প্রেমময়ী তুমি পর্ব-২৪+২৫

0
533

#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_২৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

“সবসময়ই যে কানে শোনা কথা বা নিজ চোখে দেখা কোনো ঘটনা সঠিক হতে পারে তা কিন্তু নয়! হতে পারে আমার দেখার ভুল ছিল কিংবা আপনার শোনার ভুল ছিল! তাই আগে থেকেই হলফ করে কিছু বলা ঠিক না।”

উদগ্রীবতায় নীড় ভ্রু যুগল কুঁচকালো! গভীর দুঃশ্চিতায় ডুবে গেল। অধীর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“তার মানে তুমি বলতে চাইছ আমি নিজ কানে যা শুনেছি সব মিথ্যে ছিল?”

সোহানী রুক্ষ হাসলো! রহস্যময়ী গলায় বলল,,

“হতে পারে! আবার নাও হতে পারে!”

নীড়কে ঘোর বিপাকে ফেলে সোহানী ভাবশূণ্য ভঙ্গিতে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! পিছু ফিরে নীড় সন্দিহান দৃষ্টিতে সোহানীর যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। মনে মনে আওড়ে বলল,,

“কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে এসব সোহানী? সত্যিই কি আমার সাথে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে? এই বিষয়ে কি আমার অনুর সাথে বসে খোলাখুলি কথা বলা উচিৎ?”

সোহানীর যাওয়ার পথ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো নীড়। কপালে হাত রেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো! হারিয়ে যাওয়া মনোবল আবারও দৃঢ় করল। কপাল থেকে হাত সরিয়ে ফুসফুসে দম সঞ্চার করল। পরিস্থিতি শতভাগ মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল! ম্লান হেসে মাহিনের রুমে প্রবেশ করল! অমনি মাহিন, সাদমান ও আয়মন ফাজলামি ভুলে নিজেদের জায়গায় স্থির হয়ে বসল। জোরপূর্বক হাসি টেনে নীড়ের দিকে তাকালো। এই সময়টাতে নীড়কে তারা একদমই প্রত্যাশা করে নি! তাদের হঠকারি ভাব-ভঙ্গি দেখে নীড় তা বেশ আঁচ করতে পারল। তাই পরিস্থিতি অনুকূলে আনার জন্য নীড় প্রাণবন্ত হেসে মাহিনের পাশে বসল! মাহিনের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাসু গলায় সবাইকে লক্ষ্য করে বলল,,

“কী রে? কী করছিস তিন ব্যাটেলিয়ান মিলে?”

মাহিন স্মিত হাসল। জবাবে বলল,,

“এই তো ভাইয়া আড্ডা দিচ্ছিলাম।”

নীড় মৃদু হেসে সাদমানের দিকে তাকালো। পরমুহূর্তে এক ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী সাদমান? সামান্তা এখনো তোকে ডিস্টার্ব করে?”

সাদমান লজ্জামাখা হাসি দিলো! মাথা নুইয়ে পেছনের চুলগুলো টেনে ধরল। স্বস্তিজনক গলায় বলল,,

“না ভাইয়া। কবেই ডিস্টার্ব করা ছেড়ে দিয়েছে!”

“কেন? পাত্তা দিস না বলে?”

“হ্যাঁ! কিছুটা এরকমই।”

নীড় অট্ট হেসে আয়মনের দিকে তাকালো। দুষ্টুমির স্বরে বলল,,

“কী আয়মন? চড়ের দাগটা এখনো গালে লেগে আছে?”

চোখে-মুখে বিস্ময়াত্নক ছাপ ফুটিয়ে আয়মন তাড়াহুড়ো করে চড়ে খাওয়া গালে হাত রাখল! চোখ জোড়া প্রকাণ্ড করে নীড়ের দিকে তাকালো। বিরামহীন গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“তুমি জানলে কী করে ভাইয়া, আমি চড় খেয়েছিলাম?”

পাশ থেকে মাহিন ব্যগ্র হাসল! ইশারায় আয়মনকে ব্যঙ্গ করতে লাগল! বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলো না মাহিন-ই নীড়ের কানে এই লজ্জাষ্কর বিষয়টা ঢুকিয়েছে। কটমট দৃষ্টিতে আয়মন মাহিনের দিকে তাকালো! মাহিন মুখ ভেংচাতে লাগল! আয়মনকে পঁচাতে পেরে সে মহা খুশি! সাদমান মুখ চেপে হাসতে ব্যস্ত৷ মনে মনে মাহিনকে হাজারটা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করল! আয়মনের বর্তমান অবস্থা ভয়ার্ত বাঘের ন্যায়। দুই বন্ধুকেই আঁচড়ে ফেলার মোডে আছে সে! আয়মনের আক্রমনাত্নক রূপ দেখে নীড় গলা খাঁকালো৷ হাসি থামিয়ে আয়মনের দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“নূর বলল মেয়েটা দেখতে না-কি জুস ছিল?”

আয়মন মাথা নুঁইয়ে দাঁতে দাঁত চাপল! মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,

“শালা! সবগুলা-ই হারামির দল। দুইভাই মিলে আমার ইজ্জতের দফা-রফা করে দিলো! বড়ো ভাইয়ের কাছে আমার বেঁচে যাওয়া মান-সম্মানের ফালুদা বানিয়ে ছাড়ল। ছিঃ আয়মন! শেইম অন ইউ! তবে আমিও কিন্তু কম যাই না। যার জন্য আমাকে এত ইনসাল্টেড হতে হলো না? দ্বিতীয়বার যদি তার সাথে দেখা হয় না? কী যে একটা খারাপ অবস্থা করব আমি ঐ মেয়েটার, যা ঐ মেয়েটা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারছে না!”

জল্পনা-কল্পনা ভুলে আয়মন গলা ঝাড়লো। মাথা নুইয়ে রেখেই চোয়াল শক্ত করে বলল,,

“হ্যাঁ করলার জুস ছিল!”

উপস্থিত সবাই হু হা শব্দে হেসে দিলো! আয়মন ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসতে লাগল! চড়ের আওয়াজটা প্রখরভাবে তার কানে বাজতে লাগল। সঙ্গে সঙ্গেই সে প্রতিজ্ঞা করে নিলো ঐ মেয়েকে সামনে পেলে চড়ের সাংঘাতিক একটা প্রতিশোধ নেওয়ার! সাদমান পাশ থেকে নানাভাবে আয়মনকে খোঁচাতে লাগল। ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে লাগল। রাগী আয়মনের আরও উস্কিয়ে দিতে লাগল। আয়মন পাশ থেকে সাদমানের কানে ঝাঁঝালো গলায় বলল,,

“খুব মজা নিচ্ছিস না? নে। সময় পরে আমারও আসবে। সেদিন কিন্তু আমি চুপ করে থাকব না! আমার বোনকে লাইন মারার শাস্তি তোকে নিজ হাতে দিব!”

