকা।পূজার মা খুব ভয়ঙ্কর মহিলা।তিলকে তাল আর তালকে তিল তৈরি করা উনার স্বভাবে আছে।পূজার মাকে দেখে নীহারিকার মনে পড়ে গেলো আগের বছরের কথা।সে চুপি চুপি পহেলা ফাল্গুনে বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে বের হয়েছিল।এক পলক মাত্র হলুদ শাড়ি পড়া দেখে ছিল।ব্যস সোজা আব্বুর কাছে।সে বার খুব বকা খেয়েছিল।সেটা বড় কথা নয়।বড় কথা হচ্ছে আব্বু খুব রেগে গিয়েছিল।একদম উঁচিত হয়নি।নীহারিকা খেয়াল করছে সে আবার বাবার কথা ভাবছে।নিজেকে একটু ঝেড়ে নিয়ে সে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।এক নিঃশ্বাস সাহস নিয়ে সে ছোট ছোট পা ফেলে পূজার মায়ের চোখ ফাঁকি দিতে পেরেছে।খুশিতে তার দুনিয়া দুলছে।একটা রিকশা নিয়ে রওনা হলো নতুন গন্তব্যে।সবকিছু রঙ্গিন মনে হচ্ছে।রঙ্গে ভরা দুনিয়া তার।পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষটি বোধ হয় সেই।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে থামে রিকশা।বোরখা পড়া নীহারিকা দীর্ঘ পা ফেলে নেমে পড়ে।রিকশা ভাড়া চুকিয়ে সে ট্রেনের টিকিট ক্রয় করতে যায়।সিলেট যাবে।চায়ের দেশে।নীহারিকা চা খোর।চায়ের নেশায় বুঁদ হয়ে তার পরীক্ষার সময় গুলো পার হয়।তাই ঠিক করেছে চায়ের দেশে ঘুরতে যাবে।সেখানে তার এক বান্ধবী থাকে।তার বাসায় যাবে ঠিক করেছে।টিকিট নিয়ে একবার পিছনের দিকে তাকায়।মনে মনে ভাবে সবাই কি করছে?বউকে না পেয়ে নিশ্চুয়ই এতক্ষনে হৈচৈ পড়ে গেছে।বাবা কি করছে??আর মা??মা তো তাকে ছাড়া কখনো খায় না।সেও তো মায়ের হাতে ছাড়া খেতে পারে না।ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠে।নীহারিকা পুরোনো স্মৃতি ভেবে সব পিছনে ফেলে দিতে চায়।কয়েকটি দিনেরই তো ব্যাপার।বিয়ের ঝামেলা শেষ হলেই সে ফিরে আসবে নিজের শহর ঢাকায়।ট্রেনে উঠে নীহারিকা।সিটে বসে।জানালা দিয়ে সব কিছুর উপরে চোখ বুলায়।বিদায়টা এখনই হচ্ছে।হঠাৎ সে ছুঁটে আসে।দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়।হাতল ধরে দাঁড়িয়ে দেখে জনমানব।কত মানুষ!কত ধূলোবালি।তার জন্মস্থান।তার ছোট ছোট স্বপ্নের শহর ঢাকা।ভালোবাসার শহর।আপন মনে হাত নাড়িয়ে বিদায় নেয় সে।আবার ফিরে আসবে কথা দেয়।বুকে হাত দিয়ে প্রাণ খুলে স্বাধীন সত্ত্বার শ্বাস ছাড়ে।আজ থেকে সে স্বাধীন।কেউ বাঁধা প্রয়োগ করবে না তাকে।কেউ আঁটকে দিবে না।কেউ বলবে না তুই এটা করতে পারবি না।ওটা করতে পারবি না।আজ থেকে সে নিজে নিজের মর্জির মালিক।কেউ চিৎকার করছে!!
