প্রেমনেশা পর্ব-৪৯+৫০+৫১

0
3

#প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
৪৯.

চারু ওয়াশরুম থেকে মগ ভর্তি পানি এনে ধ্রুবর মুখের উপর ঠাস করে পানি ঠেলে দিল। ধ্রুব অনেক কষ্টে সোফায় পা ভাঁজ করে শুয়ে ছিল। বাঁকা হয়ে কখন ঘুমিয়ে পরেছিল মনে নেই কিন্তু হঠাৎ পানির ঝাপটায় মনে হলো ছাদ ফেটে পানি পরছে। ধ্রুব লাফ দিয়ে উঠে বসল। চারু রাগী চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব চারুর রাগী চোখ দেখে বলল,’ এসব কি চারু কোথায় ভেবেছিলাম আজকে সকালে উঠে দেখব তুমি ভেজা চুলে লাজুক মুখে আমার পাশে বসে থাকবে এক কাপ কফি হাতে। তা না তুমি সাতসকালে এমন অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আমার মাথায় ছাদ ভাঙার ভয় দেখালে কেন?’
চারু ধ্রুবর কথা অগ্রাহ্য করে বলল,’ উঠুন।’
ধ্রুব উঠল তারপর আচমকাই চারুর ওড়না টেনে মুখ মুছে নিল। চারু মুখটা ভয়ংকর করে তাকাল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব চারুর রাগ দেখে চোখ টিপে বলল,’ রাতে তো রোমান্স করতেই দিলে না এখন একটু করতে দাও না হয়।’
বলেই ধ্রুব চারুর কোমড় জড়িয়ে ধরে ঠোঁট চোখা করে চুমু দিতে উদ্যত হয়। চারু ঠোঁট হাত দিয়ে চেপে ধরে গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,’ খবরদার যদি আমাকে স্পর্শ করেছেন।ছাড়ুন আমাকে।’
ধ্রুব কোমড় ছেড়ে হামি দিয়ে বলল,’ আচ্ছা এখন না তুমি রাগ কমিয়ে ফেলো। আমি ততক্ষণে ঘুমিয়ে নেয়।’
বলেই ধ্রুব বিছানায় ঠাস করে শুয়ে পরল। ধ্রুব বিছানায় শুয়েই চোখ বন্ধ করে ফেলল। চারু ধ্রুব কে আবার শুয়ে পরতে দেখে কপাল চেপে ধরল। ধ্রুব কে টেনে ধরে বলল,’ উঠুন বলছি।’
‘ কেন জান? ঘুমাতে দাও না।’
‘ দেখুন অনেকবার দরজায় টোকা পরেছে আমি খুলিনি আপনি এখন না উঠলে আমি কিন্তু বাসা থেকে চলে যাব।’
চলে যাওয়ার কথা শুনতেই ধ্রুব ধরফরিয়ে উঠে বসল।
চারুর হাত শক্ত করে ধরে বলল,’ কি হয়েছে তোমার? আমাকে হার্টফেল করিয়ে মারতে চাও নাকি?’
চারু হাত ছাড়িয়ে বলল,’ হাত ধরবেন না রাগ হয় আমার। উঠুন আর বাইরে গিয়ে আমার জন্য খাবার নিয়ে আসুন। রাত থেকে আমি না খেয়ে আছি। পেট ব্যথায় আমি বসে থাকতে পারছি না। আর আপনি সেই সকাল থেকে ঘুমাচ্ছেন মরার মতো এতো ডাকছি আর আপনি বারবার ঘুমিয়ে পরছেন।’
চারুর কথায় ধ্রুব বলল,’ আমাকে ডাকার কি প্রয়োজন তুমি নিজেই তো নিচে গিয়ে খেয়ে নিয়ে পারতে।’
চারু বলল,’ আপনার আমাকে খাবার এনে খাওয়াতে কি লজ্জা লাগছে? নিজেকে কি মেড মনে হচ্ছে?’
চারুর খোঁচা মারা কথা শুনে ধ্রুব নিজের কপাল থাপ্পড়ে বিড়বিড় করে বলল,’ আমি পাগল হয়ে যাব।’
ধ্রুব ওয়াশরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো তারপর তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে বাইরে বের হলো। ও দরজা খুলতেই একদল ওর সামনে নজর এলো সবাই ওকে দেখেই চিৎকার করে উঠল,’ ভাইয়া তোমার চোখ এতো লাল কেন? রাতে ঘুমাও নাই?’
ধ্রুব বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,’ না।’
‘ কেন কি করেছো?’
বলেই শয়তানের দলেরা হাসিতে লুটোপুটি খেতে লাগল। ধ্রুব ধমক দিয়ে বলল,’ ঘোড়ার ডিম গুনেছি। তোর গুনবি?’
