প্রিয় সুখ-৪২
হাফসা আলম
___________________
দুটি শালিক বসে আছে হিজল গাছের ডালে। সুন্দর সুন্দর হালকা লালছে ফুল গুলো পুনোরায় জীবনীশক্তি নিয়ে ফুটে উঠেছে। বাতাসে পাতার লকঝক নড়া। নীহারিকা বারান্দার দোলনায় বসে সেই শালিকদের প্রেম দেখছে। কারো প্রেম ভালোবাসা দেখলে ইদানিং তার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। এসব ভালোবাসা আসলে কি? জীবনে কেন আসে? না আসলে হয় না? বড্ড জানতে ইচ্ছে হয় তার। বিশেষ করে যারা ব্যর্থ এই প্রেম মহলে তাদের অনুভূতি গুলো কেমন? তাদের কষ্ট গুলো পড়তে ইচ্ছে করে। ভাগ বসিয়ে দুঃখ বিলাসে মগ্ন হতে মন চায়। উঠানের জায়গা বেশ স্বল্প। নীহারিকা দেখছে সাদা পাঞ্জাবিতে তার বাবাকে। না চাইতেও প্রেম ভালোবাসার শালিক পাখি থেকে চোখ সরে বাবার ঘামে ভিঁজা ব্যস্ততা, উৎফুল্লতায় চোখ নিবন্ধ হয়েছে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে তার সেই কি ব্যস্ততা। নীহারিকার মনে পড়ে গেল প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিনটি। খুব আবছা স্মৃতি। হয় তো মনে নেই ভালো করে। পরিবারের মানুষের মুখে শুনা। তারপর কল্পনা করে নিজে সাজিয়ে নিয়েছে ঘটনাটা। পাঁচ বছর বয়সে নিহারীকা নার্সারিতে ভর্তি হয়েছিলো। আফিয়া ভেবেছিলো আরও পরে ওয়ানে ভর্তি করাবে। কিন্তু পাশের বাসার এক মেয়েকে স্কুলে যেতে দেখে নীহারিকার সেই কি বায়না। নাফিস উদ্দিন খুশি মনে নাচতে নাচতে তাকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলো খুব ভালো একটা স্কুলে। স্কুলে প্রথম দিন বাবার কাছে ছিলো স্বপ্নের মত। তার খুশি আনন্দ এখনো সকলের মনে আছে। সারা রাত তিনি ঘুমাননি। নীহারিকার ব্যাগ গুঁছিয়ে দিয়ে ছিলো। আফিয়া তার আবেগ দেখে অবাক হয়ে বলল,’ তোমার মেয়ে কি পৃথিবীর প্রথম মেয়ে যে স্কুলে যাচ্ছে?’
নাফিস উদ্দিন জবাবে বলেছিলো,’ পৃথিবীর প্রথম নয় কিন্তু আমার প্রথম বাচ্চা সে।’
প্রথম সব কিছুতেই একধরনের আবেগ অনুভূতি কাজ করে। নাফিস উদ্দিন মেয়েকে কড়া নিয়মে বড় করেছেন ঠিক কিন্তু তার প্রথম সন্তান হিসেবে এই জগতে সবচেয়ে বেশি ভালোও তিনি বেসেছেন তাকে। সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া স্কুলে তারা বাপ মেয়ে ছয়টায় গিয়ে বসেছিলো। মেয়েকে সমস্ত স্কুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়ে ছিলেন তিনি। অফিস ছুঁটি নেওয়া, ভালো রান্না, বিশেষ উপহার সব কিছুই মেয়ের জন্য করেছিলেন তখন। নীহারিকা বিগত দিন গুলোর কথা বসে বসে ভাবল। বাবাকে সে কেন মনের কথা