#প্রেমসুধা(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৬৫
গতরাত থেকে তৌসিফে’র সাথে পৌষ’র বনাবনি হয় নি। তৌসিফ রেগে বারান্দায় চলে গিয়েছিলো। পৌষ ভয়ে ভয়ে আর সাহস দেখিয়ে বারান্দায় যায় নি৷ তৌসিফ রেগে গেলে তার আচার-আচরণ বদলে যায়। পৌষ’র ক্ষেত্রে যথেষ্ট ধৈর্য সে দেখাচ্ছে। পৌষ বুঝে উঠতে পারে না রাগের কারণটা আসলে কি। শুধু মাত্র মিরা ভাবীর সাথে কথা বলায় এতটা রাগ? তৌসিফ তাকে শুরুর দিকেই না করেছিলো যাতে পৌষ এখানে কারো সাথে ততটা না মিশে যদিও এদের ভাইদের মাঝে অনেক মিল। মাঝে একবার শুনেছিলো মিরা ভাবী’কে তৌফিক তালুকদার যথেষ্ট ধমকেছেন৷ তৌহিদ তালুকদার বউয়ের হয়ে তখন বড় ভাইয়ের মুখে জীবনে প্রথম তর্ক করেছিলো অতঃপর কিছুটা হলেও তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মাঝে শুধু পৌষ’কে নিয়ে হওয়া ঝামেলায় আরেকটু নীরব ঝামেলা হয়েছিলো।
পৌষ’র মাথায় ততকিছু ঢুকে না। অপেক্ষা করতে করতে ওর চোখ লেগে আসে। তৌসিফ রাত বারোটার পর রুমে ঢুকে। লাইট অফ করে সোজা বিছানায় চলে যায়। বিয়ের এতগুলো মাসপর এই প্রথম পৌষ’কে কাছে টানে না তৌসিফ। নিজের গায়ে কম্বল নেয়ার সময় কিছুটা পৌষ’র উপর দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পরে। তার শরীর তখন রাগে কাঁপছিলো। কথা না শোনা মানুষের প্রতি তার ভিন্ন অনুভূতি জন্মায়। তৌসিফ প্রকাশ করতে পারে না। তার মাথা তখনও রাগে দপদপ করে।
পৌষ সকালে আজ আগেই উঠেছে। নামাজ পড়ে নিজের মতো নাস্তা বানিয়েছে বুয়াদের সাহায্যে। ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ও। তৌসিফ উঠছে না। পৌষ গরম পানি সহ বাথরুমে দিয়ে রাখলো৷ করার মতো শুধু রান্নাটাই আছে৷ তৌসিফ আজ দেড়ীতে উঠলো। তার মেজাজ কিছুটা হলেও ঠান্ডা আপাতত। কাল রাতে বারান্দায় গিয়ে ঠান্ডায় না দাঁড়ালে নিশ্চিত তার হাত উঠে যেতো। সে চায় না এটা হোক। কখনোই এমনটা না হোক।
ও উঠে যেতে যেতে পৌষ রুমে ঢুকে বিছানা গুছিয়ে নিলো। তৌসিফে’র কাপড় বের করে রাখতে রাখতে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে ওর। দুই পা পিছিয়ে যেতেই ঠান্ডা এক বুকে ধাক্কা খায় পেছন থেকে। চোখটা সাময়িক বন্ধ করে পুণরায় খুলে৷ তৌসিফ ওর বাম হাতের বাহু ধরে। পৌষ ঘুরে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে রাখে। তৌসিফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
— মেডিসিন নিয়েছো?
পৌষ চুপ। তা দেখে তৌসিফে’র গলা ভারী হলো। বললো,
— জানি নাও নি। তাহলে কি করছিলে এতক্ষণ? মাথা ঘুরাচ্ছে আবারও? আবার হাসপাতালে ঘুরিয়ে আনব?
পৌষ’র হাতের তালু ঘেমে উঠে সাথে ঘামে ঠোঁটের উপরের অংশ। তৌসিফ তা দেখে। ডান হাত বাড়িয়ে মুছে দিয়ে বলে,
— বুয়াকে খাবার দিতে বলো।
নিচু স্বরে পৌষ জিজ্ঞেস করে,
— জিমে যাবেন না?
— সময় রেখেছো তুমি?
পৌষ মনেমনে কষ্ট পেলো। ও ভয়ে ডাকেনি। ভয় পাওয়াটাও তো অযথা না। তৌসিফ যে এখনও ফুলেফেঁপে আছে তা তার আচরণে স্পষ্ট। পৌষ কিছু বলার আগেই তৌসিফ ওর মাথায় হাত রাখে। আদরের ভঙ্গিতে মাথায় হাত বুলায় ঠিক যেন ছোট্ট এক বাচ্চা পৌষ। তৌসিফ পৌষ’র নতমুখী মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
— মিরা ভাবীর কাছ ঘেঁষো না পৌষরাত। তার পাশ ঘেঁষা মানে আমার কাছ ছাড়া হওয়া। আমি জানি তুমি আমার কাছ ঘেঁষা হয়ে থাকতে চাও। কি ভুল বললাম?
পৌষ মাথা নাড়ে।
— তাহলে খবরদার করে বলে দিলাম তার কাছে যাবে না৷ সে কিন্তু পীর বাবা মানে। কোন বিষেভরা বান তোমাকে দিবে তুমি টের পাবে না তখন দেখবে আমাকে ভালো লাগছে না। রাস্তার পাশে টোকাইদের ভালো লাগবে। তুমি তখন ঘর ছাড়তে চাইবে। আমি তখন বেঁধে রাখব তোমাকে। আমি তো বউ ছেড়ে দিব না৷ বুঝেছো আমার কথা?