আরেকদফা হাসি দিল তারপর সবাই সামনে থেকে সরে রুমে ঢুকে গেল‌। ধ্রুব কিচেনে গিয়ে দেখল রান্না চলছে সব রান্না হয়নি। ধ্রুব বুয়া কে বলল প্লেটে খাবার তুলে দিতে।
ধ্রুব মা তখনি রান্না ঘরে এলো ছেলেকে সকাল সকাল রান্না ঘরে দেখে তিনি এগিয়ে এসেছেন। কারণ তিনি জানেন ধ্রুব এতো সকালে উঠে না আর না কিছু খায় তাই অবাক হয়েই এলেন।
ধ্রুব মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’ কিছু বলবে আম্মু?’
‘ তুই কিচেনে কি করছিস?’
‘ খাবার নিতে এসেছি!’
‘ তোর জন্য?’ অবাক‌ কন্ঠে বললেন তিনি।
ধ্রুব বলল,’ আমার জন্য না চারুর জন্য।’
ধ্রুব মা রেগে বললেন,’ তা সে মহারাণী কোথায় তিনি কি পা নামিয়ে নিচে আসতে পারছেন না? নাকি বিয়ে করেই আমার ছেলেকে নিজের দাস বানিয়ে নিয়েছে সকাল সকাল তোর ঘুম নষ্ট করে তোকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে।’
ধ্রুব মায়ের কথায় উত্তর দিল না। মেজাজ খারাপ হয়ে আছে চারু একেতে রেগে আছে ওর উপর তার উপর আজকে আবার চারু কে নিয়ে একটু পর গাইনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এবোরেশনের জন্য যার সাথে কথা বলেছে তিনি কয়েকটা টেস্ট দিয়েছেন আজকে করতে হবে। চারু যে পরিমাণ রেগে আছে ওকে কিভাবে রাজি করাবে সেই নিয়েই চিন্তিত।
ধ্রুব খাবারের প্লেট নিয়ে উপরে উঠছে ওকে সকাল সকাল তাড়াহুড়ো করে খাবার নিয়ে উপরে যেতে দেখে সব মেহমান রা হাসি তামাশা করতে শুরু করল। অনেকে তো বলছে ব‌উ পাগল জামাই। একদিনেই কেমন সবাইকে রেখে ব‌উয়ের জন্য রুমে একা খাবার নিয়ে যাচ্ছে।

চারু বিছানায় বসে খাচ্ছে ধ্রুব গালে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে চারুর দিকে তাকিয়ে আছে। চারু খেতে খেতে বলল,’ এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি নিজে রাক্ষুসে না ওকে? আপনার সন্তানের জন্যেই ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছি। রাত থেকে কেন এক দুই দিন না খেয়ে থাকার অভ্যাস আমার আছে কিন্তু আমি এখন একা না তাই আমাকে আমার সন্তানের চিন্তা করতেই হবে। আর আমি চাইলেই নিজে যেতে পারতাম এতে অনেকগুলো কথা শুনতে হতো‌। আর আমি এটাও চাচ্ছিলাম আপনার সন্তান এর জন্য পরিশ্রম আপনিই করেন।’
ধ্রুব চারুর কথা শুনে উঠে দাঁড়াল। চারুর ধ্রুবর চাপা রাগ দেখে অসহায় বোধ করল। চারু বলল,’ আপনি বাচ্চা কেন চাচ্ছেন না সত্যি করে বলুন তো?’
ধ্রুব উত্তর দিল না।
চারু নিজেও আর কথা বলল না। চারু খাবার খেয়ে বসে আছে তখনি রুমে এসে ঢুকল চারুর ফুপি মামি চারু তাদের সালাম দিল। তারা এসেই চারু কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। তারপর বললেন,’ তোমার নাকি খুব খিদে পেয়েছিল ধ্রুব আধ রাঁধার মাঝখানে থেকেই খাবার তুলে আনল।’
চারু মাথা নিচু করে বসে আছে। ধ্রুবর মামি বললেন,’ নতুন ব‌উয়ের এতো ঘনঘন খিদে পাওয়া ভালো না। একটু পর সবার সাথেই খাওয়া উচিত ছিল। সবাই কেমন ছোটো লোক ভাববে?’
ফুপি খোঁচা মেরে বললেন,’ ছোটো লোক কে আর কি বা বলবে?’
চারু বিমূঢ় চোখে চাইল ফুপির দিকে কথা বলেই তিনি মেকি হাসি এনে চারু কে বললেন,’ আগের সেই জায়গায় কি আর আছে? এখন তো বাড়ির ব‌উ হয়ে গেছে। বড়ো লোক বাড়ির ব‌উ।’
চারু চুপ করে বসে আছে তারা ধ্রুব কে রুমে প্রবেশ করতে দেখে উঠে চলে গেলেন। চারু আলগাছে চোখের পানি মুছে বসে আছে। ধ্রুব চারু কে বলল,’ চারু রেডি হ‌ও। আমাদের বের হতে হবে।’
চারু কপাল কুঁচকে বলল,’ কোথায় যাব?’
‘ তুমি কি এখন প্রশ্ন ছাড়া আমার সাথে বাসা থেকেও বের হতে পারবে না?’
