প্রেমময়ী সন্ধ্যা পর্ব-২৯+৩০

0
1

#প্রেমময়ী_সন্ধ্যা
#পর্ব_২৯
লেখিকা তাসফিয়া আনজুম

সকাল সাতটা। কেয়া তখনো ঘুমে। হঠাৎ ফোনের কর্কশ শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে স্ক্রিনে আদিলের নাম জ্বলজ্বল করছে। রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে আদিলের তাড়া, “এই, তাড়াতাড়ি বাসার নিচে আয় তো!”

কেয়া চমকে উঠে বলল, “কি! কার বাসার নিচে যাবো?”

“আমার হবু শশুরের। আর ফোন কোথায় থাকে তোর? এক ঘণ্টা ধরে ফোন দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি নিচে আয়। তোর বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে রাস্তার কুকুর বিড়াল সব আমাকে চিনে ফেলল।”

কেয়া চোখ কচলে জিজ্ঞেস করল, “তুমি এসেছ?”

আদিল সংক্ষেপে বলল, “হ্যাঁ, এখন তাড়াতাড়ি এসে আমাকে উদ্ধার কর।”

ঘটনার আকস্মিকতায় কেয়া আর দেরি করল না। বিছানা ছেড়ে উঠে তাড়াতাড়ি হাত-মুখ ধুয়ে নিল, চুল কোনোরকমে ঠিক করল। রুম থেকে বেরিয়ে দেখে ড্রয়িং রুমে তার বাবা বসে আছেন। তাকে এত তাড়াহুড়ো করতে দেখে তিনি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, “কোথায় যাচ্ছ?”

কেয়া একটু আমতা আমতা করে বলল, “বাবা, নিচে ঝুমুর এসেছে। ওর একটা নোট দরকার, তাই দিতে যাচ্ছি।”

বাবা ভ্রু কুঁচকে বললেন, “নোট কোথায়?”

কেয়া তখন মনে মনে নিজের ভুলের জন্য আফসোস করল, জিভে কামড় দিয়ে বলল, “আনতে ভুলে গেছি। এক্ষুনি নিয়ে আসছি।”

রুমে ফিরে দ্রুত একটা খাতা নিয়ে বেরিয়ে এলো। বাড়ির গেটের সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আদিল।

কেয়া কাছে যেতেই বলল, “বাইক পেলে কোথায়?”

আদিল ঠোঁটের কোণে একটা হাসি টেনে বলল, “নিরবের টা নিয়ে এসেছি। এখন তাড়াতাড়ি পিছনে উঠে বস।”

কেয়া বাইকের পেছনে বসতে বসতে বলল, “এত তাড়া কেন? কী হয়েছে হঠাৎ?”

আদিল ইঞ্জিন স্টার্ট করতে করতে বলল, “ঠিক করে ধরে বস।”

কেয়া আর কিছু না বলে বাইকের পিছনে উঠে বসল। আদিল বাইক চালাতে শুরু করতেই কেয়া আবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা, এখন অন্তত বলবে কি হয়েছে? এত সকালে আমাকে ঘুম থেকে তুলে টেনে আনলে কেন?”

আদিল একটু গম্ভীর স্বরে বলল,”উফ এত কথা বলিস কেন! একটু চুপ থাকতে পারিস না?”

কেয়া ভ্রু কুঁচকে বলল, “হ্যাঁ আমি কথা বললেই সব দোষ। আর নিজে যে কিছুই বলে না!”

আদিল বলল, কি শুনতে চাস বল? এই সাত সকালে শাকচুন্নিকে কাঁধে নিয়ে কোথায় যাচ্ছি সেটা শুনতে চাস? তাহলে শোন শাকচুন্নিকে তার জঙ্গলে ছাড়তে নিয়ে যাচ্ছি।”

কেয়া আদিলের বকবক শুনে বিরক্ত হয়ে গেল। তারপর আর কিছু না বলে দুজনেই চুপ করে রইল। বাইক শহরের প্রধান রাস্তা ছেড়ে একটু ফাঁকা একটা রাস্তায় ঢুকে গেল। চারপাশে গাছপালা, পাখির ডাক।

কিছুক্ষণ পরে আদিল বাইক থামাল। কেয়া চারপাশে তাকিয়ে দেখল একটা ছোট্ট পাহাড়ি জায়গা, সামনে ছোট্ট একটা নদী। স্নিগ্ধ পরিবেশ, বাতাসে একটা শীতল ভাব।

কেয়া বিস্মিত হয়ে বলল, “তুমি আমাকে এখানে আনলে কেন?”

