প্রেমহিল্লোল পর্ব-২৭+২৮

0
20

#প্রেমহিল্লোল||২৭||
#তাসনীম_তামান্না

সকালের তপ্ত রোদ উড়ন্ত পর্দা ভেদ করে বারে বারে তুষারের চোখমুখের এসে আছড়ে পড়ছে। গরমে ওর ঘুম ভেঙে গেলো। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে দেখলো কুয়াশা এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে সিঁন্দুর রাঙা লাল শাড়ি ফাঁকে একটুকরো মেঘের খন্ড উঁকি দিলো। নিষিদ্ধ জায়গায় চোখ যেতে ও কেমন বেসামাল হতে গিয়েও নিজে সামলে নিলো দ্রুত চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়ে কুয়াশার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল “তুমি আমার সর্বনাশ করে দিলে, কুশু।”

ও এগিয়ে গিয়ে কুয়াশার ললাটে ওষ্ঠ চেপে ধরে বলল “মর্নিং কিস হানি! তবে সেটা স্পেশাল হওয়া উচিৎ ছিলো এভাবে লুকিয়ে চুড়িয়ে চোরের মতো নিজেই বউকে আদর করতে হয়। কী ভাগ্য দেখছ আমার।”

তুষার দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে পর্দা টেনে দিলো যাতে কুয়াশাকে রোদ ছুঁতে না পারে। সেই স্বামী হয়ে এখনো বউকে চুরি করে স্পর্শ করে আর রোদ ব্যাটা নাকি অনায়াসে ছুঁয়ে দিবে ওর হিংসা হবে না? ফ্রেশ হয়ে এসে মায়ের উদ্দেশ্যে গেলো।

তিশা বেগম রুমে এসেছিল কিছু কাজে ছেলেকে দরজা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল “ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? ভিতরে আয়!”

তুষার ভনিতা না করে সোজাসাপটা কথায় চলে গেলো বলল “মা, রিমা এ বাসায় কী করছে? ও এখানে কেনো? আমি তো ফুপিদের আমার বিয়ের বিষয়ে কোনো নিউজ জানাতে বারণ করেছিলাম তাও কেনো জানালে?”

তিশা বেগম অসহায় মুখে বলল “আমি তো বলি নি। কীভাবে জানলো তা-ও জানি না।”

–মা, তুমি জানো না কুয়াশার মেন্টাল হেল্থ সম্পর্কে? কাল রাতে ওসব ঘটার পর ও আরো আজব বিহেভ করছে, আমাকে ভুল বুঝছে। আমি জানি না কীভাবে সামলাব। কিছু বুঝতে পারছি না।

কথাগুলো বলতে বলতে ও ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। তিশা বেগম ছেলের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল “দেখ আমরা তো ওকে বের করে দিতে পারি না। তাছাড়া আজকে তোদের রিসিপশন, কোনো সিনক্রিয়েট করিস না। একটু অপেক্ষা কর মেয়েটা তো আর সারাজীবন এখানে থাকবে না।”

–এই টুকু সময়ের মধ্যে আমার আর কুয়াশার সম্পর্কে ইফেক্ট পড়ে গেছে মা। আমি এতোটা ধৈর্য্যশীল কখনো নই। শুধু কুয়াশার জন্য… তুমি জানো মা… আমার কেমন অসহায় লাগছে। কালকে তোমরা ওকে আঁটকে রাখতে পারলে না?

–রাতে সবাই খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তুতুল দরজা খুলতে ও কোনো দিকে না তাকিয়ে তোর রুমে ছুটলো আমরা ওকে আটকানোর সময়টুকু পেলাম না।

তুষার সব শুনে চুপ করে রইল কী-ই বা বলবে? ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল “তুই টেনশন করিস না কুয়াশাকে বোঝাব আমি। চল খেয়ে নিবি মেয়েটাকেও খাওয়াবি। রিসিপশনে এতো কাজ চল চল”

মা ছেলেকে একপ্রকার ঠেলে ডাইনিং রুমে নিয়ে আসলেন। অন্যরা সকালের চা নাস্তা করছে আর গল্প করছে। রিমা একপাশে চুপচাপ বসে ছিলো কাল সারারাত না ঘুমিয়ে যে কেঁদেছে সেটা তাকে দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে। তুষারকে নিচে আসতে দেখে ওর চোখ-মুখ চকচক করে উঠলো। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। উঠে দাঁড়িয়ে তুষারের দিকে এগিয়ে গেলো সেটা দেখে তুষার সেটা দেখে শক্ত কণ্ঠে বলল “ওখানে দাঁড়িয়ে থাক একদম কাছে ঘেঁষবি না।”

