#প্রেমাঙ্গন
লেখিকা:#শ্যামলী_রহমান
পর্ব : ৮
ক্লাস শেষ করে আরশিয়া আর বাসায় যাওয়ার জন্য বেরেলো।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দাঁড়ালো গাছের ছাঁয়ায়।অর্থির অপেক্ষা করছে ও আসলে এক সাথে বেরোবে।
দশমিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখতে পেলো অর্থি আসছে।হাত দিয়ে ইশারা করতেই তার দিকে আসতে বললো।আরশিয়ার হাত থেকে কলমটা পড়ে গেলো।কলমটা তুলে আবার দাঁড়াতেই হঠাৎ কারো কন্ঠে হিন্দি গানের লাইন শুনতে পেলো।
Inn Dooriyon Ne
Nazdikiyon se
Sauda koi kar liya.
Hooo..
Chupme Nigahone
Dil se ishq ka woda koi kar liya..
আরশিয়া পিছনে তাকিয়ে দেখলো রিহান তার দিকে তাকিয়ে আছে।মুখে লেপ্টে আছে স্নিগ্ধ হাসি। পাশে আছে অভিক আর রনিত।
আরশিয়া চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আবার চোখ ফেরলো।ততক্ষণে অর্থি আসলো। পিছনে রনিতের দিকে চোখ পড়তেই চোখে লজ্জা আর মুখে হাসি।
আরশিয়া খেয়াল করলো। অর্থির দিকে বাঁকা চোখে তাকাতেই ও সেদিকে আর তাকালো না।
দুজনে চললো গেইটের দিকে। অনেকটা যাওয়ার পর রিহান দৌঁড়ে সামনে আসলো।আরশিয়া থামলো, একটু পিছিয়ে গিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করলো।
“সব সময় এমন সামনে এসে দাঁড়ান কেন?”
“পাশে দাঁড়ানোর অনুমতি তো দিচ্ছো না,নয়তো পাশে দাঁড়াতাম।”
এই ছেলের সব কথার যুক্তি রেডি থাকে।
“অসহ্য মানুষ।
“কিছু বললে?”
আরশিয়া দাঁত পিষে রেগে বললো,
“অসহ্য মানুষ। সামনে থেকে সরুন।”
“ঠিক আছে সরছি।তবে এই নাও তোমার জিনিস।
বলে আরশিয়ার হাতে কিছু একটা দিলো।স্পর্শিত হলো দুটো হাতের।রিহান আরেক হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো।
আরশিয়া হাতের মুঠো খুলে দেখলো একটা কানের ঝুমকো। হ্যাঁ এটা চেনা।সহসাই কানে হাত দিয়ে দেখলো বামে কানের দুল নেই। তার মানে তখন পড়ে গেছিলো।
আরশিয়া ঘুরে তাকালো। ততক্ষণে রিহান ও তার বন্ধুরা অন্যদিকে চলে গেছে। শুধু অর্থি বলে উঠলো,
“সব সময় শুধু ভুল বুঝিস। সে এখন ভুল না করলেও তুই ভাবিস ভুল করে।
আরশিয়া বাঁকা চোখে তাকালো।
“আজকাল তার নামে এত গুনগান করিস কেন বলতো? ঘটনা কি?তার বন্ধুর সাথে মিলে কি প্ল্যান করেছিস?
অর্থি থতমত খেয়ে গেলো।
“আরেহ না! কিসের প্ল্যান করবো?যা সত্যি তাই বললাম।
তুই বিশ্বাস না করলে নেই।
“হয়েছে আমার এতো বিশ্বাস করা লাগবে না।
দুজনে গেইট পেরিয়ে আসতেই কেউ একজন ডাক দিলো।
“মিস আরশিয়া?
