প্রেমহিল্লোল পর্ব-১৩+১৪

0
19

#প্রেমহিল্লোল||১৩||
#তাসনীম_তামান্না

(🚫এলার্ট: দুর্বল হৃদয়ের ব্যাক্তিরা এড়িয়ে যাবেন)

রাত গভীরতা কাটিয়ে নিত্য দিনের আগমন। হসপিটালের করিডোরে চৌধুরী বাড়ির লোকজন নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিয়েছে। সকাল হতে না হতে হসপিটালের আয়ারা ফিনাইল, ডিটারজেন্ট দিয়ে হসপিটালের পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কুশ, শান বাচ্চা দুটো ওয়েটিংরুমের চেয়ারে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। কাঁদতে কাঁদতে সকলের চোখমুখের বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। তুষার আর রিদ সকলের জন্য ওয়ান্ট টাইমের কাপে করে চা, বিস্কুট এনেছে। কেউ খেতে চাই নি। সকলেকে জোর করে দিয়েছে।

মেঘ মা, বড়মা, পাখি, কুশ, শান, তিশা, তুতুলকে জোর করে বাড়িতে নিয়ে গেলো। মেঘা, কুয়াশাকে কিছুতেই নিয়ে যেতে পারলো না। দুবোনে পাশাপাশি দুজনের ওপরে হেলিয়ে বসে আছে। কুশান, রিদ, তুষার ছোটাছুটি করছে। তুষার খেয়াল করলো কুয়াশা একা বসে আছে এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসে নিরবতা ভেঙে বলল “কুয়াশা!”

ও নিষ্প্রাণ চোখে তাকালো। তুষারের বুকটা হুহু করে উঠলো। ও জানে বাবা মেয়ে কতটা ভালোবাসে মেয়েকে কাছ ছাড়া করবে না বলে তাদের বিয়েটাতে না করে দিয়েছে। সেই বাবার এমন অবস্থা কোন মেয়ে সহ্য করতে পারে।

–আই থিংক, তুমি, মেঘা বাসায় চলে যাও তোমাদের রেস্টের প্রয়োজন। এভাবে বসে থেকে কী করবে নিজেদেরকে শক্ত করো তোমরা ভেঙে পড়লে আন্টিদের কে সামলাবে? তাদের হাসবেন্ড এমন অবস্থা তারা নিজেদেরকে সামলাতে পারছে না তোমরাই তাদের ভরসার স্থান। এভাবে চলবে বলো। সবাই একসাথে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন কে কাকে দেখবে?

কুয়াশা মলিন চোখমুখে টাইলসের ফ্লোরে স্থির ছিল। ওর সম্পূর্ণ কথায় শুনেছে বুঝেছে। কিন্তু বাবা, ছোটবাবার এই অবস্থায় ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। মন বলছে এখান থেকে চলে গেলে ওর বাবা ওকে ডাকবে। কুশান এগিয়ে এসে বলল “তুষার ঠিকি বলছে তোরা বাসায় চলে যা। রেস্ট নিয়ে আসিস তাছাড়া বাবা, ছোটবাবার জ্ঞান ফিরলেই আমি তোদের জানাবো।”

কুয়াশার ভাঙাচোরা মন আবার ভেঙে কান্না আসে। চোখ ছাপিয়ে গলগলিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। কুশান বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল “কাঁদছিস কেনো বাবুইপাখি? আমরা সবাই আছি বাবাও সুস্থ হয়ে যাবে দেখিস। এভাবে কাঁদলে তো কোনো সমাধান হবে না। বাবা তার প্রিন্সেসের কান্না সহ্য করতে পারে না কিন্তু তুই কেঁদেছিস জানলে কষ্ট পাবে।”

–বাবা, বাবা সুস্থ হয়ে যাবে তো ভাইয়া? আমাদের বাবা, ছোটবাবার সাথে এমন কেনো হলো? কেনো ওরা এতো কষ্ট পাচ্ছে?

