প্রেমসুধা পর্ব-৩৫+৩৬+৩৭

0
405

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৫

আকাশ আজ মেঘলা। মাঝে মাঝেই থেমে থেমে বৃষ্টি। না বেশি, না কম৷ ইলশেগুঁড়ি যাকে বলে আরকি। এই মুহুর্তে বেশ ঠান্ডা ও লাগছে পৌষ’র। গরম গরম খিচুড়ি খাওয়া ই যায় কিন্তু না। তৌসিফ তাকে শান্তি দিচ্ছে না। এখনই রেডি হতে বলছে ওকে। পৌষ এত করে বলছে কোথায় যাবে উত্তর নেই এর। শেষে হাল ছাড়লো পৌষ। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে আড়চোখে একবার তৌসিফ’কে দেখে নিলো। তৌসিফ সাহেব আজ খুবই ব্যস্ত। আপ টু টো সে আজ ফিটফাট হচ্ছে যদিও এটা সে বরাবরই থাকে। হঠাৎ ই সে ওয়াশরুম ঢুকলো। মিনিট এক যেতেই ওখান থেকেই চেঁচিয়ে উঠলো,

— হানিই?

আচমকা ডাকে পৌষ ভয় পেয়ে গেলেও নিজেকে সামলালো। বুঝে উঠার আগেই তৌসিফ পুণরায় ডাক দিলো,

— পৌষরাত?

রুম থেকেই উত্তর দিলো পৌষ,

— কি হয়েছে? কি চাইছেন আপনি?

তৌসিফ হাতে কিছু একটা নিয়ে বেরিয়ে এলো। পৌষ অবুঝ দৃষ্টি ফেলতেই তৌসিফ অল্প গরম হওয়া স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

— এটা কি?

পৌষ উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। তৌসিফে’র হাতে তার স্কিন কেয়ার করার কিছু একটা। পৌষ ছোট্ট একটা ঢোক গিললো। লোকটা কি রেগে যাবে। তৌসিফ ওর উত্তর না পেয়ে ছোট্ট করে ধমক দিলো,

— কথা বলো!

পৌষ দুই পা পিছিয়ে গেলো। তৌসিফ বরাবরই তার স্কিন নিয়ে সেনসেটিভ। তার স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট গুলো ডারমাটোলজিস্ট দিয়ে কনসাল্ট করা। এটা একদমই নতুন একটা মসচুরাইজার। নতুন এটার প্যাকেট অবদি খোলা হয় নি অথচ এখন খুলতেই দেখলো সাইড থেকে একটু নেই। এই কাজ করার সাহস এই বাড়ীতে কারো নেই তাহলে এর অর্থ কি দাঁড়ায়? কে ধরেছে এটা? ধরেছে বললে ভুল হবে রিতীমত ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। পৌষ একটু কাঁচুমাচু মুখ করে তাকালো। তৌসিফ হাতের কাঁচের কৌটাটা পাশে রেখে এগিয়ে এলো। অল্প রাগের সহিত জিজ্ঞেস করলো,

— সত্যি করে বলো কি করেছো?

পৌষ চুপ রইলো না। মুখ খুলে বলে উঠলো,

— একটু টেস্ট করেছিলাম।

তৌসিফ ফাটা চোখে তাকালো। অসহায় দৃষ্টি ফেলে বলে উঠলো,

— এটা টেস্ট করার কিছু?

— ঐ একটু মন চাইলো। আপনার কম পরলো কি? একদিন একটু কম লাগালে কি ই বা হবে? আসলে স্মেলটা এত সুন্দর সাথে ফ্লেবারও ভালো তাই সহ্য করতে পারলাম না। একটু খেয়ে নিলাম। ভালোই ছিলো। বিশ্বাস না হলে আপনি ট্রাই করে দেখুন।

তৌসিফ বড় বড় চোখ দিয়ে তাকিয়ে রইলো। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করলো,

— আগে পরে আরো খেয়েছো?

পৌষ মাথা নাড়লো ভদ্রতার সহিত। একবার ভাবলো তৌসিফ বুঝি রেগেই গেলো কিন্তু কপাল ভালো বলে কথা। তৌসিফ ওর হাত ধরে নিজের কাছে নিলো। পাশে বসিয়ে মাথায় হাত রেখে বললো,

— মেডিসিন গুলো ঠিক মতো নিচ্ছো না?

বড় চোখ দিয়ে তাকিয়ে পৌষ ফটাফট বলে উঠলো,

— রোজ খাই। সকালে দুটো রাতে তিনটা। দুপুরের টা এই তো মাঝে মধ্যে মিস যায়।

মিথ্যা মাঝেমধ্যে শুনলেই বুঝা যায়। পৌষ’র কথার ধরণ ও তাই। তৌসিফ হতাশার শ্বাস ফেলে বললো,

— তুমি তো জানো তোমার আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সি আছে। তবুও কথা শুনো না৷ কেন নিচ্ছো না মেডিসিন?

