#প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
২৮.
ধ্রুব কে নিয়ে ময়না বেগম শপিং মলে এসেছে। বিয়ের জন্য পাত্রের জন্য শেরোয়ানি কিনতে। ধ্রুব দাঁতে দাঁত চেপে ময়না বেগমের কথায় তাল মিলিয়ে হাসছে কিন্তু মনে মনে রাগে গজগজ করছে।
ধ্রুবর আড়চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে কপাল চাপড়াচ্ছে। কারণ নিজের পছন্দের মানুষকে আরেকজনের সাথে বিয়ের কথা হচ্ছে তাদের বিয়ের কেনাকাটা হচ্ছে সেটা ও নিজে পছন্দ করতে এসেছে ওর মতো হতভাগা আর কে আছে?
ধ্রুব একটা জিনিস খেয়াল করেছে চারু হঠাৎ করেই কেমন জানি পাল্টে গেছে। যে মেয়ে বিয়ের নাম শুনে পালিয়ে গিয়েছিল সেই মেয়ে নিজে থেকে নিজের হবু বরের জন্য শেরোয়ানি কিনতে ব্যস্ত হয়ে উঠল কেন?
এইতো সকালের কথা ময়না বেগম ও সিঁথির নোংরা প্লান জানার পর থেকে রাগে ক্ষোভে ফুঁসছিল ধ্রুব। চারুর সাথে একাকি কথা বলতে ওর রুমে পর্যন্ত গিয়েছিল ঘাড়ত্যারা চারু ওকে ধাক্কা দিয়ে রুমে থেকে বের করে নিজের মাকে চিৎকার করে ডাকতে লাগে।
চারু সবার সামনে গিয়ে বলে,’ আমি বিয়ে করতে রাজি মা। তাই আমার থেকে আর লুকিয়ে চুরিয়ে তোমার কিছুই করার প্রয়োজন নেই। তুমি আজ বিকেলেই বিয়ের বন্দোবস্ত করো। কিন্তু এই বিয়েতে তোমাকেও খরচ করতে হবে সব শুধু আমার হবু বরের কাছে চেয়ো না। আমাকে বিয়ে দিবে দাও কিন্তু আমি আমার মায়ের রেখে যাওয়া গহনা যা তুমি বাবার মৃত্যুর পর ছিনিয়ে নিয়েছো সব ফেরত চাই। এবং বরের শেরোয়ানি কিনতে হবে তোমাকে তারা তো আমায় লাখ টাকার শাড়ি দিয়েছে তুমি ও তেমনি একটা শেরোয়ানি কিনে আনো।’
চারুর কথায় ময়না বেগম সহ সিঁথি দুজনেই হা হয়ে যায়। দুজনের চোখ দুটো বিষ্ময় এ বড়ো বড়ো হয়ে যায় চারুর কথায় চারু কে চিনতে পারছে না যেন। সিঁথি ফিসফিস করে নিজের মাকে বলে,’ মা চারু কোন প্লান করেছে নিশ্চিত ওকে বিলিভ করো না।’
‘ আমারে কি পাগলে কামড়েছে আমি ওরে বিশ্বাস করমু? কিন্তু ও যা বলছে সব করব তবুও ভালোই ভালোই বিয়েটা হতে হবে।’
বলেই ময়না বেগম চারু কে বললেন,’ তুই পালানোর চেষ্টা করছিস আবার আমি বুঝি না ভাবছিস তাই না? এইবার কোন ফন্দি নিজের মনে এঁকে থাকলে আগেই বলছি সাবধান হয়ে যা চারু।’ রাগে চিৎকার করে উঠল ময়না বেগম।
চারু বলল,’ আমি তো বলছি আমি রাজি তোমার কথায়।’
‘ তোকে আমি বিশ্বাস করি না তুই কেমন দূরিবাজ মেয়ে আমার জানার বাকি আছে নাকি?’ সন্দেহের চোখে চেয়ে বললেন ময়না বেগম।
চারু বলল,’ বিশ্বাস এ মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।’
ময়না বেগম শান্ত চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,’ আমি তোর সব কথায় রাখব তুই কিন্তু বিয়েটা ভাঙার কোন পরিকল্পনা করবি না কথা দে।’
চারু দেখল ধ্রুব এগিয়ে এসে বিস্মিত নয়নে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। চারুর ঠোঁটে রহস্যময়ী হাঁসি ও বলল,’ আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আজকে আর পালাবো না। নিজে থেকে বিয়েটা আমি করব।’
সিঁথি চারুর হাত খামচে ধরে বলল,’ এই চারু তুই যদি কোন পরিকল্পনা করে থাকিস তোর খবর আছে মনে রাখিস।’
চারু সিঁথির গাল টেনে ধরে বলল,’ সিঁথি বোনু আমার এতো টেনশন করিস না আজকে তুই তোর দুলাভাই পাবি ডোন্ট ওয়ারি।’
সিঁথি বিরক্ত হয়ে গাল থেকে চারুর হাত সরিয়ে বলল,’ ন্যাকামি করছিস কেন?’
চারুর আড়চোখে ধ্রুবর দিকে চেয়ে নিজের রুমে চলে এলো।
ধ্রুব ওর পিছনে পিছনে এসে রাগী কন্ঠে বলল,’ এসব কি ফাজলামি হচ্ছে চারু?’
