#প্রেমসুধা(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৬৮
মেহেদী আজ তারাতাড়ি বাড়ী ফিরেছে। হাতে একটা দইয়ের খোড়া। বাসায় ঢুকার আগেই দরজা থেকে সোহা’কে ডাকছে। সোহা তখন শাশুড়ীর কাছে। ভদ্রমহিলা এখন বউকে যথেষ্ট আদর যত্ন করে রাখছেন। এই যে এখন সুন্দর করে মাথায় তেল লাগাচ্ছেন৷ সোহা’র আরামে চোখ বুজে আসে তখনই মেহেদী ডাকে মৃদু লেগে আসা চোখটা খুলে যায়। উঠতে নিলেই শাশুড়ী বলেন,
— তুমি বসে থাকো। খুঁজতে খুঁজতে ঠিকই চলে আসবে।
ব্যাপারটা ঘটলোও তাই। মেহেদী চলে এসেছে বউ খুঁজতে। সোহা’র সাথে মায়ের এতটা সখ্যতা দেখে তার ভালো লাগলো। বললো,
— স্টুডেন্টের রেজাল্ট হলো আজ। দই দিয়ে গেলো৷ বগুড়ার তাই তোমার জন্য নিয়ে এলাম।
সোহা’র শাশুড়ী মুচকি হাসলেন। তিনি খুব করে চাইছেন একটা নাতি হোক। এরা জামাই বউ থাকবে নিজের মতো। তিনি নাতি পালবেন। রোজ করে সোহা’কে পুষ্টি জোগাতে দুধ, ডিম খাওয়াচ্ছেন। মেহেদী’র দিকে তাকিয়ে বললেন,
— বাটি, চামচ নিয়ে আয়। এভাবে কিভাবে খাবে?
সোহা উঠতে চাইলো। ওর শাশুড়ী থামালো। ছেলেকেই পাঠালেন আনতে। মেহেদী হাসতে হাসতে চলে গেলো। পেলা, চামচ হাতে ফিরে এসে বসলো দুই পা ভাজ করে। সোহা’কে দেয়ার আগে মা’কে দিতেই ওর মা হাসলেন। বাটিটা সোহা’কে দিয়ে বললেন,
— পোয়াতি বউ রেখে মা’কে দিচ্ছিস?
মেহেদী অল্প হেসে উত্তর দিলো,
— তুমি সবসময়ই আগে মা।
ওর মা এতে খুশি হলেন। ছেলের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট। সোহা’র চুলগুলো বেঁধে দিয়ে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— রাতে রুমে আসিস তো কথা আছে।
মেহেদী মাথা নাড়ে। ও জানে অবশ্য মা কি বলবে তবুও মেহেদী চুপ রইলো। মা মিটিমিটি হাসছেন। নাতির জন্য সোনার চেইন বানাতে দিবেন তিনি। কত বছরের জমানো টাকা তার। সখ করে রেখেছেন টাকা গুলো।
সোহা’কে নিয়ে রুমে আসে মেহেদী। কপালে চুমু দিতে আলতো করে জড়িয়ে ধরে। সোহা মেহেদী’র চুল মুঠ করে ধরে। মেহেদী ওর ঘাড়ে মুখ গুজে শ্বাস টানলো। আলতো ছাড়া ছাড়া ওষ্ঠের ছোঁয়া দিয়ে পা’গল বানালো। সোহা মৃদু শ্বাস ফেলে। মেহেদী’র গলা জড়িয়ে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে কোলে তুলে মেহেদী। খুবই ছোট্ট একটা বারান্দায়। এক পাশ ঠেসে কাপড় শুকানো। সাইডের ছোট্ট চেয়ারে মেহেদী বসলো। কোলে বসালো সোহা’কে। ঘাড়ে থুতনি রেখে উষ্ণ আলিঙ্গন করতেই সোহা ফিচেল হাসি দিয়ে বললো,
— কেউ এসে যাবে।
— আসুক।
— পা’গল হলেন? মেহেদী?
