প্রেমনোঙর ফেলে পর্ব-১৭

0
378

#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা

১৭.

ইচ্ছে কানে হেডফোন গুজে সিড়ি দিয়ে উঠছিলো। নওশাদ সাহেব কয়েকবার ডাক লাগালেন ওকে। শুনলো না ও। টমি পেছন থেকে ইচ্ছের পায়ের কাছে গিয়ে ওকে থামিয়ে দিলো। ইচ্ছে পেছন ফিরলো। বাবাকে দাড়ানো দেখে কান থেকে হেডফোন নামালো ও। নওশাদ সাহেব দুটো ছোটছোট চুড়ি ওর সামনে তুলে ধরলেন। ইচ্ছে নিরবে তাকিয়ে রইলো ওগুলোর দিকে। নওশাদ সাহেব বললো,

-নিজের জিনিসকে অস্বীকার কেনো করছো ইচ্ছে?

-নিজের কোথায় বাবা? যেগুলোতে খেয়ারও অধিকার আছে, ওর অনুপস্থিতিতে আমি তা কি করে নিজের নামে করে দেই?

হতাশ শ্বাস ছাড়লেন নওশাদ সাহেব। বললেন,

-এটা তো তোমার। এটা তুমি নিজের কাছে রাখো? খেয়ারটা ও…

-যতোদিন না খেয়া ফিরছে, নিজের অধিকারগুলো পাচ্ছে, ওর সমধিকারের সমতুল্য কিছুই আমি এক্সেপ্ট করতে পারবো না বাবা। ওগুলো তুমি তোমার কাছেই রেখে দাও।

ইচ্ছে চলে যাচ্ছিলো। নওশাদ সাহেব পেছন থেকে বলে উঠলেন,

-রাজীবের সাথে কথা হয়েছে আমার।

-নট এগেইন বাবা। প্লিজ!

-এভাবে আর কয়দিন ইচ্ছে? যে নেই, সে নেই! তার জন্য তোমরা কেনো নিজেদের ভবিষ্যতকে থামিয়ে দিয়েছো?

ইচ্ছে থামলো না। নওশাদ সাহেব বললেন,

-রাজীব চায় রাকীনের এই প্রজেক্টটা শেষ হওয়ার পর তোমাদের দুজনের বিয়েটা সেরে ফেলতে। আর আমিও এমনটাই চাই। তুমি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করো ইচ্ছে। জোর করে তোমার ওপর নিজের মত আমি চাপিয়ে দিতে চাইনা। কিন্তু তোমার জন্য রাকীনের চেয়ে বেটার কাউকে খুজে পাবো না। রাকীনের চেয়ে ভালোভাবে কেউ বুঝবে না তোমাকে। সেইম তুমিও। তোমাদের দুজনকে একসাথে দেখতে চাই। এই অক্ষম পিতার অনুরোধ রইলো, কথাগুলো তুমি আরেকবার ভেবে দেখো প্লিজ ইচ্ছে! প্লিজ!

ইচ্ছে থামলো। শক্তহাতে সিড়ি আঁকড়ে ধরলো ও। নওশাদ সাহেব চোখের কোনের জল মুছে চলে গেলেন ওখান থেকে। ইচ্ছের কান্না দলা পাকিয়ে আসছে গলায়। কাদতে পারছে না তবুও। মনেমনে শুধু বললো,
“আজ তুই থাকলে আমাকে না তোদের মাঝে থাকতে হতো, না তোদের মাঝে থাকার নামে দোষী হতে হতো খেয়া। চলে তো গেলি। কিন্তু সাথে আমার জন্য এক দমবন্ধকর পৃথিবীও রেখে গেলি তুই। না পারছি মরবো বলে শেষ নিঃশ্বাস ছাড়তে। না পারছি নতুন করে বাচবো বলে প্রশ্বাস নিতে। তুই সবকিছু ছেড়েছুড়ে হারিয়ে গিয়েও প্রিয়। আর আমি সবকিছুতে বাধা পরে আজ সবার অপ্রিয়। আর সেই অপ্রিয় মানুষটাই হয়তো তোর প্রিয় মানুষটার সাথে জড়িয়ে যেতে চলেছে। আমার আঁকা খোলস আর বোধহয় বাধ মানলো না।”

-সাহেরা মা কাছারিবাড়িতে অজ্ঞান হইয়া গেছে খই বুবু! রান্দোনের সময় আইজা আবারো নাকি রক্তবমি উডছিলো মায়ের। জলদি কাছাড়িবাড়ি চলো! মুন্সী তোমারে ডাইকা পাঠাইতে কইছে। বরুনকাকারে দাওয়াখানা থাইকা নিয়া যাওন লাগবো! জলদি চলো!