সব কেনোর উত্তর থাকে না। এই কেনোর উত্তর ও কুশানের কাছে নেই সে নিশ্চুপ। কুশান কুয়াশা, মেঘাকে রিদের সাথে জোর করে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। মেঘার বিয়ের একমাস হতে যাচ্ছে। সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে শুরু করে ছিলো সবে পথিমধ্যে প্রিয় বাবা, বড়বাবার এমন ধাক্কা কিছুতেই সামলে উঠতে পারছে না। বাসার সকলের একই অবস্থা কান্নাকাটির রোল পড়ে গেছে কে কাকে দেখবে। কীভাবে সান্ত্বনা দিবে কারোর জানা নেই।

প্রতিদিনের মতো অফিস শেষে কৌশল ও মনির বাড়ি ফিরছিলো। তাদের নিজস্ব ব্যবসা দুই ভাই সামলালেও ছেলেরা তাদের নিজেদের মতো প্যাশন চুজ করে নিয়েছে তাদের প্রতি কোনো জোরজবরদস্তি করে নি। তাও বাবা,চাচার কথা রাখতে তারা মাঝেমধ্যে অফিসে গিয়ে বসে। তাদের কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলো। রাস্তার মধ্যে গাড়ি ব্রেকফেল করে কিছুতেই গাড়ি কন্ট্রোল করতে পারছিলো না ড্রাইভার। একটা জায়গায় গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে গাড়ি বি*স্ফো*রণ ঘটে। ড্রাইভার জায়গায় স্পট ডেথ হয়ে যায়। আশেপাশের মানুষের আগুন নিভিয়ে ওদেরকে হসপিটালে ভর্তি করে। কৌশল, মনিরের গায়ের অধিকাংশ পুড়ে গেছে কাঁ-চের সাথে মাথায় বাড়ি খেয়ে কাঁ-চ মাথাতে গেঁ-থে গেছে। মনিরের চোখের মধ্যে কাঁচ ঢুকে গেছে। তাদের এমন বিভোর্স এক্সিডেন্টে মুহুর্তে নিউজ হয়েছে। অনেকে হা-হুতাশ করছে। আত্মীয় স্বজনরা বার বার ফোন দিচ্ছে। রিপোর্টেরা ছুটে এসে পরিবারের মনের অবস্থা জানতে চাইছে। ওরা পুরোটা এড়িয়ে চলছে। নিজেদের মনের অবস্থা তো মুখে বলে সবটা প্রকাশ করা যায় না। তারাও বুঝবে না। যার যায় সেই বুঝে।

কৌশলের জ্ঞান ফিরছে। নার্স এসে জানালো তিনি বাসার লোকজনের কথা বলতে চান। কুশান আর তুষার ছিল উপস্থিত। বাবার জ্ঞান ফিরছে শুনে কুশানের চোখ জোড়া চকচক করে উঠলো। ওরা দুজনেই কেবিনে ডুকলো। শুভ্র নির্মল রঙের ব্যান্ডেজ সারা অঙ্গ জুড়ে দেওয়া। দেখামাত্র বুকটা হাহাকার করে উঠলো। কুশান বাবার পাশে বসে হাত ধরে বলল “বাবা ঠিক আছো তুমি? খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে? আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে যাবে।”

কৌশল হাসার চেষ্টা করে অস্পষ্ট স্বরে বলল “সবাই কই? তোর মা, আমার মেয়ে, দাদুভাইয়েরা। মনির কেমন আছে? ওর কিছু হয় নি তো? আর ইকবাল ড্রাইভার ও?”

কুশান ঠোঁট চেপে কান্না আঁটকে বলল “সবাই সব ঠিক আছে। তুমি সুস্থ হয়ে যাও। ওদেরকে একটু আগে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।”

–ভালো করেছিস।

–তুমি সুস্থ হয়ে যাও, বাবা। এভাবে তোমাকে মানাচ্ছে না।

কৌশলের চোখের কোণ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। শারীরিকভাবে কষ্টে আছে। মেয়ের জন্য টেনশন হচ্ছে। তিনি বুঝতে পারছে তার সময় ফুরিয়ে আসছে। তিনি ভাঙা গলায় বলল
–শোন আব্বা, তোর মা, বোন সহ সকলকে দেখে রাখিস। বোনকে বিয়ে দিস রাজের সম্পর্কে আরো খোঁজখবর নিস। আমার বোধহয় আর হবে না।

–এসব কী বলছ বাবা? এসব অলক্ষুণে কথা বলো না। তুমি দেখো সুস্থ হয়ে যাবে।

এতোক্ষণ পর তুষার মুখ খুললো বলল
–আংকেল এভাবে মনোবল হারাবেন না। আপনার প্রিয়জন, পরিবারের সকলে আপনার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। আর আপনি এভাবে ভেঙে পড়লে হবে?