বলতে পারলো না? কেন এতো এতো সুযোগ আসার পরেও বিমুগ্ধের জন্য লুকানো প্রেম ভালোবাসা গুলো তাকে কব্জা করতে পারলো না? কেন জীবনের শেষ সময়ের কথা চিন্তা করে হলেও সেই পাগলের মত ভালোবাসা পুরুষটিকে আপন করে নিল না? সে তো চাইলেই অনেকের মত পালিয়ে বিয়ে করতে পারত। তাহলে কেন করেনি? কেন এতো কষ্ট বুকের মাঝে জমা করছে? নাফিস উদ্দিনের গলা শুনা যাচ্ছে,’ এই বাবুর্চি তোমার জীবনের সবচেয়ে ভালো বিরিয়ানি করবে। আজ আমার মেয়ের গায়ে হলুদ সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে আমার একমাত্র মেয়ে কোন হেলাফেলার জিনিস নয় হুহ।’
নবীন উদ্দিন নিজের বাবুর্চিকে বলল,’ তোমাকে আমি কিন্তু দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে নিয়ে এসেছি। বিশেষ বিশেষ আয়োজন করো। আমরা ওতো টিপিক্যাল নই যে শুধু বিরিয়ানি করবো হুহ।’
আজ অনেক দিন পরে নীহারিকা হো হো করে হেসে ফেলল। এরা পুরো বাচ্চাদের মত। দীর্ঘ এক হাওয়ার সাথে নীহারিকা খুঁজে পেলো সকল উত্তর। তার বাবার সাথে তার সময় গুলো জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ। তার প্রতি ভালোবাসা দীর্ঘ। আবেগ গুলো জন্ম থেকে শুরু করে একটু একটু করে তার সাথেই বেড়ে উঠেছে। এই আবেগ সাধারণ কিছু নয়। অসাধারণ অনুভূতির নাম এই আবেগ। পৃথিবার কোন ভালোবাসা, কোন আবেগ, মায়া, অনুভূতি এখনো সেই দীর্ঘতা ছুঁতে পারেনি। তাই এই ঘামে ভেজা, হন্য হয়ে মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা ব্যস্ত উত্তেজিত খুশিতে বাকবাকুম হৃদয় যুক্ত পুরুষকে নীহারিকা কষ্ট দিতে পারে না। একবার তো দিয়েছিলো! নীহারিকা ওতো নির্দয় নয় যে বার বার কষ্ট দিবে আর সেই ব্যক্তিও ওতো দয়ালু নয় সে বার বার মাফ করে দিবে। আবেগ অনুভূতিকে চায়ের সাথে গিলে ফেলতে চাইছে নীহারিকা। হাতের বইটিতে মনোনিবেশ করলো। মিতু আপু বিরক্ত। তিক্ত কণ্ঠস্বর,’ এই গরু নিজের গায়ে হলুদের দিনে কেউ চা খেতে খেতে বই পড়ে?’
কপাল কুঁচকে নীহারিকা বলল,’ এমন কোন নিয়ম তো বলেনি তোমার খালামনি। সকাল থেকে যা শুরু করেছে অসহ্য।’
মিতু আপু ধাক্কা দিয়ে নীহারিকাকে বলল,’ চল তোকে সাজিয়ে দি। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান।’
নীহারিকা পূর্বের মত মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে। যেন আজকে এরচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজ মহাজগতে একটিও নেই। দুজনের মাঝে টপ করে শাহিন ভাই ঢুকে পড়েছে। মিতু আপু রেগে রেগে বলল,’ শাহিন ভাই আপনি এখানে কি করছেন?’