‘ এসকিউজমি।ও হ্যালো।প্লিজ হ্যাল্প মি।ওই ওই।ট্রেন ছুঁটে গেলে আমি কিভাবে বাড়ি যাবো?টিকিট মিস হলে আর বাড়ি যাওয়া হবে না।দয়া করুন।প্লিজ হ্যাল্প করুন।’
নীহারিকা মাথা কাত করে দেখে।একটা ছেলে।বড় বড় পা ফেলে দৌড়ে আসছে।গায়ে সাদা গেঞ্জি।তার উপরে সবুজ শার্ট।বোতাম গুলো সব খোলা।হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করা।মাথায় কালো হ্যাট।চোখে সানগ্লাস।কাঁধের এক পাশে ব্যাগ অন্যপাশে গিটার।হাটুর দিকে ছিড়া প্যান্ট।পায়ে কনভার্স।হাতে কত গুলো বেশলেট।নীহারিকার মনে হলো রাস্তার ছেলে।তার চোখ বার বার ছুঁটে যাচ্ছে ছিড়া প্যান্টের অংশের দিকে।আবার মনে হলো না দেখে তো পুরোপুরি রাস্তার ছেলেও মনে হচ্ছে না।টিকিট মিস হবে ভেবে সে ভাবলো ইশ্ বেচারা যদি সত্যি গরীব হয়?অনেক ভেবে হাতটা বাড়িয়ে দিলো।ছেলেটি আপ্রান চেষ্টা করছে হাত ধরার।নীহারিকার মাঝের কেউ একজন বলে উঠে,ওই পাগল হলি??এই ছেলে কে হয় যে শাহরুখ মনে করে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিস??তুই কি কাজল??’
নীহারিকা ভাবে সত্যি তো?এটা কি মুভি না কি??ধ্যৎ।সে হাত সরিয়ে নিতে চায়।কেউ আবার বলে,’ তুই কি খারাপ!যদি সত্যি গরীব হয়?সাহায্য না করে এমন কঠিন কি করে হতে পারছিস??কিভাবে??কর সাহায্য।
হঠাৎ ছেলেটি হাতটা শক্ত করে ধরে।ধরে ফেলল! নীহারিকা দ্রুত তাকায়।হ্যাঁ ধরে নিয়েছে।একদম শক্ত করে ধরল।এতো শক্ত করে ধরেছে মনে হচ্ছে হাতের সব হাড় ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাবে।কি আশ্চর্য!অনেক কষ্টে উপরে তুলে নিয়ে আসে।ছেলেটি হাঁপাচ্ছে।হঠাৎ দ্রুত আবার বাহিরে হাত বাড়িয়ে দেয়।চিৎকার করে উঠে,’দৌড়া শালারা।’
মাথা বের করতে পারছেনা নীহারিকা।সামনেই ছেলেটি।হুর হুর করে উঠে আসে আরো তিনটি ছেলে।সাথে দুটি মেয়ে।ভ্রুযুগলে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে আছে নীহারিকা।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রথমের ছেলেটির প্যান্ট দেখছে।একটা চিকন পুরুষালী কন্ঠের স্বর ভেসে আসে কানে,
’আপনাকে ধন্যবাদ।ওহ্ আজ তো আমরা মিস করতে করতে বেঁচে গেছি।’
‘ না।আপনি বেচারা বলে বেঁচে গেছেন।’ নীহারিকার কন্ঠে করুনা।প্রথম ছেলেটি তীর্যক চোখে একবার তাকিয়ে বললো,’ বেচারা??কে??আমি??আপনার কি দেখে মনে হলো আমি বেচারা??’
‘ ছিড়া প্যান্ট পড়েছেন।লোকে দেখলেই বুঝবে।আহা বেচারা!’ছেলেটা এবার হাসলো।বাকিরা একটু অবাক।নীহারিকা বিস্মিত।হালকা মোটা ঠোঁট।হাসলে কপালে দু’টি কাঁটা কাঁটা ভাঁজ পড়ে।হাসছে কেন??নীহারিকা কথা বাড়াল না।অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলে না সে।তবুও তো হ্যাল্প করেছে।অনেক হয়েছে।সে সামনে হেঁটে যায়।মনে হচ্ছে পিছনে কেউ আসছে।পিছন ফিরে দেখে সেই ছেলে।রেগে বললো,
’ আশ্চর্য আমার পিছনে পিছনে কি করছেন??’
‘ আপনি না সরলে তো আমি সামনে যেতে পারছি না।আর আমি বেচারা না।এটা ফ্যাশন।আপনার তো দেখছি ফ্যাশন সেন্স একদম শূন্যের কোটায়।’
ছেলেটা একটু তাচ্ছিল্য করে হাসলো।নীহারিকা বিরক্ত হলো।ফালতু লোক বিড়বিড় করে সিটে বসে পড়লো সে।
‘ এসকিউজমি.’
পাশে তাকালো নীহারিকা।দেখল আবার সেই ছেলে।এত মহা বিপদ।পিছনে পড়েছে একদম।গুন্ডা লাফাঙ্গা না কি??একটু ভয় ভয় করছে তার।ব্যাগ আঁকড়ে ধরে জানালার দিকে তাকিয়ে রইল সে।দম বন্ধ করে আছে।নিঃশ্বাস আসছে না।অজানা আতঁঙ্কে আত্না কাঁপছে।আবার সেই কন্ঠ।নীহারিকা কানে দু’হাত দিয়ে চেঁচিয়ে বললো,’ সমস্যা কি আপনার??আমার পিছনে কেনো পড়েছেন?কি চাই?’