পৌষ চোরের মতো ধরা পরে মুখটা ও চোরের মতো ই করলো। এখন ভাই, ভাব আর কাজের তো মিল দরকার। ক্লাসে “ভাব ও কাজ” বাংলা বইতে পড়েছে পৌষ। ভাবের সাথে অবশ্য ই কাজের মিল দরকার নাহয় বাস্তবায়ন ঘটবে কিভাবে?
এখন তো বড় গলায় ডাকাতের মতো কথা বলা যাবে না।
পৌষ তবুও বললো,

— ওটার জন্য শুধু মাথা ঘুরায় একটু।

— একটু?

যাহ্। গেলো তো ফেঁসে। বসা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ালেই তো মাথা ঘুরান্টি দেয়। তৌসিফ ওর হাতটা ধরলো। মুঠোয় পুরে বললো,

— মাটি, চক এসব জিনিস অনেকের খেতে মন চায়। জানো এর কারণ কি?

পৌষ মাথা নাড়লো। সে জানে না। তৌসিফ বললো,

— এক হয় যখন কোন মেয়ে প্রেগন্যান্ট থাকে। তখন মুডের উপর ডিপেন্ড করে এসব উদ্ভব কিছু খেতে মন চায়। কথা হলো তুমি তো আমার বাবুর আম্মু এখন হচ্ছো না।

— হব একদিন।

একদম মুখের উপর প্রতিবাদ। তৌসিফ এখন যথেষ্ট সিরিয়াস তাই গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— তোমার কারণ হলো দুই নাম্বারটা। আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সি থাকলেও মানুষ এসব খেতে চায়। তোমার স্টেজ হাই পৌষরাত। মেডিসিন গুলো প্লিজ কনজিউম করো। এভাবে সমস্যা বাড়বে। বিশ্বাস করো আমাকে, তুমি কাঁদতে কাঁদতে আধ ম’রা হয়ে গেলেও আমি হসপিটালেই রাখব তোমাকে। তোমাকে আমার সুস্থ চাই একদম। বুঝেছো?

পৌষ মাথা নাড়লো। মানে ও বুঝেছে। না বুঝে উপায় নেই। বুঝতে তাকে হবেই। এসব মাটি জাতীয় কিছু দেখলেই তার খেতে মন চায়। খুব করে মন টানে। তৌসিফ ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে এবার কিছুটা নরম হলো। নরম স্বরে এসব বুঝালে পৌষ কানে তুলবে না কাধা হলো। পৌষ মাথা নেড়ে বুঝালো ও বুঝেছে। তৌসিফ এই দফায় বউ’কে কাছে টেনে নিলো। চুলগুলো হাতড়ে দিতে দিতে৷ বললো,

— তারাতাড়ি তৈরী হও হানি।

পৌষ ঝটাক মে’রে হাত সরালো। নিজেও সরতে সরতে মিনমিন করে বললো,

— এতক্ষণ ভেচকি দিয়ে এখন ঢং। আলগা পিরিত দেখায়।

তৌসিফ শুনলো তবে কিছু বললো না। নিজে যথাসম্ভব সুন্দর ভাবে তৈরী হলো। পারফিউম দিতে দিতে চারদিক মাতোয়ারা করে ফেললো যেন। পৌষ কোনমতে হিজাব বেঁধেই বিছানায় বসে রইলো। আড় চোখে বিরক্ত হয়ে তৌসিফে’র রংঢং দেখলো একটু। বেশ খানিক সময় পর রেডি হলো তৌসিফ। পকেটে মানি ব্যাগ ঢুকাতে ঢুকাতে বললো,

— লেট হচ্ছে তো হানি। তারাতাড়ি করো।

পৌষ’র মন চাইলো তৌসিফে’র ঐ সুন্দর মুখটা খামচে ধরতে। ব্যাটা খ’বিশ বলে কি? পৌষ নাকি লেট করছে। বাটপার কোথাকার! মিনমিন করতে করতে পৌষ উঠে দাঁড়ালো। তৌসিফ জুতা পরতে বসেছে। পৌষ পা ভেঙে বসতেই ওর কোলে পা তুলে দিলো তৌসিফ। এটা যেন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। জুতা পরাতেই তৌসিফ উঠে দাঁড়ালো। বউয়ের হাত ধরে বললো,

— চলো।

________________________

সোহা বাসায় রাগে ফুঁসছে। বিয়ে ও কিছুতেই করবে না। এতটা বছর এখানে কেন আছে ও? এই তৌসিফে’র জন্য ই তো। সোহা মাথা পেতে বদনাম নিয়েছে। টু শব্দ করে নি। এই সংসার ও নিজ হাতে সামলেছে। দুই দিনের মেয়ে পৌষ। উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এক থাবায় সংসারটা আঁচলে বেঁধে নিয়েছে। সোহা টু শব্দ করার সুযোগ পায় নি। মানুষ হারালো। সংসার হারালো এখন শেষ এই বাড়ীটাও ছাড়তে হচ্ছে।
মাথা চেপে ধরে গুঙিয়ে উঠে সোহা। মিনু ভয় পেয়ে গেলো। দৌড়ে এসে ভয়ে ভয়ে ডাকলো,

— আপা।

— যা এখান থেকে।

— তোমার কি হয়েছে আপা?

