#প্রেমজাল
পর্ব ০৩
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন
আস্তে আস্তে হাতের বাধন ছাড়িয়ে নিলাম। আমি চাই না আবারো অতীতের বিষাক্ত ঘটনা পুনরাবৃত্তি হোক। আর তো মাত্র কয়েকটা মাস। যে যার নিজের রাস্তায় পাড়ি দিবে। কিংবা কয়েকদিন বাদেই লাল টুকটুকে বেনারসি পরে বউ সেজে রিয়া আপুর আগমন হবে। ভাবতেই অজান্তে চোখের কোটর টলমল করতে লাগলো। অশ্রু কণা চোখের কিনারায় গড়িয়ে পরতেই মুছে ফেললাম। বড় বড় পা ফেলে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলাম ওয়াসরুমে।
_______________
“তোমার মতো লো ক্লাস মেয়েকে আমি বিয়ে করবো? হাউ ফানি!! একচেয়ালি তোমার তো কোনো ক্লাসেই নেই। যে নাকি বিয়ের আগেই রুম ডেট করে পেট বাধিয়ে ফেলে শুধু মাত্র তার বয়ফ্রেন্ডকে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে, তাকে আর যাই হোক বিয়ে করা যায় না মিস রুহি। আমার কথা মতো কাজ করলে তোমারই ভালো হবে…(একটু থেমে) সমাজ তোমাকে পতিতা ও তোমার বাচ্চা কে জারজ সন্তান নামের কলঙ্ক দেওয়ার আগে এবোরশন করিয়ে নাও”
সামনে থাকা লোকটির কথা শুনে চোখ মুখ খিচে কান চেপে “না না না” চিৎকার করে কান্না করতে থাকে রুহি। কান্নারত এক অবস্থা থেকে চোখ খুলতেই সব যেনো ধমকা হাওয়ায় ভ্যানিশ হয়ে যায়। রুহি চোখ খুলে দেখে তার মাথার অপর সিলিং ফ্যান ঘুরছে। চারদিকে তাকাতে বুঝতে পারো কিছুক্ষণ আগেই সকাল হয়েছে। সে গভীর ভাবে কয়েকবার শ্বাস নেয়। রুহি বুঝতে পারে অই কথা গুলো তার দুঃস্বপ্ন এর কিছু বিষাক্ত অংশ। কিন্তু যদি সত্যি সত্যি বাস্তবেই এমন কিছু হয়। ইতিমধ্যে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা জমা হয়েছে।
রুহি তাড়াহুড়া করে বালিশের নিচ থেকে তার ফোন বের করে সেই চেনা পরিচিত নাম্বারটি ডায়েল করলো। বেশ কয়েকবার কল করার পরও কোনো রেসপন্স পেলো না সে। বিগত প্রতিবারের মতো “এই মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না” বার্তা টি ভেসে আসছে। ভবিষ্যতের কথা ভাবতেই যেনো রুহি তার চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না। প্রত্যেক মেয়ের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো তার সতৃত্ব। সে সবটুকু উজার তার মহা মূল্যবান জিনিস তারই ভালোবাসার মানুষের কাছে প্রমাণ স্বরূপ তুলে দিয়েছিলো। যাকে সবচেয়ে আপন মানুষ ভেবেছিলো, তাহলে সেই কি বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে প্রতারিত করলো?? রুহির তার পেটে হাত চেপে ডুকরে ডুকরে কান্না করতে লাগলো।
_______________
ছাদে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধ পরিবেশের রৌদ্দুরের এক চিলতে রশ্মির মিষ্টি হাওয়া অনুভব করছে এক যুবক। প্রকৃতির এমন মনোরোম পরিবেশে সব গ্লানি কাতরতা যেনো মুছে যায়। হাতে তার ধোয়া উড়ন্ত কফি। মাঝে মাঝে আবার কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে। চোখে তার প্রতিশোধের আগুন। সেই আগুনে অনায়সে অনেক জীবন নিমিষে ছার-খার হতে পারে।
_____________
বারান্দায় একরাশ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এখানে কাপড় শুকাতে দেওয়াও আরেক বিরক্তি। পায়ের পাতার উপর ভর করে উদ্যোগী হলেও সব চেষ্টা বিফলে গেলো। মনে এক চিলতে হতাশা নিয়ে আবার চেষ্টা করতেই কেও কোমড় জড়িয়ে ধরে শূন্যে তুলে ধরলো। মনে হচ্ছে হাওয়া তে ভেসে বেড়াচ্ছি।
আকস্মিক এমন হওয়ায় একহাতে ভেজা কাপড় আর অন্যহাতে দড়িটা আঁকড়ে ধরলাম। মনের কোণে বিশাল কৌতূহল নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই যেনো হৃদ স্পন্দন স্তব্ধ হয়ে গেলো। অটোমেটিক আমার ভ্রু কুচকে গেলো। পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।
-“তাড়াতাড়ি কাজ শেষ কর। আমার কাছে তোর জন্য সারাদিন নেই” কটাক্ষ করে বললো আয়ান।
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,
-“আপ..আপনি!!”