আদিল হাসতে হাসতে বলল, “একটু আগে কি বললাম?”

কেয়া রেগে আদিলের পিঠে একটা কিল বসিয়ে দেয়। “যাহ সয়তান, তোর সাথে কথা বলাই বেকার!”

আদিলের চোখে মুখে গম্ভীরতা।”এতো কথা বলিস না। চল, একটু বসি। সরাসরি যশোর থেকে তোর বাসার সামনে গেছি। ঘাড় টার একদম সব ছিরে যাচ্ছে ব্যথায়।”

দুজনে গিয়ে নদীর সামনে একটা খালি বেঞ্চিতে বসলো। আদিল নদীর স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে ওঠে,
“ছেলেটাকে কি খুব পছন্দ হয়েছে?”
কেয়া আদিলের কথা বুঝতে পারে। কিন্তু এই কথা আদির কি করে জানলো তা জানে না।
“জানিনা।”
“জানিস না মানে? তুই বিয়ে করবি অথচ তুই জানিস না? নাকি আগেকার দিনের মতো না দেখেই বিয়ে করবি বলে ঠিক করেছিস?”
কেয়া রেগে যায় আদিলের কথা শুনে।
“তুমি এই কথাটা বলার জন্য এখানে এসেছ? আর আমি কি বিয়ে করতে চেয়েছি নাকি? যে দেখব ছেলেটা কেমন? এসব ফালতু প্রশ্ন আমাকে একদম জিজ্ঞেস করবে না।”
আদিল কেয়ার এক হাত মুচড়ে ধরে বলে,
“তো কি করতে চেয়েছিলি? বিয়ে না করতে চাইলে সং সেজে সামনে গিয়েছিলি কেন?”
কেয়া আদিলের হাতের মুঠোয় থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইল।
“আমার হাত ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি।”
“ও আচ্ছা এখন আমি ধরতেই ব্যাথা পাচ্ছিস! আর ওই ছেলের সাথে যে খুব ঘষাঘষি করে ছবি তুলেছিস? তখন খুব ভালো লেগেছিল তাই না? কি ভেবেছিস আমি কিছুই দেখতে পাই না!”

“দেখো আমি ওদের সামনে যেতে চাইনি। বাবার পরিচিত বলে যেতে হয়েছে। আর দেখতে আসলেই তো বিয়ে হয়ে যায় না। আমি বাবাকে বলেছি আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।”

“তুই বললি আর তোর বাবা মেনে নিল? আমি এসব কিচ্ছু জানি না। ওই ছেলেকে যদি আমি আর তোর আশেপাশে দেখি তাহলে দ্বিতীয়বার উঠে দাঁড়ানোর মত অবস্থায় আর থাকবেনা বলে দিলাম। এখন ভেবে দেখ কি করবি।”

কেয়া নিজের হাতটা জোর দিয়ে ছাড়িয়ে নিল।
“তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? দেখো এরকম কিছুই করবে না তুমি।”

কেয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে। আমি বাবাকে বলে এসেছি ঝুমুর কে নোট দিতে এসেছি। দেরি হলে চিন্তা করবে। এখন বাসায় যেতে হবে।
আদিল আবার কেয়ার হাতটা ধরে বলে।
“কেয়া চল আমরা বিয়ে করে নেই।”
কেয়াও এবার নরম হয়।
“বিয়ে তো অবশ্যই করবো। কিন্তু এখন না। যেদিন বাবাকে আমাদের কথা বলতে পারব সেদিন।”

*

ওয়াহিদের বাড়ির সামনের শিউলিগুলো ঝরে পড়ে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়াচ্ছিল চারপাশে। ঝুমুর রান্নাঘর থেকে চায়ের কাপের ট্রে টা সাবধানে টেবিলের উপর রাখল।টেবিলের একপাশে বসে শাকিল শেখ পত্রিকা পড়ছিলেন। শায়লা বেগম বাকি নাস্তা গুলো টেবিলে এনে সাজালেন।

