#প্রেমজাল
পর্ব ১৪
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন
সাথে পায়ের আঙুল মুড়িয়ে আকড়ে নিলাম। দম ভারী হয়ে আসছে খুব। এমন বিব্রতকর অবস্থায় আমার কি করা উচিত? উনাকে ধাক্কা দিবো? সেটা দেওয়া কি আদৌ উচিত হবে? হঠাৎ আয়ান কোমরে ছোয়ানোর সাথে শাড়ির খামচে ধরলাম। উনাকে সরানোর সাধ্য আমার নেই। যতই হোক উনি আমার লিগ্যাল হাজবেন্ট আফটার অল। উনি উনার বাম হাতে আমার কোমর চেপে কিছুটা সামনে টেনে আনলেন। আরেকহাতে উন্মুক্ত কোমড়ে গোজা অংশে হাতের ছোয়া লাগতেই অনেকটা ভড়কে গেলাম। না চাইতেও ক্ষণিকের মধ্যে ভেসে উঠলো আমার জীবনের স্মৃতির আড়ালে ঢেকে থাকা কালো অধ্যায়ের বিষাক্ত কিছু মূহুর্ত। প্লাবনের মতো আমার চোখ উপচে পরলো অশ্রু ধারা। আয়ানের এমন স্পর্শোদ্যগীতে ঘাবড়ে গিয়ে সজোরে উনার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম।
ঘটনার আকস্মিকতায় উনি বুঝতে পারেনি আমি এমন একটা কান্ড করবো। যার সাপেক্ষে তার মুখ কিছুটা ঘুরে গেছে। আমার কোমর জরিয়ে থাকায় দূরে সরে না গেলেও বেশ লেগেছে গালে। তবে পর মুহূর্তেই রাগে চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো। উনার মুখমন্ডল হিংস্রতার ছাপ ফুটে উঠলো। তার চোখে যেন আগ্নেয়গিরি অগ্নি গোলা বিস্ফোরণ ঘটছে। নির্ঘাত এই আগুনে আমাকে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দিবে! আজ অব্দি কারো সাহস হয় নি আয়ান চৌধুরীর সাথে এমন এলাহী কাজ করার। আর প্রয়োজন হয়নি বলেও অভ্যস্ত নন। আমার কোমর চেপে থাকলেও আমাদের মাঝে খানিকটা জায়গা ফাকা ছিলো। উনি এবার ডান হাত দিয়ে কোমর খামচে তার আরো কাছে টেনে নিলেন। তার মুখের ভাব কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে আসছে। যা আমি ছিমছিম আলোয় অবয়ব দেখতে পারছি। উনার নখের তীব্র চাপের প্রখরতায় চামড়া চিড়ে যাচ্ছে। হয়তো রক্তও বেরিয়েছে। ভয়ে চোখের কোণ বেয়ে পানির স্রোত বইতে শুরু করে দিয়েছে। এবার ব্যথা সহ্য করতে না পেরে শব্দ করেই কেদে দিলাম।
আমার সামনে এখনো সেদিনের অনাকাঙ্ক্ষিত মূহুর্ত অনবরত স্মৃতি চারণ হচ্ছে। আমাকে আমার অনিচ্ছা থাকার সত্ত্বেও ছোয়ার প্রয়াস, আমাদের মাঝে ধস্তাধস্তি, আমার ইজ্জত লুট করার জঘন্য আক্রমণ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। আমি অতীত ভেদ করে বর্তমানে চেয়েও আসতে পারছি না। আমি চোখ বন্ধ করে কান্নাভেজা স্বরে আমার বাম দিয়ে উনার ডান বাহু সরানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু ফলাফল প্রতিবারে শূণ্য ছিলো। ছাড়াতে চেয়েও পেরে উঠি নি। না পেরে ডান হাত মুঠ করে আয়ানের বুকে আঘাত করতে করতে বললাম,
-“প্লিজ ছেড়ে দেন আমাকে। আমার সাথে এমন নোরাংমি করবেন না” বলতে বলতে বার দুয়েক আঘাত করার পর তৃতীয় বারের সময় সেই হাতটার কব্জি আয়ানের হাতের মুঠোয় খুব শক্তভাবে আবদ্ধ হয়ে গেলো।
-“তোমাকে আমি আমার করে নিতে চাইলে তোমার কি আদৌ কোনো কিছু করার জোয়ার আছে?” চোখ মুখ শক্ত করে দাতে দাত চেপে রাগের তীব্রতায় মৌনতা ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করলো আয়ান আমাকে।
আমার কান পর্যন্ত গেলেও আমি যেনো কিছুই শুনতে বা বুঝতে পারছি না। আমি একমনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে “প্লিজ প্লিজ” করতে লাগলাম। রীতিমতো পুরো শরীর ভয়ে থরথর করে কাঁপছে আমার। বাস্তবিক জ্ঞান যেনো শূন্য হয়ে পরেছে।
হঠাৎ আয়ান কি মনে করে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে এবার উনি সামনে এগিয়ে উনার সাথে মিশিয়ে জরিয়ে ধরলেন। আমি অস্বাভাবিক ভাবে তখনি কাপছি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। উনি আলতো ভাবে আমার চুলে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে দিয়ে লাগলেন। উনি নিতান্ত আমাকে শান্ত করার চেষ্টায় ব্যস্ত। আমি উনার বুকে মুখ গুজে চোখ করে আছি৷ ভয়-ত্রাস আমাকে অদৃশ্য বেড়াজালে আটকে দিচ্ছে। আমি না পেরে উনার শার্ট খামচে গভীর ভাবে আকড়ে ধরলাম। উনার হৃদ স্পন্দনের দ্রিমদ্রিম আওয়াজ আমাকে প্রখর ভাবে টানছে। আমি বারবার প্রগাঢ় নিশ্বাস ফেলতে লাগলাম। উনি ধীরস্থায়ে আমার সামনের চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো,
-“কিছু হয়নি আহুপরী। ডোন্ট বি প্যানিক। আমি ছাড়া কেও নেই। তোমার কিছু হবে না। আমি আছি না? আমি তোমাকে কিছু হতেই দিবো না”
আমি এবার কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। বেশ কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম। আস্তে আস্তে ট্রমা থেকে বেরোনোর চেষ্টা করলাম। উনার শার্ট ছেড়ে দিয়ে ধীর বেগে আয়ানের বুক থেকে মাথা তুললাম। নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে অশ্রু নয়ন সিক্ত কাপাকাপা গলায় বললাম,
-“আ..আম..আমার আসলে অন্ধ..অন্ধকারে সে..সেদিনের ঘটনা….”
