#প্রেমপ্রবাহে_বিষবৃষ্টি
#সূচনা_পর্ব
#মাইশা_জান্নাত_নূরা (লেখিকা)
—“ আমি আপনাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি ঠিকই কিন্তু আপনি আমার থেকে কোনোরূপ বউ সেবা পাবেন এমন আশা রাখিয়েন না। আর না আমার উপর নিজের স্বামীর অধিকার খাটাতে আসবেন। নয়তো আপনার বিরুদ্ধে এমন কেস সাজাবো যে জে*ল আর কোর্টেই বাকি জীবন কেটে যাবে।”
বাসর ঘরে প্রবেশ করে রুমের দরজা লক করতে না করতেই বিছানায় বধূ রূপে সেজে বসে থাকা নিজের সদ্য বিবাহিতা বউয়ের মুখে এরূপ কথা শুনে রক্তিমের ভ্রু যুগল কিন্ঞ্চিত কুঁচকে এলো। রক্তিম বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো…..
—“বয়স কতো তোমার? একজনের নামে মামলা সাজাতে গেলে ঠিক যে পরিমাণ মাথা খাঁটাতে হতে পারে সেই পরিমাণ এনার্জি বা জ্ঞান তোমার মাঝে আছে বলে তো আমার মনে হয় না!”
রক্তিমের মুখে এরূপ কথা শুনে মেহেরুন্নিসা মনে মনে কিছুটা অ*প*মা*নিত বোধ করলো। চট করে নিজের মাথায় থাকা বিশাল ঘোমটাটা খুলে সামনের দিকে বিছানার দু’হাত বাড়িয়ে তাতে ভর দিয়ে বললো…..
—“আমার বয়স ২৩ বছর ৩ মাস ১৬ দিন চলছে। এখনও পুরোপুরি জ্ঞান অর্জন করতে পারি নি। তবে ভবিষ্যতে অনেক বড় লয়্যার হওয়ার ইচ্ছে আছে। অসহায়, গরীব যারা বড়লোক অ*ন্যায়*কারীদের অ*ত্যা*চারের শি*কার হয়েও টাকার ও ক্ষমতার অভাবে ন্যায় বিচার পান না আমি তাদের জন্য ল*ড়*বো। তাদের ন্যায় বিচার পাইয়ে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”
রক্তিম ওভাবেই মেরুদণ্ড বাঁকিয়ে মেহেরের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বাঁকা হেসে বললো….
—“বিয়ের আগে তোমাকে কেউ বলে নি তোমার বিয়ে বিশিষ্ট ক্রি*মি*না*ল লয়্যার রক্তিম রেজওয়ান খানের সাথে হতে চলেছে!”
মেহের অবাক দৃষ্টিতে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো….
—“ক্রি*মি*নাল লয়্যার মানে?”
—“সামান্য ক্রি*মি*না*ল লয়্যার এর মানে জানো না আর হতে চাও জনদরদী লয়্যার?”
—“অর্থ জানি আমি। ক্রি*মি*না*ল লয়্যার তো তাদেরই বলা হয় যারা অ*ন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতি*বা*দ করে না বরং অ*ন্যায়*কারীকে সঙ্গ দেয়। তাদের করা অ*ন্যায় গুলোকে ধা*মা*চাপা দেয়। আর ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় যারা নিজেদের শেষ সম্বল বসতভিটে টুকুও কেস ল*ড়া*র পিছনে খু*ইয়ে বসে শেষ পর্যন্ত তাদের আর ন্যায় পাওয়া হয় না আপনাদের মতো কিছু জ*ঘ*ন্য পেশার মানুষরূপী অ*মানুষদের জন্য।”
মেহেরের এরূপ কথা শুনে রক্তিম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শব্দ করে হাসতে শুরু করলো। রক্তিমের হাসি এইমূহূর্তে মেহেরের কাছে পৃথিবীর ভিতর সবথেকে বি*ষা*ক্ত কিছু মনে হচ্ছে। মেহেরের চোখে-মুখে রক্তিমের জন্য ফুটে উঠা ঘৃ*ণা*র মাত্রা আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। পরক্ষণেই রক্তিম হাসি থামিয়ে বললো…..
