প্রিয় সুখ-২৬
_______________
আজকের সূর্যটা অন্যরকম। হলুদ, উজ্জ্বল সাদা, কমলা সব যেন মিশে আছে। হাসছে। আবার আনন্দিত হয়ে উজ্জ্বল রং ধারণ করছে। লজ্জায় কমলা হয়ে গেছে সূর্য। ইচ্ছে করছে সূর্যকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে। আচ্ছা সূর্যকে কোলে নেওয়া গেলে কেমন হতো? মিতু আপু মাঝ রাস্তায় হাঁটছেন। গাড়িগুলো উড়ে উড়ে আসছে প্রায়। তার ভ্রুক্ষেপ নেই। আসুক। মেরে উড়িয়ে নিয়ে যাক। ক্ষতি কি। আজ তিনি এত বেশি খুশি আনন্দিত যে সূর্যকে কোলে তুলে হাঁটতে ইচ্ছে করছে। একটু নাচানাচি করলে মন্দ হয় না। রাস্তার মানুষজন পাগল ভাববে। পাগল মানুষগুলো হয় স্বাধীন। পৃথিবীতে আর কেউ স্বাধীন নয়। যতই স্বাধীনতা স্বাধীনতা নিয়ে নাচুক না কেন সবাই নিজ নিজ জায়গায় পরতন্ত্র। কিন্তু মিতু আপু আজ সমাজ ভাঙ্গতে বসেছেন। তিনি আজ স্বাধীন হয়ে ঢাকা শহরের মাঝ রাস্তা ধরে হাঁটবেন। দৌড়াবেন। পাগল বললে বলুক। প্রকৃত অর্থে পৃথিবী ভর্তি সব পাগল। খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে কেউ। কেউ প্রেম বিরহে পাগল। কেউ আবার কাঁদতে কাঁদতে পাগল। আজ তিনি খুশিতে, আনন্দে, কাঁদতে কাঁদতে পাগল হয়ে যাচ্ছে। এই যে তিনি হাসছেন। আবার চোখ দিয়ে অঝর ধারায় কান্নারা চোখ বেয়ে নামি নামি করছে। গুলশানের একটি প্রাইভেট কোম্পানির সামনে এসে মিতু আপু তার পাগলামির পথ চলা স্থগিত করেছেন। উপরের দিকে তাকিয়ে নামটা পড়লেন মোট ছ’ বার। আরও পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সময় নেই। ইতিমধ্যে দশ বাজতে পাঁচ মিনিট তিন সেকেন্ড বাকি। প্রথম দিন দেরি করা জঘন্য অপরাধ। এর কোনো ক্ষমা নেই। নিজের দিকে আরও একবার তাকালেন। আজ খুব অন্যরকম লাগছে তাকে। অকল্পনীয় সুন্দর দেখাচ্ছে। তার জীবনে যা ঘটে সব অকল্পনীয়। সত্যি তো! এই যে তিনি একজনকে পাগলের মত ভালোবাসতেন। তাকেই বিয়ের আসরে রেখে তিনি পালিয়ে আসলেন। একজন প্রকৃত প্রেমিকার কাছে এটি কত বড় অকল্পনীয় কাজ তা সত্যিকারের প্রেমিকারা ব্যতিত কেউ বুঝবে না। কেউ না। আর একটি অকল্পনীয় কাজ তার জীবনে ঘটেছে কাল। মোট চারটা ইন্টারভিউ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি একটিতেও উর্ত্তীণ হতে পারেননি। অবশেষে কোথা থেকে তাযিন ভাই চলে আসলেন। কিছু কোম্পানির সন্ধান দিয়ে বললেন এখানে ইন্টাভিউ দিতে পারেন। মিতু আপু রাজি হলেন না। কারও উপকার নিয়ে তিনি চাকরি বাকরি করতে পারবেন না। মান সম্মানে লাগে তো। তবে তাযিন ভাই নিরুদ্বেগ গলায়ে বলেছে, তিনি কোন সাহায্য করেছে না। মিতু আপু যেন শুধু ইন্টারভিউ দেয়। এটা তো সে চাকরির খবর দেওয়া পত্রিকার মত কাজ করেছে। যেমন তারা বিভিন্ন জব জব জব বলে মানুষের কাছে চাকরির খবর পৌছে দেয় তাযিন ভাইও তেমনই একটি ভূমিকা পালন করেছেন। যখন শুনল মিতু আপু চাকরির খোঁজ করছে তখন তিনি কয়েকটা কোম্পানির খবর নিয়ে মিতু আপুতে জানিয়েছে মাত্র। নো ফেভার। নো হ্যাল্প। তাযিন ভাইয়ের দেওয়া বেশ কয়েটা ইন্টারভিউ দিয়ে তিনি আজ জীবনের প্রথম জব পেয়ে বসে আছেন। এটাও অকল্পনীয়। ইশ মানুষের জীবন এত অকল্পনীয় কেন? আগে থেকে সব ধরা যায় না কেন? তাযিন ভাইয়ের মত আগে আগে বুঝে যাওয়ার গুনটা যদি তার থাকত, তাহলে ভেতরে প্রবেশের পরে কি হবে তিনি যেনে নিতে পারতেন। তাযিন ভাইয়ের এই ভয়াবহ দিকটা শিখতে হবে। ড্রেস ঠিক করে লিফটের কাছে গেল মিতু আপু। অনেক ক্লাসি মেয়েদের দেখা যাচ্ছে। এই এলাকায় আসলে সব ভিন্ন মনে হয়। সব অফিস আর অফিস। নামিদামি গাড়ি বাড়ি। উচ্চশ্রেনীর মানুষজন। পৃথিবীতে সত্যি কি কেউ উচ্চ নামিদামি হয়? প্রকৃত অর্থে সব তো গোলাম। আল্লাহর গোলাম। সৃষ্টিকর্তার চিরদাস। মিতু আপু শব্দ করে হাসলেন। সর্বনাশ সবাই কি ভাবছে? ঠোঁট টিপে নিলেন তিনি। নিজের পোশাকের দিকে তাকিয়ে ভাবলেন এদের থেকে একটু বেশি সাধারণ হয়ে গেল না? এই পোশাক লা রিভ থেকে নেওয়া। নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে তিনি কিনেছিলেন। তবুও কেন সাদামাটা লাগছে? হালকা আকাশীর সাথে সাদার মিশ্রণে তৈরি কুর্তি। গলায় ঝুলন্ত ওড়না। চুলগুলো পনি টেইল করে বাঁধা। পায়ে উঁচু হিল। চোখ ভর্তি কাজল। ঠোঁটে যেন গোলাপের পাঁপড়ি। তাকে দারুন দেখাচ্ছে। একটা গম্ভীর জ্ঞানী ভাব নিচ্ছেন। ক্রস বডি করে ব্যাগ রাখা। হাতে একটি কালো পাথরের ঘড়ি রয়েছে। প্যাসেঞ্জার লিফটটের মেয়ে গুলো আড়চোখে দেখছে তাকে। খারাপ তো কিছু পরে নি। এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? মিতু আপু চিন্তা করতে করতে নিজের অফিসের ফ্লোর নাম্বার তিনে এসে ঠেকেছেন। কাঁচের দরজা খুলতেই একটি মেয়ে অতি ব্যস্ত হয়ে বলল,’ আপনি মিস মিতুয়া তাই না?’
অবাক হয়ে গেল মিতু আপু। কিছু সময় বলতে পারলেন না। এই মানুষ তাকে চিনে? নিজেকে সামলে উত্তর দিলেন,’ ইয়েস ম্যাম।’
‘ আরে আমি ম্যাম ট্যার নই। তোমার কলিগ হবো। এসো ডেস্ক দেখিয়ে দি। আমাদের ডিপার্টমেন্ট হেড বলেছেন তোমাকে সব বুঝিয়ে দিতে। চল।’
মিতু আপু বিস্মৃত হয়ে গেলেন। মেয়েটি আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছে। মিতু আপু একটু নিচু গলায় জানতে চাইলেন,’ আপনার নাম কি?’
‘ শিরিন। আপনি আপনি করছ কেন? এখনে সবাই নিজেদের তুমি তুমি করে কথা বলে।’
‘ সবাই?’ মিতু আপু প্রশ্নটা করে বেয়াক্কেল বনে গেলেন। শিরিন মেয়েটি মিশুক প্রকৃতির। দেখেই বুঝা যাচ্ছে। মিতু আপুর সাথে জমে যাবে। অফিস জুড়ে অনেক লোক। বেশিরভাগ নিজেদের কাজে মগ্ন। সাদা সাদা টেবিল। সবার নিজের একটি করে ডেস্ক দেখে মিতু আপুর আরও ভালো লাগছে। এতো খুশি তে তিনি রুমের মাঝে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। শিরিন সহ যাদের চোখে পড়ল সেই দৃশ্য সবাই হতবিহ্বল। আতঙ্কিত নয়নে চেয়ে আছে মিতু আপুর দিকে। এত সুন্দর একটি মেয়ে। চাকরি করতে এসে আনন্দে হাসতে হাসতে পাগল না হয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছে! সকলের নেন্দ্রিয় এই সব সহ্য করতে পারছে না। তাই মস্তিষ্ক কারণ বুঝার চেষ্টায় লিপ্ত। শিরিন বিহ্বল কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,’ কি হয়েছে মিস মিতুয়া? কোন সমস্যা? কাঁদছ কেন?’