চারু পিছু ফিরে বলল,’ কি হয়েছে আপনি আমার উপর চিৎকার চেঁচামেচি করছেন? ভুলে যাবেন না আপনার আমার উপর চিৎকার করার কোন অধিকার নেই।’
ধ্রুব চারুর হাত মুচড়ে ধরে বলল,’ চারু আমার ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙে দিও না। তুমি কেন বিয়েতে রাজি বললে? হুয়াই?’
চারু হাত মুচড়ামুচড়ি করে বলল,’ হাত ছাড়ুন আমি বিয়েতে রাজি তাতে আপনি কেন এতো রেগে যাচ্ছেন? সমস্যা কি আপনার?’
‘ তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি কেন রাগ করছি।’
রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ধ্রুব।
চারু হাত ঝামটা দিয়ে বলল,’ আমি আপনার মতো উন্মাদের রাগের কারণ জানি না আর না জানতে চাই।’
ধ্রুব বলল,’ তোমাকে তো জানতেই হবে চারু। তুমি যদি না জানো তাহলে কি হবে?’
‘ দেখুন এখানে থেকে যান আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না। আমি এখন আমার হবু বরের জন্য শেরোয়ানি কিনতে যাব আমাকে রেডি হতে হবে।’ খুব তাড়া দেখিয়ে দরজা আটকে দিল চারু। ধ্রুব দরজায় টোকা দিয়ে বলল,’ তুমি কাজটা ভালো করলে না চারু।’
সিঁথি পিছনে এসে বলল,’ কি হয়েছে কোন কাজ ভালো করেনি চারু।’
ধ্রুব চমকে উঠে সরে দাঁড়াল দরজা থেকে। সিঁথি কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
ধ্রুব বলল,’ আসলে আমি বললাম তোমার বোন কে যে দুলাভাইয়ের জন্য শেরোয়ানি কিন্তু আমি চয়েজ করব। এটা শুনেই তোমার বোন রেগে বলল সে নাকি তার হবু বরের শেরোয়ানি কাউকে পছন্দ করতে দিবে না নিজে পছন্দ করে কিনবে।’
সিঁথি বিড়বিড় করে বলল,’ আদ্যিখেতা দেখলে বাঁচি না ওই বুইড়ার জন্য আবার শেরোয়ানি পছন্দ করার ন্যাকামি করতে হবে এখন।’
সিঁথি বলল,’ তুমি যেহেতু বলেছো এই কাজ তুমি করবে ও বললেই হলো নাকি ওকে আমি দেখে নেব।’
ধ্রুব কপালে হাত দিয়ে বিড়বিড় করল,’ এই বিয়ে কিভাবে হয় আমিও দেখব মিস চারু তুমি ধ্রুবর সাথে পাঙ্গা নিয়ে ঠিক করোনি হারে হারে টের পাবে।’
ধ্রুব মার্কেটের সবচেয়ে বাজে শেরোয়ানি দেখছে শুধু ওর তো হাত পা জ্বলছে এই ন্যাকামি দেখে। চারু একটু পর পর শেরোয়ানিতে হাত দিচ্ছে ধ্রুব তখনি সেখানে গিয়ে বলছে,’ চারু তোমার চয়েজ ভালো কিন্তু শুনলাম তোমার উডবি নাকি বেশি বয়স্ক তাই এটা তাকে বানাবে না। তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে এই শেরোয়ানি পরে আমি কবুল বলার জন্য তৈরি হতে পারি।’
বলেই ধ্রুব লাজুক হাসতে লাগে। চারু রাগে গজগজ করে শেরোয়ানি রেখে সেখানে থেকে চলে যায়। ওর চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ে পরে যেন ধ্রুবর কথা শুনে। ধ্রুব চারুর চয়েজ করা হোয়াইট শেরোয়ানি টয়ার রুম থেকে পরে আসে। ওকে দেখে তো সিঁথি বুকে হাত দিয়ে বলে,’ হায় কি সুন্দর লাগছে আমি তো মরেই যাব ও এতো হ্যান্ডসাম কেন?’
সিঁথি হা করে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে। আর ধ্রুব শেরোয়ানি পরে ময়না বেগমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,’ আন্টি দেখুন তো এই শেরোয়ানি পরা ছেলেটা বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে নাকি।’
সিঁথি তো লাফিয়ে লাফিয়ে চলে আসে ওদের কাছে। দূরে থেকে চারু রাগী চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিল। ধ্রুব আড়চোখে ওর রাগ দেখছে।
ময়না বেগম তো আনন্দে আটখানা হয়ে বলে উঠেন,’ মাশাআল্লাহ তুমি তো সোনার টুকরো ছেলে তুমি চাইলে তো এখনি আমি মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেব। আমার কোন আপত্তি নেই।’
ধ্রুবর ঠোঁটে রহস্যময়ী হাঁসি ও চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,’ আপনার বড়ো মেয়ে কেমন করে তাকিয়ে আছে দেখুন। এই শেরোয়ানি তো ও নিজের উডবির জন্য পছন্দ করেছিল আমি নিয়ে নেওয়ায় রাগে ফুঁসছে দেখুন।’
ময়না বেগম বলেন,’ ওর কথা বাদ দাও তো।’
সিঁথি এই কথা শুনে চেঁচিয়ে ডাকে চারু কে। চারু এগিয়ে আসতেই ও বলে,’ তোর ওই কাইলা বুইড়া জামাই এর জন্য এই হোয়াইট শেরোয়ানি পছন্দ করছিলি। হাস্যকর কথা চারু। ওই কাইলা এটা পরলে ওরে জোকারের থেকে কম লাগবে না।’ বলেই অট্টহাসি দিতে লাগল সিঁথি। চারু চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে ছিল।
ওরা মা মেয়ে একদিকে চলে গেল হাসতে হাসতে ধ্রুব শেরোয়ানি চেঞ্জ করে বেরিয়ে চারু কে খুঁজতে শুরু করে আর পেয়েও যায়।
‘ চারু তুমি ওই হোয়াইট শেরোয়ানি আমার জন্য পছন্দ করেছো আমি কিন্তু জানি।’
চারু আগুন চোখে চেয়ে বলে,’ আবার ফালতু কথা বলতে এসেছেন? আপনার জন্য পছন্দ করব কেন? বিয়ে কি আপনার সাথে হচ্ছে?’
