#প্রেমময়ী_সন্ধ্যা
#পর্ব_৭
#তাসফিয়াহ_আনজুম
আরো কিছু সময় বাগানে ঘুরাঘুরি করে ঘরে গেল ঝুমুর। শায়লা বেগম দুপুরের রান্নার আয়োজন করছিলেন। ঘরের অন্য সব কাজ করার জন্য হেল্পিংহ্যান্ড থাকলেও রান্নাটা তাকেই করতে হয়। বাবা ছেলে অন্য কারোর হাতে রান্নাই খায় না। শায়লা বেগমের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কোন একটা কারণে সে বেশ খুশি। ঝুমুর কে দেখতে পেয়েই ফুরফুরে মেজাজে বলে উঠে, জানিস ওয়ালিদ ফোন করেছিল। বলেছে ও আর সামিয়া বাংলাদেশ আসছে। চার দিন পর ওদের ফ্লাইট। বিয়ের সময় তো টিকেট পায়নি তাই আসতেই পারলো না। আর বলেছে সামিয়ার প্রেগনেন্সির পুরোটা সময় এখানেই থাকবে। ভাবতে পারছিস কত ভালো হবে! আমার তো এখানে তোদের একা রেখে যেতেই মন চাইছিল না।ওহ ভালো হয়েছে এখন আমাকে কোথাও যেতে হবে না।
ওরা আসবে শুনে ঝুমুর ও বেশ খুশি হলো। ওহ তাই! তাহলে তো ভালোই হবে। আমি তো ভাইয়া আর আপুকে এখনো দেখলাম না।
আচ্ছা এখন ঘরে গিয়ে গোসল করে নে। ওয়াহিদ আর ওর বাবা একটু পরেই চলে আসবে ,বলে ঝুমুরকে ঘরে পাঠিয়ে দেয় শায়লা বেগম।
আচ্ছা।
ঝুমুর ঘরে গিয়ে দেখলে ঘরের অবস্থা নাজেহাল।খাটের উপর ভেজা তোয়ালে,সোফার উপর টি শার্ট সারাঘর জুড়ে ঘরের সব জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো। দেখেই রাগ রাগলো তার।কি আশ্চর্য! এত বড় লোকের এই কাজকারবার! ভাবা যায়?
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে পুরো ঘর পরিষ্কার করলো সে।রুম পরিষ্কার শেষ করে গোসল করতে ঢুকে পড়লো।
লাঞ্চ আওয়ারে ঘেমে ভিজে বাসায় আসলো ওয়াহিদ। হঠাৎ ঘরে ঢুকে মনে হলো হয়তো ভুল করে অন্য রুমে ঢুকে পড়েছে। এত সাজানো গোছানো রুমটা! না এটাই তার রুম। এখন তো তার মিষ্টি একখানা বউ আছে সেই নিশ্চয়ই করেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘামে ভেজা শার্টটা গা থেকে খুলে আধোয়া কাপড়ের বাস্কেটে রেখে দিল।
ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখল আধভেজা একটা জামা পড়ে মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঝুমুর। শীতের ভোরে ঘাসের উপর শিশির পরে যেমন স্নিগ্ধ দেখায়, ঝুমুরকে ঠিক তেমন স্নিগ্ধ দেখাচ্ছিল।
শার্ট বিহীন ওয়াহিদকে দেখেই পিলে চমকে উঠলো ঝুমুর। লজ্জায় অন্যদিকে ফিরে তাকালো ঝুমুর।আপনি! আপনি কখন আসলেন?