পৌষ যেন এই মুহুর্তে সত্যিই অবাক বনে গেলো। মীরা’র মতো মানুষ জাদু বিদ্যায় বিশ্বাসী? এটাও হতে পারে? তৌসিফ ওর আশ্চর্য ভাব দেখে আড়ালে ফিচেল হাসলো। মীরা’র মতো মানুষদের স্বয়ং শয়তানও ভয় পাবে। এরা দেখতে, শুনতে বোকা হলেও এরা বিনা কারণেই অন্যের ঘর ভাঙতে শান্তি পায়৷ তৌফিক তালুকদারের বউ এর পর একমাত্র মীরাই আছে যে বুয়াদের দিয়ে দিয়ে সারা মহল্লা জাহির করিয়েছে যে তৌসিফ কাজের মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। খবরাখবর সবটা সে জানে। মীরা তাকে দেখলেই দুই মাইল দূরত্ব বজায় রাখে। এই বাড়ীতে পিয়াসীর সাথে ছিলো তার গভীর খাতির। তৌসিফ ভেবেছে, আর একবার পৌষ’র আশেপাশে মীরা’কে দেখলে পৌষ’র আগে মীরা’র মাথা ও ঠিক করে দিবে। স্বামী’র টাকায় টান ফেলতে তৌসিফে’র ঘন্টা খানিক সময় লাগবে। ডাইয়িং এর সাপ্লাই বন্ধ করতে আর কতক্ষণ? খারাপ তৌসিফ হতে চায় না। পরিস্থিতি তাকে দিয়ে খারাপ কাজ করিয়ে নেয়।
পৌষ খাবার সাজাচ্ছে। ওর মাথায় এখনও তৌসিফে’র কথা ঘুরছে। তৌসিফ এসেই বললো,
— বুয়া ডিম সিদ্ধ দিও একটা।
পৌষ ডিমের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
— পোর্চ করেছি আজকে।
— আচ্ছা।
বলে পৌষ’কে বসায় ও। খেতে খেতে পৌষ বলে,
— আজ ভার্সিটি যেতে হবে। কাল থেকে পরীক্ষা।
— যাবে।
— না মানে…
— বলো। আমার সাথে কথা বলার সময় ফ্রীলি বলবে পৌষরাত৷ এত ভণিতার দরকার নেই।
পৌষ চোখ নামিয়ে ফেললো। ওর কেন জানি মনে হচ্ছে তৌসিফ এখনও রেগে। তবুও সাহস জুগিয়ে বললো,
— বেতন বাকি দুই মাসের। আমাকে যেই টাকা হাত খরচে দিয়েছিলেন তা তো আমি ওখানে শেষ করে ফেলেছি।
তৌসিফ একবার কপাল কুঁচকে তাকালো৷ যা কেনার তৌসিফ টাকা দিয়েছে। পৌষ’র খরচ হলো কখন? ও জিজ্ঞেস করলো না৷ শুধু বললো,
— ড্রয়ারে তো টাকা থাকে পৌষরাত। তোমার যা লাগবে খরচ করবে। আমাকে জিজ্ঞেস করার দরকার নেই।
পৌষ চুপ করে মাথা নাড়লো। বুয়া ডিম সিদ্ধ আনতেই তৌসিফ তা পৌষ’কে দিলো। পৌষ’র এখন মোটেও ডিম খেতে মন চাইছে না কিন্তু তৌসিফে’র গাম্ভীর্যপূর্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেও পারছে না। চুপচাপ গিলে খেয়ে নিলো ও।
_______________________
— তুমি ভর্তা বাটছো কেন সোহা?
মেহেদী’র গলা শুনে সোহা উঠে দাঁড়ালো। বললো,
— খেতে মন চাইছিলো।
— আশ্চর্য! তুমি কাউকে বলতে।
— কাকে?
মেহেদী ভাবুক হলো৷ আসলেই তো কাকে বলতো সোহা? মা তো ঝুঁকে কাজ করতে পারবে না। তার কোমড়ে সমস্যা। মেহেদী সোহা’কে ঠেলে সরিয়ে দিলো। নিজেই বসে হাত দিলো। সোহা চেয়ার টেনে বসেছে। ওর মুখে হাসি৷
প্রথম বার পাটায় হাত দিলে যা হয় আরকি। কিছুতেই পুতা ধরে রাখতে পারছে না মেহেদী। বহু কষ্টে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সে ভর্তা বানালো। শুটকি ভর্তা। সোহা’র মুখে লালা চলে এলো৷ পাতিল থেকে ভাত নিয়ে পাটায় দিয়ে বললো,
— এখান থেকে মেখে দিন। পাটায় অবশিষ্ট ভর্তার স্বাদই ভিন্ন।
মেহেদী হাসিমুখে ভাত মেখে লোকমা করে দিলো। সোহা বসে বসে তখন খাচ্ছে। দুপুরের সময় হয় নি তখনও। এমন সময় মেহেদী’র হাতে বসে বসে খাওয়ার দৃশ্যটা নেহাৎ সাধারণ নয়। পাশের বাড়ীর এক মহিলা দেখলেন সবটা জানালা দিয়ে। সোহা মেহেদী’কে জোর করতেই ও খেলো একটু। হাত মুখ ধুঁয়ে মেহেদী যাওয়ার আগে সোহা’র পেটে হাত দিয়ে কপালে চুমু খেলো৷ বললো,
— কষ্টদায়ক কোন কাজ করো না সোহা।
সোহা মাথা নাড়ে। ততক্ষণে ঐ মহিলা হাজির। এসেই মেহেদী’র মা’কে ডাকলেন৷ সোহা তখন রান্নায় মনোযোগ দিয়েছে। ওর শাশুড়ী আসা মাত্রই মহিলা বিভিন্ন ভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে জানিয়ে দিলো মেহেদী’কে দিয়ে কিভাবে সোহা খাটাচ্ছে। ওর শাশুড়ী অবাকই হলেন। মহিলা দেখলো তেমন প্রতিক্রিয়া নেই তাই বললেন,
— শুনো মেহেদী’র মা ছেলে শিক্ষিত। হাতে ধরে রাখো। এখনই বউয়ের গোলামি করে৷ দুই দিন পর বাচ্চা আসলে বউয়ের পা ধরে থাকব।
ওর শাশুড়ী মাথা নাড়লেন। সোহা’কে ডাকলেন। সোহা এতক্ষণ সবটা শুনেছে। ভেতরে রাগে ফুঁসেছে। এগিয়ে আসতেই ওর শাশুড়ী বললো,
— মা, যখন যা খেতে মন চাইবে আমাকে, তোমার শশুড়কে নাহলে মেহেদী’কে বলবে। আমার নাতি-নাতনির মুখ দিয়ে যাতে লালা না পরে।
মহিলার উৎসুক হওয়া মুখ চুপসে গেলো। সোহা’র ভীষণ হাসি পেলো। আহারে! বেচারী আগুন লাগাতে এসে আগুন জ্বালাতে পারলো না। বড়ই কষ্টের বিষয়।
___________________
ভার্সিটির বেতন দিয়ে পৌষ হেমন্তকে ফোন দিলো। জানালো একটু এদিকে আসতে। হেমন্ত আজ ব্যস্ত। পৌষ জোর দিলো না। হেমন্ত একটু হেসে বললো,
— জৈষ্ঠ্যমাসকে পাঠাচ্ছি দাঁড়া।
পৌষ ঠোঁট উল্টে আচ্ছা বলে। ও কেন জানি এখনও সাহস পায় না ভাই বোনদের নিজের বাসায় নিতে। তৌসিফও আগ বাড়িয়ে কখনো বলে না৷ একবার ইনি, মিনি’কে শুধু নিয়ে এলো। ঐ বাসায় কারো সাথে ফোনে কথা বললে যদিও কিছু বলে না কিন্তু যেতে দিতে চায় না। পৌষ একা একা হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় এলো। বাইকে তখন কিছু ছেলেপেলে। একজন ইশারায় পৌষ’কে দেখালো। পৌষ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো ছেলেটা সেই ছেলেটা যাকে পৌষ মাস কয়েক আগে টুনটুনিতে মে’রেছিলো। আহা, কি শর্টটাই না মে’রেছিলো পৌষ।
ছেলেগুলো ভয়ে পালালো একপ্রকার। পৌষ গর্ববোধ করলো অথচ বুঝলো না তৌসিফ তালুকদার এদের ট্রিটমেন্ট দিয়েছে। স্পেশাল ট্রিটমেন্ট।
জৈষ্ঠ্য আসতে দেড়ী হওয়ায় পৌষ কল লাগালো। তখনই দেখলো রোডের অপরপাশে চৈত্র আর জৈষ্ঠ্য একসাথে আসছে। সাথে পিহা। পৌষ’র গাল চওড়া হলো। গলায় জড়তা সৃষ্টি হলো। তার কলিজা গুলো আসছে। পৌষ হাত নেড়ে ওদের ডাকা মাত্র হাতে টান অনুভব করে। তাকাতেই চমকায়। মীরা দাঁড়িয়ে। পৌষ’র ঘাম ছুটার জোগাড়। তৌসিফ এবার তাকে জানে মে’রে দিবে। পৌষ তারাতাড়ি হাত ছাড়ালো। পালাতে চাইলো কিন্তু তার আগেই অদ্ভুত ভাবে হেসে মীরা বলে গেলো,
— পিয়াসী’কে বাচ্চা না হওয়ার জন্য তৌসিফ ছেড়েছিলো। তোমাকেও ছেড়ে দিবে পৌষ। এই কথা আমি যাতে তোমাকে না জানাই এরজন্যই আমার থেকে দূরে থাকতে বলে। তোমার নিশ্চিত সমস্যা আছে পৌষ তাই এখনও তৌসিফ বাবা ডাক শুনতে পায় নি। ও তোমাকে ছেড়ে দিবে।
পৌষ’র কানে আর ঢুকলো না। মীরা গাড়িতে উঠে চলে গেলো। এদিকে রাস্তায় ঢলে পড়ে পৌষ। পড়ার ঠিক আগ মুহুর্তে পেছন থেকে হেমন্ত ধরে ফেললো। সামনে থেকে তখন ভাই-বোন গুলো ছুটে আসছে। পৌষ হাত বাড়ালো। ইনি, মিনি কোথা থেকে ওর বুকে চলে এলো। পৌষ ঝাপসা দেখলো ওর সবগুলো ভাই-বোন এসেছে। নিশ্চিত পৌষ’কে চমকাতে তাদের এই আগমন৷
ওর মুখ দিয়ে অস্পষ্ট বের হলো,
— তৌসিফ।
#চলবে…..