‘ এই যে মেডাম আপনি আমার সিটে বসে আছেন।আমি আপনার কাছে কিছু চাই না।নিজের সিট নিতে চাই।’
চমকে উঠে চোখ খুলে তাকাল সে।দ্রুত টিকিট বের করে দেখল সামনের সিট তার।সে ভুল যায়গায় বসেছে।নিজের প্রতি প্রচন্ড রেগে নীহারিকা মাথায় বাড়ি মেরে বলে,’ গাঁধা একটা।’
সরে বসে সামনের সিটে।ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে এই লোক তার সামনে বসবে।ট্রেন চলতে শুরু করে আপন গন্তব্যে।ছেলেটি সন্দেহান চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,’ পালিয়ে এসেছেন??’
একটা শীতল ঠান্ডা স্রোত মেরুদন্ড বেয়ে নেমে পড়লো নীহারিকার।ধরা খেয়ে গেলো না কি??বাবার হাতে একবার পড়লে জীবন শেষ।পুলিশ ডাকবে??কিন্তু সে তো নিজের বিয়ে থেকে পালিয়েছে।উনার তাতে কি?ভয়ে নীহারিকা মৃদূ কাঁপছে।ধকধক বুকের শব্দে কেমন যেন ভয়টা আরো জেঁকে বসে।ছেলেটি ঈষৎ হাসলো।নীহারিকার পাশে বসে দুটি মেয়ে।সবাইকে একটি দলের মনে হচ্ছে।একুই রঙ্গের পোশাক পরিধান করেছে।প্রথম ছেলেটি নিজের ব্যাগ রাখতে রাখতে বললো,
’ আমি ১০০% সিউর আপনি পালিয়ে এসেছেন।তবে কোথা থেকে ঠিক বুঝতে পারছি না।নিজের বিয়ে থেকে হওয়ার সম্ভাবনা আছে।কি ঠিক বলছি?’
নীহারিকার চোখ কপালে।এই ছেলে এসব জানলো কিভাবে??দ্রুত উঠে দাঁড়ায় সে।চারপাশে বিচক্ষণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সিট খুঁজতে শুরু করেছে।এখানে বসবে না।কিছুতেই না।গরম পড়ছে কি খুব?সরা শরীর ঘেমে একাকার তার।জানালা দিয়ে বাতাস আসছে।ঝিরি ঝিরি মুগ্ধ বাতাস তাকে ছুঁয়ে যেতে পারছে না।মনের মাঝের শব্দ ভান্ডার আজ জানটাই নিয়ে নিবে।এত ভয়!একটা উত্তপ্ত হাসির শব্দ।চমকে পাশ ফিরে তাকায় সে।সব কয়টা ছেলে মেয়ে এক তালে হাসছে।পাশের একটি মেয়ে বললো,’উঠলেন যে??’নীহারিকার হাঁটু ঠকঠক করে কাঁপছে।প্রথম ছেলেটি নিজের শার্টে হাওয়া লাগাতে লাগাতে বলল,’হাসার মত কাজ করছেন কিন্তু আপনি।বসে পড়ুন।আমি কিন্তু পুলিশ নই।’ চোখ লুকিয়ে নিতে চাইছে নীহারিকা।সে যাই করছে,যাই ভাবছে সব যেন দিনের উজ্জ্বল আলোকরশ্মির মত চোখে পড়ছে।মুহূর্তে ধরে নিচ্ছে মানুষটা।কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানির বিন্দু বিন্দু ফোঁটা।হাতের তালু ঘামছে।পিঠ ভিঁজে একাকার।পানি!হুম এই মুহূর্তে তার একটু পানির প্রয়োজন।খুব প্রয়োজন।কার কাছে চাইবে?এদের কারো কাছে চাইবে?নীহারিকার প্রচন্ড অন্তর আত্না কাঁপছে।আবার সেই কন্ঠ,ওহ।নীহারিকার কেন যেন এই ছেলেটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ,বাজে বিশ্রী মানুষ মনে হচ্ছে।বার বার মনে হচ্ছে কেন হাত দিল?যেন হাত নয় শুধু জান ধরিয়ে দিয়েছে।হুট করে ট্রেন ধাক্কা ছুঁড়ে দেয়।নীহারিকা ঢুলে পড়ে যেতে নেয়।হাতে লাল কাপড় বাঁধা মেয়েটি ধরে নেয়।পাশে বসে সে আবার।একটি শক্ত হাত পানির বোতল এগিয়ে দিতে দিতে কঠিন কন্ঠে বলে উঠে,’ ঠোঁটে লাগলে খুন করে দিবো বলে দিচ্ছি।এই কাজটা আমার জানের শত্রু।’
আবার হাসি।নীহারিকা চোখ তুলে এক পলক তাকিয়ে প্রচন্ড আক্রোশ নিয়ে বললো,’ হাসবেন না।কথায় কথায় এত হাসেন কেন আপনি?সমস্যা আছে কোন?’