পুঁটির কথায় খই যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে। উঠোনে কাদামাটি দিয়ে সরা বানাতে বসেছিলো ও। আগেরদিন ভাতের মাড় আলাদা করতে গিয়ে মাটির সরাটা ভেঙে ফেলেছে ও। টু শব্দটা শোনায়নি ওকে সাহেরা। মায়ের আদরের সাথে সংসারের অভাবটুকো বোঝার ক্ষমতা হয়েছে খইয়ের। দশ টাকার সরা কেনার চেয়ে চালের জন্য টাকা জমানো ভালো। এমনটা ভেবে নিজেই কাদামাটি নিয়ে বসে গেছে সরা বানাবে বলে। বৈশাখের তপ্ত রোদে শুকানোর পর চুলোয় পোড়ালেই হয়ে গেলো। বেচে গেলো দশ টাকা। গালে হাতে কাদা লেগে আছে খইয়ের। পুঁটি এগিয়ে গিয়ে ধাক্কা লাগালো খইকে। আরো জোরে চেচিয়ে বললো,

-ও বুবু? কাছারিবাড়ি চলো! সাহেরা মা…

পুঁটির কথা শেষ হওয়ার আগেই উঠে ছুট লাগালো খই। দৌড় লাগালো রাস্তার নিচের জমি বরাবর। রাস্তার সংস্কার কাজ চলছিলো বলে রাস্তায় ওঠেনি। বাতাসের আগে পৌছানোর চেষ্টা যাকে বলে। চোখ দিয়ে জল গরাচ্ছে ওর অবাধে। শাড়ির আঁচলটা ছাড়া ছিলো। খই দৌড়াতে দৌড়াতেই প্যাঁচ লাগিয়ে কোমড়ে গুজলো‌ আঁচল। পুঁটিও ওর পেছনপেছন দৌড়াচ্ছে। পেছন থেকে হাঁক ছেড়ে বললো,

-তুমি কাছারিবাড়িতে যাও বুবু। আমি বরুনকাকার দাওয়াখানায় গেলাম। কাকারে ডাইকা আনি।

খইয়ের কানে যায়নি কোনো কথা। ও ছুটছে। বাড়ি থেকে দৌড়ে বিশমিনিটের রাস্তা দশমিনিটে শেষ করলো খই। দুর থেকে কাছারিবাড়ির দেয়ালতোলা পাঁচিল দেখে চোখ ভরে উঠলো ওর আরো। ঝাপসা চোখে খালি পায়ে ছুটছিলো ও। বরই গাছের নিচ দিয়ে আসার সময় তাই পায়ে কাটা ফুটতে সময় লাগেনি। বিন্দুমাত্র গতি না কমিয়ে তবুও ছুটলো খই। কাছারিবাড়ির সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো অস্থিরচিত্ত্বে। এ বাড়িতে রান্নাঘরের পাশে‌ বেশি মানুষের রান্নার জন্য বড় হেশেল করা। তারই‌ চারপাশে একটা বড়সর জটলা। খই চিৎকার দিয়ে উঠলো,

-মা!

