প্রেমসুধা পর্ব-২৯+৩০+৩১

0
401

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৯

ভার্সিটিতে তৌসিফ ছেড়ে গেলো সেই কত ঘন্টা আগে। পৌষ ক্যাফেটেরিয়াতে থেকে একটা সিঙ্গারা নিয়ে খেতে খেতে বের হলো। উদ্দেশ্য গার্ডেন এরিয়াতে যাওয়া। ওখানেই বসবে একটু। আরেকটা গ্লাস শুরু হবে আবার ঘন্টা খানিক পর। পথিমধ্যে আদিত্য’র সামনাসামনি পরে গেলো পৌষ। আদিত্য ও চোখ তুলে তাকিয়েছে। চোখাচোখি হতেই পৌষ অসস্তিতে পরলো। মোটেও এখন এর সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই পৌষ। একেতো বর্তমান সম্পর্ক দুই হলো তিক্ত অভিজ্ঞতা। আদিত্য যে জঘন্য কাজ করতে যাচ্ছিলো তা ভাবলেই পৌষ’র অন্তর আত্মা কাঁপতে থাকে। বন্ধুদের সাথে নেশা করা অবস্থায় স্বীকার করা দৃশ্য টা যেন আজও চোখে ভাসে। পৌষ যথাসম্ভব সাইড কেটে যেতে নিলেই আদিত্য হঠাৎ ডাকলো,

— পুষি?

পৌষ ঘুরে দাঁড়ালো সটান হয়ে। সম্মুখে আদিত্য। পৌষ’র দৃষ্টি তখন শক্ত। চোয়ালে দাঁত কামড়ে আছে। আদিত্য কিছু বলার আগেই পৌষ বলে উঠলো,

— ডোন্ট কল মি দ্যাট।

আদিত্য সহজ গলায় ই বললো,

— সিনিয়র তোমার আমি।

— জানি। সম্মান বজায় রাখুন আপনি আমিও রাখব। ইট মা’রবেন তো পাটকেল আমিও মা’রব। দূরে থাকবেন আমার থেকে।

বলেই পিছন ফিরে যেতে নিলো ওমনিই শুনা গেলো আদিত্যের গলা,

— দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি। কথা ছিলো একটু।

পৌষ আগেই শুনেছে আদিত্য চলে যাবে। ভেবেছিলো চলেই গিয়েছে কিন্তু এখনও যে যায় নি তা জানতো না। কাটকাট গলায় ওভাবেই বললো পৌষ,

— কথা শুনতে ইচ্ছুক নই আমি।

বলেই গটগট পায়ে এগিয়ে গেলো। পেছনে আদিত্য হতাশ দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে রইলো। ওর সত্যি ই কিছু কথা ছিলো আর কথাগুলো জরুরি ও বটে কিন্তু এই মেয়ে শুনলে তো।

গার্ডেন এরিয়াতে বসে মেজাজ খারাপ বেড়ে গেলো পৌষ’র। সামনেই ঘাসের উপর গোল হয়ে বসা আদিত্য’র বন্ধুরা। পৌষ’কে দেখেই তাদের নজর আটকালো। যথেষ্ট সিনিয়র হওয়াতে ওদের আশেপাশে আবার জুনিয়র দিয়েও ভরা। চ্যালামি করতে হবে না?
পৌষ উঠে যেতে নিলেই হঠাৎ ডাক পরলো। রাগে যেন চোখে পানি জমে যাচ্ছে পৌষ’র। পা চালালো সামনের দিকে তখনই কেউ একজন পেছন থেকে ওর হাত টেনে ধরে। কানে ভেসে আসে ওদের কণ্ঠ,

— কোথায় যাচ্ছো পৌষ? ক্লাস তো শুরু হয় নি। ভাইরা ডাকে ওখানে। চলো। শুনে যাও।

কটমটিয়ে পেছনে তাকালো পৌষ। ওর এক ব্যাচ সিনিয়র ধরেছে ওর হাতটা। ঝাটকা মে-রে হাত সরিয়েই দাঁত চেপে পৌষ বলে উঠলো,

— হাত ধরবেন না ভাইয়া।

ছেলেটা অল্প হেসে কিছু বলার আগেই দু’জন ছেলে উঠে এলো। পৌষ’কে দেখেই বললো,

— কি হয়েছে হাত ধরলে?

— কেন ধরবে?

একজন আচমকা ওর হাত খামচে ধরতেই পৌষ ছাড়াতে চাইলো। পারলো না। বাকিরা বসে তখনও মজা দেখছে। পৌষ রাগে লাল হয়ে বলে উঠলো,

— হাত ছাড়েন বলছি!

— কি হবে হাত ধরলে?

আচমকা একজন আর্তনাদ করে উঠলো। বাকিরা বুঝে উঠতে পারলো না। এত দ্রুত সব ঘটলো যে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারে নি। হাত ধরে রাখা ছেলেটা আস্তে করে হাতটা ছেড়ে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। পৌষ জায়গা মতো কিক মে’রেছে। বাকি দু’জন তখনও হা হয়ে আছে। পৌষ একবার সামনে তাকালো। আদিত্য’র বন্ধুরা তখনও বসে আছে। এদিকে আসে নি। পৌষ বাকি দু’টোর দিকে তাকিয়ে বললো,

— এরপর থেকে হাত ধরা থেকে সাবধান। মনে যাতে থাকে।

রাগে হিসহিসিয় করতে করতে ক্লাসে চলে যায় পৌষ। ও যেতেই আদিত্য’র বন্ধুরা উঠে এলো। আহত ছেলেটাকে ধরে বললো,

— চল।

— কই যাব ভাই?

— ওদের ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের কাছে। বিচার তো দিতেই হবে। সিনিয়রের গায়ে হাত তুলে। মেয়ের সাহস কত?

ছেলেটা সোজা হয়ে দাঁড়ালো বহু কষ্টে। জুনিয়র তিনজনকে নিয়ে আদিত্য’র বন্ধুরা হাটা দিলো চেয়ারম্যানের রুমে। তাদের মুখে তখনও বাঁকা হাসি।
.
চলমান ক্লাসে হঠাৎ ই পিয়ন এসে নক করলো। উপস্থিত প্রফেসর কারণ জিজ্ঞেস করতেই শুনা গেলো,

— পৌষরাত হক। তাকে চেয়ারম্যান ডাকছেন। এখনই।

গলাটা যেন শুকিয়ে এলো পৌষ’র। নিজের নাম শোনামাত্র ই বুকটা ধক্কর ধক্কর শুরু করেছে। তবুও উঠে হাঁটা দিলো ও। দাঁত দিয়ে নখ কামড়ে ঢুকলো চেয়ারম্যানের রুমে।
উপস্থিত সেখানে মাঠের ছেলেগুলো। রাগে যেন দপদপ করে জ্বলছে পৌষ’র শরীর। তবুও ভদ্রতার খাতিরে সালাম জানালো চেয়ারম্যান’কে। চেয়ারম্যান গম্ভীর তখন৷ নিজের ডিপার্টমেন্টের সিনিয়রকে মে’রেছে পৌষরাত সেই বিচার নিয়ে এসেছে অন্য ডিপার্টমেন্ট। খুবই বাজে এক পরিস্থিতি। ছেলেটা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। চেয়ারম্যান গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

— পৌষরাত তুমি এটা করেছো?

