প্রেমনেশা পর্ব-৫২+৫৩+৫৪

0
2

#প্রেমনেশা
#নন্দিনী_নীলা
৫২.

সব বিস্তারিত ভাবে শোনার পর চারু কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। ও আগেই সন্দেহ করেছিল কোন কারণ ছাড়া তো এই উনারা এতো নরম হতে পারে না। এখন তো ওর সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠল।
ময়না বেগম চারুর কাছে ২০ লাখ টাকা চেয়েছে বোনের খুশির জন্য। সিঁথি যে ছেলের সাথে প্রেম করছে এখন তার বাচ্চা ওর গর্ভে। ছেলেটা নাকি বিশ লাখ টাকা না দিলে সিঁথি কে বিয়ে করবে না। ময়না বেগম চারুর হাত ধরে কাকুতি মিনতি কন্ঠে বলেন,’ চারু মা আমি অনেক পাপ করেছি তোকে কষ্ট দিয়েছি। সবসময় তোর উপর অত্যাচার করেছি এখন আমি তার শাস্তি ও পাচ্ছি।’
সিঁথি কে উদ্দেশ্য করে চারু কে বললেন,’ এই নষ্টামি কবে করেছে আমি জানতেই পারিনি রে এই ফকিন্নীর বাচ্চা আমার মেয়েকে কবে নিজের জালে আটকে নিয়েছে তাও জানতাম না। এবোরেশন করতে নিয়ে গেছিলাম এখন নাকি বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করলে সিঁথির ও ক্ষতি হ‌ওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কি করব আমি চারু এই মেয়ের জন্য কী না করেছি সেই এমন কাজ করে আমার মানসম্মান হবে শেষ করল। তুই ছাড়া আমাদের আর কে আছে বল তুই সাহায্য না করলে আমরা কার কাছে যাব?’
চারু হতবুদ্ধি চোখে তাকিয়ে আছে সিঁথির দিকে। সিঁথি মাথা নিচু করে বসে চোখের জল ফেলছে। চারু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’ আমি এতো টাকা কোথায় পাব?’
ময়না বেগম চারুর হাত আবার আঁকড়ে ধরলেন,’ তুই চাইলেই একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারবি একটু চেষ্টা কর। তোর ছোটো বোনের জন্য কর।’
চারু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,’ আমি কোথায় চেষ্টা করব তুমি বলো? আমি কি এখন আর জব করি? আর করলেও তো আমি এতো টাকা ম্যানেজ করতে পারতাম না। আর বাবার রেখে যাওয়া ব্যাংকের গচ্ছিত টাকা গহনা সেসব দিয়ে তো তোমরাই করতে পারো আমাকে কেন টানছো?’
ময়না বেগম বললেন,’ সব কিছুই মিলিয়ে এখন মাত্র তিন লাখের মতো টাকা আছে।’
‘ দেখো মা এখানে আমি তোমাদের কোন হেল্প করতে পারব না।’
ময়না বেগম বলে উঠলেন,’ একবার জামাই বাবাজির সাথে কথা বল না‌। তার তো অনেক টাকা আছে আমাদের যদি বিশ লাখ টাকা দিতো সিঁথির বিয়ের জন্য। তাদের তো টাকার কমতি নাই মাশাআল্লাহ বিশ লাখ টাকা তাদের তো হাতের ময়লা।’
চারু চোখ বড়ো‌বড়ো করে ফেলল ময়না বেগমের কথা শুনে। বিস্মিত কন্ঠে বলল,’ ধ্রুব এতো টাকা কোথায় পাবে? সে এখনো মাস্টার্স করছে। এখনো কোন ইনকাম করে না। সে তোমায় টাকা কোথা থেকে দিবে।’
‘ নিজে করে না তো কি টাকার বন্দোবস্ত করা খুব কঠিন না তো।’
‘ দেখো মা আমাদের দিক থেকে কোন টাকার আশা রেখো না আমরা কোন সাহায্য করতে পারব না তোমাদের।’ গম্ভীর গলায় বলল চারু।
ময়না বেগম পায়ে পরে যাবে এমন অবস্থায় বললেন,’ আমি জানি তো তুই ইচ্ছে করেই না করছিস তাই না? অনেক অত্যাচার করেছি তার প্রতিশোধ নিচ্ছিস!’
চারু বলল,’ দেখো আমার প্রতিশোধ নেওয়ার হলে অনেক ভাবেই নিতে পারতাম। যে ছেলে বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে টাকা টানে আমার মতে সেখানে সিঁথির বিয়ে দেওয়া উচিত না। এই বিয়ে হলেও সিঁথি সুখী হবে না। যারা সম্মানের চেয়ে টাকাকে প্রয়োরিটি দেয় তারা কেমন নিচু মানসিকতার মানুষ। সেখানে সম্পর্ক করার চেষ্টা করা ভুল হবে।’
চারু থেমে সিঁথি কে বলল,’ ভুল তো করেই ফেলেছিস আমি সেই নিয়ে কিছুই বলব না শুধু একটা কথাই বলব যদি পারিস তো টাকার বিনিময়ে নয় ভালোবাসার দিয়ে বিয়েতে রাজি করা তাকে। তোর ভালোবাসা তোর অনাগত সন্তানের ভালোবাসার কথা স্মরণ করা তাকে।’
সিঁথি ফুঁপিয়ে উঠল চারুকে জড়িয়ে ধরে।

ময়না বেগম অন্য সময় হলে ধ্রুবর কাছেও টাকা চেয়ে বসত কিন্তু আজকে নিরব ছিল কারণ এখানে তার মেয়ের সম্মান জড়িয়ে।
রাতের ডিনারের পর পর তখন রাত নয়টা বাজে ধ্রুবর বাসা থেকে কল এসেছে। ধ্রুব রিসিভ করতেই ওর মা গম্ভীর গলায় বললেন,’ তোমরা এখনো বাসায় আসো নি কেন?’
