#প্রেমপ্রবাহে_বিষবৃষ্টি (৩য় পর্ব)
#মাইশা_জান্নাত_নূরা (লেখিকা)
—“আমাকে চিনো না? আমি তোমার একজন রায়বাঘিনী ননদীনি রূপা, ভাবী।”
রূপার কথা শুনে মেহের হালকা হাসি দিয়ে বললো…
—“আসলে বিয়েটা হুট করে হয়ে গিয়েছিলো আর বিয়েতে তো তুমি বা এ বাড়ির কেউ-ই উপস্থিত ছিলে না তাই চিনতে পারি নি। কিছু মনে করো না।”
—“উহুহ কিছুই মনে করি নি আমি। আর এ বাড়ির সদস্য বলতে আমি, ভাইয়া আর আম্মাই থাকি। বাবা মা*রা যাওয়ার পর পরই আম্মা দীর্ঘ ১০ বছর হলো প্য*রালাই*স*ড হয়ে বিছানায় পরে আছেন। আম্মার দেখাশোনা আমিই করি। তাই আম্মাকে একলা রেখে আমিও ভাইয়ার সাথে যেতে পারি নি তোমাদের বিয়েতে এটেন্ড করতে।”
মেহের কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই পিছন থেকে রক্তিম বললো….
—“সকাল সকাল এতো প্যঁচাল জুড়ে বসলি কেনো তুই রূপ! তোর কি কাজের অভাব পরেছে ভিষণ? হলে বল, আমার কিছু জুতো পলিস করার অভাবে বাহিরের র্যকে পরে আছে। সেগুলো পলিস করার দায়িত্ব তোকে দিতাম।”
রূপা ভেং*চি কেটে বললো….
—“তোর জুতো তুই পলিস কর। নাস্তা রেডি করে রেখেছি। আম্মা সুস্থ থাকলে নিজ হাতে ভাবীকে খাওয়ায় দিতেন। তাই আমিই ভাবীকে খাওয়াবো জন্য ডাকতে এসেছিলাম।”
রক্তিম ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে বললো….
—“তোর কি মনে হয় আমি তোর ভাবীকে সারারাত কিছু না খাইয়ে রেখেছিলাম! যা খাইয়েছি তাতে এতো সকাল সকাল বাড়তি খাবার খাওয়ার জন্য ক্ষুধা লেগেছে বলে তো মনে হয় না।”
রূপা রক্তিমের কথার ভাঁজ বুঝতে পারলো না। চোখ ছোট ছোট করে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে আছে সে। কয়েক সেকেন্ড সময় লেগে যায় মেহেরের ও রক্তিমের কথার ভাঁজ বুঝে উঠতে। তৎক্ষনাৎ মেহের রুমের বাহিরে এসে দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে দিলো। রূপা চমকালো। প্রশ্ন করলো….
—“এভাবে দরজা বন্ধ করলে কেনো ভাবী! ভাইয়া কি বললো সেটাই তো বুঝলাম না। দাঁড়াও তুমি জিজ্ঞেস করছি আমি।”
মেহের জোর পূর্বক হেসে রূপার হাত ধরে টানতে টানতে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতে বললো….