‘ খুশিতে। আমি অতিরিক্ত খুশিতে কেঁদে ফেলি।’ মিতু আপু আরও শব্দ করে কাঁদলেন। সবাই কাজ ফেলে তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে উদ্ভাবন করলেন অসম্ভব সুন্দর একটি মেয়ে যে কি না তাদের নিউ কলিগ সে কেঁদে কেঁটে এত অসাধারণ চক্ষুটির কাজল লেপ্টে ফেলছে। কাজের চেয়ে এই দৃশ্য দেখা খুবই গুরুতর সকলের কাছে। মিতু আপু এবার চোখ তুলে চারপাশ দেখতে দেখতে বেশ লজ্জায় পড়ে গেলেন। এটা তো তার বাড়ি বা গ্রাম নয়। এটি একটি নামকরা কোম্পানি। তিনি এর একজন এমপ্লয়ি। এসব বাচ্চাদের মত ব্যবহার গ্রহনীয় নয়। চোখ মুখে কণ্ঠিত হাসলেন তিনি। অবনত গলায় বললেন,’ মিস শিরিন আমাকে ডেস্ক দেওয়া হবে না?’ শিরিন এই অবাকতার মাঝে হেসে ফেললেন। বললেন,’সকলকে দেওয়া হলে তোমাকেও দেখা হবে। ওই যে কর্ণার মাঝেরটা তোমার। খুশিতে মানুষ কাঁদে? তুমি তো আমাকে দ্বিতীয় দফা অবাক করে দিলে।’ মিতু আপু জানতে চাইলেন না প্রথম দফায় কখন অবাক হয়েছিল মিস শিরিন। ধবধবে সাদা ডেস্কটির উপরে একটি ল্যাপটপ। একটি টেলিফোন। ব্যস বাদ বাকি খালি অংশ। মিতু আপুর সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে। একটি অসাধারণ কাল্পনীক স্বপ্ন। চাকরি পাওয়া তো অনেক কঠিন কাজ। মিতু আপু মাত্র পনেরো দিনের মাথায় পেয়ে গেল? কিভাবে সম্ভব? যদিও মিতু আপু খুবই ভালো স্টুডেন্ট। লেখাপড়ায় তিনি তুখড়। কম পড়েও রেজাল্ট ভালো হয় খুব। কুমিল্লার সবচেয়ে ভালো ভার্সিটিতে তিনি পড়েছেন। তবুও একটু কেমন যেন লাগছে। নেহাত কম ইন্টারভিউ তিনি দেননি। পনেরো দিনে সাতটা চাকরির পিছনে দৌড়েছেন। এটা তো প্রাপ্য। মিতু আপু সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছেন। এই টেবিল, এই চেয়ার, এই ল্যাপটপ, এই টেলিফোনটিও এখন তার। ওফ মিতু আপু পাগল হয়ে যাচ্ছেন। সব এত এত এত সুখের কেন? মিতু আপুর চিৎকার করে তার মাকে জানাতে ইচ্ছে করছে মা তুমি তোমার মেয়েদের নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করো। পৃথিবীতে বিয়ে ছাড়াও সংসার ছাড়াও মেয়েদের অনেক কিছু করার আছে। অনেক অনেক কিছু দেওয়ার আছে। অনেক পরিশ্রম বিলি করার আছে। শুধু বিয়ে বিয়ে করে আর মাথা খেয়েও না। চাকরিটা আমি পেয়েগেছি মা শুনছো? মিতু আপু গুনগুন করল। শিরিন তাজ্জব হয়ে তার কর্মকান্ড দেখছে। এই মেয়ে অফিসে ঢুকেছে একঘন্টা হবে। থেমে থেমে কি নাটকটাই না করছে। তবে মেয়েটির মন ভালো। শিরিনের ভালো লেগেছে।
‘ মিতুয়া তোমাকে আমি একটু পরে এসে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছি। লাঞ্চের পরে আমাদের একটি মিটিং আছে। ডিপার্টমেন্ট হেডের সাথে। নতুন কিছু ট্যারগেট সেট করা হয়েছে। এগুলো উনি বুঝিয়ে দিবেন।’
মিতু আপু মাথা নাড়াল। বসে বসে তিনি ভাবছেন এই হেড তো দারুন লোক। নতুন এমপ্লয়দের যে অফিসে ঢুকতে ভয় করে। গা শির শির করে এসব মনে হয় উনি জানে। তাই তো একজন কলিগকে আর একজন কলিগকে রিসিভ করার কাজ দিয়েছে। একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য। কখনো দেখা হলে মিতু আপু অবশ্যই একটি লম্বা ধন্যবাদ দিবেন। ল্যাপটপ খুলে মিতু আপু কি করবেন কি করবেন ভাবতে লাগলেন। আসলেই তো তিনি করবেনটা কি? কাজ হয় কেমন? বই পড়ার মত সহজ তো? না কি অনেক কঠিন? হঠাৎ দুশ্চিন্তায় মিতু আপু ঘামতে শুরু করলেন। এত ভয় লাগছে কেন? আনন্দ, সুখ, খুশি সব কোথায় হারাল? মিতু আপু উল্টো হাতে কপালের ঘাম মুছে নিলেন। পৃথিবীতে যা অতিসহজ মনে হয় তা আসলে কখনো অতি সহজ হয় না। অথচ যা কঠিন মনে হয় তা হঠাৎ করে সহজ হয়ে পড়ে। এই যে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পরে মিতু আপুর মাথায় যেন আকাশ ভাঙ্গল। সব এত জটিল জটিল লাগতে শুরু করল যে তিনি দুই তিন ঘন্টা কোন কাজ করতে পারলেন না। কাঁদো কাঁদো অবস্থা। একটা সময় তিনি সত্যি কেঁদে দিলেন। আশেপাশের কয়েকটা ডেস্কের কলিগ তাকে আবার ড্যাব ড্যাব করে দেখতে লাগল। শিরিন একটু দূরেই ছিল। তবে বেশি দুরে নয়। তার ডেস্ক পর্যন্ত মিতু আপুর ছিপছিপে কান্না পৌছাচ্ছে। হন্তদন্ত হয়ে ছুঁটে আসল সে। হেড এই মেয়ের দেখা শুনা করতে বলেছে। সচরাচর তিনি এসব করেন না। কাজ বাদে তেমন কথা হয় না তার সাথে কারও। মিতু আপুর কান্নার ধমকে টেবিল নড়ছে। শিরিন ইতস্তত করে পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,’ কি সমস্যা? আবার কাঁদছ কেন? কি ভেবে বেশি খুশি হয়ে গেছ?’ মিতু আপু চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন,’ এখন আমি দুঃখে কাঁদছি শিরিন ম্যাম।’ শিরিন অবাক হয়ে বলল,’ আবার ম্যাম বলছ?’
‘ আপনি তো আমার বড়। সিনিয়র। আমি আইডি দেখেছি।’ নাক টানছেন মিতু আপু।
‘ কিন্তু এখানে কেউ কাউকে স্যার ম্যাম বলে না মিতুয়া। সবাইকে ভাইয়া আপু বলবে। বা নাম ধরে।’
‘ স্যারকেও নাম ধরে বা ভাইয়া ডাকব?’
‘ হুম ডাকবে।’
‘ যদি বুড়ো কাকু টাইপের হয় তখন?’ শিরিন বুঝতে পারল এই মেয়ে দেখতে যতটা ম্যাচুউর। ততটা নয়। বাচ্চা বাচ্চা আচরনে ভরপুর। হেড মনে হয় এই জন্যেই শিনিরকে এর কাছে পাঠিয়েছে। হেসে ফেলল শিরিন। চেয়ার টেনে নিয়ে পাশে বসে বলল,’ এখানে কাকুটাইপের লোকও ভাইয়া। চাচাটাইপের লোকও ভাইয়া। চলো দুঃখের কাহিনী শুনাও। সুখের তো শুনতে পারলাম না দুঃখ দিয়ে কাজ হয়ে যাবে।’
‘ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কোথা থেকে শুরু করব। কি করব? আর এই কাগজ গুলো কিসের? এখানে তো সবাই ল্যাপটপে কাজ করছে। আমাকে এত কাগজ দিয়ে রেখেছে কেন?’
