#প্রেমহিল্লোল||০৬||
#তাসনীম_তামান্না
তুষার সকালে শীতল বাতাসে গার্ডেনে দোলনায় বসে আছে। ওর সকালে উঠে এককাপ কফি না খেলে হয় না। সকলে রাত করে ঘুমালেও বড়রা ঘুম থেকে উঠে গিয়ে কাজে হাত লাগিয়েছে। তুতুল ভাইয়ের জন্য কফি আনলো। তুষার সেটা নিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল
–মুখটা পেঁচার মতো করে রেখেছিস কেনো?
–ভাইয়া তুমি কুয়াশার সাথে কথা বলবে না।
তুষার কফিতে চুমুক দিয়ে বলল
–কেনো? তোর ননদ কমপ্লেইন করছে না-কি?
–নাহ তেমন নয়। কালকে তোমাদের মধ্যে কী হয়েছে জানি না। তবে আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে সে তোমাদের ঐ অবস্থায় দেখলে আই মিন তোদেরকে অতো কাছাকাছি দেখলে যে কেউ খারাপ ভাবতো। ঝামেলা হতো। আর আমি সেটা চাই না ভাইয়া। মা তো বলেছে ভালে মেয়ে খুঁজে এনে দিবে তুমি কুয়াশাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।
তুষার কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল
–হুম!
তুতুল কথা ঘুরিয়ে বলল
–তোমার ছুটি কতদিনের ভাইয়া?
–মাসক্ষানিক। কেনো?
–ভাবছি এই ছুটিতেই তোমার বিয়ে দেওয়া যায় কিনা! আমার ফ্রেন্ডসার্কেলের মধ্যে কয়েকজন অবিবাহিত আছে তুমি চাইলে
–সাটআপ! যা নিজের কাজে যা। আমার বিয়ের জন্য পাত্রী আমি খুঁজে নিবো। তোদেরকে এতো প্রেশার নিতে হবে না।
–তুমিও খুঁজো আমরাও খুঁজি। তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ এটা বলো তো!
–তোর ননদের মতো!
তুতুলের হাসি-হাসি বদনখানি মূহুর্তে মলিন হয়ে গেলো। তুষার সেটা দেখে মলিন হেসে বলল
–এখন আমি বিয়ে করবো না। বিয়ের মোড নাই। বিয়ে মানেই প্যারা। তাই এখন ওসব বাদ। বিয়ে বাড়িতে বিয়ে খেতে এসেছি এনজয় করতে দে। কী বিয়ে বিয়ে লাগিয়ে রেখেছিস। যা তোর কাজ কর।
তুতুল কিছুসময় নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল। কেউ কারোর সাথে কথা বলল না হয়তো ওরা মন বুঝতে চেষ্টা করছে। ওর ডাক পড়ায় আর দাঁড়ালো না চলে গেলো।
পুরো দমে হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। বাচ্চাকাচ্চা, কাজিনরা, ছোট-বড় সবাই নাচ-গান তুলছে। সারাদিনে তুষার কুয়াশা কেউ কাউকে দেখে নি মুখোমুখি হয় নি। সন্ধ্যায় সকলে ড্রেস কোড মিলিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলো। আজকের অনুষ্ঠান রিদের পরিবারের লোকজন এসেছে। রিদ মেঘাকে ফোন করে বাসার পিছনে যেতে বলেছে সবার প্রথমে সে তার বউকে হলুদ দিবে কিন্তু মেঘা যেতে নারাজ কেউ দেখলে লজ্জায় পড়তে হবে। রিদ বলল ও চলে আসবে মেঘা উল্টো রাগ দেখিয়ে ফোন কেটে দিলো এ-ও বলল আজ আসলে ও বিয়ে ক্যান্সাল করে দিবে। মেঘাকে রাজি করাতে না পেরে রিদ কুয়াশাকে ফোন দিয়ে ব্যাপারটা বলল। কুয়াশা মজা নিয়ে বলল ব্যবস্থা করছি। মেঘা সেজেগুজে সুন্দর করে বসে আছে একটু পরে অনুষ্ঠান শুরু হবে। কুয়াশা ওর পাশে বসে ফিসফিস করে বলল
–কী ঢং করতেছিস? ভাইয়া আর কতক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে? ভাইয়াকে কেউ দেখে ফেললে তখন লজ্জায় পড়তে হবে না?
–এই লোকটাই বা এমন পাগলামো করছে কেনো? চলে যেতে বল।
–তুই চল আমার সাথে কাজ আছে
–দেখ কুশু
–দেখাদেখি পরে আগে চল
কুয়াশা মেঘাকে টেনে নিয়ে গেলো। বাসার পিছনে লাইটিং কম কিন্তু সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মেঘা গিয়ে রিদের ওপরে ওপরে রাগ ঝাড়লো।
–কী সমস্যা কালকেই তো ও বাড়িতে যাবো।
–কিন্তু আজকের দিনটা তো আর ফিরে পাবো না। বিয়ে একবারই করব সব কিছু স্পেশাল হওয়া চাই।
কথাটা বলে রিদ মেঘার ফুলোফুলো দুকপোলে হলুদের আস্তরণ লাগিয়ে দিলো। মেঘা লজ্জায় টইটম্বুর হয়ে গেলো। কুয়াশা দূরে দাঁড়িয়ে একবার ওদের দিকে দেখছে একবার আশপাশে দেখছে। এমন সময় ভরাট কন্ঠে পরিচিত কেউ বলল
–এখানে একা দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
কুয়াশা চমকে পাশ পিছনে ফিরে তুষারকে দেখে আমতা আমতা করে বলল
–এমনিতেই আপনি এখানে? ওদিকটা যান সবাই ওদিকে।
তুষার শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–সেটা আমিও জানি। এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো তোমার বয়ফ্রেন্ড আসবে?