“তোর বোনকে পাওয়ার জন্য আমি হাজার শাস্তি পেতেও রাজি! ইউ নো হোয়াট? ইট’স হান্ড্রেড পার্সেন্ট লাভ!”

,
,

সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে নূর! শার্টের কলার পেছনের দিকে এলিয়ে সোফার পেছনের গদিতে হেলান দিয়ে সে রাজার হালে বসে তাজা আপেলে বাইট বসাচ্ছে! পৈশাচিক খুশিতে তার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। কারণ সামনেই তার চিরশত্রু চাঁদ ইনিয়ে বিনিয়ে নাক ফুলিয়ে বিছানা ঝাঁড়ছে! কিয়ৎক্ষণ পর পর নূরের দিকে ঝাঁঝালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে! বিপরীতে নূরও তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। হাতা ফোল্ড করে চাঁদকে ভয় দেখাচ্ছে। চোখের ইশারায় বলছে তাড়াতাড়ি বিছানাটা ঝেড়ে দিতে। নয়তো চোখ উপড়ে ফেলবে! দৃষ্টি ঘুরিয়ে চাঁদ নাকি কান্না করে কাজে মনোঃসংযোগ করল। মনে মনে নূরের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে লাগল! শলা ঝাড়ু দিয়ে কোনোরকম চাঁদ বিছানাটা ঝাড়ল। এইদিকে এক ঝাড় তো ঐদিকে এক ঝাড় এমন করে মোট তিন থেকে চারটে ঝাড় দিয়ে বিছানাটা মোটামুটি ঝেড়ে দিলো চাঁদ। কাজ শেষে হাত থেকে শলা ঝাড়ুটা মেঝেতে ছুড়ে মারল! রাগী দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“হয়েছে? আপনার মনস্কামনা পূরণ হয়েছে আপনার? এবার আমি যেতে পারি?”

নূরের সম্মতির অপেক্ষা করল না চাঁদ। চ্যালচ্যালিয়ে হেঁটে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! রুমের দরজা বরাবর পৌঁছাতেই নূর তড়িৎ বেগে সোফা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। হাতের আপেলটা ডেস্কের উপর রেখে তটস্থ গলায় চাঁদকে লক্ষ্য করে বলল,,

“হেই ওয়েট অ্যা সেকেন্ড। আমার পারমিশন ছাড়া কোথায় যাচ্ছ তুমি হ্যাঁ?”

চাঁদ পিছু ঘুরল। কোমড়ে হাত গুজে লোহিত দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো৷ তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় বলল,,

“আর কী করানোর বাকি আছে হ্যাঁ?”

“চেইক করে দেখতে হবে না আদৌ কাজের কাজ কিছু হয়েছে কি-না? তোমার আনারি হাতের কাজ যে কতোটা ফলপ্রসূ একবার তো তা চেইক করে দেখা উচিৎ না-কি? জাস্ট অ্যা মিনিট ওকে? এত তাড়াহুড়ো করার কি আছে? এমন তো নয় যে তোমার বয়ফ্রেন্ড তোমার জন্য অপেক্ষা করছে!”

নূরের একটা কথাও চাঁদের পছন্দ হলো না। রাগে ফোঁস করে ক্ষোভ প্রকাশ করল। উড়নচণ্ডী ভাব নিয়ে নূরের দিকে তেড়ে এলো। ডান হাতের তর্জনী আঙুলটা নূরের মুখের সামনে ধরল। তেজী গলায় বলল,,

“আমি কী আপনার মতো ইডিয়ট যে আমার বয়ফ্রেন্ড থাকবে? বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড তাদের-ই থাকে যাদের মাথামোটা হয়!”

নূর অট্ট হাসল! হাসতে হাসতে সোফার উপর বসে পড়ল! পেটে হাত রেখে শ্লেষাত্মক গলায় বলল,,

“বিড়াল যখন মাছের নাগাল না পায় না? তখন ঠিক তোমার মতই নিজেকে খুব চালাক ভাবে! বয়ফ্রেন্ড পাবে তুমি কোত্থেকে শুনি? তোমার মতো একটা ইমম্যাচিউরড মেয়ের সাথে কেউ প্রেম করবে? তুমি কোন দিক থেকে পার্ফেক্ট হ্যাঁ?”

একটা কথাও চাঁদ আমলে নিলো না! মনোক্ষুণ্ণ না করে উল্টে বিদ্বেষি গলায় বলল,,

“আমি পার্ফেক্ট না তা আমি বেশ ভালোভাবেই জানি। আপনার বলে বলে বেড়াতে হবে না। বয়ফ্রেন্ড থাকলেই সবাই চালাক হয় না ওকে? বয়ফ্রেন্ড না থাকাটাই হলো আসল বুদ্ধিমানের কাজ! তাছাড়া আমি চাইলে-ই এই মুহূর্তে যে কাউকে বয়ফ্রেন্ড বানাতে পারি! তবে বানাব না! কেন বলুন তো? কারণ আমি অন্য একটা ছেলের জন্য নিজেকে কষ্ট দিতে পারব না। আমার পরিবারকে কষ্ট দিতে পারব না। তার জন্য কেঁদে কেটে নিজের ক্ষতি করতে পারব না। পরিবার যার সাথে বিয়ে ঠিক করবে আমি ঠিক তাকেই বিয়ে করব। আপনার মতো কখনো তাদের মনোক্ষুণ্ণ করব না।”

চাঁদের কথাগুলো নূরের একটুও ভালো লাগল না! তাই সে মুখমণ্ডলে রাগী ছাপ ফুটিয়ে তুলল। জায়গা থেকে সরে দাঁড়ালো। চাঁদকে উপেক্ষা করে বিছানার মুখোমুখি দাঁড়ালো। কুজো হয়ে বিছানায় হাত রেখে দেখল কিছু কিছু জায়গায় এখনো বিড়ালের পশম লেগে আছে! চোয়াল শক্ত করল নূর। পিছু ফিরে রক্তিম দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

“এই তাহলে তোমার বেড ক্লিনিংয়ের নমুনা? এভাবে ক্লিন করতে বলেছিলাম আমি তোমাকে?”

চাঁদ মুখ ভেংচালো। বুকে দু’হাত গুজে ভাবলেশ গলায় বলল,,

“আমি যতটুকু পারি ততটুকুই করেছি। এরচেয়ে বেশি আমার দ্বারা হবে না।”

অগ্নিশর্মা হয়ে নূর চাঁদের দিকে তেড়ে এলো! চাঁদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,

“কী বললে তুমি? কাজটা তুমি করতে পারবেনা?”

পা দু’টো উপরে তুলে চাঁদ নূরের দিকে খানিক উঁকি দিয়ে দাঁড়ালো! নূরের মুখের সামনে আঙুল ঠেকিয়ে একগুয়ে গলায় বলল,,

“না পারবনা! শুনতে পেরেছেন এবার?”