‘ আম্মু আজ আমরা এখানে রাত থাকব।’
তিনি আদেশ সুরে বললেন,’ অসম্ভব এখনি বাসায় ফিরে আসো।’
‘ কিন্তু আম্মু…!’
‘ আমি যা বলছি তাই করো।’.
‘ এখন রাত আম্মু।’
‘ তো কি হয়েছে এমন ভাবে রাতের কথা বলছো মনে হচ্ছে রাতে এখনো বাইরে বের হ‌ওনি।’
ধ্রুব মুখ কালো করে কল কেটে চারু কে জানাল। চারু বলল,’ আচ্ছা সমস্যা নেই আমি রেডি হচ্ছি।’
ময়না এই কথা শুনে দ্বিমত পোষণ করল। কোনভাবেই রাতে তিনি চারু কে যেতে দিবে না‌‌। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় নাকি রাতে বাইরে বের হওয়া ভালো না।
ধ্রুব বলল,’ আন্টি এসব কুসংস্কার টানবেন না প্লিজ। আম্মু খুব রেগে ছিলো আমাদের যেতেই হবে।’
‘ আমি তো আমার মেয়েকে অনিয়ম করতে দেব না।’
চারু কিছুই বুঝতে পারছে না মা তাকে রাখার জন্য এতো কেন বাহানা দিচ্ছে। চারু অধৈর্য হয়ে বলল,’ মা আমাদের যেতে দাও তোমাকে আমি কল করব নি।’
ময়না বেগম ওর সাথে কন্টাক্টে থাকার জন্য এসব করছিল চারুর কাছে স্পষ্ট।

চারু আর ধ্রুবর কারে বসে আছে। চারু চিন্তিত মুখে বসে আছে। ধ্রুব ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে চারুর দিকে চেয়ে ওকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করল,’ কি হয়েছে?’
চারু ছিটকে উঠল একদম ধ্রুব আচমকা কথা বলায়। ধ্রুব কপাল কুঁচকে বলল,’ আর ইউ ওকে?’
‘ হ্যাঁ।’
‘ তুমি কিছু নিয়ে চিন্তিত?’
‘ হুম।’
‘ কি নিয়ে?’
‘ আছে কিছু একটা।’
‘ আমাকে বলো।’
‘ বাসায় গিয়ে বলব।’
‘ ওকে।’
চারু বাসা ভেতরে ঢুকল একাই ধ্রুব গাড়ি পার্ক করতে গিয়েছে। চারু দেখল ধ্রুবর মা আর যুথি বসে আছে। চারু কে দেখে তিনি কাছে ডাকলেন‌ চারু এগিয়ে এসে তার কাছে দাড়াল।
তখনি দৌড়ে এসে পাশেই দাড়াল ধ্রুব। দাঁড়িয়ে থাকল না ধ্রুব মায়ের পাশে বসেও পড়ল।
‘ তুমি ওই বাসা থাকার জন্য রাজি হয়েছিলে?’
প্রশ্ন কাকে করল চারু বুঝতে পারছে না ও চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
ধ্রুব উত্তর দিল,’ হ্যাঁ এতো জোর করছিল। বাধ্য হয়েই রাজি হয়েছিলাম।’
‘ আমি চাই না চারু আমার চোখের আড়ালে একদিন ও থাকুক। আমার নাতি নাতনি আসছে আমি তাদের সম্পূর্ণ খেয়াল নিজে রাখতে চাই।:
চারু কে কিছুটা ধমক সুরে তিনি বললেন,’ তোমাকে আমি বলে দিয়েছিলাম না চলে আসার কথা?’
চারু বলল,’ জি আমি তো আসতেই চাইছিলাম কিন্তু ধ্রুব রাজি হয়ে গেল।’
‘ হাজব্যান্ড এর নাম ধরে ডাকছো যেন মনে হচ্ছে তোমার হাজব্যান্ড না বন্ধু।’ আগের থেকেও বেশি রাগী কন্ঠে বললেন তিনি।
চারু থতমত খেয়ে গেল। আচমকা নামটা মুখের আগায় চলে এসেছিল। ধ্রুব পরিস্থিতি সামাল দিতে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’ আম্মু আমিই চারু কে নাম ধরে ডাকতে বলেছি।’
চারুর ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় নিজের‌ই বারি মারতে। মুখ ফসকে নামটা শাশুড়ির সামনেই বেরিয়ে আসতে হলো?