— হুউ।
— কি হু? ছাড়ুন। কেউ আসলে..
— আসবে।
— মানে কি? শিক্ষক মানুষ এমন হয়?
— তাহলে কেমন হয়?
সোহা চুপ করে গেলো। আকাশে পাখিগুলো উড়ে উড়ে কোথায় যেন যাচ্ছে। হয়তো নিজ গৃহে ফিরছে তারা। সোহা চোখ বুজে ফেলে। গা এলিয়ে দেয়। তার গৃহ এটা। এই মেহেদী। সোহা মন থেকে মানে। তার সন্তানের বাবা। তাদের অস্তিত্ব। হাজার অনুভূতির মাঝেও সোহা কিছুটা তটস্থ থাকে। কারো থেকেই অতিরিক্ত আশা রাখতে নেই। সোহাও রাখে না। সে শুধু বেঁচে থাকতে চায় এই ছোট্ট সংসারে।
মেহেদী হালকা স্বরে জিজ্ঞেস করে,
— খারাপ লাগে?
— না তো।
— তুমি অনেক স্ট্রং সোহা।
— কিছুটা।
— অনেকটা।
— হয়তো।
— সোহারাণী?
সোহা চমকালো। মেহেদী ওর জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে পেট হাতালো। ভেজা কণ্ঠে বললো,
— আমি তোমাকে ভালোবাসি। ভালোবাসব। ভুল ত্রুটি গুলো মাফ করে দিও।
— ছিঃ এসব কেন বলছেন মেহেদী?
— আর বলব না।
— মনে যাতে থাকে।
— থাকবে।
— সোহা?
— জ্বি।
মেহেদী থামলো। সোহা ওর দিকে ফিরে কপালে চুমু দিলো। দুই গালে হাত রেখে বললো,
— মানুষ মাত্রই ভুল। আমি নিজেই কতশত ভুল করে যাই মেহেদী। এতটা সংকোচ রাখার কিছুই নেই। আমি ভালো আছি। আপনি আছেন। আমাকে মেনে নিয়েছেন। আমি ভালো হতে চাই। আপনি আমাকে অনেকটা ভালো রেখেছেন।
— তুমি কি ঐ বিষয়ে রেগে?
সোহা বুঝলো। সে নিজের টাকা মেহেদীকে সেধেছিল। মেহেদী নিবে না। সোহা অগত্যা সেগুলো বাবুর নামে রাখবে বলে ভেবেছে। তাদের একটা সুন্দর ভবিষ্যত হবে সোহা আশাবাদী।
সোহা উত্তর করলো,
— না। ওসব আমাদের সন্তানের।
মেহেদী ওকে জড়িয়ে ধরলো। দুই গালে হাত দিয়ে বললো,
— এভাবেই আমাকে বুঝে যেও সোহা। আমি কৃতজ্ঞ থাকব।
__________________
পৌষ’র মাথায় পানি ঢালছে শ্রেয়া। চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে ভাই-বোন গুলো। চোখ খুলেই পৌষ সবার আগে খুঁজলো তৌসিফ’কে। চোখটা খোলা মাত্রই পানি গড়ালো। ঠোঁট দুটো ফাঁকা করেই বললো,
— উনি কোথায় হেমু ভাই?
হেমন্ত ওর কপালে হাত রাখলো। অসন্তোষ গলায় বললো,
— খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করিস না কেন? এভাবে খালি পেটে বমি হচ্ছে বারবার। তুই জানিস না তোর আয়রন ডিফেশিয়েন্সি আছে? ঔষধ ঠিক মতো খাস নি?
পৌষ চুপ করে গেলো। তৌসিফ সাথে মাঝখানে এসব টুকটাক ঝামেলায় ঔষধের দিকে খেয়াল করা হয় নি। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে পুণরায় একই কথা বললো পৌষ,
— উনি কোথায়?