এই তো একটু আগেই।
ঝুমুর কিছু না বলে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল হাতের ভেজা কাপড় গুলো শুকাতে দেয়ার জন্য। জামা কাপড় ছড়িয়ে দিয়ে ফিরে এসে দেখলো ওয়াহিদ ঠিক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ঝুমুর কিছু বলল না। ড্রেসিং টেবিলের সামনে এগিয়ে গিয়ে চুল মুছতে লাগলো। চুল বেশ লম্বা হওয়ায় ঠিকঠাকমতো মুছতে পারছিল না।
হঠাৎ ঝুমুর তার ঠান্ডা হাতে একটা উষ্ণ হাতের স্পর্শ পেল। তাকিয়ে দেখলো ওয়াহিদ তার হাতের তোয়ালে টা নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। আলতো হাতে মুছে দিতে লাগলো ঝুমুরের চুল। এত সুন্দর করে চুল মুছে দিচ্ছিলো যে ঝুমুর আশ্চর্য হয়ে কথা বলাই ভুলে গেল।
দেখো তুমি তো ঠিকঠাক মতো চুল মুছতেই পারো না। অর্ধেক জামা ভিজিয়ে ফেলেছ চুলের পানিতে। পরে অসুস্থ হয়ে গেলে তো আবার আমার শাশুড়ি মা বলবে আমি সারাদিন কাজ করিয়ে করিয়ে তোমাকে অসুস্থ করে ফেলেছি। তা কিন্তু হচ্ছে না! তুমি যা পারবে না তা করার জন্য আমি আছি।
দেখুন আমি করে নিতে পারব আপনি যান।
কেন? তুমি কি ভাবছো আমি এবার দায়িত্ব পালন করছি? শোনো, “তুমি আমার দায়িত্ব নও, তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী”।ঝুমুরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোমরে আলতো হাতে স্পর্শ করে বলে উঠে ওয়াহিদ।কোমরে উষ্ণ হাতের স্পর্শে কিছুটা সরে আসতে চাইলো ঝুমুর। ওয়াহিদ এবার কিছুটা জোরে চেপে ধরলো ঝুমুরের কোমরের একপাশ। আবারো শীতল কন্ঠে বলে, তুমি আমার থেকে এক পা পেছনে গেলে আমি তোমার দিকে দুই পা বাড়িয়ে দেব। তাই আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চিন্তাও করো না।
আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। নিচে আম্মু আপনার জন্য অপেক্ষা করছিল।
আচ্ছা! শুধু আম্মু অপেক্ষা করছিল? আর কেউ করেনি?
ঝুমুর তাকালো ওয়াহিদের দিকে,”কেন আর কারো থেকে অপেক্ষা করা আশা করেছিলেন বুঝি?”
আশা করেছিলাম কিনা জানিনা। কিন্তু মনে তো হচ্ছে আরো একজন ও অপেক্ষা করেছিলো আমার জন্য।
“কে?”প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে জানতে চাইলো ঝুমুর।
“আমার বউ।”
ঝুমুর কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
________
খাবার টেবিলে বসে আজ ঝুমুরের বেশ ভালই লাগছে। শায়লা বেগম আর শাকিল সাহেব দু’জনেই চমৎকার মানুষ। তাদেরকে ভালো না লেগে থাকাই সম্ভব না। ঝুমুরকে তারা নিজের মেয়ের মতো আপন করে নিয়েছে। খাওয়ার এক শাকিল সাহেব ওয়াহিদ কে উদ্দেশ্য করে বলে, তুমি তো জানোই কয়েকদিন পর ওয়ালিদ আর সামিয়া আসছে।ওরা যেহেতু আসছে তাই ভাবলাম রিসিপশনের ডেটটা আরেকটু পিছিয়ে দেই। আরেকটা কথা, সামিয়া আসছে শুনে রিদিতা নাকি ওর সাথে দেখা করতে চাইছে। এখন যেহেতু সামিয়া কোথাও যেতে পারবে না,তাই ভাবলাম রিদিতাকেই এখানে নিয়ে আসি। কিছুদিন বোনের সাথে থাকলে ওর ও ভালো লাগবে। আজ বিকেলেই আসার কথা আছে।
ওহ ভালোই তো।
________
বিকালে একটা উপন্যাসের বই হাতে নিয়ে খাটে বসেছিল ঝুমুর। পড়ছে বলা যায় না,কারন হাতে নিয়েই শুধু বসে ছিল ভেতরের লেখা গুলোতে আর চোখ বুলানো হয়নি। মন যেন অন্য জগতে। এমন সময় নিচ থেকে শায়লা বেগমের ডাক শোনা গেল। হাতের বইটা বেড সাইড টেবিলে রেখে নিচে নেমে গেল।গিয়ে দেখলো জিন্স টপস পড়া বেশ সুন্দর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ড্রয়িং রুমে।
ঝুমুর কে নিচে আসতে দেখে শয়ালা বেগম এগিয়ে গিয়ে বলল, “ঝুমুর ও হচ্ছে সামিয়ার বোন রিদিতা।”
ঝুমুর কিছু বলার আগেই রিদিতা বলে উঠলো, তুমি ওয়াহিদ ভাইয়ার বউ?ওয়াও!কত্তো কিউট তুমি!