শিরিন একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,’ কাগজ গুলো পড়তে দেওয়া হয়েছে মিতুয়া। তুমি এগুলো পড়বে। প্রথম সাপ্তাহে তোমাকে পলিসি গুলো শিখতে হবে। পরে কাজ করবে। এখন এসব পড়ে পড়ে মাথায় ঢুকিয়ে নেও। লোনের প্রপোজাল রিভিউ করার সময় এগুলো তোমাকে সাহায্য করবে। বুঝতে পেরেছ আশা করি?’ শিরিন মুচকি হাসল। বিনিময়ে মিতু আপুর গাল ভর্তি হাসি। এখন সব সহজ মনে হচ্ছে। পানি ভাতের পানির মত। পৃথিবীটা আসলে জপাযুক্ত নয়। শুধু একটু গুছিয়ে কেউ বলে দিলেই হলো। সব সহজ।
লেখাগুলো প্রফুল্ল চিত্তে মুখস্থ করে নিচ্ছে মিতু আপু। এতো আকুলতার সাথে কাজ করতে দেখে বাকি সবাই মনে মনে খুব হাসল। প্রথম দিকে জব করাটা স্বপ্নের মত মনে হয়। সব ভালো লাগে। শুধু কাজ করতে ইচ্ছে করে। ধীরে ধীরে সব বদলে যায়। বিরক্তি, কষ্ট, অসহ্য সর্বশেষ দায়বদ্ধতার আড়ালে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে শুধু গাদাগাদা কাজ করতে হয় আর গাঁধার মত খাটতে হয়। তাই নতুন কলিগদের কাজের প্রতি অতি আগ্রহ দেখলে পুরোনোদের বেশ হাসি পায়। আহা মেয়েটার কপালে দুঃখের ঘন্টি শুরু। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
শিরিনের এরেই মাঝে মিতুয়া নামক মিতু আপুকে যথেষ্ট ভালো লেগে গেল। মেয়েটা আসলে একটু অন্যরকম। হাসিখুশি থাকে। মনের আনন্দে। শুধু সমস্যা একটা ছিঁচকাঁদুনী। কথায় কথায় চোখে জল টাইপের অবস্থা। খুশিতে কাঁদে। দুঃখে কাঁদে। ব্যাথা পেলে নিশ্চুয়ই কাঁদে। কাঁদে না শুধু স্বাভাবিক মুহূর্তে। এর জীবনে অস্বাভাবিক কিছু হলেই সে কাঁদবে। এদিকটা অসহ্যকর। তবে চলবে। মিটিং রুমটি দেখে মিতু আপুর মনে হচ্ছে এটি সিনেমার মতো নয়। তবে একটি লম্বা মাঝারি সাইজের টেবিল রয়েছে। যার চারপাশ ঘিরে চেয়ার। সাদা বোর্ডের টেবিল, সাদা মাথা গোল চেয়ার গুলো সুন্দর। টেবিলের উপরে একটি বড় সাদা কাপে সবুজ ঘাস। আজব অফিসের এতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেউ ঘাস লাগায়? রজনীগন্ধা, লাল গোলাপ, নীল অপরাজিতা, মধুমঞ্জরী এসবের কি অভাব পড়েছে? বড় কাপটির উপর ভর্তি করে মধুমঞ্জরী রাখলে দারুন দেখাত। মিতু আপু মনে মনে ঠিক করলেন একদিন এই ভয়াল কাজটি করবেন। তিনি একটি চেয়ারে বসলেন। হেড আসবে আসবে বলছে। অথচ আসছে না। মিতু আপুর কি যে ঘুম পাচ্ছে বলে বুঝানো দায়। তিনি ভাবলেন একটু ঘুমিয়ে নিলে কেমন হয়? সবাই নিজের নিজের কাজের কথায় মগ্ন। নীহারিকার সাথে কিছুক্ষণ আগে কথা হয়েছিল। মেয়েটা তো এখন থেকে মিতু আপুর মাথা খাচ্ছে। এটা কিনে দিবি। ওটা কিনে দিবি। এখানে যাব। ওখানে খাব। কথার কোন শেষ নেই। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কখন, কোন ফাঁকে ঘুমটা চোখের পাতায় লুটিয়ে পড়ল মিতু আপু লক্ষ্য করলেন না। টেবিলের টুকটুক শব্দে সেই ঘুম লাফিয়ে চলে গেল। লাল চোখে মিতু আপু সামনের দিকে তাকিয়ে চোখ রগড়ান। আজকে কি সব অকল্পনীয় ঘটবে বলে ঠিক হয়েছে? তাযিন ভাই কেন কাল এলো না। আসলে তার থেকে আগে আগে সব জেনে নেওয়া যেত। মিতু আপুর মনে হচ্ছে তিনি স্বপ্ন দেখছেন। এত ভালো স্বপ্নের পরে একটি দুটি খারাপ স্বপ্ন দেখা জায়েজ হয়ে পড়ে। তিনি আবার চোখে হাত বুলিয়ে আবার তাকালেন। শিরিন ফিসফিস করে বলল,’ তুমি এত কেয়ারলেস? আমি আগে বুঝতে পারিনি। ঘুমাচ্ছিলে? মিটিং রুমে? তুমি জানো ডিজিএম কখন এসেছে? বিশমিনিট ধরে সবাই তোমার ঘুম দেখেছে। এমন কি শাহিন ভাইয়াও।’
কান দিয়ে শাঁ শাঁ করে ধৌয়া জাতীয় কিছু বের হচ্ছে। গরম গরম মনে হচ্ছে। লাল হয়ে গেল না কি কান? মিতু আপু আবার একবার তাকালেন। কালো কোর্ট, প্যান্ট, টাই, প্রফেশনাল লুকে বসে থাকা শ্যামলা বর্ণের মিশমিশে কালো চোখের এই পুরুষটি কি করছে এখানে? গাল নাক ঠোঁট মুহূর্তে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে মিতু আপুর। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। ভ্রুক্ষেপ বিহিন নজর শাহিন ভাইয়ের। শিরিন টেনে আবার বসিয়ে দিয়ে খুব ছোট কন্ঠে বলল,’ সমস্যা কি? তুমি এমন করছ কেন? শাহিন ভাই রেগে গেলে কিন্তু তোমার খবর আছে। বসে পড়ো।’
‘ এই লোকটা এই অফিসে কি করছে?’ মিতু আপু বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলেন। হাত পা থাক থাক কাঁপছে তার। শিরিন হতবাক হয়ে গেল। বলে কি এই মেয়ে? তবুও নিজেকে সামলে সে বলল,‘ আরে ডিপার্টমেন্ট হেড। তুমি ইন্টাভিউর দিন দেখনি?’
মিতু আপুর চোখ মুখ লাল হয়ে গেল। ভয়ে আতঁঙ্কে কষ্টে তিনি কিছু বলতে পারছেন না। কন্ঠ কেউ চেপে বন্ধ করে রেখেছে। আল্লাহ আল্লাহ করছেন তিনি। গালা দিয়ে কথা আসছে না কেন? বোবা হয়ে গেলেন না তো আবার? নীহু এ্যাজমার রোগী। তিনি হবেন বোবার রোগী। ভীষণ বিপদজ্জনক ঘটনা। মিতু আপু হিসহিসে গলায় বলতে চাইলেন আমি শাহিন ভাইকে দেখতে পাচ্ছি তুমিও কি দেখছ শিরিন আপু? কিন্তু সে বলতে পারল না। গমগমে গলায় ডিপার্টমেন্ট হেড বললেন,’ ঘুম ভালো হয়েছে আপনার?’ মিতু আপু বিদ্যুৎ ন্যায় চমকে উঠে পড়লেন। এমন কি ঘুরে তিনি চলেও যাচ্ছিলেন। দম বন্ধ হয়ে আসছে। শ্বাসরূদ্ধ করে মারতে চাইছে কি? তিনি লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছেন। এই লোকটাকে তো সে বিয়ে বাড়িতে ফেলে এসেছে। পালিয়ে এসেছে। এই লোকের বিয়ে ভেঙ্গে এসেছে। এ এখানে কি করছে? কে তার খবর দিল? কেউ মিতু আপুকে একটু শান্তিতে থাকতে দেয় না কেন? কেন? বিড়বিড় করতে থাকলেন তিনি। এখন শব্দ আসছে। হেড এবার কঠিন গলায় বললেন,’ কোথায় যাচ্ছেন মিস মিতুয়া? ভেতরে আসুন। মিটিং আপনার জন্য বিশমিনিট লেইট হয়েছে। আরও লেইট করাতে চাইছেন না কি?’ মিতু আপুর কায়া হিমশীতল হয়ে গেছে। নামটা এত আলাদা মনে হচ্ছে কেন? জোড়পূর্বক হেসে ঘুরে তিনি বললেন,’ শাহি না মানে স্যার মানে আসছি।’ মিতু আপু চেয়ারে বসলেন এক বুক কষ্ট নিয়ে। ঘামে ললাট, ঘাড়, কপোল সব ভিজে উঠেছে। যা যা বুঝানো হচ্ছে কিছুই তিনি বুঝলেন না। শুধু হু হু করছেন। সবাই যাওয়ার সময় মিতু আপু উঠে দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিলেন। একদৌড় দিয়ে একদম বাহিরে। চাকরি করার দরকার নেই। সব ইচ্ছে শেষ। কিন্তু তার ইচ্ছে পূরণ হওয়ার পূর্বে শাহিন ভাই ডেকে বসলেন। তার সাথে জরুরী কথা আছে বলে থাকতে বললেন। সবার সামনে নাও করতে পারছে না দৌড়ও দেওয়া সম্ভব নয়। অগত্যা তিনি বসে কটকট চোখে তাকালেন। এখন কেউ নেই। সব রাগ দেখানো যাবে। রেগে তেড়ে কিছু বলতে নিবে তার আগে শাহিন ভাই বললেন,’ আপনাকে আমার চেনাচেনা লাগছে? কোথায় যেন দেখেছি? ওহ হ্যা আমার সাথে যে মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে দেখতে অনেকটা আপনার মত। অনেকটা নয় অনুরূপ বলতে পারেন। আমি তার উপরে চূড়ান্ত লেভেলের রেগে আছি। ইচ্ছে করছে চড় দিয়ে গাল ছিঁড়ে দিতে। ঠোঁট দিয়ে রক্তের বন্যা বইয়ে দিতে।’ মিতু আপু উঠে পিছিয়ে গেলেন। নিজের দুই গাল রক্ষা করতে হাত চেপে ধরলেন দুই পাশে। চড় দিবে মনে হচ্ছে। শাহিন ভাই নড়লেন না। তার সেভ করা চোয়াল কঠিন। মিতু আপু বিড়বিড় করে বললেন,’ আমি যাই স্যার?’