—“তোমার আর আমার মাঝে থাকা পার্থক্যটা ঠিক দিন আর রাতের মাঝে থাকা পার্থক্যের মতো দাঁড়ালো। তুমি স্বপ্ন দেখছো মহান লয়্যার হওয়ার আর আমি তো পূর্ব থেকেই একজন ক্রি*মি*না*ল লয়্যার। তোমার সাথে আমার ট*ক্ক*র*টা কিন্তু দারুণ হবে যদি কখনও সত্যিই তুমি আমার অপনেন্ট কারী বা*দীর হয়ে ল*ড়াই করো৷”
মেহের তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো….
—“বেশি খুশি হবেন না মি.রক্তিম রেজওয়ান খান। কারণ সত্যের জয়ই সর্বদা হয়।”
—“কোথায় আমি তো হতে দেখলাম না এ পর্যন্ত! ১শত এর কাছাকাছি কেস লড়া হয়ে গিয়েছে আমার ইতিমধ্যে। আর তুমি শুনলে হয়রান হবে যে আজ পর্যন্ত এমন কোনো লয়্যার আসে নি যে আমাকে হারিয়ে নিজে জিততে পেরেছিলো।”
—“অ*ন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে দিতে অ*ন্যায়*কারীকে সাজা পাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে বাঁচাতে আপনার ভিতর যে অহংকারের সৃষ্টি হয়েছে একদিন সেই অহংকারই হবে আপনার প*ত*নে*র মূল। সেই দিনটি খুব বেশি দূরে নেই।“
—“কে ঘটাবে সেই প*ত*ন? তুমি?”
—“আল্লাহ আছেন। যেই গরীব-অসহায় মানুষগুলোর সাথে হওয়া অ*ন্যা*য়ে*র ন্যয় বিচার আপনার জন্য তারা পান নি, পাচ্ছেন না তাদের চোখ থেকে পরা প্রত্যেক ফোঁটা অশ্রু আপনার উপর আল্লাহর গ*জ*ব হয়ে নামবে। হয়তো আমাকেই আল্লাহ আপনাকে ধ্বং*স করার জন্য উছিলা হিসেবে আপনার জীবনে পাঠালেন।”
এই বলে মেহের রাগে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের উদেশ্যে পা বাড়াতে নিলে রক্তিম মেহেরের ডান হাতের উপরিভাগের মাংসপেশি ধরে ওকে টেনে নিজের একেবারে সন্নিকটে নিলো। মেহেরের হাতটা ওর কমোরের সাথে মুড়িয়ে ধরলো রক্তিম। মেহের নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো…..
—“আপনাকে মানা করেছিলাম না আমায় স্পর্শ করবেন না! তারপরও আমাকে স্পর্শ করার সাহস হলো কি করে আপনার? ছাড়ুন আমার হাত।”
রক্তিম দাঁতে দাঁত চেপে বললো…..
—“তোমার থেকে গুণে গুণে ৭ বছর ১ মাস ২৬ দিনের বড় আমি। আবার হই তোমার বৈধ স্বামী। আর তুমি কিনা বিয়ের প্রথম রাতেই স্বামীর ধ্বং*স হওয়ার কথা বলছো? এতো তেজ এইটুকু ফিলফিলে শরীরের ভিতর আসে কিভাবে?”
মেহের এর দু’চোখ রাগে জ্ব*ল*ছে যেনো। মেহের ক্ষি*প্ত দৃষ্টি স্থির করলো রক্তিমের চোখজোড়ার উপর। অতঃপর বললো….