ঝুমুর বেশ লজ্জা পেয়ে গেল রিদিতার কথায়। ঝুমুর রিদিতার সেসব কথায় পাত্তা না দিয়ে জিজ্ঞেস করল,”কেমন আছো তুমি আপু?”
এইতো ভালো।তা তোমার কি অবস্থা নয়া পত্নী?রিদিতার কন্ঠে দুষ্টুমির আভাস। ওদের কথার মাঝ পথে থামিয়ে দিলো শায়লা বেগম,”আচ্ছা ঝুমুর তোরা পরে কথা বলিস। রিদিতা মা এখন একটু রেস্ট করে নাও। অনেকখানি পথ জার্নি করে এসেছো।”
_____
আজ ওয়াহিদের ফিরতে রতে বেশ রাত হবে। তাই সবাই রাতের খাওয়া দাওয়া করে নিল সময়মতো।খাওয়া দাওয়ার পর রিদিতা ঝুমুরের রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিল।রিদিতা এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছে। রিদিতা বেশ হাসিখুশি, প্রাণবন্ত একটা মেয়ে।সবার সাথে খুব সহজেই মিশে যায়। বাবার সাথে ঢাকায় নিজেদের বাড়িতেই থাকা হয়। পরিবারের মানুষ বলতে এখন শুধু বাবা আর সে।আট-নয় বছর আগে ক্যান্সারে রিদিতার মা মারা যায়, আর তারপর থেকে মেয়েদের একা হাতে মানুষ করছে ওদের বাবা।
আচ্ছা ঝুমুর তোমাদের কি লাভ ম্যারেজ? বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে ঝুমুরের দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল রিদিতা।
‘না।’ স্বাভাবিক ভাবেই বলল ঝুমুর।
ওহ। আচ্ছা হানিমুনে কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?
এবার বেশ লজ্জা পেয়ে গেল ঝুমুর, হানিমুনে তো যাইনি।
যাওনি! কিন্তু কেন?
এমনিই।
ওহ। আচ্ছা ওয়াহিদ ভাইয়ার বার্থডের কি প্ল্যান তোমার?
বার্থডের প্ল্যান মানে?
মানে জানো না? কাল তো ভাইয়ার বার্থডে। আফটারঅল বিয়ের পর ফার্স্ট বার্থডে।একটু স্পেশাল তো হাওয়াই দরকার।
কিন্তু আমি তো জানতাম না। মা ও তো কিছু বলেনি আমায়।
ওহ আচ্ছা। আমি একটা কেক অর্ডার করে দেই। আর তোমার ব্ল্যাক শাড়ি আছে?
হ্যাঁ কেন?
পড়বে তাই।
এখন? না না আমি শাড়ি পড়বো না।
না না তোপড়তেই হবে সুইট ভাবি। তুমি শাড়িটা বের কর আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রিদিতা।
সারা আলমারি খুজে একটা কালো জর্জেটের শাড়ি খুলে ঝুমুর। শাড়িটা হাতে নিতে লজ্জায় পড়ে গেল। এতো পাতলা শাড়িটা! এটা পরবে কিভাবে!
