#প্রেমজাল
পর্ব ২৭
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন
হাসপাতালের বেডে সেন্সলেস হয়ে পরে আছে রুহি। হাতে তার ক্যানেল লাগানো। তার শুভ্ররাঙা জামার সঙ্গে তার মাথায় সদ্য লাগানো ব্যান্ডেজটাও রক্তিম লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। আমার অস্থিরতায় হাতে থাকা অজানা মেয়েটার আইডি কার্ডটাও রীতিমতো কাপছে। নিবদ্ধ করলাম আমার চক্ষু জোড়া আইডি কার্ডের এস. সি. আই রুহি নামিটিতে। এই রুহি নামের মেয়েটার এরূপ মর্মান্তক দশার জন্য হয়তো কোনোভাবেই আমি নিজেই দায়ী। চক্ষু জোড়া আবৃত করে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনোনিবেশ করতেই শিউরে উঠে আমার শরীর।
.
.
.
রিয়ান স্যার নিলয় ভাইয়ার কাজিন কর্ণপাত হওয়ার পর থেকে কড়াকড়ি ভাবে তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেও সক্ষম হতে পারলাম না। স্বাদে কি আর গায়ে পরা লোক বলে সম্বোধন করি? আমার গায়ে গা ঘেষিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শাড়ির পছন্দ করার বাহানায়। কেবলমাত্র স্যার মানুষ বলে ভদ্রতার খাতিরে এবং সুপ্পুর হবু শ্বশুরবাড়ির সুবাদে সহিষ্ণুতা অক্ষুণ্ণ রাখছি৷ শালা পুরাই একটা আস্ত লম্পট। মেয়েরা হয়তো প্রতিনিয়ত এভাবেই নিপীড়িত হয় বা হচ্ছে। আমি মনের নিবিড়ে কড়া কিছু গালাগাল দিয়ে ক্ষ্যান্ত হলাম।
আমি তপ্ত নিশ্বাস ফেলে অন্যত্রে দৃষ্টিপাত করতেই মূহুর্তের মধ্যিখানে আমার আক্রোশ হিমালয় ছুই ছুই হয়ে গেলো। আমার থেকে খানিকটা তফাৎ এ আমার লাটসাহেব বর অই রিয়া নামক পেত্নিটার সঙ্গে হাসৌজ্জ্বল মুখশ্রীতে কথোপকথনে ব্যস্ত। যখন আমি উনি বাদে অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা সামান্য খানিক সময় দাড়াই, মহাশয়ের তো রাগের কোনো ঘাটতি থাকে না। অন্যসময় ব্যাথিত হলেও ইতিমধ্যে আমার গা রাগে দাউ দাউ করে জ্বলছে। এই তো একটু আগে যখন রিয়ান স্যারের সাথে দেখা হলো তখন ব্যাটা বজ্জাত আমার হাত চেপে আমাকে ব্যথায় কাহিল করে ফেলেছিলো। কিন্তু এখন সে নিজেই পর নারীর সাথে তিড়িং বিড়িং করছে, হুহ। তার সময় ষোলো আনা আর সময় এক আনাও না?
