#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_৬৪
#নিশাত_জাহান_নিশি
“এই কী হয়েছে রে? জায়মার কী শরীর খারাপ?”
তিথী নির্বোধ ভাব নিলো। চাঁদের দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ঠোঁট ভেঙে ভাবশূণ্য গলায় বলল,,
“বলল তো শরীর খারাপ।”
চাঁদ ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। হঠাৎ জায়মার কী এমন শরীর খারাপ হলো? কাল রাতেও তো সব ঠিক ছিল। মধ্যরাত অবধি সবাই মিলে আড্ডা দিয়েছিল। জায়মাকে তো তখন হাসি খুশি-ই দেখাচ্ছিল।পুচিকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানার উপর শুইয়ে দিলো চাঁদ। চোখে-মুখে দুঃশ্চিতার ছাপ ফেলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা জায়মার মাথার কাছে বসল। বিশৃঙ্খল শ্বাস ফেলে হেঁচকা টানে জায়মার মুখের উপর থেকে কাঁথাটা সরাতেই চাঁদ ভ্রু যুগল খরতর ভাবে কুঁচকে নিলো! উদগ্রীব গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“এই জায়মা তুই কাঁদছিস কেন?”
সঙ্গে সঙ্গেই জায়মা মুখ ঢেকে বিষাদে আরও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল! কান্নার মাত্রা যেন বেগতিক বাড়তে লাগল তার। বিরহে মূর্ছা যাচ্ছিল। চাঁদ এবং তিথী দুজনই এবার ধরাধরি করে জায়মাকে টেনে শোয়া অবস্থা থেকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। দুজন দুপাশে বসে জায়মার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। নাক টেনে কেঁদে জায়মা মুখ ঢেকে বলল,,
“তোরা প্লিজ এখন এখান থেকে যা। আমাকে একটু একা থাকতে দে।”
চাঁদ অবাক হলো। অবাক বলতে ভীষণ অবাক হলো। এই প্রথম জায়মাকে এতটা ইনসিকিউরড মনে হলো। সবসময় খোলাখুলি মনে থাকা জায়মাকে এতটা সংকীর্ণতা মানায় না। জায়মার আচরণে চাঁদ একগুঁয়ে ভাব নিলো। একরোখা গলায় বলল,,
“কোথাও যাচ্ছি না আমরা। আগে বল তোর কী হয়েছে?”
“বললাম তো তোরা যা। প্লিজ আমাকে একা থাকতে দে।”
হেঁচকি তুলে কেঁদে জায়মা পুনরায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল। চাঁদ এবং তিথী তাজ্জব দৃষ্টিতে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। দুজনই ইশারায় বলল হলোটা কী এর? শূণ্যতায় কোনো উত্তর না পেয়ে দুজনই মাথা নুইয়ে জায়মার কাছ থেকে সরে এলো। পুচিকে কোলে তুলে চাঁদ রুম থেকে বের হয়ে রুমের দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দিলো। বিষণ্ণ মনে দুজন করিডরে পাশাপাশি দাঁড়াতেই চাঁদের আচম্বিত দৃষ্টি পড়ল নূরের রুম থেকে বেশ ফিটফাট হয়ে বের হওয়া সাদমানের দিকে! সময় ব্যয় করতে চাইলনা চাঁদ। তৎক্ষনাৎ পুচিকে সে তিথীর কোলে তুলে দিলো। তিথীকে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই সে দ্রুত পা ফেলে সাদমানের মুখোমুখি দাঁড়ালো। অনর্গল গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“আচ্ছা কাল রাতে কী আপনার জায়মার সাথে কথা হয়েছিল?”
ঘটনার আকস্মিকতায় সাদমান ভ্রু কুঁচকালো। অবুঝ ভাব নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,,
“হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
“বলুন না? কথা হয়েছিল কী?”
“হ্যাঁ হয়েছিল। তো কী হয়েছে এখন?”
“আপনি জর্ডান চলে যাবেন জায়মা জানে?”
“হ্যাঁ। গতকালই বলেছি। হয়েছেটা কী?”
“আপনার সাথে আমার কিছু দরকারী কথা ছিল।”
সাদমান বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতে তার হাত ঘড়ির দিকে তাকালো। তাড়াহুড়ো করে সে হঠাৎ চাঁদের দিকে অপারগ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। দ্রুত গলায় বলল,,
“সরি চাঁদ। এখন আমার সময় হবেনা। পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। ওখানে কিছু ফর্মালিটিস আছে। আসলে জিজু চাইছে আর্জেন্ট আমাকে নিয়ে জর্ডান ব্যাক করতে। ধরো এই দশ/পনেরো দিনের মধ্যেই! তাই একটু তাড়ায় আছি। তবে আমি ফ্রি হয়ে তোমার সাথে কথা বলছি। এখন আসছি বায়।”
চাঁদকে উপেক্ষা করে সাদমান একপ্রকার দৌঁড়ে নিচে নেমে গেল। ফোনে কার সাথে যেন কথা বলতে লাগল। মুহূর্তের মধ্যেই বাড়ির সদর দরজা অতিক্রম করে গেল। চাঁদ বিষণ্ণ দৃষ্টিতে সাদমানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে লাগল। জায়মার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য তার মন কাঁদতে লাগল। পুচিকে কোলে নিয়ে তিথী দ্রুত পা ফেলে চাঁদের পাশাপাশি এসে দাঁড়ালো। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“সাদমান ভাইয়া কি সত্যিই চলে যাচ্ছে?”