ঝুমুরের এসব ভাবনার মাঝেই ঘরে ঢুকলো রিদিতা। ঝুমুরের হাত থেকে শাড়িটা নিল। ওয়াও এটা তো খুব সুন্দর! এটা পড়লে তো ভাইয়া তোমার দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারবে না।
খুব সুন্দর করে ঝুমুরকে শাড়িটা পরিয়ে দিল রিদিতা। হালকা মেকআপ করলো।ঝুমুরকে চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগছে।আধা ঘন্টার মধ্যে কেকটাও চলে এলো। রিদিতা নিজ হাতে পুরো রুমটাকে মোমবাতি আর বিভিন্ন আর্টিফিসিয়াল ফ্লাওয়ার দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিল। এক মুহূর্তের জন্য ঝুমুরের মনে হলো রিদিতা যেন ওয়াহিদের নিজের বোন।
আচ্ছা শোনো এখন হয়তো ভাইয়া চলে আসবে। প্রায় বারোটার কাছাকাছি বেজে গেছে। তুমি ঘরেই থাকবে আমি দরজা খুলে দিব। “হ্যাভ এ গুড নাইট,” বলে ঝুমুরের দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় রিদিতা।
ঘড়ির কাটায় এগারোটা পঞ্চাশ। ওয়াহিদ পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে হাতের আঙ্গুলে গাড়ির চাবিটা ঘুরাতে ঘুরাতে সদর দরজায় বেল বাজায়। শাকিল সাহেব,
আর শায়েলা বেগম বেশ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন। তাই ওয়াহিদ ভাবলো দরজাটা হয়তো ঝুমুর খুলবে। কিন্তু না তার ভাবনায় পানি ঢেলে দরজাটা খুললো রিদিতা। তবে অনেকদিন পর রিদিতা কে দেখে বেশ খুশি হল ওয়াহিদ। ওদের দুজনের সম্পর্কটা ভাই বোনের মতো। ওয়াহিদ যদি তার সাথে বসে কিছুক্ষণ কথা বলতে চাইছিলো।
কিন্তু রিদিতা ওয়াহিদকে একপ্রকার জোর করেই ঘরে পাঠিয়ে দিল। কারন বেজে গেছে প্রায়।
ক্লান্ত ভঙ্গিতে সিঁড়ি দিয়ে ওঠে রুমের দরজাটা খুললো ওয়াহিদ। ঘরের ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,ঝুমুর! ঘরে আছো তুমি?
অপর পাশ থেকে কোন শব্দ শোনা গেল না। উপায় না পেয়ে ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে রুমে সুইচ বোর্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ রুমের একপাশ থেকে দু তিনটে মোমবাতি একসাথে জ্বলে উঠলো। একপলক মোমবাতি গুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ সরাতে নিলেই ফের চোখ আটকে গেল ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে থাকার সুশ্রী রমনীটির মুখশ্রীতে। সম্মোহিতের মতো সেদিকে এগিয়ে গেল ওয়াহিদ।
“ঝুমুর!এটা সত্যিই তুমি!”
____
রাতের আকাশ জুড়ে জ্যোতি ছড়াচ্ছে পূর্ণ চাঁদ।জানালা দিয়ে ছুটে আসা দমকা হাওয়ায় ঘরের মোমবাতিগুলো প্রায় নিভু নিভু। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পড়েছে ঘরের একধারে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুমুরের সর্বাঙ্গ। ধীর পায়ে হেঁটে ঝুমুরের একদম কাছে গিয়ে দাঁড়ায় ওয়াহিদ। ছুঁয়ে দিল ঝুমুরের কোমল হাতখানা। ওয়াহিদের স্পর্শে মাথা উঁচু করে তাকায় ঝুমুর। আবদ্ধ হয়ে যায় দুটি চোখ। ঝুমুর দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে চাইলে চোখের ইশারায় জানতে চায়,’কি হয়েছে?’