চারু বলল,’ নাহ।’
ধ্রুব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’ চারু এমন কেন করছো? আমি কি তোমার খারাপ চাই?’
‘ আপনি কি চান আমি এখনো সেটাই বুঝতে পারছি না। আপনি সত্যি করে বলুন তো আপনি কি চান?’ ধ্রুবর চোখে চোখ রেখে বলল চারু।
ধ্রুব বলল,’ আমি চাই নিজেরা সময় কাটাতে এখানে তৃতীয় কাউকে এখনি আনার কি প্রয়োজন চারু তুমি একবার ভালো করে ভাবো এখনি কি আমি তুমি বেবি সামলাতে পারব? এখনো আমার পড়াশোনায় শেষ হয়নি এখনি আমি বাবা হয়ে যাব? সময় তো আছেই তাই না কিন্তু আমাদের সময়টা নষ্ট হয়ে যাবে চারু তুমি ইমোশনাল না হয়ে লজিক দিয়ে ভাবো। আমি তোমার খারাপ চাই না।’
‘ এমন ভালো আমার দরকার নেই ধ্রুব। আমি আপনার কাছে এমন ভালো আশা করিনি আর চাই না। দয়া করে জোর করে আমার ভালো করতে আসবেন না। আপনি আপনার দিক থেকে বেবি চাননা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন তাই আমার বেবি আমিই বুঝব আপনার একার সিদ্ধান্তে তো কিছু হতে পারে না। এই বেবি আপনার একা না আমার ও তাই আমি চাই আমার সন্তান পৃথিবীতে আসুক।’
ধ্রুব চারুর হাতে কথা বলে ওকে বুঝাতে না পেরে রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। সারাদিন আর চারু রুম থেকে বের হলো না। বাসার কেউ ওর খোঁজ ও নিল না। সিঁথি আর ময়না বেগম কি চলে গিয়েছে নাকি চারু সেটাও জানে না। কিন্তু সকালের পর একজন কেউ চারু দেখেনি। ধ্রুব বাসায় আছে নাকি চারু সেটাও জানে না কারণ সারাদিন ধ্রুব নিজেও রুমে আসেনি।
রাত আটটায় ধ্রুব রুমে আসলো। চারু বিছানায় কাত হয়ে ছিল ধ্রুব কে দেখে উঠে বসল।
‘ সারাদিন কোথায় ছিলেন?’
ধ্রুব উত্তর দিল না।
‘ কথা বলছেন না কেন?’
ধ্রুব বলল,’ বাইরে ছিলাম।’
‘ কেন?’
‘ সব কেন র উত্তর আমার কাছে নেই।’
‘ উত্তর ছাড়া কাজ করেন কেন?’
‘ চারু আমার মেজাজ খারাপ হয়ে আছে প্লিজ চুপ করে থাকো। আমি তোমার সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করতে চাইছি না।’
চারু নিরব চোখে কিছুক্ষণ ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
#চলবে….

#প্রেমনেশা
#নন্দিনী_নীলা
৫০.

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে জীবন। চারু দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ওর মনের অশান্তি এর জন্য দায়ী। ধ্রুব রাগ দেখিয়ে ও যখন চারু কে মানাতে পারল না থেমে গেল এখন রুমে থেকেও দুজনে দুজনের সাথে কথা বলে না। এক বিছানায় শুয়েও দুই দিকে কাত হয়ে থাকে। একজন আরেকজনকে এভাবেই এক মাস ধরে এড়িয়ে চলছে।
সিঁথি আর ময়না বেগম এখানে এসে থাকার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। যেখানে চারু কেই কেউ ভালো করে মেনে নেয়নি সেখানে তাদের সুযোগ পাওয়ার লোভ করা সম্ভব নয়।
চারু একাকী বেলকনিতে বসে ছিল। বুয়া ওর জন্য কিছু ফ্রুটস কেটে নিয়ে এসেছে। চারু কে সেটা দিয়ে চলে গেল। চারু টাইম দেখল তিনবেলা নিয়ম মেনে ওকে এটা ওটা একটু পরপর দেওয়া হয়। এগুলো সব‌‌ই ধ্রুবর মায়ের আদেশ। চারু একটা আঙুর তুলে মুখে দিল।
দরজা খুলে কেউ রুমে প্রবেশ করেছে চারু বেলকনিতে থেকেই জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখল ধ্রুব এসেছে। রুমে এসেই গায়ে জড়ানো ট্রি শার্ট খুলে বিছানায় ছুড়ে মারল। চারু একটা একটা করে আঙুর মুখে দিচ্ছে আর ধ্রুবর কান্ড-কারখানা দেখছে।
ধ্রুব তখনো জানে না চারু বেলকনিতে। ধ্রুব রুমে এসে শব্দ করে কাজ করছে যাতে চারু রুমে আসে‌ কথা না বললেও কাজে এমনটাই চায়। চারু নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। ধ্রুব দরজার দিকে চেয়ে আছে। হয়ত রেগে আছে ও উপস্থিত না হওয়ায়। চারুর ঠোঁট হাসি আসতে চাইছে ও ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে বসে আছে।
ধ্রুব চিৎকার করে বুয়াকে ডাকল।
তিনি আসতেই ধ্রুব গমগম কন্ঠে বলে উঠল,’ বাসার সবাই কোথায়?’