ও কটমট চোখে তাকিয়ে বলল
–হ্যাঁ আসবে আপনার কোনো সমস্যা!
তুষার চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকালো। দূরে মেঘা আর রিদকে দেখে বলল
–অন্যর প্রেম করা দেখছো? নিজের তো প্রেম করার সাহস নেই।
–দেখেন আমাকে রাগাবেন না। প্রেম করি কী করি না আপনি জানেন? হয়তো আমি প্রেম করি কিন্তু কেউ জানেনা।
তুষার মজা পেয়ে হেসে বলল
–ওয়াও নাইস জোক্স অফ দ্যা ইয়ার।
কুয়াশা বেজায় বিরক্ত হলো বলল
–আপনি যান তো। সবসময় এমন আমার পিছনে পড়ে থাকেন কেনো? ভাবি আপনাকে বলেনি আমার থেকে দূরে থাকতে?
–আমি দূরে থাকলে তুমি খুশি হবে?
–হ্যাঁ হবো। আপনাকে আমার পছন্দ না। একটুও ভালো লাগে না।
কুয়াশার স্পষ্ট কথা বলায় তুষারে মন বিষাদে ভরে উঠলো।
–অপছন্দ করার কারণ?
–অপছন্দ করার অনেক কারণ আছে তারমধ্যে সর্বপ্রথম আপনার ব্যবহার। অনেক রুডলি বিহেভ করেন, অনেক রাগ, অনেক সন্দেহ করেন আমার এগুলো পছন্দ না। আর প্রতিটা সম্পর্কে এগুলো থাকা উচিৎ নয় তাহলে সে সম্পর্ক সুন্দর হয় না।
তুষার চুপ করে রইল। কুয়াশা ভুল কিছু বলছে সকলের সাথে ও গম্ভীর হয়ে, শান্ত হয়ে কথা বললেও কুয়াশার সাথে সেই প্রথম থেকে ধমকে, রুডলি বিহেভিয়ার করে আসছে। তুষারের সম্পর্কে ওর এমন ধারণা করাটাই স্বাভাবিক। ওকে চুপ থাকতে দেখে কুয়াশা বিরক্তি নিয়ে বলল
–হয়েছে শুনেছেন? এবার আর আমাকে বিরক্ত করবেন না।
তুষার কোনো কথা রিয়াক্ট ছাড়ায় ধীর পায়ে প্রস্থান করলো। কুয়াশা বোকার মতো তাকিয়ে রইল। ও ভেবেছিলো এখনি বাঘের মতো গর্জন করে বলবে ‘তোমার পছন্দ- অপছন্দ ভালোলাগা- মন্দলাগায় আমার কোনো কিছুর যায় আসে না।’ কিন্তু ওকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে চুপচাপ চলে গেলো। কুয়াশার এটা ভালো লাগলো না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশকুসুম ভাবতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর মেঘাকে নিয়ে এসে বসিয়ে দিলো সকলে জিজ্ঞেসা করছে কোথায় ছিলো ওরা সুন্দর করে মিথ্যা সাজিয়ে বলেছে। কেউ আর মাথা ঘামায় নি। অনুষ্ঠানে নাচ-গানে ব্যস্ত সবাই। কুয়াশা একপাশে বসে ছিলো ইন্টারে পড়া দূরসম্পর্কের ফুফাতো বোন এসে কিছুক্ষণ উসখুস করছে কিছু বলবে। কুয়াশা বুঝতে পেরে বলল
–কিছু বলবি?
মেয়েটি আঙুল দ্বারা নির্দেশ করে বলল
–হ্যাঁ ঐ যে সাদা পাঞ্জাবি করা ছেলেটা কে?
কুয়াশা দেখলো ওটা তুষার ফোন টিপছে। চোখ ফিরিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল
–ভাবির ভাই। কেনো কিছু করেছে না-কি? অসভ্যতামি করেছে?
–আরে না না। ওনি অনেক ভালো কোনো মেয়ের দিকে সেভাবে তাকাতে দেখলাম না। ওনাকে খুব ভালো লেগেছে। তুমি কী জানো ওনার গার্লফ্রেন্ড আছে কি-না?
কুয়াশা থতমতে মুখে বলল
–ওসব আমি জানি না।
–তোমার কাছে ওনার ফোন নম্বর আছে? থাকলে দাও। আমিই সব শুনে সেট করে ফেলবো।
কুয়াশা রেগে বলল
–ওসব কিছু নাই। ঐ ছেলের সম্পর্কে আমার কাছে কিছু শুনবি না। ওটাকে আমার সহ্য হয় না। আর তুই ওর সাথে প্রেম করবি।
–করলে সমস্যা কোথায়? তোমার ওনাকে পছন্দ নয়। কিন্তু আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। ইনফ্যাক্ট ভালোবেসে ফেলেছি।
কুয়াশা বজ্রপাতের ন্যায় তাকিয়ে রইল পিচ্চি মেয়ে বলে কী?
–কীহ? এসব কী বলছিস? ওনি বয়সে কত বড় জানিস?
–ভালোবাসায় ওসব কিছু ম্যাটার করে না। তুমি টেনশন করো না আমি ভাবির কাছ থেকে নম্বর নিয়ে নিবো।
কথাগুলো বলে খুশিখুশি মনে চলে গেলো। কুয়াশার কেমন অস্থিরতা শুরু হলো। বার বার তুষারের দিকে চোখ যাচ্ছে কিন্তু তার হুঁশ জ্ঞান নেই সব কিছু ফোনের মধ্যে দিয়ে রেখেছে। তার এমন অস্থিরতার কারণ ও খুঁজে পেলো না। কেনো এমন হচ্ছে?
চলবে ইনশাআল্লাহ