“হ্যাপি বার্থডে।” মৃদু কন্ঠে বলে উঠে ঝুমুর।
ওয়াহিদ চমকে উঠলো।আজ তার জন্মদিন! হ্যাঁ। আজ যে তার জন্মদিন এটা তার মাথা থেকে বেরিয়েই গেছিল। তার জন্য এতো আয়োজন! তাও আবার নিজের পছন্দের মানুষটার কাছ থেকে।তবে কি ঝুমুর ওদের সম্পর্কটা কবুল করেছে? ঝুমুরের দিকে চেয়ে অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলো ওয়াহিদ।
“বারোটা বেজে গেছে চলুন কেকটা কেটে নেই এবার।” ঝুমুরের কথায় চৈতন্যে ফিরল ওয়াহিদ।
স্ফীত হেসে বলল, ‘হুম।’
ঝুমুরের একটু পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে কেক কাটার ছুরি টা নিয়ে আগে ঝুমুরের হাতে ধরিয়ে তারপর নিজের হাত রেখে কেকটা কাটলো। ঝুমুর কম্পনরত হাতে একটুখানি কেক নিয়ে ওয়াহিদের মুখের সামনে ধরল। ওয়াহিদ যেন এইটার অপেক্ষাতেই ছিল। কেকের সাথে মুখে ঢুকিয়ে নিল হাতের দুই আঙ্গুল। কেঁপে উঠলো ঝুমুর,বন্ধ হয়ে এলো নিঃশ্বাস। কিছু সেকেন্ড পরই হাত ছেড়ে দেয় ওয়াহিদ।একটুখানি কেক তুলে ঝুমুরকেও খাইয়ে দিল।
আচ্ছা আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। অনেক রাত হয়ে গেছে। এই বলে সরে আসতে নিলে ঝুমুরের হাত ধরে হেঁচকা টানে নিজের গায়ের উপর নিয়ে ফেললো ওয়াহিদ। কোথায় যাচ্ছ? “জন্মদিনের সারপ্রাইজ দিলে এখন আমার গিফট কোথায়?”
পুনরায় অস্বস্তিতে কাটা দিয়ে উঠলো ঝুমুরের সর্বাঙ্গ। মনে মনে ভাবলো, আসলেই তো! ও কোন গিফট তো আনেনি!
” অ্যান্ড বাই দা ওয়ে ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল এন্ড….
ওয়াহিদের কথার মাঝখানে বলে উঠে ঝুমুর,”আসলে আমি জানতাম না জন্মদিনের কথা। রিদিতা আপু বললো তাই….