বুয়া কাঁপতে কাঁপতে বলল,’ সবাই তো বাড়িতেই।’
ধ্রুব ইঙ্গিতে বুঝাতে চাইছে ও চারুর কথা জিজ্ঞেস করছে। বুয়া বুঝতে না পেরে উল্টো পাল্টা জবাব দিচ্ছে তা শুনে ধ্রুবর রাগ বেড়ে যাচ্ছে। চারু মুখ চেপে ধরে আছে। ওর দম ফাটা হাসি আসছে। চারুর নাম বাধ্য হয়েই ধ্রুব কে নিতে হলো।
‘ তোমাদের চারু ম্যাডাম কোথায়?’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল ধ্রুব।
বুয়া বলল,’ চারু ম্যাডাম তো বেলকনিতে বসে ফল খাচ্ছে।’
কথাটা শুনেই ধ্রুব চমকে উঠল।
‘ কিহ? আচ্ছা তুমি যাও‌।’
ধ্রুব কপাল কুঁচকে রুমের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে। এতোক্ষণ ওর ছটফটানি সব উপভোগ করছিল চারু। কেমন শয়তান ব‌উ আমার হাজব্যান্ড কে ছটফট করতে উস্কে দেয়। ধ্রুব ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো আরেক দফা। চারু এখন আর তাকিয়ে নেয় উচিত শিক্ষা হয়েছে কথা বলবে না রাগ করে থাকবে আবার ওকে খুঁজবে। ছেলে মানুষের এতো কিসের রাগ? ও যে অভিমান করে আছে ক‌ই সেটা তো ভাঙা তে পারে তা না নিজের উদ্ভট কাজ না করতে পেরে রাগ দেখায় ওকে।
ধ্রুব ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিল ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তারপর আরেকটা ট্রি শার্ট বের করে পরে নিল। রুমের এক সাইড থেকে আরেক সাইড দুই বার চক্কর লাগিয়ে ধ্রুব বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর রাগী চোখে তাকাল চারুর দিকে। চারু ফ্রুটস নিয়ে বসে আছে দেখল। ধ্রুব কপাল কুঁচকে এগিয়ে এসে চারুর পাশেই বসে পড়ল চারু সরে বসল। তা দেখল ধ্রুব আড়চোখে চেয়াল শক্ত করল।
ধ্রুব গম্ভীর গলায় বলে উঠল,’ তুমি বেলকনিতে বসেও আমার সাথে খেলা খেললে কেন?’
চারু উত্তর দিল না তাকাল না পর্যন্ত ও ফ্রুটস খাচ্ছে‌। ধ্রুব রেগে তাকাল চারুর দিকে। চারু একটা আপেলের টুকরো হাতে তুলে নিতেই ধ্রুব টপ করেই সেটা নিজের হাতে নিয়ে নিজের মুখে পুরে নিল। চারু ধ্রুব কান্ড দেখে ঠোঁট প্রসারিত করে ফেলল।
ধ্রুব বলল,’ খুব মজা লাগছে তাই না?’
‘ লাগছে তো। আপনি আমাকে কি খুজছিলেন’ চোখ ছোটো ছোটো করে বলল চারু।
ধ্রুব আমতা আমতা করে বলল,’ হ্যাঁ আমি তোমাকে দরকারে খুঁজছিলাম। তোমার সাথে রোমান্স করার জন্য নয়।’
চারু গালে হাত দিয়ে তাকাল ধ্রুবর দিকে তারপর সরে আসা ফাঁকা জায়গাটা এগিয়ে গিয়ে ভরাট করে দিল। ধ্রুবর দিকে এগিয়ে এসে ওর গা ঘেঁষে বসে বলল,’ আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।’
ধ্রুব চারু কে নিজের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে আসতে দেখে নিজে আরো চেপে গেল পেছনের দিকে। তারপর ভ্রু কুঁচকে চারুর মুখের দিকে চেয়ে রইল। চারুর মুখে হাসি ধ্রুব বলল,’ দূরে যাও।’
‘ কেন? কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছেন নাকি?’ বলতে বলতে চারু নিজের একটা হাত তুলে ধ্রুবর কপাল স্পর্শ করল। ধ্রুবর কপালে থেকে আঙুল টেনে গাল পর্যন্ত আসতেই ধ্রুব ফট করে উঠে দাঁড়াল। চারু বলল,’ আচ্ছা কি দরকারে আমাকে খুঁজছিলেন বলুন।’
ধ্রুব উঠে দাঁড়াল তারপর সোজা রুমে চলে গেল উত্তর দিল না। চারু একাই আরো কিছুক্ষণ বসে র‌ইল। ধ্রুব রুমে এসে শুয়ে পড়েছে। চারু এতো দুষ্টু হয়েছে।
চারু রুমে এসে দেখল ধ্রুব ঘুমিয়ে পড়েছে। চারু ধ্রুবর মাথার কাছে বসে পরল। তারপর ওর মাথা হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। ঘুমন্ত অবস্থায় কত নিষ্পাপ লাগছে ধ্রুব কে কত শান্ত কোন রাগ নেয়। চারু ধ্রুবর একটা হাত ধরে হাতের উল্টো উঠে চুমু খেলো। তারপর সেই হাতটা টেনে নিজের পেটের উপর ধরে রাখল। ধ্রুব কবে নিজের অনাগত সন্তান কে নিয়ে আনন্দ করবে তার আসার অপেক্ষা করবে। কবে চারু চিন্তায় অস্থির হবে?
