প্রেমনেশা পর্ব-১৬

0
1

“প্রেমনেশা”
নন্দিনী নীলা
১৬.

রাত তখন আটটা। ধ্রুব বন্ধুদের আড্ডায় ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ চিন্তিত হয়ে উঠল চারুর কথা স্মরণ হতেই চমকে উঠল। আড্ডা থেকে হুট করেই উঠে চলে গেল। সবাই ওর কাজে বিস্মিত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে র‌ইল ওকে ডাকল কিন্তু ও দাঁড়াল না। ধ্রুব বাসায় এসে গাড়ি পার্কিং না করেই দৌড়ে ভেতরে চলে এলো। ও ভেবেছিল এক ঘন্টা সবোর্চ্চ চারু কে ওই নোংরা রুমে বন্দি করে রাখবে কিন্তু সবার সাথে আড্ডায় পরে ও চারুর কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। নিজের কান্ড দেখে নিজেই রেগে গেল। চারুকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল‌। কিন্তু এতো সময় রাখতে চায়নি। এতো সময় ওই রুমে কি করছে কে জানে। ভয়ে ধ্রুবর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে উঠল। নিজের কপাল আঙুলের ডগা দিয়ে মুছে নিল। দরজা লক বাইরে থেকে খুলতেই চমকে উঠল। ভেতরে থেকে কোন সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না রুমের লাইট জ্বলছে কিন্তু আলো খুব সংকীর্ণ। ধ্রুব নাক চেপে ধরে ভেতরে উঁকি মেরে চারু কে ডাকল।
‘ চারু বাইরে আসো‌’
কোন সারা শব্দ নেই। বুক ধক করে উঠল ধ্রুবর ও আরেকবার ডাকল এবার ও রেসপন্স নেই। ধ্রুব ভেতরে পা রাখল ফোনের লাইট জ্বালিয়ে নিল। ভেতরে ঢুকতেই চারুকে ময়লা আবর্জনা যুক্ত ফ্লোরে অচেতন অবস্থায় পরে থাকতে দেখল। থমকে গেল ধ্রুব চারুর মুখে লাইট ধরে ডাকল,’ চারু’
চারু নড়ছে না ধ্রুবর হাঁটু কাঁপছে। ভয়ে ওর কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে। চারু নড়াচড়া করছে না কেন? বুকে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। ধ্রুব নিচে হাঁটু ভাঁজ করে বসে চারু কে ধাক্কা দিল নড়ছে না। ধ্রুব কাঁপা হাতে চারুর পালস চেক করল। তারপর নিশ্চিত হলো ভয়ে হয়তো অচেতন হয়ে গেছে। প্রচন্ড অনুতাপ হতে লাগল ধ্রুবর। নিজের উপর ক্ষুব্ধ হলো খুব তখন শাম্মীর কথায় নিজের রাগ কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না। তারপর রাগে বশেই এমন কঠিন একটা কাজ করতে হলো। তবুও ওদের সাথে বাইরে না গেলে হয়ত এতো সময় ওকে এই রুমে আটকে রাখতে হতো না ধ্রুবর। ধ্রুব চারুকে পাঁজাকোলা করে বেরিয়ে এলো। চারু কে নিয়ে নিজের রুমে ফিরে এলো দাদুর রুম পাস করার সময় ধ্রুব দেখল দাদু বড়ো বড়ো চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব সেদিকে খেয়াল না দিয়ে নিজের রুমে এসে চারু কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিতে লাগে জ্ঞান ফেরাতে। চারু চোখ পিটপিট করে তাকাতেই একটা আলিশান রুমে নরম তুলতুলে বিছানায় নিজেকে শোয়া অবস্থায় দেখতে পায়। চারু চোখ ঘুরিয়ে রুমটা চেনার চেষ্টা করতেছে তখনি ধ্রুব কে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায়। ধ্রুব ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব কে দেখেই চারু লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে। এবার রুমটা খুব দ্রুতই চিনে ফেলেছে এটা তো ধ্রুবর রুম। ও এই রুমে কি করছে? ও তো কেঁপে উঠল চারু। গায়ের লোম কাটা দিয়ে উঠল। স্টোর রুমে চারু তেলাপোকা দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল‌। একটা না অসংখ্য তেলাপোকা ওই রুমে ভয়ে চারু অচেতন হয়ে যায়। তারপর আর কিছুই মনে নেই।