—“আরে ছাড়ো তুমি ওনার কথা। কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে না। চলো আমাকে নিচে নিয়ে যাবে। খাবার খাইয়ে দিবে বললে যে! খাবো আমি। ক্ষুধা লেগেছে আমার।”
রূপা আর কিছু বললো না।
💥
ড্রয়িংরুমে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে গভীর মনোযোগের সহিত খবরের কাগজ পড়ছিলেন জহির। মাহফুজা একটা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে জহিরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে তার দিকে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিলেন। জহির কাপটা হাতে নিয়ে একবার চুমুক দিতেই তার মুখের এক্সপ্রেশন পরিবর্তন হয়ে গেলো। চোখ-মুখ কেমন কুঁচকে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কাপে থাকা সম্পূর্ণ চা জহির মাহফুজার ছুঁ*ড়ে মা*র*লে*ন। ফুটন্ত গরম চা শরীরের জায়গায় জায়গায় এসে পড়ায় দাঁতে দাঁত চেপে পো*ড়া – জ্ব*লা*র য*ন্ত্র*ণা সহ্য করে নিলেন মাহফুজা। অবশ্য এমনটা আজ তার সাথে ১ম বার হয় নি। দীর্ঘ ৩৫ বছরের এই সংসার জীবনে অগুণিত বার এমন অনেক য*ন্ত্র*ণা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যেতে হয়েছে তাকে। জহির তার হাত থাকা খালি কাপটা মেঝের উপর ছুঁ*ড়ে মা*র*লো। সঙ্গে সঙ্গে কাপটা ভে*ঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। জহির খবরের কাগজটা সোফার উপর রেখে উঠে দাঁড়িয়ে মাহফুজার মাথার পিছনের চুলগুলো শক্ত ভাবে মুষ্ঠিবদ্ধ করে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে রাগে হিসহিসিয়ে বললেন…
—“বুড়ো হয়ে গেলি কাজ করতে করতে এখনও আমার জন্য এক কাপ চা পারফেক্ট ভাবে বানিয়ে দিতে পারলি না। এই বুড়ো বয়সেও মনটা কোনো জুয়ান নাগরের কাছে বিলিয়ে রেখে এসেছিস যে চা’য়ে চিনির পরিবর্তে লবন মিশিয়েছিস যে সে খেয়াল তোর নেই! বল!”
মাহফুজা দরুণ য*ন্ত্র*ণা কেমন কুঁকড়ে গিয়েছেন। কাঁতর কন্ঠে বললেন…..
—“ভু*ল হয়ে গিয়েছে স্বামী। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন। আমি এরপর থেকে আরো সতর্ক থাকবো।”
জহির মাহফুজার চুল ছেড়ে দিয়ে তাকে ধা*ক্কা প্রয়োগ করে নিজের কাছে থেকে সরিয়ে দিলেন। মাহফুজা ধা*ক্কা খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে টাইলসের টি-টেবিলের পাশে পড়ে গেলেন। কপালের এক পার্শে আ*ঘা*ত পেয়েছেন। হালকা ক্ষ*ত তৈরি হয়েছে সেখানে। টপটপ করে র*ক্ত পড়তে শুরু হয়েছে। জহির হ*ন*হ*নি*য়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গলেন। মাহফুজা ওভাবেই মাথা নুইয়ে বসে রইলেন। অঝোর ধারায় তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রুরা ঝরে পড়ছে।
সেইসময় মূল দরজা ভেদ করে শিশ বাজাতে বাজাতে ভিতরে প্রবেশ করলো জেভিয়ান। পরনে তার ক্রিম কালার একটা সিল্কের শার্ট, ব্লাক প্যন্ট, ব্লাক সু, ব্লাক ব্রান্ডের ওয়াচ রয়েছে। একহাত দিয়ে কাঁধের উপর কোর্টটা ধরে আছে জেভিয়ান। ড্রয়িংরুমে আসতেই ড্রয়িংরুমে অবস্থা কিছু বেহাল দেখে ও নিজের মা’কে বসে বসে হু হু করে কান্না করতে দেখে জেভিয়ান বললো…..