#প্রেমসুধা(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৬৬
পৌষ’কে নিয়ে বাড়ীতে আসতে চেয়েছিলো হেমন্ত কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর পৌষ না করেছে। এখন তৌসিফ’কে না বলে গেলে আবার রেগে যাবে। এই লোক হুটহাট রেগে যায়। সেই রাগ সামলাতে পারে না পৌষ। হেমন্ত এতে রেগে আছে। গাড়িতে করে তৌসিফে’র বাসার সামনে এনে চৈত্র’কে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— ওকে ভেতরে দিয়ে আয়।
পৌষ আহত চোখে তাকালো। মিনমিন করে বললো,
— হেমু ভাই….
হেমন্ত যেন ওর কথা শুনলোই না বরং চৈত্র’কে ধমকালো। পৌষ’র নাক পিটপিট করে। এখনই যেন কান্না চলে আসবে। হেমন্ত গম্ভীরই রইলো। পৌষ ভাইয়ের হাত ধরে। ধরা গলায় ক্লান্ত স্বরে বলে,
— ভাই, উনি রাগ করবে না বলে যদি যাই।
— তোর ওনিকে কত মাস ধরে চিনিস? ছোট থেকে পেলে বড় করলাম আমরা। নিজের বাড়ীতে যেতে দিবে না, থাকতে দিবে না। এটা কেমন আচরণ?
— উনি সবটা জানে ভাই।
— জানুন! আমি পালি নি? আদর করি নি? এখনও কি ফেলে দিব?
পৌষ চোখ নামিয়ে ফেললো। জ্ঞান ফিরলেও ভালো লাগছে না। পৌষ হেমন্তের হাত ছাড়লো। বললো,
— ভেতরে এসো না ভাই।
— যা তুই।
— আমলা যাই?
ইনি,মিনি একতালে বললো। পিহা একটু গা ঝাড়া দিলো। সম্মতি দিয়ে বললো,
— সাথে আমিও।
জৈষ্ঠ্য একটু গলা খেঁকিয়ে বললো,
— না মানি আমিও চলি। ওদের দেখে নিয়ে আসব।
হেমন্ত কপাল কুঁচকে তাকালো। এদের মতো তারও বলতে মন চাইছে সে যাবে সাথে। পৌষ’টাকে একা ছাড়তে মন চাইছে না কিন্তু সম্পর্কের মারপ্যাঁচে পড়ে কথাটা বলা হলো না। শান্ত স্বরে শুধু বললো,
— ওকে ভেতরে দিয়ে সোজা চলে আসবি সব-কয়টা।
সবগুলো যেন লাফিয়ে উঠে। গাড়ি থেকে টপটপ করে নামে। পৌষ হেমন্তের হাত ধরে। ছোট্ট সেই পৌষ’র মতো আবদার ধরে,
— এসো না হেমু ভাই।
হেমন্তের মন ভাঙে। অভিমান ভেঙে টুকরো হয়। পৌষ’র মাথায় হাত দিয়ে বলে,
— আজ না পৌষ। ভাই আসব আরেকদিন।
— আজ কেন নয়?
— বড় হচ্ছিস না ভাইয়ের বোন। তোর শশুর বাড়ী এটা। চাইলেই কি আসা যায়? সম্পর্কে বড় না আমি? হুটহাট যাওয়া বেমানান।
পৌষ যেন বুঝলো। মাথা নিচু করে নেড়ে বললো,
— একদিন এসো তাহলে।
— আসব।
— যাব?
— যাহ।
পৌষ হাঁটা ধরলো। একহাতে ধরা পিহা অন্য হাত জৈষ্ঠ্য। পেছনে চৈত্র বোনের ঢাল হয়ে যাচ্ছে। হাঁটুর সমান ইনি,মিনি তাদের আপা’র সামনে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। হেমন্ত পেছন থেকে দেখলো। পৌষটা তাদের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। দূরত্বটা তৌসিফ তৈরী করছে। হেমন্ত বুঝে না এমন না। হয়তো তৌসিফ নিজের জায়গায় ঠিক কিন্তু তার কি উচিত হচ্ছে এভাবে পৌষ’কে দূর করা। হেমন্ত চোখ বুজে সিটে হেলান দিলো। মনে পরলো সেদিনকার কথা যেদিন তৌসিফ প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো। বাবা-চাচা মেনে নিলো। তৌসিফ কঠিন ভাবে শর্ত দিলো বিয়ের পর পৌষ এ বাড়ী পা রাখবে না। চাচারা চট করে মেনে নিলো। হেমন্ত প্রতিবাদ করেছে। বাবা কিছুটা দমেছিলো কিন্তু ততক্ষণে তৌসিফ জোর দেয়া শুরু করে। সোজা নেমে আসে হুমকিতে। তার কাছে বিয়ে না দিয়ে পৌষ’কে আর কোথাও বিয়ে দেয়া যাবে না। তার বাবার নাকি ইচ্ছে ছিলো। তার ফুপির মেয়ে, অধিকারও ছিলো।
সেদিক দিয়ে ভাবলে তৌসিফ যতটুকু আসা-যাওয়া করতে দিচ্ছে তাতেই তো শুকরিয়া। ক্ষুদ্র একটা শ্বাস ফেলে হেমন্ত। তার চাওড়া শুধু পৌষ সুখী হোক। ছোট্ট একটা চাওয়া। হেমন্ত জানে তৌসিফ তাকে ভালো রাখবে বরং রাখছে।
পাঁচ ভাই-বোন নিয়ে ভেতরে ঢুকলো পৌষ। তার মনটা খুবই উৎফুল্ল। ওদের নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো মিনু হা করে বসে টিভি দেখছে। ফ্লোরে দুইজন বুয়া বসা। পৌষ’কে দেখে ওরা উঠে দাঁড়ালো। পৌষ হেসে বললো,
— আপনারা টিভি দেখুন খালা।
বুয়া দু’জন হাসিমুখে এগিয়ে এলো। বললেন,
— আপনার ভাই-বোন, কত্ত সুন্দর বাচ্চা দুইটা।
পৌষ’র ভালো লাগলো। ওর ভাই-বোনদের প্রশংসা শুনতে ওর ভালো লাগে। পৌষ ওদের নিয়ে ভেতরে এলো। মিনু ডাগর চোখে শুধু দেখলো। ইনি, মিনি গিয়ে উঠে ওর পাশে বসে। টিভির রিমোট হাতে নিতেই মিনু চাপা স্বরে বলে উঠলো,
— পাল্টাবা না। বুঝসো?