চারু হাত মুচড়ামুচড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নত করে‌। ভয়ে ওর হাত-পা থরথরিয়ে কাঁপছে।
ধ্রুবর দিকে ওর মা রেগে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব মাকে বলল,’ মা আমরা রুমে যাই?’
তিনি গম্ভীর গলায় বললেন,’ নাহ।’
চারুর এবার আরো ভয় লাগতে শুরু করল। ওর ভয় কাটিয়ে তিনি বললেন,’ চারু রুমে যাও ধ্রুব এখানে বসো। তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে।’
চারু রুমে যাওয়ার অনুমতি পেতেই চটজলদি পিছনে ফিরে হাঁটা ধরল। উনি এতো রেগে আছে কেন চারু জানে না। ধ্রুব কে কি জরুরী কথা বলতে চায়? যা ওর সামনে বলা যাবে না।

ধ্রুব গম্ভীর মুখে একটু পর রুমে আসলো। চারু কপাল কুঁচকে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব রুমে এসেছে মুখটা গম্ভীর করে একাই রুমে থেকে বেলকনি অব্দি কয়েকবার পায়চারী করলো। তারপর রুমের মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে কি জানি ভাবল তারপর রেগে শার্ট খুলে ছুড়ে মারল ফ্লোরে। চারু চমকে উঠল।
‘ কি হয়েছে এমন করছেন কেন?’ বিস্মিত কন্ঠে বলল চারু।
ধ্রুব উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিল। চারু থমকানো মুখে উঠে দাঁড়াল বিছানা থেকে তারপর নিচু হয়ে ফ্লোরে থেকে শার্ট তুলে ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দিয়ে বলল,’ কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেন? কার রাগ আমার উপর দেখাচ্ছেন?’
ধ্রুব সাড়াশব্দ করল না। চারু ও দমে যাওয়ার পাত্রী না। এক নাগাড়ে দরজা ধাক্কা দিতেই আছে। চারু দরজা ধাক্কা দিয়ে ধ্রুবকে বিরক্ত করে ফেলল। ধ্রুব দরজা খুলে রেগে চিৎকার করে উঠল,’ প্রবলেম কি তোমার? দুই মিনিট ও কি তোমার যন্ত্রনায় শান্তিতে থাকতে পারব না?’
চারু ও রাগী গলায় বলল,’ নাহ’

#চলবে…?

#প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
৫৩.

ধ্রুবর হঠাৎ পরিবর্তন এ চারু স্তব্ধ। ধ্রুবর মাথাটা যেন সব সময়‌ই গরম থাকে অল্পতেই রেগে যায়। চারু একদিকে ধ্রুবর এই আচরণ অন্যদিকে ময়না বেগমের থেকে চাপ সব মিলিয়ে ওর নাস্তানাবুদ অবস্থা। চারু কাছে থেকে টাকা না নিয়ে ময়না বেগম থামবে না। চারু এই টাকার ব্যবস্থা কোথা থেকে করবে সেটা নিয়ে টেনশনে এখন রাতে ঘুমাতেও পারে না। ধ্রুব কয়দিন ধরে আবার অফিস যাওয়া শুরু করেছে। যে ব্যক্তি অফিসে যাওয়া নিয়ে এতো ঝামেলা করত। অফিস যাওয়ার নাম শুনলেই রেগে আগুন হতো সে হঠাৎ নিজে থেকেই রেডি হয়ে অফিসে যাচ্ছে ব্যাপার টা হজম হচ্ছে না চারুর।
চারু সকালে সবার আগে উঠে আজ বসে আছে‌। ধ্রুব প্রতিদিনের মতোই এলাম বাজতেই উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল। যাওয়ার আগে অবশ্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়েছিল চারুকে। চারু এখন ধ্রুবর আগে উঠতেই পারে না‌ প্রতিদিন উঠে দেখে ধ্রুব অফিসে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে।
ধ্রুব ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো চারু এক‌ই জায়গাতেই বসে ছিল। ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে ধ্রুব কপাল কুঁচকে দেখে ওকে তারপর আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে চুল শুকাতে লাগে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে। চারু গালে হাত দিয়ে ওর কান্ডকারখানা দেখছে পলকহীন চোখে।
ধ্রুব আয়নার ভেতর দিয়েও চারুর কড়া চাহনি দেখে পিছু ঘুরে চারুর চোখে চোখ রেখে বলল,’ কি হয়েছে? ওভাবে তাকিয়ে কী দেখছো?’
চারু গাল থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে বসল তারপর বলল,’ দেখছি আপনি কত দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছেন।’
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে বলল,’ মানে?’