চাঁদ মাথা নাড়ালো। হতাশ শ্বাস ফেলে বলল,,
“জায়মা পারবে তো এই শোক সামলাতে? সাদমান ভাইয়া হয়তো কখন-ই জায়মার হবেনা। আর যাই হোক জোর করে তো আর ভালোবাসা হয়না! আর আমি এই ভালোবাসা বাসির ক্ষেত্রে কাউকে জোর ও করতে চাইনা।”
________________________________
পরের দিন বৌভাতের অনুষ্ঠান খুব ধুমধামভাবে পালন করা হলো। নীড় অগাধ টাকা খরচ করেছে তার রিসিপশানে! পাড়া-প্রতিবেশী হতে শুরু করে কাছের দূরের সমস্ত আত্নীয়-স্বজন, অফিসের বস, কলিগ, ফ্রেন্ড সার্কেল সবাই আমন্ত্রিত ছিল তার এই মহা আলোড়িত রিসিপশানে। দিনটা খুবই হাসি খুশিতে উদযাপন করা হয়। বিশেষ করে চাঁদ, নূর, মাহিন, তিথী, আয়মন, তাশফিয়া তারা খুব উপভোগ করেছে এই দিনটিকে। তবে সাদমান এটেন্ড ছিলনা রিসিপশানে! পাসপোর্ট এবং ভিসা নিয়ে ছুটোছুটিতে ছিল। যার কারণে জায়মারও ভীষণ মন খারাপ ছিল! অনুষ্ঠানের শেষে এবার নতুন বৌ এবং বরকে নিয়ে কুমিল্লা ফেরার পালা! যদিও নীড়ের সাথে নূর এবং মাহিনের যাওয়ার কথা ছিল তবে এদিকটা সামলানোর জন্য তাদের আর কুমিল্লা যাওয়া হলোনা! নূর ভীষণ মন খারাপ করলেও চাঁদ নূরের সেই মন খারাপকে একরত্তিও প্রশ্রয় দিলোনা। উল্টো নূরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঢাকাতেই থাকতে বলল। অপারগ হয়ে নূর চাঁদের কথা মেনে নিলো। কঠোর মনে চাঁদকে বিদায় দিলো! চারিদিকে সন্ধ্যা নামতেই সবাই কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। হলের যাবতীয় জিনিসপত্র আয়মন অনেক আগেই গাড়ি ভাড়া করে কুমিল্লা তাদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছে। এবার শুধু তাদের কুমিল্লা পৌঁছার পালা।
কথায় আছে, “সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা।” সেই অনুরুদ্ধ স্রোতের তালেই ভেসে গেল মাঝখানে তিনটি বছর! সব আগের মত ঠিকঠাক থাকলেও সবক’টা সম্পর্কেই বেড়েছে নতুন করে টান, ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা, কাছে আসা! নীড় এবং সোহানীর ভালোবাসা দিন দিন যেন বাড়ছে। তাদের এক বছরের একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তানও আছে! যার নাম রাখা হয়েছে “আলভীন আবরার নিহাদ।” সবাই আদর করে তাকে নিদ বলে ডাকে। বিশেষ করে নূর নিহাদকে নিদ নামে ডাকতে বেশ পছন্দ করে! নিদ হয়েছে পুরো তার মায়ের মত! যেন মায়ের কার্বন কপি। যেমন সুন্দর দেখতে, তেমনি মায়াবী চেহারার গড়ন! নীড় যেন এই হিংসেতেই সারাক্ষণ জ্বলে! কেন তার ছেলে তার মত হলোনা? কেন তার মায়ের মত হতে গেল? সাবরিনা আবরার তখন হেসে হেসে বলে, আরেহ্ বাপ এত কাঁদিস না তো। তোর যখন মেয়ে হবে ঠিক তোর মতই হবে দেখতে। এই কথায় সোহানী ভীষণ লজ্জা পেলেও নীড় মনে মনে বাঁকা হাসত! আসলেই তার এবার একটা তার মতই দেখতে ফুটফুটে মেয়ে চাই!
অনার্স এবং মাস্টার্স কমপ্লিট করে নূর এখন একটি বেসরকারি কলেজের অ্যাকাউন্টিং টিচার। সবেমাত্র চাকরীটা পেয়েছে সে। দু, তিন দফা ট্রেনিংয়ের পর চাকরীতে জয়েন করবে। এরজন্য মাস খানিক সময় তো লাগবেই। আয়মন তার বাবার বিজনেস দেখাশোনা করছে। বিজনেসের পুরো দায়ভার এখন তার উপরই রপ্ত। সবদিক সামলাতে সামলাতে আয়মন বেশ হিমশিম খেয়ে পড়ছে। মাহিন এবং নীড় মিলে তাদের যৌথ উদ্যোগে নিজেদের একটি কনস্ট্রাকশন বিজনেস গড়ে তুলেছে। যার সমস্ত পুঁজি নীড়ের। দুই ভাই মিলে এখন দায়িত্ব নিয়ে সেই কনস্ট্রাকশন দেখাশোনা করছে। সাদমান আপাতত জর্ডান আছে। আগামী দশদিনের মধ্যেই তার দেশে ফেরার কথা। পরিবার থেকে তার জন্য মেয়ে দেখছে! দেশে ফিরলেই তার ধুমধাম করে বিয়ে দিবে বলে দিবাস্বপ্ন দেখছে তার পরিবার!
চাঁদ, জায়মা, তিথী এবং তাশফিয়া অনার্স প্রায় কমপ্লিট করার পথে। পরীক্ষা দিয়েছে একমাস আগে এবার কেবল রেজাল্ট পাওয়ার অপেক্ষায়। প্রেমের দিক থেকে সবাই ষোলআনা পরিপূর্ণ থাকলেও জায়মার প্রণয় এখনো কারো সাথে হয়নি! সাদমান ছাড়া সে কাউকে তার মনে বসতে দেয়নি! এখনো ঠিক একইভাবে সাদমানকে মনে-প্রাণে ভালোবেসে যাচ্ছে সে৷ সাদমান যদি তার না ও হয় তবুও তার কোনো আক্ষেপ নেই! কুমারী হয়েই গোটা জীবন কাটিয়ে দিবে! যদিও পরিবার চাইবেনা তবে তার ইচ্ছেই যেন এটা।
তাশফিয়ার জন্য বিভিন্ন ভালো ভালো জায়গা থেকে বিয়ের সম্বন্ধ আসছে! যার আভাস আয়মনের কানে অনেক আগেই পৌঁছেছে। আয়মনও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে তাশফিয়াকে বিয়ে করার। পরিবারকে তাশফিয়ার কথা বলার। পড়াশোনা শেষে এখন মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত সে। বিয়ের বয়সও হয়ে গেছে। এবার তার আর কোনো অজুহাত নেই। থাকার কথাও না। তাই পরিবারের তরফ থেকে প্রস্তাব পাঠানোর চেষ্টা করছে আয়মন। যদিও তাশফিয়ার মা মনে মনে আয়মনকে জামাই হিসেবে মেনে নিয়েছে! তবুও আয়মনের পরিবার থেকে প্রস্তাব আসার অপেক্ষা করছে!
তিথীর পরিবার এইতো কিছুদিন হলো মাহিনের কথা জেনেছে। যখন তিথী তার তিন নম্বর বিয়েটা ভেঙেছে! জামাই হিসেবে মাহিনকে তাদের সবার বেশ পছন্দ হয়েছে। যদিও তাদের এক্সপেকটেশন ছিল আরও উপরে! তবে মেয়ের সুখের কথা ভেবে এবং মাহিনের দিকটাও বিবেচনা করে মেয়ের আবদারকে তারা মেনে নিয়েছে। এবার মাহিন তার পরিবার নিয়ে যেদিন বিয়ের কথা বলতে আসবে সেদিনই তারা বিনা দ্বিধায় মেয়েকে মাহিনের হাতে তুলে দিবে!
