প্রেমস্পৃহা পর্ব-০২

0
28

#প্রেমস্পৃহা❤️‍🔥
#পর্ব_০২
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

আযরান কোমড়ের শাড়িটা টান মারতেই রোজের কোমড় উম্মুক্ত হয়ে শাড়ির একাংশ এল আযরান হাতে। রোজ বিস্ময় নিয়ে চাইল। দুই পা পিঁছিয়ে দ্রুত শুধাল,

“ শাড়ি আমি পরতে পারি আযরান ভাই। আপনাকে পরাতে হবে না। ”

আযরান হাসে।সাদা শাড়িটা একফাঁকে বিছানায় রেখে তাকায় রোজের বিস্মিত মুখটার দিকে। এক আধবার চোখ রোজের ধবধবব ফর্সা কোমড়ের একাংশেও। আযরান শুকনো ঢোক গিলে।কোমড় গুঁজে থাকা শাড়ির বাকি অংশটা রোজ চেপে ধরেছে ততক্ষনে। আযরানের দৃষ্টি লক্ষ করে উম্মুক্ত কোমড়টাও ঢাকার চেষ্টা চালাল প্রাণপনে। স্পষ্ট স্বরে বলল,

“ বললাম তো, রাজি আমি। ছাড়ুন শাড়ি। আযরান! শাড়ি ছাড়ুন এক্ষুনি! ”

আযরান ছাড়ল না। ওভাবেই শাড়িতে টান দিয়ে রোজকে আঁকড়ে ধরল। অতঃপর মুখ নামাল। রোজের কানের কাছে ফিসফিস স্বরে বলল,

“ কি করলি রোজ? আমাকে তো পাপী বানিয়ে দিলি! বিয়ের আগেই তোর কোমড় পেট সব দেখিয়ে দিলি? ছিঃ! এখন আমি বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করব এই অস্থিরতা নিয়ে? ”

রোজ খু্বই সূক্ষ্ম চাহনিতে তাকায় এবারে। দাঁতে দাঁতে পিষে সে আযরানের দিকে তাকায়।অতঃপর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আযরানকে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে বলল,

“ আমি বিয়েটা করব কেবলই আপনার জীবনটা তছনছ করার জন্য আযরান খান। আপনার সঙ্গে রোমান্স করার জন্য নয়।আপনি শুধু দেখবেন আপনার জীবনটার কি হাল করব আমি! ”

রোজ আযরানকে ঠেলে সরাতে চাইলেও আযরানের শক্তির কাছে পেরে উঠল না। আযরান ওভাবেই খুব কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। এই পর্যায়ে ফের দাঁত কেলিয়ে হাসল আযরান। রোজের কানের লতিতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে ফিসফিস গলায় বলল,

“ অলরেডি হাল বেহাল করে দিচ্ছিস জান! তবে আমি খুবই ডেস্ফারেট তুই আমার কি হাল করিস তা দেখার জন্য।সাথে তোকেও দেখার জন্য।ডেস্ফারেটলি ওয়েটিং ফর ইউ জান! ”

রোজ শক্ত চাহনিতে তাকায়। আযরানের এসব কথায় একটুও না গলে শক্ত স্বরে শুধাল,

“ বাইরে যান। শাড়ি পরব আমি। ”

আযরান সরল ঠিক। তবে বাইরে গেল না। বলল,

“ বোকা নাকি? তোকে এখানে ফেলে বাইরে যাই, আর তুই পালিয়ে যাবি।”

রোজ এবারে ও শান্তভাবে উত্তর দিল,

“ পালাব না। ”

“ বিশ্বাস নেই। ”

রোজ ছোটশ্বাস ফেলে এবারে। বলল,

“ ওকে ফাইন, ওদিক ফিরুন। আমি এখানেই কাপড় পড়ছি। ”

আযরান রাজি হলো। মুহুর্তেই অন্যদিক ঘুরল। রোজ ততক্ষনে ছোটশ্বাস ফেলে। বিয়ের ভারী শাড়িটা পিন সমেত খুলতে খুলতে কিছুটা সময় লাগল। অতঃপর পেছন ঘুরে বিছানায় রাখা সাদা শাড়িটা হাতে তুলতেই তার সাথে উঠে এল আরেকটা বস্তুও! যেটা আযরানই নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে আসার পর নিজের ড্রেসের সাথে বিছানায় রেখেছিল। রোজ ভ্রু কুঁচকাল। দুই আঙ্গুলে তুলে ধরে মুখ কুঁচকে নিল সে। মুহুর্তেই ফেলে দিল ফ্লোরের এককোণে। দ্রুত বলল,

“ ছিঃহহ! আপনি আমার কাপড়ের সাথে কি রেখেছেন আযরান? আপনার ঐ…. ”

আযরান ফিরতে নিল। বলে উঠল দ্রুত,

“ কি রেখেছি? আয়শান ভাই তো শুধু কাপড়ই কিনেছে, আর কিছু তো কেনার কথাই নয়। তুই এমন ছিঃহহহ করছিস যেন….”

