প্রীয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-১৬

0
112

গল্পঃ #প্রীয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যাঃ ১৬
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

ভোর রাতের দিকে ঘুমানোর কারণে সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো না শুভ্রার। বাড়ির কেউ আজকে ডাকে নি তাকে। প্রতিদিন কেউ না কেউ এসে টেনেটুনে বিছানা থেকে তোলে।কেউ মেকি রাগ দেখিয়ে তোলে অথবা মূল্যবান রত্নের মতো করে যত্নে তোলে।কিন্তু আজকে কেউ আসেনি।যার ফলস্বরূপ সাড়ে এগারোটার দিকে ঘুম ভাঙলো শুভ্রার। আড়মোড়া ভেঙে উঠে পড়ল সে। মাথাটা ব্যথা করছে তার। চোখদুটো ফোলা ফোলা। কোনরকমে উঠে ফ্রেস হয়ে নেয়। কেউ আজকে ডাকতে আসেনি দেখে অবাক হয়। ভাবে হয়তো আজকে সে সবার আগে উঠেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখতেই আশ্চর্য হয়ে যায়। এতো বেলা হয়ে গেছে। তার মানে আজকে ভার্সিটি যাওয়া হলো না।

গুটিগুটি পায়ে মাথা চেপে ধরে ড্রয়িং রুমে আসে। সোফার উপর ধপ করে বসে পড়ে। শরীর এলিয়ে দেয় সোফায়। কিছুক্ষণ চোখ জোড়া বন্ধ করে রাখার পর চোখ খোলে। তার সামনের সোফাতেই বসে আছে দুজন অন্তঃসত্বা। একজন রিমনের স্ত্রী আলিফা আরেকজন রাহাতের স্ত্রী মিশু।দুজনই বসে আচার খাচ্ছে। মাঝে মাঝে দুজন মিলে খুনসুটিও করছে। দেখে মনে হচ্ছে ওরা দুবোন।শুভ্রা মুচকি হাসে ওদের অবস্থা দেখে। কিন্তু তারা যেনো তাকে দেখেও দেখলো না।

রিদকে খাওয়াচ্ছে রুপন্তি, ডাইনিং টেবিলে ফারজানা খান আর রেজিনা খান কি যেনো কাজ করছে।শুভ্রার দাদিন আর দাদুন নিজেদের ঘরে খাওয়া শেষে বিশ্রাম করছে।বাড়ির সব পুরুষরা হয়তো তাদের কাজে বেরিয়েছে। সকলে একপ্রকার এড়িয়ে চলছে শুভ্রাকে। ভাব এমন যে শুভ্রা এখানে উপস্থিত নেই।
শুভ্রা বুঝতে পারছে না তাদের এমন করার কারণ। ও এগিয়ে গেলো ডাইনিং টেবিলের দিকে।

” বড়মা,কিছু কি হয়েছে?এভাবে বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে রেখেছো কেনো তোমরা?”

অদ্ভুত ভাবে সকলে তাকায় শুভ্রার দিকে। যেনো ও এই প্রশ্ন করে মস্তবড় ভুল করে ফেলেছে। রেজিনা খান খবর নিয়ে বসেন শুভ্রার সামনে। কোনো কথা না বলে চুপচাপ খাবার খাইয়ে দিতে শুরু করে।শুভ্রাও আর কিছু বললো না।বুঝতে পারল সকলে কোনো কারনে চিন্তায় আছে।

খাওয়ার সময় ফোন দেখার বদ অভ্যাস আছে শুভ্রার। ফেসবুকে নিজের আইডিতে দুখতেই ঝটকা খায় সে। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে সিঙ্গেলের জায়গায় ম্যারেইড দেওয়া। সেটাও আবার কয়েকঘন্টা আগে। কমেন্ট বক্সে সকলের একই প্রশ্ন, ‘হঠাৎ কোনো কিছু না জানিয়ে বিয়ে?’

মস্তিষ্ক হ্যাং হয়ে গেছে শুভ্রার।বেশ কিছু সময় লাগলো তার বিষয়টা বুঝতে। মস্তিষ্ক সচল হতেই মনে পড়ল গত কালের কথা। একের পর এক সব কিছু মনে পড়ে গেলো।এতো কিছু সে কিভাবে ভুলে গিয়েছিল? বুঝতে পারল বাড়ির সকলে কেনো তাকে এভাবে এরিয়ে চলছে।মুখে থাকা খাবার গলায় আপনা আপনি আটকে গেলো। কাশতে শুরু করলো ও। রেজিনা খান তাড়াতাড়ি করে পানি দিলেন। কিন্তু কোনো ভাবেই থামছে না।মুহূর্তের মধ্যেই ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সকলে ওকে ঘিরে ফেললো।
হাসতে লাগলো শুভ্রা। সকলে বুঝতে পারলো তাদের সাথে মজা করছে। এবার আরো রেগে গেলো সবাই। ফারজানা খান হালকা করে থাপ্পড় মারলেন শুভ্রার পিঠে। শুভ্রা ওনার শাড়ির আঁচল ধরতে গেলেই সরে গেলেন তিনি

” একদম না। প্রচুর রেগে আছি তোর উপর। ছোটবেলার মতো আর শাড়ির আঁচল ধরে ঘুরে রাগ কমাতে পারবি না।
গত কাল কি করেছিস ভুলে গেছিস?”