চাঁদ এবং নূরের বিয়ে তো সেই তিনবছর আগে থেকেই ফিক্সড করা আছে। শর্তানুযায়ী নূরের চাকরী পাওয়ার পর পরই তাদের বিয়ে হওয়ার কথা৷ নূরও এখন চাকরী পেয়ে গেল। এবার শুধু ভালো দিন ক্ষণ দেখে বিয়ে দেওয়ার পালা। নূর এবং চাঁদের ভালোবাসা দিন দিন মাখোমাখো হচ্ছে। দিনরাতের বেশিরভাগ সময় জুড়ে তাদের ফোনে কথা চলে। ফোন করলে কিছুতেই ছাড়তে চায়না নূর। চাঁদকে বিরক্ত করে এরপর ছাড়ে। সারাক্ষণ ভিডিও কলে থাকে। নূরের অতিরিক্ত ভালোবাসায় চাঁদ বিরক্ত হয়ে উঠছে! সেই বিরক্তির মাঝেও একপ্রকার সুখ খুঁজে পাচ্ছে!
আজ সকাল হতেই নূর শাওয়ার নিতে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে! ভোর সাতটা থেকেই তার বড্ড তাড়াহুড়ো। এই সাত সকালে সে রুমের লাইটটাও জ্বালিয়ে রেখেছে। যার সাথে সাথে মাহিনের ঘুমেরও বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে! কোনোরকমে শাওয়ার নিয়ে নূর ভেজা চুলে রুমে প্রবেশ করল। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দু’হাত দ্বারা চুল ঝাড়তে লাগল৷ ব্যস্ত ভঙ্গিতে টাওয়াল দ্বারা ভেজা গাঁ মুছতে লাগল। অমনি চুলের পানি এসে মাহিনের আপাদমস্তকে পড়ল! ঝট করে চোখ মেলে তাকালো মাহিন। রাগে গটগট করে তেজর্শী দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। চোয়াল শক্ত করে শুধালো,,
“এই কী হইছে রে তোর? সাত সকালে কী শুরু করলি? ঘুমাতে দিবি না নাকি?”
ঘুমেসিক্ত ফোলা ফোলা চোখে নূর অবিন্যস্ত দৃষ্টি ফেলল মাহিনের দিকে। টাওয়াল দ্বারা চুলগুলো মুছে বলল,,
“কুমিল্লা যাব। একটু কাজ আছে।”
মাহিন হামি তুলল। পুনরায় চোখ বুজার বন্দোবস্ত করল। আলসেমি গলায় বলল,,
“কী কাজ?”
“আজ পাগলীটার জন্মদিন!”
কথাটা বলেই নূর আনমনে হেসে দিলো! চাঁদকে অনুভব করতে লাগল। মাহিন ধড়ফড়িয়ে বসা থেকে উঠল। ঘুম যেন নিমিষেই তার চোখ থেকে উড়ে ফুড়ে গেল! পূর্ণদৃষ্টি মেলে বেগময় গলায় বলল,,
“আমি যেতে পারব?”
নূর ভ্রু কুঁচকালো। হাতে থাকা টাওয়ালটা মাহিনের মুখের উপর ছুড়ে মারল। বুকে হাত গুজে ডান পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“কেন? তিথীর সাথে দেখা করার এত শখ?”
স্মিত হেসে মাহিন মাথা ঝাঁকালো। পেছনের চুলগুলো টেনে বলল,,
“ঐ আর কী!”
“দেখা করার এত শখ থাকলে সিঙ্গেলে গিয়ে দেখা কর। কাবাব মে হাড্ডি নিতে পারবনা আমি!”
মাহিনকে সম্পূর্ণ নিরাশ করে দিয়ে নূর হাত দ্বারা চুল ঝেড়ে আলমারিটা খুলল। কালো রঙের একটি শার্ট বের করল। পুনরায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শার্টটা গাঁয়ে জড়িয়ে নিলো। মাথাটা ঝাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,
“জানি পাগলীটা খুব রাগ করে আছে। হয়তো ভাবছে আমি তার জন্মদিনের কথা ভুলেই গেছি! তাকে সারপ্রাইজ দিব বলেই তো তাকে সাময়িক কষ্ট দেওয়া। যখনি সারপ্রাইজটা পাবে তখনি সে সব কষ্ট ভুলে যাবে।”
আজ সকাল থেকেই চাঁদ বেশ তেজ ঝাল করছে! বাড়ির সবার সাথে কেমন ঝাঁজ দেখিয়ে কথা বলছে। সকালের নাশতাটাও অবধি করেনি সে। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় রণরঙ্গিণী হয়ে বসে আছে। অবাধ্য দৃষ্টি ফেলে কেবল হাতের কাছে থাকা ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকাচ্ছে! গতকাল রাত থেকে নূরের কোনো খবর নেই। না করছে ফোন না করছে মেসেজ। ফেসবুকেও তেমন এক্টিভ নেই! তার ইনবক্সে ফ্রেন্ডরা মিলে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। তাকে ট্যাগ করে পোস্টও করছে। তবে নূরের কোনো খবর নেই। বাড়ির প্রত্যেকেও চাঁদকে উইশ করে গেছে। তিথী, তাশফিয়া, জায়মা সবাই চাঁদকে সারপ্রাইজ দেওয়ার বন্দোবস্ত করছে। আয়মন অলরেডি জন্মদিনের কেক অর্ডারও করে ফেলেছে। রাতে মহা সেলিব্রেশন হবে বাড়িতে!
সকাল ঠিক দশটা বাজতেই চাঁদ তার ফোনটা বন্ধ করে দিলো! ফুপিয়ে কেঁদে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল তার। নূরের থেকে এতটা অনীহা আসে করেনি সে! গত তিনবছর ধরে নূর রাত বারোটা বাজতেই সবার আগে তাকে বার্থডে উইশ করত৷ তবে এবার তার কাজের চাপ এতটাই বেড়ে গেল যে চাঁদের জন্মদিনের কথা সে দিব্যি ভুলে গেল? এভাবে জমাট বাঁধতে থাকা মান অভিমান নিয়ে সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে গেল৷ বাড়ির কারো হুমকি ধামকি শুনেও চাঁদ রুমের দরজা খুলেনি! সকালের নাশতাটাও খায়নি এমনকি দুপুরের খাবারও না! এরমধ্যেই দরজার বাইরে থেকে জায়মার উত্তেজিত গলার স্বর ভেসে এলো। দরজায় সশব্দে টোকা মেরে বলল,,
“এই চাঁদ দরজাটা খোল। নূর ভাইয়া ফোন করেছে!”
ছটফটিয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠে এলো চাঁদ। অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে দ্রুত পা ফেলে রুমের দরজাটা খুলে দিলো। কোনোদিকে কালক্ষেপণ না করেই সে ঝট করে জায়মার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো। উড়নচণ্ডী ভাব নিয়ে ফোনটা কানে তুলে নিলো। চোয়াল শক্ত করে বলল,,
“এই তুই ফোন করছস কেন হ্যাঁ? ফোন করছস কেন?”
