প্রেমপ্রবাহে বিষবৃষ্টি পর্ব-১৬

0
14

#প্রেমপ্রবাহে_বিষবৃষ্টি (১৬ তম পর্ব)
#মাইশা_জান্নাত_নূরা (লেখিকা)

ডাক্তারনী কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই চলে গিয়েছেন। কিছু ঔষধ লেখে দিয়েছিলেন যা রূপা সার্ভেন্টকে দিয়ে আনিয়ে নিয়েছে। মেহের বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে এখনও। সেইসময় রূপা এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে মেহেরের পাশে এসে বসে গ্লাসটা ওর দিকে বাড়িয়ে বললো….

—“এই পুরো দুধ টুকু খেয়ে শেষ করো দেখি।”

মেহের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে নাক ছিঁ*ট*কে বললো….

—“আমি দুধ খাই না রূপা। দুধের গন্ধ আমার সহ্য হয় না।”

—“সেসব আমি শুনতে চাই না। ডাক্তার আন্টি আমাকে কড়া ভাবে বলে গিয়েছেন এই সময় সব ধরণের পুষ্টি কর খাবার তোমায় খেতে হবে। দুধ, ডিম, ফলমূল ইত্যদি।”

—“কিন্তু রূপ!”

—“কোনো কিন্তু না। খাও বলছি।”

মেহের আর উপায় না পেয়ে রূপার থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে ৩-৪ চুমুক দিলো নিঃশ্বাস বন্ধ করে। এরপর আর না পেরে বললো….

—“আর পারবো না। প্লিজ রূপা আর জোর করো না। এবার জোর করলে নিশ্চিত ব*মি করে ফেলবো।”

রূপা ঠোঁট হালকা উল্টিয়ে বললো….
—“ঠিক আছে। করছি না আর জোর। তবে রোজ দুধ খেতে হবে তোমায়। অল্প অল্প করে খেতে খেতে অভ্যাস করতে হবে।”

—“চেষ্টা করবো।”

অতঃপর রূপা মেহেরের পাশ থেকে উঠতে নিলে মেহের রূপার হাত ধরে ওকে থামিয়ে বললো…..

—“রূপা তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে। বসো এখানেই।”

রূপা ওর ভ্রুযুগল কিন্ঞ্চিত কুঁচকে নিয়ে বললো….
—“বলো ভাবী কি বলতে চাও!”

মেহের একবার চাপা ঢোক গিলে নিয়ে বললো…
—“আমি চাই না আমার প্রেগ্ন্যাসির কথা তোমার ভাই বা বাহিরের কেউ-ও জানুক।”

—“এসব তুমি কি বলছো ভাবী..? এতো বড় খুশির একটা খবর ভাইয়াকে পর্যন্ত জানাবো না! কিন্তু কেনো? ভাইয়া জানলে তো অনেক খুশি হবে।”

—“তুমি জানোই তোমার ভাই কেমন! সে পেশায় একজন ক্রি*মি*না*ল লয়্যার তাই তার শ*ত্রু*র ও অভাব নেই। আমার প্রেগ্ন্যাসি তো আমাদের দু’জনের-ই উইক পয়েন্ট। শ*ত্রু পক্ষ সবসময় অপর পক্ষের উইক পয়েন্ট-টাই খুঁজে। তাই আমি আমার অনাগত সন্তানের ভালোর কথা চিন্তা করেই এমনটা চাচ্ছি।”

—“সেটা তো বুঝলাম। বাহিরের কাউকে জানালাম না কিন্তু ভাইয়ার থেকে লুকানোর কি আছে? সে জানলে তো আর বাহিরে গিয়ে ঢোল পি*টি*য়ে আরো ১০ জনকে জানাবে না যে তুমি প্রেগন্যান্ট! আর এমনিও কয়েকমাস গেলে তোমার শারীরিক পরিবর্তন দেখে সে এমনিও বুঝতে পারবে যে তুমি প্রেগন্যান্ট!”

—“যেতে দাও সেই কয়েকমাস। তখুনি একবারে বুঝতে পারবে না হয়! এখন কিছু বলো না।”

—“কিন্তু!”

—“কোনো কিন্তু নয় রূপা। আমার কথা তোমাকে রাখতেই হবে। বলো রাখবে না!”

রূপা মলিন কন্ঠে বললো….
—“ঠিক আছে যেমন তোমার ইচ্ছে। জানাবো না আমি ভাইয়াকেও।”

মেহের মলিন হাসলো।

রাত বলতে মধ্যরাত-ই বলা চলে। রক্তিম মাত্র বাসায় ফিরেছে। ঢুলতে ঢুলতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সে। ড্রিংকস যে করেছে প্রচুর তা ওর অবস্থা দেখে যে কেউ-ই আন্দাজ করতে পারবে। সিঁড়ির কাছে যেতে চাচ্ছে উপরে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য কিন্তু ওর শরীর ওকে সঙ্গ দিচ্ছে না৷ চোখের সামনে সবকিছু কেমন ঝাপসা লাগছে রক্তিমের। ধপ করে ড্রয়িংরুমের মেঝের উপরেই বসে পড়লো রক্তিম। বসে বসেই ঝিমোচ্ছে সে। আর বলছে…..