— যাহ বলছি।

মিনু যায় না। এটা তার অভ্যাস। ঠিট প্রকৃতির সে। সোহা নিজের মাথা ঠুকরে দিতে দিতে বললো,

— বিয়েটা আটকাতে পারি নি। তৌসিফ হাত ছাড়া হলো? কেন হলো? আমি কেন পেলাম না ওকে। এত আদর, যত্নে রাখলাম। তবুও পেলাম না৷ কেন পেলাম না? কি নেই আমার? ঐ মেয়ে থেকে হাজার গুন সুন্দর আমি। ও কেন মোহে পরলো না? তৌসিফ!!!

সোহার পা’গলাটে কথায় মিনু চমকে তাকালো। অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো,

— মামা’কে তুমি ভালোবাসো আপা?

সোহা চিৎকার করে উঠে,

— ও কেন বুঝে না? কেন না?

মিনু হতবাক হয়ে গেল। সেভাবেই বলে উঠলো,

— তোমাদের না বাবা এক?

সোহা মাথা তুললো। রাগে হিসহিসিয়ে বললো,

— এক না, এক না, এক না। তৌসিফের বাবা আমার বাবা না। কিচ্ছু না সে আমার। আমি আমার মায়ের আগের ঘরের সন্তান। তৌসিফে’র বাবা’কে মা মিথ্যা বলেছে। আমি ঐশি না। ঐশি ছিলো তৌসিফের বোন। ও মা’রা গিয়েছে। মা আমাকেই এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে। শুধু মাত্র সম্পদের জন্য। কিভাবে যে মন দিলাম। সব লোভ ত্যাগ করে তাকে চাইলাম। কিচ্ছু পেলাম না আমি। কিচ্ছু না৷

হঠাৎ ই যেন সোহা পা*গল হলো। কান্নার মাঝেই হেসে উঠলো। মিনু হতবাক বিমূঢ় হয়েই রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। সোহা তখনও বিরবির করছে। ও কিছুতেই বিয়ে করবে না। তৃতীয় বউ হতে তার কোন সমস্যা নেই যদি সামনের পুরুষ তৌসিফ তালুকদার হয়।
.
তৌসিফে’র গাড়ি নিজের বাড়ীতে থামতে দেখেই পৌষ লাফিয়ে উঠলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে এক দৌড়ে গাড়ি থেকে নামতে নিলেই তৌসিফ ওর হাত টেনে ধরলো। অসহায় দৃষ্টি ফেলে তাকায় পৌষ। তৌসিফ সামনে তাকিয়ে বউয়ের হাতে চুমু দিয়ে বলে,

— একসাথে যাব।

হঠাৎ ই পৌষ বলে উঠলো,

— কিছু আনলেন না?

তৌসিফ না বুঝেই বললো,

— কি আনব?

— আজব কথা বলেন মিয়া? প্রথম বার শশুর বাড়ী এলেন কিছু তো আনবেন? এত টাকা অথচ কিপটার কিপটা আপনি। মিষ্টি ই আনতেন। নাক রাখলেন না আমার।

বলেই মুখ কুঁচকালো। তৌসিফ পাত্তা দিলো না। বললো,

— আমাকে চুমু দাও।

পৌষ খিটমিট করে উঠলো,

— হ্যাঁ, এটাই তো আছে। সরুন। বের হতে দিন।

তৌসিফ ছাড়লো। নিজেও বের হলো। এক দৌড়ে বাড়িতে ঢুকলো পৌষ। গেটেই দাঁড়িয়ে সকলে। এক ধাক্কায় চাচির বুকে পরলো পৌষ। চাচি কেঁদে উঠলেন৷ বাড়ীর বড় মেয়ে। এ যে কত আদরের তা সবাই জানে। দায়িত্ব আর কিছু ওয়াদা পালনে মেয়েটাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভুল ছিলো না সিদ্ধান্ত। মায়ের মন সন্তানের চেহারা দেখেই বুঝেছে সে সুখে আছে। ভালো আছে।

দুই চাচা আর হেমন্ত মিলে তৌসিফ’কে এগিয়ে নিয়ে এলো। বাড়ীতে ঢুকেই শ্রেয়া’র কাছে গেলো পৌষ। এরা যেন দুই বোন। পৌষ শ্রেয়ার পেটে হাত রাখলো। ঠোঁট উল্টে বললো,

— নড়ে না?

— নড়ে তো।

— ওকে বলো ফুপি এসেছে ওর।

— তুই বল। তার আগে বল জামাই কই?

পৌষ আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলো,

— তোমারা জানতে?

— ওমা! জানব না? বাড়ী ঘর ডালা দিয়ে ভরিয়ে ফেললো।

চোখ কপালে তুলে পৌষ বললো,

— ডালা?