চারুর চোখ জোড়া ছলছল করে উঠল। ধ্রুব ঘুমের মধ্যে চারুর পেট দুহাতে জড়িয়ে ধরে পেটে চুমু খেলো চারু চোখ বেয়ে তখনি এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।
চারু ধ্রুব চুলে হাত ডুবিয়ে চোখের জল ফেলতে শুরু করল। ধ্রুব ফোনটা তখনই বেজে উঠল চারু ছিটকে উঠল। বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে নিল ঝটপট। ধ্রুব ফোনের রিংটোন এ শুনে নড়েচড়ে উঠল। ধ্রুবর ঘুম ভেঙে যেতেই ধ্রুব জেগে উঠেই চারু কে ছেড়ে দিল‌‌। চারু তোতলানো কন্ঠে বলল,’ আমি কিন্তু আপনার কাছে আসিনি আপনি আমায় জোর করে ধরেছেন।’
ধ্রুব চেয়ে দেখল চারু ওর বালিশের কাছে বসে আছে পেছনে অনেক জায়গা ধ্রুবর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে চারু পেছনে তাকিয়ে থতমত খেয়ে গেল। ওর বসার জায়গা দেখলেই স্পষ্ট হয় ধ্রুব জোর করে নয় চারু নিজেই ওর কাছে এসেছে। চারু ঢোক গিলে নিজের জায়গায় সরে গেল ঝটপট। ধ্রুব ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,’ কে কার কাছে এসেছে?’
‘ আমি আসলে ওই মশা মারতে এসেছিলাম এদিকে আপনার ঠিক গালের মাঝে বসে ছিল‌। আমি তো আপনার মতো নির্দয় না।’
ধ্রুব ফোন কানে ধরে বেলকনিতে চলে গেল চারু বিছানায় বসে মুখ ঢেকে নিল। এভাবে ধরা খাবে কল্পনা ও করে চারু সব হয়েছে ওই বেয়াদব ফোনটার জন্য এখনি বাজতে হতো যত্তসব।

পরদিন
চারু কিচেনে গিয়েছে এটা দেখে ধ্রুবর মা রাগারাগী করল চারুর সাথে। চারু তার ধমক খেয়ে বেরিয়ে এলো।
তিনি বলেন,’ তুমি কোন সাহসে কিচেনে গিয়েছো?’
‘ আমি তো শুধু!” কথা শেষ করতে দিল না তিনি।
‘ চুপ এই অবস্থায় তুমি কিচেনে যাবে না এটাই আমার শেষ কথা।’
চারু ধমক খেয়ে সোফায় বসে আছে। ধ্রুব রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। ধ্রুব মা তাকে ডেকে উঠলেন।
‘ কোথায় যাচ্ছ?’
‘ কেন আম্মু?’
‘ তোমার বাবা তোমাকে অফিসে যেতে বলেছে।’
ধ্রুব কপাল কুঁচকে বলল,’ আমি অফিসে কেন যাব?’
‘ তোমার বাবা চাচা যে কারণে যায় তাই করতে যাবে।’
ধ্রুব আশ্চর্য কন্ঠে বলল,’ আম্মু কি সব বলছো?’
‘ যাও রেডি হয়ে অফিসে যাও।’
ধ্রুবর মুখটা আঁধারে ঢেকে গেল। ধ্রুবর মা ধ্রুব কে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,’ কী হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন ভেতরে যাও।’
ধ্রুব মায়ের ধমক খেয়ে ভেতরে পা বাড়াল ধ্রুবর মা এবার চারুর দিকে চাইল। চারু কে বললেন,’ তুমি ও যাও ওকে রেডি করে অফিসে পাঠাও‌।’ চারু উঠে রুমে এলো।
ধ্রুব বিছানায় বসে রাগে ফুঁসছে। চারু দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
‘ খুব মজা লাগছে তাই না?’
চারু বলল,’ ক‌ই না তো আপনাকে দেখে মজা লাগবে কেন?’
‘ তাইলে হাসছো কেন?’
‘ আমার মুখ আমি হাসছি এতে আপনার সমস্যা কি?’
‘ চারু আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে। তুমি অযথা আমায় দেখে হাসবে না।’
‘ আমি অযথা হাসছি আপনাকে কে বলল?’ চোখ ছোটো ছোটো করে বলল চারু।
ধ্রুব বলল,’ তোমার হাসির কোন কারণ আমি দেখছি না।’
‘ না দেখার কি আছে?’