চারু উঠে এলো। তারপর আলমারি থেকে শার্ট বের করে ধ্রুব কে পড়িয়ে দিতে দিতে বলল,’ মানে হলো কিছু না।’
‘ চারু হেঁয়ালি করে আমার মাথা গরম…’
চারু ধ্রুব সামনে এসে দাড়িয়ে শার্ট এর কলার টেনে সোজা করে ধ্রুবর ঠোঁটে আঙুল চেপে চুপ করিয়ে দিল। ধ্রুব কথা শেষ করতে না পরে কপাল কুঁচকে চারুর দিকে বিস্মিত চোখে তাকাল।
চারু শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল,’ হয়েছে আর রাগ দেখাতে হবে না। আপনি দিন দিন রুড হয়ে যাচ্ছেন। অফিসের দায়িত্ব নিয়ে আপনি কি আমার দায়িত্ব ভুলে গেছেন। আমি আপনার ব‌‌উ। একজন পুরুষের সবচেয়ে বড়ো দায়িত্ব
কি জানেন? স্ত্রীর সাথে রুড হয়ে নয় মিষ্টি স্বরে কথা বলতে হবে।’
বলতে বলতে চারু ধ্রুবর বুকে একটা চুমু খেলো। ধ্রুব কেঁপে উঠল। চারু ধ্রুব কে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলল,’ স্বামী হয়েছেন। কয়দিন পর বাবা হবেন। আপনার তো অনেক দায়িত্ব নিতে হবে।’
ধ্রুব ও চারু কে জড়িয়ে ধরেছে। চারু এটা দেখে আরো শক্ত আছে জড়িয়ে ধরে বলল,’ আপনার কী হয়েছে বলুন তো?’
ধ্রুব উত্তর দিল না কিন্তু চারু কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে একটা চুমু খেলো। তখনি দরজা খুলে ভেতরে এলো যুথি। এসেই চোখে হাত দিয়ে বলল,’ সরি সরি ভুল টাইমে চলে এসেছি বোধহয়।’
চারু ছিটকে ধ্রুবর থেকে সরে যায়। ধ্রুব বিরক্তিকর চোখে যুথির দিকে তাকিয়ে বলে,’ কারো রুমে ঢোকার আগে পারমিশন নিতে হয় এইটাও কি জানিস না?’
যুথি শক্ত কন্ঠে বলল,’ দরজা লক করে রাখতে পারো না।’
চারু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে যুথি বলল,’ তোমাকে চাচি ডাকে নিচে যাও।’
চারু এক পলক ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
ধ্রুব যুথি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,’ তুই দাড়িয়ে আছিস কেন?’
যুথি এগিয়ে এসে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে বলল,’ কেন আমি কি তোমার রুমে দুই মিনিট বসেও থাকতে পারব না।’
‘ নাহ।’ রাগী স্বরে বলল ধ্রুব।
যুথি বলল,’ কেন আমি তোমার রুমে একাকী থাকলে তোমার ব‌উ কী মাইন্ড করবে?’
ধ্রুব বলল,’ ভাবি হয় তোর‌‌।’
যুথি বসে আছে দেখে ধ্রুব রেডি হচ্ছে না। এটা দেখে যুথি বলল,’ রেডী হ‌ও অফিসের জন্য দেরি হয়ে যাবে তো।’
‘ তুই আমার টাইম নষ্ট করছিস বাইরে যা।’
যুথি ঠোঁট বেঁকিয়ে বেরিয়ে গেল। ধ্রুব রেডি হয়ে নিচে নেমে দেখল চারু নাই। ধ্রুব উঁকিঝুঁকি মেরে চারুকে খুঁজছে।
ধ্রুবর মা ধ্রুব কে ডাইনিং টেবিলে ডেকে নিয়ে বসালো। ধ্রুব মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’ তুমি কোথাও যাবে?’
ধ্রুবর মা রেডি হয়ে এসেছে মনে হচ্ছে বাইরে যাবে। তিনি বললেন,’ হ্যাঁ।’
ধ্রুব কাজের মেয়ে কে জিজ্ঞেস করল,’ চারু কোথায়?’
ধ্রুবর মা উত্তর দিল,’ কেন ব‌উ কে কি এক মুহুর্ত চোখের আড়ালে‌ রাখতে পারিস না?’
ধ্রুব উত্তর না দিয়ে চারু কে ডাকল। একটু পরেই চারু কিচেনে থেকে ধ্রুব ব্রেকফাস্ট নিয়ে এলো। ধ্রুব কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করল,’ তুমি রান্না করছিলে?’
চারু মিষ্টি করে হেসে বলল,’ জাস্ট ডিম পোঁচ করেছি।’
ধ্রুব রাগী চোখে তাকালো মায়ের দিকে তারপর বলল,’ আম্মু চারু কে কিচেনে পাঠিয়েছে কে?’