আয়ান রিয়া আপুকে একটা কলাপাতা রঙের শাড়ি গায়ে দিয়ে বলে উঠলো,
-‘ রিয়া তোমাকে কিন্তু এই রঙে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে। জাস্ট এমাজিং। এটাই বরং নিয়ে নাও’
হেহ!! বুইড়া ব্যাটার ঢং দেখে কে? একদম কলা গাছে বান্দরনী লাগছে। আবার সুন্দর লাগার কম্পলিমেন্ট দেয়, হুহ। কই আমাকে তো কখনো ভুলেও সুন্দর বলে না। তার এমন ভং ভাং প্রশংসা আমার কর্ণপাত হতেই, আমার মানসিক এতোটাই বিকৃত হলো যে রীতিমতো হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে শূণ্য হয়ে গেলো।
আকস্মিক ভাবে আমার খয়রাতি মার্কা ভাগ্য আমার সহায় হলো। আমার শয়তানি মাথায় তুফানি আইডিয়া এলো। এবার তো আমি এই আয়ান ব্যাটাকে উচিত শিক্ষা দিয়ে বাকা করেই ছাড়বো। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আর সাত পাচ না ভেবেই অগ্রসর হলাম আদ্র ভাই এর দিকে। আদ্র ভাই আমাদের অদূরেই দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবী দেখছিলো।
আমি একটা হলদেটে পাঞ্জাবীর পিস নিয়ে আদ্র ভাই কে উদ্দেশ্য করে বললাম,
-‘ আদ্র ভাই! আপনাকে কিন্তু এই রঙে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগবে। এটাই বরং নিয়ে নেন। একদম হুমায়ুন আহমেদের গল্পের প্রেমিক পুরুষ হিমুর মতো’
আদ্র ভাই পর দু’টো শুকনো কাশি দিয়ে ভ্রু সংকোচন করে অবাক চাহনিতে বললো,
-‘ ঠিক বলছিস তো?’
আদ্র ভাই আমার কথায় খানিকটা ভড়কে গেসে যে আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না। হওয়ারই কথা! যার সাথে অতি প্রয়োজন ছাড়া দু দন্ড কথা বলি না সেখানে পাঞ্জাবী সাজেস্ট করলাম। আমি আদ্র ভাই এর দিক স্মিত হেসে। আমি আড়চোখে আয়ানের দিকে পরখ করলাম। উনি চোখ মুখ শক্ত করে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে আছে। কপালের রগগুলো আলতো ফুলে উঠেছে। আমি উনাকে জ্বালানোর জন্য আরেক ধাপ এগিয়ে গেলাম। আমি আমার ঠোট প্রসারিত করে মাথা উপর নিচে দুলিয়ে বলে উঠলাম,
-‘ সত্যি কথাই বললাম আদ্র ভাই। আপনি কি দেখতে খারাপ নাকি? আপনাকে গ্রে কালার শার্টে কিন্তু শাহরুখ খানের চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছে না’
আদ্র ভাই আলতো হাসলেন। আমার প্রতিত্তোরে আদ্র ভাই যখনি কিছু বলতে যাবে তখনি বাধ সাধলো আয়ান। উনি বাকা হাসি দিয়ে তার জ্যাকেটের হাতার অংশবিশেষ কনুই পর্যন্ত উঠাতে উঠাতে বলে উঠলো,
-‘ তো আমাকে কি করলে ইমরান হাশমি লাগবে মিস আহানা?’
আমি উনার কথায় হতভম্ব!! মনে হচ্ছে একটু বেশিই ডোজ দিয়ে ফেললাম। আমি হাত মোচড়া মুচড়ি করার সাথে সাথে চারদিকে চাহনী চঞ্চল রাখলাম। কোনো ফাক ফোকড় দেখলেই আল্লাহ ওয়াস্তে দৌড় মেরে দাদিমণির কাছে চলে যাবো। তাহলে আর আমার মতো নিরীহ বাচ্চার অপর অত্যাচার করতে পারবেন না।
আচমকা তখনি বড় কাকিমণি তৎক্ষনাৎ আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো। বড় কাকিমণি একগাদা শপিং ব্যাগ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
-‘ নির্ঘাত আমার ছেলের পকেট ফাকা করার ধান্দায় সফল হয়েছিস। নিবি যখন খেটে নিয়ে নে। এই শপিং ব্যাগগুলো ধরে রাখ। আমার আরো কিছু মার্কেটিং বাকি আছে’
আমি মুখে তাচ্ছিল্য হাসি ফুটিয়ে তুললাম। এই আর নতুন কি? আমি এরূপ কটু কথায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমি সন্তর্পণে হাত বারিয়ে নিতেই আয়ান আমার হাত উনার হাতে আবদ্ধ করলো। আমি কিঞ্চিৎ চমকালাম। উনি এই সব কি করছেন? কাকিমণির সামনে এমন উদ্ভট ব্যবহার করার অর্থ কি?