চাঁদের রূঢ় প্রতিক্রিয়া দেখে নূর মুখ চেপে হাসল। বাইক থেকে নেমে বাইকের চাবিটা হাতে তুলে নিলো। ঘামে সিক্ত শার্টের কলারটা বাম হাত দ্বারা ঝাঁকালো। রোদের কড়া ঝাঁজে নূর অবিলম্বেই মুখটা কুঁচকে নিলো। রুক্ষ গলায় বলল,,
“ফোন দিছিলাম কেমন আছো জানতে। এর জন্য এত হাইপার হওয়া লাগে?”
চাঁদ মনে মনে ক্ষোভে ফেটে পড়ল। নূর এখনো তার জন্মদিনের কথাটা মনে করতে পারলনা ভেবে তার কষ্টে বুকটা ভারী হয়ে আসছিল। নাক টেনে সে ভরাট গলায় বলল,,
“না। তোর ফোন দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আর কখনো কল করবিনা আমাকে। কোনো খোঁজ খবরও নিবিনা আমার।”
“ওহ্ আচ্ছা। তার মানে তুমি ব্রেকাপ করতে চাইছ? বলা নেই কওয়া নেই হুট করে ব্রেকাপ করতে চাইছ?”
ব্রেকাপের কথাটা শুনতেই চাঁদের বুকটা ধক করে কেঁপে উঠল। মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে সে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো। অমনি নূর নিমগ্ন গলায় চাঁদকে বলল,,
“বাড়ির মেইন গেইটে একটু তাকাও।”
অবাক হলো চাঁদ। মুখমণ্ডল খরতর ভাবে কুঁচকে দূরদৃষ্টিতে বাড়ির মেইন গেইটের দিকে তাকালো। অমনি তার মুখটা আপনাআপনি হা হয়ে গেল! চোখে মুখে ফুটে উঠল অনাবিল খুশির ঝলক। হাতে বড়ো বড়ো চারটি বেলুন এবং এক গুচ্ছ কাঠ গোলাপ নিয়ে নূর মিষ্টি হেসে চাঁদের দিকে তাকালো। মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব ফুটিয়ে ইশারায় বলল,,
“সরি।”
চাঁদ ফিক করে হেসে দিলো। মুখ লুকিয়ে বলল,,
“বাড়ির ভেতরে আসুন।”
“উঁহু। আজ আর ভেতরে আসছিনা! আয়মনকে দিয়ে তোমার জন্য শাড়ি, চুরি, আলতা, গাজরা, কানের দুল পাঠিয়েছি। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাইরে এসো। আজ রোদে দাঁড়িয়ে আমি আমার প্রিয়তমার জন্য অপেক্ষা করব!”
#চলবে…?
#প্রেমময়ী_তুমি
#পর্ব_৬৫
#নিশাত_জাহান_নিশি
“উঁহু। আজ আর ভেতরে আসছিনা! আয়মনকে দিয়ে তোমার জন্য শাড়ি, চুরি, আলতা, গাজরা, কানের দুল পাঠিয়েছি। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাইরে এসো। আজ রোদে দাঁড়িয়ে আমি আমার প্রিয়তমার জন্য অপেক্ষা করব!”
মিষ্টি হাসল চাঁদ। সরলরৈখিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একধ্যানে তাকিয়ে রইল ক্লান্ত, শ্রান্ত এবং নিস্তেজ চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকা ঘামেসিক্ত নূরের দিকে। প্রেমটা যেন ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছিল তার! কীভাবে পারছে এই কাঠ ফাঁটা রোদের মধ্যে এতগুলো ঘণ্টা বাইকে জার্নি করে এসে সেই তেজর্শী রোদের মাঝেই এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে? এবার তো তাকে এভাবে আরও ঘন্টা খানিক দাঁড়িয়ে থাকতে হবে! চাঁদের রেডি হয়ে বের হতে হতে ঘণ্টা খানিক সময় তো লাগবে-ই। ভাবতেই বুকটা অস্থিরতায় কাঁপতে লাগল চাঁদের। টুপ করে মিষ্টি হাসি মিইয়ে গেল ঠোঁটের কোণ থেকে। ব্যাকুল হয়ে উঠল প্রফুল্লিত মুখ খানি। দৃষ্টি জোড়া নিঃসংকোচে সংকুচিত হয়ে এলো। উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,,
“না। আপনাকে এভাবে আর রোদে দাঁড়িয়ে থেকে কাঠ হতে হবেনা। ভেতরে আসুন। দেখছেন তো বাইরে কী রোদ পড়েছে? এমনিতেই কত কষ্ট করে বাইক চেপে সেই সুদূর ঢাকা থেকে এসেছেন। এখন আবার আরও ঘণ্টা খানিক এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলে আপনাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তাড়াতাড়ি ভেতরে আসুন বলছি।”
বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো নূর। ঘর্মাক্ত শার্টের কলারটা এক ঝটকায় পেছনের দিকে এলিয়ে দিলো। তপ্ত শ্বাস ফেলে চাঁদের দিকে মগ্ন দৃষ্টিতে তাকালো। ঠোঁটের আলিজে মলিন হাসি ফুটিয়ে বলল,,
“এতটুকু ধকল যদি সহ্য করতে নাই পারি তবে ভালো কেন বেসে ছিলাম বলো? প্রেমে পড়লে মানুষ নিজের দিকটা কখনো চিন্তা করে দেখেনা। যার প্রেমে পড়ে শুধু তার মাঝেই ডুবে থাকে! শুধু তার কথাটাই চিন্তা করে। আমি তো সেই অনেক আগেই তোমার প্রেমে ডুবে ম’রে’ছি চাঁদপাখি। এখন এই রোদ আমার কিছু করতে পারবেনা! এত শত কথা না বলে তুমি কুইকলি রেডি হয়ে বের হয়ে এসো তো। আমি অপেক্ষায় আছি।”
মুখটা ফুলিয়ে নিলো চাঁদ। নূরের দিকে গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। চাঁদের রাশভারী মুখভঙ্গি দেখে নূর স্মিত হাসল। দ্রত গলায় বলল,,
“আরে যাও যাও। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো তো।”
রাগে চাঁদ পা ঝাড়লো! মুখটা বাঁকা করে পিছু ঘুরতেই আয়মন হাসিমুখে দুটি শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে চাঁদের রুমে প্রবেশ করল। দ্রুত পা ফেলে চাঁদ আয়মনের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। ফোনটা কেটে বিছানার উপর ছুড়ে মারল। কোমরে দু’হাত গুজে শানিত দৃষ্টিতে আয়মনের দিকে তাকালো। কর্কশ গলায় শুধালো,,
“এই তুমি নূর ভাইয়াকে এই রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে চলে এলে? ভেতরে আসতে বললে না?”