কথাটা বলতে বলতেই আযরানের চোখে পড়ে ফ্লোরে পড়ে থাকা পোশাকটা। ভ্রু কুঁচকাল। পরমুহুর্তেই পা দিয়ে ঠেলে একমুহুর্তেই তা পাঠাল আলমারির কোনাটায়। ফের সোজা হয়ে অন্য পাশে ফিরে বলল,

“ ওটা? ওটা তো আমার! আয়শান ভাই কিনেছে যদিও। কিন্তু তুই ওসব ছেলেদের জিনিসে হাত কেন দিয়েছিস?”

রোজ বড্ড বিরক্ত হয়ে বলল,

“ ওসব আপনি আমার হাতের কাছেই কেন রাখবেন? ছিহ!আমি ধরে ফেলেছি আযরান ভাই। ছিহ!”

আযরান হেসে উঠে। হাসি থামিয়ে পরমুহুর্তেই বলল,

“ আন্ডারওয়্যারই ধরেছিস জান।এমন করছিস যেন আন্ডারওয়্যার ছাড়াও তুই সত্যি সত্যিই আমার কিছু ধরে ফেলেছিস কিনা…”

রোজ নাক মুখ কুঁচকাল। কান উষ্ণ ঠেকল কেমন। ফর্সা ধবধবে গাল দুটোও উষ্ণ উষ্ণ অনুভব হলো। বলল,

“ ছিহ আযরান ভাই! ”

আযরাস হাসি চেপে বলে,

“খারাপ কি বললাম? ”

“ চুপ করুন, তৈরি হতে দিন আমায়। ”

আযরান মেনে নিল। বলল,

“ ওকে, চুপ আমি! ”

আযরান চুপ হয়ে গেল ঠিক তবে রোজ নিশ্চিন্ত নয়। বারবারই শাড়ি পরার মধ্যে সে আযরানের দিকে নজর দিচ্ছিল কেবল। ফিরে তাকায় যদি? রোজ বহু কষ্টেই আগের পরে থাকা ব্লাউজ আর পেটিকোটটার উপরই সাদা শাড়িটা পরল। কুঁচি গুলো ঠিক করল। অতঃপর বলল,

“ শেষ শাড়ি পরা! ”

রোজের বলতে দেরি হলো, কিন্তু আযরানের ফিরে তাকাতে দেরি হলো না। ঘুরে তাকাল সে দ্রুতই। রোজকে সাদা শাড়িটায় দেখে সে হাসল। যেন এক শুভ্র পরী! রোজ এমনিতেই সাদা ধবধবে, তার উপর সাদা শাড়িটা কি সুন্দর মানিয়েছে। আযরানের বুকের ভেতর কেমন যেন এক শিহরন বয়ে যায় মুহুর্তেই! ফুরফুরে একটা অনুভূতি! নতুন প্রেমে পড়ার মতো সুখ! আযরান তাকায়। কয়েকমুহুর্ত তাকিয়ে থেকে ফের খাটের উপর থাকা প্যাকেট গুলো থেকে একটা চকমকে সাদা বিয়ের ওড়না বের করল! সাদার মধ্যে চারপাশে লাল রাঙ্গা বর্ডার। আযরান তা মেলে ধরল। তা রোজের মাথাতে মেলে দিয়ে দুইহাতে রোজের মুখটা আগলে নিল সে। আবেশী স্বরে বলে,

“ মাই হোয়াইট রোজ? এবার তাড়াতাড়ি করে লক্ষী মেয়ের মতো কবুল বলে আমার হয়ে যা কেবল।ছায়ানীড় তোর অপেক্ষায় জান! ”

.