ধ্রুব মাথা চুলকে বলল,’ তুমি চাইলে এখুনি বিয়ে করতেও আমি রাজি আছি চারু।’
চারু হাঁটা থামিয়ে দিল। সোজা হয়ে দাঁড়াল ধ্রুবর সামনে। ধ্রুবর কপাল কুঁচকে চেয়ে আছে কারণ চারু কেমন জানি করে তাকিয়ে আছে পলক ফেলতে চাইছে না যেন।
‘ কি হলো স্ট্যাচু হয়ে গেলে নাকি?’
‘ আপনি বিয়ে করবেন? কাকে আমাকে নাকি সিঁথি কে?’
ধ্রুব বলল,’ অফকোর্স তোমাকে। আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি জানো না?’
চারু বলল,’ ও তাই নাকি? আপনি আমায় ভালোবাসেন? ওকে মানলাম আপনি আমায় ভালোবাসেন। যান ওখানেই আমার মা ঘুরছে তাকে গিয়ে এখুনি জানান এই কথাটা।’
চারু দেখল ধ্রুব হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,’ কি হলো হা করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যান বিয়ের প্রপোজাল দিন।’
ধ্রুব বলল,’ আমি এতো বোকা না ওকে তুমি আমায় ওখানে পাঠিয়ে একটু পর আবার বলবে তুমি আমায় ভালোবাসো না। এটা তো হবে না।’
‘ আপনি এতো ভীতু আমি জানতাম না।’
‘ দেখো এখনো প্রেম করতে পারলাম না আগেই বিয়ের দিকে এগিয়ে যায় কীভাবে বলোতো? আর তুমি আমায় লাইক করো না আমি জানি। এখন ওখানে গিয়ে যদি বলি আমি তোমায় ভালোবাসি। তোমাকে জিজ্ঞেস করলেই তুমি অস্বীকার করবে তখন কি হবে? আগে তুমি আমায় ভালোবাসো তারপর না হয় আমি সব করব।’
‘ হাহাহা বিয়ের কথা আসতেই ভালোবাসা পালিয়ে গেল তাই না? আপনি আমার সাথে জাস্ট টাইম পাস করতে চান আমি জানি। আপনি আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করবেন ইম্পসিবল। এখন কত বাহানা হবে। আপনার মতো ছেলেরা আমাদের মতো সাধারণ মেয়েদের কে শুধুমাত্র ফুর্তি করতে পছন্দ করে পিছু ঘুরে ভালোবেসে ঘরের বউ করার জন্য কাছে আসে না।’
‘ দেখো চারু তুমি আমায় ভুল ভাবছো। আমি তোমায় ভালোবাসি এটাই সত্যি। মায়ের এই অবস্থা আমি কিভাবে এমন একটা সিদ্ধান্ত একা নেই বলো? তুমি আমার ভালোবাসা কে নিয়ে প্রশ্ন তুলো না।’ কঠিন স্বরে বলল ধ্রুব।
চারু বলল,’ এনাফ আর এক্সকিউজ দেখাতে হবে না। চলে যান আমার সামনে থেকে। আর জ্বালাবেন না অনেক হয়েছে এবার সব কিছু ঠান্ডা হতে দিন আমি আর পারছি না। এই বিয়েটা করে আমি একটু শান্তি চাই। এতো ঝামেলা আমি আর নিতে পারছি না। আপনি আর বেগড়া দিবেন না।’
ধ্রুব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’ তার মানে সত্যি তুমি এই বিয়েটা করবে মন স্থির করছো?’
‘ হ্যাঁ নিয়েছি বিয়েটা আমি করব।’ বলে উঠল চারু। ধ্রুবর কপালের রগ ফুলে উঠল রাগে। রক্তবর্ণ হয়ে উঠল মুখ মন্ডল চারু ওর সামনে থেকে চলে যাওয়া ধরলে ধ্রুব বলে উঠে,’ খুব ভুল করছো চারু। এখনো সময় আছে আমার সাথে চলো আমরা পালিয়ে যায়। তোমার সমস্ত নিরাপত্তা আমি দেব। কথা দিচ্ছি।’
‘ তাই নাকি আপনি দিবেন নিরাপত্তা?’