—“যেই পেশা আমার বাবাকে কেড়ে নিয়েছে ২০ বছর আগেই আজ সেই পেশাই বেছে নিয়েছে আমার স্ত্রী! এতো সৎ থেকে কি লাভ! কোনো লাভ নেই। আমার বাবা তো ছিলেন একজন আদর্শবাদী মানুষ। আইনের পথে চলতেন। আইন সবার জন্য সমান এমনটা মানতেন। ধনী জন্য অ*ন্যায় করে পার পাবে গরীব জন্য ন্যয়ের আশা করতে পারবে না কখনও এমনটা ভাবতেন না। কিন্তু শেষ রক্ষা কি হয়েছিলো তার? উনি কি বাঁচতে পেরেছিলেন? পারেন নি। উনি তো মা*রা গেলেন। দেশকে ভালোবেসে দশকে ন্যয় পাইতে দিতে গিয়ে উনাকে খু*ন হতে হলো নৃ*শং*স ভাবে। আর তার বউ-বাচ্চারা পরে রইলো পথের মাঝে অসহায়ের মতল। বাবা তো একবারও ভাবেন নি তার অবর্তমানে তার পরিবারের কী হবে? তার অবুঝ সন্তানদের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে! আর যাদের ন্যয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য লড়েছিলেন তিনি
তারা সবাই তো সেদিন ইঁদুরের মতো লুকিয়ে ছিলো নিজেদের গ*র্তে। একটা কেউ এগিয়ে আসে নি সেদিন আমার বাবাকে বাঁচাতে। তাই আমি সৎ পথে ন্যয়ের জন্য লড়াই করার এই পন্থাকে ঘৃ*ণা করি। আমি আমার নিজের পরিবারের কথা ভেবে আইনি পেশার অন্ধকার দিকটা বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে এখন হতে হলো ‘অমানুষ’….!”

এই বলে শব্দ করে হেসে উঠলো রক্তিম। ওর দু’চোখ নোনাজলে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে চোখের পলক একবার ফেললেই জমে থাকা সবটুকু পানি ওর গাল বেয়ে নিচে পড়বে। রক্তিম হাসি থামিয়ে বললো…..

—“আরে এই সমাজই তো ২০ বছর আগে আমার বাবার লা*শ দা*ফ*ন করার সময় বলেছিলো, সবার আগে নিজের ও নিজের পরিবারের নিরাপত্তা এবং ভালোর কথা চিন্তা করতে হয় তারপর দেশ ও দশের কথা। কিন্তু এখন? এখন এই সমাজ আমাকে ‘অমানুষ’ ‘স্বা*র্থ*পর’ ‘জা*নো**” বলে গা*লি-গা*লা*জ করছে কেনো? কেনো আমার বউ আমাকে ভালোবাসে না? কেনো সে আমাকে এতো ঘৃ*ণা করে বলে যে, সে আমার বুকে গু*লি চালাতে গেলে ওর বুক কাঁ*প*বে না একটুও! কেনো?”

রক্তিমের দু’চোখ আর বাঁধ মানতে পারলো না। ঝর ঝর করে কয়েকফোটা নোনাজল ঝরে পড়লো। রক্তিম তা মুছলো না। শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে মেঝের উপরেই শুয়ে পড়লো রক্তিম। দু’চোখ বুঁজে বললো…..

—“শা*লা*র এই দুই-দিনের জন্য আসা দুনিয়াটার আজব রূপ দেখতে দেখতেই সময়গুলো ফুরিয়ে যাচ্ছে। নয়তো পরিবারকে বাঁচালে সমাজের চোখে অ*প*রা*ধী হতে হতো না আর না সমাজকে বাঁচাতে গিয়ে আমার বাবাকে তার পরিবারের কাছে থেকে স্বা*র্থ*পর পদবী নিতে হতো না।”

এই বলে রক্তিম ওর কান্নাভেজা কন্ঠে সুর তুললো……

humne jugnu jugnu kar ke,
tere milne ki deep Jalaye hai (2)

Akhiyon me moti bhar bhar ke, tere hizar
mein haath uthaye hai

Tere naam ke harf ki tasbeeh ko, saanson
Ke gale ka haar kiya,
duniya bhooli aur sirf tujhe
haan sirf tujhe hi pyar kiya