পৌষ চমকালো। মাথা নেড়ে সায় জানালো। এই কাজ সে ই করেছে। স্বীকারোক্তি শুনে চেয়ারম্যানের চোয়াল ভারী হলো। কঠিন দৃষ্টি ফেলে বললেন,

— এখনই সরি বলো ওদের। তোমার সিনিয়র তারা। তাদের আঘাত করো তুমি!

পৌষে’র নাকের পাটা ফুলে উঠলো। মাথা উঁচু করে বলতে চাইলো,

— স্যার ওনারা……

ধমকে ওকে চুপ করালো চেয়ারম্যান। পৌষ ও ত্যাড়া কম না। ও মাফ চাইলো না। চেয়ারম্যান ওর দিকটা শুনতে ও চাইছে না। রেগে এবার চেয়ারম্যান বলে উঠলো,

— আস্ক সরি দু দ্যাম পৌষরাত অর এলস আই উইল কল ইউর গার্ডিয়ান।

রাগে চোখ লাল হয়ে এলো পৌষ’র। দাঁত চেপে মুখে “সরি” উচ্চারণ করলো। চেয়ারম্যান ফোঁস করে শ্বাস ফেললো। পৌষরাত সোজা বেরিয়ে নেমে গেলো। ওর পা থেমে নেই। একদম গিয়ে হাজির হলো সিনিয়রদের ডিপার্টমেন্টে। তাদের চেয়ারম্যানের রুমে ঢুকে নাক লাল করে বিচার দিলো,

— স্যার মাঠে ভাইয়ারা জুনিয়র পাঠিয়ে আমার সাথে বেয়াদবি করিয়েছে। তারা আমার হাত টেনে ধরেছিলো। আমি নিজেকে রক্ষা করতে পা চালিয়েছিলাম। এখন আপনিই বিচার করুন।

একদমে বলে থামলো পৌষ। নিজের লাল হওয়া কবজিটা ও দেখাতে ভুললো না। ওদের চেয়ারম্যান কড়া লোক। পৌষ’কে বসিয়ে পানি খাওয়ালেন। ডেকে পাঠালেন ছেলেগুলোকে আনতে। আফসোস তারা ডিপার্টমেন্টে নেই। পৌষ জানে ওরা কোথায় কিন্তু বলবে না। ওর কথা একটাই, তোরা আমার ডিপার্টমেন্টে ঢুকে আমাকে দিয়ে মাফ চাইয়েছিস আমি তোদের ডিপার্টমেন্টে ঢুকে বিচার চাইলাম। ব্যাস বরাবর।
আচমকাই কেবিনে নক হলো। পৌষ তখন সোফায় বসা৷ সাথে একজন টিচার। চেয়ারম্যান অনুমতি দিতেই পৌষ’র জম ঢুকলো দরজা দিয়ে। তৌসিফ’কে এই মুহুর্তে মোটেও আশা করে নি সে। হঠাৎ ই খেয়াল হলো ওর ক্লাস টাইম শেষ। নিশ্চিত এই ব্যাটা ওকে নিতে এসেছে। কিন্তু দশ কথার এক কথা, তৌসিফ জানলো কিভাবে পৌষ এখানে?
চেয়ারম্যান ওকে দেখে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এলো। দু’জন গলাগলি ও করলো। পাশে থাকা টিচারের সাথে কথা বললো তৌসিফ। পৌষ কিন্তু তখনও হাতে পানির গ্লাস বসা। তৌসিফ হঠাৎ ই ওর হাত থেকে গ্লাসটা সরালো। চেয়ারম্যান তৌসিফে’র জন্য কফি আনতে বলতেই তৌসিফ বললো,

— আজ না৷ অন্য একদিন।

চেয়ারম্যান বসলেন। তৌসিফ হেসে বললো,

— বউ নিয়ে যাব তাহলে।

চেয়ারম্যান ক্যাট ক্যাট করে হেসে উঠলো। জানালো,

— ওদের বিচার কাল করছি আজ যাও তবে বউ নিয়ে। কফির দাওয়াত কিন্তু রইলো।

তৌসিফ উঠলো তবে পৌষ’র হাতটা নিজের হাতে নিয়ে। পৌষ ও দাঁড়িয়ে গেলো। তৌসিফ হাসিমুখে চেয়ারম্যান আর উপস্থিত টিচারের সাথে হাত মিলিয়ে পৌষ’কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

ক্যাম্পাস তখন খালির দিকে। বিকেল গড়িয়েছে বলে কথা। পৌষ একদম শান্ত ভাবেই তৌসিফে’র হাত ধরে হাঁটছে। কোন তারাহুরো নেই ওদের মাঝে। গাড়িতে উঠেও পৌষ চুপ রইলো। তৌসিফ ই শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

— তুমি নাকি সিনিয়রদের গায়ে হাত তুলেছো হানি?

— না।

তৌসিফ অবাক স্বরে বললো,

— চেয়ারম্যান মিথ্যা বলবে আমাকে?

— হাত না পা মে’রেছি?

— কিহ! কোথায়.?

— টুনটুনিতে।

তৌসিফ হা হয়ে গেলো। ওর বউ এটা বলে কি? ফাঁকা এক ঢোক গিলতেও ভুললো না ও।
_______________________

হক বাড়ীতে আজ হৈ চৈ পরেছে। বড় চাচা নিজে আজ তৌসিফ’কে কল দিয়েছিলো। তৌসিফ তাকেও না করতে দুইবার ভাবে নি কিন্তু যখনই উনি বললেন,

— দু’জন এসে ঘুরে যাও।

তখনই তৌসিফ রাজি হলো। দুইজন এসে ঘুরে যাবে তা জানিয়েছে। চাচা’র মনে অন্য কথা। সে জানে একবার আনতে পারলেই হলো। পৌষ নিজেই গড়িয়ে কেঁদে হলেও থেকে যাবে। তখন নাহয় জামাই বউ দু’জন ই থাকলো। তৌসিফ যে বউ ছ্যাচ্চর তা বড় চাচা ঢের বুঝেছেন। মুখের উপর কিভাবে বলে দিলো,
” না বউ পাঠাব না। বউ ছাড়া ঘুম হয় না আমার”।
চাচা তো এটা শুনে নিজেই লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। শা”লার জামাই!