—“বাবাজানের সবথেকে বড় ভুল ছিলো নিজের গুরুজনদের কথা শুনে তোমার মতো একজন মহিলাকে বিয়া করা বুঝলে! তোমাকে তো মা সম্বোধন করে ডাকতেও আমার লজ্জা করে। এই উন্নত, মর্যাদাশীল সমাজে থাকার, চলাফেরা করার কোনো যোগ্যতাই তোমার মাঝে নেই। তবুও কেনো যে এখনও বাবাজান তোমার সাথে বিয়ের সম্পর্কটা রেখেছেন তা আমি বুঝে উঠতে পারি না।”
এই বলে জেভিয়ান গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো। মাহফুজা নিজের চোখের পানি মুছে নিলেন। এতোসময় তিনি কেবল শারিরীক য*ন্ত্র*ণায় কান্না করেন নি। কান্না করেছেন স্বামীর অ*ব*হে*লা, অপ*মা*নে*র কারণে মনে সৃষ্টি হওয়া অসুখের য*ন্ত্র*ণায়। এখন নিজের পেটে ধরা, মৃ*ত্যু য*ন্ত্র*ণা সহ্য করে জন্ম দেওয়া একমাত্র ছেলে জেভিয়ানের মুখ থকে এমন তু*চ্ছ-তা*চ্ছ্যি*ল মূলক কথাগুলো শুনে মাহফুজার চোখের পানিটুকু যেনো শুকিয়ে গেলো। আর কান্না করার কোনো মানে হয় না এখানে। মানুষের মন কান্নার পর হালকা তখনই হয় যখন ৪-৫ জন মানুষের সাথে একত্রে বসে নিজের মনের ভিতরে জমে থাকা সকল দুঃখ গুলো নি*ঙ*রে ফেলে দিতে পারে। কিন্তু এ বাড়িতে থাকাকালীন তা না এতো বছরেও সম্ভব হয়েছে আর না ভবিষ্যতে হবে। এ বাড়িতে বর্তমানে মাহফুজা, মাহফুজার স্বামী জহির রায়হান চৌধুরী, বড় ছেলে জেভিয়ান-ই থাকছে। মেহেরুন্নিসা মাহফুজা আর জহিরের ছোট মেয়ে। তাদের মেজো মেয়ে জুবাইরা চৌধুরী জবা মা*রা গিয়েছে বছর ৩ হবে। স্বাভাবিক মৃ*ত্যু হয় নি জবার। আত্ম*হ*ত্যা করেছিলো জবা। নিজের বাবার বাড়ি, স্বামীর বাড়ি ২পক্ষ থেকে পাওয়া শারিরীক ও মানসিক য*ন্ত্র*ণা সহ্য করতে না পেরেই মৃ*ত্যু*কে বেছে নিয়েছিলো জবা। জবার মৃ*ত্যুর শো*কে*র ছায়া এ বাড়ি থেকে উঠে গিয়েছিলো ওর লা*শ কবরে দা*ফ*ন করার পরপরই। কিন্তু মাহফুজার চোখ আজও ভিজে উঠে জবার কথা স্মরণ হলে। জবাকেও ব*লি হতে হয়েছিলো ওর বাবার করা পা*পে*র ফলে তাকে শা*স্তি*র হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে। জবার মৃ*ত্যু*র র*হ*স্য ও প্রতিনিয়ত মাহফুজার সাথে করা জহির, জেভিয়ানের শারিরীক ও মানসিক অ*ত্যা*চা*র সম্পর্কে মেহের কিছুই জানে না। অনেক ছোট্ট বেলাতেই জহির মেহেরকে সবকিছু থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। বডিং স্কুল-কলেজে থেকেই ওর পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন। মেহেরের প্রতি জহিরের খানিকটা দূর্বলতা রয়েছে। জবার প্রতি জহির যতোটা স্ট্রিক্ট ছিলেন মেহেরের প্রতি তার কিন্ঞ্চিত পরিমাণ হতে পারেন নি। এ নিয়ে জেভিয়ান কখনও কথা বলতে গেলে ওকে ধ*ম*কি*য়ে চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন জহির। মেহের যে ‘ল’ নিয়ে পড়াশোনা করে বড় উকিল হতে চায় সে সম্পর্কে জহির অবগত হয়েছেন বহু আগেই। মেয়ের ইচ্ছে পূরণের পথেই তিনি আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আকস্মিক ভাবে জেভিয়ান এমন একটা অ*প*কর্ম করে বসেছিলো যে জহির নিজ বংশের সম্মানের কথা চিন্তা করেই জেভিয়ানকে নির্দোষ বানাতে ওর হয়ে কেস লড়াতে রক্তিমের সাথে মেহেরের বিয়ে আকস্মিক ভাবেই দিয়ে দেন। মেহের নিজের বিয়ের কথা জানতে পেরে প্রথমত নানান ধরনের প্রশ্ন করেছিলো ঠিকই কিন্তু জহির মেহেরকে অনেক বুঝিয়ে ওকে তার সিদ্ধান্ত কোনো প্রশ্ন ছাড়া মেনে নিতে বাধ্য করান। অতঃপর মেহেরের বিবাহ কার্য সম্পন্ন হয় রক্তিমের সাথে।
💥
সকালের নাস্তা সেরে মেহের রূপার সাথে ওর শ্বাশুড়ি মা সুজানা খানের রুমে আসলো তার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ এর উদ্দেশ্যে। সুজানা খানের অবস্থা দেখে মেহেরের ভিতর থেকে একবার দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। রূপা স্বাভাবিক ভাবেই সুজানার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো….