তিনি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন,’ হাজব্যান্ড এর জন্য একটু আধটু কাজ করলে হাত ক্ষয়ে যাবে না। আর এই মেয়ে তো কাজকর্ম পটু। এইজন্যই তো তোর দাদীর দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল।’
‘ আম্মু তুমি এই কথা বলছো? কয়দিন আগেও তো তুমি ওকে নিয়ে কত যত্নশীল ছিলে।’
‘ এখনো আমি যত্নশীল এই দেখ।’
বলেই‌ তিনি বাটিতে কেটে রাখা ফ্রুটস দেখালো। তারপর বলল,’ কিন্তু বাড়ির ব‌উকে তো কাজকর্ম করতেই হবে।’
চারু ধ্রুব কে বলল,’ এতো কথা বাড়াচ্ছেন কেন? সামান্য একটু ডিম পোঁচ করতে আমার কিছুই হয়নি।’
ধ্রুব রাগী চোখে তাকিয়ে উঠে দাঁড়াল।
‘ আমার ব‌উ কে যদি আমার জন্য কাজ করতে হয় আমি এই বাসায় আর কিছু খাবোই না।’
বলেই ধ্রুব হনহনিয়ে উঠে চলে গেল। চারু হতবুদ্ধি চোখে ধ্রুবর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুবর মা ভয়াবহ রাগী চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে আছে।
তিনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,’ ধ্রুব কোনদিন আমার সাথে গলা উঁচিয়ে কথা বলতো না। আর এখন তোমার জন্য তাও সহ্য করতে হচ্ছে আমায়।’
চারু মাথা নিচু করে বলল,’ আমি ধ্রুবর হয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আম্মু।’
ধ্রুবর মা রাগী কন্ঠে বললেন,’ তোমাকে আমি বলেছি না আমাকে আম্মু বলবে না।’
‘ তাহলে আমি আপনাকে কি বলব?’
তিনি রাগী গলায় বললেন,’ ম্যাডাম ডাকবে।’
চারু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’ আচ্ছা আপনার যেমন ইচ্ছে।’
চারু রুমে এসে দেখল ধ্রুব রাগে ফুসফুস করছে। চারু খাবার রুমেই নিয়ে এসেছিল। প্লেট ট্রি টেবিলের উপর রেখে বলল,’ এতো রাগ কেন?’
ধ্রুব বলল,’ তুমি কাজ করতে কেন গিয়েছিলে?’
‘ আমি বাড়ির ব‌উ আমার তো বাড়ির কাজ কমবেশি করতেই হবে।’
‘ তুমি বুঝতে পারছো না আম্মু তোমাকে বাড়ির‌ ব‌উ করে কাজ করার দায়িত্ব দেয়নি। তোমাকে অপমান করতে নিচু করতে কাজে পাঠিয়েছে‌।’
‘ যেভাবেই করুক কিন্তু আমি তো তা ভাবছি না।’
ধ্রুব কে জোর করেই চারু খাইয়ে দিল‌। ধ্রুব খাবার খেয়ে চারুর হাত ধরে বলল,’ আম্মু নিজের বুদ্ধিতে এসব করছে না। এর পেছনে অন্য কারো হাত আছে। কেউ এসব আম্মুর মাথায় ঢুকাচ্ছে তুমি সাবধানে থাকবে কেমন?’
‘ আপনি এতো টেনশন করবেন না তো আমি একদম ঠিক থাকব এবং সব সামলে নেব। আপনি নিশ্চিন্তে অফিসে যান।’
ধ্রুব চারুর কপালে চুমু খেয়ে বলল,’ আমি তোমার জন্য টেনশনে থাকব। তুমি ঠিক থাকবে কেমন?’
‘ সকালেই তো খুব রাগ দেখাচ্ছিলেন?’ গাল ফুলিয়ে বলল চারু।
ধ্রুব চারুর গাল স্পর্শ করে বলল,’ সরি।’
চারু হাসলো ধ্রুবর হঠাৎ হঠাৎ মনে পরিবর্তন হয়। কিছু তো একটা চলছে তার মনে যা নিয়ে সে খুব চিন্তিত। কিন্তু ধ্রুবর মনের কথা মুখে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। এতো সহজে সে মুখ খুলবে না।
চারুর ফোন বেজে উঠল। ময়না বেগম কল দিয়েছে।
চারু কল রিসিভ করতেই ময়না বেগম বললেন,’ কেমন আছিস মা?’
‘ ভালো। তোমরা কেমন আছো?’
‘ একবার আসতে পারবি আজ।’
চারু কপাল কুঁচকে বলল,’ কেন হঠাৎ?’
‘ আজ সিঁথি কে দেখতে আসবে।’
চারু খুশি হয়ে বলল,’ তাই ছেলে কি করে?’
চারু ভাবল হয়ত প্রেম করেছে সেটা বাদ দিয়ে অন্য কোন ছেলের কথা বলছে কিন্তু প্রেগন্যান্সির কথা মাথায় আসতেই মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল চারুর। চারু কিছু বলতে যাবে ময়না বেগম বললেন,’ তুই তো সব জানিস‌ই।’
চারু বুঝল সেই লোভী ছেলেটার কথাই বলছে। চারু গম্ভীর কন্ঠে বলল,’ আমি আসতে পারব না। আর আমি এসেই বা কি করব?’
ময়না বেগম বললেন,’ তুই সিঁথি বড়ো বোন তুই আসবি না বোনের পাকা কথায়?’
চারু বলল,’ তুমি আছো তো। আমার কি প্রয়োজন।’
বলেই চারু ফোন কেটে দিল।
চলবে…?

প্রেমনেশা
নন্দিনী নীলা
৫৪.