আয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো,
-‘ আহি এসব ধরে রাখতে পারবে না। আমার ওর সাথে কিছু কাজ আছে’ বলে একপ্রকার টেনে নিয়ে আসতেই বড় কাকিমণি খানিকটা জোরে ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে উঠলো,
-‘ কেনো? আহানা কি তোমার একার বোন, আয়ান? নাকি আহানা ছাড়া আর কাওকে চোখে পরে না? তোমার হাব-ভাবে তো বোনের থেকেও বেশি কিছু প্রকাশ পায়। নাকি এককথায় তোমার রক্ষিতা ধরবো? হয়েছে তো আবার পুরাই মায়ে..’
বড় কাকিমণি পুরোটা ব্যক্ত হতে না দিয়েই আয়ান ত্যাছড়া কন্ঠে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো,
-‘ অতীত যখন আপনার এতোই ঘাটার শখ তাহলে না হয় নিজের অতীত নিয়ে ভাবুন। আমি আর যা হই এটলিস্ট (Atleast) পর নারী আসক্ত নই!”
বড় কাকিমণি তুখর কণ্ঠে বললো,
-‘ আয়ান তুমি কি আমাকে অপমান করতে চাইছো? তুমি সত্যটা জানার পরও আমার সাথে এভাবে কথা বলার স্পর্দা দেখাচ্ছো কীভাবে?’
আয়ান আদ্র ভাই এর দিকে এক পলক তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
-‘ সত্যটা জানি বলেই বলতে পারি’
“রক্ষিতা” শব্দটি কর্ণকুহর হতেই আমি বেশ বিস্মিত হলাম। একজন মানুষের কাছে কতোটা ঘৃণিত পাত্রী হলে এমন ভাবে আখ্যায়িত করতে পারে। অতীত, নারী, আসক্ত, সত্য এদের কথা আমার মাথার ৯০ ডিগ্রি কোণে সর্বত্র অপর দিয়ে গেলেও রীতিমতো কান্না পাচ্ছে। আশ-পাশের মানুষ কেমন জানি দৃষ্টিগোচর চাহনি নিক্ষেপ করছে। সুপ্পুর শ্বশুরবাড়ির দুজন মহিলাও পাশে ছিলেন। তারা কানাকানি করতে ব্যস্ত। লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে। কষ্ট-ক্ষোভে-লজ্জায় হাত ঝাড়া দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বড় বড় প্রস্থান করলাম। একেবারে শপিং মলের নিচ তলায় এসে ক্ষ্যান্ত হলাম। চোখের পানি মুছেও কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছি না। চোখের অবাধকৃত স্রোতধারা আপনমনে অবাঞ্চিত ভাবে অতিবাহিত হচ্ছে। নিজেকে যথাযথ স্বাভাবিক করে রাখার চেষ্টা করলাম। চোখ নিমজ্জিত করে বড় বড় দু’তিনেক ভাবে গাঢ় শ্বাস নিয়ে হাওয়ায় ছেড়ে দিলাম।
আচমকা পিছন থেকে মোলায়েম কণ্ঠ ভেসে উঠলো,
-‘ আহি..’
আমি ধীরগতিতে চোখের পাতা খুললাম। জানা আছে আমার কার গলার কণ্ঠ এটা। আমি উনার ডাকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই শপিং মলের পার্কিং প্লটের দিকে এগিয়ে গেলাম।
#চলবে….