কথাটা শেষ করে উঠতে পারলো না ঝুমুর, তার আগেই একজোড়া সিক্ত ওষ্ঠ তার তা কম্পনরত ওষ্ঠজোড়া দখল করে নিল। অসাড় হয়ে পড়লো ঝুমুরের পুরো শরীর। ব্যাপারটা ধাতস্থ করতে কয়েকপল সময় নিল। নামহীন একগুচ্ছ অনুভূতি ছোটা ছুটি করছিল পুরো অন্তঃকরণ জুড়ে। ধীরে ধীরে একহাতে খামচে ধরে ওয়াহিদের পিঠ। এতে ওয়াহিদের স্পর্শ আরো গভীর হলো।পুরো ঘরময় ছড়িয়ে আছে কেবল ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ।
কয়েক মিনিট পর ওয়াহিদ ছেড়ে দিল ঝুমুরকে। ঝুমুরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে ভারী নিঃশ্বাস ফেলছে । লজ্জায় চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল ঝুমুর। ঝুমুরকে আর একটু লজ্জা দিতে ফিসফিস করে বলে ওয়াহিদ, “অল দ্যা সুইটস অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড আর ওর্থলেস টু ইওর লিপস! দিস ইজ মাই বেস্ট বার্থডে এভার! এন্ড ইউ আর মাই প্রাইজলেস গিফট ফর এভার।”
হঠাৎ ঘর কাঁপিয়ে বেজে উঠলো ওয়াহিদের ফোনটা। এতে বেশ বিরক্ত হলো ওয়াহিদ। ঝুমুর যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ওয়াহিদ ঝুমুরকে ছেড়ে দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল।
ঝুমুর আরো কিছুক্ষণ ঠাই দাঁড়িয়ে রইল। তার মাথা ভনভন করে ঘুরছে, লজ্জায় কাঁটা দিচ্ছে সারা শরীর। এই লোকের সাথে একঘরে ও থাকবে কি করে? এত লজ্জা কেন লাগছে তার! দিনের আলোতে এই মুখ নিয়ে সামনে যাবে কি করে! ওয়াহিদ কথা বলে শেষ করে ফিরে এসে দেখে ঝুমুর ঠিক আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। কি হলো? দাঁড়িয়ে আছো কেন? আবার চাই নাকি? ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলে উঠলো ওয়াহিদ।
ঝুমুর আর কোনো দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে।
ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠল ওয়াহিদ।
_______
সে রাতে আর ওয়াহিদের ঘর মুখো হলো না ঝুমুর। রিদিতার ঘরে গিয়ে বললো আজ তার সাথেই থাকবে।রিদিতাও খুব খুশি হলো ঝুমুরকে দেখে। এদিকে ঝুমুরের জন্য অনেকক্ষণ যাবত বসে থাকতে থাকতে আর না পেরে রিদিতার ঘরে গেল ঝুমুরকে ডাকতে। যেই কথা সেই কাজ, ঝুমুর বললো,”আজ আমি রিদিতা আপুর সঙ্গে থাকতে চাইছিলাম,ঘরে ঘুম আসছিলো না তো তাই।”
ওয়াহিদ না করতে চেয়েও কিছু বলল না,”আচ্ছা ঠিক আছে থাকো,তবে শুধু আজকে রাতটা’ই ।”বলে ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
ঝুমুর পেছনে তাকিয়ে দেখলাম রিদিতা কথাটা শুনেছে কিনা। কিন্তু না,রিদিতা ফোনে ব্যাস্ত তাই কিছু শুনিনি। লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
সকালে বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলো ঝুমুর আর রিদিতার।সারারাত দুজনে গল্প গুজব করে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছিল। ঝুমুর ঘরে গিয়ে দেখলো ওয়াহিদ নেই। হয়তো হসপিটালে চলে গেছে। রাতের অগোছালো ঘরটা গুছিয়ে ফেললো। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেল। নিচে গিয়ে দেখলো,শায়লা বেগম নাস্তার টেবিলে বসে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। ঝুমুরকে দেখতে পেয়েই শায়লা বেগম বলে উঠলো, কিরে কাল রাতে নাকি তোরা একসাথে ঘুমিয়েছিস? চোখ মুখের কি অবস্থা করেছিস দুটো না ঘুমিয়ে।আয় বস, নাস্তা খেয়ে নে।
ওয়াহিদ ভাইয়া আর আঙ্কেল কোথায় আন্টি? টেবিলে বসতে বসতে শায়লা বেগমকে জিজ্ঞেস করল রিদিতা।
বাবা ছেলে তো করি সকালেই নাস্তা করে বেরিয়ে গেছে। তোর আঙ্কেল দুপুরে খেতে আসবে, ওয়াহিদের নাকি আজকে কাজের চাপ বেশি তাই আসতে পারবো না।
ওহ আচ্ছা। আন্টি আমি একটু শপিংয়ে যাব ভাবছিলাম ঝুমুরকেও সাথে নিয়ে যাই?