কৌশল তাকিয়ে রইল। কিঞ্চিৎ চুপ করে থেকে বলল “বিয়ে করতে চাও কুশুকে আমার মেয়েকে?”

তুষার থমকায়, অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। কুশান বলল “বাবা সব হবে আগে তুমি সুস্থ হয়ে যাও। তারপর কুয়াশার ধুমধামে বিয়ে দিবো। তুমি ছাড়া কী ও বিয়েতে আনন্দ করতে পারবে? তারজন্য তোমার সুস্থ হতে হবে।”

নার্স এসে জানালো “ওনাকে আর বেশি কথা বলাবেন না। রেস্ট করতে দিন। মাথার আঘাতটা গুরুতর এতো কথা বলা ওনার জন্য ঠিক না।”

ওরা আরো কিছুক্ষণ থেকে বের হয়ে আসলো। মনিরের জ্ঞান ফিরে নি। বাসায় এখন জ্ঞান ফেরার খবর শুনলে হুড়োহুড়ি করে চলে আসবে তাই সিদ্ধান্ত নিলো আরো সুস্থ হোক মনিরের জ্ঞান ফিরলে জানাবে।

আশায় আশায় সময় কাটলে লাগলো মনে বল পাচ্ছে সুস্থ হয়ে যাবে ওরা। হঠাৎ করে ডক্টর, নার্সদের ছোটাছুটি শুরু হলো কিছু না বুঝে অবুঝের মতো তাকিয়ে রইলো ওরা। জানালো মনিরের মৃত্যুর খবর। মাথা ও চোখ বাজে ভাবে আঘাত পেয়েছে তার ওপরে শরীরে পোড়ার ক্ষত এতো শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করতে পারি নি। কুশান দিশেহারা অবস্থা। তার কিছুক্ষণের মধ্যে খবর পেলো। কৌশল অতিরিক্ত চিন্তার কারণে মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে স্টোক করেছে। পুরো দুনিয়া দুলে উঠলো। একটু আগেই তো কথা বলছিলো। ভরসা পেয়েছিল ওরা সুস্থ হয়ে যাবে তাহলে এসব কী থেকে কী হয়ে গেলো? এমন কথা সে কীভাবে সবাইকে জানাবে?

চলবে ইনশাআল্লাহ

#প্রেমহিল্লোল||১৪||
#তাসনীম_তামান্না

প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী জন্মালে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর মৃত মানুষ বা প্রাণী কখনো ফিরে আসে না। এটাই সত্য! চৌধুরী বাড়ির দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকাভিভূত হয়ে আছে। তাদের মৃত্যুর খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বাসায় আত্মীয় স্বজনরা এসেছে তাদের দু’ভাইকে শেষবার দেখার জন্য।

দুই ভাইয়ের মৃত্যুে পরিবারের লোকজনের কেউ ঠিক নেই। তাদের একটা একটা চিৎকার, হাহাকার, বিলাপই বলে দিচ্ছে কষ্টের পরিমাণ। কেয়া আর মুন্নী স্বামীদের মৃত্যুতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডক্টর এসে দুজনকেই ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে।

পাখি আর তুতুলের বিয়ের পর কখনো তারা বুঝতে পারি নি। এটা তাদের শশুরবাড়ি! শশুড় শাশুড়িদের ব্যবহারে সর্বদা তাদেরকে নিজেদের বাবা-মায়ের ছাপ দেখেছে। সেই বাবার সমতুল্য শশুড়দের মৃত্যু তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না অন্যদেরকে কী সামলাবে নিজেদের সামলাতে পারছে না। কুশ, শান এতো ছোট সবার কান্না দেখে তারাও কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে গেছে। কুয়াশা, মেঘা বাবাদের পাশে বসেছে আর উঠছে না পাগলের মতো বিলাপ করে যাচ্ছে। মেঘা আর কুয়াশাকে সরাতে গেলে ওরা সরছে না। কুশান এসে বলল…