হঠাৎ তখন গম্ভীর কণ্ঠে তৌসিফ বললো,
— চুলগুলো তুলে ফেলুন।
শ্রেয়া পানি ঢালা বন্ধ করলো। পিহা টাওয়াল দিয়ে বোনের চুল পেঁচিয়ে দিতেই পৌষ চোখ উপরে তুলে তাকালো। তার মাথাটা তৌসিফে’র কোলে। শুকনো ঢোক গিলে পৌষ চোখ সরালো। তৌসিফে’র চোখ আজ বড়ই শান্ত। পৌষ জানে এই শান্ত ভাব তাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না। ভেতর ভেতর জ্বালিয়ে মা’রবে। পৌষ উঠতে চাইলো। তৌসিফ ওকে ধরে উঠালো। নিজের বুকের সাথে ঠেস দিয়ে আধ শোয়া করতেই পৌষ বললো,
— আমি ঠিক আছি। একটু শুধু….
কথাটা বলার আগেই চৈত্র রুমে ঢুকলো। পিছনে জৈষ্ঠ্য। ডাক্তারের সাথে তারা বাইরে গিয়েছিলো। হাতে ঔষধ। তৌসিফে’র কাছে দিয়েই বললো,
— দুলাভাই, ডাক্তার কাল বিকেলে যেতে বলেছে তখন তিনি থাকবেন।
তৌসিফ মাথা নাড়ে। ব্লা’ড স্যাম্পল ডক্টর বাসা থেকেই নিয়েছে। ডান হাত নড়াতেই ব্যথায় শব্দ করে পৌষ। শ্রেয়া হাতটা ধরে। বলে,
— নাড়াস না। র’ক্ত নিয়েছে?
পৌষ চমকে তাকালো। তার নাকি র’ক্ত নিয়েছে। পৌষ ভাবলো এখন তো চাইলেও কাঁদা যাবে না। তার ভেতরে কেমন একটা লাগছে। শরীর থেকে র’ক্ত নিয়েছে তার। গা গুলাচ্ছে কেমন। তৌসিফও চুপ তা দেখে যেন ভয়টা তার বাড়ে। এরা এখন আছে তাই পৌষ’কে কিছু বলছে না কিন্তু যখন চলে যাবে তখন? নিশ্চিত আজ পৌষ’র দুই গালে দশ আঙুলের ছাপ ফেলবে তৌসিফ। পৌষ’কে থম ধরে থাকতে দেখে শ্রেয়া ওর গালে হাত রাখলো। বুঝানোর ভঙ্গিতে বললো,
— নিজের খেয়াল রাখা শিখ পৌষ। এভাবে চললে হয় বল?
মিনু দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকলো,
— মামা?
তার হাতে খাবার। তৌসিফ ইশারায় আসতে বলে। মিনু টেবিলে রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। দেখে পৌষ’কে। পৌষ ঠোঁট উল্টে তাকালো। কি হয়েছে সবার? এত ঠান্ডা কেন? ইনি, মিনি মিনুর সাথে বাইরে গেলো। তৌসিফ হেমন্তের দিকে তাকিয়ে বললো,
— ডিনার তৈরী হেমন্ত। সবাইকে নিয়ে বসো টেবিলে। নিজের বোনের বাসা এটা তোমার। নিজের বাসা ভেবে সার্ভ করে দিন ভাবী।
শ্রেয়া’র ভালো লাগলো তৌসিফে’র কথা। তৌসিফ যদিও বললো তবুও পৌষ’কে রেখে সবাইকে নিয়ে টেবিলে বসালো। নিজ হাতে খাবার সার্ভ করতে করতে বললো,
— আজ থেকে কি খুব সমস্যা হবে? ওর ভালো লাগবে তোমরা থাকলে।
হেমন্ত অল্প হাসে। জানায়,
— বোনের বাড়ী থাকার নিয়ম নেই।
— এসব কথা তোমাদের মানায় হেমন্ত?