উপস্থিত সবাই পেছনে তাকালো। উদ্ভ্রান্তের মতো ভীড় ঠেলে মায়ের কাছে পৌছালো খই। সাহেরার জোরহীন দেহটা মাটিতে পরে আছে। কাশির বদলে ঢেকুরের সাথে ঘলঘলিয়ে রক্ত ঝড়ছে মুখ‌ দিয়ে। পাশে দুজন মহিলা সাহেরাকে ধরে দোয়াদরুদ পরছে, আরেকজন পানির বাটিতে চামচ নিয়ে বসে আছে। আরেক ঢেকুর রক্তবমি করে গায়ের মলিন কাপড়টা আরো ভিজিয়ে ফেললো সাহেরা। খইকে দেখে মুন্সী বললো,

-ওইযে আইছে সাহেরার মাইয়া। আইতে দেও ওরে সবাই। আর পুরুষমানুষেরা এইহান থাইকা যাও। জটলা কইরো না আর।

বয়জৈষ্ঠ্যের কথায় লোকজন সরে গুলো দ্রুতপদে। খই একছুটে মায়ের কাছে গেলো। মাটিতে বসে গিয়ে পাগলের মতো মাকে জরিয়ে ধরলো শক্ত করে। চিৎকার করে বললো,

-কি হইছে আমার মায়ের? মা? ও মা? কি হইছে? কোনহানে খারাপ লাগে তোমার? কোন জায়গায়? কও না মা! কও?

মেয়ের গলা শুনে এতোক্ষনে সাহেরা চোখ উল্টালো কোনোমতে। আজকেই কাছারিবাড়িতে শেষবেলা রান্না ছিলো ওর। সাদিক সাহেবের থেসিস শেষ হয়ে গেছে বলে পরদিনই ফেরার কথা তাদের। তারপর আর রান্নার লোক দরকার হতো না এ মুন্সীবাড়িতে। রান্নার জোগারে ব্যস্ত থাকতে থাকতে হঠাৎই পুরোনো রোগটা জেগে উঠলো। কাশি। কাশি থেকে রক্তবমি। শরীর তো সেই কখনই ভার ছেড়ে দেবে বলে প্রস্তুতি নিয়েছে। জোর করে দেহে প্রান ধরে রেখেছিলো যেনো সাহেরা। শেষমুহুর্তে একবার মেয়েকে দেখবে বলে। কথা বলার জন্য মুখ খুললেও, আবারো রক্ত বেরিয়ে আসলো মুখ দিয়ে। তবুও দুটো হিচকি তুলে বললো,

-ত্ তরে অনেক কিছু থাইকা‌ বঞ্চিত করছি, দিবার পারি নাই খই। পেটে না ধইরাও তরে মাইয়া হিসেবে পাইয়া, এই সাহেরার বাইচা থাকা স্বার্থক! তাই‌ স্বার্থপর হইয়া‌ গেছিলাম রে! স্ সাদিক ভাইয়ের কথা মাইনা চলিস। আ্ আর পারলে…পারলে আমারে মাফ কইরা দিস মা। মাফ কইরা দিস।

বড়বড় দম নিয়ে কথাগুলো বলে মেয়ের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে শ্বাস ছাড়লো সাহেরা। পুরো মুন্সীবাড়ি থমকে গেলো খানিকটা সময়ের জন্য। দু দন্ড মায়ের স্থির চাওনির দিকে শ্বাস থামিয়ে তাকিয়ে রইলো খই। পরপরই উন্মাদের মতো করে চেচিয়ে বললো,

-মা? কথা কও না ক্যান মা? বরুনকাকা আহে নাই? কেউ মহিষের গাড়ি লইয়া আহো! মারে নিয়া আমি দাওয়াখানায় যামু! মা? ও মা? কিছু হইবো না তোমার! ও মা? মা? এইযে আমারে দেহো না তুমি? এইযে তোমার খই! মা? দেখতাছো না?

পাশে পানির বাটি নিয়ে বসে থাকা মহিলা আঁচলে মুখ গুজে হুহু করে কাদছিলো। সাহেরার চোখজোড়ে হাত দিয়ে বন্ধ করে দিলো সে। খই শ্বাস আটকে বড়বড় চোখে তাকালো তার দিকে। কিছু বলতেও পারছে না মহিলা। কোথা থেকে বদু ফকির একতারা হাতে খইয়ের পাশে এসে হাটুতে বসলো। খইয়ের মাথায় হাত রেখে বললো,