দুই বোন পিটপিট করে তাকালো। ডাকলো,
— আপা?
পৌষ তাকাতেই এক স্বরে তারা বলে উঠলো,
— কার্তুল ছেলে দাও।
মিনু চোখ বড়বড় করে তাকালো। পৌষ এসে দুই বোনের হাত ধরে। বলে,
— আপার রুমে চল। ওখানেও টিভি আছে।
পৌষ ওদের নিয়ে রুমে যায়। ভাই-বোনদের নিজের রুমে বসায়। চৈত্র বলে উঠলো,
— আপা হেমু ভাই বকলে?
— বকলে আমার নাম বলবি তাহলেই দেখবি চুপ করে গিয়েছে। তোর দুলাভাই থাকলে দেখতি এতক্ষণে হেমু ভাইকেও ভেতরে নিয়ে আসতো।
বলতে বলতে আলমারি খুলে তার লুকিয়ে আনা সব চকলেট, বিস্কুট বের করতে লাগলো। জানালো কিভাবে চুরি করে এসব এনেছে। নরম কুসনটা ইনি টেনে নিলো৷ ছোট্ট সাদা মাখনের মতো একটা বালিশ। মিনি ওটায় গাল লাগিয়ে দুই বোন একসাথে বলে উঠলো,
— কত্ত নলম। বলো আপা? এটা নেই?
পৌষ ওদের গালে চুমু দিলো। সবকিছু পাঁচ ভাগ করে বললো,
— বাসায় কেউ মা-রামারি করবি না। ঠিক আছে?
ওরা মাথা নাড়তেই পৌষ বলে,
— এখানে থাক। কি খাবি বল? কি রাঁধব?
চৈত্র বোনের হাত ধরে। বলে,
— আপা, তুমি অসুস্থ। রেস্ট নাও একটু। আমরা এখন যাই? হেমু ভাই অপেক্ষা করছে।
— তাহলে তো ভালো হয়। হেমু ভাইয়ের জন্য প্যাক করে দিব নে। মুরগী ভাজব? তোদের দুলাভাই থাকলে এতক্ষণ দেখতি…..
বলতে বলতে ওর ফোনটা বেজে উঠলো। পৌষ দেখেই হাসি মুখে তা হাতে তুলে। বলে,
— দেখ, তোদের দুলাভাই কল দিয়েছে। এখন যদি শুনে তোরা এখানে তাহলে দেখবি যেতেই দিবে না। বস, আমি মুরগী ভিজিয়ে আসি।
বলতে বলতে পৌষ রুম থেকে বের হয়। ফোন রিসিভ করে খুশি খুশি গলায় বলে,
— অ্যাই আপনি কই? জানেন বাসায় কারা এসেছে? আমার…..
— কোথায় তুমি?
মাত্রাতিরিক্ত গম্ভীর কণ্ঠ। পৌষ’র হাসি নিভতে লাগলো তবুও তা সচল রেখে বললো,
— কোথায় আবার? বাসায়? আচ্ছা, শুনুন না….
— মীরা’র সাথে দেখা হয়েছে?
পৌষ’র কথা শেষ করতে দিলো না তৌসিফ। পৌষ ঢোক গিলে বললো,
— আরে আপনি ঠিক বলেছেন। ঐ মহিলা পা’গল। আমাকে আজও উল্টোপাল্টা কথা বলছিলো।
— তুমি শুনেছো?
— আরে বাদ দিন না। বাসায় আমার সব ভাই-বোন এসেছে। প্রথম সবাই একসাথে। ওদের আজ….
তৌসিফ যেন কিছুই শুনলো না। রাগী এবং গম্ভীর তেজ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলো,
— বাসায় আসছি আমি। রুম থেকে বের হবে না।
পৌষ মুখ খুলে কিছু বলার আগেই তৌসিফ কল কেটে দিলো। পৌষ’র মুখ চুপসে গেলো। এতক্ষণে থাকা হাসিটা ধপ করে নিভে যায়। বুকটা না চাইতেই ধুকপুক শুরু হয়। কপালে জমা হয় বিন্দু বিন্দু ঘাম। তৌসিফ রেগে আছে। এখন যদি বাসায় এসে চিল্লাপাল্লা করে? বলা তো যায় না রাগের মাথায় যদি থাপ্পড় টাপ্পড় দিয়ে বসে?
পৌষ’র ভেতর শুকিয়ে আসে। ফোন রেখে তারাতাড়ি ভেতরে যায়। পিহা উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
— আপা, দুলাভাই কি আসছে আমাদের কথা শুনে?
পৌষ হাসার চেষ্টা করে। তারাহুরোয় বলে উঠে,
— আআরে, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম৷ তোদের দুলাভাই আসতে আজ রাত হবে। আফসোস করলো। আমি আমিও কত গাধা। হেমু ভাই জুতা পিটা করবে সবকটাকে। তারাতাড়ি যা। অপেক্ষা করছে। জানালা দিয়ে দেখলাম রেগে আছে মনে হয়।
এক প্রকার তারাহুরো করে ওদের দরজা দিয়ে বের করে পৌষ। ওর মনে হচ্ছে ওর ভেতর ফেঁটে যাচ্ছে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে ঠিক যেন দাবিয়ে রাখা দাবানল। ওরা গাড়িতে উঠা মাত্রই পৌষ দরজা লাগাতে যায় তখনই দেখে তেড়ে আসতে ওর দিকে তৌফিকের বউ। পৌষ ভাবে মুখের উপর দরজা লাগালে বিষয়টা অপমানজনক তাই দাঁড়িয়ে থাকে ঠাই। আদিত্যের মা তখন রাগে চিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো,
— লোভী চোর কোথাকার। ভাই বোন এনে এভাবেই সব পাচার করে। ছোট লোক বিয়ে করেছে তৌসিফ। এর ছোট লোকের ভয়ে ছাদে কাপড়ও দেই না৷ না জানি কবে কি চুরি করে।
— ধরুন সেই ছাদ থেকে আপনি পড়ে গেলেন। বিষয়টা কেমন হয় বড় ভাবী?