ধ্রুব বলল,’ হ্যাঁ তোমার থাকার সমস্ত বন্দোবস্ত আমি করব। তুমি আমার হাত ধরে একবার বেরিয়ে দেখো আমি তোমাকে সুন্দর একটা জীবন উপহার দেব চারু। আম্মু একটু সুস্থ হলেই আমি বাসায় জানব তারপর আমাদের বিয়ে হবে।’
চারু বলল,’ সরি আমি আপনার সাথে কোথাও যেতে পারব না। এবার আমি আর পালাব না। বিয়ে করে একবার আমি শ্বশুরবাড়ি যেতে চাই। আমি আর চোরের মতো পালাতে চাই না।’
#চলবে
#প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
২৯.
চারু সত্যি সত্যি বিয়েটা করতে রাজি বিলিভ করেনি ধ্রুব। ওর কেবলি মনে হতে লাগে চারু ওকে ভয় দেখাতে এমন করছে। চারু কে সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছে। অনেক আগেই পাত্র তার আত্মীয় নিয়ে হাজির হয়েছে। চারুর পছন্দ করে আনা শেরোয়ানি পাত্র কে দিতে সিঁথি যাবে বলল। ধ্রুব চোখমুখ অন্ধকার করে দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে কিছুই ওর বোধগম্য হচ্ছে না। রাগে ওর সব কিছুই ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে। পাত্র শেরোয়ানি পরে রেডি হবার আগে চারুর সাথে পার্সোনালি আলাপ করবে জানাল। এটা শুনে তো মাথায় রক্ত উঠে গেল ধ্রুবর। ধ্রুব চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। রাগে ওর চোখ দুটো রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। ওর মুখ মন্ডল লাল হয়ে উঠেছে। ধ্রুব শক্ত হয়ে চারুর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। রাগে ফুসফুস করছিল দাঁড়িয়ে।
সিঁথি পাত্র কে নিয়ে এসে দেখল ধ্রুব দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে। সিঁথি বলল,’ ধ্রুব সরে দাঁড়াও।’
ধ্রুব নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। সিঁথি কপাল কুঁচকে বলল,’ কি হলো কোন সমস্যা,?’
ধ্রুব বলল,’ হ্যাঁ সমস্যা তো বটেই।’
সিঁথি চমকে উঠল। ও পাত্র কে রেখে ধ্রুব দিকে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,’ কী হয়েছে তোমাকে এতো রাগী মনে হচ্ছে কেন? চারু কি আবার পালানোর চেষ্টা করেছিল নাকি?’
ধ্রুব কিছু বলার আগেই সিঁথি ভেতরে উঁকি দিয়ে বলল,’ বলো আমায় আজকে যদি ও কোন গন্ডগোল করার চেষ্টা করে আমি ওকে…’
সিঁথির কথা শেষ হবার আগেই ধ্রুব বলল,’ চারু পালানোর চেষ্টা করলেই আমি খুশি হতাম আমি এটাই চাচ্ছিলাম। কিন্তু চারু পালাচ্ছে না তোমাদের মা মেয়ের কথায় তাল মিলিয়ে বিয়ে করার জন্য জেদ ধরে বসে আছে এটাই আমাকে রাগান্বিত করছে।’
সিঁথি চোখ কপালে তুলে তাকাল ধ্রুবর দিকে। সিঁথি
ভ্রু জোড়া কুঁচকে বিস্মিত কন্ঠে বলল,’ এসব কি বলছো তুমি ধ্রুব?’
সিঁথির দিক থেকে চোখ সরিয়ে ধ্রুব তাকাল পাত্রের দিকে তারপর রাগী স্বরে বলল,’ লজ্জা করছে না আপনার মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে শেরোয়ানি পরে বিয়ে করতে আসছেন? আবার আহ্লাদ করে তার সাথে আলাপ করতে এসেছেন? যে মেয়ে আপনাকে বিয়ে করবে না বলে পালিয়ে গিয়েছিল তাকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে এসেছেন শালা বদমাইশ।’
ধ্রুব চিৎকার করে উঠল। ওর হুংকার এ কেঁপে উঠল সিঁথি। ও থমকানো চোখে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে। ঢোক গিলে তাকাল পাত্রের দিকে কাইলা লোকটা ভীষণ লজ্জা পেয়েছে হয়ত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
পাত্র মাথা তুলে বলল,’ আপনি কিন্তু বেয়াদবি করছেন আমার সাথে।’
সিঁথি ধ্রুবর দিকে এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে বলল,’ কি হয়েছে তোমার? এসব কি বলছো?’
ধ্রুব ধাক্কা দিয়ে সিঁথি কে নিজের থেকে সরিয়ে দিল। আচমকা ধাক্কা খেয়ে সিঁথি পাশের দেয়ালে বারি খেল।
ধ্রুব আঙুল তুলে বলল,’ তোমার আর তোমার মায়ের অনেক নিম্ন কাজ দেখেছিলাম। অনেক কষ্টে আমি নিজের রাগ কে নিয়ন্ত্রন করে রেখেছিলাম। কিন্তু আর পারছি না যাকে আমি ধ্রুব ভালোবাসি তাকে তোমরা এই বুড়ো লোকটার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছো? এতো সাহস তোমাদের শুধুমাত্র চারু কে রাজি করানো পর্যন্ত চুপ থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু চারু আজ আমার সাথে পালাতে রাজি হচ্ছে না ও এই লোকটাকে তোমাদের জন্য বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। এটা তো আমি বরদাস্ত করব না। ইম্পসিবল।’
এক দমে রাগী স্বরে কথাটা বলল ধ্রুব। চারু ছুটে এলো ঘরের ভেতরে থেকে। ধ্রুব কে চিৎকার চেঁচামেচি করতে দেখেই ওর বুক কেঁপে উঠেছে। দরজার ধরে দাড়াতেই সব গুলো কথা ওর কানে চলে এলো। বিস্ময় এ হতভম্ব হয়ে গেল চারু। এদিকে সিঁথি আশ্চর্যান্বিত হয়ে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে।
এসব কি বলছে ধ্রুব কেন বলছে ও তো আমায় ভালোবাসে তাহলে চারু কে ভালোবাসার মিথ্যা কথা কেন বলছে?
মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সিঁথির ও বোকা কন্ঠে এগিয়ে এলো মাথা ধরেই।
‘ এসব কী বলছো ধ্রুব তুমি? কেন তুমি মিথ্যা কথা বলছো বলো? তুমি তো আমায় ভালোবাসো তাই না। আমার জন্য তো তুমি প্রতিদিনই আমাদের বাসার সামনে এসে দাড়িয়ে থাকতে। এখন কেন তুমি চারু কে ভালোবাসো এই মিথ্যা কথাটা গলা উঁচু করে চিৎকার করে বলছো?’
ধ্রুব গম্ভীর স্বরে বলল,’ আমি তোমাকে ভালোবাসি হাহাহা.. তোমার মতো একটা মেয়েকে আমি ভালোবাসবো কি ভাবনা তোমার… আমি তোমার জন্য কখনোই এই বাসায় এই দিকে আসিনি। আমি চারুর জন্য এই গলিতে এসেছি ওকে খুঁজতে। শুধুমাত্র ওঁর জন্যে আমি তোমাদের বাড়িতে এসেছি তোমাদের সাথে মিশেছি।’
থমকে উঠল সিঁথি। এতো দিনেই সমস্ত আশা ভালোবাসা ভালোলাগা মিনিটের মধ্যে তিক্ততায় বদলে গেল যেন। রাগে দুঃখে উত্তেজিত হয়ে উঠল সিঁথি। দুহাতে নিজের মাথা খামচে ধরে মা বলে চিৎকার করে উঠল।
‘ মা মা মা..’
ধ্রুব পাত্র কে অপমান কে পাঠিয়ে দিল সে ড্রয়িংরুম এ গিয়ে রাগে ফুঁসছে। এই বাসায় থেকে যাবে কিন্তু নিজের খরচ করা সব টাকা সুদ সমেত নিয়ে যাবে।
ময়না বেগম দৌড়ে এলো রান্নাঘর থেকে। মেয়েকে অস্বাভাবিক দেখে ছুটে এসে বলল,’ কি হয়েছে মা এমন করছিস কেন তুই?’
সিঁথি মায়ের দিকে চেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,’ মা ধ্রুব আমায় ঠকিয়েছে ও আমায় ভালোবাসে না। ও চারুর কে ভালোবাসে। ও চারুর জন্য এসব করেছে।’
ময়না বেগম ভয়ঙ্কর রেগে গেল রাগে চড়াও গলায় বলেন ,’ কী বললি তুই? আমার মেয়ের সাথে এতো বড়ো প্রতারণা? এই গোলামের পুঁতের এতো সাহস ও আমার মেয়েকে রেখে ওই নষ্টা মেয়েকে ভালোবাসার কথা বলে।’
ময়না বেগম তো পারে না ধ্রুব আর চারু কে খুন করতে।
।
ময়না বেগম কি করবে কি করবে দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। হঠাৎ উনার চোখ গেল ভয়ে কাঁপতে থাকা চারুর দিকে আর এক সেকেন্ড ওয়েট না করে চারুর চুলের মুঠি ধরে টেনে আনল দরজায় হেলে দাঁড়িয়ে থাকা চারু কে। চারু কুঁকড়ে যায়। ধ্রুব চারু কে ময়না বেগমের হাতের নিচ থেকে ছাড়িয়ে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলে,’ সাবধান আন্টি। আপনি চারু কে কোন প্রকার আঘাত করার দুঃসাহস করলে ফলাফল খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি আন্টি।’
বলেই ধ্রুব চারু কে একহাতে জড়িয়ে ধরল। চারু ছটফট করে ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ধ্রুব কে ঠাস করে চর দিয়ে বলল,’ আর একটা কথা বললে আমি আপনাকে খুন করে ফেলব।’
ধ্রুব অসহায় করে তাকাল এবং চারুর দিকে। চারু ময়না বেগমের হাত ধরে বলল,’ মা তুমি যা বলবে তাই হবে। ওর কথা শোনো না।’
ময়না বেগম আর সিঁথি বিস্মিত হয়ে চারু কে দেখছিল ও ধ্রুব কে চর মারল আর ধ্রুব নিশ্চুপ হয়ে থাপ্পর খেল কিছুই বলল না। এসব দেখে মা মেয়ের চোখ চরকগাছ।
ময়না বেগম আমতা আমতা করে বললেন,’ তলে তলে টেম্পু চালাস এখন আমার সামনে ন্যাকা সাজছিস আমি বুঝি না তাই না?’