বাড়িতে আজ মেহমান আসবে। চারু তাদের জন্য নিজের হাতে পায়েস রান্না করেছে। পায়েস রান্নার দায়িত্ব দিয়েছিল ধ্রুবর মা। তিনি কড়া গলায় হুকুম করেছেন,’ আজ বাসায় আমার কিছু অতিথি আসবে তাদের জন্য তুমি নিজের হাতে পায়েস করবে। আর তাদের আপ্যায়ন করার সমস্ত দায়িত্ব তোমার।’
চারু খুশি মনে রাজি হয়েছে। পায়েস রান্না করছে মনোযোগ দিয়ে। ধ্রুব কল দিয়ে ওকে কিচেনে দেখে রেগে গেল!
চারু বলল,’ আপনি রাগ করছেন কেন?’
‘ চারু তুমি কেন কিচেনে গিয়েছো আমি স্পষ্ট করে মানা করেছিলাম তোমায় কিচেনে না যেতে।’ রাগী গলায় বলল ধ্রুব।
‘ দেখুন শাশুড়ি মায়ের প্রথম কোন আদেশ পেয়েছি আমি চাই না সেটার বরখেলাপ করতে। তিনি আমায় একটা দায়িত্ব দিয়েছে আমি চাই তা পালন করতে আমারো দায়িত্ব আছে। আমি এই বাড়ির বউ।’ চারুর কথায় ধ্রুব রেগে থাকলে ও কিছু বলতে পারল না।
ধ্রুব কল কেটে দিল। চারু আর কল করল না। এখন রাগ দেখাবেই দেখাক বাসায় আসুক তার রাগ কীভাবে ভাঙাতে হয় চারু ভালো করেই জানে।
চারু দুধ ঝাল করছিল। চাল আগে থেকেই ভিজিয়ে রেখেছিল। তখনি কিচেনে এসে উপস্থাপন হয় যুথি। এসেই চারুর পায়েসের পাতিলে উঁকি মেরে বলে,’ বাহ রান্না শুরু করে দিয়েছো।’
চারু এক পলক যুথির দিকে চেয়ে রান্নায় মনোযোগী হলো। বোনের পিছু পিছু পিনাক ও এসে উপস্থিত।
দুই বোন দাড়িয়ে থেকে ওর রান্না দেখছে। চারু চিনির কৌটা নামিয়ে দুধে দিবে তখনি পিনাক চিনির কৌটা ছো মেরে চারুর হাত থেকে নিয়ে এক দৌড় দেয়।
চারু হতবুদ্ধি চোখে পিনাকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল,’ পিনাক এটা কি করছো চিনি আমাকে দাও।’
পিনাক না না বলে দৌড়ে চলে গেল। যুথি মুখে হাত দিয়ে বলল,’ এমা এখন কি হবে চারু তুমি পায়েস কীভাবে করবে? চিনি ছাড়া কি পায়েস হবে?’
চারু বলল,’ পিনাক কে দিয়ে তুমি এসব করিয়েছো তাই না?’
‘ বাহ চারু তুমি তো খুব বুদ্ধিমতি।একদম ঠিক ধরেছো আমি চাইনা তুমি পায়েস রান্না করো। তুমি পায়েস রান্না না করার জন্য চাচির কাছে পানিশমেন্ট পাও আমি এটাই চাই।’
বলেই হাসল যুথি।
চারু কিচেনে থেকে বেরিয়ে পিনাকের পিছনে যেতে চাইল কিন্তু চারুর পা জোড়া তখনি থেমে গেল। ধ্রুবর মা নিজের মেহমান নিয়ে তখন ড্রয়িংরুম এ ঢুকছে। চারু থমকানো চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। যুথি চারুর কানে কানে তখন বলে,’ চারু এবার কি করবে মেহমান তো চলে এসেছে।’
চারু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর যুথি কুটিল হেসে চলে গেল। একটু পর কিচেনে বুয়া এসে জানাল ধ্রুবর মা চারু কে শরবত নিয়ে যেতে বলেছে।
চারু চিনি না থাকায় শরবত তৈরি করতে পারল না। ফল কেটে নিল আর ফ্রিজ থেকে শরবতের বদলে জুস গ্লাসে ঢেলে নিল। চারু থেকে থেকে ঢোক গিলছে। বুয়ার হাতে ট্রে দিয়ে চারু মাথা নিচু করে পেছনে পেছনে এসে দাঁড়াল ড্রয়িংরুমে। চারু সবাইকে সালাম দিল হাসিমুখে তারপর সবাইকে খাওয়ার কথা বলল।
এক মহিলা ধ্রুবর মাকে জিজ্ঞেস করল চারু কে দেখিয়ে ও কে এই বাসার।
ধ্রুবর মা বললেন,’ এ আমাদের বাসার নতুন মেড।’
ধ্রুবর মায়ের পরিচয় দেওয়া শুনে চারু হতভম্ব হয়ে গেল। এরা কেউ বিয়েতে ছিল না এজন্য চারুর পরিচয় জানে না। এতো লজ্জা লাগছিল ওর এখন সবার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে। চারু মাথা নিচু করে রেখেছিল ওর চোখে অজান্তেই জলে ভিজে উঠল। যুথি এসে বসল সবার মাঝে তারপর চারুর দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। চারু শরবতের বদলে জুস এনেছে দেখে ধমক খেল। চারু কিচেনে এসে চুপ করে চোখের জল ফেলছে। যুথি এসে বলল,’ দেখলে তো নিজের জায়গাটা আসলে কোথায়? তোমার মতো মেয়েকে বাড়ির ব‌উয়ের সম্মান, পরিচয় দেবে এমন ভাবনা তুমি ভাবলে কি করে বলোতো?’