শ্রেয়া বাচ্চাদের সাথে বসা। তখনই হেমন্ত বাড়ীতে প্রবেশ করলো। বাবা তাকে ফোন করে আগেই বলেছে। হেমন্ত ও সোজা বাজার হয়ে এসেছে। বড় মাছগুলো রান্না ঘরে রাখতেই ড্রয়িং রুমে বসা শ্রেয়া’র নাকে যেন গন্ধটা ধাক্কা খেলো। মুখ কুঁচকে রুমে চলে গেলো ও।
কেউ ততটা খেয়াল করলো না অবশ্য। ইনি,মিনি উঠে গেলো মাছ দেখতে। পিহা’র টিচার এসেছে সে পড়ছে এখন।
বড় মাছটার দিকে তাকিয়ে হেমন্ত’কে জিজ্ঞেস করলো,

— হেমু বাই মাছ কি ঘুমায়?

হেমন্ত দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,

— মাছ’কে জিজ্ঞেস কর।

— মাছ কতা বলে হেমু বাই?

— হু বলে তো।

দু’টোর গালে দুটো চুমু দিয়ে হেমন্ত রুমে গেলো। শ্রেয়া হেলান দিয়ে বই পড়ছে। হেমন্ত হাত পা ধুঁয়ে এসেছে নিচে থেকে। শ্রেয়া’র কাছে হাসিমুখে এগিয়ে আসতে নিলেই নাক চেপে ধরে শ্রেয়া। হেমন্ত আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে শ্রেয়ু?

— উউউ। গন্ধ। গোসল করে আসুন৷ গন্ধ মাছের।

হেমন্ত বউয়ের মন রাখতে গোসলে ঢুকলো। দশ মিনিটে গোসল সেরেই এক লাফে বউয়ের কোল ঘেষে শুয়ে পরলো। পেটে হাত দিয়ে বললো,

— বাবা’র কলিজা কি করে?

শ্রেয়া হেমন্তের ভেজা চুলে হাত বুলালো। মানুষ টা এত কেয়ারিং কেন? হেমন্ত শ্রেয়া’র হাতে চুমু দিয়ে বললো,

— ফ্রুটস খেয়েছিলে?

— হুম।

— একটা ডাব কেটে আনি।

শ্রেয়া জানে না বললেও কাজে দিবে না। হেমন্ত নিচে গিয়ে ডাব একটা কেটে পানি নিয়ে রুমে এলো। এই সময়টাতে ডাবের পানি বাবু’র জন্য উপকারী। শ্রেয়া পানিতে চুমুক দিলো। জিজ্ঞেস করলো,

— মলাই নেই?

— আছে তো।

— দিন তাহলে।

— আগে পানি খাও।

শ্রেয়া মুখ চোখা করলো। ও জানে এখন পানি শেষ ন করলে মলাই দিবে ন হেমন্ত।

#চলবে….

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩০

তৌসিফ আগামী কাল বউ নিয়ে আসবে হক বাড়ীতে। যেহেতু মুখে বলেছে সেহেতু কথার খেলাপ সে করবে না তা শিওর। বাজারে গিয়ে জামাই আদরের সবটুকু প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন দুই চাচা। চাচিরা ও হাতে হাতে পিঠা বানিয়ে রাখছে। জামাই প্রথম আসবে বলে কথা। শ্রেয়া মুখটা হাসি হাসি করে বসে আছে। চিতই গুড়ে ভেজানোর জন্য বানানো হচ্ছে যাতে আগামী কাল খাওয়া যায় সেই পিঠা খাওয়ার জন্য শ্রেয়া ততটা মুখিয়ে নেই। ওর ধ্যান চাচি শাশুড়ীর বানানো ঝাল চিতইতে। কাঁচা মরিচ আর ধনিয়া দিয়ে বানানো হচ্ছে যদিও মাত্র ই একটা ডিম চিতই খেলো না। গরম ধোঁয়া উড়ানো একটা চিতই পিহা এনে দিলো শ্রেয়ার সামনে। শ্রেয়া ফুঁ দিয়ে মুখে দিতে নিলেই কোথা থেকে হেমন্ত চলে এলো। ফুঁ দিতে দেখেই চাপা স্বরে বললো,

— শ্রেয়ু ফুঁ দিয়ে খেতে নিষেধ করেছিলাম।

— উফ ভুলে গিয়েছিলাম। সরি।

হেমন্ত পিঠা ছিড়ে ছিড়ে রাখলো যাতে তারাতাড়ি ঠান্ডা হয়। ইনি, মিনি দুটোই ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থা। রাত জাগতে পারে না একটাও। রুমেই ছিলো। ওদের মা মাত্র ই দুটোকে বিছানায় শুয়িয়ে রেখে এলো কিন্তু হেমন্তের গলা পেয়েই এসেছে। জৈষ্ঠ্য আর চৈত্র ও এলো। ওদের খাওয়া দাওয়া চলছে এখানে। হেমন্ত জৈষ্ঠ্য’র দিকে তাকিয়ে বললো,

— দুটো কাল সকালে ফজরের পর ঘুমাস না। তোদের নিয়ে বাইরে যাব।

চৈত্র মুখের টুকু শেষ করে জিজ্ঞেস করে,

— কই যাব হেমু ভাই?

হেমন্ত উত্তর করার আগেই ইনি, মিনি হেমন্তের শরীরে বেয়ে উঠে কাঁধ জড়িয়ে ঝুলে পরলো। কান মুখ দিয়ে কুই কুই শুরু করেছে দুটো। তারা ও যাবে। বড় ভাইয়ের দুই গালে চপচপ শব্দ করে দুটো করে চার জোড়া চুমু ও বসালো। হেমন্ত আড়মোড়া ভেঙে শ্রেয়া’র কোলে মাথা দিয়ে টানটান হয়ে সোফায় শুয়ে পরলো। পা দুটো মেলে দিয়ে বললো,

— পায়ে ব্যথা বুঝলে শ্রেয়ু।

ঠিক সেকেন্ডের ব্যবধানে ব্যাঙের মতো দুটো লাফ দিলো ইনি, মিনি। দুটো দুই পায়ের কাছে বসে কোলের উপরে ভাইয়ের পা ভাগ করে নিলো। ছোট ছোট হাতে পায়ের আঙুল টেনে দিতে দিতে আধ ভাঙা গলায় বললো,

— হেমু বাই নিবা না?

–পায়ের পর আমার মাথা ব্যথা তারপর কাঁধ ব্যথা এরপর পিঠ ব্যথা…..

সকলের মুখে তখন চাপা হাসি।
বাকিটা বলার আগেই পিহা বলে উঠলো,

— পৌষ আপা থাকলেই বলতো হেমু ভাই আপনার গলায় ও ব্যথা আসুন টিপে দেই।

সকলেই হেসে উঠলো। শ্রেয়া একটু পিঠা হেমন্তের মুখে দিয়ে নিজেই চুলগুলো টেনে দিলো। হেমন্ত আদেশের ভঙ্গিতে বললো,

— পিহা সোনা, চা খাওয়াবি?

পিহা রান্না ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

— মা’কে বলছি এখনই।

পিহা বলতেই জৈষ্ঠ্য পাশের সোফায় গা এলিয়ে দিলো। চৈত্র’র দিকে তাকিয়ে বললো,

— চালতা পারতে হবে। পৌষ আপাকে ভর্তা বানিয়ে খাওয়াবে।

— যদি না থাকে?