ওয়াহিদ ঘুম-জড়ানো চোখে এসে টেবিলে বসল। গতকাল বাসায় ফিরেই বেশ রাত পর্যন্ত হসপিটালে থাকতে হয়েছে। ঝুমুরও এসে চুপচাপ এক কোণে বসল।

“ঝুমুর, তুই তো দারুণ চা বানাতে শিখে ফেলেছিস রে! পড়ালেখা বাদ দিয়ে বুঝি বউ শাশুড়ি মিলে এগুলো করা হচ্ছে?”

ঝুমুর মৃদু হেসে বলল, “বাবা, আম্মু তো আমাকে কিছুই করতে দেন না। ভাগ্যিস চা টা বানাতে পারতাম।”

শায়লা বেগম হেসে বললেন,”না বানাতে পারলেও কোন অসুবিধা ছিল না রে। তোর জামাই শশুর সবাই রান্নাবান্না ভালই পারে।”

অনেকদিন পর নাস্তার টেবিলে সবার একসাথে হাসি-আনন্দে সময় টা কাটল। নাস্তার শেষে ঝুমুর তার শশুর শাকিল শেখের পাশে বসল। দুজনে একসাথে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলো।

নাস্তা শেষে ওয়াহিদ ঝুমুরকে বলল, “ঝুমুর, কোচিংয়ের জন্য রেডি হয়ে নাও। আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে হসপিটালে যাব।”

ঝুমুর মাথা নেড়ে উঠে গেল। কয়েক মিনিট পর ওয়াহিদ তার গাড়ি বের করছিল আর ঝুমুর ব্যাগ হাতে এসে দাঁড়াল। গাড়িতে উঠে ঝুমুর জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগল। মাঝে মাঝে ওয়াহিদ তাকে মুচকি হেসে কিছু বলছিল, আর ঝুমুর হেসে সাড়া দিচ্ছিল।

কোচিং সেন্টারের সামনে এসে গাড়ি থামল। ঝুমুর নামার আগে ওয়াহিদ বলল, “তোমার ক্লাস শেষ হলে ফোন দিও। আমি এসে নিয়ে যাব।”

ঝুমুর হেসে বলল, “ঠিক আছে।”

ওয়াহিদ তাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল, আর ঝুমুর ধীর পায়ে কোচিং সেন্টারের দিকে এগিয়ে গেল।

চলবে…

#প্রেমময়ী_সন্ধ্যা
#পর্ব_৩০
#লেখিকা:তাসফিয়া আনজুম

ক্লাস শেষে ঝুমুর দাঁড়িয়ে ছিল কোচিং সেন্টারের সামনে রাস্তার পাশে।ঝুমুরের মনে অস্বস্তি কাজ করছিল। ওয়াহিদ আসার কথা বলেছিল, কিন্তু প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেলেও তার কোনো দেখা নেই। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার যানবাহনগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল সে। হঠাৎ পেছন থেকে চেনা এক গলার আওয়াজ শুনতে পেল।

“ঝুমুর, এখানো এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে? কারো জন্য অপেক্ষা করছো নাকি?”

পেছনে ফিরে দেখে কোচিংয়ের আবির স্যার তার দিকেই তাকিয়ে আছেন। তিনি আগেও বেশ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ঝুমুর কখনো বিশেষ পাত্তা দেয়নি। ঝুমুর মুখটা মুখটা স্বাভাবিক করে বলল,
“স্যার, বাসা থেকে নিতে আসবে। তাই অপেক্ষা করছি”

আবির আরও কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ঠিক তখনই একটি গাড়ি এসে থামল। ঝুমুর তাকিয়ে দেখে, আবির হাত বাড়িয়ে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলল।

“ঝুমুর, চলো! আজ তোমাকে তোমার বাসায় নামিয়ে দিই,” আবির এমনভাবে বলল, যেন এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

ঝুমুর কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
“না সমস্যা নেই, আমি অপেক্ষা করছি।”