” আর কোনোদিন এমন করবোনা বড়মা। এবারের মতো ক্ষমা করে দেও। এইযে কানে ধরছি দেখো।”

দুইহাতে কান ধরে ঠোঁট দুটো গোলগোল করে তাকায় সকলের দিকে। রাগ বজায় রাখার চেষ্টা করছে সবাই। কিন্তু কেউ পারলো না শুভ্রার কাহিনী দেখে। হেসে ফেললো সবাই।

__________

পার্টি অফিসে বসে আছে আরহাম।তার দৃষ্টি বর্তমানে ফোনের দিকে। ঘুম ভাঙার পর থেকে অপেক্ষা করছে কেউ একজন ফোন দিবে তার আসায়। এর মধ্যে যতবারই ফোন বেজেছে চোখমুখ উজ্জ্বলহতে দেখা গিয়েছে তার কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানুষের কল না দেখে বার বার অন্ধকার নেমেছে তার মুখে।

ফাহিমের পেট ফেটে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে কিছু প্রশ্ন। কিন্তু অনেক কষ্ট নিজেকে সামলে রেখে। আরহামকে ফোনের দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হচ্ছে সে। কোথায় মন্ত্রী বিয়ে করেছে বউ নিয়ে থাকবে। আর সেও একটি ছুটি পাবে। কিন্তু নাহ্, ভালোভাবে আজকে কোনো কাজও করছে তবুও বসিয়ে রেখেছে তাকে। বোনের কথা ভাবতেই মেজাজ আরও খারাপ হচ্ছে তার। বোনকে সময় দিচ্ছে না কেনো মন্ত্রী?

“ফাহিম,তোর কি মনে হচ্ছে আমি বিবাহিত?”

হঠাৎ আরহামের এমন অদ্ভুত প্রশ্নের কি জবাব দিবে ফাহিম বুঝতে পারছে না। কালকেই তো বিয়ে করলো , আর আজকে বলছে সে কি বিবাহিত। কি আজব মানুষ।

“এটা কেমন কথা ভাই”

“বাবা যখন অফিসে যায় তখন মা কিছুক্ষন পর পর কল দিয়ে খোঁজখবর নেয়। কি করছে? প্রেসার বেড়েছে কিনা? আরো কতো কি। কিন্তু এদিকে আমার বউ দেখ একবারের জন্যও কল দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে না। বিয়ে করে কি লাভ হলো।যদি বউয়ের ভালোবাসাই না পাই। বউটা আমার আমিষ থেকে নিরামিষ হয়ে গেলো রে।”

শুকনো কাশি উঠে যায় ফাহিমের। আরহাম পানির বোতল এগিয়ে দেয় ফাহিমের দিকে। ঢকঢক করে সবটুকু পানি খেয়ে নেয় ফাহিম।মন্ত্রীর মুখে এরকম কথা এমনিতেও মেনে নিতে পারছে না সে তার উপর আবার যার সম্পর্কে বলছে সে ফাহিমের বোন। ভদ্র , গম্ভীর মন্ত্রী দিনে দিনে অসভ্য হয়ে যাচ্ছে। আর তার বোনকেই কিনা অসভ্য বলে এই মন্ত্রী।

” ভাই, সম্পর্কে আমি আপনার বউয়ের বড় ভাই। মানে আমি আমিও আপনার বড় বর্তমানে।”

” তো, তাতে কি হয়েছে?”

” আমার সামনে আপনি এসব বলতে পারেন না?”

” কি এমন বললাম? আর তুই আমার সম্পর্কে বড় তাইনা তাহলেতো আমিও তোর সম্পর্কে বড়।”

ভ্রু উঁচিয়ে বলে আরহাম। ফাহিম প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায় আরহামের দিকে।

” আপনি আমার সম্পর্কে বড় হবেন কিভাবে? আপনি শুধু আমার বয়স বড়। তাও আমার ৫ বছরের।”

” তাহলে রাইমার বিয়ের ব্যবস্থা করি। ওর বান্ধবীর তো বিয়ে হলো। ওর টাও দিয়ে দেই। কি বলিস?”

