প্রেমাঙ্গন পর্ব-০২

0
22

#প্রেমাঙ্গন
লেখিকা:#শ্যামলী_রহমান
পর্ব:২

দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমেছে।ধরণীতে সূর্যের আলো লুকিয়ে অন্ধকারের সাথে সন্ধি করেছে।শহরের রাস্তা,অলিগলি ব্যস্ততায় ছেয়ে গেছে।অফিসগামী মানুষ ক্রান্তি নিয়ে ছুটছে বাসার পথে শান্তি খোঁজে।পারিবারের দেখা পেলে,সবার মুখের দিকে তাকালে ক্রান্তি সরে শান্তি লাগে।আশরাফ চৌধুরী সবে বাসায় ফিরিছে।সানজানা চৌধুরী চিন্তিত হয়ে বসে আছেন।স্বামীকে দেখেই রেগে গেলেন।বললেন,

“এতোক্ষণে আসার সময় হলো?কতক্ষণ থেকে ফোন দিচ্ছি ধরছেন না।”

আশরাফ চৌধুরী হাতের ব্যাগটা রাখলো।স্বাভাবিক ভাবে জানতে চাইলো,
“ফোন তো সাইলেন্ট ছিলো দেখতে পাইনি।কেন কিছু কি হয়েছে?রেগে আছো কেন?”

সানজানা চৌধুরী মলিন কন্ঠে বলল,
“আরশিয়া এখনো বাসায় ফিরেনি।

“কি বলছো?আসেনি মানে কই গেছে?অর্থি কিংবা কোনো বন্ধুর বাসায় গেছে নাকি ফোন দিয়ে শোনো।”

“সব জায়গায় ফোন দিয়ে শোনা শেষ।তুমি মিটিংয়ে ছিলে বলে আর বলিনি।

আশরাফ চৌধুরীর চিন্তা বাড়লো। মেয়ে কই গেলো এই চিন্তায় অস্থির হলো।আদরের একমাত্র মেয়ে।কখনো কোথাও না বলে যায় না, গেলেও ফোন করে বলে।তবে আজ কি হলো?না বসে থাকলে চলবে না। সানজানা আমি বেরোচ্ছি তুমি ফোনে ট্রাই করো।

চারপাশে গাঢ় অন্ধকার। কোথাও আলো নেই, শুধু মাথার উপর দেওয়ালের কোনো ফাঁক দিয়ে ঢোকা একফোঁটা চাঁদের আলো কষ্টেসৃষ্টে মেঝেতে পড়েছে। ঠাণ্ডা, স্যাঁতসেঁতে গন্ধে নাকে অস্বস্তি লাগছে। ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই আরশিয়া প্রথমে বুঝতে পারল না সে কোথায় আছে।মাথা ভারী লাগছে,কিছু মনে পড়ছে না, গলায় হালকা ব্যথা, মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো, কিন্তু এটা ঘুম ছিল না অজ্ঞান হয়ে থাকা।

সে হঠাৎ উঠে বসতে গেলো,হাত মেঝেতে পড়তেই “আইচ’ শব্দ করে উঠলো।মেঝেতে কিছু একটা ছিলো যেটা হাতে ফুটেছে।চারদিক অন্ধকার। এই অন্ধকারে কি করবে?অল্প আলোয় দরজা কোথায় হয়তো দেখতে পেলো।হাতরিয়ে দরজার কাছে গেলো।দরজা ধাক্কালো কিন্তু না দরজা বাহির থেকে বন্ধ। বুকের ভেতর কেমন অদ্ভুত ভয় চেপে বসল। চোখের সামনে কিছুই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না, শুধু পাশের দেওয়ালে ইঁদুরের ছোটাছুটির শব্দ শোনা যাচ্ছে।আবারো চিৎকার করে ডাকতে লাগল,

“কেউ আছেন?কে আছেন এখানে?”
আরশিয়ার কণ্ঠ কেঁপে উঠলো বন্ধ ঘরের মধ্যেই।কেউ সাড়া দিলো না,কোনো উত্তর নেই।আরশিয়া বসে পড়লো।বাইরে হালকা গাড়ির শব্দ শোনা গেলো, কিন্তু তা খুব দূরের। মনে হচ্ছে জায়গাটা শহরের জনবসতি থেকে একটু আলাদা।রাত নেমেছে বুঝতে পারছে কিন্তু কয়টা বাজে সেটা জানা নেই।আব্বু আম্মু নিশ্চিত চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে।
মাথায় দ্রুত গতিতে একটার পর একটা প্রশ্ন ঘুরছে কে এনেছে তাকে এখানে? কেন?কি উদ্দেশ্য?আমার কার সাথে শক্রুতা আছে?”