তার হাত এক মগ চা। চোখ মুখ গম্ভীর করার চেষ্টা করে বলল,’ শালিকার সাথে বই পড়বো। তুমি যাও তো।’
‘ ওকে সাজাবো আমি।’
‘ আরে ও এমনেই সুন্দর সাজার প্রয়োজন নেই।’ কথাটা এমনেই বলেছিলো তিনি। কে জানত সকাল থেকে মাথার উপরে ঘুরা ঘূর্ণিঝড় এখনই পড়বে। রেগে মেগে আগুন মিতা আপু চিৎকার করে বলল,’ আপনি ওকে সুন্দর বললেন? তাও আমার সামনে? চোখের সামনে থেকে দূর হন। এই এই আপনি আমার খালামনির বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।’
নীহারিকা চোখ তুলল। লাল হয়ে যাওয়া মিতু আপুকে দেখছে সে। তার মিতু আপুটা একদম বাচ্চাদের মত। শাহিন ভাইয়ার জীবনে নতুন আইন পাশ হয়েছে। সে মিতু আপু ব্যতিত এই জগতের কোন নারীকে সুন্দর বলতে পারবে না। বিশেষ করে কম বয়স্ক মেয়েদের। শাহিন ভাই মহা বিপদে পড়ে গেলো। একটু চুপ থেকে বলল,’ তুমি এতো রাইগা যাইতাছ ক্যান মিতুয়া? গাঁজরা আমি নিয়া আসুম একটু পরে। এখন আমার শালির লগে বই পড়বার দেও।’
মিতু আপুর তুমুল রাগ,’ ভুলেও এইখানে বসবেন না। আম্নের এসব ঢং চলবোনা নীহু চল তো এই অভদ্র, আনরোমান্টিক বৃদ্ধ পুরুষের সাথে কোন আলাপ নেই।’
নীহারিকা মনোযোগ দিয়ে আবার বই পড়ছে। সে জানে এখন চূড়ান্ত ঝড়গা লাগবে। শাহিন ভাইয়া যে কেন ভুলে গেছে গাঁজরা নিয়ে আসতে! বেঁচারা এখন শেষ। তাদের দুইজনের মান অভিমান অভিযোগ দেখে নীহারিকা উঠে পড়েছে। এসব খুনশুটি নিরবেই সুন্দর।
প্রিয়ম একটি সুন্দর সাদা হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে। সাদার উপরে কাঁচা হলুদ রঙ্গের ডিএমসি সুতোর কাজ। হাতে বুনা। নিশ্চয়ই মায়ের কাজ। নীহারিকা ভাবে তার মা কত গুণি! ভালো স্ত্রী, ভালো রাধূনী, ভালো মা, ভালো বউ মা, ভালো বোন, ভালো একজন সখিন মানুষ। সে হিসেবে সে খুব অকেজো। প্রিয়ম আতর মাখতে মাখতে এসে দাড়ালো বোনের সামনে। তার মুগ্ধ করা হাসি। বলল,’ কেমন লাগছে আপু?’
নীহারিকা ভাইয়ের ছোট কলার ঠিক করে দিয়ে বলল,’ আমার ভাই সবচেয়ে সুন্দর।’
‘ হয়েছে এতো পাম দিবি না। তুই কি ভেবেছিস এসব ইমোশনাল কথা বলে বাড়িতে থেকে যাবি? নো ওয়ে। কালকে তুই বিদায়। হা হা হা। তোর দোলনাটা আমার বারান্দায় সেট করবো।’
নীহারিকা কড়া চোখে তাকালো। প্রিয়ম দেখল রাগ রাগ ভাব ঠিক ফুঁটছে না। আপুর নিশ্চয়ই মন খারাপ। তারও মন খারাপ। ভয়ংকর মন খারাপ। ভয়াবহ আবেগ প্রবণ মন খারাপ যাকে বলে। তাই টুপ করে বোনের সামনে থেকে চলে গেলো সে।
নীহারিকা ঘুরে ঘুরে নিজের ঘরের প্রতিটি কোণা, প্রতিটি স্তর, ইট পাথর বালির মিলন গুলো দেখছে। ছোট থেকে বেড়ে উঠা বিন্দু বিন্দু আবেগ অনুভূতি সব কেমন যেন ধীরে ধীরে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের জীবন কি অদ্ভুৎ! তার বড় হওয়া, বেড়ে উঠা, তার গোপনীয়তা, প্রয়োজনীয়তা, খাপ খাইয়ে নেওয়া পরিবেশ ছেড়ে একটা সময় অজানা অচেনা পরিবেশে পাড়ি জমাতে হয়। সত্যি এই জীবন বড় বিচিত্রময় এবং অদ্ভুৎ। অল্প বয়স্ক ছেলেটিকে হঠাৎ সদর দরজায় দেখে নীহারিকা চমকেছে। এই ছেলেটিকে সে চিনে। যদিও মাত্র অল্প সময় দেখা হয়েছে কিন্তু তাদের গল্প দীর্ঘ। তবে বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়! সে নাম ভুলে বসে আছে। এক ফোঁটাও মনে করতে পারছে না। নীহারিকার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। হাতের ইশারায় ডাকলো সে। নীল রঙ্গের একটি শার্ট শরীরে তার। অনেক ডাকার পরে মাথা নিচু করে দাড়িয়েছে। নীহারিকা মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,’ তোমার নাম যেন কি?’