নূর থমকালো! অজ্ঞাতবশত চাঁদের দীপ্তিময় মুখমণ্ডলে মোহময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! দুজন দুজনের এতোটাই কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে যে চাঁদের নাক-মুখ থেকে নিঃসৃত প্রতিটা তপ্ত শ্বাস নূরের মুখমণ্ডলে ঠিকরে পড়ছে! নূর যেনো ক্রমশ বেখবর হয়ে উঠছে! চাঁদের সুনয়না চোখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতর চলতে থাকা ধুকপুক শব্দে ক্রমাগত নাজেহাল হয়ে উঠছে। এর আগে নূর কখনো চাঁদকে এতোটা কাছ থেকে উপলব্ধি করেনি। না তারা দুজন কখনো এতোটা কাছাকাছি এসেছে। আজ না চাইতে-ই নূর চাঁদের এতোটা কাছাকাছি চলে এলো! তাই অবিলম্বেই চাঁদের দিকে নূরের নজর পড়তে বাধ্য হলো! নূরের সম্মোহন দৃষ্টি দেখে চাঁদ ভ্রু কুঁচকালো। মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,

“এমা। এর আবার কী হলো? এ আবার স্টেচু ফেস্টেচু হয়ে গেল না তো?

পা জোড়া চাঁদ নিচে নামালো। নূরের ধ্যান ভাঙানোর জন্য নূরের মুখের সামনে তুড়ি মারল! অধীর গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“এই আপনি ঠিক আছেন তো? এমন স্টেচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আমি কি মুভ বলব?”

নূরের ধ্যান ভাঙল! সঙ্গে সঙ্গেই সে পিছু ঘুরে দাঁড়ালো! একটু আগের করা হঠকারিতার জন্য কপাল চাপড়ালো। মনে মনে আওড়ে বলল,,

“শীট! কী করছিলাম এসব আমি? ঐ পাগল মেয়েটার দিকে ঐভাবে রাস্কেলের মতো তাকিয়েছিলাম? হ্যাংলার মতো তাকে দেখছিলাম? ছিঃ নূর শেইম অন ইউ। টোটালি হেইট মাই মাইন্ড!”

চাঁদ বাঁকা হাসল! সুযোগ বুঝে দৌঁড়ে রুম থেকে পালানোর চিন্তা করল! যেই ভাবনা সেই কাজ। চাঁদ পিছু ঘুরে পালাতেই নূর পেছন থেকে চাঁদের হাতটা সজোরে টেনে ধরল! ঘাবড়ে যাওয়া চাঁদকে তার মুখোমুখি দাঁড় করালো। চোয়াল শক্ত করে চাঁদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,

“আমার কাজ না হওয়া অবধি কোথাও যাওয়ার রাইট নেই তোমার! আরও একবার সুযোগ দিচ্ছি আমি। বেডটা ভালো করে ক্লিন করে দাও। আমার বেডে যেনো একটাও পশম না থাকে। ফ্লোরেও যেনো পশমের কোনো চিহ্নও না থাকে। লেটস স্টার্ট দ্যা ওয়ার্ক নাও।”

চাঁদ ঠোঁট উল্টালো। ফ্যাল ফ্যাল চাহনিতে নূরের দিকে তাকালো। নূর আরও রাগী রূপ ধারণ করল। কিছুতেই চাঁদের অসহায়ত্বকে প্রশ্রয় দিলো না। চাঁদ ভেজা বিড়ালের ন্যায় মাথা নুইয়ে নিলো। নিরুপায় হয়ে নূরের শর্ত মেনে নিলো! বিছানার চাদরটা উঠিয়ে চাদরটা ভালো করে ঝেড়ে আবারও বিছানায় বিছিয়ে দিলো। নূরের ভয়ে ফ্লোরও ঝাড়ু দিতে বাধ্য হলো! মনে মনে পণ করে নিলো পরেরবার নূরকে সুযোগে পেলে-ই গাঁধার মতো খাটিয়ে ছাড়বে সে! তক্কে তক্কে সেই সুযোগের অপেক্ষা করবে। চাঁদের বর্তমান নাজেহাল অবস্থা দেখে নূর মনে মনে বেজায় খুশি! সোফার উপর পা তুলে বসে সে চাঁদের জেদ ভঙুর হওয়াকে বেশ আনন্দের সাথে উপভোগ করবে। ঠোঁটের কোণে পৈশাচিক হাসি ফুটিয়ে তুলছে। একটু একটু করে তার ইগো সেটিজফাইড হচ্ছে!

____________________________________

পরের দিন।
সকাল প্রায় আটটার কাছাকাছি। সূর্যের আবির মাখা রোদের ঝাঁজ সরাসরি এসে পড়ল চাঁদের মুখমণ্ডলে। থাই খোলা ছিল বিধায় সূর্যের আলো কোনো বাঁধা-বিপত্তি ছাড়া-ই চাঁদের চোখে-মুখে ঠিকরে পড়ছিল। একটু একটু করে ঘুমের রেশ কেটে আসছিল চাঁদের। পিটপিট চাহনিতে চোখ মেলছিল সে। তবে রোদের তীব্র প্রকোপে সম্পূর্ণ চোখ মেলার জোঁ ছিল না তার। সম্পূর্ণ চোখ মেলতেই হঠাৎ তেজস্বী রোদ তার চোখ দুটো ভৎস করে দিচ্ছিল! সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ চোখ বুজে নিলো। নাক-মুখ খিঁচে ডান হাতটা মুখের উপর চেপে ধরল। শরীরের আড়মোড়া ভেঙে অন্যপাশে কাত হয়ে শুলো। চোখ বুজেই বড়ো করে একটা হামি তুলে বিড়বিড় করে বলল,,

“জায়মা শোন? কয়টা বাজে রে?”

পাশ থেকে কোনো জবাব এলো না! তব্ধতায় প্রায় অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পর চাঁদ অর্ধদৃষ্টিতে পাশে তাকালো। জায়মাকে পাশে দেখতে পেল না। ধপ করে চাঁদ শোয়া থেকে ওঠে বসল। সারাঘরে পূর্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করেও কাউকে কোথাও খুঁজে পেল না। উত্তেজিত দৃষ্টিতে চাঁদ দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাল। সকাল আটটা পনেরো মিনিট বাজছে ঘড়িতে! আর এক মুহূর্তও ব্যয় করল না চাঁদ। তাড়াহুড়ো করে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। ওয়াশরুমের দিকে গতিপথ নির্ধারণ করল। ব্যতিব্যস্ত গলায় বলল,,

“ইশশ। আটটা বেগে গেল! সবাই হয়তো আমাকে ছাড়াই ব্রেকফাস্ট করে ফেলছে।”

তড়িঘড়ি করে কিছুক্ষণের মধ্যে-ই চাঁদ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। মুখটা ভালো করে না মুছেই সে ভেজাক্ত মুখমণ্ডলে ড্রয়িংরুমের দিকে রওনা হলো। রুম থেকে বের হতেই প্রথমে সে সাদমানের মুখোমুখি হয়ে গেল! মাথা উঁচিয়ে চাঁদকে এক পলক দেখামাত্রই সাদমান মৃদু হাসল। মাথা চুলকে উদ্বেলিত গলায় বিড়বিড় করে বলল,,

“ইশশ। মেঘ না চাইতে-ই জল! তাহলে ভাগ্য এবার আমার অনুকূলেই আছে! সকাল থেকেই ভাবছিলাম তাকে একটা নজর দেখব। তাকে দেখেই দিনটা শুরু করব!”