হেমন্ত উত্তর করে না। শুধু মুচকি হাসে। তৌসিফ রুমে আসে। দেখে পৌষ মনোযোগ দিয়ে তার হাতের ব্যান্ডেজ দেখছে। কি আবার খুঁটাখুঁটি করছে। তৌসিফে’র মন চাইলো ওকে একটা কানচাপা দিতে। বেয়াদপ একটা। একে তিনবেলা মা’ইর দেয়া গেলে সুধরে যেতো। তৌসিফ ভালো হয়েছে বলে নাহয় আজ একে দেখে নিতো। জ্বালানোর সীমা থাকা দরকার।
তৌসিফ’কে দেখে ভদ্র হলো পৌষ। মুখটা দুঃখী দুঃখী করলো যদিও তার মনে আপাতত কোন দুঃখ নেই। ভাই-বোন কাছে পেয়ে অদৃশ্য পাখা গজিয়েছে। তৌসিফ তা বুঝে। এসে খাবারের প্লেট হাতে তুলে নিতেই নাক কুঁচকালো পৌষ। ডিম দিয়ে খিচুড়ি তাও ট্যালট্যালা। হেমন্তের বাবুর পটি দেখতে ঠিক এমন। ভাবতেই বমি পেলো পৌষ’র। ওর ভাবসাব দেখে তৌসিফ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— এটাই খেতে হবে।
— বমি পাচ্ছে।
— সমস্যা নেই।
— এটার চেহারা সুন্দর না।
— তবুও খেতে হবে।
— মনে হচ্ছে বাচ্চাদের পেট খারাপের পর হওয়া টয়লেট এটা।
তৌসিফে’র পেট মুচড়ে বমি চলে এলো। এই মেয়ে ভালো হবে না। কি বলে এটা? ও কি জানে ওকে এটাই গিলাবে তৌসিফ। এতে বমি করে ভাসিয়ে দিক পৌষ। তৌসিফ থামবে না।
দাঁত চেপে তৌসিফ চাপা ধমকে বললো,
— এটাই খেতে হবে।
— সত্যি বলছি খারাপ লাগছে।
তৌসিফ মানলো না। মুখ চেপে ধরে চামচ ওর মুখে দিলো। না পরে ভয়ে গিললো পৌষ। প্রায় আধ বাটি চেপে ধরে খাওয়ালো তৌসিফ। পৌষ পানি চাইলো। গ্লাস তৌসিফ মাত্রই দিয়েছে। পানিটা মুখেও দেয়া হলো না৷ পৌষ উঠে দাঁড়ায়। তৌসিফও দাঁড়ালো। ওকে ধরবে বা কিছু বলবে তার আগেই পৌষ টলতে টলতে বাথরুমে ঢুকে যায়। তৌসিফ বাটি রেখে ওর কাছে যেতে যেতে দরজা লাগিয়ে দিলো পৌষ। তৌসিফ দরজায় টোকা দিলো। পৌষ খুললো না। জোরে পানির শব্দ আসছে। পৌষ’র প্রচন্ড চাপ দিয়ে বমি এলো। যতটুকু খেয়েছে ততটুকু বের হতেই ও থামলো। চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হতেই দেখলো তৌসিফ ঘেমে গিয়েছে। পৌষ’কে দেখেই উঁচু জায়গা থেকে ওকে বুকে টেনে নিলো। চেপে ধরলো নিজের কাছে। শক্ত করে ধরেই রাখলো। পৌষ ওর বুকের ধুকপুকানি শুনতে পাচ্ছে। ধীরে ডাকলো,
— অ্যাই মামাতো ভাই?
— হুউ…হুউ।
— কি হয়েছে? ঠিক আছি তো।
তৌসিফ ওকে ছাড়লো। কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— আজকের পর থেকে বাথরুমের দরজা লাগাবে না।
পৌষ কপাল কুঁচকে তাকালো। বললো,
— অসভ্যমার্কা কথা বাদ দিন। ছাড়ুন। বাইরে যাব।
— বমি করেছে?