— ঐ যে।

আঙুল দিয়ে দেখাতেই পৌষ তাকালো। মাথায় যেন বাজ তখনই পরলো। দুই পাটি দাঁত বের করে তৌসিফের পানে তাকালো পৌষ অথচ তৌসিফ তাকাতে পারলো না। তাকে ঘিরে ধরেছে তার শালা শালীরা।

#চলবে……

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৬

শশুর বাড়ী তৌসিফ এসেছে। শুধু শশুর বাড়ী বললেও যেন অপরাধ বনে যাচ্ছে। তার ফুপির বাড়ী এটা। সেই ফুপির একমাত্র মেয়েকে বউ করেছে তৌসিফ এই এক কারণ দেখিয়ে বউ তাকে প্রায় সময়ই মামাতো ভাই বলে উত্ত্যক্ত করে। তৌসিফে’র তখন মনটা চায় বউ’কে কামড়ে দিতে। দুষ্ট বউ!
আপাতত তৌসিফে’র অবস্থান খাওয়ার টেবিলে। কান্ড কারখানার শেষ নেই এদের। বলা বাহুল্য হালের প্রথম লাঙ্গল যেদিক যাবে পরেরটাও সেদিকেই যাবে। এই যেমন তৌসিফে’র বউ পাঁজি তার ভাই-বোনগুলো পাঁজির পা ঝাড়া। আসছে পর থেকে টৈ টৈ করেই যাচ্ছে। এদিকে তৌসিফে’র আশেপাশে তীর সীমানায় তার বউ নেই।
এতক্ষণ জৈষ্ঠ্য আর চৈত্র তৌসিফ থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে চলছিলো। তাদের পছন্দ নয় এই দুলাভাই। গম্ভীর মুখ ওয়ালা এক বিরাট পুরুষ। তার নামে কম কথাও তো শুনে নি তারা। তাই তো না জানা, না শুনা এক মানুষের উপরেও মানুষের বিরক্তি অথবা রাগ জন্মায়। শুনা কথায় কান না দেয়াই বোধহয় উচিত। জৈষ্ঠ্য আর চৈত্র দুই ভাই যখন তাদের আপার মুখ ভরা হাসি দেখলো। তার পূর্বের উচ্ছাস দেখলো তখনই বুঝে গেলো তাদের পৌষ আপা ভালো আছে। মানুষকে দেখলেই বুঝা যায় সে আসলে মিথ্যা হাসছে নাকি মন থেকে হাসছে। পৌষ মন থেকেই হাসি খুশি। এটা কারোই বুঝতে বাকি নেই। এটা দেখেই যেন বড় চাচা শ্বাস ত্যাগ করলেন। বুকে পাথর চাপা দিয়ে মেয়েটাকে তৌসিফে’র হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তৌসিফ যখন প্রথম প্রস্তাব পাঠালো তখন মোটেও তিনি রাজি হতে পারেন নি কিন্তু আদিত্য’র ব্যাপারটা সামনে আসতেই সব কেমন ঘোলাটে হয়ে গেলো। তৌফিক তালুকদার সাক্ষাৎ করতে ডাকলো অতঃপর ই কলিজার টুকরো ভাতিজিতে তিনি হাত ছাড়া করলেন। আজ যদি পৌষ’র মুখে এই হাসি না থাকতো তাহলে কোনদিনও নিজেকে মাফ করতে পারতেন না তিনি। কতজন তো এখনো বলে সে নাকি মা-বাবাহীন এতিম মেয়েটার প্রতি জুলুম করেছে। কথা শুনে আগেপাছে কিন্তু বুকে তখন তীব্র ঝর উঠে তার যা আজ থেকে হয়তো আর উঠবে না।

ইনি,মিনির দুলাভাই পছন্দ হয়েছে। মিশতে তাদের খুব বেশি একটা সময় লাগে নি। এই তো দুই মিনিট লাগলো। আপাতত তারা দুলাভাইয়ের কোলে দুই পাশে বসে আছে। পিহা হাতে একটা বোল নিয়ে এগিয়ে এলো। দেনামোনা করতে করতে বললো,

— দুলাভাই হাত ধুঁবেন না?

তৌসিফ সম্মুখে তাকালো। সুপ্রসন্ন কপাল তার। কুট্টিকুট্টি সব শালী। শালা গুলো তবুও মানানসই। পিহা দাঁত বের করে হাসলো৷ তৌসিফ হাত বাড়িয়ে দিলো। পিহা পানি ঢালতেই জৈষ্ঠ্যও এগিয়ে এলো। চৈত্র বরাবরই ভাইকে অনুসরণ করে। সেও বসে রইলো না। এগিয়ে এসে ধরাধরি করে হাত ধোঁয়ালো ওরা। বড় আর ছোট চাচি একে একে খাবার টেবিলে পরিবেশন করলো। চাচারাও এগিয়ে এলো ততক্ষণে। ইনি,মিনিকে কোল থেকে সরানো গেলো না। ওর মা চোখ গরম দেখালো তবুও দুটো নড়লো না কারণ তাদের আস্কারা দিয়েছে খোদ তৌসিফ। বাচ্চাকাচ্চা তার খুবই প্রিয়। এভাবে কোলে দুটো নিয়ে বসে থাকতে ভালোই লাগছে। কিউট কিউট সফট টির মতো বাচ্চা দুটো। কথাও বলে মুখে মুখে। ভালোই লাগে। পৌষ ওদের আশেপাশেও নেই। কোথায় যে আছে আল্লাহ মালুম। এক মুহূর্তের জন্যও তার বউ ছাড়া চলছে না আর। খেতে বসতেও যেন মুসিবত। একের পর এক খাবার দেয়া হচ্ছে তাকে।