ঠিক তখনই ভারি লোহার দরজাটা কর্কশ শব্দ করে খুললো। দরজার বাইরে পায়ের শব্দ দৃঢ়, ভারী। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মৃদু আলোয় ভেসে উঠলো এক পরিচিত চেহারা। সাদা শার্ট, কালো জিন্স, ঠোঁটে হালকা কৌতুক মিশ্রিত হাসি। সে আর কেউ নয় রিহান মির্জা।

আরশিয়ার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেলো।
“আপনি?আপনি এখানে কেন?মতিষ্কে চাপ দিতেই হঠাৎ কিছু দিলো বুঝতে পারলো হয়তো কিছুটা।জানতে চাইলো,
“এখানে কেন এনেছেন আমাকে?”

রিহান ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকলো, তার দিকে এক পা এক পা করে এগোলো। কণ্ঠ শান্ত, কিন্তু চোখে প্রতিশোধের শীতল শিখা।
“তুমি ভেবেছিলে, আমার সম্মানে আঘাত করবে আমি চুপ থাকবো? ভুল ভেবেছিলে আরশিয়া। গতকাল সবার সামনে যেভাবে আমাকে অপমান করেছো,সেটা ভুলে যাওয়ার মানুষ আমি নই।আমি বাজে কোনো কথা না বলেও বাজে হয়েছি,সবার সামনে থাপ্পড় খেয়েছি সবই মানতাম কিন্তু আমার পরিবার তুলে কথা বললে এটা মানবো কেন?আমার পরিবার আমাকে ভালো শিক্ষা দিয়েছে কিন্তু সবাই ভালো ডিজার্ভ করে না। যেমন তুমি, সো এবার তুমি দেখবে আমার খারাপ রূপ।

আরশিয়া রাগে চিৎকার করে উঠলো,
“আপনার সমস্যা কি? আমি তো ভুল বুঝেছিলাম, আজ জানতেও পেরেছি! কথা বলার সুযোগ দিন আপনি, বরং..

রিহান কথা বলার সুযোগটুকু দিলো না।জোরে বলল,
“চুপ! সুযোগ তুমি হারিয়ে ফেলেছো সেই মুহূর্তে, যখন আমার পরিবার কে টেনেছিলে যেখানে আমি কিছুই করিনি।

আরশিয়া নতজানু হলো।বলল,
“প্লিজ যেতে দিন আব্বু আম্মু নিশ্চয়ই চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে।

“যা করিনি তার দোষ যখন ঘাড়ে পেয়েছি,আজ তা করেই না হয় দোষটা পূর্ণ করি।কি বলো?
আরশিয়া ভয় পেলো।গলা শুকিয়ে এলো।আশে পাশে তাকালো।রিহান এগোচ্ছে আরশিয়া ভয়ে তত পিছিয়ে যাচ্ছে।অন্ধকার রুমে এখন হালকা আলো আছে। পিছিয়ে যেতে, যেতে এক সময় দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায় আরশিয়ার।রিহান অনেকটা নিকটে গেলো,দুজনের চোখ সরাসরি হয়েছে।আরশিয়ার ঘনঘন ভয়ার্ত নিঃশ্বাস বারি খাচ্ছে রিহানের মুখশ্রীতে।বুকের মধ্যের ধুকপুকানি টের পাচ্ছে এক আরেকজনের।আরশিয়ার গা শিউরে উঠলো।রিহান তাকিয়ে রইলো। তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,