— একটু।
— ঔষধ খেতে হবে। বমির জন্যও আছে।
পৌষ তৌসিফ’কে আজ আর জ্বালালো না৷ চুপচাপ ঔষধ খেলো।
ভাই-বোনদের বিদায়কালে পৌষ কাঁদলো কিছুক্ষণ। শ্রেয়া’কে জড়িয়ে ধরে যখন হুহু করে কাঁদলো তখন তৌসিফে’র কেমন একটু খারাপ লাগলো। তার পৌষরাত এভাবে কেন কাঁদলো? সে কি এখানে ভালো নেই?
আজ রাতে তৌসিফে’র বুকে বেশকিছুক্ষণ ছটফট করে পৌষ। আশ্চর্যের বিষয় আধ রাতে উঠে খেতে চায় নি। তৌসিফ অবাক হলো। এতদিনে ওর জন্য জাগতে জাগতে তৌসিফে’রই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। তৌসিফ নিজেও জানে না কেন ওর আজ রাগ হলো না। ওর মনে শুধু খারাপ লাগা কাজ করছে। খুব করে খারাপ লাগা।
_______________
সকাল থেকে মাথা ধরে বসে আছে পৌষ। আজ তার পরীক্ষা অথচ পৌষ তেমন কিছুই পারে না। কালও পড়া হয়নি। এখন শুধু গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো দেখে যাচ্ছে। রাগে চুল ছিড়তে মন চাইছে ওর। তৌসিফ রান করে ফিরে এসেছে। এক পলক দেখে পৌষ শিট দেখতে লাগলো। তৌসিফ ওর কপালে হাত দিয়ে তাপমাত্রা দেখে বাথরুমে চলে যায়। ওখান থেকেই ডাকে,
— পৌষরাত? পৌষরাত? হানি কাম ফাস্ট!
পৌষ হাতের শিট রেখে দৌড়ে এলো। দেখা গেলো তেমন কোন প্রয়োজন নেই। ফাইজলামি করছে তৌসিফ। পৌষ শুকনো গলায় বললো,
— পরীক্ষা আজ৷ কিচ্ছু পারি না আর আপনি দুষ্টামি করছেন?
তৌসিফ ভেজা টাওয়াল পৌষ’র গায়ে ছুঁড়ে দিয়ে বললো,
— সারাবছর না পড়লে এমনই হবে। এখানে এসো তো হানি।
তৌসিফে’র চোখের দুষ্টামি বুঝে পৌষ এগিয়ে গেলো না। রুমে চলে গেলো। নীরব প্রত্যাখানে অপমানিত বোধ করে তৌসিফ। দাঁত চেপে ধরে সঙ্গে সঙ্গে। ব্যাপারটা ভিন্ন দেখালো। পুরুষের ডাকে সাড়া না দিলে পুরুষের পৌরষবোধ আঘাতপ্রাপ্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। তৌসিফ বেরিয়ে এসে নিজের কাপড়ও গোছানো পেলো না। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পোশাক পরে ও। পৌষ কোর্ট পরাতেও এলো না। তৌসিফ ওকে খেতে ডাকলো। আশ্চর্য! পৌষ নিজে তো এলোই না তৌসিফ দেখলো টেবিলে তেমন কিছুই নেই। পৌষ কিছুই রাঁধে নি। বছরখানিক হচ্ছে তার অভ্যস বদলেছে পৌষ। শুধু ডিম সহ ব্রেড দেখে ওর রাগ হলো। ওখানে বসেই ডাকলো,
— পৌষরাত!
পৌষ উঠে এলো। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই তৌসিফ বললো,
— নাস্তা বানিয়েছো?
— না তো। আজ খেয়ে নিন না।
— দুপুরে?