সাদমানের মৌনতা দেখে চাঁদ ভ্রু যুগল উঁচু করল। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী ভাবছেন সাদমান ভাই?”

চাঁদের কোনো কথাই সাদমানের কানে গেল না! নিজ থেকেই ঘোর কাটিয়ে ওঠে সে চাঁদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,,

“হায়।”

বিনিময়ে চাঁদ সৌজন্যের হাসি হাসল! নির্বোধ গলায় বলল,,

“হায়।”

“কেমন আছো?”

চাঁদ মুখটা চুপসে নিলো! গম্ভীর গলায় বলল,,

“ভালো নেই!”

সাদমান উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল! উত্তেজিত গলায় বলল,,

“কেন? কী হয়েছে?”

“নূর! আপনার ফ্রেন্ড নূর। কাল রাতে আমাকে দিয়ে গাঁধার মতো খাঁটিয়েছে! মাজা কোমড় সব ভেঙে গেল আমার! তাই একটু অসুস্থবোধ করছি!”

“কখন হলো এসব? আমরা তো কিছু টের-ই পেলাম না।”

“টের পাবেন কোথা থেকে শুনি? আপনারা কেউ আমার খোঁজ রাখেন?”

সাদমান উৎসাহিত হয়ে উঠল! সম্মোহনী গলায় বলল,,

“তুমি কী সত্যিই চাও আমি তোমার খোঁজ রাখি?”

চাঁদ শুকনো হাসল। গলা খাদে এনে বলল,,

“আরেহ্ না ভাইয়া। আমি তো জাস্ট কথার কথা বলছিলাম। আপনার ফ্রেন্ড নূর আছে না? তাকে আমার মোটেও পছন্দ না! এক নম্বরের বদের হাড্ডি সে! সবসময় আমাকে জ্বালায় জানেন? খালাতো ভাই হয়েও কখনো আমার খোঁজ রাখে না! আর সেই জায়গা থেকে তো আপনি হলেন বহু দূরের সম্পর্কের। আপনি আমার খোঁজ কেন রাখবেন হুম?”

অমনি ড্রয়িংরুম থেকে সোহানীর উঁচু গলার স্বর ভেসে এলো দুতলায়। চাঁদ এবং সাদমানকে ডেকে সে ব্যস্ত গলায় বলল,,

“এই চাঁদ সাদমান নিচে নেমে এসো। ব্রেকফাস্ট রেডি।”

দুজনই সোহানীর দিকে তাকালো। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। সাদমানকে উপেক্ষা করে চাঁদ প্রথমে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। পেছন থেকে সাদমানকে মৃদু আওয়াজে ডেকে বলল,,

“ভাইয়া আসুন।”

সাদমান স্মিত হাসল। পেছনের চুলগুলো টেনে মনে মনে আওড়ে বলল,,

“ইশশ। কবে যে চাঁদ আমার চোখের ভাষা বুঝবে! পাগলীটা হয়তো বুঝতেও পারছে না তার জন্যই, তার কারণেই আমার দিন-রাত এই বাড়িতে পড়ে থাকা!”

,
,

ডাইনিং টেবিলে বাড়ির সবাই উপস্থিত। শোরগোলে আচ্ছন্ন পরিবেশ। সবাই যে যার মতো করে হাসি-ঠাট্টা করছে খাবার টেবিলে। মাহিন, সেলিনা চৌধুরী এবং আফতাব চৌধুরী থেকে শুরু করে বাড়ির সবাই আছে এখানে। তবে হাবিব আবরার এইমাত্র খাবার টেবিল ছেড়ে ওঠে একটু সাইডে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। নীড়ের শ্বশুড় বাড়ি থেকে কল এসেছে মাত্র! প্রয়োজনীয় কল হবে বিধায় উনি হৈ-হট্টগোল থেকে খানিকটা দূরে সরে গেছেন! সোহানী, সাবরিনা আবরার এবং বাড়ির নতুন কাজের মহিলা সবার প্লেটে প্লেটে পরোটা এবং ওমলেট সার্ভ করে দিচ্ছে। মাহিন আসার পর থেকেই বায়না ধরেছে সকালের ব্রেকফাস্টে সে পরোটা আর ওমলেট খাবে! ছেলের আবদার ফেলতে পারেন নি সাবরিনা আবরার। তাই বিরিয়ানির আইটেম বাদ রেখে উনি পরোটা আর ওমলেট-ই করলেন সবার জন্য।

সবার মধ্যে নীড় বেশ তাড়ায় আছে অফিসে যাওয়ার জন্য। অন্যদিকে শতভাগ উদগ্রীবতাও কাজ করছে তার মধ্যে। ঐ বাড়ি থেকে কী খবর আসবে তা জানার জন্য ব্যাকুল সে। চাঁদ তাড়ায় আছে নূরের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করার জন্য! এদিকে নূর চোখ তুলে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে না পর্যন্ত! খুব মনযোগ দিয়ে কেবল কফি খেয়ে চলছে। মাঝেমধ্যে মাহিন এবং আয়মনের কথায় ম্লান হাসছে। এরমধ্যেই হঠাৎ হাবিব আবরার হন্তদন্ত হয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে এলেন! নীড়কে লক্ষ্য করে তৎপর গলায় বললেন,,

“এই নীড় শোন? তোর হবু শ্বশুড় চাইছে আগামী দুদিনের মধ্যেই তোদের বিয়ের শুভ কাজটা সেরে ফেলতে। এখন তুই কী চাস?”

নীড়সহ উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হলো! তব্ধিত দৃষ্টিতে হাবিব আবরারের দিকে তাকালো। সাবরিনা আবরার উত্তেজিত হয়ে হাবিব আবরারের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। তিক্তময় গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,

“এসব তুমি কী বলছ নীড়ের বাবা? দুইদিনের মধ্যে কীভাবে সম্ভব বিয়ের কাজ সেরে ফেলা?”