আয়মন মুখ টিপে হাসল। চাঁদের উদ্বিগ্নতা দেখে চাঁদকে একটু বেশি করেই তার রাগাতে মন চাইল। মুখভঙ্গি পাল্টে ব্যঙ্গ করে বলল,,
“আহা কী দরদ গো! জামাই না হতেই এত দরদ হ্যাঁ? ভাইকে ঝাড়ি দিচ্ছিস হবু জামাইয়ের জন্য?”
“এই রোদের মধ্যে যদি তাশফিয়া এভাবে তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকত না? তবে বুঝতা কেমন লাগে। এখন তো বুঝবা না। কারণ, এখন তো তাশফিয়ার জায়গায় অন্য কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ নিজের না হলে পরেরটা তেমন বুঝে-না।”
অগ্নিশর্মা হয়ে চাঁদ শ্লেষাত্মক হাসতে থাকা আয়মনকে ঠেলেঠুলে রুম থেকে বের করে দিলো! বিপরীতে কোনো কথা বলার সুযোগ-ই দিলো না আয়মনকে। ড্রয়িং রুম থেকে জায়মাকে টেনেটুনে চাঁদ তার রুমে নিয়ে এলো। ভেতর থেকে দরজার খিলটা আটকে অধীর দৃষ্টিতে বেলকনি দ্বারা বাড়ির মেইন গেইটে তাকালো। নূর এখনো সেই একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে! বাইকের সাথে হেলান দিয়ে সময় কাটানোর জন্য ফোনে স্ক্রলিং করছে। কিয়ৎক্ষণ পর পর কপালে এবং সমস্ত মুখে জমতে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলোকে মুছে নিচ্ছে! তবুও যেন চেহারায় কোথাও কোনো বিরক্তির ছাপ নেই! সবকিছু তার কাছে চিরাচরিতভাবে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। শুধু মলিনতা ছড়িয়ে পড়ছে শুভ্র রঙের মুখটিতে। এসব দেখে চাঁদের মাথা আরও গরম হয়ে গেল! মনটা কেমন খারাপ করতে লাগল। ঝট করে সে গাঁ থেকে ওড়নাটা সরিয়ে নিলো। ব্যস্ত স্বরে জায়মাকে বলল,,
“এই জায়মা শোন? জাস্ট আধঘণ্টার মধ্যেই আমাকে রেডি করিয়ে দিবি ওকে? বাইরে নূর ভাইয়া অপেক্ষা করছে। এই কাঠ ফাঁটা রোদের মধ্যে।”
জায়মা শপিং ব্যাগ দুটোকে অতি মনোযোগের সহিত ঘাটতে লাগল। কালো রঙের সফট সুতির কাপড়টি হাতে নিতেই জায়মা মুখটা হা করে নিলো! মুগ্ধিত স্বরে বলল,,
“আরেব্বাস! কী সুন্দর রে কাপড়টা চাঁদ। তোর গাঁয়ে রঙে একদম ফুটে থাকবে। কী যে সুন্দর লাগবে আজ তোকে। নূর ভাইয়া শুধু ড্যাব ড্যাব করে তোর দিকে তাকিয়ে থাকবে। আবার নতুন করে তোর প্রেমে পড়বে।”
চাঁদ ক্রমশ উতলা হতে লাগল। নূরের চিন্তায় তার গাঁ থেকে একপ্রকার ঘাম ঝরছিল! অতো শত দিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় নেই তার। জায়মার কথা একদণ্ডের জন্য কানে তুলল না সে। আলমারি থেকে একটি কালো রঙের ব্লাউজ এবং পেটিকোট বের করল। গাঁ থেকে জামাটা ছেড়ে ব্লাউজটা গাঁয়ে পড়ে নিলো। বেগবান গলায় বলল,,
“উফফ। এত পাকাস না তো জায়মা। সুন্দর অসুন্দর এসব পরে দেখা যাবে। এখন তাড়াতাড়ি করে আমাকে রেডি করিয়ে দে তো। মানুষটা এই রোদের মধ্যে এখনো একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। জন্ডিস টন্ডিস হয়ে গেলে তখন? উফফ আমার একটা কথাও শুনবে না এই লোকটা। ঘাড় ত্যাড়া হয়েছে একদম আমার মতই! নতুন করে আবার প্রেম দেখাতে আসছে। ঢঙ যতসব।”
রাগে রি রি করে চাঁদ নূরকে ইচ্ছে মতো ঝাড়তে লাগল। চাঁদকে কাপড় পড়াতে পড়াতে জায়মা মিটিমিটি হাসতে লাগল। এটা সেটা বলে চাঁদকে আরও উস্কে দিচ্ছিল! জায়মার ইন্ধন পেয়ে চাঁদ আরও বেশি করে নূরকে ঝাড়তে লাগল! এসবে জায়মা বেশ মজা নিচ্ছিল! তবে মাঝে মাঝে চাঁদ এবং নূরের ভালোবাসা দেখলে তার বড্ড হিংসে হয়! কীভাবে পারে কেউ কাউকে এতটা গভীরভাব ভালোবাসতে? এখনকার স্বার্থপর যুগে কী আদো কেউ কাউকে এতটা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারে? নূরের ভালোবাসার সত্যিই কোনো তুলনা হয়না। জায়মার চোখে নূর প্রেমিক পুরুষ হিসেবে সেরা। যার জুড়ি মেলা ভার। ভাগ্য করে চাঁদ নূরকে পেয়েছে। সেই ভাগ্য সবার হয়না। জায়মার ভাগ্যে ও হয়তো এমন কেউ নেই। যে জায়মাকে এতটা সূক্ষ্মভাবে, একান্তভাবে ভালোবাসতে পারবে! অথচ জায়মা সেই একজনকে গোটা তিনটি বছর যাবত নিরলসভাবে ভালোবেসে যাচ্ছে! সেই মানুষটি আদোতে জানেও না কেউ তাকে দূর থেকে এতটা প্রগাঢ়ভাবে ভালোবেসে আসছে। হয়তো কখনও জানতেও পারবেনা! আর জানার তো কথাও নয়! জায়মা তো কখনো সেই মানুষটার কাছে ভালোবাসার আর্জি নিয়ে যায়নি! হয়তো কখনও যাবেও না!
নূরকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য আয়মন রোদে পুড়তে নূরের কাছে গেল! দুই বন্ধু একসাথে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। মন খুলে গল্পগুজব, আড্ডা সাড্ডা দিতে লাগল। ক্লান্তি দূর করার জন্য নূর প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের একটি প্যাকেট বের করল। অমনি আয়মন চক্ষুজোড়া ছানাবড়া করে ফেলল। উত্তেজিত গলায় বলল,,
“এই কী করছিস কী তুই? নিজের এলাকা ভাই। মানসম্মান খোয়াবি নাকি?”