হেমন্ত ওদের উদ্দেশ্য করে বললো,

— তৌসিফ তালুকদার শা’লা তো জানে না সেধে কাকে বিয়ে করেছে। পৌষ নিজে তো থাকবে তৌসিফ’কে সহ নিয়ে থাকবে। আমার বোন বলে কথা।

কথা যে এটা একদম সত্যি তা সকলেই জানে। পৌষ’র স্বভাব সম্পর্কে কে না জানে?

_________________

পৌষ যাবে না বলে মনস্থির করেছে। তৌসিফ বারবার বলেছে আলমারিতে ব্যাগ রাখা। সেটাই যাতে পৌষ পরে কিন্তু পৌষ যাবে না। ভালো লাগে না বড়লোকদের মাঝে যেতে। একবার হেমন্তের সাথে গিয়েছিলো। কি এক কান্ড ঘটলো সেদিন। ঢের শিক্ষা হয়েছিলো পৌষ’র। এসব জায়গায় আর যাবে না।
তখন ওকে বাসায় নামিয়ে দিয়েই গাড়ি ঘুরিয়ে তৌসিফ কোথায় জানি গেলো। জিজ্ঞেস করলেও উত্তর করে নি ঠিকঠাক উল্টো থুতনিতে চুমু দিয়ে চলে গেলো। পৌষ একা একাই ফ্লাটে চলে এসেছে।

আপাতত গোসল করে সোফায় পা তুলে শুয়ে চিপস খাচ্ছে। কিছুতেই তৌসিফে’র সাথে যাবে না ও।
সোহা নিজের রুম থেকে এসেই বুয়ার সাথে কিছুক্ষণ খ্যাঁচ খ্যাঁচ করলো। সেসবে পাত্তা দিলো না পৌষ। মিনু একটু পর পরই উঁকি দিচ্ছে। তার নাটক দেখার সময় এটা কিন্তু পৌষ কার্টুন ছেড়ে রেখেছে। নাকের পাটা ফুলে উঠলো মিনু’র। পৌষ’র বরাবর বিপরীতে গিয়ে বসলো সোফায়। পৌষ তাতেও পাত্তা দেয় না। চোখ মুখ ডুবিয়ে অনায়াসে চিপস মুখে পুরছে। ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো মিনু। কি মনে করে উঠে গেলো। সোজা সোহা’র কাছে গেলো ও। শয়তানী হাসি দিলো পৌষ। এখন নিশ্চিত সোহা চোহা আসবে। হলোও তাই। সোহা এসেই কড়া গলায় বললো,

— রিমোট ছাড়ো।

চোখ উল্টে তাকালো পৌষ। না বুঝার ভঙ্গিতে বললো,

— কি?

— টিভির রিমোট ছাড়ো।

— কেন?

— মিনু দেখবে এখন?

— দেখুক।

সোহা বিরক্ত হয়ে বললো,

— এসব দেখে না ও।

— সেটা ওর চোখের ব্যাপার আমার না।

সোহা কটমট করে তাকালো। দাঁত চেপে বললো,

— ভদ্র মতো কথা শুনো….

— শুনব না৷ যান ফুটুন এখান থেকে।

— শেষ বার বলছি।

পৌষ ক্ষেপে গেলো। ওর গলাটা যেন কচু খাওয়ার পর যেমন চুলকায় ঠিক তেমন চুলকে উঠলো। ফুঁসে উঠে বললো,

— টিভি আমার জামাই কিনেছে। বাসা আমার জামাই করেছে। রিমোট ও আমার জামাই এর। সোফা ও আমার জামাই এর। আর ঐ জামাই হলো আমার। এরমানে বুঝেন? এরমানে এসব আমার। দিব না।

সোহা টিটকারি করে বললো,

— এসব দেখেই গলায় ঝুলেছো মেয়ে। নাহয় এতসব জেনেও কে বিয়ে করে এমন পুরুষ’কে। যার চরিত্র…..

আচমকা সোহা’র কপালে গিয়ে রিমোট লাগলো। পৌষ ছুঁড়ে মে’রেছে। ততটা লাগে নি অবশ্য। তৌসিফ’কে নিয়ে ওভাবে বলাতেই ওর রাগ উঠে গিয়েছে। রিমোট ছুঁড়ে ফেলেই গটগট পায়ে চলে গেলো ওখান থেকে। সোহা তখনও চোয়াল ফাঁক করে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ের সাহস কত? সোহা’কে রিমোট ছুঁড়ে মা’রে?
.
তিনটা ছেলে হাতের ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। মুখ বাঁধা থাকায় শুধু গোঙানির ন্যায় শব্দ হলো। হঠাৎ গাড়ির ভেতর থেকে আদেশ এলো মুখ খুলে দেয়ার। ভেতরের মানুষ টা তাদের আর্তনাদ শুনতে চায়। তিনজনের হাত পুণরায় মুচড়ে ধরতেই তারা ব্যথাকাতুর শব্দ তুললো। গাড়ির কাঁচটা উঠে গেলো আলগোছে। অন্ধকারে সহসা মিলিয়ে গেলো তা বাতাসের বিপরীতে শাঁ শাঁ শব্দ করে।

বাড়ীতে ঢুকবে এমন সময় আদিত্য’কে দেখলো তৌসিফ। ওর সাথে দেখা হচ্ছে না আজ অনেকদিন। আদিত্য’কে দেখেই ডাকলো ও গাড়ি থেকে নেমে,

— আদি?

আদিত্য’র পা থেমে গেলো। চাচ্চু’কে দেখেই এগিয়ে এলো ও। তৌসিফ সটান হয়ে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,

— কবে যাচ্ছিস?

— এই তো চাচ্চু কিছুদিন আর।

— হুম। তো অবস্থা কি?

আদিত্য অল্প চোখ তুলে তাকালো। অতঃপর ধীরে বলতে চাইলো,

— চাচ্চু তুমি পুষি’কে…..

গগন কাঁপিয়ে ধমক দিলো তৌসিফ,

— এই পুষি কি? পুষি কি? বল! তোর মুখ থেকে পুষি, পৌষ, পৌষরাত কোনটাই জানি না শুনি আদি। চাচি ডাকবি তুই। জিহবা কেটে নিব আমি। এই চাচি না চাচিম্মু ডাকবি। বল মনে থাকবে?

দারোয়ান সহ দুই একজন কাজের মানুষ তাকালো ওদের দিকে। আদিত্য হাত মুঠো করে রাখলো। তৌসিফ ওর নড়চড় না দেখে ধমকালো,

— কথা বল!

আদিত্য মাথা নাড়লো। তাতে পোষালো না তৌসিফে’র। কড়া গলায় বললো,

— মুখে বল।

— ডাকব না।

— কি ডাকবি?