“আমি কীভাবে বলব সাবরিনা? উনারা জোর করে উনাদের ইচ্ছাগুলো আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন! আমাকে কিছু বলার সুযোগ-ই দিলেন না।”

নীড় তাজ্জব ভঙ্গিতে এখনো বসে আছে। মুখ দিয়ে রা টি কাটছে না পর্যন্ত৷ নূর কফি খাওয়া ভুলে তেজী দৃষ্টিতে হাবিব আবরারের দিকে তাকালো। ক্ষীণ গলায় বলল,,

“এখনও তো বিয়ের কার্ডও ছাপানো হয়নি বাবা। দুইদিনের মধ্যে কীভাবে সম্ভব বিয়েটা সেরে ফেলা? আমাদের অনেক আত্নীয়-স্বজনও এখনো ভালো করে আসেনি। কোন যুক্তিতে তারা এই প্রস্তাবটা রাখল? কমনসেন্স বলতে কিছুই কি নেই?”

নীড় এবার মৌনতা ভাঙল। খাবার টেবিল ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। খড়খড়ে গলায় বলল,,

“কীসের এতো তাড়া তাদের হ্যাঁ? কীসের এতো তাড়া? মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠেছে! অফিস থেকে আমার এখনো ছুটিও নেওয়া হয়নি। সবাই জানে আরও এক সপ্তাহ পর আমার বিয়ে!”

মাহিনও টেবিল ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। হাবিব আবরারকে লক্ষ্য করে শান্ত গলায় বলল,,

“আমার মনে হয় বাবা তাদের সাথে বসে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। এভাবে তো হুটহাট করে বিয়ের ডেইট পাল্টানো যায় না। সবকিছুরই তো একটা ভালো খারাপ দিক আছে।”

হাবিব আবরার ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লেন। তটস্থ গলায় বললেন,,

“তারা তো আমার কোনো কথাই শুনছে না মাহিন। বলছে তাদের ছেলে নাকি দুইদিন পর কানাডায় চলে যাবে। এটলিস্ট বোনের বিয়েটা দেখে যেতে চায়।”

সেলিনা চৌধুরী এবার হাবিব আবরারের মুখের কথা টেনে নিলেন। নমনীয় গলায় হাবিব আবরারকে বুঝিয়ে বললেন,,

“দেখেন ভাই। তাদের সমস্যা আছে বিধায়-ই তারা বাধ্য হয়ে বিয়ের ডেইটটা সামনে এনেছেন! আমার মনে হয় এই বিষয়টা একটু ভেবে দেখা উচিৎ আপনাদের। সুবিধা-অসুবিধা তো সবার-ই থাকতে পারে তাই না? তেমনি কম্প্রোমাইজ করার ক্ষমতাও সবার মধ্যে থাকতে হবে।”

সোহানী মনে মনে হাসল! নিজের মনে বিড়বিড় করে বলল,,

“এসব কিছু-ই না আন্টি! আসল কারণ তো হলো খারাপ কিছু ঘটে যাওয়ার আগেই মেয়েকে নীড় ভাইয়া ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া!”

চাঁদ গলা ঝাড়লো। জায়মার কানে ফিসফিস করে বলল,,

“আমি বলেছিলাম না? ভাবির মধ্যে কোনো একটা ঘাপলা আছে? দেখলি তো কীভাবে মিলে গেল? নিশ্চয়ই বিয়ের ডেইট এগিয়ে দেওয়ার পেছনে গভীর কোনো কারণ আছে! যা আমি বা আমরা আঁচ করতে পারছি।”

#চলবে…?

#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_২৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

“আমি বলেছিলাম না? ভাবির মধ্যে কোনো একটা ঘাপলা আছে? দেখলি তো কীভাবে মিলে গেল? নিশ্চয়ই বিয়ের ডেইট এগিয়ে দেওয়ার পেছনে গভীর কোনো কারণ আছে! যা আমি বা আমরা আঁচ করতে পারছি।”

জায়মা ভাবুক হয়ে উঠল। চিন্তিত হয়ে চাঁদের কানে মিনমিনিয়ে বলল,,

“কারণটা এক্সয়েক্টলি কী হতে পারে চাঁদ? ভাবির কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?”

“উউউম শিওর না! তবে থাকতেও পারে।”

“হ্যাঁ। হাব-ভাব দেখে-ই বুঝা গেছে। আর এখনকার যুগে এটা কমন!”

“কেন রে? তোরও কি বয়ফ্রেন্ড আছে? তলে তলে সিএনজি চালাচ্ছিস?”

“ধ্যাত। কী যে বলিস না এসব! আমার যদি বয়ফ্রেন্ড থাকত না তবে সবার আগে তুই-ই জানতিস। আমি তো জাস্ট প্রেজেন্ট সিচুয়েশনটা তোকে বললাম। হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি সবারই বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড থাকে!”

“আমার কেন বয়ফ্রেন্ড নাই রে জাম্বু? তোর কি মনে হয় না আমার একটা বয়ফ্রেন্ড প্রয়োজন?”

“থাপ্পড় খাবি? চুপ করে বসে থাক। কখনো এসব রিলেশানে যাওয়ার কথা ভাববিও না।”

চাঁদ অট্ট হাসল! ঠাট্টসূচক গলায় বলল,,

“আরে গাঁধি আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম। আমার এতো শখ নেই কারো সাথে সম্পর্কে যাওয়ার।”

এরমধ্যেই হাবিব আবরার গলা ঝাঁকালেন। উদ্বিগ্নমনা হয়ে চেয়ার টেনে বসলেন। গড়গড় করে এক গ্লাস পানি খেলেন। সবার দিকে একবার শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। সবদিক ভেবে চিন্তে স্থির গলায় বললেন,,

“দেখো। সেলিনা ভাবি ঠিক-ই বলেছেন! সবার-ই সুবিধা-অসুবিধা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের সবার-ই উচিৎ কম্প্রোইজ করা। অনুর ভাই-ই তো হলো একজন। তারও তো শখ থাকতে পারে বড়ো বোনের বিয়ে দেখে যাওয়ার? আমরা যদি বিয়ের এলাহি আয়োজনটা এখন না করে কিছুমাস পরে করি তবে এখানে সবার-ই সুবিধা হবে! এখন কোনোরকম বিয়েটা হয়ে যাক। অনুর ভাই যখন ছয়-সাত মাস পরে আবারও দেশে ফিরে আসবে তখন না হয় বড়ো করে বিয়ের আয়োজন করা হবে! তখন আমাদের বাজেটও বাড়বে। ধুমধাম করে আবারও তাদের বিয়ে হবে।”

সবাই বিষয়টা মনযোগ দিয়ে ভাবতে লাগল। নীড় নিজেও বিষয়টা নিয়ে খুব গভীরভাবে ভাবল। একে-অপরের সাথে পরামর্শ করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই হাবিব আবরারের সিদ্ধান্তে একমত হলো! সাবরিনা আবরার মৃদু হেসে হাবিব আবরারের পাশে দাঁড়ালেন। হাবিব আবরারের কাঁধে হাত রেখে সহমত পোষণ করে বললেন,,

“তুমি ঠিক-ই বলেছ নীড়ের বাবা! আপাতত বিয়েটা ঘরোয়াভাবেই হয়ে যাক। আত্মীয়-স্বজনদের এখন দাওয়াত না করাই ভালো। পরবর্তীতে আবার যখন বড়ো করে অনুষ্ঠান করা হবে তখন না হয় সব আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে একসাথে আবারও বিয়েটা হবে!”