তিশা বেগম ছেলেকে দেখে নিয়ে বলল “দেখো রিমা, কোনো অশান্তি করো না। ওদের বিয়ে হয়ে গেছে কোনো মেয়ে তার স্বামীর আশেপাশে কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। এমনিতেই কুয়াশার ওপর দিয়ে কম ঝড় ঝামেলা বয়ছে না মেয়েটাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও।”

রিমা ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল “আমার কী দোষ মামি? আমি তো শুধু ভালোবেসে ছিলাম। তোমার ছেলে সেটার দাম দিলো না। আমি তোমার ছেলের আমার ভালোবাসা বোঝার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ও লুকিয়ে বিয়ে করে নিলো? ওর থেকে আমি কম কিসে? কী এমন আছে ওর মধ্যে যা আমার নাই।”

–তোকে বলবো কেনো? কে তুই? এমন স্পেশাল কেউ নোস যে জবাবদিহিতা করতে হবে। মা নাস্তা দাও। আমার আর কুয়াশারটা একসাথে দিও।

–কেনো? তোমার বউ কী ল্যাংড়া? হাঁটতে পারে না? কেমন বউ বিয়ে করেছো?

কুয়াশা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসছিলো। এমন সময় রিমার কথা শুনে সিঁড়িতেই দাড়িয়ে পড়লো।

–সেটা তোকে না ভাবলেও চলবে। দরকার পড়লে আমার বউকে কোলে নিয়ে ঘুরবো নো প্রবলেম!

রিমা রাগে ফুঁসে উঠলো। ওর কথা শুনে কাজিনগুলো মিটমিট করে হাসতে লাগলো। কুয়াশা একটু লজ্জা পেলো এভাবে কেউ বলে না-কি! ছিহ ছিহ! সবাই কী ভাবলো? ওকে কেউ দেখার আগে ও তাড়াহুড়া করে রুমের দিকে ছুটলো। ততক্ষণে তিশা বেগম খাবারগুলো সার্ভ করে দিয়েছে।
– অনেক বেলা হয়ে গেছে ব্রেকফাস্ট করে নে। নাস্তা আর করতে হবে না। ঔষধ গুলো মনে করে খাওয়াস।

–হুম, আমাদের গেস্ট রিমাকেও ভালো করে খাওয়াও। ও ফুপি তার মেয়ের এমন অবস্থা দেখলে বলবে। মামা বাড়িতে এসে তার মেয়েটাকে আমরা না খাইয়ে মে–রে ফেলতে চাইছি।

রিমা একটু খুশি হয়ে গেলো বলল “তুমি আমাকে নিয়ে এতো ভাবো? আমি জানি তুমি আমাকে মনে মনে ঠিকই ভালোবাসো।”

–জি হ্যাঁ আমি তোকে বোনের মতো ভালোবাসি। ভাই হিসাবে আমার দায়িত্ব বোনকে ভালোবাসা। তার ভালোমন্দের খেয়াল রাখা।

রিমা রাগে ফুঁসতে লাগলো অন্যরা শব্দ করে হাসলো। ফিসফাস করে রিমাকে নিয়ে কথা বলতে লাগলো। ওর সহ্য হলো না রুমে চলে গেলো। একা একা কতক্ষণ কাঁদল ভালোবাসা হারানোর কষ্টে মানুষ ভয়ংকর হয়ে যায়। রিমার মাথায় সেই ভয়ংকর ভয়ংকর পরিকল্পনা ঘুরপাক খেতে লাগলো। কী করবে ও নিজেও জানে না।

—————-

তুষার খাবার নিয়ে রুমে এসে দেখলো কুয়াশা পরিপাটি হয়ে বিছানায় বসে আছে। কালকের শাড়ি পাল্টে সবুজ রঙের থ্রি পিস পরেছে। বিছানাটাও গোছানো। ভেজা চুল থেকে টুপটাপ ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝরে বিছানা ভিজে যাচ্ছে। ওর দিন দুনিয়ার খেয়াল নেই আপমমনে কী যেনো ভেবে চলেছে। তুষার গলা ঝাড়া দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলো সফলও হলো। ও ফাজলামো করে বলল “আমাদের মধ্যে তো কিছুই হয় নি তা-ও এতো সকাল সকাল সাওয়ার নিয়েছ কেনো? মানুষের মাইন্ডে পজিটিভ ভাইব দেওয়ার জন্য?”