“এটা তোর এলাকা ওকে? আমার না! এট অ্যানি কস্ট সিগারেট একটা ধরাতেই হবে। অনেকক্ষণ যাবত ধৈর্য্য ধরে আছি ভাই। আর সম্ভব হচ্ছেনা। তাছাড়া তোর বোন সাথে থাকলে আরও আগে খেতে পারবনা! মাথার চুল একটাও মাথায় রাখবেনা!”
আয়মন ফিক করে হেসে দিলো। বুকে হাত গুজে বলল,,
“আচ্ছা খা। তবে সাবধানে। কেউ যেন না দেখে।”
দুই ঠোঁটের মাঝখানে সিগারেটটি রেখে নূর লাইটার দ্বারা সিগারেটটি ধরালো। এদিক ওদিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলিয়ে তাকিয়ে কেউ আছে কিনা দেখতে লাগল। রাস্তা- ঘাট আংশিক ফাঁকা হয়ে আছে। লোকজনের সমাগম ততটা চোখে পড়ার মত নয়। স্বস্তির শ্বাস ফেলল নূর। ব্যস্ত গলায় আয়মনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,,
“বল তোর আর কী খবর? ভাবি কেমন আছে?”
“ভালোই আছে। আজ রাতে তো ওর এই বাড়িতে আসার কথা। চাঁদের বার্থডে পার্টি আছে।”
“তো বিয়ে শাদি কবে করবি? আঙ্কেল-আন্টি কিছু জানে এই ব্যাপারে?”
“না। এখনও ঐরকম ভাবে কিছু জানাইনি। তবে আশা আছে কয়েকদিনের মধ্যেই জানাব। বিয়ের বয়স তো আর কম হলোনা। ঐদিকে তাশফিয়ার বাড়ি থেকেও বিয়ের চাপ আসছে। দেখি কী হয়।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ জানা। কয়েকদিনের মধ্যেই জানা। এভাবে ঝুলে থেকে কী লাভ বল? এখন তো তোর নিজেরও একটা বিজনেস আছে। ওয়েল স্যাটেল্টড। তো আর সমস্যা কী?”
“হুম সেটাই। তো তোর কী খবর বল? তুই কবে বিয়ে করছিস?”
“ট্রেনিংটা আগে দিয়ে আসি। মাস দুয়েক সময় তো লাগবেই। ভাবছি আমরা তিনজন মিলে একসাথে বিয়ে করব। তুই, আমি, মাহিন! ব্যাপারটা কিন্তু খুব ইন্টারেস্টিং। কী বলিস?”
আয়মন হঠাৎ উৎকণ্ঠিত গলায় বলে উঠল,,
“আর সাদমান?”
সিগারেটে ফুঁক দিতে গিয়েও নূর থেমে গেল! আয়মনের দিকে উৎসুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কিয়ৎক্ষণ মৌন থেকে অতঃপর গলায় স্বাভাবিকতা এনে বলল,,
“সাদমানের বিষয়টাও আমার ভাবা আছে। শা’লা দেশে ফিরুক। ধরে বেঁধে জায়মার সাথে বিয়েটা পড়িয়ে দিব! বিয়ের পর প্রেম করবে সমস্যা কী?”
আয়মন গোলন্দাজ দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। ধরাশায়ী গলায় বলল,,
“কী বলছিস তুই এসব? জায়মা রাজি হবে তো?”
“হবে না কেন বল? যাকে ভালোবাসে তাকে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়?”
“তাই বলে জোর করে? জোর করা ভালোবাসা কে চায়?”
“কিছু কিছু ক্ষেত্রে জোর করেই ভালোবাসা আদায় করে নিতে হয়। এতে যদি পরে উভয় পক্ষেরই ভালো হয় এতে সমস্যা কী?”
আয়মন চিন্তিত হয়ে উঠল। কিয়ৎক্ষণ মনে মনে কিছু একটা ভাবল। নীরবতা ভেঙে নূরের সিদ্ধান্তকে মেনে নিলো! দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“ভুল কিছু বলিস নি তুই। আসলেই বিষয়টা আমাদের ভেবে দেখা উচিৎ। আচ্ছা? সাদমানের পরিবারের সাথে আমরা কথা বলব? আই মিন পারিবারিকভাবে যদি বিয়েটা হয়! আমাদের জায়মা তো কোনদিক থেকেই ফেলে দেওয়ার মতো মেয়ে নয়। সাদমানের পরিবার তো এমনিতেও সাদমানের জন্য মেয়ে দেখছে। সাদমান আসার আগেই যদি পরিবারকে থেকে জায়মাকে ঠিক করে রাখা হয় তো কেমন হয় বিষয়টা?”
নূর ব্যগ্র হাসল। আয়মনের দিকে রহস্যময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। নাক-মুখ থেকে ধোঁয়া নির্গত করে বলল,,
“তোর কী মনে হয় হ্যাঁ? আমি হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি? জায়মার বিষয়টা সাদমানের পরিবার জানে! আমিই তাদের এই বিষয়টা জানিয়েছি। তারা এখন মেয়ে দেখা বন্ধ করে রেখেছে। ছবিতে জায়মাকে দেখেছে। খুব পছন্দও করেছে। এবার শুধু সাদমান এলে এনগেজমেন্ট আর ধরে বেঁধে বিয়ে পড়ানোর পালা!”
নূরের চতুরতা দেখে আয়মন তব্দা লেগে গেল। সন্তুষ্ট হয়ে নূরের কাঁধে হাত রাখল। নূরের প্রশংসা পঞ্চমুখ হয়ে বলল,,
“তুই তো লাজবাব ভাই। ভেতরে ভেতরে সব সেটিং করে রেখেছিস? হ্যান্ডস অফ ইউ ব্রো!”