হেমন্ত এতক্ষণে বাসায় ফিরলো। কুমিল্লা থেকে রসমালাই আনিয়েছে। সেটাই আনতে গিয়েছিলো ও। হেমন্তকে দেখে শ্রেয়া উঠে গিয়ে পানি দিলো। হেমন্ত মিষ্টি হেসে পানি খেলো। টেবিলে বসতেই চোখ জুড়ানো দৃশ্য চোখে পরলো। তৌসিফ ইনি, মিনিকে মুখে তুলে খাওয়াচ্ছে। পিহা, জৈষ্ঠ্য আর চৈত্র তাকে ঘিরে বসা। সবগুলোই খাচ্ছে। পৌষ এদিকে নেই। হেমন্ত এদিক ওদিক তাকালো তবে দেখা মিললো না। শ্রেয়া ওর দৃষ্টি বুঝে বললো,

— কি? পৌষ? আছে রুমে। সেই গিয়ে ঢুকলো আর বের হয় নি।

— খাবে না?

— কিছু তো বললো না।

— আচ্ছা তুমি বসো। নড়বে না। আসছি আমি।

হেমন্ত উঠে গেলো। পৌষ’র রুমে ঢুকার আগে আজ নক করলো। পৌষ উঁকি দিলো। বারান্দায় ছিলো সে। ভাইকে দেখেই ডাকলো,

— হেমু ভাই?

হেমন্ত পা বাড়ালো। রুমে ঢুকে বললো,

— নিচে চল।

— নক করলে যে?

— বড় হয়েছে না আমার বোন?

— হু।

— চল।

— যাব না।

— কেন?

— কেউ পাত্তা দেয় না।

— এত সাহস! কার?

— সবার।

বলেই আঙুল গুনে গুনে অভিযোগ করলো। আসছে থেকে তৌসিফ তৌসিফ করে একেকজনের জান গলায় আটকে যাচ্ছে। কই এতদিন পরে পৌষ এসেছে তাকে কোলে তুলে নাচবে কিন্তু না তারা ব্যস্ত জামাই নিয়ে। থাক তাহলে সবাই!

হেমন্ত চুপচাপ অভিযোগ শুনলো। বোনের হাত ধরে বললো,

— এই যে ভাই পাত্তা দিচ্ছি। চল।

পৌষ হাটা দিলো ভাইয়ের পিছনে। টেবিলে যেতেই ওকে নিয়ে বসলো। তৌসিফ তখনও খায় নি। শালীদের খাওয়ালো এতক্ষণ। ইনি,মিনি আর খাবে না তাই চুপচাপ করে মুচড়ে নেমে গেলো। পিহাও আর খাবে না। হেমন্ত পৌষ’কে নিয়ে বসতেই চাচি নতুন প্লেট দিতে চাইলো তৌসিফ’কে। তৌসিফ হাসলো অল্প। বললো,

— এটাতেই খাচ্ছি। সমস্যা নেই।

চাচিরা অবাকই হলেন। পৌষ ফিসফিস করে শ্রেয়ার কানে বললো,

— দেখলে আমার জামাই কত ভালো।

শ্রেয়া চাপা হেসে বললো,

— দেখলাম।

পৌষ খাওয়া শুরু করলো। তৌসিফ দেখলো ওদের ভাই বোনদের খাওয়া ভিন্ন। একেকজন একেকজনের প্লেটে এটা ওটা পাস করে। ভালোবাসা তাদের ভিন্ন। বউকে আজ তৌসিফে’র জোড় করতে হলো না হেমন্ত সহ বাকিরা ঠেলে খাওয়াচ্ছে। চাচি মাঝ থেকেই এক প্লেট খাবার ফ্রিজে রেখে বললো,

— রাতে খেয়ে নিস।

পৌষ মাথা নাড়লো। তৌসিফ নিজের প্লেটে আধ খাওয়া কাবাব পৌষ’র মুখে দিলো। পৌষ খেতে খেতে বললো,

— আপনার আর কিছু লাগবে?

তৌসিফ না করলো। হেমন্ত উঠতে উঠতে বললো,

— দই দাও আম্মু।

দইয়ের নাম করে পদে পদে মিষ্টির আইটেম সাজানো টেবিলে বসলো ওরা। তৌসিফ এসব খুবই কম খায়। সুগার সে এভয়েড করে তবুও রসমালাই খেলো দুটো। ইনি, মিনি তখন আবার কোল জুড়ে বসেছে। চৈত্র মাঝে বললো,

— দুলাভাই চলুন বাড়ী ঘুরে দেখাই।

তৌসিফ দুই হাতে দুই শালী কোলে তুলে নিলো। তার এখন হাটা দরকার।
ওরা যেতেই চাচি চেপে ধরলো পৌষ’কে। পৌষ অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,

— কি?

শ্রেয়া গলা খেঁকিয়ে আস্তে করে বললো,

— তোরা ঠিকঠাক আছিস?

পৌষ অবুঝ ভাবে বললো,

— মানে?

— মানে জামাই ঠিক?

— আবার জিগায়? জামাই আমার এক নাম্বার। নাম্বার ওয়ান শাকিব খান।

শ্রেয়া ওর মাথায় গাট্টা মা’রলো। চিমটি কেটে বললো,

— মানে তোরা কিছুমিছু করেছিস?