“আই নিড ইউ।তোমাকে আমার চাই,চাই মানে চাই।তুমি যদি বউ হয়ে কাছে আসতে চাও তবে এসো, না হয় বিয়ে ছাড়াই….
একটু থেমে আবার বলল,
“লেটস স্টার্ট। আমি চরিত্রহীন তার প্রমান দেই।চরিত্রহীন রা কিন্তু সব করতে পারে।
রিহানের কথা শুনে আরশিয়া ভড়কে গেলো।কি বুঝতে পারছে না, তখন হাল্কা আলোয় দেওয়ালে লাঠির মতো কিছু একটা রাখা ছিলো দেখেছিলো।একহাত বাড়িয়ে খুঁজছে হঠাৎ হাতের নাগালে কাঙ্ক্ষিত জিনিটা পেলো।আরেক হাতে রিহান কে ধাক্কা দিয়ে কিছু সরিয়ে দিয়েই দু’হাতে শক্ত করে লাঠিটা ধরে মাথায় মারার জন্য তুলতেই রিহান ধরে ফেলে।লাঠিটা ফেলে দিলো।আরশিয়ার হাতটা মুচড়ে পিছনে নিয়ে যায়,আরশিয়ার পিঠ ঠেকলো রিহানের বুকে।আরশিয়া ভড়কে গেলো,অযাচিত পুরুষের এতো কাছাকাছি হৃদয় মাঝারে উত্তাল সমুদ্রের মতো ঢেউ তুললো।রিহান কিড়মিড়িয়ে বলল,

“এতো চালাকি ভালো না।এখন বলো কোনটা করবে?বিয়ে নাকি?না থাক তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করে লাভ কি?বিয়ে ছাড়াই তো…
কথাটা আর শেষ করলো না।
আরশিয়াকে ঘুরিয়ে সামনাসামনি করলো।সাহসী মেয়েটাও এই নির্জন জায়গায় এসে ভয় পাচ্ছে। ভয়ে কাঁপছে গোলাপি রঙের লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁট জোড়া।ভয়ার্ত কন্ঠে তেজ নিয়ে বললো,

“কোনোটাই না।আপনাকে বিয়ে করার চেয়ে সারাজীবন বিয়ে না করে থাকবো তাও ভালো।

“তাহলে তাই হোক।
রিহান ধীরে ধীরে দূরত্ব ঘুচাচ্ছে আরশিয়া তত ভয় পাচ্ছে। পিছনে যাওয়ার উপায় নেই আবারো সেই দেওয়াল।পালানো চিন্তা মাথায় আনতেই রিহান দুপাশে হাত দিয়ে আঁটকে দেয়।খাঁচায় বন্ধি পাখির মতো হয়ে যায়। আরশিয়া তখন বলল,

“প্লিজ এমন কিছু করবেন না। আমি ভুল বুঝে বলেছি।

রিহান রেগে গেলো।কর্কট কন্ঠে বললো,
“ভুল করলে শাস্তি পেতে হবেই।
রিহান দূরত্ব ঘুচালো নিকটে গিয়ে দু’হাতে ঠোঁট চেপে ধরলো,রিহান মুখখানা কাছে নিয়ে গেলো।আরশিয়া চোখ বন্ধ করলো ভয়ে।একটু পর সে জ্ঞান হারালো,লুটিয়ে পড়লো রিহানের বুকে।

অন্যদিকে
চৌধুরী বাড়িতে অস্থিরতা চরম। আশরাফ চৌধুরী ড্রাইভারসহ গাড়ি নিয়ে শহরের প্রতিটি জায়গা খুঁজছেন।অর্থির বাসা,বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, এমনকি কাছের সব বন্ধুরা। কোনো খোঁজ নেই। ফোন বন্ধ।

সানজানা চৌধুরী ঘরে পায়চারি করছেন, বারবার ফোন করছেন, কান্না চেপে স্বামীর সাথে কথা বলছেন,
“ও কোথায় গেলো? কোনো বিপদে পড়লো না তো?”