—“আপনার সাথে তৈরি হওয়া এই সম্পর্কের ইতিও আমি খুব তাড়াতাড়ি টানার ব্যবস্থা করবো। আর বাবার সাথে আমার এ নিয়ে অনেক বড় বোঝা*পড়া করার আছে। একজন মানুষরূপী অ*মানুষের হাতে তিনি কি বুঝে নিজের মেয়েকে তুলে দিলেন সেটা আমিও জানতে চাই।”
রক্তিম মেহেরের ধরে থাকা হাতের বাঁধনটা আরো শক্ত করলো। মেহের ব্য*থা*য় দু’চোখ খিঁ*চে বন্ধ করলো। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করার চেষ্টা করছে। তবুও মুখ দিয়ে একটা টু শব্দও বের করছে না। মেহের নিজেকে কিছুতেই দূর্বল দেখাতে চাইছে না রক্তিমের সামনে। রক্তিম রাগে হি*স*হি*সি*য়ে বললো…..
—“ক্রি*মি*না*ল লয়্যার রক্তিম রেজওয়ান খানের সাথে ল*ড়া*ই করতে আসা কোনো মানুষের অস্তিত্ব এই পৃথিবীর বুকে স্থায়ী হয় নি ভবিষ্যতেও হবে না। সেখানে ঘরের বউও যদি পরে সেইসব মানুষের তালিকায় তাহলে তাকে তো গু*ম করে দেওয়া যায় না বরং তাকে ভালোবেসে নিজের মনের মতো বানিয়ে নিতে হবে।”
—“আপনার মতো অ*মানুষের মুখে ভালোবাসার মতো পবিত্র শব্দ টা মানায় না। আর আপনি ভাবলেন কি করে আপনি ভালোবাসা দেখাতে আসবেন আর আমি তা সাদরে গ্রহণও করবো?”
—“তুমি সাদরে গ্রহন করবে নাকি করবে না সেটা দেখার মতো সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই আমার নেই। বিয়ে করেছি মানে তোমায় ছোঁয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে। আমি তো আজকের এই সুন্দর রাতটাকে কিছুতেই ন*ষ্ট হতে দিবো না। So, prepare yourself mentally to endure my romantic tortures.”
(তাই মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করো আমার রোমান্টিক অত্যাচার গুলো সহ্য করার জন্য।)
এই বলে রক্তিম চট করেই মেহেরকে নিজের পাজাকোলে তুলে নিলো।
💥
চৌধুরী ভিলায় লাইব্রেরি রুমে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে জহির রায়হান চৌধুরী ও তার বড় ছেলে জেভিয়ান চৌধুরী। জহিরের চোখ-মুখ রাগে র*ক্ত লাল বর্ণ ধারণ করেছে যেনো। জেভিয়ান কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই জহির স্বজোরে জেভিয়ানের গালে একটা থা*প্প*ড় বসালেন। জেভিয়ান নিজের গালের উপর একহাত রেখে মাথা নুইয়ে নিলো। জহির রাগে হি*স*হি*সি*য়ে বললেন…..
—“চৌধুরী বংশের পুরুষ ও বিশিষ্ট শিল্পপতি জহির রায়হান চৌধুরীর বড় ছেলে হয়ে কোন সেন্সে একজন ৫ স্টার হোটেলের সাধারণ নারী কর্মচারীকে র্য*প করেছিলে তুমি হ্যা? তোমার ভিতর কি রুচিবোধ একেবারেই ম*রে গিয়েছিলো জেভিয়ান?”
জেভিয়ান ধীরকন্ঠে বললো….
—“বাবাজান, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে সেইরাতে আমি নিজের মাঝে ছিলাম না। নেশা আমাকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছিলো। আমি বুঝতে পারি নি কি থেকে কি হয়ে গিয়েছিলো।”
—“নেশা নেশা নেশা। এই নেশা আজ তোমাকে ডুবাচ্ছে তো ডুবাচ্ছেই সাথে আমাকে, আমার এতো সম্মান, আমার বংশের সম্মান সব ধুলোর সাথে মিশিয়ে ফেলার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।”
জেভিয়ান চট করেই বসে পড়লো জহিরের পায়ের কাছে। জহিরের পা দু’টো জড়িয়ে ধরে বললো….