পৌষ বুঝলো। লজ্জাও পেলো। উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

— হু।

শ্রেয়া সহ চাচিদের মুখে হাসি দেখা মিললো। শ্রেয়া হাসিমুখেই বললো,

— তৌসিফ ভাই বাচ্চা পছন্দ করে অনেক। সময় ভালো নিয়ে নে একটা।

পৌষ’র হঠাৎ ই মনে পরলো তায়েফা আপার কথা। সেই বিয়ের প্রথম দিন শুনেছিলো সে এটা।

#চলবে…

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৭

দুপুর গড়িয়ে সময়টা বিকেল। বাড়ীর আশপাশ ঘুরে ঘুরে তৌসিফ’কে দেখালো তার শালা শালীরা। ইনি,মিনি এখন কোল ছেড়ে দুলাভাইয়ের আঙুল ধরে হাটছে। দুটো দুই পাশে। তাদের তোতলা তোতলা কথা শুনতে তৌসিফে’র ভালোই লাগছে। মন চাইছে দুটোকে বুকে নিয়ে রাখতে। বাচ্চা দেখলেই তার এমন লাগে। তার নিজেরও এই বয়সী বাচ্চা থাকা দরকার ছিলো। আদর, যত্নে ফুলিয়ে রাখতো তৌসিফ। বাইরের মানুষের সামনের রাগী,বদমেজাজী মানুষটা যে আসলেই কতটা নরম তা তার বাড়ীর লোকজন ছাড়া কেউ জানবে না৷ পিহা সাইডে যাওয়াতে চৈত্র ডাক দিলো,

— পিহু এদিক আয়। হেমু ভাই দেখলে বকবে।

তৌসিফ ওই দিকেই এগিয়ে গেলো। পৌষদের বাড়ীর পেছন দিকটা এটা মূলত। শেষ সীমানাও বলা যায় কিন্তু বাউন্ডারি নেই। কাটা তার দিয়ে বেড়া দেয়া। বেড়ার পাশ ঘেঁষে অসংখ্য গাছ লাগালো। সবগুলোই হাবিজাবি গাছ। তৌসিফ একটু কৌতুহল গলায় জিজ্ঞেস করলো,

— এখানে এরকম করা কেন? দেয়াল টেনে দিলেই হয়।

জৈষ্ঠ্য ভাবুক হলো। আনমনে বললো,

— একবার তো ইট আনা হলো কিন্তু কাজ ধরলেই তারা চিল্লাপাল্লা শুরু করে। পৌষ আপা সেবার ওনার ছেলের মাথা ফাটিয়ে দিলো এরপর থেকে লেগেই থাকে ওরা। তাই হেমু ভাই তার দিয়ে বেড়া দিলো। আর গাছগুলো পৌষ আপা লাগিয়েছে।

তৌসিফ দেখলো। বিছুটি পাতা সহ কাটা যুক্ত গাছগুলো এখানে লাগিয়েছে। তৌফিক বুঝে নিলো তার বউ একটা বিচ্ছু। ইনি,মিনির হেলদুল দেখে চৈত্র বললো,

— কিরে ঘুমাবি?

দুটোই মাথা নাড়লো। তারা ঘুমাবে না। চৈত্র ওদের কাছে আসতে আসতে বললো,

— চল দিয়ে আসি ভেতরে। চোর দুটো জেগে আছে কেমন ফইট্টার মতো!

ইনি,মিনি তবুও যাবে না৷ তারা তৌসিফে’র হাত আঁকড়ে ধরলো। দুটোকেই টেনে কোলে তুললো তৌসিফ। চৈত্র’র দিকে তাকিয়ে বললো,

— চলো ভেতরে যাই।

ওরা মাথা নাড়লো। ভেতরে ঢুকা মাত্র ই খেয়াল করলো তৌসিফে’র কাঁধে মাথা গুজে দুই বোন ঘুমে কাঁদা। তৌসিফ পুলকিত হলো। তার ভালা কাজ করলো যেন। কোল ভরা বাচ্চাকাচ্চাই না মানায় তাকে। এই বয়সে এখন খুব করে দরকার বাচ্চার। মন ভরা বউ আর কোল ভরা বাচ্চা৷ সুখের একটা জীবন। আর কি চাই?
পিহা ছোট চাচিকে ডেকে আনতেই তিনি অস্থির হলেন। নতুন জামাইয়ের কোলে মেয়ে দুটো ঘুমে কাঁদা। তৌসিফ হাসিমুখেই প্রস্তাব দিলো,

— কোন রুমে রাখব আমাকে দেখিয়ে দিন। রেখে আসছি।

চাচি বিব্রতই হলেন। পিহা রুম দেখালো। তৌসিফ পিহার সাথে যেতেই পেছনে থাকা মানুষ গুলো যেন কথা ছাড়লো। ছোট চাচি তো বড় চাচিকে বলেই ফেললেন,

— দেখলেন আপা, বয়স বা অতীত দেখে মানুষ চিনা যায় না। পৌষ’র মুখ দেখেই আমি বুঝেছিলাম ও সুখে আছে। তৌসিফ খারাপ মানুষ না। লোকমুখে শোনা কথায় কান দেয়াই উত্তম। বড় ভাই যা করেছিলেন ঠিকই ছিলো। সোনার কপাল আমার পৌষ’র।

বড় চাচির মুখটা হাসি হাসি। স্বামীর মুখে কথা বলেন না তিনি তবুও পৌষ’র কথা তুলেছিলেন৷ কথা তার একটাই ছিলো পৌষটা ভালো থাকুক। সুখে থাকুক। আর কি চাই?