কুয়াশা লজ্জা পেলেও কঠোর চোখে তাকিয়ে বলল “আপনার এক্স এসে যা করলো তারপর সবাই জানে আপনার আর আমার মধ্যে কিছু হওয়ার কথা না।”

ওর কথায় তুষার থতমত খেয়ে গেলো। ভেবেছিলো ও লজ্জা পাবে কিন্তু উল্টো নির্লজ্জ মার্কা কথা বলে ওকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দিলো। নিজেকে ঢাকতে কথার ঘোরানোর জন্য বলল “খেয়ে না-ও। তারপর তোমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।”

বলে ওর মুখোমুখি বিছানায় বসলো। কুয়াশা ওর দিকে একমনে তাকিয়ে রইল। তুষার নিজ মনে পরোটা টুকরো করে ডিম ভাজা দিয়ে ওর মুখের সামনে ধরতে ও মুখ
–আম্মুকে ডেকে দিন। আমি আপনার হাতে খাবো না।

–কেনো আমার হাতে কী সমস্যা?

–আপনার প্রেমিকাকে যে হাত দিয়ে খাইয়েছেন সে হাত দিয়ে আমি খাবো? কখনো না।

–কুয়াশা আমাকে রাগিও না। ওর সাথে কাজিনে বাইরে কোনো সম্পর্ক নেই তবুও কেনো বার বার থার্ড টপিক তুলছ? এসব আলতুফালতু বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাড়াচ্ছি।

–ভালো হয়েছে নিজের প্রেমিকার কাছে যান। ঠক, প্রতারক আমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছে।

তুষার ভয়ানক রেগে গিয়ে ধমকে বলল “কুয়াশা!”

কুয়াশাও ভয় পেয়ে ভেজা বেড়ালের ন্যায় চুপসে গিয়ে তুষার হাত থেকে পরোটার টুকরো মুখে পুরে নিলো। তুষার কিছু বলল না কুয়াশাকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#প্রেমহিল্লোল||২৮||
#তাসনীম_তামান্না

রিসিপশনে আত্মীয় স্বজনরা এসে পড়েছে। পার্লারের মেয়েরা এসে কুয়াশাকে সাজিয়ে দিয়েছে। বাসার লোকজন কাজের জন্য দম ফেলতে পারছে না। বিয়ের অনুষ্ঠান ছোটখাটো করে করলেও রিসিপশন বেশ বড় করেই হচ্ছে। বিয়েতে সাদা কাপল ড্রেস পড়লেও রিসিপশনে বউ লাল টুকটুকে রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে আর বর কালো পাঞ্জাবি পড়েছে। কুয়াশার সাজানো শেষ হতে মেয়েরা হাসাহাসি করতে করতে বলল “আজকে তো তুষার ভাইয়া তো চোখই ফেরাতে পারবে না।”

কুয়াশা লজ্জা-টজ্জা কিছু পেলো না গম্ভীর মুখে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। ওরাও সে-সব খেয়াল করলো না। তুতুল বুঝতে পেরে বলল “কী হয়েছে কুশু এ্যানি প্রবলেম?”

ও ফুঁসে উঠে বলল
–ও বাড়ি থেকে এখনো কেউ এলো না। আমাকে কেউ ভালোবাসে না।

–এসে পড়বে এতো টেনশন করো না।

–তুমি একদম চুপ থাকো। তুমিও আজ ওদের সাথে চলে যাবে। আমাকে ভুলে যাবে আমি সব জানি। সবাই আমাকে পর করে দিচ্ছে। সব বুঝতে পারছি আমি।