-“আরেকটা টু টাং শব্দ করলে এর আছাড় মেরে বারান্দা থেকে ফেলে দিবো, ইডিয়েট” ধমকের স্বরে বললো আয়ান।
-“হুম করবেনই তো। আস্ত একটা বজ্জাত” মিনমিনিয়ে বললাম আমি। উনি শুনলেন কি না কে জানে!! তাড়াতাড়ি কাপড় ছড়িয়ে দিয়ে বিরক্ত একটা ভাব নিয়ে নামাতে বললাম। ও মা বলতে দেরি ফেলে দিতে দেরি হলো না।
-“আউউ!!” পা বুলাতে বুলাতে বললাম আমি।
হঠাৎ করে ফেলে দিবে আমি মোটেও বুঝতে পারি নি। হয়তো আমি নিজেই বেশি এক্সপেক্ট করেছিলাম। কোমরে ব্যথা না পেলেও পায়ে খানিকটা ব্যথা পেলাম। আমি আয়ানের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই উনি দেয়ালে হেলান দিয়ে বুকে দুই হাত গুজলো।
আয়ান বিদ্রুপ গলায় বললো,
-“অপপ্স!! পরে গেলি কীভাবে?”
উনার এমন হেয়ালি বানা কথায় মন চাইছে কয়েকটা কড়া করে গালি দিয়ে ইট মেরে ব্যাটার মাথা ফাটিয়ে দেই। অসভ্য পাজি লোক একটা!!
-“এমন মিউমিউ না করে, কিছু বলার থাকলে সোজাসাপটা ফোটাফট বল। আদ্র সামনে তো খই ফোটে” গম্ভীর কণ্ঠে বললো আয়ান।
এবার যেনো মেজাজ বিগড়ে গেলো। আমার কোনো কথা উনিশ থেকে বিশ হলেই আদ্র ভাইকে টানবে। খালি আদ্র আর আদ্র!! তাদের দেখে কেও বলবে না আয়ানের নিজের মামাতো ভাই আদ্রিয়ান আহমেদ ওরফে আদ্র। আদ্র ভাই কেও বলি হারি যাই কেমন বেঘুটে। যখন আয়ান থাকবে তখনি আমার সাথে আড্ডা দিবে। যতই হোক নিজের আপন চাচাতো ভাই বলে কথা। ইগনোর আর কতক্ষণ করা যায়। দু’জন যেমন দু’জনের দুই চোখের বিষ! কোনো কারণ ছাড়াই দুজন একে অপরকে সহ্য করতে পারে না। ঠিক কি কারণে তারা একে অপরকে এতো টা ঘৃণা করে শুধু তারা কেনো আল্লাহ মাবুদ ছাড়া এই পৃথিবীর কেও জানে না। তবে আমি কিছুটা উপলব্ধি করতে পারি। এমন একটা ভাব নেয় যে হয়তো একে অপরের প্রাণ ভোমরা নিয়ে নিতে চায়। উফ!! একদিকে আয়ান চৌধুরী আরেক দিকে আদ্রিয়ান আহমেদ!! আর আমি আহানা আহমেদ একজন অবলা নারী যে এদের চক্করে জীবন ত্যানা ত্যানা হয়ে গেলো।
আয়ান আমার ভাবনার সুতো কেটে চোখ সরু করে বললো,
-“আজ হঠাৎ সকাল সকাল গোসল করলি কেন? তোর ভাব সাব তো ঠিক লাগছে না। কালকে তো আমার সাথে ছিলি। আমার যতটুকু মনে আছে আমি তো তোর সাথে কোনো ইন্টিমেন্ট করি নি। তুই আমার ঘুমের ঘোরে ইজ্জত লুটে নেস নি তো?” ভ্রু নাচিয়ে বললো আয়ান।
আয়ানের মুখ স্পষ্ট রম্যতা ছাপ ফুটে ওঠছে। উনার কথা কর্ণপাত হতেই শরীর রাগে রিন রিন করতে লাগলো। এই লোকটা বেশ ঠোঁট কাটা স্বভাবের। মুখে যা আসে তাই বলে! শালা একদম লাগাম ছাড়া খবিশ!! রীতিমতো উনি আমাকে পচাচ্ছে। হায় আল্লাহ! না পারি কিছু বলতে আর না পারি সইতে। উনার প্রতি আমার ক্ষোভে নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে মন চায়। রাগে গিজ গিজ করতে করতে আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালাম।
উনি হঠাৎ আচমকা আমার দিকে ঝুকতেই মুখ কিছুটা পিছিয়ে নিলাম।
-“লিগ্যালি ৬ মাস আগে ছাড়াছাড়ি নিষেধ। সো অই সব এগ্রিমেন্ট ফেগ্রিমেন্ট বাদ দাও। যদিও হানিমুন করতে তো আর নিষেধ নেই। বউ হচ্ছে রোমান্স করার জিনিস, কাপ পিস না যে শো-কেসে সাজিয়ে রাখবো। ওয়ানা ইনজয় (Wanna Enjoy)” বলে উনি আমার কোমড় খুব শক্ত করে চেপে ধরে আমার বাম গালে শব্দ করে….
#চলবে…