‘ যাবেন তো। কিন্তু একটা সমস্যা আছে।’ শাহিন ভাই তাকালেন। তার চোখ শান্ত। মিতু আপু কেঁপে উঠলেন। ভিতর বাহির সব কাঁপছে। কান্না পাচ্ছে। প্রচুর কান্না। তিনি কেঁদে কেঁদে বললেন,’ আমি যাই প্লিজ। আর কখনো আপনার সামনে আসব না এই আল্লাহ্ কসম।’ মিতু আপু মাথায় হাত দিলেন। শাহিন ভাই হাসলেন। তিনি রেগে আছেন। অনেক রেগে। এবার তো মিতু আপু গোল দিয়েছে। তাই তিনি প্রচন্ড ভয়ে আছেন। কাঁপাকাঁপি ভয়। শাহিন ভাই চেয়ারে ঘুরে ঘুরে বললেন,’ আসবেন না মানে কি? আসতে হবে। অবশ্যই আসতে হবে। কত কষ্ট করে আপনার জন্য সুপারিশ করেছি জানেন? এখন থেকে আপনি আমার চোখের সামনে ঘুরঘুর করবেন। কাল থেকে অফিসে শাড়ি পড়ে আসবেন। আপনার ড্রেস কোড।’
মুখ হা করে তাকিয়ে রইল মিতু আপু। কি সব কথা!
‘ কালকের শাড়ির রং জাফরানি। যেতে পারেন এবার। যান। বের হন। গেট লস্ট।’
মিতু আপু মুর্তির মত দাড়িয়ে আছেন। স্তব্ধ তিনি। এসব কেমন কথা? শাহিন ভাই কি ভাবছে উনি এই চাকরি করবে? কখন না। মনে গেলেও না। জাফরানি রং কোথায় পাবে? শাড়ি কিনবে কিভাবে? আজব তো। মাথা ঘুরছে। গলা শুকিয়ে গেছে। কাঠকাঠ। বুঝিয়ে বলতে হবে সব। মিতু আপু একটু দম নিয়ে কাঁপা গলায় বললেন,’ একটু পানি দিবেন?’
ভ্রু কুঁচকে নিলেন শাহিন ভাই। কত সাহস! এই পরিবারের মেয়েগুলো বজ্জাতের একাশেষ। পানি চাওয়া হচ্ছে? শাহিন ভাইয়ের ইচ্ছে করছে একটি পুকুরে মিতু আপুকে ফেলে দিয়ে বলতে, নেও পানি খাও। মনের মত। তিনি এমন কিছু বললেন না। চুপ করে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললেন,’ গেট আউট।’
‘ পানিটা তো খেতে দিন।’ মিতু আপু দাঁড়িয়ে খেয়ে নিল। তারপর বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে সাহস শ্বাস নালীতে প্রবেশ করিয়ে বললেন,’ দেখুন আমি জানতাম না আপনি এখানে কাজ করেন।’
‘ জানলে কি করেতেন?’ কথা থামিয়ে বললেন শাহিন ভাই।
‘ আরে শুনুন না। জানলে জীবনেও আসতাম না। এখন যেনে গেছি আমিও টাটা। আর হ্যা ব্যস করেছি বিয়ে থেকে পালিয়েছি। কি করবেন? চাকরি থেকে বের করে দিবেন? দিতে হবে না। আমিই আর আসব না। এত ঢং একদম মিতুয়াকে দেখাবেন না। আসি।’ তিনি লম্বা করে সালাম ঠুকলেন। বের হয়েই যেতে নিলেন। শাহিন ভাই হাতটা টেনে বসিয়ে দিলেন পাশের চেয়ারে। মিতু আপু বাক্যহারা। তিনি নিচু গলায় বললেন,’ তোমাকে আমি দেইখ্যা নিমু মিতুয়া। জীবন তোমার নরক বানাই দিমু। এইডা মাত্র শুরু। চাকরী ছ্যাইড়া যাইবা কই? এই হানেই আসা লাগব। আমারে , এই আমারে তুমি বিয়ার আসরে রাইখ্যা পালাইছ না? পালানো ছুটাই দিমু তোমারে।’
শাহিন ভাইয়ের চোখমুখ জ্বলছে। মিতু আপু হি হি করে হাসলেন। গলাটা শাহিন ভাইয়ের মত নিচু করে বললেন,’ আপনি কি করতে চাইছেন বলুন তো? আমি যদি চাকরি ছেড়ে দি তখন কি করবেন? আটকে দেখান। সিনেমা পাইছেন? নিজেরে নায়ক মনে হয়?’ মিতু আপু কাঁদো কাঁদো চোখে হাসলেন। কাজল লেপ্টে অস্থির অবস্থা। ওহ আল্লাহ এই মেয়ে এত সুন্দর কেন? একটু কম সুন্দর হলে হতো না? শাহিন ভাই রহস্যময় হাসলেন। তারপর বললেন,’ তাহলে চাকরি করার স্বপ্ন ভুলে যাও। জীবনে তোমার চাকরি করা আর হবে না।’ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। মিতু আপু একটু দমে গেল। বেশ চমকে গেলেন তিনি। ভয় ভয়ও করছে বুকের ভিতরে। শাহিন ভাই এমনে এমনে তো এই কথা বলেনি। কিছু তো করবে এই লোক। কি করবে জানতে জিজ্ঞেস করল,’ কেন? কেন হবে না? আপনার এই অফিস বাদে বাংলাদেশে আর কোন অফিস নেই?’
‘ তোমার জন্য নেই। যতক্ষণ প্রতিশোধ নেওয়া হবে না তুমি এই অফিস ছাড়তে পারবে না।’
‘ আপনি বললেন আর আমি রাজি হয়ে গেলাম। তাই না?’