ছেলেটি চুপ। জবাব নেই। যেন সে কথা বলতে পারে না। নীহারিকা পুনরায় প্রশ্ন করে। জবাব শূন্য। সে বুঝতে পারছে কোন কারণে ছেলেটি কথা বলতে চাইছে না। তাই সোজা হেঁটে চলেই যাচ্ছিলো তখনই হাত ধরে বলল,’ আপনি কিন্তু এটা ভালো করেননি আপা।’
‘ কি ভালো করিনি?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করছে নীহারিকা।
‘ ভাইকে যে কষ্ট দিলেন আপনার তো ভালো হবে না। আপনি জানেন ভাই ঠিক মত ঘুমায় না। খাওয়াদাওয়া করে না। রাত জেগে বসে আছে। হসপিটালে যায় না। রেস্টুরেন্টে যায় না শুধু নিজের রুমে আর বারান্দায় বসে থাকে।’
নীহারিকা চুপ করে শুনছে। ছেলেটির চোখ মুখ দুঃখে ভাসছে। তাযিন ভাইয়ের জন্য চোখে মুখে সেকি দুঃখ তার। নীহারিকার বলতে ইচ্ছে করল,’ কে বলেছে এতো দুঃখ পেতে? দুঃখকে আনন্দের মাঝে উড়িয়ে দিলেই পারে তোমার ভাই!
কিন্তু বলল না। সোজা হেটে চলে যাচ্ছে। ছেলেটি খুব রাগ রাগ গলায় বলল,’ আপনি একদম ভালো না আপা।’
নীহারিকা পিছন ফিরে বলল,’ জগতে সবাই ভালো হলে তো সমস্যা। আমি খারাপ হয়েছি বলেই তুমি ভালো এবং খারাপের মাঝের পার্থক্য ধরতে পেরেছ। অনুষ্ঠানে থাকবে এবং আমার সাথে বসে বিরিয়ানি খাবে। তুমি আজকে কোন ভাবেই তোমার ভাইয়ের হলুদে থাকবে না। শুধু আপার হলুদে থাকবে। প্রিয়ম এই প্রিয়ম ওকে ধরে রাখবি যেতে দিবি না আমার বিশেষ অতিথি সে।
প্রিয়ম দূর থেকে বোনের শেষ কথা শুলে ছুটে এসে বলল,’ এই ছোট ভাই চলো চলো ছাদে অনেক আনন্দ হচ্ছে।’
ছেলেটি অনেক নিষেধ করলো। তবুও কোন লাভ হলো না। অগত্যা সে ছাদে উঠতে উঠতে বদদোয়া করে বলল,’ আল্লাহ আপার হলুদের অনুষ্ঠান বৃষ্টি দিয়ে ভাসিয়ে দেও। এমন বৃষ্টি দিবা বিরিয়ানির পাতিলেও যেন পানি জমে যায়। কেউ খেতে না পারে। আপাও না।’
_________________
উপর হয়ে সাদা টেবিলের উপরে পড়ে থাকা ফোনটি টিইট টিইট করে কাঁপছে। তার কম্পিত সেই শব্দে টেবিল নড়ে চড়ে উঠছে একটু পর পর। অসহ্য হয়ে ফোনটি কানে চাপলো বিমুগ্ধ। ও পাশ থেকে খুব উদ্বেগ মিশানো মেয়েলি ঝলমলে অক্ষর গুলো উচ্চারিত হচ্ছে,’ তায তুমি কোথায়?’
বিমুগ্ধ টেবিলে মাথা রেখে কানের উপরে ফোন চেপে বলল,’ আমি কোথায়?’