……………

— কথা বল আদি। আমার ধৈর্য’র পরিক্ষা নিস না৷

আদিত্য’র হাতের রগগুলো ফুলে উঠলো। শিরা উপশিরা দেখা যাচ্ছে যেন। রাগে, অপমানে ওর মাথা নিচু করেই বললো,

— চা…চাচি।

— চাচি না চাচিম্মু ডাকবি। মনে যাতে থাকে। তোর চাচার বউ সে। তাকে নিয়ে একটা অক্ষর ও যদি এদিক ওদিক করিস আমি তৌসিফ তুই কে ভুলে যাব। কাঁধে করে যদি ঘুরাতে পারি তাহলে ছুঁড়ে ফেলতেও পারি।

তৌসিফ পা বাড়ালো সিড়ি দিয়ে। পেছনে না ঘুরেই বললো,

— তোর কোন বন্ধু যাতে পৌষরাতের আশেপাশে না থাকে। এরপর জানে মে’রে দিব।

আদিত্য চমকে তাকালো। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

— আমার বন্ধু?

তৌসিফ কথা বললো না। পিছন ফিরে আদিত্য’র কাঁধ চাপড়ে বুকের বা পাশে হাত রেখে নরম স্বরে বললো,

— তুমি আমার ছেলের মতো আদি। তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি তা তো জানো। জানো না?

আদিত্য মাথা নাড়তেই তৌসিফ অল্প হেসে বললো,

— বাসায় যা।

আদিত্য চলে যেতেই তৌসিফ ও হাটা দিলো। বউ তার নিশ্চিত রেডি হয়ে বসে আছে।

রুমে ঢুকার আগেই ওকে আটকালো সোহা। কপালে সাদা ব্যান্ডেজ করা। আদৌ কতটুকু কি হয়েছে কে জানে। সে মাথা পেঁচিয়েছে সাদা ব্যান্ডেজ দিয়ে। তৌসিফ একপলক তাকিয়ে ই প্রশ্ন করলো,

— মাথায় কি হয়েছে?

সোহা নাক টেনে বললো,

— পৌষ করেছে এটা।

তৌসিফ অবাক হলো। আশ্চর্য হওয়া কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

— মানে? ও কেন করবে? নিশ্চিত এমন কিছু ই করেছো তুমি সোহা?

সোহা অবাক হলেও আমলে নিলো না। আক্রোশ মিশ্রিত গলায় বললো,

— আমার মাথায় রিমোট আছাড় মে’রেছে ও। এখনও এর বিচার পাব না? বেয়াদব মেয়ে সে একটা। বড় ছোট মানে না।

তৌসিফ মাথা ঠান্ডা করলো। তার কাছে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। সোহা’কে জানালো,

— আমি কথা বলছি ওর সাথে।

— কথা বলছি? কি বলার আছে? এই যে আমার মাথা। এরপর কি বলার আছে?

তৌসিফ কথা বাড়ালো না। রুমে চলে এলো। মুড নষ্ট করার ইচ্ছে আপাতত নেই।

ঘুটঘুটে অন্ধকার রুম দেখেই ভ্রুঁ কুঁচকায় তৌসিফ। পৌষ কোথায়? ওকে তো রেডি হয়ে থাকতে বলেছিলো। লাইট অন করতে করতে ডাকলো,

— হানি? আর ইউ দেয়ার?

লাইন অন হতেই বিছানায় দেখা গেলো ওকে। কাঁথা দিয়ে মাথা সহ ঢেকে রেখেছে সে। তৌসিফ ফোঁস করে শ্বাস ফেললো। কাঁথা সরাতে নিলেই পৌষ শক্ত হয়ে রইলো। তৌসিফে’র মাথায় রাগ উঠে গেলো। এই মেয়ে কেন জ্বালাচ্ছে ওকে?
তৌসিফ এক টানে কাঁথা টেনে সরালো। পৌষ তবুও ঠ্যাটার মতো পরে রইতেই তৌসিফ এক টানে ওকে ধরে তুললো। পৌষ চোখ খুললো না। তৌসিফ এবার দিলো এক ধমক,

— কি সমস্যা? কি হয়েছে? সোহা’কে কেন মে’রেছো? কেন জ্বালাচ্ছো আমায় তুমি? রেডি হও নি কেন?

পৌষ মাথা তুলে তাকালো। রাগী সুরে বললো,

— ঐ সোহা…..

— কি? বলো?

— বলতে দিন। মুখের কথা টেনে নিয়ে বলেন ‘বলো’?
এত কেন জ্বলছে ঐ সোহা’র জন্য। মনে হচ্ছে পাতলা ডালে বাগার দিলো কেউ। আপনাকে চরিত্রহীন বলেছিলো। টিভির রিমোটের জন্য বলেছে। মানলাম আমি তর্ক করেছি তাই বলে এমন কথা বলবে? শুধু বলেছিলাম টিভি, রিমোট আর বাসা আমার জামাই এর মানে আমারই।

তৌসিফ নরম হলো। ওকে কাছে টানতেই চিরবির করে উঠলো পৌষ। তৌসিফ তাকে শান্ত করতে জানে। ওর হাত ধরে নিতে নিতে বললো,

— রেডি হও নি কেন হানি?

— যাব না তো।

— যেতেই হবে তোতাপাখি।

— আআআ যাব না৷

তৌসিফ চোখ গরম দেখাতেই চুপসে গেলো ও। আলমারি খুলে ব্যাগ নিয়ে কাপড় বের করেই চমকালো। এটা কোন কাপড় না। এটা তো নাইট ড্রেস!
পৌষ দাঁত চেপে বলে উঠলো,

— এটা পরে যাব?

তৌসিফ স্বাভাবিক ভাবেই ওটা সরালো। জানালো,

— আরে শাড়ি আনলাম তো হানি। ওটা পরবে। এটা ফিরে এসে পরবে।

— এটা কিছুতেই পরব না আমি।

— এখন না তো হানি৷ এটা ফিরে এসে পরবে। শুধু আমার সামনে।

দাঁত চেপে ধরে পৌষ দ্বিতীয় ব্যাগটা হাতে নিলো। কালো রঙের একটা শাড়ি। অসম্ভব সুন্দর বটে। পৌষ’র মনটা ঝলমলিয়ে উঠলো সহসা। মুখে হাসি ফুটে উঠলো কিন্তু তা বেশিক্ষণ টিকলো না। ব্যাগে পুণরায় হাত ঢুকাতেই ব্লাউজ সহ অন্য কিছু বেরিয়ে এলো। চোখ বড় বড় করে তাকালো পৌষ। রাগে ছুঁড়ে মা’রলো তা যা গিয়ে পরলো তৌসিফে’র মুখে। পৌষ হিসহিসিয়ে বললো,

— আপনাকে বলেছি এসব আনতে.?

তৌসিফ মাথা থেকে তা হাতে নিয়ে বললো,

— আমি না আনলে কে আনবে.?

— চেয়েছি আমি?

— লাগে তো।

— আপানাকে বুঝতে বলেছি? অসভ্য লোক। এসব কেন ধরেন আপনি? সাইজ কে বলেছে আপনাকে?

