প্রেমরোগ পর্ব-২৭

0
721

#প্রেমরোগ-২৭
#তাসনিম_তামান্না

সন্ধ্যা পার্টিতে যাওয়ার জন্য কুয়াশা একটা পিংক কালারের গাউন পড়েছে চুলগুলো পনিটেল করে বাধা, মুখে হালকা মেকাপ দেখতে পুরা এক আস্ত পুতুলের মতো লাগছে। তুষার কালো কোর্ট পড়েছে। ড্রাইংরুমের সোফায় বসে ফোন টিপছে আর বার বার কুয়াশাকে ডাক দিচ্ছে। কুয়াশা এ নিয়ে ৫ মিনিট ৫ মিনিট করে আধা ঘণ্টা পার করে দিয়ে তুষার প্রচন্ড রাগ লাগছে। আরো ১০ মিনিট পর কুয়াশা বের হয়ে বলল
” আমাকে কেমন লাগছে? ”
কুয়াশার কন্ঠ শুনে রাগ ঝাড়বে বলে মাথা তুলে তাকাতেই বাক হারা হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। কুয়াশা লজ্জা পেয়ে বলল
” এমন করে কি দেখছেন? ”
” তোমাকে। একদম পুতুলের মতো ”
কুয়াশা লজ্জায় শুকনো ঢোক গিললো। তুষার কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো ওভাবে। কুয়াশা এবার বলল ” যাবেন না? দেরি হয়ে গেছে ”
তুষারের হুঁশ আসলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
” হ্যা চলো তারাতাড়ি। বার-বার ফোন দিচ্ছে ওখান থেকে ”
তুষার ড্রাইভ করতে করতে কতবার যে কুয়াশা দিকে তাকালো। কুয়াশা বুঝে বলল
” সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালান এভাবে চালালে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না পরে আমাকে দেখেন ”
তুষার গাড়ি চালানোই মন দিয়ে বলল
” তুমি ও আমাকে দেখছিলে বুঝি নাহলে বুঝলে কি করে আমি তোমাকে দেখছি ”
” আজ্ঞে জি না মিস্টার দূর থেকে কেউ তাকিয়ে থাকলেও মেয়েরা বুঝতে পারে ”
” তাই না-কি ”
” জি ”
” এতো ভদ্র হয়ে গেলে কিভাবে? ঝাঁঝের রানীর ঝাঁজ নেয় যে আজ ”
” আমার সবকিছুতেই দোষ খুঁজে পান আপনি? ”
পার্টিতে জাঁকজমকপূর্ণ অবস্থা সফট মিউজিকে ডান্সফ্লোরে ডান্স করছে কয়েকজন। আকাশে অরোরা আর নিচে রং বেরংয়ের ফেরিলাইট। কি মুগ্ধকর দৃশ্য। এখানকার লোকেদের কাছে অরোরা কোনো ব্যপার না এটা স্বাভাবিক তাদের কাছে কিন্তু নতুন যারা আসে তাদের কাছে কি অদ্ভুত আজব ব্যপার মনে হয়। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে সারাক্ষণ দেখলেও মনপ্রাণ জুড়ায় না। কুয়াশার ও হয়েছে সেই অবস্থা অরোরা উঠলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেঘের মতো ধীরে ধীরে অরোরা গুলো নিজের স্থান পরিবর্তন করে। রং বেরংয়ের এমন খেলায় কুয়াশা মুগ্ধতা যেনো কাটেই না। তাই তো তুষার কুয়াশাকে ‘মুগ্ধময়ী’ বলেছে। পার্টিতে দুজন দুইজনের হাতে হাত দিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সকালে সাথে আলাপ করছিলো। কুয়াশা এদেশের ভাষা বুঝে না তবে এখানে বেশ কয়েকজন বাঙালি আছে তাদের সাথে কথা বলে স্থতিবোধ করছে। অন্যদের ইংরেজি তে কথা বলতে গেলেও কেমন বেঁধে যাচ্ছে কেউ কিছু মনে করছে না সকলে খুব মিশুক কিন্তু কুয়াশার নিজের কাছে খুব অসহায় লাগছে। মনে মনে নিজেকে বকছে, গা-লা-গা-ল করছে কেমন আসতে গেলো ভেবেই কান্না পাচ্ছে। কুয়াশার এমন ফেস দেখে নির্জনে এনে তুষার বলল
” কি হয়েছে? এনি প্রোবলেম? ”
” আমি এ ভাষা পারি না কেনো? ইংরেজি বলতে গেলেও কেমন বাঁধা পাচ্ছে ”
” আরে তুমি কি বোকা প্রথম প্রথম আমারও এমন হয়েছিলো। ইট’স নরমাল এটাতে কেউ কিছু মনে করছে না ”
” আমি আমাকে এভাষা শিখাইবে কি না বলেন? ”
তুষার রেগে বলল
” খাতা- কলম এনে এখন শেখানো শুরু করি?”
কুয়াশা বোকাসোকা চাহনি দিলো। তুষার আবার বলল ” মুখ ঠিক করে থাকবে। তোমার মুখ গোমড়া যেনো না দেখি ”
” আমার মুখ আমার ইচ্ছে ”
” ওমন করে থাকলে তোমাকে পে ত্নী র মতো লাগে ”
” আপনি আবার আমাকে খেপাচ্ছেন? ”
” আমি বলি নি আমাকে আমার এক কলিগ বলল ”