চারু দেখল ধ্রুব কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে ধ্রুব ওকে ভয়ে আঁতকে উঠতে দেখে হতবিহ্বল হয়ে যায়। চারু বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল তারপর কোন কথা না বলে সোজা পা বাড়ালো বাইরে যাওয়ার জন্য। চারু কে এমন বিনা বাক্যে চলে যেতে দেখে ধ্রুবর চক্ষু চড়কগাছ। ও ভাবতেই পারেনি চারু এভাবে শান্ত হয়ে চলে যাবে। ও ভেবেছিল জাগ্রত হয়েই ওর উপর চিল্লাচিল্লি করতে লাগবে কিন্তু এই মেয়ে তো পুরোই উল্টো ও যা ভাবছে সেটাই করছে না।
চারুর এমন নিঃশব্দে চলে যাওয়া ওর কেন জানি পছন্দ হলো না ধ্রুব চারুর বাম হাত টেনে ধরে বলল,’কি হলো অতি শক এ পাথর হয়ে গেলে নাকি?’
চারু হাত মুচড়ামুচড়ি করছে কথা বলছে না।
‘ মুখে কথা বলো আমি তোমায় ধরে রাখতে চাই না। কথা বলো তারপর চলে যাও আটকাবো না।’
চারু রক্ত লাল চোখে তাকাল ধ্রুবর দিকে। তারপর চট করেই ডান হাত উঁচু করে ঠাস করে ধ্রুবর গালে থাপ্পর মেরে বসল। ধ্রুবর চেয়াল শক্ত হয়ে গেল। ফর্সা গালটা লাল হয়ে উঠল পাঁচ আঙুলের ছাপ। চারু দেখল তবুও ঘাড়ত্যারা ওর হাত ছাড়ে নাই। ধ্রুব থাপ্পর খেয়ে হাত ছাড়ার বদলে আরো শক্ত করে চেপে ধরল।
তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’ চর মেরে আমার হাত থেকে ছাড়া পাবে না।’
চারু অধৈর্য হয়ে বলল,’ আপনি কি চান? কথা বললেও আপনার সহ্য হয় না কথা না বললেও সহ্য হয় না আপনার তো আমাকেই সহ্য হয় না তাহলে কেন আমায় আবার বাড়িতে ফেরত আনছেন?’
ধ্রুব নিশ্চুপ। চারু ওর নিরবতা দেখে আরো চিৎকার করতে লাগল এসব জ্বালা যন্ত্রণা ওর আর সহ্য হচ্ছে না।
চারু দেখল ধ্রুব ওর হাত ছেঁড়ে দিয়েছে চারু ধ্রুবর বুকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