তৌসিফ ইনি,মিনিকে বিছানায় শুয়িয়ে দিতেই তারা ওর হাত আঁকড়ে ধরলো। তৌসিফ হাসলো মিষ্টি মুখো হয়ে। পা থেকে স্লিপার খুলে বিছানায় উঠে বসলো। মিনি হাত বাড়ালো এর অর্থ কোলে তুলো আমাকে। ঘুম কাতুরি মিনিকে কোলে তুলে হেলান দিলো তৌসিফ। পাশেই ওকে ঘেঁষে ইনি ঘুম৷ চৈত্র আর জৈষ্ঠ্যও উঠে বসলো। পিহার দিকে আদেশ ছুঁড়লো আবদারের স্বরে,

— পিহু সোনা? চাচিকে বল চা দিতে।

পিহা উঠে দাঁড়ালো। বের হবে তখনই দেখলো হেমন্ত চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে ঢুকছে। পিহা ভাবলো এখন সেও আড্ডা দিবে দুলাভাইয়ের সাথে কিন্তু তার কপালে বুঝি আড্ডা সয়? হেমন্ত গমগমে স্বরে বললো,

— পিহু সোনা, চাচি ডাকে যা তো।

নিচের ঠোঁটটা বের করে হাটা দিলো পিহা। হেমন্ত সবার আগে তৌসিফের হাতে চা দিয়ে বললো,

— সম্পর্কে কিছুটা ভাই হলেও এখন কিন্তু একদম সমন্ধী লাগি৷

— অবশ্যই।

জৈষ্ঠ্য আর চৈত্র বললো,

— দুলাভাই কাল পদ্মায় যাবেন? সকালে ইলিশ ধরব।

তৌসিফ চায়ে চুমুক বসিয়ে বললো,

— আজ চলে যাচ্ছি। আবার আসব তখন যাব। তোমার বোনকেও নিয়ে যাব। ওর এসবে ইনট্রেস অনেক।

তিন ভাই মুখ চাওয়া চওয়ি করলো। পৌষ’কে আজ পিটালেও পৌষ নড়বে না৷ চালাক তৌসিফ তালুকদার কি তা জানে?

ওদের মাঝেই পিহা উঁকি দিলো। তার হাতে একটা ট্রে। একদমই হালকা কিছু নাস্তা তাতে। মা পাঠালো। ওদের সামনে দিতেই তৌসিফ জিজ্ঞেস করলো,

— তোমার আপা কোথায়?

পিহা বসে উত্তর করলো,

— ভাবীর সাথে দুলাভাই। ডাকব?

তৌসিফ একটু ভেবে বললো,

— খেয়েছে?

পিহার জানা নেই আপা খেলো কি না তাই মাথা নেড়ে বললো,

— না মনে হয়।

তৌসিফ নিজেই উঠে দেখতো। গতরাতের পর বউটা দূর্বল দূর্বল কিছুটা। না খেয়ে এখন আবার কোথায় জানি বসে আছে। বুকে মিনি থাকায় উঠে যেতে পারলো না তৌসিফ। হেমন্ত অবশ্য দুই বার বললো মিনিকে তাকে দিতে কিন্তু তৌফিক দেয় নি। পিহার দিকে তাকিয়ে শুধু বললো,

— তোমার আপাকে খেতে বলে আসবে শালী সাহেবা?

“শালী সাহেবা” ডাকটা শুনা মাত্র লজ্জা পেলো পিহা। উঠে যেতে যেতে বললো,

— কেন নয় দুলাভাই।

______________________

শ্রেয়ার সাথে সেই যে ফুঁসুর ফাঁসুর শুরু হলো এখনও থামার নাম নেই। পিহা দরজা ঠেলে ঢুকলো। দেখলো শ্রেয়ার বিছানায় শুয়ে আছে পৌষ পাশেই বসা শ্রেয়া। পিহা ঢুকেই বললো,

— আপা দুলাভাই তোমাকে খেতে বলেছে।

পৌষ কপাল কুঁচকে বললো,

— কোথায় উনি?

–নিচেই আছে। ইনি,মিনি ঘুমালো ওদের নিয়েই বসে আছে। আপা জানো দুলাভাই কত্তো ভালো।

পিহার চোখে মুখে উপচে পড়া উচ্ছাস। শ্রেয়া কৌতুহল গলায় বললো,

— কি কি করলো দুলাভাই যে এত ভালো হয়ে গেলো?