কুয়াশা রাগে ফোঁস ফোঁস করলো। কিছু বলল না। কিছুক্ষণ পর আবার ওরা পার্টিতে এটেন্ট করলো। কুয়াশা একজায়গায় চুপ করে বসে আছে। তুষার কে অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে। একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে কোনো দিকে খেয়াল নেই। মেয়েটা দেখতেও সুন্দর ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা কিন্তু বাঙালি কিছুক্ষণ আগেও কুয়াশার সাথে পরিচয় হয়েছে। কুয়াশা রাগে ফোঁস ফোঁস করছে পারলে এখনি এই মেয়ের চুল গুলো টে নে ছিঁ ড়ে ফেলতো। আর তুষারকে পানিতে চু বি য়ে রাখতো কত বড় ফ্লা ট বা জ বউয়ের সামনে অন্য মেয়ের সাথে ফ্লা ট করছে। মনে একটুও ভয়ডর নেই? কুয়াশার রাগে দাঁত কিরমির করছে। তুষার কুয়াশার দিকে খেয়াল হতেই ভ য়ং ক র দৃষ্টিতে ফেঁ সে গেলো। শুঁকনো ঢোক গিলে কুয়াশার পাশে বসে বলল
” কি হয়েছে বউ? এমন করে তাকিয়ে আছো কেনো? ”
কুয়াশা রাগে গজগজ করতে করতে বলল
” তুই যে কি পরিমাণ লু ই চ্চা তুই নিজেও জানিস না ”
তুষার ভ্রু কুঁচকে গেলো বলল
” লু চ্চা মির কি করলাম বউ? এখনো তো কিছুই করলাম না তোমার সাথে ”
” এই তুই আমার সামনে থেকে দূর হ যা ঔ মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বল। আমার সাথে কথা বলতে গেলে তো তোর মুখে মধু থাকে না ”
” তোমার যে কখন হুটহাট মুডসুইম হয় বোঝা মুসকিল। যায় হোক তুমি যেটা ভাবছো তেমন কিছু নয়। আমরা কলেজে একসাথে পরতাম কিন্তু তেমন কথা হয় নি হাই, হ্যালো। তাছাড়া আমাদের কোম্পানির সাথে ওদের কোম্পানি আজ ডিল হচ্ছে নিউ প্রজেক্টের জন্য ”
” বাবাহ। হাই, হ্যালো হতো। ”
তুষার হেসে বলল
” আর ইউ জেলাস কুয়াশা ”
” আমি জেলাস না তুই যে কত পরিমাণ লু ই চ্চা সেটাই দেখছিলাম ”
” বউ এতো খেপোনা শরীরের জন্য ক্ষতিকর ”
কুয়াশা চোখ পাকিয়ে তাকালো। তুষার হাসতে হাসতে চলে গেলো। কুয়াশা যে ভালো মতো পুড়ছে সেটা বেশ বুঝতে পারছে তুষার এটাও বুঝতে পারছে কুয়াশা ওকে ভালোবাসে শুধু পাখি ধরা দিচ্ছে না। ওদের আর কথা হয় নি তুষার ও ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কুয়াশা একটা ভুল করে ফেললো। পার্টি জুস মনে করে ড্রিংক খেয়ে ফেললো। প্রথমে ভালো লাগলেও পরপর খেতে লাগলো। ড্রিংক খেয়ে মাথা হ্যাং করে বসে রইলো। উঠে দাড়ালেই মাথা ঘুরছে। তুষার সব ফর্মালিটি শেষ করে কুয়াশাকে টেবিলে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখতে দেখে ঘাবড়ে গেলো বলল
” কুয়াশা শরীর খারাপ লাগছে? ”
উত্তর আসলো সামনে এতোগুলো গ্লাস দেখে হাতে নিয়ে বুঝতে পারলো কুয়াশা ড্রিংক খেয়ে ফেলছে। তুষারের মাথায় হাত উঠে গেলো। তারাতাড়ি কলিগ দের বলে কুয়াশাকে কোলে তুলে গাড়িতে বসালো। ঘুমিয়ে আছে। তুষার নিজেকে বলছে কুয়াশার খেয়াল রাখতে পারে নি বলে। কুয়াশা পিটপিট করে চোখ খুলে বলল
” আমি আকাশে উড়ে ঔ অরোরা গুলো ছুঁয়ে দিবো”
তুষার বিরবির করে বলল ” মা ত লা মি শুরু হয়ে গেছে ”
কুয়াশা উঠে দাঁড়াতে গেলো গাড়ির সাথে বাড়ি খেলো প্রচন্ড ব্যথায় মাথায় হাত দিয়ে কেঁদে ফেললো। তুষার চমকে তাকালো।
” খুব লাগছে? ”
” হ্যাঁ এই শ য় তা ন টা আমাকো ব্যথা দিয়েছে একে আমি মা র বো ”
বলে গাড়িতে মা র তে লাগলো তুষার থামানোর চেষ্টা করেও পারলো না। একসময় ক্লান্ত হয়ে কুয়াশা নিজেই থেমে গেলো আবার ঘুমিয়ে গেলো তুষার তারাতাড়ি ড্রাইভ করে বাসায় আসলো। কুয়াশাকে কোলে তুলে রুমে এনে শুয়ে দিলো কুয়াশা গলা জড়িয়ে ধরেছে ছাড়ার নাম নিচ্ছে না পিটপিট করে চোখ খুলে মিলিয়ে দিলো ওষ্ঠ জোড়া… থমকে গেলো সব কিছু….
চলবে ইনশাআল্লাহ