‘ হতেই হবে। আচ্ছা তোমার কি কোন অনুশোচনা হচ্ছে না? একজন মানুষকে তুমি ঠকিয়ে এসেছ? তুমি তাকে বিয়ের আসরে সব স্বপ্নের সাথে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছ? তুমি কিভাবে এখনও এত সহজ হয়ে আছ? কষ্ট হচ্ছে না? একটা প্রশ্ন করি? তুমি কখনো ভালোবাসনি আমায়? কখনো না?’ শাহিন ভাইয়ের মিশমিশে কালো চোখ ছলছলে। কষ্টগুলো চোখে ভাসছে। মিতু আপু চুপ করে গেলেন। কলিজা কাঁপছে। ধরফর করছে। শব্দ হচ্ছে খুব। চোখ বন্ধ করে আবার খুলল মিতু আপু। সত্যি সে অন্যায় করেছে। কিন্তু সেই অন্যায়ে তিনি একদম অনুতপ্ত নয়। কিন্তু একটা শাস্তির প্রয়োজন কি সত্যি আছে? তিনি কি বেশি অন্যায় করেছে? শাহিন ভাইয়ার উচিৎ তাকে ঘৃণা করা। চরম ঘৃণা। যে ঘৃণার কোন শেষ নেই। মনের কথাটা মিতু আপু বলে দিলেন,’ না হচ্ছে না। কোন কষ্ট নেই। আপনার নিশ্চয় আমাকে ঘৃণা হচ্ছে। তাই এমন করছেন। ভালো করুন। যত খুশি শাস্তির ব্যবস্থা করুন। তবুও আমি কোন ভাবে কষ্ট পাচ্ছি না।’
শাহিন ভাই আহত চোখে তাকিয়ে আছে। মিতু আপু পুরো দমে উপেক্ষা করে গেলেন। ধূর জীবনে শান্তি নেই। সত্যি নেই। তিনি উঠে গেলেন। শাহিন ভাই এখনও তাকিয়ে। কিছু একটা করে দিতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা মিতুর গলা কেঁটে দিলে কেমন হবে? ছুরি দিয়ে। ধাড়াল সেই ছুরির এক টানে মিতু শেষ। শাহিন ভাই তীক্ষ্ন কন্ঠে বললেন,’ জারফান রঙ্গের শাড়ি। মনে থাকে যেন।’ মিতু আপু অবাক হয়ে গেলেন। কিন্তু পিছনে ফিরলেন না। এই অফিসে জীবনেও না। আর না। শাহিন ভাই মিটমিট করে হেসে ফেললেন। মিতু আপুর নতুন সিমে কল এলো। কে করেছে? কে জানি। তিনি ধরলেন। ওপাশ থেকে শাহিন ভাইয়ের হৃদয়হিম করা কণ্ঠনালী,’ অফিসে না আসার ধান্ধা বাদ দেও। অফিসে তোমাকে আসতেই হবে।’
‘ কত দিন আসতে হবে? মানে প্রতিশোধের যুক্তি কত দিন?’ মিতু আপু ভাবছে শাহিন ভাইকে একটু প্রতিশোধ নিতে দিবে। সব সময় শুধু মেয়েরা প্রতিশোধ নিবে সেটা তো হয় না। মাঝে মাঝে ছেলেদেরও সুযোগ দেওয়া উচিৎ। এই যেমন তিনি এখন শাহিন ভাইকে একটা প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। বাসা পর্যন্ত এই মত পরিবর্তন না হলেই হয়।
শাহিন ভাই অপর প্রান্ত থেকে নিরবিচ্ছিন হাসছে। মিতু আপুর মনে হচ্ছে এই লোক তাকে আবার মারতে চাইছে। এই যে এতগুলো বছর পারেনি রাগের জন্য। এখন তো সেই রাগ নেই। ফলে যে কোন সময় মিতু আপুর মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। নিজেকে ধমক দিয়ে কঠিন হতে বললেন মনে মনে। লাভ হলে না মনে হয়। শাহিন ভাইয়ের সেই শক্ত কন্ঠ, তার হাসি সব কাঁপিয়ে দিচ্ছে তাকে। ভালোবাসা কেন মুছে যায় না? মিতু আপু এই বিশ্রী অনুভূতি থেকে মুক্তি চায়। কিভাবে পাওয়া যাবে? আচ্ছা তার হঠাৎ কষ্ট হচ্ছে কেন? এই কষ্ট তো তিনি অনেক অনেক বছর আগে পেয়েছিল। একুই রকম ব্যথা। একুই রকম দম আটকে আসা। অসহ্য লাগছে সব। মিতু আপু ফোন রেখে দিলেন। অফিস টফিস সব জলে ঢেলে তিনি হাঁটা দিলেন বাহিরের দিকে। ব্যাগ ঝুলিয়ে তাকে যেতে দেখে চমকে গেল সকলে। এই মেয়ে এসেছে থেকে এসব উদ্ভট কান্ড করছে। ভারী অদ্ভুত মেয়ে তো!
রাস্তার ধারে মিতু আপু হাঁটছে। এবার আর পাগল হতে ইচ্ছে করছে না। নিজেকে বৈরাগী বৈরাগী মনে হচ্ছে। এলোমেলো ভাবে পনিটেল করে বাঁধা চুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে হাঁটছে তিনি। শাহিন ভাই কেন তার পিছনে পড়ে আছেন? ডিভোর্সি একটা মেয়েকে বিয়ে করলে তার লাভ কি? মাথাখারাপ লোক একটা। হঠাৎ মিতু আপুর মনে পড়ল এই সব করেছে তাযিন ভাই। হ্যাঁ উনার দেওয়া একটি কোম্পানিতে যে শাহিন ভাই কাজ করে সেটা উনি অবশ্যই জানত। আর সেই কোম্পানিতেই তার কাজ হয়েছে। সব প্ল্যান নয় তো? শাহিন ভাইয়ের সাথে তাযিন ভাই কি মিলিত? এই জন্যই নীহারিকা এত অপছন্দ করে এই ছেলেকে। লাথি মারতে ইচ্ছে করছে মিতু আপুর। নিজের হিল তিনি রাস্তায় একপ্রকার ছুড়ে দিলেন। পরক্ষণে মনে পড়ে গেল ইশ দামি জুতো তার। দু হাজার দিয়ে কিনা। দ্রুত কুড়িয়ে নিয়ে তিনি কেঁদে দিলেন। অনেক অনেক কষ্ট হচ্ছে। কষ্টে বুক ফেঁটে যাচ্ছে। তাযিন ভাই কেন তাকে এত বড় কষ্টের সামনে নিয়ে এসেছে। কয়েকটা দিনও ভালো থাকতে দিল না। তার সব কিছু শেষ করার জন্য এরা উঠে পড়ে লেগেছে। মিতু আপু রাগে দুঃখে হতাশায় জুতো হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলেন,’ তাযিন ভাই আপনাকে আমি মেরে ফেলব। মেরে ফেলে আপনার সব গোস্ত নদীতে ফেলে দিব।’ তিনি আরও চিৎকার করতে লাগলেন। আশেপাশের সবাই হা করে দেখছে। মনে মনে হয়তো পাগলই ভাবছে। সারা রাস্তা জুড়ে কেঁদে কেঁদে তাযিন ভাইকে গালি দিলেন। সাথে শাহিন ভাইকেও ছাড়লেন না। এসব দৃশ্য দেখে শাহিন ভাই গাড়ির ভিতরে হেসে মরে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগেই তিনি প্রমোশন পেয়েছে। সাথে একটি গাড়িও পেয়েছে। এটি আপাতত তার গাড়ি। নীল গাড়ির গ্লাস একটু নামিয়ে রেখেছেন তিনি। মিতু আপু যেদিকে হাঁটছে তার একটু পিছনে তিনি। জুতো হাতে কেঁদে কেঁদে একটি মেয়ে হাঁটছে। কিছুক্ষণ পর পর সে রাস্তায় বসে পড়ছে। তার চোখ মুখ লাল। গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার। লেপ্টানো কাজল আরও লেপ্টে চোখের নিচ আরও সুন্দর দেখাচ্ছে। নাক ফুলিয়ে ফুলিয়ে তিনি চোখের পানি মুছে নিচ্ছেন। ওহ এই দৃশ্য কেমন লাগা উচিৎ? শাহিন ভাইয়ের শ্যামবর্ণের কপালে ভাঁজ পড়েছে। কালছে ঠোঁট ভিঁজিয়ে তিনি আরও ভাবলেন। ভেবে পেলেন না। এই মেয়েকে নিয়ে তার ভাবনার কখনো শেষ হয় না। কখনো না। যেমন এই মেয়ে তেমন তার রূপ তেমন তার জীবন। সব এত ভালো লাগে কেন? পৃথিবীতে কিছু মানুষ আসে। যারা আপনাকে চরম ভাবে কষ্টে ভাসিয়ে দিবে। ডুবিয়ে দিবে। তবুও আপনি তাকেই চাইবেন। তার সাথে থাকতে ইচ্ছে করবে। মন প্রান তার কাছে ছুঁটে যাবে। সব তাকেময় মনে হবে। এই যে সবুজ পাতার নিচে লেকের পাশ ঘেষে মেয়েটি হাঁটছে এই মেয়েটিই তো সেই। যাকে তিনি হাজার হাজার কষ্টের মাঝে চায়। মেয়েটি তাকে প্রত্যাখ্যান করার পরেও চায়। অপমান করার পরেও চায়। ফেলে এসে ছুড়ে দিলেও চায়। ভালোবাসাটা সত্যি অন্ধ। ভয়ংকর অন্ধ। অপরপাশের লোকটি কল তুলতেই শাহিন ভাই হেসে বললেন,’ ছোট ভাই তোমার কপালে তো দুঃখ আছে। কিভাবে কুলিয়ে উঠবে এসব। এই পরিবারের মেয়েগুলো তো ভালো নয়। সব ডেঞ্জারাস। মারাত্নক ডেঞ্জারাস। একজন না কি তোমায় খুন করেছে আর একজন রাস্তায় জুতো হাতে হাঁটছে আর বলছে তোমাকে মেরে ফেলবে। কি হবে একবার ভেবেছ?’