রূবাইদার বিস্মৃত কন্ঠ বেজে উঠেছে পুনরায়,’ কি বলছ এসব তায? তুমি কোথায় তুমি জানো না? প্লিজ মজা করা বন্ধ করে দ্রুত আসো আজ আমাদের হলুদের অনুষ্ঠান।’
‘ কিসের হলুদ? কার হলুদ?’
‘ আর ইউ ওকে তায?’ সন্দেহান কন্ঠ। বিমুগ্ধ মৃদূ নড়তে গিয়ে ধপাস করে পড়ে গেলো। ব্যথিত কণ্ঠে বলল,’ নো। আই এম নট ওকে।’
‘ কি হয়েছে তোমার?’ উত্তেজিত কন্ঠ ও পাশে। বিমুগ্ধ বাচ্চাদের মত আবেগী হয়ে বলল,’ অনেক কিছু হয়েছে। আসলে কিছুই হচ্ছে না। সবশেষ। আমি নিঃস্ব। আমার কিছুই রইলো না রূবাইদা। আমি মনে হয় মারা যাবো।’
‘ এই এই তুমি কোথায়? তায তুমি ড্রাংক? কোন নাইট ক্লাবে আছ তুমি?’
রূবাইদা দ্রুত হেটে নিচে নামছে। বিমুগ্ধ চিৎকার করে বলল,’ আমি কোথাও নেই। আমি মাতাল নই। আপনি আসবেন না। আমার আশেপাশে কোন মেয়েই আসবে না। কোন মেয়ে না!’
রূবাইদা থমকে দাড়ালো। বিমুগ্ধ বিড়বিড় করে বলছে,’ শাড়িতে ওকে কেমন লাগছে বলুন তো? হলুদ শাড়ি রজনীগন্ধার কানের গোল দুল, হাতে গন্ধরাজের রাজত্ব, মাথায় লম্বা সিঁথি, রজনীগন্ধা গোলাপের একটি ছোট টিকলি আর আর মাথা ভর্তি আঁচল। মিস রূবাইদা রাগেশ্বরীকে এতো এতো এতো সুন্দর লাগছে কেন? যেন আকাশের বুকে এক টুকরো সৌন্দর্য্য চাঁদের বেশে লুটিয়ে পড়েছে। কোমল এক লাবন্য তার মুখে। শুধু চোখজোড়া কঠিন। বড্ড কঠিন।’
বিমুগ্ধ ফোন ছুঁড়ে মেরেছে। রূবাইদা স্তব্ধ। তার ভিতর থেকে কান্নারা জল হয়ে গালে। বুকের মাঝে কষ্ট বড় বেশিই চাপ দৃষ্টি করছে। বিমুগ্ধের ছোট বোন ছুঁটে এসে বলল,’ চলো উপরে তোমাকে আম্মি ডাকছে। ভাইয়াকে কল করেছ? অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে তো!’
‘ কিছুই শুরু করতে হবে না। তায আসুক আগে। দেখ তার মনের দুঃখ কমে কি না।’
থমথমে চোখ মুখ রূবাইদার।
ছেলেটির বদদোয়া লেগেছে। ভয়াবহ ঝড় বৃষ্টি বাহিরে। মুহূর্তে তান্ডব শুরু। পেন্ডেল উড়ে যাচ্ছে। খাবার গুলো বাবুর্চিরা দৌড়াদৌড়ি করে রুমে প্রবেশ করাচ্ছে। নাফিস উদ্দিন বেশ চিন্তিত। আফিয়া বিলকিসকে ডেকে বললেন,’ শুনো বাসার ভিতরেই আয়োজন করো। বাহিরে যাওয়া অসম্ভব।’
মা প্রচন্ড চিন্তিত সুরে বললেন,’ সব কিছু আবার আয়োজন করতে করতে গভীর রাত হয়ে যাবে।’
নীহারিকা সোফায় বসে ছিলো। এসবে তার মাঝে কোন ভাবাবেগ হচ্ছে না। সে ঝিমাচ্ছে। মিতু আপু ধাক্কা দিয়ে বলল,’ বাল তোর এতো ঘুম আসছে কেন? এমন মুহূর্তে কারো ঘুম আসে?’