পিহা পা তুলে বসলো। হাতে থাকা কাটা পেয়ারা মাখা ওদের সামনে দিয়ে বললো,

— মিনিকে বুকে নিয়ে ঘুম পাড়ালো। কত সুন্দর সুন্দর কথা বলে। চৈত্র ভাই আর জৈষ্ঠ্য ভাই বলেছে পদ্মারপাড়ে যাবে৷ দুলাভাই বললো আজ নাকি থাকবে না। ও আপা থাকো না আজকে।

পিহা’র চোখ মুখ উজ্জ্বল, আশাদীপ্ত। পৌষ খিটমিট করে বললো,

— আগামী এক সপ্তাহেও আমি নড়ছি না।

পিহা দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। খবরটা দুলাভাই’কে দিতে হবে। শ্রেয়া হাসতে হাসতেই বললো,

— তুই এভাবে কতক্ষণ লুকিয়ে থাকবি?

— যতক্ষণ না ব্যাটা রাজি হয়।

শ্রেয়া পেয়ারা মুখে দিলো এক পিস। বললো,

— ভাগ্য করে পেয়েছিস পৌষ। যত্ন করে রাখিস।

— আমার বুকের ভিতর রাখি তাকে ভাবী। একদম ভারী সিন্দুকে তালা দিয়ে রাখি। সে আমার না পাওয়া সুখ। আকাশস্পর্শী প্রেম।

শ্রেয়া খেয়াল করলো পৌষ’র চোখ দুটো চিকচিক করছে। পৌষ’র হাত ধরে বললো,

— সুখী হ।

শ্রেয়া একটু থেমে জিজ্ঞেস করলো,

— একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

— এভাবে কেন বলো? বলো।

— ঐ কাজের মেয়েটা মানে যাকে নিয়ে এত বদনাম তার আচরণ কেমন দেখলি?

পৌষ ভাবুক হলো। সোহার আচরণ সে কোন কালেই সুবিধার দেখি নি। শ্রেয়াই বললো,

— আমি তৌসিফ ভাইকে এখন সন্দেহ করতে পারি না পৌষ। কিন্তু বিনা কারণে এত বড় কুৎসা রটলো?

— ওনার সৎ বোন সোহা ভাবী। ওমন কিছু নেই কিন্তু সোহা বা মিনু এদের প্রতি ওনার আচরণ ততটা বুঝি না আমি। যথেষ্ট নরম।

— তুই প্রশ্ন করিস নি?

— করেছি।

— উত্তর দেয় নি?

— দিয়েছে।

একটু চুপ থেকে পৌষ বললো,

— উনি মেয়েবাজ পুরুষ না ভাবী এটা আমিই বলতে পারি ভাবী তবে ঐ মেয়ে সোহা, ও সুবিধার না৷

শ্রেয়া কিছু একটা ভেবে বললো,

— এটাকে বিদায় করলেই হলো।

— বলেছি আমি।

কথাটা মিনমিন করেই বললো পৌষ। দরজায় দাঁড়ানো তৌসিফ সবটা শুনলো। মুখে তার বাঁকা হাসি। বউটা কাল বড়সড় একটা সারপ্রাইজ পেতে চলেছে। তৌসিফকে দেখেই শ্রেয়া বলে উঠলো,

— আরে দুলাভাই, ভেতরে আসুন।

তৌসিফ ঢুকেই বললো,

— পৌষরাত, রাতে কিন্তু চলে যাচ্ছি আমরা।

পৌষ মুখ ঘুরালো। এর মানে জানা আছে তৌসিফে’র। চালাক পুরুষ সে তাই বললো,

— আচ্ছা একটু দরকার। তোমার রুমে এসো তো।

বলেই অপেক্ষা না করে চলে গেল তৌসিফ। পিছুপিছু পা ফেলে গেলো পৌষ। রুমে ঢুকা মাত্রই দরজাটা আলগোছে বন্ধ করে দিলো তৌসিফ। পৌষ ছটফট করে বলে উঠলো,

— দরজা খুলুন। এই দরজা খুলুন মিয়া।

যেই না দরজা খুলতে যাবে তখনই তৌসিফ ওর হাত টেনে ধরলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— লাফালাফি করছো কেন হানি? কথা শুনো।

— মানে কি? দরজা লাগালেন কেন?

— আহা কি হলো? কিচ্ছু করব না।

— আজব! লজ্জা লাগে না আমার? কেমন দেখালো এটা? চাচারা বাসায়। তাদের সামনে দরজা কেন লাগালেন আপনি?

তৌসিফের মাথায় এতক্ষণ কথাটা ঢুকলো। বক্র হেসে দুই হাতে পৌষ’র গাল দুটো ধরলো। অতি সন্তপর্ণে ঠোঁটে চুমু দিলো একটা। ব্যস! ঠান্ডা পৌষরাত। সুযোগটা লুফে নিলো তৌসিফ। পৌষ’র মুখে লেপ্টে দিলো প্রেমময় সুধা। বোধহারা হলো পৌষ৷ মুখ লুকালো তার পুরুষটার বুকে। দুই হাতে আগলে নিলো তৌসিফ। প্রশ্ন করলো,

— আরেকবার হবে?

— উহু।

— হুয়াই হানি?

— উমমম।

তৌসিফ হাসলো। ফিসফিস করে বললো,

— আমার লজ্জাবতী।

#চলবে…..