আরশিয়া শুনতে পায়নি সে অন্য মনষ্ক হয়ে ছিলো। তবে অর্থি ঠিকই শুনেছে।তাই আরশিয়াকে ডেকে বলল তোকে ওই লোকটা ডাকছে।
আরশিয়া অর্থির কথা অনুযায়ী ডানে তাকালো। তখনই নজর পড়লো এক ব্যক্তির উপর। মুখে তার অমায়িক হাসি লেগে আছে, ফরমান ড্রেসে সুন্দর ও লাগছে।আরশিয়া এগিয়ে গেলো, জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি এখানে?”
“এই ধরুন আপনাকে দেখতে এলাম।
আরশিয়া হেসে উড়ে দিলো। ফান মনে করে বলল,
“ফাজলামি রাখেন।সত্যি বলেন কেন এসেছেন? গালফ্রেন্ড কি এই ভার্সিটিতে পড়ে নাকি?পড়লে অবশ্যই পরিচয় করিয়ে দিবেন।
মিহির মুচকি হাসলো।মনে মনে কেবল আওড়ালো,
“পরিচয় তো আমি আমার হৃদয়ের সাথে করিয়ে দিতে চাই কিন্তু আপনি হচ্ছেন কোথাই?”
“হ্যাঁলো মিস্টার কই হারালেন?
অর্থির চুটকির শব্দে মিহির তাকালে।কিছুটা তাড়নায় পড়ে বলে,
“না তেমন কিছু না।
আরশিয়াকে উদ্দেশ্য বললো এখন বাসায় যাবেন?
“হ্যাঁ যাবো।অর্থি রিকশা ডেকে যা আনি আসছি।
অর্থির পথ আলাদা তাই সে চললো।
মিহির প্রস্তাব রাখলো।
“আপনাকে নামিয়ে দিই।
অনেকটা পরিচিত আর চেনা জানায় না করতে পারলো না। মিহিরের সাথে হেঁটে চললো গাড়ির দিকে।
কেউ একজন পিছন থেকে দেখলো। হাতে থাকা কাগজটা হাতের মুঠোয় মুচড়ে ছুঁড়ে মারলো।মনে হলো সব রাগ সেই কাগজটার উপর ঝাড়লো।
রাতে খাবার টেবিলে আশরাফ চৌধুরী কথা তুললেন।
আরশিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তারেক মির্জা ফোন করেছিলেন।
আরশিয়া খাওয়া থামালো।বাবার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো,
“কি বলছে?
“কি আর বলবে?তোর মতামত জানতে চায়।
আনজুমা চৌধুরী মেয়ের আগে বলে উঠলেন,
“এতো করে বলছে,ছেলে তো খারাপ না সমস্যা কোথাই?”
আরশিয়া বাবা মায়ের দিকে তাকালো।এক লোকমা খেয়ে বলল,
“ সময় নিয়েছি এখনো যায়নি।বেশি সমস্যা হলে না বলে দেও।
আনজুমা চৌধুরী কিছু বলতে নিলে আশরাফ চৌধুরী হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিলেন।বললেন,
”ঠিক মা সময় নাও তবে বেশি সময় নিও না। যা বলার বলে দিও অপেক্ষা কিন্তু বড্ড কঠিন।
আরশিয়া খেয়ে উঠে পড়লো।আর কিছু না বলেই উপরে চললো।
কেটে গেছে দুদিন।
বর্ষপূর্তি উদযাপনের ঘোষণার পর থেকেই ক্যাম্পাসে এক ধরনের উচ্ছ্বাস নেমে এসেছে।
প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারো রিহার্সেল, কারো প্ল্যান নিয়ে ব্যস্ততা—সব মিলিয়ে পুরো ভার্সিটি যেন উৎসবের আমেজে ভরে উঠেছে।
কিন্তু আরশিয়ার মুখে সেই উচ্ছ্বাস নেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও দায়িত্ব নিতে হয়েছে। মাথার উপর চাপানো বোঝার মতো মনে হচ্ছে। আরশিয়া জানে রিহানের কারণে ওকে এই ঝামেলায় পড়তে হলো।