#প্রেমজাল
পর্ব ২৮
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন
আমি ধীরগতিতে চোখের পাতা খুললাম। জানা আছে আমার কার গলার কণ্ঠ এটা। আমি উনার ডাকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই শপিং মলের পার্কিং প্লটের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমার সমপার্শ্বিক সহিত উনিও পিছু পিছু এগিয়ে আসছেন। অতর্কিতে আমি অতি তীব্রতায় ক্রোধিত হয়ে উঠলাম।
আয়ান সন্তপর্ণে আমার সম্মুখে এগিয়ে আসতেই আক্রোশপ্রসূতে দেহের সর্বশক্তি দিয়ে তার বুকে আমার হাত দিয়ে ধাক্কা দিলাম। উনি খানিকটা চমকালেন!! সাথে দু’তিনেক পা পিছিয়ে গেলেন। উনার ভ্রু যুগল তাই নির্দেশ করছে।
আয়ান আমার দিকে আহত দৃষ্টিপাত করলেন। আমি চোয়াল শক্ত করে দুই হাত দিয়ে আমার মাথার প্রান্তদ্বার চেপে ক্রোধ দমন করার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম। রাগের বশিভূত হয়ে তীব্র ক্রন্দন আমার। আমার নিশ্বাস তীব্র বেগ পেলো। জোরে জোরে ঘন ঘন শ্বাস নিশ্বাস নিতে রইলাম। আয়ান অনেকখানি আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। মাথা হতে হাত নামিয়ে নিলাম। কিছুটা শান্ত হলেও শ্বাস এখনো অস্বাভাবিকভাবে উঠা নামা করছে। আয়ান আমার হাত ধরে এক টান দিয়ে তার সাথে মিশিয়ে নিলেন। আমি সরে আসতেও চেয়ে পারলাম না। ইতিমধ্যে উনি উনার বাহুদ্বয়ের বেষ্টনীতে আমার কোমর আবদ্ধ করেছেন।
আমি বারংবার উনার প্রকান্ড বক্ষে আমি হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে অবিচ্ছিন্নভাবে আঘাত করতে করতে গরগর করে বলে লাগলাম,
-‘ কেনো এসেছেন এখানে? কি করতে এসেছেন? আমাকে কি একটু শান্তিতে একা থাকতে দিতে মন চায় না কারোর? আমাকে কেনো একা থাকতে দেন না? আমার কি মন-আত্নসম্মান বলতে কিছু নেই? যখন যার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই আমার উপর হস্তক্ষেপ করে। কেনো করবে এমন? আমি কেনো ওসব অপ্রীতিকর কথা বার্তা শুনবো? আমি কি কোনো দোষ করেছি? আমি কেনো সব অপমানের দায় নিবো? আপনি কেনো করেন এমন? আমাকে ভালোবাসেন? ভালো তো আর বাসেন না। বিয়েও তো করবেন আবার সেই রিয়াকেই। তাই নয় কি? তাহলে কেনো এতো অধিকার দেখাতে আসেন? বলেন আমার জন্য এতোটা ওভারপসেসেইভ এর কারণ কি? কেনো প্রতি মূহুর্তে আমার সাথে অবিকল ছায়ার মতো আষ্টেপৃষ্ঠে থাকেন? কেনো আমার সাথে কোনো ছেলেকে দেখলে আপনি এতো আক্রমণাত্মক হোন? আপনি যেমন আমার পাশে কোনো ছেলে তো দূরের থাক তাদের কোনো অস্বস্তিত্ব এমনকি ছায়াও সহ্য করতে পারেন না তেমনি আমিও আপনার পাশে কাওকে সহ্য করতে পারি না। আপনার প্রতি অনুভূতিপ্রবণ বুঝে গেছেন বলে এভাবে প্রতিদান দেন? তাই না? বলেন?’
একধারে কান্নারত অবস্থায় কথাগুলো বলতে বলতে বেশ হাপিয়ে উঠলাম আমি। হিচকি দিতে দিতে নতজানু হয়ে চোখের জলরাশি মুছে দুই তিনেকবার গাঢ় শ্বাস নিলাম। ইতিমধ্যে আমার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা!!