আরহামের ঠান্ডা মাথায় এরকম বাঁশ দিবে বুঝতে পারেনি ফাহিম।রাইমা আর ফাহিমের সম্পর্কে সব কিছুই জানে আরহাম। সে কোনো বাধা দেয়নি। দিবেই বা কেনো ফাহিম ভালো ছেলে আর সে ফাহিমের সম্পর্কে অবগত।
ফাহিম আরহামের কথার উল্টোপিঠে আর কিছু বলতে পারলো না। ভেবেছিল সম্পর্কের বড় হিসেবে মন্ত্রীকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কিন্তু এখানে হলো তার উল্টো। চুপচাপ মুখ বাঁকিয়ে বসে থাকে ও।

” বউ’ই তো তাইনা। আমি কল দেই বা ও কল দেয় একই হবে। আমি’ই বরং দেই। ইশ বিয়ে করে বউকে ছাড়া থাকার কষ্ট তুই কিভাবে বুঝবি। বিয়ে করলে বুঝতি।”

ফাহিম আর এক সেকেন্ডও থাকলো না সেখানে। যতো তাড়াতাড়ি পারলো চলে গেলো আরহামের কাছ থেকে। এখানে থাকলে না জানি আর কতো লজ্জায় পড়তে হবে তাকে। বোনের মতো হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে মন্ত্রী।

__________

খাবার শেষ করে ঘরে ফিরে এসেছে শুভ্রা। মাথা প্রচণ্ড ব্যথা করছে তার।ইদানিং মাথা ব্যথা পেরেই চলছে। মাঝে মাঝেই অনেক ঘটনা কিছু সময়ের জন্য ভুলে যায়। আবার মনে পড়ে ।কাউকে বলেনি এ বিষয়ে। বিছানায় উল্টো হয়ে শুয়ে আছে। এর মাঝে নীলিমা শিকদার ফোন করে কথা বলেছে তার সাথে। শুনতে হয়েছে কয়েকটা রাম ধমক।

বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় কল আসে তার ফোন। অচেনা নাম্বার হওয়ার কিছুক্ষণ পর রিসিভ করে। ওপাশ থেকে শুনতে পায় আদুরে কথা।

“কেমন আছো মা?”

শুভ্রা ভালোভাবে দেখে নাম্বারটা। নাহ্, এটা তার চেনা নয়। কিন্তু কলের ওপাশের মানুষটার গলা তার পরিচিত।নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রশ্ন করে শুভ্রা।

“আন্টি”

“কানের কাছে একটা থাপ্পড় দিবো বজ্জাত মেয়ে। কে তোমার আন্টি? মাকে আন্টি বলছো। আরেকবার বললে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখবো। ”

থতমত খেয়ে যায় শুভ্রা। কিছু সময় ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। লাইন এখনো কেটে যায়নি।একদিনেই কতটা আপন করে নিয়েছে তাকে। চোখজোড়া ভিজে উঠলো তার।একই ধমক দুবার খেতে হয় তাকে। আসাদ শিকদারকেও আংকেল বলায় তিনিও ধমক দেন। কিছু বলে না শুভ্রা। সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে তার। আবারো মা-বাবা পেয়েছে সে। বেশ কিছু সময় কথা বলার পর কল কেটে দেয়।

ভাবনার মাঝেই আবারো ফোনের শব্দ শুনতে পায় শুভ্রা।স্ক্রিনে প্রিয় মন্ত্রী মশাই নাম টা ভেসে উঠেছে। মাথা ব্যাথা থাকায় চোখ বন্ধ করে ছিল সে। ওভাবেই রিসিভ করে। হ্যালো বলতেই আরো একটা ধমক খায় শুভ্রা। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে। তাড়াহুরোয় মাথার ব্যাথাটা আরো তীব্র আকার ধারণ করলো। কিন্তু পাত্তা দিল না সে।

“অসভ্য মেয়ে”

“এভাবে ধমকাচ্ছেন কেনো? কি হয়েছে?”

” কি হয়েছে মানেটা কি। বিয়ে করেছো,জামাই আছে তার খোঁজ নিবে কি তোমার সতীন?”

” একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না মন্ত্রী মশাই। কারো বুকে এতো সাহস হয়নি যে আমার জামাইকে নিজের জামাই বানিয়ে আমার সতীন হবে।”

” তাই নাকি, তাহলেতো তোমার সতীনের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।”

আরহাম কল দিয়েছিল শুভ্রার সাথে একটু সুন্দরভাবে কথা বলার জন্য কিন্তু এখন তো ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেললো। এদিকে শুভ্রা রেগে আগুন হয়ে গেছে। পারলে এক্ষনি আরহামকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে ফেলে।

চলবে,,,