ক্লাস শেষে করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে অর্থি পাশেই বলল,
“আরে দারুণ হয়েছে তোকে দায়িত্ব দেওয়া। তুই পারবিই। তোর মতো দায়িত্বশীল মেয়ে তো আরেকটা নেই।”
আরশিয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে উত্তর দিলো,
“দায়িত্বশীলতার নাম করে আমাকে ফাঁদে ফেলেছে যে মানুষটা, সে যদি আমার জীবন থেকে দূরে থাকতো, তাহলে অনেক শান্তি পেতাম।”
অর্থি মুচকি হাসলো,
“তুই যতই বল, তোর চোখ কিন্তু অন্য কিছু বলে। রিহানকে দেখলেই তোকে অন্য রকম লাগে।”
“চুপ থাক অর্থি! বাজে কথা একটাও বলবি না।”
রাগে চোখ গরম করে তাকালো আরশিয়া।
ঠিক তখনই সামনে থেকে রিহান হেঁটে এলো। হাতে কিছু ফাইল, মনে হয় ভিসি স্যারের অফিস থেকে আসছে।
আরশিয়াকে দেখে হাঁসি দিয়ে বলল,
“ প্রস্তুতি শুরু হবে কাল থেকে। আজ বিকেলে তোমাকে আমার সাথে আসতে হবে অডিটোরিয়ামে।”
আরশিয়া বিস্ময় নিয়ে তাকালো,
“আমাকে? কেন?”
“কারণ তুমি দায়িত্বপ্রাপ্ত, আর আমি তোমার লিডার আমার কথা মানতে হবে।
“দেখুন, আমাকে ব্ল্যাকমেল করার দরকার নেই। আমি আমার মতো দায়িত্ব পালন করব।”
“ওহ! তুমি একা সব সামলাবে? শোনো আরশিয়া, টিমওয়ার্ক ছাড়া বড় কোনো কাজ হয় না। তুমি যদি রাজি না হও, তাহলে আমি নিজে ভিসি স্যারের কাছে গিয়ে বলবো তুমি দায়িত্ব এড়াতে চাইছো।”
“আপনি…”
রাগে কেঁপে উঠলো আরশিয়া। তবু কিছু বলতে পারলো না। কারণ সে জানে রিহান সেটা করতেও পারে।একবার দায়িত্ব নিয়েছে যখন পালন না করলে কেমন দেখায়?
অর্থি পাশে দাঁড়িয়ে হেসে ফিসফিস করে বলল,
“চিন্তা করিস না, আমি তোকে সঙ্গ দেবো।
“ওকে যাবো এখন সরুন।আপনাকে দেখতে মন চায় না।
রিহান হালকা স্বরে কাছে ঝুঁকে বলল,
“কিন্তু আমার তেমাকেই সব সময় দেখতে মন চায়। আর আমি যা চাই,সেটা আমি একদিন না একদিন পাই।”
আরশিয়া বিরক্ত হয়ে দ্রুত হেঁটে চলে গেলো।রিহান হাসলো।
রনিত আর অর্থি কথা বলছে।তাদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে অভিক, সাহিল আর অভিষেক।
“সালা দুজনে কি প্রেমের কথা বলছে চলতো শুনে আসি?
সাহিলের কথায় অভিক ও বললো চল।
কিন্তু অভিষেক বাঁধ সাধলো, বলল,
“মানুষের পারসোনাল কথা শুনা ঠিক না।
অভিক যেতে গিয়েও দাঁড়ালো, সাহিল কে বললো,
”এ আমাদের বন্ধু কেমনে হলে বলতো? সালা নিরামিষ নিজে প্রেম করিস না আবার শুনতেও দিস না।
“হ্যাঁ প্রেম করে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে দৌঁড়ানি খাবো?”
নিজের সম্মান নিয়ে টানাটানি করতেই।
অভিক আশে পাশে তাকালো। কেউ শোনোনি তো?