চারু চোখ মুছে বলল,’ আমাকে পরিচয় না দিলেও আমার পরিচয় মিথ্যে হয়ে যাবে না। আমি এই বাড়ির বউ আছি আর থাকব। কিন্তু তুমি এতো খুশি হয়ো না। তুমি এই বাড়ির মেয়ে পরিচয় পাল্টাতে পারবে না।’
যুথি আঙুল তুলে বলল,,’ এখনো এতো তেজ। তুমি দেখতে পারছো না কেউ তোমায় পছন্দ করছে না। তাও তোমার তেজ তোমার আসে কোথা থেকে?’
‘ তুমি হয়ত ভুলে গিয়েছো ধ্রুব আমার পাশে আছে। সে থাকতে আমার আর কারো ভয় নেই। আর বাকিরা ও ঠিক সময়মতো আমাকে আপন করে নিবে।’
‘ আমিও দেখে নেব কিভাবে তুমি সবার মন জয় করো।’ বলেই যুথি হনহনিয়ে চলে গেল। চারু তখন পায়েস কীভাবে ব্যবস্থা করবে ভাবছে তখনি কিচেনে‌ আসে বুয়া। ওকে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে। চারু জানায়। তিনি বলেন,’ তুমি আমারে দশ‌ মিনিট সময় দাও আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
বুয়া চিনির ব্যবস্থা করে দেয় চারু কে‌। চারু খুশিতে তাকে জড়িয়ে ধরে।
খাবার টেবিলে চারু দুরুদুরু বুকে দাঁড়িয়ে আছে। বারবার করে ঢোক গিলছে পায়েস যেন সবার পছন্দ হয়। চারু ভয়ে ভয়ে রান্না করেছে।
গড়বড় যেন না হয়।
পায়েস টেবিলে দেখে যুথি আর পিনাক চমকে উঠল। ওদের প্লান পুরোই পাল্টে গেল। যুথি কটমট চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে আছে। চারু দেখল সবাই পায়েস তৃপ্তি করেই খাচ্ছে। চারু কে একজন ডেকে আরেকটু পায়েস দিতে বলল‌। চারু তার কাছে যাচ্ছিল তখনি যুথি সাবধানে নিজের পা এগিয়ে দেয় আর চারু যুথির পায়ে হোঁচট খেয়ে হাতে থাকা পায়েসের বাটি ফেলে দেয়‌। একটুর জন্য নিজে পরার হাত থেকে বাঁচতে পারে‌।
চারু বিস্মিত নয়নে যুথির পানে তাকায় যুথি হাসছে। চারু চিৎকার এ সামনে তাকায় চকিতে। ওর হাত থেকে বাটি পরে পায়েস ছিটকে একজনের গায়ের উপরে পরেছে। সে তো রেগে বোম। রাগে গমগম করে সে উঠে দাঁড়ায় আর রেগে চারু কে মারতে হাত উঠায়‌। চারু সবার সামনে থাপ্পড় খেয়ে বিস্ময় এ হতভম্ব হয়ে যায়।
চারু বারবার করে ধ্রুবর মায়ের দিকে তাকাচ্ছিল কিন্তু তিনি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। চারুর চোখ জলে ভরে উঠে। যাচ্ছেতাই বলে ওঠে অপমান করা হয়। চারু চুপ করে মুখ বুজে সব শোনে।

চারু মেহমান চলে যাওয়ার পর রুমে এসেছে আর বের হয়নি না খেয়েছে না বের হয়েছে।
চারু ধ্রুবর সাথেও আর কথা বলেনি। ধ্রুব ও চাপা অভিমানে আর কল করেনি।
ধ্রুব অফিস থেকে আসার পর থেকে দেখছে চারু কে গাল ঢেকে বসে থাকতেছে। রুমের মধ্যেই এতো বড়ো ঘোমটা দিয়ে রেখেছে যে ধ্রুব কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
ধ্রুব ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখল চারু চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে শোয়ে আছে। ধ্রুব রেগে এগিয়ে এসে একটানে চারুর গায়ের উপর থেকে চাদরটা সরিয়ে দেয়। চারু চমকে উঠে তাকায়। ধ্রুব রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। চারু বলল,’ কি হয়েছে? এতো রেগে আছেন কেন?’
‘ তোমার কি হয়েছে? আমাকে ইগনোর করছো কেন? আসার পর থেকে দেখছি।’
‘ আমার মাথা ব্যথা করছে তাই ঘুমানোর চেষ্টা করছি।’
ধ্রুব কপাল কুঁচকে বলল,’ সত্যি মাথা ব্যথা? নাকি অন্য কোন কাহিনী আছে?’
‘ আর কি থাকবে?’