—“আম্মা, দেখো কাকে নিয়ে এসেছি! তোমার একমাত্র ছেলের বউ গো। যেমন মিষ্টি দেখতে সে তেমনই মিষ্টি ওর নাম জানো! মেহেরুন্নিসা চৌধুরী, আদর করে সবাই ওকে মেহের বলে ডাকে।”
সুজানা চোখ ঘুরিয়ে মেহেরের দিকে তাকালেন। মুখ দিয়ে কিছু বলার অনেক চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না। প্যরালাইসড এর কারণে মুখটাও হালকা বেঁকে গিয়েছে সুজানার। ফলস্বরূপ তার বলা প্রতিটি কথাই অস্পষ্ট শোনা যায়। কথা বলার চেষ্টা যখন অনেক বাড়িয়ে দেন তিনি তখন ঠোঁটের একপাশ দিয়ে থু*থু বেড়িয়ে আসে। রূপা স্বযত্নে টিস্যুর সাহায্যে সুজানার থু*থু গুলো মুছে দিতে দিতে বললো….
—“আম্মা, তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠো। তোমাকে এভাবে দেখতে যে আমার আর ভালো লাগে না। ভিষণ ক*ষ্ট হয় জানো!”
মেহের রূপার কাঁধে হাত রেখে বললো….
—“মন খারাপ করো না রূপা। আল্লাহ আছেন। তিনি নিশ্চয়ই আন্টির প্রতি সহায় হবেন। আর আমি তো আছি এখন তোমার সাথে। আমরা দু’জনে মিলে আন্টির সেবা করবো। দেখবে আন্টির সব সমস্যা এবার পালাতে বাধ্য হবে।”
সুজানার দু’চোখের কোণে নোনাজল জমে গিয়েছে। তিনি তো মেহেরকে দেখে বা ওর কথা শুনে নিজের মনের ভাব গুলো ক্লিয়ারলি প্রকাশ করতে পারছেন না। তাই তার এই চোখের পানি সুখের কিনা দুঃখের তা বোঝা মুশকিল।
💥
অনেক সময় ধরে রক্তিম ফ্রেশ হয়ে রুমের মেঝেতে পায়চারী করছে আর একটু পর পর দরজার দিকে লক্ষ্য করছে। ফর্সা সুঠাম দেহে ধূসর রঙা টি-শার্ট ও কালো রঙা ট্রাউজারটাতে দারুণ মানিয়েছে রক্তিমকে। পরপরই বি*র*ক্তি*র স্বরে রক্তিম বললো…..
—“বিয়ের আগে ভাবতাম বিয়ের পর বউ আমায় গোসলের সময় টাওয়াল বাড়িয়ে দিবে। গোসল সেরে বের হওয়ার পর বিছানার উপর আয়রণ করা জামা-কাপড় রেডি করা দেখবো। এরপর আদর করে নাস্তা করার জন্য ডাকবে। কিন্তু নাহ। এসব স্বপ্ন আমার স্বপ্নই রয়ে গেলো।”
রক্তিমের কথা শেষ হতে না হতেই মেহের রুমে প্রবেশ করে আলমারী খুলে নিজের হাতব্যগটা বের করলো। অতঃপর ফোন, চার্জার আরো প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ব্যগে ঢুকাতে শুরু করলো। রক্তিম যে এই ঘরেই উপস্থিত আছে সেদিকে মেহেরের কোনো ভ্রুক্ষেপ-ই নেই যেনো। রক্তিম বললো…..