–কচু বুঝো তুমি। দাঁড়াও ভাইয়াকে ডাকি একসাথে এন্ট্রি নিবে।

কুয়াশা বেজার মুখে বসে রইলো ইতিমধ্যে রুম ফাঁকা হয়ে গেছে। তুতুল ডেকে তুষারকে ব্যাপারটা বলে নিজেও গেস্টদের সাথে সাথে দেখা করতে গেলো। তুষার রুমে ডুকে বধূ সাঁজে দেখে থমকে গেলো। মুগ্ধতা এসে ভড় করলো। ওর এমন দৃষ্টি দেখে কুয়াশার বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। ও ধীরে ধীরে কুয়াশার মুখোমুখি গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ললাটে ওষ্ঠ জোড়া ছুঁয়ে দিলো। কুয়াশা উঁইচুঁইয়ের সুযোগ পেলো না কয়েক সেকেন্ড পর কী হয়েছে বুঝতে পেরে আখিঁজোড়া বৃহৎ গোল গোল করে পল্লব ঝাপটালো। লজ্জা পেতে গিয়েও রিমার কথা মনে পড়তেই তেঁতে উঠে বলল “ঐ ঠোঁট দিয়ে রিমাকেও চু-মু খেয়েছিলেন তাই না? ঐ ঠোঁট কেটে দিবো।”

তুষারের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো ধমকে বলল “শাট আপ! কতবার বলছি থার্ডক্লাশ টপিক তুলবে না। তাও নড়েচড়ে ও-ই টপিক ই তুলতে হবে?”

কুয়াশা মুখ ভেংচি কেটে বলল
–আপনি করতে পারবেন আর আমি বললেই দোষ?

–তুমি খুব জানো আমি ওকে চু-মু খেয়েছি? ওয়েল! ফাইন! ভেরি গুড! দেন, এই ঠোঁট দিয়ে তো তোমাকেও ছুঁয়েছি। তাই তোমার ফেসের চামড়াগুলো কেঁটে দিও। তুমি না পাড়লে আমাকে বলো আমি কেটে দিবো। ডিজগাস্টিং মেয়ে মানুষ। বুঝে কম চিল্লায় বেশি।

তুষারের কথা শুনে ও বিস্ময়ে হা করে তাকিয়ে রইল। ওর শেষের কথা শুনে চেঁচিয়ে বলল “মেয়ে মানুষ এতোই যখন ডিজগাস্টিং তাহলে পোলাা দেখে বিয়ে করতেন। আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো?”

–কুশু, আজকে বিশেষ দিনে মুডটা খারাপ করো না। ঝগড়া করার মুড নাই। চলো, আমাদের জন্য সকলে অপেক্ষা করে আছে।

তুষার হাত বাড়িয়ে দিলো কুয়াশা মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। তুষার নিয়েই ওর হাতের কব্জি ধরে টেনে দাঁড় করালো। বের হলো স্টেজের উদ্দেশ্যে সিঁড়ির কাছে আসতেই কুয়াশা নিজেই এক হাতে তুষারের বাহু জড়িয়ে ধরল। আরেক হাতে লেহেঙ্গা ওদেরকে নিচে নামতে দেখে সকলে সেদিকে তাকালো কুয়াশা চোখ ঘুরিয়ে চারিদিকে দেখলো রাজকীয় ভাইব পাচ্ছে। ঠিক যেমন রাজকন্যা-রাজকুমারের বিয়ে হয়। ও বাসার সবাইকে দেখে ওর মন খুশিতে নেচে-গেয়ে উঠলো।

তুষারকে এমন আস্তে-ধীরে হাঁটতে দেখে কুয়াশা বিরক্ত হয়ে বলল “আজকে কী আপনাকে কেউ খেতে দেয় নাই? পায়ে কী লুলা হয়েছে? জোরে হাঁটুন।”

ও দাঁতে দাঁত চেপে বলল “আমাদের এন্ট্রি ভিডিওশুট হচ্ছে।”

–এটা আবার শুট করার কী আছে? এটা কী ফ্লিম চলছে? নিজেকে কী নায়ক ভাবছেন?

–ভাবাভাবির কী আছে? আমি নায়কই!