‘ উফফ চারু তুমি এখানে থেকে যাও তো।’
‘ আচ্ছা আপনার সাথে আমার একটা জরুরী কথা ছিল।’
‘ আমার এখন কোন কথা শুনব না আমি এখন ঘুমাব।’
‘ কিন্তু আপনার মা তো আপনাকে অফিসে যেতে বলল ‘
‘ যাব না ‘
‘ কেন?’
‘ কারণ আমার আব্বুর বিজনেস এর কোন শখ নেই।’
‘ ও তাই নাকি! তো কিসে আপনার শখ আটকে আছে?’
ধ্রুব চট করেই উঠে দাঁড়াল তারপর চারুর কোমড় জড়িয়ে ধরল শক্ত করে।
চারু আচমকা ধ্রুব কে কাছে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায়। ও কিছু বলার আগেই ধ্রুব ওকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। ধ্রুব চারু কে জড়িয়ে ধরে বলে,’ তোমার প্রেমে আটকা পরে আছে আমার সমস্ত শখ।’
চারু থমকে যায় ধ্রুবর কথা শুনে। ধ্রুব চারু কে আরো কাছে টেনে নেয়‌। চারু ফ্যালফ্যাল করে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে।
দুজনে দুজনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেউ পলক ফেলছে না যেন দুজনেই কোন এক অন্য দুনিয়ায় হারিয়ে গিয়েছে। চারু হঠাৎ সম্মতি ফিরে পেল ধ্রুব কে নিজের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে থমকে গেল। ধ্রুব কে সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওর সম্মতি ফিরিয়ে আনল। ধ্রুব মাথা চুলকে সরে গেল।
চারু কটমট চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলল,’ আপনি কার অনুমতি নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন?’
‘ তুমি আমার ওয়াইফ তোমার কাছে যেতে আমার অনুমতির কি প্রয়োজন জান?’
চারু আগুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ধ্রুবর দিকে ধ্রুব ভয় পাওয়ার ভঙ্গিমা করে বলল,’ চারু ওভাবেই তাকিও না আমি তো ভয় পাই প্রচুর।’
চারু বিছানায় বসে বললো,’ ঢং বাদ দিয়ে অফিসে যান।’
‘ ইম্পসিবল আমি কখনোই যাব না‌।’
কিছুটা রেগে গেল ধ্রুব। চারু বিস্মিত নয়নে তাকাল ধ্রুবর দিকে ধ্রুবর অফিসে যেতে এতো কেন বাহানা করছে আবার এখন রেগে ও যাচ্ছে সমস্যা কি তার?
#চলবে

#প্রেমনেশা
#নন্দিনী_নীলা
৫১.

ময়না বেগম ধ্রুব এবং চারুকে বাড়িতে দাওয়াত করে এনেছে। চারু বাড়ি এসে পুরোই অবাক ময়না বেগমের কথাবার্তা, ব্যবহার সব কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। আসা পর থেকে চারু কে এতো আদর করছে, চারু চিনতেই পারছে না তাকে। চারু এবং ধ্রুবর সমস্ত পছন্দের খাবার নিজে হাতে রান্না করছে। চারু কে তো নিজের হাতে তুলে খাওয়ালো। চারু খাচ্ছে আর বিস্মিত চোখে তাকে দেখছে।
ময়না বেগমের হঠাৎ কী এমন হলো এতো ভালো আচরণ কেন করছে? সিঁথির দিকে তাকিয়ে কিছুটা শান্তি অনুভব হলো ধ্রুবর জন্য যে পাগলামি করেছে তার কোনটাই নাই এখন দুলাভাই বলেই ডাকে। সিঁথির কথা ভেবে চারু এখানে আসতে চাইছিল না ধ্রুব জোর করেই নিয়ে এসেছে।
এবং বলেছে,’ দেখো চারু আমার বাসার কেউ জানে না তাদের সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন‌। আমি চাই না এসব জানিয়ে তোমাকে এবং তোমার পরিবার কে ছোটো করতে।’
চারু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজি হয়েছে এখানে আসার পর থেকে শুধু শক খেয়েই যাচ্ছে।
চারু সোফায় বসে আছে ওর জন্য আমের আচার এনে ওর হাতে দিল ময়না বেগম,’ ধর এই সময় আচার খেতে ভালো লাগে।’
চারু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ময়না বেগমের দিকে তারপর বিস্মিত কন্ঠে বলল,’ মা তুমি কি ঠিক আছো?’
ময়না বেগম ওর হাতে আচারের বাটি দিয়ে হেসে চলে গেল। চারুর কি খুব খুশি হ‌ওয়া উচিত নাকি দুঃখ পাওয়া উচিত চারু বুঝতে পারছে না। কিন্তু ওর চোখ জোড়া ছলছল করে উঠছে।
অনেক দিন পর চারু ঝিম কে দেখল দৌড়ে দৌড়ে আসছে ঝিম এসেই ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরল।
ঝিম চুপ করে চারু কে জড়িয়ে ধরে আছে একসময় ঝিম আর ও কত সময় একসাথে কাটিয়েছে একটা দূর্ঘটনায় ঝিম অভিমান করে সরে গিয়েছিল। আজ এতো দিন পর ঝিম কে দেখে চারু থমকে গেল!