—“বাবা, তুমি আছো জন্যই তো আমি নিশ্চিন্ত মনে নিজের লাইফটাকে ইন্ঞ্জয় করে কাটাতে পারছি। আমি জানি তুমি এবারও আমাকে বাঁচিয়ে নিবে। ডুবতে আমায় দিবে না। তাই তো রক্তিম রেজওয়ান খানের মতো একজন নামি-দামি ক্রিমিনাল লয়্যার এর সাথে নিজের ছোট মেয়ের বিয়ে দিলে যেনো রক্তিম আমার হয়ে অনায়াসেই কেসটা লড়ে।”
জহির আর জেভিয়ানের মাঝে হওয়া এতোসময়ের কথপোকথন গুলো দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনলেন জহিরের স্ত্রী মাহফুজা চৌধুরী। নিজের মুখের উপর দু’হাত চেপে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মাহফুজা। তার দু’চোখ বেয়ে নোনাজলেরা বাঁধ হীন ভাবে বেয়ে পড়ছে।
💥
মেহের হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে বললো…..
—“নামান আমায়, নামান বলছি। খবরদার আমার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে আজ রাতেই আমার হাতে আপনি খু*ন হবেন।”
রক্তিম মেহেরকে বিছানার উপর ফেলে দিলো। মেহের তৎক্ষনাৎ বিছানা থেকে নামতে নিলে রক্তিম নিজের দু’বাহুর ব*ন্দি*নী বানিয়ে নিলো মেহেরকে। মেহের রাগে হি*স*হি*সি*য়ে বললো……
—“আমি কিন্তু এবার চিৎকার করবো৷”
রক্তিম বাঁকা হেসে বললো….
—“চিৎকার করলে উল্টে তোমারই মান-সম্মানের দফারফা হয়ে যাবে সুইটহার্ট। তুমি কি জানো না আজ আমাদের বাসররাত! স্বামীর দুষ্টু-মিষ্টি আদর সহ্য করতে না পেরেই কেবল স্ত্রী চিৎকার করে। বাহিরে থাকা প্রত্যেকটা মানুষ যাদের কান পর্যন্ত তোমার চিৎকার পৌঁছাবে সবাই তো এটাই ভাববে।”
মেহের ঘৃ*ণা*য় নিজের মুখ অন্যপাশে ঘুরিয়ে নিলো। রক্তিম মেহেরের থুতনি ধরে ওর মুখটা নিজের মুখের সোজাসুজি করে বললো…..
—“নজর সরিয়ে, মুখ লুকিয়ে আজ বাঁচতে পারবে না তুমি আমার হাত থেকে। কি যেনো বলেছিলে একটু আগে! খুব তাড়াতাড়ি এই সম্পর্কের ইতি টানার ব্যবস্থা করবে তুমি! কিন্তু ওটি তো হতে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই তোমার শরীরের প্রতিটি লোমকূপেই আমার ঠোঁটের স্ট্যম্প বসানোটা ভিষণ জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
মেহের কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই রক্তিম মেহেরের ঠোঁটের ভাঁজে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। মেহের নিজের ছাড়ানোর জন্য হাত দিয়ে রক্তিমের বুকের উপর প্রেসার দিতে গেলে রক্তিম মেহেরের দু-হাত নিজের একহাতের মাঝে নিয়ে ওর মাথার উপরে বিছানার সাথে শক্ত ভাবে চেপে ধরলো। অতঃপর মেহের নিজের পা দ্বারা প্রতিহত করার চেষ্টা করলে রক্তিমের নিজের শরীরের সম্পূর্ণ ভর মেহেরের উপর ছেড়ে দিলো। আস্তে আস্তে রক্তিমের প্রতিটি স্পর্শ গাঢ় থেকে আরো গাঢ় হতে শুরু করলো। শত চেষ্টা করেও রক্তিমের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে পারলো না মেহের।
#চলবে_ইনশাআল্লাহ……..