ময়না বেগম রেগে বললেন।
সিঁথি এসে বলল,’ ওকে ছাড়বে না মা ও আমার ধ্রুব কে কেড়ে নিয়েছে। ওকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দাও।’
ময়না বেগম খপ করেই চারুর হাত ধরল তারপর টেনে হেঁচড়ে ড্রয়িংরুম এ নিয়ে যেতে লাগল চারু কে।
ধ্রুব পেছনে থেকে চারুর হাত টেনে ধরে বলল,’ আন্টি আমাকে উত্তেজিত করবেন না। বিয়ের আশা আপনি বাদ দিয়ে দিন চারু কে বিয়ে আপনি দিতে পারবেন না। শুধু শুধু জল ঘোলা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিবেন না।’
ময়না বেগম হাত জোরে টেনে বললেন,’ তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো ধ্রুব। তোমাকে আমার মেয়ে পছন্দ করে বিধায় এখনো আমি তোমার সাথে খারাপ আচরণ করছি না। নিজের লিমিটের মধ্যে থাকো। আমাকে আমার কাজ করতে দাও এই কালনাগিণী কে আমি কিছুতেই আমার মেয়ের সুখ কেড়ে নিতে দেব না। ওকে এই বিয়ে করতেই হবে।’
চারু দুজনের মাঝে পরে আধমরা হচ্ছে ও দুজনকেই ধমক দিয়ে চিৎকার করে উঠল,’ আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে দুজনেই ছেড়ে দিন।’
ধ্রুব এক টানে চারু কে নিজের বুকের কাছে এনে বলল,’ আমার প্রস্তাবে রাজি হলে এই পরিস্থিতিতে তোমাকে পরতে হতো না চারু। এখন একটু তো সাফার তোমায় করতেই হবে জান।’
চারু ধ্রুবর চোখে চোখ রেখে বলল,’ আমি এক কথার মেয়ে। স্বামীর হাত না ধরে এই বাসার চৌকাঠ আমি পেরুবো না।’
ধ্রুব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’ তুমি এতো বিয়ে পাগল মেয়ে আমার কিন্তু একবারের জন্যও মনে হয়নি চারু।’
‘ ও আচ্ছা।’
‘ চারু তুমি কিন্তু এটা প্রমাণ করে ছাড়লে আমাকে হাজব্যান্ড হিসাবে পেতে তুমি একটু বেশিই অধৈর্য্য হয়ে উঠেছো। এতোটাই ভালোবেসে ফেললে যে এক মুহুর্ত আমাকে ছাড়া কাটাতে চাচ্ছ না।’ দুষ্টু কন্ঠে বলল ধ্রুব।
চারু বলল,’ আপনার যা খুশি ভাবুন বলুন আই ডোন্ট কেয়ার।’
ধ্রুব নিজের হাতে ধরে রাখা চারুর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল,’ যাও তোমার ইচ্ছেই পূরণ হোক তাহলে।’
ময়না বেগম টেনে নিয়ে গেল চারু কে ড্রয়িংরুমে।
#চলবে….?
#প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
৩০.
ধ্রুব হাত ছেড়ে দেওয়ায় চারুর পিল চমকে উঠে। বিস্মিত চোখে তাকায় ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব কি তাহলে ওকে আশা দেখিয়ে ফেরত আসার কথা ভাবছে। চোখ দুটো টলমল করে উঠল নিমিষেই চারুর। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,’ তুমি যদি ওই লোকটাকে বিয়ে করে সুখি হতে চাও আমি আর তোমার সুখের পথে বাধা হবো না চারু। তুমি ভালো থাকো আমি এটাই চাই। তোমার ইচ্ছে আমার কাছে সবচেয়ে দামী।’
ধ্রুবর কথায় আহাম্মক হয়ে গেল চারু। ও কি অতিরিক্ত করে ফেলল? ধ্রুব এভাবে হাল ছেড়ে দিলে কীভাবে হবে? ও তো কিছুতেই ওই লোকটাকে বিয়ে করতে পারবে না দরকার পরলে গলায় দড়ি দিবে কিন্তু বিয়ে করবে ওই লোকটাকে ইম্পসিবল। মনটা মলিন হয়ে গেল চারুর। চোখে মুখে আঁধার দেখতে লাগল। ধ্রুবর কথায় ওর জেদ ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেল। ময়না বেগম ওকে টেনে ধরছে কিন্তু এবার চারু হাত ছাড়ানোর জন্য ছটফট করে উঠল। শক্ত হয়ে ফ্লোর খামচে দাঁড়িয়ে পড়ল এক জায়গায় স্থির হয়ে। এতোক্ষণ ধ্রুব হাত ধরে ছিল তাই স্বাভাবিক ছিল কিন্তু এখন ও শক্ত হয়ে গেছে।
ময়না বেগম বললেন,’ কিরে কি হলো তুই আসছিস না কেন?’
ঢোক গিলে চারু তাকাল ময়না বেগমের দিকে। ময়না বেগম রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
চারু আমতা আমতা করে বলল,’ আমার হাত ছাড়ো মা।’
ময়না বেগম কটমট করে বললেন,’ কেন?’