অপরপাশের ব্যক্তিটি হয় তো তার বিখ্যাত সুন্দর, অতি সুন্দর, মাত্রাঅতিরিক্ত সুন্দর হাসিটি হাসছে। যে হাসিতে সে হৃদয় কাঁপিয়ে তুলে ঝড়ে। মিতু আপু এবার বসে গেলেন। তার পা ব্যথা করছে। ভাবছে শাহিন ভাই তাকে ঘৃণা করে? করা উচিৎ? করুক। সে তো চায় ঘৃণার একটি সমুদ্র হোক। তার জন্য। শাহিন ভাই তাকে জঘন্য ভাবে ঘৃণা করুক। বেশ হয়েছে। একদম ভালো হয়েছে। মিতু আপু আবার কাঁদছে। হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে। কষ্টগুলো পিছনে পড়ে থাকে কেন মানুষের? সুখের সময় এত কম কেন? অসহ্য সব অসহ্য। জীবনের সবচেয়ে বড় অসহ্য কাজটি হলো ভালোবাসা। জঘন্য এই ভালোবাসা।
শাহিন ভাই কাঁচ আরও একটু নামিয়ে দিল। মিতু আপু আবার হাঁটছে। মেয়েটি কি বাসায় যাবে হেঁটে হেঁটে? চুলগুলো এতো নড়ছে কেন? পায়ে কি খুব ব্যথা? খুঁড়িয়ে হাঁটছে কেন? আচ্ছা এই মেয়েটিকে ভুলে যাওয়া এত অসম্ভব কেন? কোন ভাবে কি একে ভুলে যাওয়া যায় না? ভালোবাসায় ভুলে যাওয়ার নাম নেই? ডিলেট অফশনটা থাকা জরুরি ছিল। হাতে একটি ছবি। তার দিকে তাকিয়ে শাহিন ভাই বৃদ্ধা আঙ্গুল রাখলেন গালের পাশে,’ ভালোবাসার মানুষকে ঘৃণা করতে না পারাটা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা গুলোর মাঝের একটি।’
_____________________
বাড়িটি বেশ পুরোনো। বাহিরের দেয়ালে কালো ছাপ। লতাপাতা উপরের দিকে উঠে গিয়েছে। সবুজ লতানো গাছ গুলো দেয়াল জড়িয়ে রেখেছে। মাটি থেকে বেশ অনেকটা উঁচুতে তৈরি বাড়িটি বিমুগ্ধ আর আনজুমের দাদার বাড়ি। দরজাটা অনেক বড়। পুরোনো আমলের বাড়ি হওয়ায় সব বড় বড়। এই যেমন সামনের রুমটি বেশ বড়। ঘুরজুড়ে ঠিক কতকটি রুম আছে বলা যাচ্ছে না। তবে অনেকগুলো আছে তা আন্দাজ করা যাচ্ছে। আনজুম ঘুরে ঘুরে দেখছে। তারও একটি দাদার বাড়ি আছে এটা সে কয়েক বছর আগেই জেনেছে। কিন্তু কখন এই বাড়িতে আসা হবে থাকা হবে তা কখন ভাবেনি। এই যে সে হাঁটছে, ঘুরে ঘুরে দেখছে অনুভব করতে পারছে, সব কল্পনার মত লাগছে। এই ঘরে তার আব্বি বড় হয়েছে। এই রাস্তায় সেও হেঁটেছে। ইশ সব কতটা আনন্দের। মজার। ভাবতেই ভালো লাগছে তার। দেয়ালের প্লাস্টার নরম হয়ে খসে পরছে। কিছু কিছু জায়গা তো ভালো ভাবেই ক্ষতবিক্ষত। সে সারাজীবন বিদেশে ছিলো। কয়েক বছর হয়েছে মাত্র এই দেশে থাকে। দাভাইয়ের মত নয় সে। আর এতো সহজে সব মানিয়েও নিতে পারে না। নানুরবাড়িতে থাকতেই কষ্ট হয়েছিল। এই বাড়ি তো তারও পুরোনো। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় তার অত্যন্ত ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে সে নিজের আব্বির শৈশবে চলে গেছে। তার ঘরে তার বাড়িতে তার সাথে হাঁটছে। আচ্ছা আব্বি কি কখনো আসবে তার নিজের বাড়িতে? থাকবে এক সাথে? আনজুম মনে মনে একটি স্বপ্ন বুনে ফেলল। সে তার সব প্রিয় মানুষগুলোকে নিয়ে সুখে কয়েকটা দিন এ বাড়িতে থাকতে চায়। প্রিয় এবং সুখেদের নিয়ে। দাভাইকে রাজি করাতে হবে। তাহলে কাজ একদম হয়ে যাবে। আনজুমকে তার খালামনি অত্যন্ত ভালোবাসা দিচ্ছে। যা দেখে তার আরও ভালো লাগছে। বাংলাদেশের মানুষগুলো এতবেশি ভালো কেন? না কি তার পরিবারটা ভালো। তাদের আরও আগে আসার কথা থাকলেও বিমুগ্ধের একটা কাজ পড়ে গেছিল। তাই তারা একটু দেরি করে এসেছে দাদার বাড়িতে বেড়াতে। সাথে এত বেশি ব্যাগ নিয়ে এসেছে যে মনে হচ্ছে জনমের জন্য চলে এসেছে। প্রিয়ম খুব বিরক্ত। আনজুম আপু সারাজীবন থাকুক সমস্যা নেই। তবে এই তাযিন ভাই? নো, নেভার। একটা অসহ্যকর লোক। বিমুগ্ধ এসেই যার সামনে পড়ল সে হচ্ছে সম্পর্কে তার চাচ্চু। নীহারিকার বাবা। তিনি বিমুগ্ধদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। বিমুগ্ধও তাকিয়ে রইল। কিন্তু শান্ত ভাবে। সে কথা দিয়েছে নীহারিকার বাবার সাথে কখন লাগবে না। দূরে থাকবে। কিন্তু এতো কাছে এসে সে অস্বস্তিতে ভুগছে। আগে কখন এমন হয়নি। সে কখন এই মানুষটাকে পছন্দ করেনি ঠিক আছে। কিন্তু এত কাছেও থাকেনি। কেন যেন তার ইচ্ছে করছে এই মানুষটার সাথে এক কাপ কফি খেতে। বাংলাদেশের টিপিক্যাল চাচা ভাতিজা টাইপ আলাপ করতে। বিমুগ্ধ মনে মনে হাসল। মুখে রগচটা ভাব, দাম্ভিক মুড নিয়ে সে সরে গেল। একদম অসভ্যের মতো। কোন সালাম নেই। হাই হ্যালো নেই। পাশের বাসার আন্টিরা তাযিন ভাইকে উপনাম দিত বেয়াদপ, চরম বেয়াদপ ছেলে। প্রিয়মের তো রাগ চূড়ান্তে। ইচ্ছে করছিল তাযিন ভাইয়ের ওই সুন্দর, মুডি, স্টাইলিশ, দাম্ভিক, ডোন্ট কেয়ার ভাব ওয়ালা চোয়ালটা এক ঘুষিতে বাঁকিয়ে দিতে। কিন্তু সে এমন কিছু করল না। আনজুম আপুর সাথে গল্প করছে। এরা ভাই বোন হলো কিভাবে? একজন আগুন একজন পানি। তারা ভাই বোন অবশ্য দু’জনেই একটু একটু আগুন।
একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নীহারিকা। যাকে একবাক্যে ভয়ংকর বলা চলে। সিদ্ধান্ত হচ্ছে সে রেগে যাবে না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। সে ঠিক করেছে এখন থেকে কথায় কথায় রাগটা একটু কমিয়ে দিবে। মানুষ তার এত নাম দিচ্ছে মনে হচ্ছে নিজের নাম ভুলে যাবে। তাই ঠিক করেছে স্বাভাবিক ভাবে সবার সাথে কথা বলবে। বিশেষ করে বাহিরের মানুষের সাথে। বিমুগ্ধ জাওয়াদ কেউ তাকে রাগিয়ে দিতে পারবে না। কেউ না। ঠোঁটে হাসি টেনে ধরল নীহারিকা। শরীর মৃদু দুলিয়ে দুলিয়ে হাঁটে সে নিজের রুমে এসেছে। আজ না কি তারা এসেছে। নীহারিকা আজ রুম থেকে বের হবে না। কালকে সবার সাথে দেখা করবে। ঘর ভর্তি মানুষ। গিজগিজ করছে। ফুফুরা এখনও আছে। যোগ হয়েছে বিমুগ্ধ আনজুম। তবে ভালো লাগছে। এত মানুষ এক সাথে দেখতে যদিও নীহারিকার ভালো লাগে না তবে এখন লাগছে। প্রিয় মানুষ মনে হচ্ছে সকলকে। অবশ্যই বিমুগ্ধ এই পৃষ্ঠায় নেই।