চারু চলে এলো বাসায়। বাসায় এসে ওর চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল। কারণ ধ্রুব ভেতরে বসে আছে। চারু কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব কখন আসলো?
ধ্রুব বসে কি যেন বলছে ময়না বেগম কে ময়না বেগম বসে যেসব শুনছে মনোযোগ দিয়ে। চারু কপাল কুঁচকে দরজার মুখেই দাঁড়িয়ে আছে বিষ্ময় এ ও ভেতরে প্রবেশ ও করতে পারছে না।
ও তো আজ রিকশা করেই এসেছে তাহলে এতো দ্রুত ধ্রুব এখানে কীভাবে চলে এলো। চারু কে চোখ দুটো কপালে তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিঁথি বলল,’ কিরে ওখানে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ‘
চারু চমকে উঠে তাকাল সিঁথির দিকে। সিঁথির কথায় ময়না বেগম ফিরে তাকিয়ে ককর্শ কন্ঠে বললেন,’ এতো সময় কোথায় ছিলি? তোকে নাকি সেই সন্ধ্যায় ছেড়ে দিয়েছে তোর বাড়ি আসতে এতো লেট হলো কেন?’
ময়না বেগম রাগে গজগজ করে উঠল। চারু হতবুদ্ধি কন্ঠে বলল,’ কে বলেছে সন্ধ্যায় ছেড়েছে?’
‘ কে আবার বলবে এই যে মানুষ তো এখানেই বসে আছে।’
চারু কটমট করে তাকালো ধ্রুবর দিকে ধ্রুবর ঠোঁটে রহস্যময়ী হাঁসি।
চারু দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’ আপনি মিথ্যা বলেছেন কেন? আর এই সময় এখানে কেন এসেছেন?’
ময়না বেগম চারুর কথায় ক্ষেপে উঠলেন,’ ওই তুই আমার দিকে তাকা। আমার সামনে তুই উঁচু গলায় কথা বলছিস কত সাহস হয়েছে রে তোর দেখি আমি..!’
ময়না বেগম ক্রোধের সাথে এগিয়ে এলো চারুর দিকে। চারুর রাগে দুঃখে কান্না পাচ্ছিল এমনিতেই শরীর টা খুব ক্লান্ত লাগছে এখন বাসায় এসে একটু শান্তিতে চোখ বুজে শুয়ে থাকবে সেই উপায় ও নেই বাসায় এসে হাজির হয়েছে ওকে যন্ত্রণা দিতে‌‌। চারু নিজের ভেতরের রাগটা কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বারবার ওর চোখ দুটো রাগে ধ্রুবর দিকে চলে যাচ্ছিল। তা দেখে ময়না বেগম বললেন,’ বড়ো বড়ো চোখ করে তুই কারে ভয় দেখাস হ্যাঁ? হা রাম জাদি কোথায় গিয়েছিলি হ্যাঁ? রাতে দেরি ক‌রে বাড়ি আসিস কোথায় গিয়ে নষ্টামি করতে বল‌।’
চারুর কান দুটো ঘৃণায় রিনরিন করে উঠল। ময়না বেগম এর দিকে তাকাল টলমলে চোখে তারপর বলল,’ ছিহ এসব কি বলছো? তুমি বাইরের একটা ছেলের কথায় আমাকে এতো বাজে কথা বলছো?’
চারুর কথায় ময়না বেগম বললেন,’ কারে তুই বাইরের বলিস হ্যাঁ? ওতো ঘরের ছেলে আজ বাদে কাল এই বাড়ির..’
কথা কেড়ে নিয়ে ধ্রুব উঠে দাঁড়াল এবং বলল,’ থাক বাদ দেন আন্টি আমি আসি।’
চারু ধ্রুব কে বিদায় নিতে দেখে চিৎকার করে উঠল,’ আমার ঘরে আগুন জ্বালিয়ে আপনি বলছেন আসি? আপনি কেন মিথ্যা বলে মায়ের চোখে আমাকে খারাপ করলেন বলুন উত্তর না দিয়ে কোথাও যাবেন না।’
চারুর কথায় ক্ষেপে গেল সিঁথি,’মা দেখো ধ্রুব কে অপমান করছে চারু। ওকে কিছু বলবে না তুমি?’
ময়না বেগম চারু কে টেনে গালে থাপ্পর মারতে উদ্যত হলো। ধ্রুব চট করেই ময়না বেগমের হাতটা খপ করে ধরে আটকে বলল,’ আরে আন্টি কি করছেন এসব করবেন না। আমার জন্য মারামারি করবেন না প্লিজ।’
চারু জ্বলন্ত চোখে এক পলক তাকাল ধ্রুবর দিকে তারপর এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল।
#চলবে