‘ তো কি করবো? নাচবো? বৃষ্টিতে তাথৈথৈ করে।’ প্রচন্ড রাগ শুনালো তার কন্ঠ। ফাবিহার নীহারিকার উপরে খুব অভিমান। একদম কথা টথা বলছে না। তার মতে পৃথিবীর সেরা বলদ সে। কাজিনদের মাঝে সবচেয়ে বুদ্ধিমান, জ্ঞানী মেয়েটা এতো বোকা বোকা আবেগী হয়ে কাজ করছে? নিজের কথা না ভাবুক তাযিন ভাইয়ের কথা তো ভাববে? সত্যি বলতে তাযিন ভাই তার কাছে খুব মুগ্ধকা মানুষ। এমন মানুষকে ছেড়ে কি না জাওয়াদকে বিয়ে করছে? যতই জাওয়াদ বিশ্ব সুন্দর হোক তবুও তবুও তার ভালো লাগছে না। এতো কিছুর পরে নীহারিকার এই রাগ ঢাক অসহ্য ঠেকছে। তাই বলল,’ নাচবিই তো। তোর বিশ্ব সুন্দর হবু বরকেও ডাক। দাড়া আমিই ডাকছি।’
ফাবিহা জাওয়াদকে কল করলো। দু বার রিং হতেই ও পাশ থেকে যন্ত্রমানবের মত বলল,’ ডাঃ জাওয়াদ বলছি আপনি কে?’
ফাবিহার ইচ্ছে করছে বলতে তোর জম। কিন্তু নিজেকে শুধরে বলল,’ আমি আপনার শালিকা।’
‘ কোন শালিকা?’
‘ ফাবিহা বলছি। আপনার খবরই নেই দেখছি। বিয়ে করবেন না নাকি?’
জাওয়াদ শুনা মাত্র দ্রুত গতিতে বলল,’ অবশ্যয় করবো। কেন করবো না?’
‘ তাহলে চলে আসুন নীহারিকার সাথে হলুদে বসবেন।’
জাওয়াদ বাহিরের অবস্থা দেখলো। তাদের এখানেও অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এসব তার পছন্দ না তাই হয়নি। বৃষ্টির স্রোত দেখে বলল,’ সম্ভব না শালিকা। বাহিরে খুব ঝড়।’
‘ আরে এটাই তো সুযোগ।’ পা উঠিয়ে বসলো সে। ইফতি মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছে কান খাড়া করে। যদিও ফোন হাতে।
‘ কিসের সুযোগ?’
‘ ভালোবাসা প্রমান করার। দেখি এই ঝড়কে পরাজিত করে আপনি আসতে পারেন কি না। তাহলেই বিশ্বাস করবো।’
ফাবিহা ঠুস করে কল কেটে দিয়েছে। মনে মনে সে দোয়া করলো জাওয়াদ দরকার হলে ঝড়ে আটকা পড়ুক তবুও আসতে না পারুক। নীহারিকা সব শুনলো। গম্ভীর হয়ে বলল,’ বাচ্চাদের মত কাজ করা পাগলামী ফাবু।’ সে দেখলো জাওয়াদ তাকে ম্যাসেজ করছে কল দিচ্ছে আসবে কি না জিজ্ঞেস করছে। নীহারিকা বিরক্ত হয়ে লিখলো আসতে হবে না এরা মজা করছে। মামনি এসে সকলকে ধরে বেধে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। নীহারিকাকে সাজানো হচ্ছে। হঠাৎ করেই মামনির মনে হলো এই নীহারিকা ভিন্ন। আলাদা। তার মাঝে কোন প্রাণ নেই। যেন একটি জড় পদার্থ। রক্তের সম্পর্ক নেই এমন একজন মানুষ নীহারিকাকে কত সহজে ধরে ফেলল। অথচ বাসা ভর্তি সব আপন মানুষ ধরতে পারলো না?
___________________
চলবে…
ভুলত্রুটি আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে সুন্দর গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন। নিশ্চুয়ই ক্ষমা একটি মহান গুন। 🕊️