রুমটা একদম সাদামাটা। সাদা রঙ্গের রুমে বেশিভাগ জিনিস সাদা। একটি সাদা বিছানা। অদ্ভুৎ দেখতে। ভারী ইন্টারেস্টিং। স্টিলের তৈরি সাদা বিছানার পিছনের অংশ লতানো ফুলের মত কাজ। কিছু পাখিও দেখা যাচ্ছে। তবে অত্যন্ত সুন্দর বিছানাটি। একটি আলমারি আর একটি টেবিল রয়েছে। ব্যস আর কিছু নেই। সত্যি কিছু নেই! দেয়াল দেখে বিমুগ্ধ একটি হোঁচট খেয়েছে। বাচ্চাদের মত আঁকা ছবি। এগুলো কি রাগেশ্বরীর বাচ্চা বয়সের পেন্টিং? বিমুগ্ধ হাসল। দৃশ্যগুলোই হাস্যকর। জঘন্য অবস্থা দেয়ালের। সাদা দেয়ালে নীল, লাল, হলুদ, কমলার চিত্র। বাংলাদেশের পতাকাও আছে দেখছি? বিমুগ্ধ শব্দ করে হেসে ফেলল। এই রুমটি তার অবিশ্বাস্য রকমের ভালো লেগেছে। ঘর জুড়ে অনেক লেখা আছে। সব সে পড়বে। সময় নিয়ে। রাগেশ্বরীকে জানার মাধ্যম হচ্ছে এই ঘর। বিমুগ্ধের হঠাৎ মনে হচ্ছে নীহারিকা নামক এই মেয়েটি আসলে নীহারিকা নয়। সে অন্য একটি মেয়ে। যাকে সে চিনে না। যাকে চিনতে পারা খুব প্রয়োজন। তার মস্তিষ্ক কিছুতেই নীহারিকাকে ধরতে পারে না। ওই মেয়েটিকে খুঁজে বের করতে হবে। এই যে এই চিত্রগুলো থেকে। বিমুগ্ধ বারান্দায় গেল। বারান্দাটি বেশি সুন্দর। কাঠের তৈরি একটি দোলনা ঝুলছে। যার পাশের দেয়ালে সব লতানো গাছ। নীলকণ্ঠ ফুল ফুঁটেছে দেখা যাচ্ছে। গাঢ় নীল অপরাজিতা নীহারিকার পছন্দের? খাঁচা! দু’ টি পাখি বেশ বড় হয়েছে। এদের কিছুদিন পরে একটি পরিবার হবে। বিমুগ্ধ নাড়িয়ে দিতেই পাখি গুলো কিটকিট শব্দে চিৎকার করে উঠল। বিমুগ্ধ নিচু হয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,’ রাগেশ্বরী তোদেরও রাগী বানিয়ে দিয়েছে? ইশ কি অবস্থা। ওর মত রেগে যাচ্ছিস কেন?’ হেসে ফেলল বিমুগ্ধ। পাখি গুলোকে নাড়িয়ে চাড়িয়ে দিল। তারপর ফিসফিস করে বলল,’মেয়েটা বড্ড জ্বালায় বুঝলি। আমি দশ দিন ভালো করে ঘুমতে পারিনি। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসছে। দেখতে ইচ্ছে করছে। শীত শীত করতে শুরু করে হঠাৎ। হঠাৎ মনে হয় প্রচন্ড গরম। তোদের কি আর বলবো আমার মনে হচ্ছে আমি আমি না। আমি অন্য কেউ। তোদের মালিক একজন খু/নি। জানিস?’ তুতু বেরিক খুব বুঝদারের মত তাকিয়ে আছে। যেন বিমুগ্ধের কথা তারা শুনতে পাচ্ছে। বুঝতে পারছে। তারা খাঁচার আরও একটু কাছে চলে এসেছে। বিমুগ্ধ দোলনাটায় হাত দিয়ে আগে চেপে দেখল। ভালো শক্ত আছে। তারপর বসে গেল। মনে হচ্ছে দোলনার গায়ে রাগেশ্বরী রাগেশ্বরী ঘ্রাণ। বিমুগ্ধ দোলনার হাতল ধরে চোখ বুজে রইল। রাগেশ্বরী তার খুব কাছে মনে হচ্ছে। মুখে কি একটু ছুঁয়ে দিল? মেয়েটার চোখের মত শরীর ওতো গরম নয়। হাত খুব ঠান্ডা। বরফের মত। বিমুগ্ধের মনে হলো যদি রাগেশ্বরী বুকে একটু হাত রাখত? একদম হৃৎপিণ্ড যেখানে বসে খুব বিরক্ত করে, সেই পিঞ্জিরায় একটু হাত বুলিয়ে দিলে ভালো লাগায় সে মরে যেত। গোপনীয়তা বজায় রেখে বিমুগ্ধ তুতুর দিকে তাকিয়ে বলল,’ আমার কাছে তোদের মালিকের জন্য ভয়ঙ্কর একটি সারপ্রাইজ আছে। যা হবে তোদের মালিকের জীবনের সবচেয়ে বড় চমক।’ বিমুগ্ধ হাসতে লাগল। সত্যি রাগেশ্বরীকে সে খুব কাছে উপলব্ধি করতে পারছে। এই যে এখানে। বাম পাশে তার অবস্থান। এত কাছে কেন? আশ্চর্য্য!
নীহারিকা বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে রেগে সে এক চিৎকার দিয়ে কিছুক্ষণ আগের করা সেই সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করল,’ আপনি এখানে কি করছেন? এত বড় সাহস আপনার? আমার রুমে! আমার রুমে ঢুকেছেন কেন?’ নীহারিকার মাথায় আগুন জ্বলছে তখন। বিমুগ্ধ তখনও চোখ বন্ধ করে দুলছে। মুখশ্রীতে প্রফুল্লতা বিরাজমান। নীহারিকার কথা কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি।
‘ বের হন। আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান?’ ক্ষিপ্র কণ্ঠ নীহারিকার। বিমুগ্ধ এবার স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে বলল,’ কিছু বললে?’ চোখ বন্ধ করে নীহারিকা নিজেকে শান্ত করে বলল,’ আপনি আমার রুমে এসেছেন ভুল করে। দয়া করে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে যান। একজন মেয়ের রুমে এভাবে আসা আমাদের সমাজে জায়েজ নয়।’নীহারিকা মুচকি হাসল। সরে এসে জায়গা করে দিল। বিমুগ্ধ তাকিয়ে রইল সেই হাসির দিকে। নীহারিকা আরও শান্ত কণ্ঠে বলল,’ প্লিজ নিজের রুমে যান। এটা আমার রুম।’
‘ তোমার রুমে থাকা যাবে না?’
‘ না যাবে না।’
‘ কিন্তু আমার তো এই রুমেই থাকতে ইচ্ছে করছে। আর বিমুগ্ধ তো ইচ্ছের বিরদ্ধে কিছু করে না।’ বিমুগ্ধ এবার বারান্দার অপর প্রান্তে থাকা টিয়ারঙ্গা চেয়ারে বসে পড়ল। নীহারিকার মনে হচ্ছে ধৈর্য্য ধরে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা মহা কষ্টের কাজ। এই যেমন এখন কষ্টে তার দম আটকে আসছে। তবুও সে রেগে যাবে না। কখন না।
‘ ঠিক আছে। আপনি কিছুক্ষণ থাকুন। তারপর চলে যাবেন।’ নীহারিকা চলেই যাচ্ছিল। বিমুগ্ধ ডেকে উঠল সেই বিশ্রী নামে।,’ রাগেশ্বরী কাহিনী কি বলো তো? আজ তুমি হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে গেছ কেন? আমার খুব শীত শীত করছে। বাংলাদেশে তো ডিসেম্বরে শীত পড়ে তাই না?’ নীহারিকা বিরক্তিকর হাসল। বলল,’ জি। ডিসেম্বরেই পড়ে। কিন্তু এই রুম খুব ঠান্ডা। ছায়ার নিচে তো তাই। আপনি প্লিজ নিজের রুমে যান। সেটা গরম খুব। ছাদের উপরে তাই। আমি খুব টায়ার্ড একটু বিশ্রাম নিব।’ নীহারিকার কণ্ঠে সত্যি ক্লান্তি। বিমুগ্ধ গ্রাহ্য করল না যেন,’ যাও ঘুমাও। কে নিষেধ করেছে।’
‘ আপনি আমার রুমে বসে থাকবেন আর আমি ঘুমাব?’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল নীহারিকা। বিমুগ্ধ হুট করে দাঁড়িয়ে খুব কাছে চলে আসল। চোখের পলকে ঘটে গেল ঘটনাটি। নীহারিকা ভড়কে গেল। ছিটকে দেয়ালের সাথে গিয়ে লাগল। হাতে ব্যস ব্যথা পেয়েছে। চোখ মুখ খিঁচে নিয়েছে সে। রাগে গজগজ করতে করতে বলল,’ অসভ্য। আপনি চরম অসভ্য। জীবনেও ভালো হবেন না।’
বিমুগ্ধ হাসল। আহ্লাদি গলায় বলল,’ আমি রুমে থাকলে তো সমস্যা নেই। এই স্কন্ধে মাথা রেখে তুমি ঘুমিয়েছিলে। তোমার মাথা বুক পকেটে নেমে এসে কি ভয়াবহ অবস্থায় ফেলেছিলে আমায় জানো?’ নীহারিকা চোখ বন্ধ করে নিল। এবার সে পালাবে। এই বেয়াদপ ছেলের আশেপাশে থাকাই মনে হচ্ছে বিপদ। বিমুগ্ধ আরও একটু কাছে আসতে চাইল। নীহারিকা এক প্রকার জোরেই বলল,’ থামুন থামুন।’ বিমুগ্ধ হেসে ফেলল। নীহারিকা কাঁপছে। থরথর করে। তার ললাট ভর্তি ঘাম। অধর ভর্তি শঙ্কা। দিশেহারা অবস্থা। বিমুগ্ধ অনেক আগে গ্রিলের সাথে ঠেসে দাড়িয়েছে। মেয়েটিকে একটু বেশি আকর্ষণীয় লাগছে কি? বিমুগ্ধের হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে আসল। শীত একটু বেড়েছে। হাত পা ঠান্ডা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আবার গরম লাগছে। নিজের টিশার্ট উপরে তুলে গলায় হাওয়া লাগাল। দমকা হাওয়া আসছে ভেসে ভেসে। অপরাজিতার লতা নড়েচড়ে উঠছে। ঠিক নীহারিকার ভীতু মুখশ্রীর কম্পনের মত। বিমুগ্ধ বুকে হাত বুলিয়ে ভাবল সারপ্রাইজ দ্রুত দিতে হবে। এই মেয়ে তো তার জীবন নাশ করে ছাড়বে। এক চোখ খুলে নীহারিকা বিমুগ্ধকে অন্যদিকে তাকিয়ে শ্বাস নিতে দেখল। এই সুযোগ। এবার সে রুমের ভিতরে ঢুকে চেঁচিয়ে বলল,’ রুম থেকে বেরিয়ে যাবেন না কি বাবাকে ডাকব?’