বাড়ির সামনেই সুন্দর নেইমপ্লেটটায় নাম লেখা আছে “ছায়ানীড়”!সেই নেইমপ্লেইট পার হয়েই গেইট দিয়ে প্রবেশ করল দু দুটো গাড়ি। মুহুর্তেই মধ্যে সেই গাড়িগুলো থেকে হম্বিতম্বি করে নেমে পড়ল কতগুলো মানুষ।অতঃপর দ্রুত এগিয়ে গেল খান বাড়িতে। ভেতরে গিয়েই সবচেয়ে তেজি, মধ্যবয়স্ক মানুষটাই হৈ রৈ করে ডেকে উঠল,

“ আজহার! আজহার খান! বের হ তাড়াতাড়ি। আমার মেয়েকে কোথায় রেখেছিস হ্যাঁ? ”

পুরুষটির কবির সাহেব। রোজের বাবা! আর কবির সাহেবের চিৎকারগুলো নেহাৎই আস্তে ছিল না। পুরো ছায়ানীড়েই যেন পৌঁছাল। মুহুর্তের মধ্যেই সবাই বেরিয়ে এল। আজহার খান পুরোনো বন্ধুকে এতদিন পর নিজ বাড়িতে দেখে ভ্রু কুুঁচকে এগিয়ে এসে বলল,

“ কবির? তুই? এতকাল পর?তুই তোর ভুলটা বুঝতে পেরেছিস বল কবির?”

কবির সাহেব তেঁতে উঠলেন। জানালেন,

“ আমি কোন ভুল করিনি আজহার! তোদের বাড়ির ছেলে আমার মেয়েকে তুলে এনেছে, এখন নিশ্চয় বলবি না যে তুই জানিস না বিষয়টা। আমি জানি, তুই জানিস। খুব ভালোভাবেই জানিস আজহার। বল, আমার মেয়ে কোথায়?”

আজহার খান বিস্ময় নিয়েই তাকাল। বললেন,

“ কিন্তু, আমি সত্যিই জানি না।কাকে তুলে এনেছে?কে?আয়শান? নাকি আযরান?আয়জান হওয়ার সম্ভাবনা তো নেই ”

কবির সাহেব দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

“ আমার রোজকে তুলে এনেছে আজহার। আমার বড় মেয়েকে তো তোরা ঘরে তুলিসনি।ঘরে তুললি কোথাকার কোন তোদের ঐ পালিত মেয়েকে। আমার মেয়ের ভালোবাসাটা তোরা গুরুত্বই দিলি না সেদিন। আর এখন? এখন আমার ছোট মেয়েকে নিয়ে টানাটানি করছিস? সুখে থাকতে দিচ্ছিস কই আমাকে? কি করেছি আমি তোদের? কি এত শত্রুতা? ”

আজহার সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। উপস্থিত সবাইকে ঘরে যেতে বলে উনি কবির সাহেবকে বসতে বললেন। একটা সমাধাণ তো করা যায় কবিরকে বুঝিয়ে। এভাবে শুধুশুধু একটা শত্রুতা বয়ে কি লাভ হচ্ছে তাদের দুইজনের? বিজন্যাসে ক্ষতি হচ্ছে, সামাজিকভাবেও বহু ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে দুই বন্ধুকেই। ছেলেমেয়ে গুলোর ও ক্ষতি! দুইবন্ধুর এক বন্ধুও এতকাল নিজের সম্পর্ক ঠিক করার চেষ্টা করে নি।তবে আজ যখন কবির সাহেব এসেছেনই তখন চেষ্টা করাই যায়। বন্ধুর সাথে সমঝোতায় আসায় যায়। আজহার খান আর কবির সাহেব বসলেন। কয়েক মিনিটের কথাবার্তা চলল। অতঃপর আজহার সাহেব বুঝলেন তার বন্ধুটি মানবার নয়।মেয়েদের ভালোবাসে পাগলের মতো, আর সেই মেয়েদের প্রত্যাখান মানতে না পেরেই তো এতো শত্রুতা! আজহার সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। ঠিক তখনই ট্রে হাতে নিয়ে এগিয়ে এল তুলি। এ বাড়ির বড় বউ! আয়শান খানের বউ! তুলি এগিয়ে আসতেই কবির ততক্ষনে রেগে উঠে যাচ্ছিল। মাঝখানে তুলি এসে প্রথমে চায়ের কাপ তুলে ধরল কবির সাহেবের দিকে। হেসে বলল,

” আঙ্কেল, চা। ”