‘ ঝিম কেমন আছিস?’
ঝিম চোখ মুছে বলল,’ আপু তুমি তো আগের থেকেও বেশি সুন্দরী হয়ে গেছো এই সব কামাল আমাদের দুলাভাইয়ের তাই না?’
চারু ঝিমের গালে হাত বুলিয়ে বলল,’ ঝিম তুই আমার উপর রেগে নাই তো?’
‘ তোমার উপর প্রথমে অনেক রাগ হয়েছিল তুমি তো জানোই ওটা আমার কত শখের ফোন ছিল কিন্তু পরে আমি সব জানতে পেরেছি আপু তুমি কিছু করোনি যা হয়েছে দুলাভাইয়ের জন্য হয়েছে। ভাইয়া আমাকে সব খুলে বলেছে। এবং নতুন ফোন ও কিনে দিয়েছে এই দেখো।’
বলেই ঝিম নিজের হাতের আই ফোন দেখালো চারুর হাতে দিয়ে।
‘ কত দামী ফোন কিনে দিয়েছে আম্মু আব্বুর সামনেই দিয়েছে আর ক্ষমা ও চেয়ে গিয়েছে।’ ঝিমের মুখে দারুণ হাসি ও এই ফোনটা পেয়ে খুব খুশি ওর মুখের হাসিটাই তার প্রমাণ দিচ্ছে।
ধ্রুব এসে ওদের সামনে বসল। ধ্রুব কে দেখেই ঝিম তার সাথে আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পরল। চারু গালে হাত দিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব হেসে হেসে কথা বলছে। চারুর হাতে তখনো আচারের বাটি একটু মুখে দিয়েছিল। ধ্রুব এসেই চারুর হাত থেকে বাটি কেড়ে নিয়ে নিজে খেতে শুরু করে দিল।
চারু উঠে দাঁড়াল হেঁটে সিঁথির রুমের সামনে এসে দাঁড়াল। সিঁথি কারো সাথে ফোনে ফিসফিস করে কথা বলছে। চারু দরজায় টোকা দিতে গিয়েও থেমে গেল তারপর রুমের ভেতরে গিয়ে সিঁথির পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। সিঁথি নিজের পেছনে কারো উপস্থিত পেয়ে চমকে উঠল। চারু কে দেখে ভয় পেয়ে গেল। চারু কপাল কুঁচকে বলল,’ তুই প্রেম করছিস?’
সিঁথি মাথা নিচু করে পায়ের আঙুল দিয়ে ফ্লোর খামচে ধরল। চারু বলল,’ কি হলো কথা বলছিস না কেন?’
সিঁথি বলল,’ হ্যাঁ।’
‘ ছেলেটা কে?’ জিজ্ঞেস করে চারু নিজেই আহাম্মক হয়ে গেল কারণ সিঁথি ওকে দেখে ভয় পাচ্ছে মাথা নিচু করে নরম স্বরে কথা বলছে ও চিনতেই পারছে না সিঁথি কে। নিজেকে নিজেই চিমটি কেটে বলল,’ এসব কি হচ্ছে?’
সিঁথি চমকে উঠে বলল,’ কি হয়েছে আপু?’
চারু বিছানায় বসে পরল মাথায় হাত দিয়ে তারপর বলল,’ আমার মাথা ঘুরাচ্ছে রে চারু তোর আর মায়ের আচরণ আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মা যে আমায় দুই চোখে সহ্য করতে পারে না তিনি আমায় আহ্লাদ করছে ভালোবাসা দিচ্ছে ‌ তুই যে সব সময় নাম ধরে তুই তোকারি চিৎকার চেঁচামেচি করিস সেই আমার সামনে মাথা নত করে নরম স্বরে কথা বলছিস তাও ভয় পেয়ে?’
সিঁথি চুপ করেই দাঁড়িয়ে আছে চারু ওর রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ঝিম চলে গিয়েছে। ধ্রুব একাই বসে ছিল চারু এসে বসল আবার সোফায় তারপর হতভম্ব কন্ঠে বলল,’ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না এই বাসায় আসলে হচ্ছে কি? সবাই হঠাৎ পাল্টে গেল কীভাবে?’
ধ্রুব বলল,’ এখানে আমার কোন হাত নেই আগেই বলি। সবসময় তো তোমার মায়ের টাকার শখ পূরণ হলে তিনি মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন আজ দেখো নিজে থেকেই মিষ্টি হয়ে গেছে।’
‘ আপনি সত্যি কিছু করেন নি?’ কপাল কুঁচকে বলল চারু।
ধ্রুব বলল,’ আরে না তোমাকে পেয়ে গেছি এদের দিয়ে আমার কাজ কি?’