আদিত্যের মা চমকে উঠলেন। তার ঠিক পিছনে তৌসিফ। কথাটা সেই বলেছে। গলাটা তার খড়খড় করে উঠলো। পৌষ দরজা ছেড়ে ভেতরে যেতেই আদিত্যে’র মা কেটে পরতে চাইলো। তৌসিফ পেছন থেকে বললো,
— সাবধানে বড় ভাবী। সিঁড়ি দিয়ে সাবধানে নামুন।
মহিলার ঘাম ছুটে গেলো। তৌসিফ’কে ভরসা নেই। সবেই খবর এসেছে মীরা’র গাড়ি রাস্তায় উল্টে গিয়েছে।
.
পৌষ চুপ করে সোফায় পা তুলে বসে ছিলো। তৌসিফ ঢুকেই শব্দ করে দরজা লাগালো। বাড়ীতে উপস্থিত সকলেই কেঁপে উঠে। আস্তে করে টিভি বন্ধ করে মিনু পালালো। বুয়ারা রান্না ঘরে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো কিন্তু পৌষ? পৌষ কিভাবে পালাবে এদের মতো? তার পালানোর রাস্তা কোথায়? আদৌ কি কোন রাস্তা আছে?
তৌসিফ এসেই ঠান্ডা স্বরে বলে,
— রুমে যাও।
পৌষ বসেই রইলো। তৌসিফ ওর হাতের কবজি চেপে ধরে টেনে দাঁড় করায়। পৌষ’র চেপে রাখা কান্না ছিটকে বেড়িয়ে আসে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
— আমি যাব না। ছাড়ুন আমার হাত।
তৌসিফ ছাড়ে না৷ রুমে নিয়ে পৌষ’কে খাটে রেখে দরজা লাগায় শব্দ করে। পৌষ কেঁপে উঠে। তৌসিফ দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করলো,
— কেন কাঁদছো?
……….
— কথা বলো!
এবারেও উত্তর আসে না৷ তৌসিফ এবার পৌষ’র চোয়াল চেপে ধরে। পৌষ ওর হাত সরিয়ে দিলো। চিৎকার করে বললো,
— কি বলব? কি শুনতে চান আপনি? আমি কাঁদছি কারণ আমি আপনাকে ভয় পাই৷ ভয় লাগে আপনাকে আমার। আতঙ্কে থাকি আমি৷
পৌষ ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। তৌসিফ ওর থুতনি ধরে নিজের মুখ বরাবর করলো। বললো,
— আমাকে ভয় পাও?
পৌষ’র কান্না বাড়লো। তার ভাই-বোন গুলো তার জানের টুকরো। তাদের আজ এক প্রকার তাড়িয়ে দিয়েছে পৌষ। ওর বুক ফেঁটে কান্না আসছে। তৌসিফ দাঁত চেপে খড়খড়ে গলায় বললো,
— মীরা’র সাথে কি কথা হয়েছে?
পৌষ’র গা শিউরে উঠলো৷ কোনমতে বললো,
— ক…কথা হয় নি।
— মিথ্যা!
— শুধু উনি বলেছে।
— আর তুমি? বিশ্বাস করে নিয়েছো? এই! ও কি বলেছে?
পৌষ কেঁদেই যাচ্ছে। তৌসিফে’র ফোন বেজে উঠলো। তৌফিক ফোন করেছে। পৌষ’কে ছেড়ে কল তুললো ও। চওড়া গলায় কথা বলছে তৌসিফ। পৌষ যতটুকু বুঝলো তা হলো মীরা’র গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। তারজন্য তৌফিক তৌসিফ’কে দায়ী করছে। এছাড়াও একটু আগে নিজের বড় ভাবীর সাথে বাজে ব্যবহার করায় ধমকাচ্ছেন তিনি। তৌসিফ উন্মাদের মতো ফুসফুস করতে লাগলো৷ রাগে তার কপাল ছিঁড়ে যাচ্ছে। বড় ভাইকে ছাড় দিলো না সে। বাজখাঁই গলায় বললো,
— জানে মে’রে দিব আমার সংসার ভাঙতে আসলে। ঐ মহিলাকে আগেও ওয়ার্নিং দিয়েছি। আজ গাড়ি উল্টেছে দুইদিন পর ওর জীবন উল্টে দিব আমি৷ আমি কে তা ভুলে যায় কেন?
তৌসিফ ফোন কেটে দিলো। পৌষ মুখ চেপে ধরলো। তার বমি পাচ্ছে। ভয়ে বমিও আসছে না। সামনেই পানির গ্লাস কিন্তু খাওয়ার সাহস পাচ্ছে না৷ তৌসিফ এগিয়ে আসতেই পৌষ সরতে চাইলো কিন্তু তার আগেই ধরা খেলো। পৌষ মোচড়ালো। ছাড়া পেতে চাইলো। তৌসিফ ধমক দিলেও পৌষ থামে না। কাঁূতে কাঁদতেই বলে,
— ছাড়ুন আমাকে। চোর আমি। সব আমার ভাই-বোনদের দেই?
— মিথ্যা এটা? এসেছিলো তো তোমার ভাই-বোন। একটা কথার এত…
পৌষ’র মাথায় কথাটা ঢুকলো না৷ তার দূর্বল মস্তিষ্ক তাকে শুধু বুঝালো তৌসিফ তাকে চোর ভাবছে। পৌষ তার ভাই-বোনদের সব দিয়ে দেয়। ওর মাথা ঘুরে গেলো। আজ পর্যন্ত একটা সুতাও তো দিলো না ও। যা করার তৌসিফ করে। আজও তৌসিফে’র অনুমতি ছাড়া একটা চকলেট দেয় নি৷ যা দিয়েছে তার সবটা পৌষ টুকটাক করে লুকিয়ে এনেছে। পৌষ তৌসিফ’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ওর বুকটা উঠা নামা করছে। দৌড়ে রুম থেকে বের হতে হতে বললো,
— সব এনে দিব। সব ফিরত দিব। আমার ভাই-বোন ফকির না৷ ওরা না খেয়ে থাকে না।
তৌসিফ উঠে ওকে ধরতে ধরতে পৌষ বাইরে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। তৌসিফ সমান তালে চিৎকার করে গেলো। বুয়াদের ডাকতেই তারা দরজা খুললো। তৌসিফ পিছনে দৌড়ে দিলো। ও কি বললো আর পৌষ কি বুঝলো? কথাটা শেষ ও করতে দিলো না। তৌসিফ নামতে নামতে পৌষ সিএনজিতে উঠেছে। দূরত্ব নগন্য। তৌসিফ পিছু নিলো। এই মেয়ে তাকে জ্বালিয়ে মা’রবে। পৌষ নিজদের বাসার সামনে নেমেই বললো,
— ভাড়া পাঠাচ্ছি।
বলতে বলতে দেখলো পেছনে তৌসিফ। পৌষ ভেতরে দৌড়ে ঢুকলো। সোজা গেলো পিহা’র রুমে। ততক্ষণে ওকে দেখে শ্রেয়া এসেছে। পিহা থেকে সব নিয়ে দুই ভাইয়ের রুম থেকে চকলেট গুলো নিয়ে নিলো। তৌসিফ ভেতরে ঢুকা মাত্রই হেমন্তও বের হয়েছে। বাসায় শুধু বড় চাচা ছিলেন। পৌষ’কে এভাবে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন৷ ইনি,মিনি’র রুমে ঢুকে চকলেট সহ ঐ কুসনটা নিতে গেলেই দু’জন টেনে ধরলো। টলমলে চোখে তাকিয়ে বললো,
— আপা, এতা না দেই?