হাবিব আবরার তৎপর দৃষ্টিতে সাবরিনা আবরারের দিকে তাকালেন। অস্থির গলায় বললেন,,

“সামিয়া? সায়মা? ওরা আসবেনা?”

সাবরিনা আবরার বিমূর্ষ ভঙ্গিতে মাথাটা নুইয়ে নিলেন! এর উত্তর ঠিক উনার জানা নেই! পাশ থেকে সোহানী কথা টেনে নিলো। শুষ্ক হেসে হাবিব আবরারকে অভয় দিয়ে বলল,,

“আসবে আঙ্কেল। আম্মু এবং খালামনিকে আমি আগামীকালের মধ্যেই আসতে বলে দিব! সাথে আব্বু আর ছোটো আঙ্কেল তো আছেই। আপনি এই বিষয় নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। আমি ঠিক ম্যানেজ করে নিব।”

হাবিব আবরার স্বস্তির শ্বাস ছাড়লেন। ম্লান হেসে সোহানীর দিকে তাকালেন। ধীর গলায় বললেন,,

“এতো বছরের জমতে থাকা রাগ-অভিমান ভুলে যেনো তারা আমার ছেলের বিয়েতে আসে। এই প্রত্যাশা তাদের থেকে।”

সেলিনা চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন! মাথা নুইয়ে অপরাধী গলায় বললেন,,

“আসলে এসবের জন্য আমি-ই দায়ী! আজ আমার জন্যই আপনাদের মধ্যে এতো দ্বন্ধ, এতো কলহ, এতো দূরত্ব, এতো মান-অভিমান। কেন যে আমি সেদিন সিদ্ধান্তটা নিতে গেলাম!”

মাহিন বিমূর্ষ হয়ে মাথা নুইয়ে নিলো! বিমূঢ় গলায় সেলিনা চৌধুরীকে লক্ষ্য করে বলল,,

“থাক না আন্টি! এসব কথা এখন থাক প্লিজ। এই মুহূর্তে আমি এসব মনে করতে চাইনা। দিনটা খারাপ করতে চাইনা!”

মাহিনের ভেতরের কষ্টটা বুঝতে পারলেন সাবরিনা আবরার! নাক টেনে কেঁদে উনি মাহিনের পাশে এসে দাঁড়ালেন। মাহিনের মাথায় দীর্ঘ এক চুমু খেয়ে কান্নাজড়িত গলায় বললেন,,

“ঠিক আছে বাবা। এসব আর মনে করতে হবেনা তোর। আমরা আর কখনো তোর সামনে এই প্রসঙ্গে কোনো কথা তুলব না! আমরা এখন নীড়ের বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলব কেমন? তুই আর মন খারাপ করিস না।”

এরমধ্যেই নীড় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পকেট থেকে তার সেলফোনটি বের করল। অধীর গলায় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“তাহলে আমি এখন বসকে কল করে সবটা জানিয়ে দিচ্ছি। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিচ্ছি। যদিও এখন এক সপ্তাহের বেশি ছুটি নিতে পারবনা!”

হাবিব আবরার সহমত পোষণ করলেন। জায়গা থেকে ওঠে দাঁড়ালেন। ব্যগ্র গলায় বললেন,,

“আচ্ছা নে। সাতদিন-ই বা কম কীসে? আমি বরং বিয়ের শপিং করার জন্য মেয়েদের শপিংমলে পাঠিয়ে দিই। আর ছেলেদের ডেকোরেটিংয়ের কাজে লাগিয়ে দিই। সময় হাতে নেই একদম। যা করার আজকের মধ্যেই করতে হবে।”

যেই ভাবা সেই কাজ। অফিসের বসকে কল দিয়ে নীড় সাতদিনের জায়গায় দশদিনের ছুটি নিলো! সকালের নাশতাটা কোনো রকমে সেরে বাড়ির মেয়েরা শপিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। তবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পূর্বে তারা অনুর পছন্দ অপছন্দ সব জেনেই শপিংয়ে বের হলো। সবার পছন্দ তো সমান নাও হতে পারে। তাই আগে থেকেই সবকিছু জেনে যাওয়া ভালো। তাদের সাথে মুরুব্বি হিসেবে সেলিনা চৌধুরী এবং আফতাব চৌধুরী আছেন। যদিও মেয়েরা কেউ শপিংয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না! কারণ তারা এই বিয়েটাকে মন থেকে মেনে নিতে পারছেনা! খারাপ কিছুর ইঙ্গিত করছে সবাই। যা কাউকে তারা মুখ ফুটে ব্যক্ত করতে পারছেনা। বিশেষ করে সোহানী। ভেতরে ভেতরে সে কিছু প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রণায় গুমরে মরছে!

বাড়ির ছেলে ফেলেরা বাড়ির ডেকোরেশনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল! হলুদের অনুষ্ঠান আগামীকাল-ই ডিসাইড করা হলো। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা বাড়ির ড্রয়িংরুমটা অনুষ্ঠানের উপযোগী করে তুলছিল। কল করে নূর একজন ভালো ডেকোরেটর ম্যানেজার নিয়ে এলো। যার ডেকোরেটিংয়ে হলুদের মহল সাজানো হবে। বাড়ির ছেলেরা সবদিক থেকে ডেকোরেটিং ম্যানেজারকে সাহায্য করবে। অন্যদিকে, সাবরিনা আবরার এবং হাবিব আবরার হিসাবের খাতা নিয়ে বসলেন। কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করবেন তার একটি নির্দিষ্ট হিসাব মেলাতে চাইছেন। তাদের হিসাবগুলো ঠিক জায়গায় বরাদ্দ হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য পাশে নীড়ও রয়েছে। বাড়িতে কাজের হৈ-হট্টগোল লেগে গেছে। কোন কাজটা ছেড়ে কোন কাজটা আগে করবে সে নিয়ে সবার মধ্যে তুমুল ব্যস্ততার ঝড়। এই মুহূর্তে দম ফালানোরও জোঁ নেই কারোর। কীভাবে অনুষ্ঠানটাকে সুন্দরভাবে প্রেজন্ট করা যাবে সে নিয়েই অস্থির সবাই।