চারু নাক লাল করে ফেলল ধ্রুবর কথায়। ধ্রুবর থতমত খেয়ে বলল,’ আমি বুঝাতে চাইছি তোমাকে পাওয়ার জন্যে তো এদের সাথে মিটমাট করতে চাইতাম। এখন দেখছি নিজে থেকেই সব হয়ে গেছে।’
চারু থমকানো কন্ঠে বলল,’ সিঁথি কারো সাথে প্রেম করছে‌।’
ধ্রুব বলল,’ করতেই পারে এতে তোমার কি তুমি ও তো করেছো?’
চারু কটমট চোখে তাকাল ধ্রুবর দিকে ধ্রুব জিভে কামড় দিয়ে বলল,’ উফফ সরি তুমি করোনি আমি করেছি।’
চারু মুখটা ভোঁতা করে বলল,’ কার সাথে করেছেন?’
‘ তোমার সাথে!’
‘ আমি তো করিনি তাহলে কিভাবে করলেন? আর কার সাথে করেছেন সত্যি করে বলুন।’
‘ আমি নিজের কথায় নিজেই দেখছি ফেঁসে খেলাম। আসলে জান হয়েছি কি আমি তোমায় সাথে এক তরফা প্রেম করেছি।’
চারু আবার ভাবুক গলায় বলল,’ সিঁথি প্রেম করছে এতে আমার কোন আপত্তি নেই। আমার কাছে অবাক লেগেছে আমি প্রেম করার কথা জানতে পারায় ও ভয় পেয়েছে।’
‘ বলো কি? তোমার দর্জাল বোন তোমায় দেখে ভয় পেয়েছে?’
‘ ধ্রুব আপনি কিন্তু আমায় রাগিয়ে দিচ্ছেন।’
‘ ওকে সরি তুমি ভাবো ভালো করে দেখি আমার শাশুড়ি মা আমার জন্য আর কি কি আয়োজন করেছে স্পেশাল ভাবে।’
বলেই ধ্রুব উঠে দাঁড়াল দেখতে যাওয়ার জন্য কিচেনে চারু ওখানেই বসে এসব আকাশ পাতাল ভাবতে বসল।

এর কি কারণ হতে পারে হঠাৎ মা আর সিঁথি দুজনেই অদ্ভুত আচরণ কেন করছে ওর সাথে‌। লাঞ্চ টাইমে খাবার টেবিলে। যে লেগ পিস সিঁথির পছন্দ সেই লেগ পিস সিঁথি নিজে না নিয়ে চারুকে আর ধ্রুবর পাতে তুলে দিল। এতো চমক লাগছে চারু আবার অজ্ঞান হয়ে যাবে না তো।
চারু ধ্রুবর কানে ফিসফিস করে কিছু বলতে এগিয়ে গেল।
ধ্রুব না শুনেই বলে দিল,’ প্রথমবার শাশুড়ির এতো আদর পাচ্ছি‌। চারু আমি কিছুই শুনতে চাইনা মন ভরে খেতে দাও।’
চারু চোখ রাঙিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিল। খাওয়া দাওয়ার পর চারু আর ধ্রুব রুমে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিল। ধ্রুব যাওয়ার তাড়া দেখাচ্ছে ময়না বেগম আর সিঁথি একপ্রকার পায়ে পরে যাবে এমন অবস্থা শুরু করে দিল রাখার জন্য। বাধ্য হয়েই চারু থাকার জন্য রাজি হলো। তখন ধ্রুব বাইরে গিয়েছে। চারু একটাই বসে আছে বিছানায় ওর হাতে ফোন। ময়না বেগম আর সিঁথি ওর কাছে এসে বিছানায় বসল। চারু ওদের দেখে ফোন অফ করে তাকাল দুজনের দিকে দুজনের চোখ মুখে প্রশ্ন।
চারু কপাল কুঁচকে বলল,’ মা কিছু কি বলতে চাও?’
ময়না বেগম বলার জন্য মুখ খুলবে সিঁথি হাত চেপে ধরে মাকে নরম হয়ে বলতে বলল।
ময়না বেগম চারু কে বলল,’ আগে যা অন্যায় করেছি সেসব ভুলে যা মা।’
‘ যা বলতে চাও স্পষ্ট করে বলো। তোমার মূল টপিকস এটা না আমি জানি।’
ময়না বেগম থতমত খেয়ে গেল। সিঁথি বোনের হাত ধরে বলল,’ আমি একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসি!’
‘ তাতো ভালো কথা এতে আমি কি করতে পারি?’
‘ তুমিই সব করতে পারো।’ অসহায় মুখে বলল সিঁথি।
‘ সোজাসাপ্টা উত্তর দে।’
‘ মানে হলো…’
‘ ছেলেটার নাম কি বাড়ি কোথায়?’ বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল চারু ও এতে কি হেল্প করতে পারবে কি সব বলছে এরা।
মা মেয়ে সব ঘটনা একে একে খুলে বলতে শুরু করল। লিথি আগ্রহী হয়েই ছিল।
#চলবে….