তৌসিফ পৌষ’র হাত ধরে বললো,
— ছাড়ো এটা।
পৌষ ধমকে উঠলো,
— ছাড় এটা। এটা ওনাদের। আমার না৷ ফেরত দিতে হবে। চুরি করে এনেছিলাম। চোর আমি।
বলেই এক টানে নিয়ে নিলো পৌষ। পা’গলের মতো চকলেট গুনে বললো,
— একটাও কেউ খায় নি। সবগুলো আছে। গুনে দেখুন। দেখুন।
তৌসিফে’র বুকে অসহনীয় জ্বালা হলো। পৌষ’র হাত শক্ত করে ধরে বললো,
— সোজা বাসায় এখন৷
পৌষ ওভাবেই শ্রেয়া’কে বললো,
— ভাবী, বাবুকে যে ব্রেসলেট দিলো ওটা ফেরত দিয়ে দাও। ওনারা চোর ভাবে আমাকে। ছোট্ট জানটা, ওর ফুপির শশুর বাড়ীর জিনিস পরতে পারবে না। ফেরত দাও। এখনই দিয়ে দাও। বলতে বলতে নিজের গলার পাতলা চেইনটা এক টানে ছিঁড়ে শ্রেয়ার হাতে দিলো। বললো,
— এটা আমার। আমার মায়ের।
তৌসিফ দাঁতে দাঁত চেপে পৌষ’র চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরে। মুহুর্তে তৌসিফে’র ডান হাতের শক্ত নখগুলো ডেবে গেলো পৌষ’র গালে। পৌষ তখনও বললো,
— ভাবী নিয়ে এসো।
বড় চাচা এতক্ষণে এগিয়ে এলেন৷ জিজ্ঞেস করলেন,
— কি হয়েছে পৌষ?
— কিচ্ছু হয় নি।
শ্রেয়া ব্রেসলেট আনতেই পৌষ তা নিয়ে নিলো৷ তৌসিফে’র হাত ধরে বললো,
— চলুন৷ আমরা চলে যাই।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে যেতে যেতে পৌষ বললো,
— আজকের পর থেকে আমি তোমাদের কাছে মৃত। কেউ কখনো আমার খোঁজ নিবে না৷ ফোন দিবে না৷ আমি আমার মা-বাবা’র মতোই মৃত।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই পৌষ বিদায় নিয়ে চলে গেলো। গাড়িতে উঠে চুপ করে রইলো। তৌসিফও কথা বললো না৷ গাড়ি চললো কম সময়। ওরা পৌছাতেই পৌষ আগে দৌড়ে উঠলো। আদিত্যদের ফ্লাটের সামনে এসে এক নাগাড়ে কলিং বেল বাজালো৷ তৌসিফ ওকে ধরে সরানোর আগেই হাতে থাকা চকলেট, বিস্কুট আর কুসন পৌষ ভেতরে ছুঁড়ে দিলো। ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলো,
— চুরির মাল ফেরত দিয়ে গেলাম৷
পৌষ চলে গেলো। তৌসিফও চলে গেল। এদিকে হা করে তাকিয়ে আছে আদিত্য’র মা৷ অপমানে গা জ্বলছে তার।
#চলবে….
#প্রেমসুধা(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৬৭
পৌষ’কে রুমে এনে সোজা বাথরুমে নিলো তৌসিফ। এই মেয়ের মাথা খারাপ হয়েছে তা ঢের বুঝা হয়েছে তার। পা থেকে চুল আপাতত তেঁজে জ্বলজ্বল করছে। কেমন ফসফস শব্দ করছে। তৌসিফ ভাবছে এই বুঝি তার উপরও ঝাঁপিয়ে পড়লো। তাতে অবশ্য চিন্তা নেই। বউ মানুষ, জামাই এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তৌসিফ সামলে নিবে বরং ভেতর ভেতর তার ভালোই লাগবে।
পৌষ’কে সামলানো যেন আজ কষ্টসাধ্য। তৌসিফ ওর হাত দুটো বেসিনে নিয়ে পানি ছেড়ে দিলো। পৌষ অবশ্য শান্ত দাঁড়িয়ে নেই। সে যথেষ্ট নড়াচড়া করছে। অগত্যা তৌসিফ ওকে নিয়ে শাওয়ার চালু করে দাঁড়িয়ে গেলো। শক্ত করে বুকে চেপে নিলো। দু’জনের শ্বাস প্রশ্বাস তখন শব্দ করছে। পৌষ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তৌসিফ ওর পিঠে হাত বুলাচ্ছে। প্রায় বিশ মিনিট এই নীরবতা পালন হলো। পানির শব্দ গুলো এখন কানে ঝুমঝুম শব্দ তুলছে। তাল মিলিয়ে ছন্দ পতল হচ্ছে হৃদকম্পনের। পৌষ হঠাৎ শরীর ছেড়ে দিলো। এতক্ষণের থাকা শক্ত দেহটা এখন ভর ছেড়ে দিয়েছে। তৌসিফ সামলে নিলো। জড়িয়ে রাখলো বুকের সাথে। পৌষ হঠাৎ কেঁদে ফেললো। কাঁপতে থাকা দেহটায় তখন কম্পন বাড়লো কান্নার দাপটে। তৌসিফ শাওয়ারটা বন্ধ করে দিলো ব্যস্ত হাতে। পৌষ’র দেহের সাথে সেটিয়ে থাকা কাপড় দেখে গলা যেন শুকালো। পুরুষ মনটা তখন হু হু করে উঠে। তৌসিফ চাইলেও আস্কারা দিতে চাইলো। পৌষ’র ঘাড়ে মুখ রাখতেই টের পেলো পৌষ টলছে। তৌসিফ নিজেকে সামলায়। পৌষ’কে ধরে কাপড় বদলে দিয়ে নিজেও চেঞ্জ করে নিলো। পৌষ’কে কোলে তুলে রুমে ঢুকা মাত্রই দেখলো ওর দাঁতের সাথে দাঁত লেগে যাচ্ছে। তৌসিফ তারাতাড়ি ওকে কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে নিজেও ভিতরে ঢুকে শক্ত করে পৌষ’কে বুকে জড়িয়ে রাখলো। মাঝেসাঝে টুকটাক কথা বললো তৌসিফ,
— গরম কিছু খাবে? ঘুমাও নাহয়। পৌষরাত, তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?