‘ ডাকো। তোমার ওই বাবাকে আমি ভয় পাই মনে করেছ? হু হা হা।’ বিমুগ্ধ ডাকাতের মত হাসল। দানবীয় হাসি। নীহারিকা চমকে গেল। তার খুতখুতে স্বভাবের ফুফাত বোনেরা বিমুগ্ধকে এই রুমে দেখলে মান সম্মানের বলি দিবে। নীহারিকা হাত দিয়ে ইশারা করল আস্তে হাসতে। বিমুগ্ধ থামল। দেয়ালের একটি লেখা পড়ে সে বলল,’ আম পাতার গল্পও লিখে রেখেছ দেখছি।’ ত্যাড়া চোখে তাকাল নীহারিকা। তার সত্যি ক্লান্ত লাগছে। কিন্তু এই অসভ্য রুম ছাড়ছে না কেন? একটু চুপ করে সে বলল,’ খবরদার এসব পড়বেন না।’ নীহারিকা দেয়াল দু’ হাতে ঘিরে ধরল। বিমুগ্ধ বাম চোখ বন্ধ করে নীহারিকাকে একটি চোখ টিপ মারল। আর হাত গলিয়ে নিচু হয়ে বলল,’ এই ছবিতে তুমি একা কেন?’ নীহারিকা বাচ্চা বয়সে নিজের কিছু বাজে ছবি একেছিল দেয়ালে। মায়ের সাথে রাগ করে। দেয়ালে আঁকা মা পছন্দ করত না। তাই বকা দিলেই সে আঁকতে বসত। একটা সময় এই আঁকাটা ভালো লেগে গেছিল। তাই মাঝে মাঝে এখনও আজেবাজে আঁকে। বিমুগ্ধ গুরুতর ভঙ্গিতে কিছু খুঁজতে ব্যস্ত। নীহারিকার টেবিল, ব্যাগ ঘেটে সে কিছু রঙ্গের পেন্সিল বের করল। নীহারিকা থ হয়ে আছে। করতে কি চাইছে? বিমুগ্ধ হাঁটু ভাঙ্গল। তারপর পেন্সিল দিয়ে নীহারিকার পাশে একটা কিছু আঁকতে শুরু করেছে। ক্রদ্ধে বিমুগ্ধের চুল ছিড়ে দিতে ইচ্ছে করছে নীহারিকার। বিমুগ্ধ দশমিনিট ধরে কিছু একেছে। তারপর উঠে দাড়িয়ে হাত টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করে বলল,’ এবার ঠিক আছে। যাস্ট অস্থির। আমি আমার বাসার দেয়ালেও একে রাখব।’ সে ফোনে একটি ছবি তুলে নিল। নীহারিকার ছবিতে চেহারা ছিল না। এলোমেলো চুলের একটি মেয়ে পিছনে ফিরে দাঁড়িয়ে। ভালো করে বুঝা যাচ্ছিল না। বিমুগ্ধ তার পাশে হাত ধরা একটি ছেলের অবয়ব এঁকে দিয়েছে। নীহারিকা অপলক তাকিয়ে রইল। চিত্রটি একদম বাচ্চাদের হাতের তৈরি মনে হচ্ছে। বিমুগ্ধ তো ভালো ছবি আঁকতে পারে! নীহারিকার চমকিত চাহনী। নীহারিকারটা ছোট হাতের। তার বয়স যখন এগারো ছিল তখন এঁকেছিল। মুগ্ধ একটি দৃশ্য। বাচ্চা বাচ্চা কার্যকলাপ। নীহারিকার মনের আঙ্গিনায় চিত্রটি গভীর ভাবে গেঁথে গেল। সে এখনও তাকিয়ে আছে। পাশের মানুষটি বিমুগ্ধ? নীহারিকা মাথা ভালো করে ঝেরে নিল। আশ্চর্য! উনি তার দেয়ালে হাত দিবে কেন? কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল,’ আপনি আমার দেয়ালে ছবি এঁকেছেন কেন?’
‘ কারণ এখন এই রুম আমার।’ বিমুগ্ধ যৎপরোনাস্তি মারাত্নক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল। লাফিয়ে সে নীহারিকার কোমল বিছানায় ঝাপিয়ে পড়ল। মাথার বালিশটিতে মুখ গুঁজে রইল সে। তার লম্বা শরীর বক্র হয়ে বিছানার গায়ে। অতিশয় চেঁচাল নীহারিকা,’ আমার বিছানায় শুয়েছেন কেন? আমি এখনি সবাইকে ডেকে নিয়ে আসছি।’ নীহারিকা রাগান্বিত শ্বাস ফেলতে ফেলতে রুমের বাহিরে গেল। বিমুগ্ধ নিঃশ্বাস নিচ্ছে। চুলের সেম্পুর ঘ্রাণের সাথে সুগন্ধির একটি তীব্র মিল বন্ধন আছে। প্রাণনাশক মাদকতা কাজ করছে তার শরীরে। ঘ্রাণ নিতে নিতে তার মনে হচ্ছে সে এই পৃথিবী থেকে সত্যি এবার হারিয়ে যাবে। রাগেশ্বরী তাকে সত্যি সত্যি খু/ন করে দিয়েছে। সত্যি সত্যি। কই ট্রেনে যখন দেখা হলো তখন তো এমন হয়নি। বাড়িতে যখন দেখা হলো তখনও এমন হয়নি। হসপিটালে যখন দেখা হয়েছে তখনও সব স্বাভাবিক। কি হয়েছিল সেদিন? কি? সেই আগুন চোখে বিমুগ্ধ এমন ভাবে ঝলসে গেল কেন? এখন তো মনে হচ্ছে তার সব কেমন অন্ধকার। বেগতিক জীবন। বিমুগ্ধের মনে হচ্ছে এই ঘ্রাণ তার নাশিকা ছাড়িয়ে মাথায় চড়ে গেছে। বিছানা জুড়ে রাগেশ্বরীময় ঘ্রাণে সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে। নেশা হয়ে গেছে কি? রাগেশ্বরীর নেশা। এই নেশা তো সাঙ্ঘাতিক মাদক। তাকে আরও ভয়ঙ্কক ভাবে আকৃষ্ট করছে। বিমুগ্ধের মনে হচ্ছে তার জ্বর জ্বর লাগছে। শরীর কেমন গরম হয়ে যাচ্ছে। বুক শব্দ করে লাফাচ্ছে। মাঝে মাঝে আবার শব্দই হচ্ছে না। বিমুগ্ধ নিজের জুতো খুলে ছুড়ে দিল। তার এখন ঠান্ডা লাগছে। গরম ঠান্ডা একসাথে কাজ করে কখন? বিমুগ্ধ কিসের মনের ডাক্তার? কিছুই তো পারে না মনে হচ্ছে। গাঁধা হয়ে গেল কি? না কি পাগল? পাগলের ডাক্তার পাগল হয়ে যাচ্ছে। রাগেশ্বরী তাকে পাগল করে তুলছে। বিমুগ্ধ কাঁথা গায়ে জড়িয়ে নিল। শরীর শির শির করছে। পা ঝিঝি করছে। মাথায় রক্ত চড়ে বসেছে কি? ওহ এত গরম ঠান্ডা কেন? বিমুগ্ধ চোখ বন্ধ করে নিল। মনে হচ্ছে মিষ্টি ঘ্রাণে তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি তার জীবনে অহিতকর কাজ একের পর এক ঘটাচ্ছে। এটি কি অপচিকীর্ষা? না কি অনুগ্রহ? বিমুগ্ধের চোখ খোলা রাখা দায় হয়ে যাচ্ছে। এত শান্তি কোথা থেকে আসছে? মনে মনে সে ভয়ংকর পরিকল্পনা করেছে। ভয়ংকর। বিমুগ্ধ মুখে বালিশ চেপে ধরল। সে বালিশ ছাড়া ঘুমাবে আজ। ঘোরলাগা কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে,’ রাগেশ্বরী প্রাণঘাতী খুব। দক্ষ ডেঞ্জারাস খু/নি। আল্লাহ সে কোথায় এসে পড়েছে? আল্লাহ।’ গভীর ঘুম। ভারী শ্বাস। বিমুগ্ধ আবেশে মিলিয়ে গেল বিছানার সাথে। চাদরের গায়ে। সুবাসের দেশে। যে দেশে শুধু রাগেশ্বরীর বিচরণ। রাগেশ্বরী তো ভয়ংকর নেশাদ্রব্য!
______________
চলবে………….
ভুলত্রুটি আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি দিয়ে দেখবেন। নিশ্চুয়ই ক্ষমা একটি সুন্দর গুন।
@হাফসা_আলম