নূর উদাসীন ভাব নিলো। মুখটা উপুড় করে সিগারেট ফুঁকতে লাগল। রসালো গলায় বলল,,
“তোর বোনের থেকে এসব চালাকী শিখেছি রে ভাই! এই তিন বছরে আমাকে আরও ধূর্ত বানিয়ে ছেড়েছে। এই মেয়েটা আমার লাইফটা বদলে দিয়েছে জানিস? এত সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিয়েছে আমার জীবনটাকে! যা ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়। চাঁদকে পাওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত আমি কোনোকিছুতেই হারি নাই জানিস? যে জিনিসটা ধরেছি ঠিক সেই জিনিসটাতেই সফল হয়েছি। হারতে শিখি নি। না হয় কে জানত বল? কোনো ইম্প্রুভমেন্ট ছাড়াই অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করা হয়ে যাবে আমার? মাসখানেকের মধ্যে চাকরী বাকরীও পেয়ে যাব? ভাগ্য আপনাআপনি খুলে যাবে? সে আমার জন্য দো’য়া জানিস? আমার সমস্ত বেস্ট উইশেস। আমার ইন্সপিরেশন! যার প্রতিটা পদক্ষেপে আমি ইন্সপায়ারড হয়েছি। তার জন্যই আজ আমার এতকিছু।”
আয়মন মুগ্ধ হলো নূরের প্রতিটি কথায়। ম্লান হেসে নূরের দিকে তাকিয়ে রইল সে। শৃঙ্খল শ্বাস ফেলে শূণ্য গলায় বলল,,
“জানিনা আমি তোর মতো করে তাশফিয়াকে ভালোবাসতে পেরেছি কিনা। তবে মন থেকে আমি তাকে অনেক ভালোবাসি! অনেক বলতে অনেক। যার পরিমাপ হয়না। বলতে গেলে তাশফিয়াও আমার জন্য একটা ইন্সপিরেশন। ভাগ্যটা বদলানোর উপায়। খুব শীঘ্রই আমি তাকে বিয়ে চাই জানিস? তার মত এত ভালো একটা মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।”
দুই বন্ধু মিলে নিজেদের মনের গোপন কথাগুলো নিঃসংকোচে খুলে বলতে লাগল। গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসল যেন! এভাবে প্রায় আধঘণ্টা কেটে গেল৷ ঠিকঠাকভাবে সেজেগুজে চাঁদ আয়নার দিকে না তাকিয়েই তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। বের হওয়ার সময় শুধু সামিয়া আহমেদকে বায় বলে চলে এলো। পেছন থেকে তিনি আর চাঁদকে ডাকলেন না। শুধু মন ভরে মেয়ের জন্য দোয়া করলেন। চাঁদকে এগিয়ে দিতে চাঁদের পিছু পিছু জায়মাও বাড়ির মেইন গেইট অবধি চলে এলো। চাঁদকে কতটা সুন্দর লাগছে তার প্রশংসা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলল! চাঁদ আছে যত রাজ্যের পেরেশানির মধ্যে। নূরের কষ্ট তার সহ্য হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে নূর নয় সে-ই এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। যার দরুন তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে!
মেইন গেইট থেকে বের হয়ে চাঁদ রাস্তায় পা বাড়ালো। অমনি নূরের আচম্বিত দৃষ্টি পড়ল চাঁদের দিকে। তৎক্ষনাৎ জায়গা থেকে নড়েচড়ে দাঁড়ালো নূর। দৃষ্টি জোড়ায় অপার মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ল তার! সমস্ত ক্লান্তি যেন নিমিষেই বিনাশ হয়ে গেল। চোখের সামনেই ফুটন্ত কালো গোলাপ দেখতে পেল! যার সুমিষ্ট ঘ্রাণ অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা নূরের নাক অবধি ভেসে আসছিল! বুকটা অস্বাভাবিক ভাবেই কাঁপতে লাগল তার। বুকের ছাতি যেন ফেটে যাচ্ছিল। অনুভূতিরা শতদল প্রজাপতির রূপ নিলো। অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করতে লাগল। সম্মোহিত হয়ে পড়ল নূর চাঁদের মোহময়ী রূপে। নূরের বেখবর অবস্থা দেখে আয়মন পাশ থেকে নূরকে কনুই দ্বারা ধাক্কা মারল। গলা ঝেড়ে বিড়বিড় করে বলল,,
“ভাই হইছে এবার। চোখটা সরা। ফিট খেয়ে যাবি মনে হচ্ছে!”
আয়মনের কনুইয়ের ঝাঁকুনি খেয়ে বহুকষ্টে হুশ ফিরল নূরের। মাথা ঝাকিয়ে সে রাস্তা পাড় হয়ে আসা উত্তেজিত চাঁদের দিকে তাকালো। দৌঁড়ে এসে চাঁদ নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। চোখে-মুখে প্রখর উদগ্রীবতা ফুটিয়ে তুলল। উতলা হয়ে পার্স থেকে একটি টিস্যু পেপার বের করল। সাত পাঁচ না ভেবে চাঁদ নূরের কপালে জমতে থাকা ঘামগুলো মুছতে লাগল। উদ্বেগী গলায় বলল,,
“কী দরকার ছিল হ্যাঁ? রোদের মধ্যে এখানে এসে দাঁড়ানোর? নতুন করে ভালোবাসা দেখানোর কী আছে বলুন? আমি মনে হয় জানিনা আপনি আমাকে কতটা ভালোবাসেন?”
গলা ঝাকালো আয়মন। মুখ টিপে হেসে নিচু স্বরে বলল,,
“আচ্ছা আমি আসছি। কাবাব মে হাড্ডি হয়ে থেকে লাভ নেই। সাবধানে যাস তোরা কেমন? কোনো প্রয়োজন হলে ফোন করবি ওকে? বায়।”
নূর এবং চাঁদের থেকে বিদায় নিয়ে আয়মন জায়গা পরিত্যাগ করল। গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জায়মার কাঁধে হাত রেখে দুই ভাই-বোন মিলে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। চাঁদ এখনো তীব্র মনোযোগের সহিত নূরের মুখে উদয়মান ঘামগুলো মুছতে লাগল। চাঁদের পেরেশানি দেখে নূর মলিন হাসল। ক্ষীণ গলায় বলল,,
“আচ্ছা হইছে তো। এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন? মুখটা ফুলিয়ে রাখলে এত সুন্দর সাজটা কি দেখা যাবে বলো?”
“আমি এখানে আপনাকে সাজ দেখাতে আসি নাই। আপনার সাথে থাকতে এসেছি। যার সাথে থাকব তার ভালো-মন্দের খেয়াল রাখবনা?”
চাঁদের হাত থেকে টিস্যু পেপারটি কেড়ে নিলো নূর। শার্টের কলার ঝেড়ে একগুঁয়ে গলায় বলল,,
“অনেক খেয়াল রাখা হইছে। এবার চলো।”
চাঁদকে জোর করে বাইকে বসিয়ে দিলো নূর। বাইকের হ্যান্ডেলে থাকা বেলুনগুলো এবং কাঠ গোলাপগুলো চাঁদের হাতে ধরিয়ে দিলো। ব্যস্ত স্বরে বলল,,
“আমি কিন্তু এখনো তোমাকে বার্থডে উইশ করি নাই। এই নিয়ে আবার মুখ ফুলিয়ে রেখো না প্লিজ। সময় হলে আমি নিজেই করব ওকে?”
ফুলগুলো হাতে নিয়ে চাঁদ মৃদু হাসল। নূরের দিকে প্রেমময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আবিষ্ট স্বরে বলল,,
“আপনি এসেছেন এই অনেক। আমার আর আলাদা করে বার্থডে উইশ টুইশ লাগবেনা। আপনি নিজেই তো হলেন আমার জীবনের সবচেয়ে বিগ উইশ। এরপরে আর কী উইশ চাই আমার হ্যাঁ?
“ইশশ! এটা রাস্তা না হলে এক্ষণি টুপ করে তোমার কপালে একটা চুমু খেয়ে দিতাম! এত সুইট কেন তুমি হ্যাঁ? এসব বলে বলে প্রেমটা আরও বাড়িয়ে দাও। দিন দিন মজনু হয়ে যাচ্ছি আমি তোমার প্রেমে!”