আবির একটু বিস্মিত হয়ে বলল,
“তোমাকে যা নিতে আসার কথা সে হয়তো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যদি তোমার সমস্যা না হয় তাহলে আমি তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিতে পারি। আর এখন দুপুর হয়ে গেছে গাড়িও পাবে না এই রাস্তায়।”

ঠিক তখনই ওয়াহিদের ফোন এল। ঝুমুর ফোন ধরতেই শুনল,
“ঝুমুর, সরি আমি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। এখন আসতে পারব না। আমি ড্রাইভারকে পাঠাচ্ছি।”

ঝুমুর ঠাণ্ডা কণ্ঠে জবাব দিল,
“না, দরকার নেই। আমি বান্ধবীর সাথে চলে যাচ্ছি।”

ঝুমুর কান থেকে ফোন সরাতেই আবির বলে ওঠে,
“মিথ্যে বললে কেন? তোমার বান্ধবীর সাথে চলে গেছে অনেক আগেই।”

ঝুমুর আবিরের দিকে ফিরে বলল,
“আসলে আমি একাই যেতে পারবো। আর আজকে হেঁটে যেতে মন চাইছে।”

আবির বলে,
“আচ্ছা তাহলে তোমাকে নিতে আসছে না? চলো একসাথেই হেটে যাই।”

ঝুমুর আর কিছু বলতে পারলো না।
“আচ্ছা চলুন।”

আবির কিছুটা অবাক হলেও খুশি মনে ঝুমুরের পাশে হাঁটতে শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে আবির কথার পর কথা বলতে লাগল ঝুমুরের পরিবারে কে কে আছে, কী করতে তার ভালো লাগে।তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?ঝুমুর খুব বেশি কিছু বলল না, শুধু মাঝে মাঝে মাথা নাড়ল বা এক-আধবার ছোট করে জবাব দিল। তবে আবিরের কথা বলা থামল না।

ঝুমুরের বাড়ির সামনে এসে আবির থামল।
“আজকের জন্য ধন্যবাদ, ঝুমুর।”
ঝুমুর সামান্য হাসি দিয়ে বলল,
“আপনাকেও ধন্যবাদ স্যার। গাড়ি থাকতেও আমার সাথে এতটা পথ হেঁটে আসলেন।”

ঝুমুর বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। আবির আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের রাস্তায় পা বাড়ায়।

*

পরের দিন ঝুমুরের কোচিং বন্ধ ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হয়ে গেল। ধীরেসুস্থে ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে নিচে নামতেই চোখ কপালে উঠল। ড্রয়িং রুমে বসে আছে আবির। তার সঙ্গে এক বয়স্ক দম্পতি—সম্ভবত তার বাবা-মা। তারা সবাই বেশ গম্ভীর মুখে বসে আছেন।

ওয়াহিদ আর শাকিল শেখ দুজনেই বসে আছে তাদের সাথে। ওয়াহিদ চুপচাপ বসে আছে, কিন্তু তার চোখে যেন আগুন। ঝুমুরকে দেখা মাত্রই তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ওয়াহিদ।

ঝুমুরের মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছিল না। এই পরিস্থিতিতে যেন একেবারেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে।

আবিরের মা শান্ত স্বরে বললেন,
“আমাদের ছেলে তোমাকে পছন্দ করে। আমরা চাই এই সম্পর্কটা আনুষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে নিতে। তাই আমরা এখানে এসেছি।”

ওয়াহিদের চোখ জ্বলজ্বল করছিল। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“আবির হয়তো আপনি জানেন না। ঝুমুর আমার স্ত্রী।”

আবির হকচকিয়ে গেল। তার বাবা-মার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। ঘরের পরিবেশে যেন এক নিমেষে চাপা বিস্ফোরণ ঘটল। আবির অস্পষ্ট গলায় বলল,
“ঝুমুর…তোমার বিয়ে হয়ে গেছে?”