আয়ান এখনো পূর্বের ন্যায় আমার কোমর জরিয়ে সটান দাঁড়িয়ে আছে। আমি মাথা উচু করে উনার দিকে দৃষ্টিপাত করলাম। তার চোখ মুখে স্পষ্ট মলিনতার ছাপ। আমি অশ্রু নয়নসিক্ত চাহনিতে তার চোখে আমার চোখ নিবদ্ধ করে উনার জ্যাকেটের কলার চেপে কাছে টেনে নিলাম।
আমি মুখে তাচ্ছিল্যতার হাসি টেনে জিজ্ঞেস করলাম,
-‘ আদৌ কোনো উত্তর আছে আপনার কাছে?’
আয়ান ক্ষণিক সময় আমার দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকলো। আমি উনার কাছে থেকে উত্তর ছটফট করতে লাগলাম। একবার! জাস্ট একবার তার মুখ থেকে ‘ভালোবাসি’ শব্দটা শোনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলাম। কিন্তু উনি আমাকে নিরাশ করে দিয়ে আমার থেকে চাহনি ফিরিয়ে নিলেন। এক ফালি গভীর তপ্ত শ্বাস হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন। আমার সংস্পর্শে হওয়ায় বুঝতে বেগ পেতে হলো না।
আয়ান অন্যদিকে দৃষ্টি রেখেই নিম্ন স্বরে বলে উঠলো,
-‘ জানি না ‘
আবারো আমার মাথায় রাগ চেপে বসলো। বিগড়ে গেলো আমার মেজাজ। দিলাম আবারো সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা৷ তাতে উনার কি,হুহ? উনি উনার জায়গায় ঠাই দাড়িয়ে আছে।
আমি তীক্ষ্ণ জোরালে কণ্ঠে বলে উঠলাম,
-‘ কি জানেন না হ্যাঁ? আর জানবেন না কেনো? বলেন? স্পিক আপ!! ফাজলামো পেয়েছেন? আমাকে আমার মতো লাইফ লিড করতে দিচ্ছেন না কেনো? যে সম্পর্ক মাত্র ৬ মাসের চুক্তির অপর টিকে আছে, সে সম্পর্কে এতো অধিকার কীসের? কেনো খাটাতে আসেন অধিকার? আর কেনোইবা দেখাবেন?….(একটু থেমে) উত্তর দেন আমাকে। আমি উত্তর চাই’
শেষের বাক্য দুইটা চিৎকারের ন্যায় বললাম আমি। আমার শ্বাস আবারো প্রবলভাবে উঠা নামা করছে। এতো উচু স্বরে কখনো কারোর সাথে কথা বলেনি। সেখানে আমি যাকে জমের মতো ভয় পাই তার সাথে এরূপ ন্যায় বাক্য ফলন করছি।
আয়ান আমার দিকে শান্ত চাহনিতে দৃষ্টি স্থাপন করলো। আমি মন থেকে খুব করে চাইছিলাম যে উনার সঙ্গে অশোভনীয় আচরণের জন্য আমাকে দরকার হলে দু’ ঘা দিক তারপরো যেনো সত্যি কথা বলে। কিন্তু তিনি তেমন কিছুই বললেন না। কেবল মাত্র থমথমে স্বরে বললেন,
-‘ সবাই আমাদেরকেই দেখছে। আর সিনক্রিয়েট না করলে চলছে না?’