Tumhe hum se badh kar duniya, duniya
Tumhe hum se badh kar (2)

Humko tumse badh kar koi jaan se pyara
Na hoga

tum jeet gaye ham haray
ham haray aur tum jetay (2)

tum jetay ho lekin ham sa koi
hara na hoga

Tu bol kaffara, kaffara
bol kaffara (2)

kaffara bol Wo yaara,
wo yaara bol kaffara kya hoga

Mere dil ki dil se tauba,
dil se tauba mere Dil ki
Dil ki tauba ae dil ab
pyar dobara na hoga

Tu bol kaffara, kaffara
bol kaffara (2)
kaffara bol Wo yaara,
wo yaara bol kaffara kya hoga

tujhe pyar kiya to tu hi bata
hamnay kya koi jurm kiya
aur jurm kiya hai to bhi bata
tere jurm k jurm ki kya hai saza

tum jeet gaye ham haray
ham haray aur tum jetay (2)

tum jetay ho lekin ham sa koi
hara na hoga

Tu bol kaffara, kaffara
bol kaffara (2)

kaffara bol Wo yaara,
wo yaara bol kaffara kya hoga

রক্তিম চুপ করে যায়। ড্রয়িংরুমের মেঝেতেই পড়ে থাকে রক্তিম। একা-একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে।

ভোর বেলা….
মেহেরের ঘুম ভেঙে যায় আজানের শব্দে। মেহের শোয়া থেকে উঠে বসলো। বেডসাইড টেবিলের উপর থাকা ল্যম্পবাতি জ্বালালো। রুমটা পুরো অন্ধকার কাটিয়ে হালকা আলোকিত হলো। মেহের পুরো রুমে একবার চোখ বুলালো। যে অবস্থায় রেখে মেহের ঘুমিয়ে গিয়েছিলো এখনও সেই অবস্থাতেই আছে। তারমানে রক্তিম রুমে আসে নি। মেহের উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে ওড়নাটা দিয়ে ভালো ভাবে নিজেকে ঢেকে নিয়ে ফজরের ৪ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলো। অতঃপর জায়নামাজটা জায়গা মতো রেখে রুম থেকে বের হলো সে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই মেহের লক্ষ্য করলো ড্রয়িংরুমের মেঝের উপর গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে রক্তিম। মেহেরের ভ্রু যুগল কিন্ঞ্চিত কুঁচকে এলো। চট জলদী নিচে এসে রক্তিমের পাশে হাঁটু ভাঁজ করে বসে ওকে ডাকলো….

—“এই যে শুনছেন..? আপনি এখানে এভাবে শুয়ে আছেন কেনো? এই যে? আপনি কি শুনতে পারছেন না?”

এতোবার ডাকার পরেও রক্তিমের থেকে কোনো সাড়া মেহের পেলো না। পরক্ষণেই মেহের রক্তিমের মুখের উপর কিছুটা ঝুঁকতেই ম*দে*র বিশ্রী গন্ধ রক্তিমের নিঃশ্বাসের সাথে মেহেরের নাকে এসে লাগতেই মেহের রক্তিমের থেকে দু’হাত খানেক সরে এসে একহাতে পেট ও অন্যহাতে মুখ চেপে ধরলো নিজের। এই বি*শ্রী গ*ন্ধে মেহেরের ভিতরটা যেনো উ*ল্টে আসতে নিয়েছিলো। মেহের কিছুসময় স্থির হয়ে বসে নিজেকে সামলে নিয়ে চাপা রাগে বললো….

—“নে*শা করে ফিরেছে বাড়ি। তাই তো এমন হয়ে পরে আছে এখানে। অস*ভ্য লোক কোথাকার।”

এই বলে মেহের উঠে রান্নাঘরে গিয়ে ৫টা লেবুর রস বানিয়ে আবারও রক্তিমের কাছে এসে ওকে নিজের বুকের উপর আধশোয়া ভাবে বসিয়ে ওর মুখ খুলিয়ে বাটিতে থাকা সবটুকু লেবুর রস ওর মুখের ভিতর ঢেলে দিলো। কয়েক সেকেন্ড পেরোতেই রক্তিম নিজের শরীর মাখিয়ে বমি করে দিলো। রক্তিম পুরোপুরি নাজেহাল হয়ে পরে আছে। হুঁশ নেই৷ মেহের পুরো হা হয়ে গিয়েছে রক্তিমের এহেনু কাজে। একহাতে নিজের কপাল চা*প*ড়ে বললো….

—“কি রাজ কপাল আমার! বিয়ের আগে স্বপ্ন দেখতাম জামাই আমার সব কাজ করে দিবে এখন প্রেগন্যান্ট অবস্থায় আমাকেই জামাইয়ের এসব পরিষ্কার করতে হবে।”

#চলবে_ইনশাআল্লাহ…….