চাঁদ ফিক করে হেসে দিলো। আহ্লাদি হয়ে নূরের নাক টেনে দিলো। হেয়ালী স্বরে বলল,,
“আচ্ছা হইছে অনেক। এবার বাইকটা ছাড়ুন।”
বিপরীতে আদুরে হয়ে নূরও চাঁদের গাল টেনে দিলো। শার্টের হাতজোড়া ভাঁজ করে বাইকে ওঠে বসল। প্রশান্তির ঠায় হিসবে চাঁদ পেছন থেকে নূরকে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরল। চাঁদের অভয় পেয়ে নূর যেন বল পেল! প্রাণোচ্ছ্বল হেসে অতি দ্রুত বাইকটা ছেড়ে দিলো। নূরের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে চাঁদ পরম শান্তিতে চোখ জোড়া বুজে নিলো। জিজ্ঞাসু গলায় বলল,,
“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“রিসোর্টে।”
“রিসোর্টে কেন?”
“সারপ্রাইজ!”
“আর কত সারপ্রাইজের বাকি আছে জনাব? তিন বছর ধরে তো শুধু সারপ্রাইজ দিয়েই যাচ্ছেন।”
“গোটা জীবন ধরে সারপ্রাইজ দিয়ে যাব। যতদিন থাকবে এই দেহে প্রাণ।”
“একটা জিনিস খেয়াল করেছেন?”
“কী?”
“আজ আমরা ম্যাচিং ম্যাচিং!”
“হ্যাঁ জানেমান৷ ম্যাচিংটা তো আমি নিজেই করলাম!”
“কালো রঙে আপনাকে খুব সুন্দর মানায়।”
“তোমাকেও। ব্ল্যাক রোজ মনে হচ্ছে।”
“আর আপনাকে চকলেট বয়! আজ কত মেয়ের মাথা ঘুরাবেন হ্যাঁ?”
নূর হু হা শব্দে হেসে দিলো। হেসে হেসেই বলল,,
“আর কারো মাথা ঘুরাতে চাইনা। তোমার মাথা ঘুরলেই হবে।”
“আমার মাথা তো সেই প্রথম দেখাতেই ঘুরিয়ে দিয়েছেন জনাব! এখনও তার রেশ কেটে বেরুতে পারিনি। আহা সেই নীল চোখ। এখনও কাছে থেকেও টানে আমায়।”
তৃপ্তির হাসি হাসল নূর। চাঁদকে রাগানোর ফন্দি আটল। হেয়ালী স্বরে বলল,,
“রেশ কাটানোর ইচ্ছে টিচ্ছে আছে নাকি আবার?”
পূর্বের তুলনায় নূরকে আরও জোরালোভাবে আঁকড়ে ধরল চাঁদ। তব্ধ শ্বাস ফেলে মসৃণ গলায় বলল,,
“উঁহু। আমি চাই আপনাকে পাওয়ার রেশটা আমার আজন্ম বেঁচে থাকুক। আফটার অল কিছুদিন পরেই আমরা বিয়ে করতে যাচ্ছি। আজন্মের জন্য এক হতে যাচ্ছি।”
“আচ্ছা শোনো না? তুমি কি বিয়ের পরেও আমার সাথে হুটহাট রেগে যাবা? তুই তুকারি করবা? চোখ লাল করে আমার দিকে তেড়ে আসবা? গলা টিপে ধরবা? এত যে রাগ দেখাও কবে যে আমার গলা টিপে মে’রে ফেলো কী জানি! তখন কিন্তু আমাদের আর আজন্ম পাশে থাকা হবেনা। তোমাকে ছেড়ে যেতে আমার খুব কষ্ট হবে চাঁদ। তখন মৃ’ত্যু নিয়েও আমার আফসোস হবে! অথচ মৃ’ত্যুর মত চিরন্তন সত্য পৃথিবীতে আর কিছু নাই।”
চাঁদ চুপ করে রইল। নীরবতায় নিজেকে ধাতস্থ করল। মনটা বড্ড উচাটন হয়ে উঠল তার। সত্যিই চাঁদ খুব রাগ দেখায় নূরের উপর৷ মাঝে মাঝে তো গলা টিপেও ধরে! যখন রাগটা সে কন্ট্রোল করতে পারে না তখনই এতটা পাষণ্ড রূপ নেয়। তখন কোনো দিকে জ্ঞান না থাকলেও পরে ঠিকই আফসোস হয় তার। ভেতরে ভেতরে খুব অনুতপ্ত বোধ করে। চাঁদের মৌনতা দেখে নূর ফিচেল হাসল। নরম সুরে বলল,,
“আরে পাগলি। আমি তো মজা করছি। কেন মজাটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছ হ্যাঁ? মুড অন করো। তুমি জানো? তোমার জন্য আরও কত কত সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে?”
মৃদু হাসল চাঁদ। মন ভালো করে নূরের সাথে হেসে হেসে নানান কথা বলতে লাগল। কথাই যেন শেষ হচ্ছেনা তাদের। পথ ফুরাক বা না ফুরাক কথার ঝুড়ি তাদের ফুরাবেনা!
___________________________________
সন্ধ্যারাত। মাগরিবের আযান পড়েছে অনেক আগেই। ঘড়িতে এখন সাতটা কী আটটা চলমান। আহত নূরকে কেউ ধরে বেঁধে রাখতে পারছেনা! মাথা থেকে টপটপ করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে তার! তবুও যেন অদম্য জেদ তার ক্ষান্ত হচ্ছেনা। বদ্ধ উন্মাদের মতো কেমন যেন করছে সে। শরীরের বেঁচে থাকা শক্তিটুকু দিয়ে সে পাশে থাকা মাহিন এবং আয়মনকে ঝেড়ে ফেলে দিলো! রুখে গেল সোহানীর দিকে! আঙুল তাক করে গরম দৃষ্টিতে সোহানীর দিকে তাকালো। মাথার চুলগুলো টেনে চোয়াল শক্ত করে বলল,,
“তোমার বোনের কোনো দোষ নাই না? কোনো দোষ নাই? ঐ কু’ত্তা’র বা’চ্চাটা আমাকে আগে বলল না যে ঐ শু’য়’রে’র বাচ্চাগুলো তাকে বিরক্ত করছে? তাকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে? এখন যদি তোমার বোনের কিছু হয়ে যায় তো আমি কী করব বলো? আমাকে কী করবা তোমরা? বলো বলো তাড়াতাড়ি বলো? কীভাবে শান্ত করবা আমাকে? আমাকেও কী তার মতো মাথায় বারি দিয়ে মে’রে ফেলবা? নাকি দেউলিয়া বানায়া ফেলবা কোনটা?”
#চলবে…?