পৌষ কোন উত্তর করে না। তৌসিফ ওর মাথায় হাত বুলায়। কপালে চুমু খেয়ে আদরমাখা কণ্ঠে বলে,
— জান আমার, কি হয়েছিলো তোমার? এমন কেন করলে? ছোট্ট বাচ্চাগুলো কাঁদছিলো।
পৌষ বুকে মুখ গুজে ঘ্রাণ নিলো অতঃপর সরতে চাইলো বুক থেকে। তার শরীর উষ্ণতা পেয়েছে। বুকের থেকে ছাড়া পেতে পৌষ দাঁতের ব্যবহার করলো। বুকের মধ্যে শক্ত করে কামড়ে ধরতেই তৌসিফ ওকে ছাড়লো। টিশার্ট খুলে ছুঁড়ে মা’রে তৌসিফ। বুকের উপর দিকে কামড়টা দিয়েছে। দাঁত বসেছে একদম। টিসটিস করছে জায়গাটা। পৌষ’র দিকে না তাকিয়েই বললো,
— ব্যথা লাগিয়ে দিলে হানি। ব্যথা কমাতে এখানে একটা উম্মা দাও।
পৌষ ততক্ষণে উঠে যেতে চাইলো। তৌসিফ খপ করে হাত ধরে। পৌষ রাগে দাঁত দিয়ে দাঁত পিষে বললো,
— হাত ছাড়ুন।
তৌসিফে’র বরাবরই অপমান বাক্য সহ্য হয় না। তারমধ্য বয়সে এত ছোট মেয়ে তাও কিনা আপন বউ এভাবে দাঁত পিষে কথা বললে তা মানা মুশকিল। পুরুষ ইগো তা মানতে নারাজ। তৌসিফ তবুও সয়ে গেলো। শান্ত স্বরে বললো,
— দাঁত ছেড়ে কথা বলো।
— ছাড়ুন আমাকে। চোরের হাত ধরতে লজ্জা লাগে না। আপনার ভাবীর হাত ধরুন গিয়ে….
— পৌষরাত!
পৌষ কথাটা বলতে চায় নি। মুখ ফঁসকে বেরিয়েছে। তৌসিফ চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো,
— থাপ্পড় খাবে একটা বেয়াদবি করলে। কখন থেকে ফাইজলামি শুরু করেছো? কতটা দৌঁড় খাওয়ালে? দোষ কি ছিলো আমার? চোর ডেকেছি? কথা শুনো কখনো পুরোটা? মন চায় এক চটকানা মা’রি। ওগুলো তুমি লুকিয়ে আনো নি? তাই বলেছি। এতটা ক্ষেপার মতো কি হয়েছিলো? ঐ বাড়ী গিয়ে কি করলে? বাচ্চাগুলো কাঁদছিলো। মায়া লাগলো না? আমার সাথে তেজ দেখাও তুমি। কিছু বলি এতে? তুমি জানো আমি কেমন তবুও তুমি অবাধ্য হচ্ছো। আমাকে আজ কতটা নিচে নামালে পৌষরাত। ছোট্ট বাচ্চাকে দেয়া উপহারটা কিভাবে চেয়ে নিয়ে এলে? আমি নিজে গিয়ে দিয়েছিলাম পৌষরাত ওটা। আমাকে কতটা অপমান করলে তুমি। একবার ভাবো। মাথাটা ঠান্ডা করে চিন্তা করো। কথার প্রেক্ষিতে বলেছি। তোমাকে কবে চোর বলেছি আমি? যা সত্যি তা বলেছি। তুমি কি ভাবো আমি জানি না। তোমার খবর পইপই করে রাখি আমি। তোমার ভাই-বোন এসেছে শুনা মাত্র বাসায় খাবার দাবার পাঠিয়েছি। তুমি কি করলে ওদের ভাগিয়ে দিলে? কেন? আমি কি অসামাজিক? জা’নোয়ার ভাব আমাকে?
পৌষ’র সাহস দেখে এবার তৌসিফ অবাক হলো কারণ পৌষ ভুল বুঝতে পারলে এতক্ষণে কেঁদে ফেলতো। বুকে চলে আসতো কিন্তু না ও শক্ত হয়ে বসে আছে। চোখে মুখে এখনও রাগ ছড়িয়ে। এটা অভিমান না। এটা রাগ। ক্ষোভ। তৌসিফ দেখলো। পৌষ সরাসরি প্রশ্ন করলো,
— তখন আমার সাথে ঐ ভাবে কথা বললেন কেন? আপনার ভাবী এসেছিলো কথা বলতে। বিশ্বাস করেছি আমি? করেছি? করিনি। আমি জানি আপনি আমাকে ছাড়বেন না। আপনি আমাকে ভালোবাসেন। আপনার ভালোবাসার কোন ঠিকঠিকানা নেই। যখন তখন রেগে যান। আমার কি দোষ ছিলো? বলুন?
— দোষ তোমার অবশ্যই আছে পৌষরাত। মীরাকে দেখামাত্র জুতা পেটা করা উচিত ছিলো।
— তো আপনি কি করলেন?
— জানে ছেড়ে দিয়েছি।
পৌষ চমকালো। মনে পরলো মীরা’র গাড়ী উল্টেছে। ভেতরে হঠাৎ কামড়ে উঠলো। এই কাজ তৌসিফ করেছে? পৌষ আতঙ্কিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
— আপনি করেছেন?
— কোন সন্দেহ?
— তার দোষ? শুধু ঐ কথা বলাতে….
— ভুল। ও আমার সংসার ভাঙতে চেয়েছে। আমার থেকে আমার ভালোবাসাকে দূর করতে চেয়েছে। ওকে জানে ছেড়েছি ভাতিজা, ভাতিজির জন্য। নাহয় আজ অস্তিত্ব থাকতো না ওর।
কত সহজ, সরল ভাবে তৌসিফ কথাগুলো বলে ফেললো অথচ ভয়ংকর এই কথা শুনে পৌষ’র আত্মাটা কেমন টিসটিস করছে। ভয়ে কলিজাটা গলায় উঠে এসেছে। পৌষ’র চোখে মুখে ভীতি দেখে তৌসিফ বাঁকা হাসলো। ফিচেল হাসি ঠোঁটের কিনারায় নিয়ে বললো,
— তুমি আমার অনেক সাধের। এত সহজে ছাড়ব? আমাদের মাঝে কখনো কেউ আসবে না। আমি আসতেই দিব না। পৌষরাত, তুমি বিশ্বাস করো আমাকে? বিশ্বাস করো আমি কতটা পা’গল তোমার জন্য? এই পা’গলামি আমি আগে কখনো করি নি। আমার এই বয়সে এই পা’গলামি মানায়ও না তবুও পা’গল হয়ে যাচ্ছি আমি। তুমি আমাকে কতটা বদলেছো বলো তো? আর কত বদলাবে আমাকে তুমি?
পৌষ’র ঠোঁট ভেঙে এলো। হাঁটুতে ভর দিয়ে এগিয়ে এসেই ঝাঁপ দিলো তৌসিফে’র বুকে। ওর কেমন ভয় ভয় লাগছে। তখন এমন আচরণ কেন করলো বুঝতে পারছে না পৌষ। মুহুর্তেই হু হু করে কেঁদে ফেললো। তৌসিফ ওর মাথায় হাত বুলালো। কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— কেঁদো না। আমাকে শুধু বুঝার চেষ্টা করো। একবার চেষ্টা করো। আমার বিশ্বাস তুমি বুঝবে।
পৌষ’র হিচকি উঠে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— আপনার ভাবী এমন কেন?
— কিছু মানুষ থাকে যারা অন্যে’র সুখ দেখতে পারে না৷ এরা নিজেরা খেয়েদেয়ে অন্যের হাড়িতে উঁকি দিয়ে দেখে কি আছে। যখনই কারো ভরা হাড়ি পায় তখনই পাথর ছুঁড়ে মা’রে। এটা তাদের বিনোদন। তারা মজা পায় এসব করে। মীরা ঠিক ওমনই একজন।
— আপনি ওনাকে আগে কেন ধমকালেন না? আমাকে কেন বকেছিলেন? এজন্যই কষ্ট পেয়েছি। আমি জানি না কেন আমি এমন করেছি।
তৌসিফ দুই হাতে পৌষ’র মুখ মুছে পরপরই চোখ দিয়ে পানি পরে। তৌসিফ হেসে ফেললো। বললো,
— আর কাঁদে না তো হানি। মীরা’কে বকি কি কে বললো? প্রথম ঝাড়িটা তাকে তৌহিদের কাছে খায়িয়েছিলাম। এদিক থেকে তোমাকে শাসনে রেখেছি যাতে বখে না যাও। বউ আমি শাসনে রাখব। আমিই ভালোবাসব। চলবে?