_____________________________________

আজ নীড়ের হলুদ সন্ধ্যা! হলুদ শেরওয়ানিতে নীড়কে রূপকথার রাজকুমারদের মতো কম সুন্দর দেখাচ্ছে না! আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নীড় আজ নিজেকে দেখছে। ব্যস্ততা কাটিয়ে প্রায় অনেকমাস পর নিজেকে এতো নিঁখুতভাবে দেখা তার। উৎফুল্ল হাসিতে তার ঠোঁটের কোণ ছেঁয়ে আছে। অনুকে সে মন-প্রাণ থেকে বিয়ে করতে চাইছে। নীড়ের পাশেই হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে তার ভাই-রা দাঁড়িয়ে আছে। সবার ঠোঁটের কোণেই খুশির হাসি। নীড়কে খুশি দেখে তারা নিজেরাও বেশ খুশি। হলুদ পাঞ্জাবিতে নূর, মাহিন, আয়মন, সাদমান এবং সাব্বিরকেও নীড়ের চেয়ে কম সুন্দর দেখাচ্ছে না! তবে ছেলেরা সবাই হলুদ পাঞ্জাবি পড়লেও মাহিন পড়েছে বাসন্তী কালার পাঞ্জাবি! তার প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো নূরের সাথে নিজেকে গুলিয়ে না ফেলা! সবাই যেনো তাদের দুই ভাইকে সহজেই চিনতে পারে সেজন্যই এই ট্রিক কাজে লাগানো।

হলুদের স্টেজ এখন রেডি প্রায়। ড্রয়িংরুম জুড়ে রকমারি মরিচা বাতির সমাহার। সিঁড়ির প্রতিটি সাইড ঘেঁষে তাজা গোলাপ এবং লাল, নীল রঙের মরিচা বাতি জ্বলছে। হাজার হাজার সুগন্ধি ফুলের সমারোহে ম ম করছে হলুদের স্টেজ। এতো কম সময়ের মধ্যে যে পুরো ড্রয়িংরুমটা এতো জাঁকজমকভাবে সাজানো হবে তা ভাবতে পারেনি বাড়ির কেউ! ডেকোরেটর ম্যানেজার যথেষ্ট অভিজ্ঞশীল ব্যক্তি ছিলেন বলেই সব সম্ভব হয়েছে! এর জন্য বাড়ির সবাই উনার কাছে কৃতজ্ঞ।

বাড়ির সব মেয়েরা ব্যস্ত ভারী মেকাপে! বিশেষ করে চাঁদ! সোহানীর আনা সমস্ত মেকাপ চাঁদ নিজের মুখেই ঘঁষে মেজে এপ্লাই করছে! সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে সে মেকাপ করছে। জায়মা, নাদিয়া, সাদিয়া এবং রুহি তার দিকে নির্বোধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চাঁদের কাণ্ডকীর্তি তাদের মাথায় ঢুকছে না। এইদিকে তারা হালকা সাজে তঅনেক আগে থেকেই রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে তারা এখন ব্যাকুল হয়ে চাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের তিনজনের ড্যাব ড্যাব চাহনি দেখে চাঁদ মুখে ফাউন্ডেশন মেখে তাদের ব্যঙ্গ করে বলল,,

“দেখবি আজ স্টেজে সবার দৃষ্টি শুধু আমার দিকেই থাকবে! সবাই বলবে ওমা এতো দেখছি বিশ্বের সেরা সুন্দুরী এসে হাজির! তোরা তো একটাও নিঁখুতভাবে সাজতে পারিস না। কীসব মাথা মুন্ডু সাজিস! আমাকে দেখ? আমি কীভাবে সাজছি। বিয়ের অনুষ্ঠানে এভাবে সাজতে হয় বুঝলি? ভারী মেকাপ করে।”

জায়মা খিলখিল করে হেসে দিলো। হলুদ শাড়ির কুঁচি ধরে বিদ্রুপাত্নক গলায় বলল,,

“হ্যাঁ সাজ। ভালো করে সাজতে থাক। পরে না আবার তোর মুখের অবস্থা কিরিম আপার মতো হয়ে যায় দেখিস!”

“বুঝি তো তোদের হিংসে হয়! আমি একটু সুন্দর করে সাজলেই তোদের হিংসে হয়। যা যা নিচে যা। তোদের জন্য আমার মেকাপ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আধা ঘণ্টা পরে আমি নিচে আসছি। তখন সবাই তাক লেগে থাকবি। আর আমাকে দেখে দেখে আফসোস করবি!”

জায়মা মুখ চেপে হাসল। ভাবলেস গলায় বলল,,

“ওকে। দেখা যাবে কে বা কারা তখন আফসোস করে! যাই হোক আমরা যাচ্ছি। তুইও চলে আয়, সাজ হলে।”

নাদিয়া, সাদিয়া এবং রুহিকে সাথে নিয়ে জায়মা রুম থেকে প্রস্থান নিলো। ড্রেসিং টেবিলের আয়না দিয়ে চাঁদ তাদের লক্ষ্য করছিল। ভেংচি কেটে তাদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে বলল,,

“আইছে আমারে কিরিম আপা কইতে! আমি যে ইউটিউব ঘেঁটে বড়ো বড়ো মেকাপ আর্টিস্টদের টিউটোরিয়াল দেখে এতো হাইলি মেকাপ করা শিখেছি এটা তো ওরা জানে না! জানলে আর ওসব বলত না। যাই হোক বাবা, আমি এখন মন দিয়ে সাজি। জীবনে প্রথমবার নিজে নিজে সাজার একটু সুযোগ পেলাম! প্রতিবার তো সোহানী আপু-ই কোনোরকম মেকাপ ছাড়া আমাকে সাজিয়ে দেয়। তখন আমাকে দেখতে একটুও ভালো লাগে না! গ্রামের চাচাতো, খালাতো, মামাতো বোনদের মতো লাগে!”

ইতোমধ্যেই হাতে করে পাঁচ কার্টুন মিষ্টি নিয়ে নূর হম্বিতম্বি হয়ে চাঁদের রুমে প্রবেশ করল। চাঁদ মুখে মেকাপ করতে এতোটাই ব্যস্ত যে এদিক-ওদিক তাকানোর সময়টা পর্যন্ত পেল না! গভীর মনযোগ দিয়ে সে তার কাজ করছে। এই সময়ে যেনো এদিক-বেদিক তাকানো তার মানা! এইদিকে নূর মিষ্টির কার্টুনগুলো বেডের উপর রেখে বেশ হাঁপিয়ে উঠল। কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো মুছল। সামনের অগোছালো চুলগুলো হালকা টেনে ধরল। ক্লান্তভরা শ্বাস ছেড়ে সে সামনে তাকাতেই হঠাৎ আঁতকে উঠল! জায়গা থেকে দু’কদম পিছিয়ে গেল। শুকনো ঢোক গিলে আয়নায় চাঁদের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। হঠকারিতায় মৃদু চিৎকার করে বলল,,

“এই? এসব কী সেজেছ তুমি?”