চারু জোর করে হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে নিজের রুমের দরজা আটকে ফেলল। ধ্রুবর ঠোঁটে রহস্যময়ী হাঁসি ফুটে উঠল। ও জানতো এই বিয়ে চারু কিছুতেই করবে না। যেটুকু জেদ দেখিয়েছে ওর জন্য দেখিয়েছে। কারণ চারু জানতো ধ্রুব উপস্থিত থাকা অবস্থায় কোনভাবেই এই বিয়ে হবে না। কিন্তু ধ্রুব রাজি হতেই চারু ভয় পেয়ে যায়।
ময়না বেগম রেগে চিৎকার করে উঠলেন। এগিয়ে এসে দরজায় থাপ্পর দিয়ে বললেন,’ দরজা খোল।’
ধ্রুব ময়না বেগমের হাত ধরে বলল,’ আন্টি প্লিজ আর ঝামেলা করবেন না। আপনি বুঝতে পারছেন না চারু আমায় ভালোবাসে। ও এই বিয়ে করবে না। আর ও করতে চাইলেও আমি করতে দিতাম না।’
ময়না বেগম রাগে ফুসফুস করছে।
‘ আচ্ছা আন্টি আপনি এই বিয়েটা দিতে এতো কেন হাইপার হচ্ছে শুধুমাত্র টাকার জন্য তাইতো?’
ময়না বেগম বললেন,’ তোমার সাথে আমি কোন কথাই বলতে চাই না। তুমি বেরিয়ে যাও আমার বাসা থেকে। দুধকলা দিয়ে কালসাপ পুষেছি এতো দিন।’
‘ আন্টি আপনাকে আমি ওই বুড়ো লোকটার থেকেও বেশি টাকা দেব আপনি এই বিয়ে ভেঙে দিন।’
ময়না বেগম আঙুল তুলে বললেন,’ তুমি আমায় লোভী ভাবছো? আমি লোভী না। আমি আমার কোন মেয়েকেই তোমার মতো বেয়াদব ছেলের কাছে বিয়ে দেব না।’
‘ হাহাহা আন্টি আপনি বললেই তো আর আমি ধ্রুব থেমে থাকব না। বিয়েটা আপনি ভেঙে দিল আমার কথা শুনলে কিছু টাকা পাবেন নয়তো চারু আমার প্রস্তাবে রাজি তাই ওকে আমার পাওয়া ব্যাপার না। আপনি রাজি হলেও চারু কে আমি বিয়ে করব রাজি না হলেও করব। তাই কি করবেন ভাবুন ঠান্ডা মাথায়।’
ময়না বেগম লজ্জায় আর ড্রয়িংরুম এ আসতে পারছিল না। ধ্রুব নিজেই গিয়ে সবার সাথে কি নিয়ে যেন তর্কাতর্কি লাগিয়ে দিল। ময়না বেগম আর সিঁথি ও এগিয়ে এলো দাঁতে দাঁত চেপে। সবাই তখন কি যেন বলে বেরিয়ে গেল ধ্রুব পায়ের উপর পা তুলে তখন সোফায় বসে আছে। সিঁথি মায়ের কানে কানে বলল,’ বদমাইশ একটা। এই ছেলেকে আমি বিয়ে করব না মা।’
ময়না বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,’ তোকে যেন বিয়ে করতে বসে আছে। ওর কথায় রাজি হয়ে যাই চল ও বলেছে টাকা দিবে।’
‘ আচ্ছা।’
কাজী বসা ছিল। কি হচ্ছে কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। তিনি হতবুদ্ধি হয়ে সব দেখলেন। পাত্র চলে গিয়েছে তিনি আর থেকে কি করবেন?
তিনি উঠে দাড়াতেই ধ্রুব ডেকে উঠল,’ আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’
কাজী চমকে উঠলেন ধ্রুবর ডাকে। ধ্রুবর যা রাগ দেখেছেন তিনি ভয়ার্ত চোখে তাকালেন ধ্রুবর দিকে।
ধ্রুব বলল,’ আপনি বিয়ের কাজ সম্পুর্ন না করে কোথায় যাচ্ছেন?’
রেগে বলল ধ্রুব। কাজী বেকুব হয়ে গেল যেন। পাত্র কে তাড়িয়ে এখন বলছে বিয়ে না পড়িয়ে যাচ্ছি কেন পাগল নাকি এই ছেলে।
‘ পাত্র তো চলে গেল কার বিয়ে পড়াবো?’ বিস্মিত কন্ঠে বললেন তিনি।
ধ্রুব নিজের চুল ঠিক করে বলল,’ কেন আমাকে দেখে কি আপনার পাত্র লাগছে না? এমন সুদর্শন পুরুষ রেখে আপনি পাত্র খুঁজে পাচ্ছেন না?’