–এটা কোনো ধরনের পাগলামী? বাবা, ছোটআব্বুকে নিয়ে যেতে হবে।

–না না বাবাকে নিয়ে যেতে দিবো না। মাটির ভিতরে বাবার কষ্ট হবে। আমি কোথাও নিয়ে যেতে দিবো না।

কুশানের চোখ জোড়া রক্তিম হয়ে আছে। মেঘ কেঁদেই ফেলেছে। কুশান দুইবোনকে টেনে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। অন্যরা খাটিয়া তুলে নিলো। ওরা ভাইয়ের বুকে পড়ে কাঁদতে লাগলো। পাশ থেকে কেউ বলল ‘আহারে! ছেলেমেয়েগুলো এতিম হয়ে গেলো।’

ওদের চারজনের কানেই কথাটা গিয়েছে সাথে সাথে বুকটা ধক করে উঠলো। মেঘা অসহায় মুখে তাকিয়ে বলল “আমরা এতিম হয়ে গেছি? বাবা নেই! বাবা আমাদেরকে একা ফেলে এমন নিষ্ঠুর হয়ে চলে গেলো? বাবা এমন কেনো করলো? বাবা কী একটুও কষ্ট হলো না?”

এতিম তিন অক্ষরের ছোট শব্দ হলেও এটার ওজন এতো ভারী! এতো কষ্টের কেনো! দুজনের মৃত্যুতে হাসিখুশি পরিবার মুষড়ে পড়েছে। কারোর কোনো দিকে খেয়াল নেই। কারোর সান্ত্বনা দেওয়া মতো কোনো শব্দ নেই।

দুই ভাইয়ের মাটি হয়ে যাওয়ার পর আত্মীয় স্বজনরা বেশির ভাগ চলে গেছে। কাছের গুটিকয়েক জন মানুষ জন আছে। তারা ওদেরকে সামলাচ্ছে।

কুয়াশা ফ্লোরে বসে সোফাতে মাথ এলিয়ে বসে ছিলো। ওর আশেপাশে কেউ ছিলো না। রাজ সোফাতে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “তোমাকে কাঁদলেও হ-ট লাগে।”

কুয়াশা ভয়ে ছিটকে দূরে সরে গেলো। রাজ হেসে বলল “ভয় পাচ্ছো কেনো? আফটার অল তোমার ফিউচার হাসবেন্ড বলে কথা। কেঁদো না বাবা-মা তো আর চিরকাল থাকবে না তাদেরকে মরতেই হবে। এতো এতো কান্নাকাটি করার কী আছে। কান্নাকাটি গুলো তুলে রাখো আমাদের ফাস্ট নাইটের জন্য!”

কুয়াশার মানসিক অবস্থা ভালো না তার মধ্যে এই ফালতু লোকের ফালতু আজেবাজে কথা শুনে কান-মাথা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। রেগে বলল “ছিহ! জঘন্য লোক। আপনার বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসা না থাাকতে পারে আমার আছে। আর কে বলল আপনার মতো এমন একজনের সাথে আমি বিয়ে করবো। মরে গেলেও না। তাই এসব ফ্যান্টাসি থেকে বের হয়ে নিজের কোয়ালিটির একজনকে বিয়ে করুন কথায় আছে রতনে রতন চিনে।”

কান্না করায় গলা ভেঙে গেছে কথা বলতে গিয়ে গলা ব্যথার তিব্রতা অনুভব করলো। রাজ হেসে বলল “তোমার বাবার শেষ ইচ্ছে ছিলো মেয়েকে বিয়ে দিবে। তা-ও কার সাথে আমার সাথে ভুলে গেলে হবে কীভাবে? তুমি না তোমার বাবাকে ভালোবাসো! তার শেষ ইচ্ছে পূরণ করবে না? কেমন মেয়ে তুমি?”

রাজের কথাগুলো তো সত্যি ওর সাথে কুয়াশার বিয়ে ঠিক করে গেছে সে তো তার মতামত বাবাকে জানাতে পারি নি। বাবা নিশ্চয়ই খুশি হয়েছিলো। বাবার ইচ্ছে! শেষ ইচ্ছে! কুয়াশার সব কিছু এলোমেলো লাগলো। রাজ ওর মাথার মধ্যে কথাটা ঢোকাতে পেরেছে বুঝতে পেরে হেসে বলল “তো কবে বিয়েটা করছো? আমার তো তড় সইছে না।”

কুয়াশার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগলো। এ কেমন মানুষের সাথে বাবার শেষ ইচ্ছে জুড়ে আছে। কী করবে সে? এমন জঘন্য লোকের সাথে বিয়ে করে সংসার করতে হবে ভেবে গা গুলিয়ে আসছে। ওদের দু’জনকে কথা বলতে দেখে তুষার এগিয়ে আসল। তুষার ভদ্রতার সাথে বলল “মি. রাজ আপনি খেয়েছেন?”