ঘটনার আকস্মিকতায় চাঁদের হাত থেকে মেকাপের ফোমটা নিচে পড়ে গেল! তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাঁদ পিছু ফিরে তাকালো। নূরকে দেখামাত্রই তার গা-পিত্তি জ্বলে গেল! চাঁদকে সরাসরি দেখামাত্রই নূরের চক্ষুজোড়া চড়কগাছে পরিণত হলো! মুখ হাত রেখে সে অস্পষ্ট গলায় বলল,,

“ভূভূভূতত!”

চাঁদ এবার শঙ্কিত হয়ে উঠল! ধপ করে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। শাড়ির কুঁচি টেনে ধরে দৌঁড়ে নূরের পিছনে এসে দাঁড়ালো! নিজেকে নূরের পিছনে আড়াল করে নূরের পাঞ্জাবি আঁকড়ে ধরল! ভয়াল গলায় বলল,,

“কোকোকোথায় ভূত?”

নূর তাজ্জব বনে গেল! পিছু ঘুরে অবুঝ দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। কপাল কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“তুমি ভূত না?”

চাঁদ এবার বুঝতে পারল নূর কাকে ভূত বলতে চেয়েছে! সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ অগ্নিশর্মা হয়ে উঠল। চোয়াল শক্ত করে নূরের দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

“কী বললেন আপনি? আমি ভূত?”

নূর তেজী দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। ক্ষিপ্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“ভূত নয়তো কী? মুখে এসব কী মেখেছ হ্যাঁ? আটা ময়দা সুজি! এসবের কারণেই তো তোমার আসল মুখটা বুঝা যাচ্ছে না।”

নূরের পাঞ্জাবিটা আরও শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরল চাঁদ! নূরের প্রতি জমা সমস্ত ক্ষোভ সে নূরের পাঞ্জাবির উপর ঝাড়ল। রাগে ফোঁস ফোঁস করে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মেকাপ সম্পর্কে কী বুঝেন আপনি হ্যাঁ? এসব আটা ময়দা সুজি? আটার দাম জানেন আপনি কত? এই যে মুখে এই মেকাপগুলো মেখেছি না? এই মেকাপগুলোর দাম শুনলে তো আপনার মাথা-ই ঘুরে যাবে! চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যাবে। ২০ কেজি আটা ময়দা কেনা যাবে এই মেকাপ দিয়ে বুঝতে পেরেছেন?”

পাঞ্জাবি থেকে চাঁদের হাতটা জোর করে ছাড়িয়ে নিলো নূর। চোখ লাল করে কর্কশ গলায় বলল,,

“এতো কিছু শুনতে চাইনা আমি ওকে? মুখটা এক্ষণি ভালো করে ধুঁয়ে এসো! আজিব চিড়িয়া লাগছে তোমাকে! এই মেকাপ নিয়ে একদম নিচে যাওয়া যাবেনা। নিচে নীড় ভাইয়ার অনেক ফ্রেন্ড সার্কেল এবং কলিগরা আছে। তোমাকে এই অবস্থায় দেখলে তাদের সামনে আমাদের পরিবারের ফেইস লস হবে।”

“আরে ধূর! কখন থেকে কী যা তা বলছেন? আমি তো মেকাপটা এখনো ভালোভাবে মুখে ব্লেন্ড-ই করিনি। তাই এমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে। যখন মেকাপটা খুব ভালোভাবে মুখে মিশে যাবে না? তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।”

নূরকে উপেক্ষা করে চাঁদ আবারও ব্যস্ত ভঙ্গিতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসল। ফোমটা হাতে তুলে নিয়ে আয়না দেখে মুখটা ভালোভাবে ব্লেন্ড করতে লাগল। নূর রূদ্রাক্ষের দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো! ঝাঁঝালো গলায় বলল,,

“যদি তোমার কারণে আমার পরিবারের ফেইস লস হয়না? তো আই টোল্ড ইউ চাঁদ তখন কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়বনা আমি। জাস্ট মাইন্ড ইট ওকে?”

“এত রাগ দেখাবেন না তো! সবসময় শুধু রাগ আর রাগ। কিছুক্ষণ পর যখন আমাকে দেখবেন না? তখন তাক লেগে যাবেন! মনে মনে বলবেন, আরেহ্ বাহ্ এ আবার কে? এ কী সত্যিই আমাদের চাঁদ না-কি? আকাশের চাঁদ আবার জমিনে খঁসে পড়ল না তো?”

নূর ফিক করে হেসে দিলো। শ্লেষাত্মক গলায় বলল,,

“নিজের ঢোল নিজে একটু কম পেটাও বুঝছ? আসছে নিজেকে আকাশের চাঁদের সাথে তুলনা করতে! তোমাকে না তখন? বটগাছে ভর করা পেত্নীদের মতো লাগবে! আ’ম ডেম শিওর!”

হাসতে হাসতে নূর রুম থেকে প্রস্থান নিতেই চাঁদ পেছন থেকে নূরকে ডাকল। চোখের উপর আই শেডো লাগাতে লাগতে ব্যস্ত গলায় বলল,,

“আজ আপনি যাই বলুন না কেন আমি কোনো রিয়েক্ট করবনা! এই খুশির দিনে চিরশত্রুদের সাথেও মুখ লাগাতে নেই! তবে আজ একটা সত্যি কথা বলতে চাই। হলুদ পাঞ্জাবিটায় না? আপনাকে সত্যিই দারুন মানিয়েছে! মুগ্ধ হওয়ার মতো সুন্দর লাগছে!”

নূর থমকালো! পিছু ঘুরে চাঁদের দিকে আচ্ছন্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। চাঁদ ব্যস্ত চোখের উপরে আই শেডো লাগানোর পর চোখের নিচে হালকা করে কাজল পড়তে। আনমনেই নূর বুকের উপর দু’হাত গুজে ম্লান হাসল। চাঁদের প্রতিবিম্বের দিকে আবিষ্ট দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! আচম্বিতেই চাঁদ পিছু ঘুরে স্মিত হেসে নূরের দিকে তাকালো। মাথাটা ডান পাশে ঈষৎ বাঁকিয়ে বার বার চোখের পলক ফেলে নূরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কাজলটা কি ঠিক হয়েছে?”

বুকের পাঁজর থেকে হাত গুটিয়ে নিলো নূর। চাঁদের থেকেও অবিলম্বে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। মাথা চুলকে পেছনের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। গলা খাদে এনে বলল,,

“আই থিংক কাজলটা আরও একটু গাঢ় হবে!”

আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না নূর! তড়িৎ বেগে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। নূরের যাওয়ার পথে তাকিয়ে চাঁদ ঠোঁট উল্টালো। নির্বোধ গলায় বলল,,

“আরও গাঢ় করে পড়তে হবে? কিন্তু আমি তো গাঢ় করে কাজল পড়তে পারিনা! তবে কি আজ গুমরা মুখোটার কথা রাখা হবেনা আমার?”

#চলবে…?