কাজী সাহেব বসলেন।
ধ্রুব বলল,’ আপনি বসে অপেক্ষা করুন আমি কনে নিয়ে আসছি।’
ধ্রুব ভেতরে চলে গেল। যাওয়ার আগে সিঁথির মাথায় গাট্টা মেরে বলল,’ কি শালিকা দুলাভাই পছন্দ হয়েছে তো।’
সিঁথি ভেংচি দিয়েছে। ধ্রুব বলল,’ শালিকা দেখি আমাকে পছন্দ করেছে।’
ধ্রুব হাসতে হাসতে চলে গেল। সিঁথি মায়ের কানে কানে বলল,’ ভাব দেখে গা জ্বলে উঠছে আমার। অসহ্য যাকে নিজের ভাবলাম এখন নাকি তাকে দুলাভাই ভাবতে হবে। আমার মতো সুন্দরী স্মার্ট মেয়ে রেখে ওই আনস্মার্ট খ্যাত টাকে কি দেখে ধ্রুব পছন্দ করছে আল্লাহ জানে।’
ধ্রুব চারুর রুমের দরজায় টোকা দিয়ে বলল,’ চারু দ্রুত বেরিয়ে আসো পাত্র আর কত সময় অপেক্ষা করবে বলোতো? সেতো তোমার সুন্দর চেহারা দেখার জন্য ছটফট করছে।’
চারু বিছানায় বসে ছিল ধ্রুবর কথায় ফুস করে জ্বলে উঠল। চারু গমগমে এগিয়ে এসে দরজার ছিটকিনি খুলে দিতেই ধ্রুবর হাঁসি হাঁসি মুখটা ভেসে উঠল। চারু শরীর জ্বলে উঠল ধ্রুবর হাঁসি দেখে।
জ্বলন্ত চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলল,’ আপনার মতো খবিশ লোক আমি দুটো দেখিনি। আপনি এতো নির্লজ্জ কিছুক্ষণ আগেও ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছিলেন এতো দ্রুত আপনার মন পরিবর্তন হয়ে গেল? এই জন্য আমি আপনাদের মতো ছেলেদের সহ্য করতে পারিনা।’
‘ কেন জান? তুমি নিজেই তো এই বিয়ে করার জন্য রাজি ছিলে। আমি কি ওই টাইপের ছেলে যে জোর করে ভালোবাসা আদায় করবে? আমি তো ওমন নয়। তুমি ওই লোকটাকে বিয়ে করে সুখী হতে চাইলে আমি কেন বাধা দেব তোমার সুখই তো আমার সুখ চারু।’
কথাটা শেষ করে নিতে পারল না ধ্রুব চারু ঠাস করে ওর গালে থাপ্পর মেরে দিল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলল,’ আমার সুখ এতো আপনাকে দেখতে হবে না আপনি আমার চোখের সামনে থেকে যান।’
ধ্রুবর সামনে থেকে সরে চারু বিছানায় বসে চোখের পানি নাকের পানি এক করে কাঁদতে লাগল।
ধ্রুব ভেতরে এসে বলল,’ কাজী কিন্তু এতো সময় অপেক্ষা করবে না চলো।’
চারু চোখ ভর্তি পানি নিয়েই শক্ত কন্ঠে বলল,’ আমার কান্না দেখেও কি আপনি বুঝতে পারছেন না এই বিয়েটা আমি করতে চাইছি না।’
‘ কেন বিয়ে করতে চাইছো না?’ অবুঝ কন্ঠে বলল ধ্রুব।
চারু রেগে ধ্রুবর কলার টেনে ধরল। রাগে ওর চোখ দিয়ে আগুন বেরোচ্ছে যেন। ধ্রুবর চোখ পিটপিট করে চারুর রাগী চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,’ কি হলো?’
‘ আপনি বুঝতে পারছে না আমি আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাই না। বিশেষ করে ওই লোকটাকে তো নয়ই।’ রাগে চিৎকার করে উঠল চারু।
ধ্রুব বলল,’ এতো ভালোবাসো?’
চারু লজ্জায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল। কিন্তু নিজে সরতে পারলো না ধ্রুব ওর কোমড় জড়িয়ে ধরেছে যে। চারু বলল,’ ছাড়ুন।’
ধ্রুব বলল,’ বাইরে চলো।’
‘ আমি বিয়ে করব না।’
‘ পাত্র যদি আমি হই তাও যাবে না?’
ধ্রুবর কথায় চমকে উঠল চারু। বিস্মিত চোখে তাকাল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব ভ্রু জোড়া নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো ফের। চারু বিমূঢ় হয়েই ধ্রুবর সাথে ড্রয়িংরুমে এলো। দেখল সবাই চলে গিয়েছে। কাজী একাই সোফায় বসে আছে পাশেই সিঁথি আর ময়না বেগম দাঁড়িয়ে আছে।
চারু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব বলল,’ কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?’
চারু মন চাইলো ধ্রুবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কিছু বলতে। ও লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব ওকে টেনে দুজনেই পাশাপাশি সোফায় বসলো। কাজী সাহেব কাবিননামা দিল দুজনকে সাইন করতে চারু সাইন করার সময় ছলছল চোখে তাকিয়ে ছিল ময়না বেগমের দিকে তিনি রেগে ভেতরে চলে গিয়েছে। সিঁথি দাঁড়িয়ে ছিল।
চারুর হাত কাঁপছিল থরথরিয়ে। সাইন শেষ হতেই বিয়ে পড়ানো হলো চারু কে যখন আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলতে বলল ও আর বলতে পারছিল না যেন। কে যেন ওর গলা চেপে ধরে রেখেছিল। ধ্রুব বলল,’ কি হলো বলো..’
চারু কাঁপা কন্ঠে, আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলার পর ধ্রুবর বলতে হলো বিয়ে শেষ করে কাজী চলে গেল।
সিঁথি এগিয়ে এসে দাঁড়াল দুজনের সামনে।
সিঁথি আঙুল তুলে বলল,’ বিয়ে তো করে নিলি। কিন্তু শ্বশুর বাড়ি গিয়ে একফোঁটাও সুখ পাবি না তুই। তোর মতো কাজের মেয়েকে কেউ গ্রহণ করবে না মনে রাখিস।’
বলেই শয়তানি হাসি দিতে লাগল সিঁথি।
#চলবে….