শেষে উপায় না পেয়ে গেলো পুলিশ স্টেশন। তারা লিখিত অভিযোগ নিলো কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা না গেলে কোনো স্টেপ নিতে পারবে না।আশরাফ চৌধুরী পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায় আসলো।ঘড়িতে বাজে রাত দুটো।সানজানা বেগম মেয়ের খোঁজ না পেয়ে কেঁদে কেঁদে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে।

অর্থি চিন্তায়,অস্থির। সারা ঘর জুড়ে পায়চারি করছে।
আরশিয়ার মা যখন জানালো আরশিয়া বাড়ি ফিরেনি তখন থেকে তার সন্দেহ হলো।আরশিয়ার নিখোঁজের পিছনে রিহান ভাইয়ার হাত নেই তো?সে তো বলেছিলো শাস্তি দিবে,হতেও পারে শাস্তি দিতে তিনি কিছু একটা করেছে কিন্তু সিউর না হওয়াতে কাউকে বলতে পারছে না।হঠাৎ মাথায় একজনের নাম আসলো।ফেসবুক ঘেঁটে একজনের আইডি খুঁজলো কিন্তু পেল না।তার পর মনে পড়লো রিহান ভাইয়ার সাথে তার এড আছে নিশ্চয়ই তার পোস্টের কমেন্ট বক্স চেক করলে পাবো।মন যা বলে কখনো কখনো তা আসলেই ঘটে।অর্থি কাঙ্খিত আইডিটি পেলো।তাড়াতাড়ি ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে সাথে মেসেজ ও দিলো।সেকেন্টের মধ্যে উত্তর এলো।অর্থি অবাক হলো সে কি তারই মেসেজের অপেক্ষায় ছিলো নাকি?
অর্থি আর মেসেজ না করে সোজা কল দিলো।সেকেন্ডের মধ্যে কল ও রিভিস হলো।

“ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।

মিহি কন্ঠ শুনে রনিত থমকে রইলো কিছু সময়।
প্রিয় মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত কন্ঠ যে হৃদয় মাঝারে শীতল ঝড় তোলে,সেই ঝড়ে ভালোবাসা আঁচড়ে পড়ে মনের মাঝে।
অর্থি জবাব না পেয়ে আবারো বললো,
“ভাইয়া আপনার সাথে কিছু দরকারী কথা ছিলো।

রনিত বিরক্ত হলো।বলল,
“ভাইয়া,ভাইয়া করে মুড নষ্ট করে দিও না।
এমন মুহূর্তে কেউ ভাইয়া বলে ফিলিংসের বারোটা বাজায়?

অর্থি বোকা বনে গেলো।কি বলছে কিছু বুঝতে পারছে না।
“কি বললেন?

রনিতের হুস আসলো সে ভুলভাল বলে ফেলেছে। কথা কাটাতে বলল,

“কি কিছু না। তুমি কি বলতে চাইলে,কি দরকারী কথা সেটা বলো?

“রিহান ভাইয়া কোথাই আপনি জানেন?”

“কি আজব প্রশ্ন করছো?রিহান নিশ্চয়ই তার বাড়িতে থাকবে।”

অর্থি এবার সাহস নিয়ে আসল কথা বললো,
“আসলে ভাইয়া আরশিয়া কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভার্সিটি থেকে আমরা বিকেলে বাহির হয়ে যাই কিন্তু ও বাড়ি যায়নি।ওকে ফোনে পাচ্ছে না কেউ,সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া শেষ কোথাও নেই। আরশিয়ার বাবা মা চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এসবের পিছনে রিহান ভাইয়া হয়তো আছে। যদিও সিউর না কিন্তু উনি বলেছিলেন প্রতিশোধ নিবেন তাই…

“ওয়েট!তুমি বলতে চাইছো রিহান ওকে কোথাও নিয়ে গেছে?”

অর্থি সিউর নয় তাই দোটানায় পড়ে বলল,
“আমি তো সিউর বলতে পারছি না,তবে সন্দেহ হচ্ছে তাই আপনাকে কল দিলাম যদি একটি খোঁজ নিতেন।

রনিত ও কিছু ভাবলো।রিহানের রাগ উঠলে মাথা গরম হয়ে যায়,তখন যা ইচ্ছে করতে পারে। অর্থির কল কেটে রিহানের নাম্বারে কল দিলো। রিং না হয়ে ভেসে আসলো এক মহিলার কন্ঠ দুঃখীত এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।এইটুকু কথা যেন বিরক্ত লাগলো,কাজের সময় পাওয়া না গেলে রাগ উঠে।রনিত এবার কল লাগালো বাকি তিন বন্ধু কে।তারা কিছু জানে নাকি শুনতে।তবে তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারে তারাও কেউ কিছু জানেনা তবে, তাদের ও সন্দেহ রিহান হলেও হতে পারে।

ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে সকলে।তারেক মির্জা উপর থেকে নিচে নামলেন।মহূর্তেই সবার কথা বলা বন্ধ হলো।
ইভা নাবিল কে ঈশারায় চুপ করতে বলল,বড় আব্বু আসছে চুপ কর।তারেক মির্জা এসে বসলেন।তিনি খাবার টেবিলে কথা বলা পছন্দ করে না।এ বাড়িতে সদস্য বলতে দুই ভাই, বউ আর তিনটে ছেলে মেয়ে। তারেক মির্জার এক ছেলে রিহান। তার ছোট ভাই হামিদ মির্জার এক ছেলে এক মেয়ে ইভা আর নাবিল।নাবিল অনেকটা ছোট,ইভা এবার কলেজে পড়ে।তারেক মির্জা চোখ বুলিয়ে একজনের উপস্থিতি না পেয়ে স্ত্রী’র উদ্দেশ্য বললেন,

“তোমার ছেলে কোথাই?কালকেও খেতে আসনি,আজও নেই ব্যপার কি?আজকাল তার দেখা পাওয়া যায় না।

সায়মা মির্জা কি বলবেন?রিহান যাওয়ার সময় বলে যায়নি তবে ছেলেকে বাঁচাতে মিথ্যে বলল,

“রনিতদের বাসায় গেছে। আজ নাকি রনিতের জন্মদিন তাই ওখানে গেছে আনন্দ করবে সেখানে রাতটা থাকবে।
তিনি স্ত্রী’র মুখের দিকে চাইলেন।সেই চাওয়াতে সায়মা মির্জা কিছুটা ভয় পেলেন ধরা খাওয়ার।তবে তিনি আর কোনো রকম কথা বাড়ালেন না।দুই জা মিলে খাবার দিতে লাগলো।

রাত পেরিয়ে ভোর হয়েছে।কারো নিদ্রাহীন রাত কাঁটলো, কারো কাঁটলো শান্তির ঘুম দিয়ে। কেউ চিন্তায় অস্থির, কেউবা আতঙ্কে স্থির। চারদিকে সকালের আলো ফুঁটবে সবে।তখনই আরশিয়ার ঘুম ভেঙে গেলো।আড়মোড়া দিয়ে উঠতেই কিছু অনুভব হলো।চোখ খুলে উপরে তাকিয়ে দেখে সে রিহানের খোলা বুকে শুয়ে আছে।গলাটা ব্যথা করছে চুলগুলো কেমন এলোমেলো লাগছে।আরশিয়া ভয় পেলো।কেবল মনে পড়লো রাতের অন্ধকারে রিহানের এগিয়ে আসা তার পর আর মনে নেই।
মনে মনে ভাবতে লাগলে খারাপ কিছু হয়নি তো?না,না এমন হলে আমি…
আর ভাবতে পারলো না। রিহান কে ধাক্কা দিয়ে উঠে পড়লো। রিহানের ঘুম ভেঙে গেলো, চোখ খুলে আরশিয়ার অশ্রুশিক্ত চোখ দেখতে পেলো।
রিহান হেসে উঠলো। আরশিয়া কলার চেপে ধরলো, রেগে বললো,

“তুই আমার সাথে কি করেছিস বল?”

রিহান আরশিয়ার হাতের মুঠোয় থাকা কলার টা ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
“আমি চরিত্রহীন তার প্রমাণ দিতে যা করা উচিত তাই করেছি।
এখন চিল্লাই বলো যা বলার আছে।
রিহানের কথা শুনে আরশিয়া পিছিয়ে গেলো।শরীর কেমন অবস হয়ে আসছে।পড়তে গিয়ে পড়লো না, কোনোমতে দাঁড়িয়ে থাকলো।রিহানের দিকে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বলল,

“সামান্য কারণে আপনি আমার এতো বড় ক্ষতি করলেন?

“সবার সামনে খারাপ ছেলে,চরিত্রহীন বলা এটা মোটেও সামান্য বিষয় নয়।ওখানে শত শত স্টুডেন্ট ছিলো।

আরশিয়া আর কিছু বলতে পারলো না। ধম করে মেঝেতে বসে পড়লো। রিহান ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।সেই হাসির আসল রহস্য বুঝতে পারলো না কেউই।

চলবে……….?