কবির সাহেব নিলেন না। বরং দাঁত মুখ কুঁচকে নিয়ে বড় অবহেলা নিয়ে বলল,

“ এই না তোর ছেলের সেই পছন্দের মেয়ে? যার জন্য আমার মেয়েকে তোরা রিজেক্ট করেছিলি? আমার মেয়েকে! আমার মেয়ের নখেরও তো যোগ্য না এই মেয়ে! ”

তুলি শুনল। একটু আগেও যখন বলল তখনও তুলি নিশ্চুপে শুনে মেনে নিয়েছিল।এবারেও মেনে নিল।সে জানে, সে সত্যিই যোগ্য না। রোজের বড়বোনের সমান সমান সে কখনোই ছিল না, আর না তো আয়শানের যোগ্য বউ! কিন্ত এই যে অযোগ্য তকমাটা তাকে আজীবন বয়ে নিতে হবে এটা কি আয়শান একবারও ভেবেছিল বিয়ের আগে? তুলি ছোটশ্বাস ফেলে।চোখ টলমল করল একমুহুর্তেই। শুকনো ঢোক গিলে কান্না দমানোর চেষ্টা চালাতেই আজহার বলে উঠল ততক্ষনে শক্ত স্বরে,

“ কবির! ও আমার মেয়ে, আমার ছেলের বউ ও! ওকে এভাবে বলার অধিকার আমি তোকে দেইনি। ”

কবির সাহেব হাসলেন যেন। তাচ্ছিল্যের হাসি। উঠে দাঁড়িয়ে শাসিয়ে বলে গেলেন,

“ রাখ তোর অধিকার! আমার মেয়েকে তুলে আনার জন্য আমি তোদের বাড়ির ছেলেকে কিভাবে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাব কেবল দেখবি আজহার। কিচ্ছু করতে পারবি না তোরা! ”

এটুকু বলেই কবির সাহেব হন্তদন্ত করে বেরিয়ে গেলেন৷ সাথে বেরিয়ে গেল তার সাথে আসা তার ছেলে, ভাইগুলোও ।

.

রোজ সাদা শুভ্র শাড়িটায় বউ সেঁজে বসে আছে।ঘোমটা টানা মুখে। কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেছে আরো আগেই। এখন রোজের কবুল বলার পালা। অথচ মিনিট পাঁচ পার হওয়ার পরও রোজ কবুল বলছে না। চুপ করেই আছে। আযরান কেবল নিজের ধৈর্য্যের সীমা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল। অপেক্ষা করছিল। অবশেষে ধৈর্য্য হারিয়ে রোজের দিকে গেল। রোজের কানে ফিসফিস করেএ দৃঢ় স্বরে বলল,

“ কবুল বল রোজ। আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিস না। ”

রোজ তবুও চুপ। আযরান ফের বলল,

“ রোজ? আমি কিন্তু অতি ভালো পুরুষদের মতো ধৈর্য্য ধরে বসে থাকতে পারব না তোর কবুল বলার জন্য।। ”

রোজ ঘোমটা থেকে মুখ তুলল। আযরানের দিকে চেয়ে বলল,

“ আপনাকে বলেছি আমি ধৈর্য্য ধরতে? ”

আযরান ভ্রু নাচিয়ে শুধাল,

“ তো কি বলছিস? ধৈর্য না ধরে এখনই বউ নিয়ে বাসর ঘরে দৌড় দিব? ”

রোজ বিরক্ত! অতি বিরক্তে কপাল কুঁচকাল সে। কাজী সাহেবের দিকে চেয়ে দ্রুত বলল,

“ কাজী সাহেব? এই ছেলে এভাবে ফিসফিস করে গেলে কিন্তু আমি কবুল বলব না। দূরে সরতে বলুন এনাকে। ”

কাজী সাহেব এবারে নিরীহ চোখে আযরানের দিকে চাইল। ততক্ষনে কথাটা শুনে আয়শান, আবরার সহ বাকি দুই চার জন যারা ছিল সবাই হেসে ফেলেছে। আয়শান হাসি চেপে ভাইকে বলল,

“ দূরে সর আযরান।”

আযরান সরল। সরতে সরতে রোজের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

”আস্ত বেয়াদব তুই! ”

অতঃপর আযরান সরতেই রোজ কবুল বলল। একবার, দুইবার তিনবার! রোজের কবুল বলার পরমুহুর্তেই কবুওল বলতে সময় নিল না আযরান! দ্রুত বলল সে। যেন এই বিয়ের জন্য তার সমুদ্রসমান তাড়া!

#চলবে…..