—“কোথায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে?”
মেহের ব্যগটা কাঁধে নিয়ে দরজার দিকে অগ্রসর হতে হতে বললো….
—“কোথায় যাবো, কি করবো সেসবের কৈফিয়ত আপনাকে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না আমি।”
রক্তিম মেহেরের হাত ধরে হ্য*চ*কা টান দিয়ে ওকে নিজের বুকে এনে ফেললো। রক্তিমের আকস্মিক এমন কাজে মেহের কিছুটা ভ*য় পেয়ে যায়। দু’চোখ বুঁজে নিয়েছে সে। রক্তিম দাঁতে দাঁত চেপে বললো…..
—“বিবাহিত তুমি। তোমার স্বামী এখনও বেঁচে আছে। আর বর্তমানে তোমার গার্জিয়ান তোমার স্বামী অর্থাৎ এই রক্তিম রেজওয়ান খানের পারমিশন ব্যতিত ঘরের বাহিরে এক পা’ও রাখতে পারবে না তুমি বুঝলে!”
মেহের চোখ মেলে তাকালো রক্তিমের দিকে। মেহেরের দু’চোখে রাগ ও ঘৃ*ণা সমান ভাবে বিরাজ করছে। মেহের বললো…..
—“কিসের স্বামী! আমি গতকালই আপনাকে বলেছি না আমি আপনাকে আমার স্বামী হিসেবে মানি আর না আপনাকে আমার উপর স্ত্রীর অধিকার খাটা…..!”
মেহের পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই রক্তিম মেহেরের হাত ছেড়ে ওর কমোর জড়িয়ে ধরলো। মেহের নিজেকে ছাড়ানোর জন্য কেবল ছটফট করছে। রক্তিম মেহেরের দিকে কিছুটা ঝুঁকলো, মেহেরও ঝুঁকলো। রক্তিম বাঁকা হেসে বললো…..
—“তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছো আমি তোমার উপর স্বামীর আসল অধিকার ইতিমধ্যেই খাঁটিয়ে ফেলেছি। সেটাও শুধু একবার না পরপর ২বার। তোমার এই শরীরের প্রতিটি জায়গায় আমার ঠোঁটের স্ট্যম্প বসানো রয়েছে।”
মেহের রাগে হিসহিসিয়ে বললো…..
—“পুরুষ হয়ে জন্ম নিয়েছেন জন্য নিজেকে তো কি না কি ভেবে বসে থাকেন সবসময়। আসলে কি জানেন! পুরুষ হয়ে জন্ম নিলেই সব পুরুষ সুপুরুষ হতে পারে না। কিছু পুরুষ কা*পুরুষ ও হয়। আর সেই কা*পুরুষের সার্টিফিকেট একজন নারীই পারে একজন পুরুষের হাতে তুলে দিতে। আমিও আপনার হাতে তুলে দিলাম। আপনাকে কা*পুরুষের তালিকায় শীর্ষ স্থানে বসালাম বুঝলেন!”
—“এসব কা*পুরুষ-সুপুরুষ নামে আমার কিছুই যায় আসে না সুইটহার্ট। জীবনে বহু ব*দ নামে নিজেকে সম্বোধিত হতে দেখেছি।”
—“আপনি শুধু কা*পুরুষই নন আপনি একজন ভ*ন্ড পুরুষ ও। ছাড়ুন আমায়।”
রক্তিমের হাতের বাঁধন ঢিলে হলো। মেহের নিজেকে ছাড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। রক্তিম মেহেরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বললো…..
—“শা*লা*র জীবনে কেসে জিততে গিয়ে বহু মানুষের মুখে নিজেকে শ*য়*তা*নে*র নাতী বলেও সম্বোধিত হতে শুনেছি। তখন এমন নাম শুনে কেবল হেসেছিলাম৷ কিন্তু আজ নিজের বউয়ের মুখে নিজেকে ভ*ন্ড পুরুষ নামে সম্বোধিত হতে দেখে অন্তরে এতো জ্বালা অনুভব হচ্ছে কেন…?”
#চলবে_ইনশাআল্লাহ…….