-তর মা আর নাই খই।

কথাটা কর্নগোচর হলো কিন্তু যেনো বুঝলো না খই। বদুফকির আবারো বললো,

-মারে শেষবারের মতো মা কইয়া ডাইকে দে খই। সাহেরা আর এই‌ দুনিয়ায় নাই। আল্লার কাছে চইলা গেছে তোর মা।

বুঝে উঠতেই মাকে জরিয়ে এবার গগনবিদারক চিৎকার আর আহাজারিতে ফেটে পরলো খই। উপস্থিত ছেলে বুড়ো সবাইই কাদছে। গ্রামের হাসিখুশি দস্যি মেয়েটা যখন এভাবে কাদে, কেউই চোখের জল ধরে রাখতে পারে নি। মুন্সীর চার মেয়ে, থেসিসের জন্য শহর থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা, গ্রামের পাড়াপরশি, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পাতা কুড়ানো বাচ্চা, রাখালের দল সবাই যারযার জায়গায় দাড়িয়ে কাদছে। খইকে জরিয়ে সামলানোর চেষ্টা করলো কেউকেউ। মিনিটপাঁচেক কান্নার পর জ্ঞান হারালো খই। মুন্সী বললো,

-সাহেরারে ধোয়াইনার ব্যবস্তা করো। খইয়ের হুশ ফেরোনের আগেই ওর দাফনের ব্যবস্তা করোন লাগবো।

পুঁটি ততোক্ষনে গ্রামের একমাত্র নাড়িটেপা ডাক্তার, দাওয়াখানার মালিক বরুন চ্যাটার্জীকে নিয়ে হাজির। সাহেরাকে মৃত দেখে সেও চোখের কোনের জল মুছলো। কতোবার বলেছে, রোগ সারাতে শহরে যেতে। যায়নি সাহেরা। শহরে কিসের ভয় ওর, কে জানতো! মুন্সীর কথা শুনে চ্যাটার্জীমশাই বললেন,

-এ কি কথা দাদা? এতো তাড়াতাড়ি দাফন? মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে আছে। মায়ের দাফন দেখবে না ও?

-দাফন দেখনের কি আছে? জানাজা তো মুসুল্লিরা পড়াইবো। আর তুমি এইসবে জড়াইয়ো না চ্যাটাজ্জী! আমাগো ধর্মে মুদ্দারে বেশিক্ষন রাখনের কথা বলা নাই। এতে মুদ্দার জান আজাব পায়।

ধর্মের কথা বলায় আর কিছুই বললো না ডাক্তার। কিন্তু বেশ বুঝলো, মুন্সী যতো দ্রুত সম্ভব ঝামেলা সরাতে চাইছে নিজের বাড়ি থেকে। মাথা নিচু করে নিলো সে। পুঁটি কি ভেবে কাদতে কাদতে ছুট লাগালো। ছুটতে ছুটতে পৌছালো রাস্তা সংস্কারের জন্য করা তাবুর কাছে। তাবুর সামনে দাড়িয়ে রাকীন বোর্ডের উপর মাপঝোক করে নকশা আঁকাচ্ছিলো। পুটি গিয়ে হাপাতে হাপাতে বললো,

-ও নকশাদার, জানোতো! খই বুবুর মা সাহেরা মা আইজকা মইরা গেছে!

আকস্মাৎ খইয়ের নাম আর ওর মায়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে মাথা ফাঁকা হয়ে গেলো রাকীনের। চুপচাপ তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন পুঁটির দিকে। খইয়ের সাথে দেখা হয়নি ওর আজ। ভাবছিলো হাতের কাজটা সেরে একবার শুকমরার ব্রিজ দেখার নাম করে যাবে ওইদিক। কিন্তু তার আগেই এমন সংবাদ। আর এইটুকো মেয়ে মিথ্যে মৃত্যুসংবাদই বা কেনো দেবে? একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে রাকীন বললো,

-খইয়ের মা মারা গেছে?