আমি চোখ বন্ধ করে বারংবার শ্বাস নিতে লাগলাম। কেনো জানি নিজেকে শান্ত করতে সক্ষম হতে পারছি না। রাগ ক্রোধ ক্ষোভ সব যেনো একসাথে আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। উনার উত্তরে এমন বেপরোয়াতা মেনে নিতে পারছি না। গুরুতর ভাবে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হচ্ছে ~ “হ্যা চলছে না আমার সিনক্রিয়েট না করে। আর কেনো করবো না? আমি ভং ভাং জিনিস বলছি? কেনো দিচ্ছেন না আমার উত্তর? কেনোবাই পাচ্ছি না আমার কাঙ্খিত উত্তর?” কিন্তু সহসা বলার আগেই হাতের টান অনুভব করতে লাগলাম। তাৎক্ষণিক ভাবে দৃষ্টিপাত করলাম উনি আমাকে টানতে তার বাইকের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি হাত মোচড়ামুচড়ি প্রয়াস করেও সব বৃথা হলো।
আমার দিকে এক পলক কটমট চাহনি স্থাপন করে শান্ত গলায় বললেন,
-‘ আরেকবার ছটফট করলে ডাইরেক্ট শুট করে দিবো’
এরপরে আর আমি কোনো কিছু বলার মতো সাহস জুগিয়ে উঠতে পারলাম না। আয়ান আমাকে তার বাইকের সামনে এনেই ক্ষ্যান্ত হলেন।
আয়ান তার বাইকে বসতে বসতে ছোট্ট করে বললেন,
-‘ উঠো’
আমি শুনেও তা গ্রাহ্য করলাম না। অন্যত্র তাকিয়ে রইলাম। আমার কোন ঠেকা পরসে উনার সাথে যাবো? অই রিয়া পেত্নিকে নিয়েই সারা শহর ঘুরে বেড়াক, হুহ!!
আয়ান আমার বসার প্রতিক্রিয়া না দেখেই নিজেই আবার উঠে আসলো। উনি আমার হাত শক্তভাবে চেপে ধরতেই কিঞ্চিত ভ্রু যুগল কুচকে তার দিকে ফিরে তাকালাম। উনার মুখশ্রীতে স্পষ্ট বিরক্ত বিদ্যমান।
আয়ান আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে বাইকে জোরপূর্বক ভাবে বসিয়ে সেও বসলেন। বাইক চলতে লাগলো নিজস্ব গতিতে। আয়ান গম্ভীর স্বরে বললো,
-‘ চেপে বসো। আমার তো জন্য রিয়া আছেই। তুমি পরে গিয়ে কোমর ভেঙে গেলে, কোমর ভাঙা মেয়ের কিন্তু আর বিয়ে হবে না। কি জানি বলেছিলে, মাত্র ৬ মাসের চুক্তির অপর সম্পর্ক টিকে আছে’
আমি এবারো উনার কথা গ্রাহ্য করলাম না। রিয়া নামক শব্দটা উনার মুখে শোনামাত্রই গা জ্বলে যাচ্ছে আমার। আস্তে আস্তে বাইকের গতি তীব্র হতে লাগলো। তার সব রাগ বাইকের অপর ঝাড়ছে তা বুঝতে অসুবিধা হলো না আমার। আমাদের মাঝে অনেক খানি এখনো দূরত্ব বিদ্যমান।
আয়ান পিছন ফিরে সে তার হাত দিয়ে আমার হাত টেনে আনতে চাইলেও আমি এতে নারাজ হলাম। তখনি সামনে দিয়ে একটা শুভ্ররাঙা জামা পরিহিত মেয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে রোড ক্রস করছিলো। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় এক্সসিডেন্টলি বাইক মেয়েটার পায়ে আঘাত করে। মেয়েটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পরে গিয়ে অদূরে থাকা ইটে মাথা বারি লাগে। যার ফলশ্রুত মেয়েটার মাথা থেকে গরগর করে রক্ত বের হয়ে লাগে। মেয়েটা মাথা চেপে আর্তনাদ করতে থাকে।
[বাইক বা গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই কারোর সংস্পর্শে থাকা উচিত না। সাথে রাস্তা পারাপার সময়ও। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে প্রতিনিয়ত অনেকেই তাদের প্রিয়জনকে হারাচ্ছে]
রাস্তায় পরে থাকা অবাধ রক্তের ছিটা মনে করতে আমার শরীর হিম লেগে যায়। নিজেকে অনেক দোষী লাগছে। মেয়েটার এরূপ অবস্থার জন্য কোনো ভাবে হয়তো আমি নিজেই দোষী। পরবর্তীতে এমারজেন্সি কেসে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
.
.
.
কাধে কারোর….
#চলবে..