— বউ আমার। সঠিক বেঠিক সব সাইজ আমার জানা আছে।

পৌষ তৌসিফে’র হাত থেকে টেনে নিলো ওটা। দৌড়ে গিয়ে ঢুকলো ওয়াশরুমে। ভেতরে গিয়ে গা’লি ও দিলো দুটো যা ছিলো অতি সস্তা। এই মেয়ে’র মুখের বুলি হয়েছে এই দুটো কথা। তৌসিফ নিজের সুট বুট বের করলো। তারা ওখানে স্পেশাল গেস্ট। বউয়ের সাথে বলতে গেলে এই প্রথম বন্ধুদের সাথে দেখা। একটু হাব ভাব ঠিক রাখতেই হয়।

#চলবে……

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩১

মাঝারী শরীরে অতি সল্প ই মেদ। সুন্দর করে তাতে কালো শাড়ী পরা। ছোট ছোট সাদা স্টোন তাতে দ্যুতি ছাড়াচ্ছে। মাথায় সাধারণ একটা কালো হিজাব পরা। দেখতে সাধারণ হলেও অতি অসাধারণ সেটা। তৌসিফ যেন ঢোক গিলতেও ভুলে যাচ্ছে। তার পরণে ও কালো প্যান্ট সাদা শার্ট তার উপর কালো ব্লেজার। দাঁত দিয়ে দাঁত চেপে রাখলো তৌসিফ। মানুষ সে ততটা ও ভালো না। না ভালো তার নিজের অতীত। শুধু মাত্র এই মেয়েটাকে দেখার পর থেকে তার মধ্যে পরিবর্তন আসা শুরু করলো নাহয় তৌসিফ তালুকদারের রগে রগে শয়তান চলে অনেকেই আগেপিছে তা বলে বেড়ায়। পা বাড়িরে এগিয়ে ভ্যানিটির সামনে গেলো তৌসিফ। সেখানেই বাক্সে রাখা ডায়মন্ডের চারটা চুড়ি। তৌসিফ তা নিয়ে পৌষ’র সামনে এসে হাতের কবজি ধরে দুটো দুটো করে পরালো। দুই আঙুলে দুটো আংটি পরিয়ে তাকালো সরাসরি মুখের দিকে। সাজ অতি নগন্য। পৌষ যে ততটা সাজগোছ পছন্দ করে না তা এতদিনে তৌসিফ বুঝে গিয়েছে অথচ সামান্য সাজে পৌষ’র মুখের আদল ঘুরে গিয়েছে। তৌসিফে’র বাগানে যেন স্বয়ং জোছনা নামলো আলো ছড়াতে। তপ্ত হওয়া ওষ্ঠ দুটো আর টিকতে চাইলো না। পৌষ’র থুতনিতে তারা নিজেদের স্থান ও খবরদারি দেখালো। পৌষ আস্তে করেই জিজ্ঞেস করলো,

— বের হবেন না?

— হুম। সু পরিয়ে দাও।

বলেই কউচে বসলো। শাড়ি পরা অবস্থায় কাজটা মুশকিল বটে কিন্তু তৌসিফ সেদিকে নজর দিলো না। বলেই যেন খালাস।
পৌষ কালো সু নিয়ে সামনে এলো। শাড়ী পরা অবস্থায় ওভাবে বসাটা সম্ভব হলো না। পাশ থেকে টুল নিয়ে তাতে বসে তৌসিফে’র পা নিজের কোলে তুলে পরালো জুতা। পৌষ’র এতে ভালোই বেগ পেতে হলো কিন্তু এই বিষয়টা নিয়ে তর্ক করতে পারলো না। নিজের ঘাড়ে সে নিজের কো’প মে’রেছে। একদিন সোহা জুতা চুজ করে দেয়ার পরই তো পৌষ কান্ড করলো এখন ঠেলা সামলা পৌষরাত, ঢেলা সামলা।

তৌসিফ একটা স্টোনের পার্স পৌষ’র হাতে দিয়ে ওর হাত ধরে হাটা দিলো। গাড়িতে উঠেই তৌসিফ আজ ড্রাইভার’কে বললো,

— ইউ ক্যান লিভ।

ড্রাইভার সরে দাঁড়ালো। মাঝে মধ্যে ই ওর স্যার একা ড্রাইভ করে। গাড়ির ডোর খুলে পৌষ’কে জায়গা দিলো তৌসিফ। শাড়ী সামলে উঠতেই ওর আঁচল ধরে কোলে দিলো তৌসিফ। নিজে বসলো ড্রাইভিং সিটে।
গাড়ি চলতে শুরু করেছে। ছোট্ট করে তৌসিফ শুধালো,

— এত আনইজির কিছু নেই হানি। আ’ম উইথ ইউ না?

পৌষ হু হা কিছুই করলো না। তৌসিফ ডান হাত স্ট্রেরিং এ রেখে বা হাতে পৌষ’র হাত ধরে টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। ওভাবে রেখেই বললো,

— কি হয়েছে?

— বাসায় আসার পর আপনার সাথে কথা আছে আমার। একটু জরুরি।

পৌষ’র ভাষা প্রকাশ করছে মামলা সিরিয়াস। তৌসিফ বুঝলো এখন বউ’কে ঘাটতে গেলেই ঝামেলা হবে তাই মাথা নেড়ে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো। ঘন্টা খানিকের মাঝেই নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছল ওরা। একজন কালো সুট বুট পরা বিশাল দেহের লোক এসে গাড়ির ডোর খুলে দিলো। তৌসিফ বের হয়ে অপর পাশের ডোর খুলে পৌষ’র হাত ধরে বের করলো। শাড়ীর আঁচল গুছিয়ে দিয়ে নিজের বাহুর ভাজে ওর হাতটা নিয়ে হাটা দিলো সামনে। তৌসিফের অপেক্ষায় ছিলো সকলে। ও আসা মাত্র ই ওর বন্ধু রওনাক এগিয়ে এলো। তৌসিফের সাথে হাগ করে তাকালো পৌষ’র দিকে। পৌষ অবাক চোখে এদিক ওদিক দেখছে। এই রকম পরিবেশে সে কখনোই আসে নি। চারদিকে চোখ ধাধানো, মনমাতানো চাকচিক্য। মানুষের সমারোহ অনেক কিন্তু জায়গাটা এতই বিশাল যে বুঝা যাচ্ছে না। রওনাক পৌষ’র দিকে হাত বাড়িয়ে হাসি মুখে বললো,

— আমাদের ভাবী?