-হ! সাহেরা মা কাছারিবাড়িতে রান্দোনের সময় রক্তবমি করতে করতে মইরা গেছে! বুবু তো অজ্ঞান হইয়া পইরা আছে কাছারিবাড়িতে।

কপাল চেপে ধরে ঠোট কামড়ে ধরলো রাকীন। যতোটুকো জেনেছে, মা ছাড়া কেউই নেই খইয়ের। হুট করে সেই মায়ের মৃত্যু! রাকীন বেশ আন্দাজ করতে পারলো খইয়ের উপর দিয়ে কি যাচ্ছে। নকশার কাগজপত্রের উপর একটা পেপারওয়েট রেখে পাশের একজনকে বললো,

-এদিকটা দেখো। আমি আসছি।

মানুষটা কোনদিকটা দেখবে বোঝার জন্য প্রশগন করতে যাচ্ছিলো রাকীনকে। সে সময় দেয়নি রাকীন। শার্টের হাতা টান মেরে একপ্রকার দৌড় লাগালো কাছারিবাড়ির দিকে। সংস্কারের জন্য এসেছিলো বলে পঞ্চায়েত ওই বাড়িতেই মিটিংয়ে বসেছিলো ওকে নিয়ে। গ্রামের একমাত্র বিল্ডিংঘরটা খুজে পাওয়া খুব কঠিন কোনো বিষয় ছিলো না ওর জন্য। সাহেরাকে ততোক্ষনে কাফনে মুড়িয়ে খাটিয়ায় শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। খই ইতিমধ্যে দু দুবার জ্ঞান হারিয়েছে। এখনো জ্ঞান ফেরেনি ওর। হাত, গাল, গলা, কাপড়ে লেগে থাকা কাদা শুকিয়ে উঠেছে। বিনুনিবাধা চুল উশকোখুশকো। হেশেলের রোয়াকে বসে দুজন মহিলা ওর জ্ঞান ফেরানো চেষ্টারত। টুপটাপ জল গরালো রাকীনের চোখ থেকে। তৎক্ষনাৎ মুছে ফেললো ও সেই জল। ওর ভেতরটা যেনো খামচে ধরেছে কেউ। এতো দুরন্ত মেয়েটার একি রুপ? উঠোনের এক জায়গায় দাড়িয়ে কথা বলছিলো গ্রামপঞ্চায়েতের কয়েকজন। রাকীন চিনলো তাদের। নিজেকে সামলে সাহস করে এগোলো সেদিকে। সালাম দিয়ে বললো,

-আপনারা অনুমতি দিলে আমি কিছু বলতে চাই।

তারা শুনবে বলে আগ্রহী ছিলো। কিন্তু বলার সুযোগ পেলো না রাকীন। খানিকটা দুরেই সাদিক সাহেব স্থির হয়ে বসে ছিলেন এতোক্ষন। উনি উঠে দাড়ালেন এবার। সবাই তার‌ দিকে কৌতুহলী হয়ে এগোলো। রাকীন থামলো। সাদিক সাহেবের মতামতের জন্যই সবাই বসে আছে একপ্রকার। কারন মৃত্যুর আগে সাহেরা শুধু তার সাথেই কথা বলেছে। খইয়ের দায়িত্বও তাকেই‌‌ দিয়ে‌ গেছে। সাদিক সাহেব এতোক্ষন শান্তস্বরে বললেন,

-সাহেরাকে এখান থেকেই কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। আর জ্ঞান ফিরলে খই আমাদের সাথে ঢাকায় ফিরবে। ফর্মালিটিস্ যাবতীয় যা কিছু করার বা দেখার আছে, গ্রামের পঞ্চায়েত-মাতব্বর-মুন্সী-ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যান সবটা আমি দেখে নেবো। খই আমার সাথে ঢাকা যাবে, এটাই সাহেরা চেয়েছিলো। এমনটাই করবো আমি। আর এটাই শেষ কথা। আশা করবো আপনারা সবাই সাহেরার শেষ ইচ্ছাকে, আমার মতামতকে সম্মান দেখাবেন। আপনাদেরকে সাক্ষী রেখে, আজ থেকে খইয়ের সম্পুর্ন দায়িত্ব আমি নিলাম। খই আমার সাথে যাবে।

#চলবে…

[ রিচেইক হয়নি। দুঃখিত 🙁 ]