— খালা…
— তুমি একপদ করতে? বাদ দাও। এসো খাবে।
— এখন না।
— চটখানা খাবে? খেতে এসো।
পৌষ’কে বসিয়ে নাস্তা খায়িয়ে তৌসিফ নিজে শুধু জুস খেয়ে বেরিয়ে গেলো। পৌষ আহত চোখে তাকালো। কেন এমন করলো তৌসিফ। ওর ভেতর থেকে উত্তর এলো সহসা, “বাচ্চার জন্য”। নিশ্চিত বাচ্চার জন্য তৌসিফ এমন করছে। পৌষ’র ভেতর চুরমার হয়ে এলো। চোখ মুছে নিজে তৈরী হলো। ড্রাইভার তাকে আজ নামিয়ে দিবে। তৌসিফ যাচ্ছে সাভার। তার মিটিং আছে কোন একটা। দুপুরেই চলে আসবে। এতদূর গেলো অথচ খালিপেট। পৌষ’র ভেতর কেমন যে লাগলো ও প্রকাশ করতে ব্যার্থ। আজ যেন মনে হলো পৌষ ব্যার্থ স্ত্রী হিসেবে। একদমই ব্যার্থ।
.
পরীক্ষা শেষ হতেই পৌষ সোজা বাড়ী ফিরলো। তার পরীক্ষা ভালো হয় নি। হয়তো পাশ মার্ক চলে আসবে কিন্তু এ-র বেশি না। এসেই রান্না চড়ালো। মাংস কষিয়ে বুয়াকে বললো ভাত করতে। ঘন ডাল রেঁধে বুয়াকে বললো,
— এগুলো বক্সে ভরে দিন খালা। আমি গোসল করে আসছি।
ক্লান্ত শরীরে পৌষ গোসল সেরে নামাজ পড়লো। তার শরীর আজ খারাপ লাগছে। বোরকা পরে ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে বেরিয়ে পরলো। এই প্রথম সে তৌসিফে’র অফিসে যাচ্ছে। ঠিকানা সে জানে না৷ ড্রাইভারকে বলতেই সে নিয়ে যাচ্ছে। অল্পস্বল্প ভয়ও পাচ্ছে পৌষ৷ না জানি তৌসিফ না আবার রেগে যায়।
বহুতলা ভবনের সামনে গাড়ি থামতেই পৌষ নামলো। ভেতরে ঢুকতেই চোখ যেন চড়কগাছ। এত বিশাল বহুল অফিস সে দেখে নি৷ মেয়েগুলো দেখে তার মাথা দুই চক্কর দিলো। এত সুন্দর সুন্দর মেয়েদের ভীরে তার জামাই টিকে আছে কিভাবে৷ হায় হায়! পৌষ’র বুকে চাপ লাগে। কেমন যেন লাগে। জিজ্ঞেস করে ও তৌসিফে’র রুমে যেতে চাইলেই নাক খাড়া ওয়ালা এক মেয়ে থামালো তাকে। বললো,
— অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া নট এলাউড ম্যাম।
পৌষ এক ভ্রু উঁচু করে বললো,
— আবার বলুন।
মেয়েটা বলতেই পৌষ বাঁকা হাসলো৷ বললো,
— একশত বার যাব৷
বলেই হাঁটা দিলো। মেয়েটা ভয়ে ওর পিছনে পিছনে আসলেও পৌষ থামলো না৷ দরজা ঠেলে ঢুকবে তখনই মেয়েটা ওর হাত ধরে। পৌষ খেঁকিয়ে উঠে। মেয়েটা এবার রেগে বললো,
— গার্ড ডাকব কিন্তু ম্যাম।
পৌষ ততক্ষণে দরজা খুলেছে। তৌসিফ ওকে দেখে নি। মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— হোয়াট হ্যাপেন্ড?
মেয়েটা ভীত হয়ে উত্তর করে,
— স্যার একজন মহিলা জোর করে ঢুকতে চাইছে।
পৌষ’র রাগে শরীর দপদপ করে উঠে। পৌষ নাকি মহিলা? মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
— তুই মহিলা। তোর চৌদ্দ গুষ্টি মহিলা।
তৌসিফ হঠাৎ কণ্ঠে চমকালো। তার থেকেও বেশি চমকে তাকালো পৌষ। দাঁত চেপে এগিয়ে আসতে আসতে ধমকে উঠলো,
— অ্যাই মেয়ে অ্যাই, সরে দাঁড়াও। এভাবে ঘেঁষে বসে কি দেখাচ্ছো আমার জামাই’কে?
#চলবে….