ঝুমুর মাথা নিচু করে রইল। কোনোরকমে ধীরে মাথা নাড়ল। আবিরের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বলল,
“ওহ শিট! আমার এটা আগেই জেনে নেয়া উচিত ছিল।”

আবির ভীষণ লজ্জিত হলো ঝুমুরের বিয়ে হয়ে গেছে শুনে। তারপর ওয়াহিদ আর তার বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। আবির চলে যাওয়ার সময় ঝুমুরের দিকে একবার তাকাল। তার চোখেমুখে কিছু একটা ছিল। কিন্তু সে কোনো কথা বলল না।

সবাই চলে যাওয়ার পর ওয়াহিদ ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“ঝুমুর রুমে আসো,কথা আছে।”
ঝুমুর ভয়ে বড়সড় একটা ঢোক গিললো।

রুমে ঢুকতেই একটা শক্ত হাত হেঁচকা টানে খাটে বসিয়ে দিল। ঝুমুর কিছু বলার আগেই গমগমে কন্ঠে ওয়াহিদ বলে,
“এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি? বিয়ের কথা কাউকে বলতে বলিনি বলে বুঝি যার সাথে ইচ্ছা তার সাথেই কথা বলবে নাকি!আমাকে না জ্বালালে কি পেটের ভাত হজম হচ্ছে না?”

ঝুমুরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। কোনরকম কন্ঠ টেনে বলে,
“আমি উনার সাথে কথা বলতে চাইনি। উনি নিজেই বারবার আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন। আর আমি ভাবতেও পারিনি যে এমন কিছু হবে।”

ওয়াহিদ আচমকা ঝুমুরের গালে একটা উষ্ণ চুমু খেয়ে বলে,
“দ্বিতীয়বার যেন এমনটা না হয়। দরকার হলে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখবে যে ‘আমি ঝুমুর বিবাহিত’।”

ঝুমুর কোনোরকম হাসি আটকে রেখে বলে,
“ঠিক আছে।”
ওয়াহিদ ঝুমুরের কোলে মাথা রেখে বলল,
“মাথাটা টিপে দাও তো। সকাল সকাল বিশাল বড় একটা ধকল পার করলাম।”

*

গতকাল বিকেলেই নিরব আর আফরা নিরবদের বাড়ি পৌঁছেছে। নিরবের বাবা ছেলেকে দেখে ভীষণ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন।ছেলেকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলেছেন। তীব্র কষ্ট,একাকীত্ব, যন্ত্রণায় পাথর হয়ে যাওয়া মানুষটা এক রাতেই ছেলের সামনে নরম হয়ে পড়েছিলেন। আফরাকে অনেক পছন্দ করেছে নিরবের বাবা।ছেলে আর ছেলের বউয়ের প্রথমবার বাড়ি আসার খুশিতে দুই হাত ভর্তি করে বাজার করলেন। কাজের বুয়াকে বললেন কি কি রান্না করতে হবে। কিন্তু আফরা নিজেই সব রান্না করতে চাইলো। নিরবের বাবা একমাত্র ছেলের বউয়ের হাতের রান্না খাওয়ার লোভ সামলাতে পারলেন না।তাই তিনি আর কিছু বললেন না।

আফরার বেশ কয়েক পদ রান্না শেষ করতে করতে দুপুর দেড়টার কাছাকাছি বাজলো। ঘরে গিয়ে দেখল নিরব বিছানায় শুয়ে আছে। আফরা একবার নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে,
“গোসল করবে না? রান্না তো শেষ, গোসল করে আসো একসাথে খাব সবাই।”
নিরব বলে,”করেছি তো একবার। বাই দ্যা ওয়ে,আপনি কি চাইছেন আরো একবার করি আপনার সাথে?”
আফরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে নিরবের দিকে।
“কি!”
“কি আবার! আপনিই তো জিজ্ঞেস করলেন গোসল করব কিনা? তাই বললাম আরকি!”
আফরা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“আমি কি বলেছি আমার সাথে করবে কিনা?”
নিরব শোয়া থেকে উঠে পরনের গেঞ্জি টেনেটুনে ঠিক করে।
“না ও তো বলেননি। তাই ভাবলাম….
“এই চুপ থাকো তুমি! সব সময় খালি বেশি বেশি ভাবা!”
নিরব মুখের সামনে আঙ্গুল ধরে।
আফরা ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে ওয়াশ রুমের দিকে যায়।
নিরব আবার বলে উঠে,
“এখন চুপ করেছি বলে সব সময় কিন্তু চুপ থাকবো না। নিরব ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।”

চলবে…