‘ আম্মুর মেহমানদের জন্য তুমি আয়োজন করেছিলে সেখানে কিছু হয়েছে নাকি? সত্যি করে বলবে চারু আমায়।’
চারু উঠে বসে বলল,’ ক‌ই কিছুই তো হয়নি কি হবে? যান আপনি খেয়ে আসুন।’
‘ তুমি খেয়েছো?’
‘ হ্যাঁ’ চারু মিথ্যা করে বলল। ধ্রুব কড়া চোখে ওর দিকে চেয়ে থেকে বলল,’ মিথ্যা বলছো কেন? তুমি তো খাওনি।’
চমকে উঠল চারু ধ্রুব কি করে জানল সে খায়নি।
চারু আমতা আমতা করে বলল,’ আপনি কি করে জানলেন?’
ধ্রুব সাহস পেল চারু কে টেনে উঠিয়ে বসালো তারপর ওর গালের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল। ধ্রুব চারুর গালে পাঁচ আঙুলের দাগ দেখে আকাশ থেকে পড়ল।
‘ এসব কি করে হয়েছে?’
চারু যে ভয়টা পাচ্ছিল ধ্রুব কে এখন কি বলবে?
চারু শুকনো ঢোক গিলছে। ধ্রুব আগুন দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
‘ কথা বলছো না কেন তোমাকে থাপ্পড় মেরেছে কে?’ চিৎকার করে উঠল ধ্রুব।
চারু তোতলানো শুরু করে দিল। ধ্রুব এতো করে মানা করবার পর ও চারু পাকনামি করে দায়িত্ব নিয়েছিল এখন এসব দেখে সে তো রেগে বোম হয়ে গেল।
ধ্রুব চারু কে নিশ্চুপ দেখে রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। চারু তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল বিছানা থেকে তারপর ধ্রুবর পিছনে বাইরে এলো। ধ্রুব নিচে এসে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় নিল। ধ্রুবর চিৎকার শুনে বাসার সবাই নিচে নেমে এলো। চারু ধ্রুব কে বারবার রুমে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে কিন্তু ধ্রুব ওর কোন কথাই শুনছে না।
ধ্রুব মা এসে বললেন বিরক্তিকর কন্ঠে,’ এসব কেমন আচরণ ধ্রুব। চিৎকার করে বাসা মাথায় কেন নিচ্ছ? ভদ্রলোকের বাড়িতে এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি হয় না। তুমি কি ভুলে গিয়েছো?’
ধ্রুব রেগে বলল,’ ভদ্রলোকের বাড়িতে বাড়ির বউয়ের গায়ে হাত তোলা হয় তাই না?’
ধ্রুবর মা থতমত খেয়ো গেল। থাপ্পড় দেওয়ার পক্ষে তিনিও ছিলেন না। কিন্তু প্রথম পরিচয়ের পর তিনি কারো সামনে কিছু বলার মুখ পায়নি।
চারু মাথা নিচু করে থরথরিয়ে কাঁপছে এই ভয়টাই পাচ্ছিল সে। এইজন্য ধ্রুব কে নিজের গাল দেখাতে চাইছিল না‌। কিন্তু ধ্রুবর সামনে সত্যি এসেই গেল।
ধ্রুব চিৎকার করে উঠল,’ চারুর গায়ে হাত তুলেছে কে আম্মু? চারু প্রেগন্যান্ট তুমি নিশ্চয়ই সেটা ভুলে যাওনি। এই অবস্থায় ওকে তুমি মেহমানদের আপ্যায়নে দায়িত্ব দিয়েছিলে কেন?’
ধ্রুবর কথা শুনে ধ্রুবর বাবা ও চমকে উঠলেন। তিনিও স্ত্রী কে সত্যি টা জিজ্ঞেস করলেন। ধ্রুব মা উত্তর দিচ্ছে না দেখে যুথির মা এগিয়ে এসে গড়গড় করে সব বলে দিলেন। সব শুনে ধ্রুব সোফায় লাথি মেরে বলল,’ একজন বাইরের মহিলা আমার ওয়াইফের গায়ে হাত তোলার সাহস কি করে পেলো আম্মু। তুমি উপস্থিত থেকে এটা কীভাবে ঘটলো?’
যুথির মা বললেন,’ ধ্রুব রে সে তো তোর স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে নি‌। সে হাত তুলেছে বাড়ির সামান্য এক মেড এর গায়ে‌। যে কাজ ঠিকমতো করতে পারেনা।’
ধ্রুব বলল,’ আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না চাচি।’
সব শুনে ধ্রুব হতভম্ব হয়ে নিজের মাকে জিজ্ঞেস করল,’ তুমি চারু কে এই পরিচয় দিয়েছ?’
ধ্রুব মা কথা না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ধ্রুব মায়ের কাঁধ ধরে ঝাকুনি দিয়ে তাকে ছেড়ে বলল,’ যে বাড়িতে আমার ওয়াইফের কোন সম্মান নেই আমি সেই বাড়িতে এক মুহুর্ত ও থাকব না।’
চমকে উঠলেন ধ্রুবর মা।
ধ্রুব চারুর হাত ধরে বলল,’ আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।’
#চলবে….