ছেলেটি হঠাৎ ঝুঁকে পড়ে সামনের দিকে।নীহারিকা ভয়ে দূরে ছিটকে পড়ে।চোখের পাতা শক্ত করে জোড়া লাগিয়ে নেয়।খঁক খঁক শব্দ তুলে।চোখ খুলে তাকায় নীহারিকা।ছেলেটি গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অদ্ভুত গলার স্বর বানিয়ে বলে উঠে,’ আমার মাঝে গভীর সমস্যা আছে ম্যাম।ভয়ঙ্কর সমস্যা।’ নীহারিকার মনে হলো সত্যি সমস্যা আছে।ছেলেটি চোখ টিপ মেরে হেসে উঠে।নিজের সিটে সোজা হয়ে বসে।খুব স্বাভাবিক কথা বার্তা বলে পাশের ছেলেগুলোর সাথে।নীহারিকা পানির বোতল হাতে বসে রইল।এবার সে শতভাগ নিশ্চিত এই ছেলের সমস্যা আছে।ভয়ঙ্কর কোন রোগ হবে হয় তো?এই রোগ আবার ছোঁয়াছে নয় তো??হায় আল্লাহ!
‘পানি কি পান করবেন ম্যাম??না করলে প্লিজ আমার বোতল আমাকে দিয়ে দিন।পুরো ১৫ টাকা নিয়েছে দোকানদার।’
নীহারিকা চরম অবাক।এত কিপটে মানুষ হয়?ছেলেটি দাঁত বের করে হাসে।খুবই বাজে হাসি মনে হচ্ছে নীহারিকার।সিট চেঞ্জ করবে সে।উঠে দাঁড়ায়।এদিক ওদিক খুঁজে কাউকে না পেয়ে নিরাশ হয়ে আবার বসে পড়ে।হুট করে কেউ হাত থেকে বোতল কেঁড়ে নেয়।নীহারিকা তরিৎ বেগে তাকায়।ছেলেটি চোখে মুখে বিরক্তির রেখা টেনে বললো,আচ্ছা বিরক্তিকর পাবলিক তো আপনি।খাবেনই না যখন তখন হাতে নিয়ে বসে আছেন কেন?’
রেগে নীহারিকা বললো,’ পানির বোতলই তো।এমন হাউ মাউ করছেন কেন?’
‘ হাউ মাউ খাউ এসব মেয়েদের কাজ।আমি কেন করতে যাবো?আমি তো কেঁড়ে নিয়েছি।’
বিড়বিড় করে নীহারিকা বললো,’ ফালতু ছেলে।’
‘ বিমুগ্ধ।’
অবাক হয়ে তাকালো নীহারিকা।বললো,’ কি দেখে?’
‘ আমি নিজে বিমুগ্ধ।’
‘ কিসের প্রতি?’
‘ কিসের প্রতি আবার?আমার নাম বিমুগ্ধ।’
নীহারিকা এবার মহা অবাক।এটা আবার নাম হয় নাকি?মুগ্ধ হলে চলত।বিমুগ্ধ??এটা কি??এই ছেলে সত্যি আশ্চর্য কিছু।যার নামই এমন অদ্ভুত সে কেমন হবে ধারণা হয়ে গেছে নীহারিকার।জানালার বাহিরে চোখ রেখে সে ভাবছে ভুল করলো মনে হয়।পালানো উঁচিত হয়নি।এই দুনিয়া ওতো সহজ নয়।যতটা সে ভাবছে।মাত্র শুরু।শুরুতেই সে ভয়ে কুপোকাত।কিভাবে কি হবে?
‘ পালাতে গেলেন কেন মিস.??’
হঠাৎ কথায় বিদ্যুৎ নেয় চমকে উঠে সামনে তাকায় নীহারিকা।তার মনে হচ্ছে এই ছেলে তার সামনে বসেছে শুধু তাকে চমকে দেওয়ার জন্য।চমকের উপরে চমক সে নিতে পারছে না।দম বন্ধ হয়ে আসছে।আশ্চর্য!
__________
#চলবে…………