না আশে পাশে কেউ নেই শোনেনি।তবে সাহিল মুখ টিপে হাসছে।
অভিক চোখ পাকিয়ে বলল,
“কথা বলিস না কিন্তু যেটা বলিস একদম বম।
সালা আরেকবার এমন গোপন অসম্মানীয় কথা পাবলিক প্লেসে বললে তোর খবর খারাপ করে দিবো। তখন বিয়ে করতে পারবি কিন্তু বাচ্চার বাপ হতে পারবি না।
এর মধ্যে রিহান আসলো।এসেই সামনে রনিত আর অর্থি কে দেখে আশে পাশে চোখ বুলালো কিন্তু কোথাও আরশিয়াকে দেখতে পেলো না।
সাহিল বলল,
“যাকে খুঁজছিস সে এখানে কোথাও নেই।
রিহান সোজা রনিত আর অর্থির কাছে গেলো।
অভিক এবার বলল,
“রিহান কে কিছু বল সালা।আমি গেলে দোষ ও রিহান গেলে তোর মুখ দিয়ে কথা বাহির হয়না?
“রিহান গেছে তোদের মতো প্রেমালাপ শুনতে নয় ওর দরকারে।
অভিক চুপ হয়ে গেলো।এর সাথে যুক্তিতে পারা যায় না।
রনিত আর অর্থির কাছে যেতেই ওদের দুজনের কথা বন্ধ হলো।
রিহান অর্থিকে বলল,
“আরশিয়া কোথাই?
“জানিনা তো ভাইয়া
আমার ক্লাস শেষ হয়েছে তাই ওর জন্য অপেক্ষা করছি। ভাবলাম হয়তে ক্লাসে আছে।
“ওর ক্লাস তো তোমার আগে শেষ হয়েছে।
“তাহলে কই গেলো?”
“ফোন করো তো।
অর্থি তড়িঘড়ি করে ফোন লাগালো।রিং হলেও ধরলো না কেঁটে দিলো।
রিহান আশে পাশে খুঁজতে গেলো।
আরশিয়ার ফোন বাজতেই সেই শব্দে সকলে পিছনে তাকালো।তড়িঘড়ি করে সে একটা ডাসবিনের আড়ালে বসে পড়লো কেউ যেন দেখতে না পায়।
তার সামনে কিছু পরিচিত এবং অপরিচিত লোক।
কিছু সনয় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর আরশিয়া মাথা বাহির করে তাকালো। রাস্তায় এখন কেউ নেই। সে আড়াল থেকে বেরোলো আশে পাশে কেউ নেই। এদিকে তিনটে গলির রাস্তা কোনদিকে গেছে বুঝতে পারলো না।
শিট! ব্যর্থতায় ঠোঁট চেপে উঁচু করলো।
আরশিয়া যখন ক্লাস শেষ করে বেরোলো।অর্থি আসেনি বলে হাঁটতে হাঁটতে ভার্সিটির পিছনের দিকে চলে গেলো।নজরে সেদিনের লোকটা আর ফারিয়া কে দেখতে পেলো। কিছু বলছে দুজনে তার লোকটা চলে গেলো। সে যাওয়ার দশ মিনিট পর ফারিয়া বেরোলো কয়েকটি মেয়েকে নিয়ে।তার বেশ সন্দেহ হলো লোকটিকে তার ভালো মনে হয়নি তার ফারিয়া কে তো নয়।তখনই তাদের পিছু নিলো।আসতেছিলো কিন্তু মাঝে অর্থি কল দিয়ে সব ভেস্তে দিলো।নয়তো দেখতাম এরা যায় কোথায়?
নজরদারিতে আরেকবার আশ পাশ দেখে নিলো। জায়গাটা অনেকটা নির্জন চারদিকে বেশি শুধু গলি।এবার পা বাড়ালো ফিরে যেতে…
চলবে…………………..?