–ঢঙ দেখলে গা জ্বলে যায়। চুলগুলো উঠিয়ে দিলে সব নায়ক ভাব বেড়িয়ে যাবে।

তুষার উত্তর করলো না নিচে চলে আসলো। সকলে একে একে ওদের সাথে কথা বলতে আসছে। কুয়াশা ভাই-ভাবীদের কাছে যেতে পারছে না। ও রাগে চোখ-মুখ দাঁতে দাঁত চেপে সকলের সাথে কথা বলছে তুষার বুঝতে পেরে ওকে নিয়ে ওর পরিবারের কাছে নিয়ে গেলো। গিয়েই কুশানকে জড়িয়ে ধরলে বলল “ভাইয়া তোমরা আমাকে ভুলে গেছো? আমাকে একটুও ভালোবাসো না।”

মেঘ ওর মাথা চাটি মেরে বলল “ঠিক ঠিক তোর মতো গাধীকে কে ভালোবাসবে? তুই বাড়িতে নেই বলে বাড়িতে শান্তি ফিরে এসেছে।”

কুয়াশা রেগে তাকিয়ে রইল। মেঘা একটা ফাইল তুষারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল “এই নেন ভাইয়া এটাতে সব কিছু আছে। তাও আপনি একবার চেক করে নিবেন।”

কুয়াশা রাগ উড়ে কৌতূহল হানা দিলো দমাতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো “কীসের কাগজপত্র এ-সব?”

মেঘ হেসে বলল “তোর ভাগের সব সম্পত্তি। তোকে আর তোর জামাইকে সব বুঝিয়ে দিলাম। আজকের পর আর কোনো ঝামেলা নিবো না। যার বিষয় সে বুঝে নিবে।”

মেঘের কথা শুনে কুয়াশা এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না কেঁদে। বউকে কাঁদতে দেখে সকলের দৃষ্টি ওর ওপরে এসে পড়লো। কোলাহল থেমে গুনগুন শব্দ শোনা গেলো। কুশান ধমকে বলল “মেঘ কী হচ্ছে কী এ-সব? কুশু তুই কাঁদছিস কেনো? বোকা মেয়ে জানিস না মেঘ মজা করছে। ওগুলো তোর সার্টিফিকেট সহ আরো ইম্পরটেন্স কাগজপত্র হাদার মতো শুধু কাদতে জানে”

পাখি আর মেঘা এসে ওকে বোঝালো ওর কান্না কমে এলে তেড়ে মেঘকে মারতে গেলে কুশান ওকে ধমকে বলল “যা স্টেজে গিয়ে বস। সবাই অপেক্ষা করছে।”

কুয়াশা মুখ ফুলিয়ে কুশ আর শানের হাত ধরে ওদের ও সাথে করে স্টেজে চলে গেলো মেঘা বলল “এমন পেঁচার মতো মুখ করে আছিস কেনো? হাস! একটু হেসে কথা বল আত্মীয় স্বজনরা কী ভাববে বলতো!”

–যা ইচ্ছে ভাবুক আই ডোন্ট কেয়ার।

মেঘা হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল ওর সাথে। তুষার একবার ওকে দেখে কিছু বলল না। একে একে সকলে এসে নতুন বর-বউয়ের সাথে কথা বলছে অভিনন্দন সহ উপহার দিচ্ছে। কুয়াশাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে সকলের সাথে হাসিমাখা মুখে কথা বলছে।

———–

রিমা দূরে দাঁড়িয়ে পুরোটাই দেখেছে দৃষ্টি ওদের ওপর থেকে সরছে না। তুষারকে কী মিষ্টি লাগছে। কুয়াশার জায়গায় তার থাকার কথা ছিলো কিন্তু এই মেয়েটা এসে সব নষ্ট করে দিলো। ওর হাত দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো কাল রাতে বিষয়টা খেয়াল করে নি কৌতুহলে ও একটা কাজিনকে ডেকে বলল “কুয়াশার হাতে কী হয়েছে?”

মেয়েটা রিমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য বিয়ের দিনের ঘটনাটা রসিয়ে রসিয়ে বলল। রিমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো বলল “বাহ, ইন্টারেস্টিং! খুব প্রেম দেখছি তবে এই রাজটা কে? দেখতে হচ্ছে তো! প্রেমিকা বিয়ে ভাঙতে গিয়ে কী সে এখনো জেলের ভাত খাচ্ছে?”

মেয়েটি সহজ-সরলভাবে নিজের মতো গড়গড়িয়ে বললে গেলো
–আরে না কী বলো! ভাবী তো ওই ব্যাডার প্রেমিকা নয় বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। ব্যাডার পাওয়ার আছে এতোক্ষণে জেল থেকে বেরও হয়ে গেছে, হ্যান্সামও আছে কিন্তু চরিত্রের ঠিক নাই।

রিমা ভ্রু কুঁচকে মনোযোগ শ্রোতার মতো ওর সব কথা শুনে গেলো…

চলবে ইনশাআল্লাহ