বাড়ানো হাতটা অবলীলায় তৌসিফ ধরে নিজে হ্যান্ডশেক করলো। হাসি মুখেই জানালো,

— হ্যাঁ ও পৌষরাত।

রওনাক বুঝলো তৌসিফ তার বউ নিয়ে সিরিয়াস। হাত পর্যন্ত ছুঁতে দিবে না। অল্প হেসে রওনাক বললো,

— বস তারাতাড়ি আয়। তোর জন্য ই অপেক্ষা করছিলাম।

তৌসিফ মাথা নাড়লো। বাদ বাকিদের সাথে শুধু চোখের দেখা হলো। সময় অনেকটা অতিক্রম হওয়াতে আগে ওরা উদ্ভাবনের কাজটাই সারলো। প্রেস মিডিয়া থাকায় পৌষ’কে আগেই সাইডে বসিয়ে এসেছে তৌসিফ। পৌষ যে অসস্তি বোধ করছিলো তা তৌসিফ বুঝতে পেরেছিলো। পৌষ সাইড থেকে সবটা স্পষ্ট দেখতে পেলো। লাল রিবন কেটে তৌসিফ তালুকদার প্রবেশ করেছে। এত এত মানুষের ভীরে বন্ধুর কাজের আর শোরুমের ম্যাটারিয়ালের প্রশংসা করছে। পৌষ’র চোখের পলক যেন পরে না। এই লোক এতটা গুছিয়ে কথা বলে। হাত নাড়ানোর ভঙ্গি ও অদ্ভুত সুন্দর। পরিপাটি এক মানুষ অথচ এর নামের আগে পরে কত কালির দাগ পরেছে। পৌষ’র আজ কিছু উত্তর চাই।

হঠাৎ একটা যুবতী মেয়ে এসে দাঁড়ালো পৌষ’র সামনে। পৌষ তাকাতেই দেখা মিললো সুন্দরী রমণীর। হাই সোসাইটির হাই পরা মেয়ে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বয়স তার আঠারো কি উনিশ। পৌষ’কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে প্রশ্ন করলো,

— তুমি পৌষরাত?

পৌষ মাথা নাড়তেই মেয়েটা ঠোঁট গোল করে বললো,

— ওও।

বলেই আবারও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। পৌষ বিরক্ত হলো বটে। জিজ্ঞেস করলো,

— কিছু বলবে?

আরশি চুলগুলো পেছনে সরিয়ে বললো,

— তুমি জানো তৌসিফ আমাকে পছন্দ করতো? তার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো?

— বিয়ে হলো না কেন?

আরশি অবাক হলো বটে। মেয়েটা রিএক্ট করলো না কেন? আরশি পুণরায় বললো,

— উই ওয়ার ইন ডিপ লাভ।

— বাপের বয়সী তোমার সে। লজ্জা লাগে না?

কাটখোট্টা এই জবাবে আরশির চোখ কোটর থেকে বের হওয়ার উপক্রম। এত বড় কথা শুনেও এই মেয়ে এত শান্ত! আরশি পাশে বসলো ওর। অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলো,

— কিছু বলবে না তুমি?

— কি শুনতে চাও?

— এই যে আমি বললাম।

— বাইরের মানুষের কথা কানে তুলে নিজের সংসারে কেন অশান্তি করব? আমি কি পা*গল?

আরশি পুণরায় বললো,

— তৌসিফ আমাকে……

ওকে থামিয়ে পৌষ বললো,

— তোমাকে কি? বিয়ে করেছে? করলে ও আমার সমস্যা নেই। তার নামে অনেক কিছুই বিয়ের আগে শুনেছি। এখন নাহয় বিয়ের পরই শুনলাম।

বলেই দাঁড়িয়ে গেলো পৌষ। চোখের পানি লুকাতে অন্য সাইডে চলে গেলো ও। ক্লাচ থেকে টিস্যু বের করে চোখের কোণা মুছে নিলো অতি সাবধানে। পুরো তৌসিফ তালুকদার এক জলজ্যান্ত রহস্য যাকে খোলাসা করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত তাতে ডুবে যাচ্ছে পৌষ।

আরশি অবাক হলো বটে। মেয়েটা কিভাবে মুখের উপর বলে দিলো তৌসিফ তালুকদার তার বাবার বয়সী। সে কি জানে, রওনাকের ভাতিজি ও? ফাঁকা ঢোক গিললো আরশি। যদি চাচ্চুকে বলে দেয় এই মেয়ে? কিন্তু এটাও সত্যি আরশি ভালোবেসেছিলো তৌসিফ তালুকদারকে। তার ব্যাক্তিত্বের কাছে তার নামে রটা সকল কথা আর বয়স কোন ম্যাটার করে না।

তৌসিফ কথা শেষ করেই পৌষ’কে খুঁজতে এলো। বন্ধুরা সব জ্বালিয়ে মা’রছে তাকে। বউ দেখবে তারা। সবগুলো মুখিয়ে আছে একদম। পৌষ’কে নিদিষ্ট জায়গায় না পেয়ে তৌসিফে’র ভ্রুঁ কুঁচকালো। এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখা মিললো তার নিদিষ্ট রমণীর। ঐ তো কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। ডাগর ডাগর চোখে আশপাশ দেখছে। তৌসিফ ওইদিকে পা বাড়াতেই একটা ওয়েটার এলো পৌষ’র সামনে। ট্রেতে কিছু ড্রিংক রাখা সাথে ফ্রুট সালাদ। অফার করতেই পৌষ হাত বাড়ালো নিতে। গলা শুকিয়ে গিয়েছে তার। যেই না নিবে ওমনিই ওর বাড়ানো হাতটা ধরে ফেললো তৌসিফ। পৌষ অসন্তোষ প্রকাশ করে বললো,

— কি হয়েছে?

— কি খাবে আমাকে বলো।

— নিচ্ছিলাম ই তো।

ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে তৌসিফ বললো,

— ফ্রুট জুস নিয়ে আসো। গো।

মাথা নেড়ে চলে গেল ওয়েটার। পৌষ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— ছিলোই তো।

— অ্যালকোহল ছিলো ওগুলো।

বড় বড় চোখ দিয়ে তাকালো পৌষ। চোখ মুখ বিকৃত করে বললো,

— কিহ?

— জ্বিহ মাই হানি। কাম তোমার জন্য অনেকে অপেক্ষা করছে।

— এখানে ভালো লাগছে না।

— লাগবে। চলো।

গোমড়া মুখ করেই গেলো পৌষ। তৌসিফে’র বন্ধুরা হা করে তাকিয়ে রইলো। এত ছোট মেয়ে বউ করেই তাহলে তাদের হট্টা কাট্টা বন্ধু এমন ঘর কোণা হলো বুঝি? আড্ডা দিতেও সময় থাকে না তার। রওনাক ফিসফিস করে তৌসিফে’র কানে বললো,

— এই আটত্রিশ বছর বয়সে এসে বিশ বছর বয়সী বউ নিয়েই তাহলে ঘর মুখী হলি তুই?

তৌসিফ চোখ রাঙালো। তাতেই রওনাক চুপ করে গেলো তবে বাকিরা থেমে নেই। তারা পৌষ’কে আপ টু টো দেখেই নানান প্রশ্ন করে যাচ্ছে। তৌসিফ ওদের থামিয়ে বললো,

— ঐ দিকে চল। বসে কথা হোক।

একদম সাইডে বিশাল বড় বসার জন্য খালি জায়গা। ওরা গিয়ে বসলো সেখানে। রওনাকের বউ পৌষ’কে দেখেই মিষ্টি মুখে বললো,

— এতো অনেক ছোট তৌসিফ। তা পৌষরাত সামলাতে পারছো তো আমাদের তৌসিফ’কে?