পুরো কথা শেষ না হতেই উনি আমার ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে থাকিয়ে দিলেন।
-“ডোন্ট ওয়ারি! আমি বুঝতে পেরেছি। জাস্ট হেভ এ রিলেক্স। শান্ত হও” বলে উনি পাশে থাকা হারিকেনের শিখা বাড়িয়ে আমার কোমরের কাছে ধরলেন। আমার সংকুচিত চোখ আস্তে আস্তে নামিয়ে হারিকেনের আলোয় নিজের কোমড়ের দিকে তাকালাম। কোমড়ের নিচে অংশে শাড়ির জমিন বেয়ে পিল পিল করে একটা কাঠ পোকা বেয়ে চলেছে। নির্ঘাত এটা আম গাছের ডাল থেকে এসেছে। সাথে সাথে চোখ বড়সড় করে পর পর খানিকটা জোরে চিৎকার দিয়ে মানুষটার গলায় ঝুলে ইচ্ছেমতো পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলাম। কিন্তু পোকাটাও যেন জেদ ধরছে সরবে না। শাড়ি আকড়ে আছে।
-“হেই, তাড়াতাড়ি সরান এটাকে। প্লিজ সরান না। এই শুনছেন না? সরান। প্লিজ তাড়াতাড়ি”
আমার এতো চিল্লাপাল্লায়েও আয়ানের কোনো মুখোভাব দেখা গেলো না। উনি এখনো কোমর জরিয়ে আছে। বিন্দু মাত্র নড়চড় করলো না। আমি আবার বলতে শুরু করলাম।
-“এই যে? আমি এসবে ভয় পাই অনেক। আমার পা যদি খেয়ে টেয়ে ফেলে। প্লিজ তাড়াতাড়ি সরান”
এবার উনি মৌনতা কাটিয়ে থমথমে স্বরে বললো,
-“এখন কেনো? এতোক্ষণে তো কেদে কেটে বাণ বানাচ্ছিলে”
-“ধ্যাত! সরান তো” রেগে গিয়ে বললাম আমি।
-“পারবো না। আমি আবার তোমার মত সতী-সাবিত্রী টাচ করবো সামান্য পোকা ছাড়াতে?”
আমি কাদো কাদো হয়ে বললাম,
-“আপনি খুব পচা। সরান না। আপনার মায়া দয়া নেই নাকি?”
-“ঢের আছে। তবে শুধু মাত্র আমার বউ এর জন্য”
-“এখন তো রিয়া আপু নেই। যখন আসবে, তখন দেখিয়েন। এখন এটা থেকে বাচান”
আয়ান আমার কথায় সরু করে বললো,
-“কি নাম বললে? কে আসবে?”
আমার এবার টনক নরলো। ভয়ের চোটে কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেললাম। এখন আদালতে দাড় নিশ্চিত করাবে। আমি কথা ঘুরানোর জন্য উনার পিঠে সরু ধারালো নখ বসিয়ে দিয়ে আবার পা ছোড়াছুড়ি শুরু করে দিলাম।
আয়ান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে শাড়ি থেকে পোকাটা ছাড়িয়ে দিলো।
-“আর কতোক্ষণ বাদরের মতো ঝুলে থাকার ইচ্ছা আছে? চিল্লাপাল্লায় অলরেডি আমার কানের ১৩ টা বাজলো” গম্ভীর গলায় বললো আয়ান।
আমি উনার গলা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম। উনি ছাড়া পেয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে গাকিয়ে চলে যেতেই আমি কাচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
উনি ঘাড় ঘুরিয়ে বিরক্তি মিশ্রিত চাহনি নিয়ে ফিরে তাকালেন। পরক্ষণে ভালো মতো ঘুরে আমার দিকে ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। উনার চোখ দু’টো দুষ্টু হাসির ছলে মেতে উঠেছে। কিন্তু কেনো তা আমি বুঝতে পারলাম না। আমি উনার দিকে ভ্রু সংকোচন করে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। যার অর্থ হলো উনার এভাবে আমার দিকে থাকার কারণ কি? উনি মিটমিট করে হাসতে হাসতে ভ্রু নাচালো। পরক্ষণে যা বলল আমার মুখ লাল নীল সবুজ হয়ে নাক কান দিয়ে ধোয়া ছুটার উপক্রম।
-“একচুয়েলি কোথায় যাবো? না গিয়ে তোমার শাড়ি পরা দেখা ভালো হবে বয়ে খারাপ হবে না, তাই না? দেন লেটস স্টার্ট সুইটহার্ট । তো শাড়ি তুমি খুলবে নাকি আমি খুলবো মিসেস আয়ান চৌধুরী?”
#চলবে…