রাজ হেসে বলল “মরা বাড়িতে কেউ খাবার জন্য আসে না তুষার। তবে এতো ফর্মালিটির দরকার নেই। আফটার অল এ বাড়ির জামাই হতে যাচ্ছি।”

তুষার কুয়াশার দিকে তাকালো ওর চোখ দিয়ে এখনো অনর্গল অশ্রু ধারা বয়ছে। তুষারের হুট করে মনে হলো কুয়াশাকে ও হারিয়ে ফেলবে। কুয়াশা তো বলেছিলো রাজকে বিয়ে করবে না তাহলে রাজ এতো কনফিডেন্সের সাথে কীভবে বলছে এ বাড়ির জামাই হবে। তবে কী সত্যিই এই মায়াবী, শান্ত, ঝাঁঝ ওয়ালীকে হারিয়ে ফেলবে। ভাবতে বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তুষার হেসে ওদের স্পেস দিয়ে চলে গেলো। রাজও তার কিছুক্ষণ পরে চলে গেলো।

——

কেয়ার ঘুম ভাঙতে থম মে’রে বসে আছে। তাকে দেখে অনুভূতি শূন্য মূর্তি মনে হচ্ছে। মুন্নী ঘুম ভাঙতে পাগলামো করলো কেনো তাকে ঘুমিয়ে রেখে কেনো ওদেরকে নিয়ে গেলো। পাগলামোতে আবার জ্ঞান হারালো। ছেলেমেয়েরা বাবাদের হারিয়ে শোকাভিভূত হয়ে আছে মায়েদের এমন অবস্থায় ওরা দিশেহারা হয়ে গেলো। তুতুলের মা ও পাখির মা সবাইকে জোর করে একটু খাইয়ে দিলো এভাবে তো জীবন চলবে না। ঘুম নেই, খাওয়া নেই ছেলেমেয়েদের চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে কেঁদে নিজেদের অভিযোগ, অভিমান জানান দিচ্ছে। কুশান যদি-ও নিজে শক্ত রেখে সবাইকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। মেঘ নিজেকে সামলাতে চেয়েও পারছে না।

রাত গভীর সকলে যে যার রুমে কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। আবার কারোর চোখে ঘুম নেই। কুয়াশার ঘুম আসছে না। এলবাম বের করে বাবার ছবি দেখছে আর নিজের অভিমান জানান দিচ্ছে। সেই ছোট থেকে বাবা, ছোট চাচাকে দেখেছে বন্ধুর মতো কোনো সমস্যা হলেই মাকে বলার আগে বাবাকে বলতো বাবা ম্যাজিশিয়নের মতো সবটা ঠিক করে দিতো। কুয়াশার অস্থিরতা লাগছে। ও এলবাম বুকে চেপে মায়ের রুমে গেলো রুমটা অন্ধকার ও ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো। মায়ের পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল “তুমি কষ্ট পেও না আম্মু। আমি তোমার লক্ষীসোনা মেয়ে হয়ে থাকবো। আব্বুর জন্য কষ্ট পেও না। আব্বু তোমাকে কষ্ট পেতে দেখলে কষ্ট পাবে তো!”

কুয়াশা কেয়ার কপালে চুমু খেলো। কুয়াশা দেখলো ওর মায়ের শরীর কেমন ঠান্ডা হয়ে আছে।

–আম্মু তোমার কী শীত করছে?

কুয়াশা কিছুক্ষণ থম মেরে থাকলো। কেয়ার ঘুম এতো গাঢ় নয়। ঘুমের ঔষধও দেওয়া হয় নি। পালস, নিঃশ্বাসের গতি চেক করলো। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলল “আম্মুহ! এই আম্মু! এভাবে চলে যেও না। আমার যে কেউ নেই!”

চলবে ইনশাআল্লাহ