পৌষ উত্তর করার আগেই হামজা নামের একজন বলে উঠলো,

— পারে নি আবার? আমাদের তৌসিফ ঘর ছাড়া আজকাল কিছু বুঝে?

পৌষ’র চিন্তা হলো। তাদের কথা অনুযায়ী তৌসিফ আগে বাসায় বেশি থাকতো না তাহলে সোহা যা যা বললো আজ তা কি মিথ্যা? সোহা’র কথা অনুযায়ী তো কথা মিলছে না। তবুও তারাহুরো করে না পৌষ। পুণরায় একজন প্রশ্ন করলো,

— ব্যাটা বউ তো তোর ছোট ছোট। মজা নিতেও পারছি না ভাবী বলে।

পৌষ’র ছুটন্ত মুখটা আর আটকে রইলো না। ফুরুৎ করে কথা বেরিয়ে এলো,

— এতক্ষণ ধরে তো মজা নিচ্ছেন আপনারা। আরো বাকি আছে?

সবগুলো হা করে তাকিয়ে রইলো। পরক্ষণেই হু হা শব্দে হেসে উঠলো। তৌসিফ মুচকি হাসলো। তার তোতাপাখিটা আজ চুপচাপ ছিলো যা দেখে তার মনের কোথাও ও কষ্ট হচ্ছিলো। এখন কথা বলাতে শান্তি শান্তি লাগছে। ওদের কথার মাঝেই জুস এলো। তৌসিফ পৌষ’র হাতে দিয়ে বললো,

— ক্ষুধা লেগেছে?

পৌষ উত্তর করার আগেই বাকিরা মজা নেয়া শুরু করলো। জুসে চুমুক দিলো পৌষ। তার বিরক্ত লাগছে। এই এত বড় বড় দামড়া দামড়া ব্যাটাগুলো এমন ভাবে কথা বলছে যেন এরা ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে। বউগুলো ও তো কম না। এই যে পৌষ জুস খাচ্ছে তার মধ্যে ই একজন তার কানে কানে ফালতু এক কথা জিজ্ঞেস করলো। পৌষ তার কথায় শুধু মুচকি হাসলো। তৌসিফে’র পেটে গুতা দিতেই তৌসিফ ওকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। আরেকজনের বউ সরাসরি ই জিজ্ঞেস করলো,

— তো পৌষ বিবাহিত জীবন কেমন লাগছে?

পৌষ মাড়ি শক্ত করে হাসি মুখেই বললো,

— জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ। খুবই ভালো যাচ্ছে। সকাল থেকে রাত জামাই নিয়ে খুবই সুখে আছি। আপনার কেমন যাচ্ছে?

মহিলাটি হকচকালো। এই বয়সে তাদের সংসারে মন নেই। দু’জন ই কাজে ব্যাস্ত। বাচ্চাগুলো ও বড় হয়েছে। এই তো। উত্তরে তিনি হাসলেন। বললেন,

— তোমার ই তো সময় এখন৷ জামাই আঁচলে বেঁধে রাখো। এত সুন্দর জামাই ছুটে গেলে সমস্যা।

মুচকি হাসলো পৌষ। বললো,

— যে আমার সে দিনশেষে আমার কাছেই ফেরত আসবে। তাকে বেঁধে রাখার প্রয়োজন নেই।

পৌষ’র এহেন উত্তরে তৌসিফ অবাক হলো বেশ। পৌষ কি তবে তৌসিফ’কে নিজের ভাবে?
বাকিরাও ওর উত্তরে মুগ্ধ হলো। তারা মন থেকে চায় তৌসিফ ভালো থাকুক। পিয়াসী তার জীবনের অনেকটা সময় কেড়ে নিয়েছে।
.
ডিনার করতে বসতেই দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। পৌষ’র প্লেট থেকে চামচ দিয়ে কিছু কিছু নিয়ে তৌফিক খাচ্ছে আবার নিজের প্লেট থেকেও পৌষ’কে খাওয়াচ্ছে। এদের কারো মনে এঁটো খাবারের প্রতি তিক্ততা নেই। হঠাৎ ই তাদের মনে পরলো পিয়াসীর কথা। তখনও তারা ডিনার করছিলো। তৌসিফ শুধু নিজের ছিঁড়া একটা চিকেন পিয়াসী’র প্লেটে তুলে দিয়েছিলো। কারণ ছিলো পিয়াসীর চিকেনটা বেশি ই পছন্দ। অবাকের বিষয় ছিলো পিয়াসী তা ছুঁয়েও দেখে নি বরং সেই খাবার ও খেলো না। তৌসিফ তখন বন্ধুদের সামনে বউ’কে উঁচু রাখতে সুন্দর করে মিথ্যা বলেছিলো,

— আরে ওর ওসিডি আছে।

অথচ সবাই তৌসিফে’র চোখের ভাষা বুঝেছিলো। এত এত আদর, যত্নের পর এহেন আচরণ কোন পুরুষ ই সহ্য করতো না অথচ প্রেমিক পুরুষ করেছিলো।

বাস্তব চিত্রটা আরো সুন্দর হলো। ফ্রুটস সালাদ খাবে না দেখে তৌসিফ চোখ গরম দেখিয়ে পৌষ’র মুখে দিচ্ছে। লিপস্টিক ব্র্যান্ডের হওয়াতে ঠোঁটেই কিন্তু আছে তবুও টিস্যু দিয়ে মুছে মুছে দিয়ে তৌসিফ বলছে,

— পকেটে করে নিয়ে এসেছি। খাও এরপর লাগিয়ে দিব।

দুই চামচ খেয়ে আর খেলো না পৌষ। তৌসিফ খাচ্ছে বাকিটা। তৌসিফে’র খাওয়া শেষ শুধু একটা চিকেন বল আধ খাওয়া রাখা। অবলীলায় তা চামচে তুলে মুখে দিলো পৌষ। তৌসিফ জিজ্ঞেস করলো,

— ভালো লেগেছে?

পৌষ মাথা নাড়তেই রওনকে’র দিকে তাকিয়ে তৌসিফ বললো,

— প্যাক করিয়ে দিস তো। রাতে ক্ষুধা লাগে ওর তখন খাবে।

রওনাক হাসি মুখে সায় জানালো। এত এত দম্পতির মাঝে দেখা যাচ্ছে শুধু কৃত্রিম সাজসজ্জা আর আভিজাত্য অথচ এই অসমবয়সী জুটিটার মধ্যে আছে শুধু সামঞ্জস্য, অকৃত্রিমতা আর প্রেম যা সকলকে মুগ্ধ করবে। দিগন্ত থেকেও দিগন্ত টেনে নিয়ে যাবে রুপকথার এক জগতে।

#চলবে…..