হ্যাঁ যাও। ভালই তো হবে এখানে আসার পর থেকে মেয়েটা বের হতেই পারছে না। একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসলে ভালো লাগবে।
হুম। আন্টি একটা কথা কিন্তু বলতেই হয়, “ঝুমুর অনেক লাকি কারন ও তোমার মত একজন শাশুড়ি পেয়েছে।”
ওরে বাবা তাই নাকি? আমি আর কোথায় ভালো! তুই আমার থেকেও ভালো শাশুড়ি পাবি।
আমিন! দুষ্টুমির স্বরে বলে রিদিতা।
ওহ আচ্ছা এই কথা! দাঁড়া আজকেই তোর বাবাকে বলছি জলদি তোর বিয়ের ব্যবস্থা করতে!
______
এ বাড়িতে আসার পর ঝুমুরের বেশ আলস্য দিন কাটছে। না আছে পড়াশোনা না আছে কোনো কাজ।শায়লা বেগম তো তাকে কোনো কাজে হাত লাগাতেই দেয় না। দুপুরের দিকে নিজের লাগেজের কাপড় গুলো ভাজ করে আলমারির খালি পাশটাতে রেখে দিল। গোছগাছ শেষ করে ঘরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে গোসল করতে ঢুকল। আজ যেহেতু ওয়াহিদ লাঞ্চে আসবে না,তাই সে নিশ্চিন্ত মনে শাড়িটাকে কোনোরকম শরীরের সাথে পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো। রুমে এসে পুরো শাড়িটা খুলে সুন্দর ভাবে পড়তে লাগলো। কুঁচি গুলো ভাঁজ করে খুঁজতেই দরজা খোলার ঘুরানোর শব্দ কানে এলো। রুমে দ্বিতীয় কারোর উপস্থিতি লক্ষ করা সত্ত্বেও মাথা উঠিয়ে দেখার প্রয়াস দেখা গেল না তার মধ্যে। শাড়িটা ঠিকঠাক মতো পরা শেষ করে সামনের দিকে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখে মাথা ঘুরে যাবার জোগাড়।
সামনে তাকিয়ে দেখলো ওয়াহিদ তার ঘামে অর্ধভেজা শার্টটা প্রায় ছুঁড়ে ফেলেছে রুমের সিঙ্গেল সোফায়। ঝুমুর সেদিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললো। ঝুমুর শাড়ি টানাটানি করে ঠিক করে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে হালকা কন্ঠে বলল,” আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।নিচে হয়তো আম্মু আমাকে ডাকছে।”
ওয়াহিদ ঝুমুরের হাত ধরে আটকে দিল।”ওহ আচ্ছা! তা আম্মু কি মনে মনে ডাকলো নাকি যে আমি শুনতে পেলাম না।”
নাহ মানে…. ঝুমুরকে থামিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করল ওয়াহিদ।
“শুনো দরজা একটা লক নামক একটা বস্তু আছে সেটা লাগিয়ে রাখবে সবসময়। বুঝেছ?”
“না মানে বাড়িতে তো তেমন কেউ নেই তাই লাগাইনি।”
“এখন নেই তো আসতে কতক্ষন!।সো বি কেয়ারফুল!”
ঝুমুর বেশ লজ্জা পেল। আসলেই তো এই কথাটা একদম মাথাতেই ছিল না। যদি অন্য কেউ চলে আসতো!এদিক সেদিক অস্থির দৃষ্টি ফেলে ঝুমুর বললো, হুম।
ঝুমুরের ভীত চেহারা দেখে হাসি পেল ওয়াহিদের। তবে তা চেপে রেখে ঝুমুরকে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে চেহারায় গম্ভীরভাব এনে বললো,”তবে তুমি চাইলে আমার সামনে এমন একটু আধটু বেসামাল হতেই পারো! আই ডোন্ট মাইন্ড।”
~চলবে