— ছাগলের বেগে দৌড়াবে।
পৌষ তৌসিফে’র হাঁটুর দিকের টাউজারে নাক মুছলো। টু শব্দ করে না তৌসিফ। পৌষ’র শুকিয়ে আসা ঠোঁটে আলতো স্পর্শ করে বলে,
— কত কথা বলো তুমি। তোমার সাথে থেকে বাচাল হয়ে যাচ্ছি।
— উম। ঘুমাব।
— খাবে।
— একটু পর।
বলে তৌসিফে’র গলা জড়িয়ে ধরে পৌষ। তৌসিফ ছাড়ায় না। আস্তে করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মিনিট খানিক যেতেই পৌষ ঘুমিয়ে যায়। তৌসিফ তাকিয়ে রয় ওর দিকে। তৌসিফ’কে চার হাত পায়ে পেঁচিয়ে ঘুমাচ্ছে ও। চোখ বুজে তৌসিফ। বিরবির করে বলে,
— আরেকবার তুমি গুটি চালো মীরা। তোমাকে রাস্তায় নামিয়ে ছাড়ব আমি। স্বভাব বদলালেও মানুষ আমি আজও একই আছি। তৌসিফ তালুকদার কে তা তুমি ভুলেছো। কার কথায় এসব করছো তা আমার খুব করে জানা। তোমাদের জানে ছেড়েছি তার শুকরিয়া আদায় করো। আমার কলিজায় হাত দিলে ঐ হাত কাটতে আমি তৌসিফ সময় নিব না।
.
শরীরে বেয়ে বেয়ে কিছু উঠছে। পৌষ টের পায় তিন চারটা হাত ওর সারা অঙ্গে হাতাচ্ছে। টু ট্যা শব্দ হচ্ছে। মাঝেমধ্যে পুরুষ গলা শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে আবার কেউ একজন ওর পায়ের আঙুল ধরে টানছে। ঘুমের মধ্যেই পৌষ ভয় পায়। ডান হাত বাড়িয়ে খুঁজে তৌসিফ’কে। না, নেই সে। পৌষ ভয় পেয়ে গেলো। চোখ দুটো খুলা যাচ্ছে না। হঠাৎই তখন ওর চোখের পাপড়ি গুলো টেনে ধরে চোখ খুলতে চায় কেউ। পৌষ লাফিয়ে উঠে। জোরে জোরে শ্বাস টানতেই ইনি, মিনি একসাথে ডেকে উঠে,
— আপাআআআ।
পৌষ বড়বড় চোখ করে তাকালো। অবাক হয়ে তাকিয়েই রইলো। ওর শরীরের সাথে বোন তিনটা লেগে আছে। পায়ের আঙুল এখনও জৈষ্ঠ্য ধরে টানাটানি করছে। চৈত্র তার পাশে বসা। কোলে হেমন্তের বাবুটা। ফাঁকা ঢোক গিলে পৌষ। এদিক ওদিক তাকায়। হ্যাঁ, এটা তারই বেডরুম। বিলাস বহুল তৌসিফ তালুকদারের মাস্টার বেডরুমে আছে ওরা সবাই। পৌষ’কে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে পাঁচ ভাই-বোন একত্রে ডেকে উঠলো,
— আপা!
হায় হায়! পৌষ কেঁদে উঠলো। যতটুকু মেলা যায় হাত মেলে ভাই-বোনদের জড়িয়ে ধরলো। সবগুলো হাসছে। এদিকে পৌষ কাঁদছে। পিহা বোনের চোখ মুছে বললো,
— আপা কেন কাঁদছো? আমরা এসেছি তো।
— কে আনলো? কখন এলি?
চৈত্র হাতের কড় গুনে বললো,
— আড়াই ঘন্টা।
জৈষ্ঠ্য বললো,
— তুমি তো ঘোড়া বেঁচে ঘুমাচ্ছিলে। নাকও টেনেছো। তোমার নাক টানার শব্দে আমাদের ভাতিজা উঠে গিয়েছে।
পৌষ তাকালো। দেখলো ছোট্ট সোনাটা টুকটুক করে দেখছে সবাইকে। পৌষ হাত বাড়িয়ে ওকে কোলে তুললো। আলগোছে বুকে জড়ালো। বাবু বাবু গন্ধটা যেন ওর মাতৃত্ব জাগিয়ে তুলে। পৌষ চোখ বুজে। টুপ করে পানি পরতেই ইনি, মিনি বলে,
— দুলাভাই তোমাকে কাঁদলে না করলো তো আপা।
পৌষ চোখ তুলে তাকালো। গলা খেঁকিয়ে বললো,
— কে এনেছে তোদের?
সবগুলোর একত্রে উত্তর,
— দুলাভাই?
— কোনটা?
— কয় বিয়ে তোমার?
আচমকা তৌসিফ প্রশ্ন করায় পৌষ চমকালো। গলায় আটকালো যেন কিছু। ঠিক ওমন ভাবে কাঁশি দিলো দুটো। ঐ দিকে যে তৌসিফ বসা তা দেখে নি ও। পৌষ ওর চোখের দিকে তাকাতেই তৌসিফ চোখে হাসলো। পৌষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে। তার বুক ভরে উঠে। দেখে রুমে হেমন্ত ঢুকছে শ্রেয়া’কে নিয়ে। পৌষ সুযোগ বুঝে আবদার ধরে,
— সবাই থেকে যাও।
মিনু খেতে ডাকা মাত্রই তৌসিফ ছোট দুই শালীকে কোলে তুলে। পৌষ’র দিকে তাকিয়ে বলে,
— মুখ ধুয়ে এসো হানি।
সবার সামনে এভাবে ডাকায় পৌষ লজ্জা পেলো। লজ্জায় তার পেটের নাড়িভুড়িতে যেন দুটো প্যাঁচ লেগে গেলো। হায়! কার নজর লাগলো। পৌষ বাথরুমে ঢুকেই বমি করে দিলো। চাপা স্বরে ডাকলো তৌসিফ’কে। তৌসিফ এসেই যেন মাথায় হাত। বেসিন ছড়িয়েও ফ্লোর মেখেছে পৌষ। কমোডের উপর বসে হাঁপাচ্ছে। তৌসিফ তারাতাড়ি ওকে ধরলো। পৌষ কেঁদে ফেলে বললো,
— আমার অনেক খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে ম’রে যাব। এখনই ম’রে যাব। শুনুন….
কথাটা বলার আগেই পৌষ টলে পড়ে। তৌসিফ চারপাশে তখন অন্ধকার দেখে। হঠাৎ কি হলো? তার সুখের ঘরে ঢুকার পথে এত কেন কাঁটাতার। কার নজর লাগে তার সুখে। কেন লাগে?
#চলবে….