#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৩০
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
অর্ণব স্তম্ভিত,হতবাক,কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অর্ণব নিস্প্রান চোখে তাকিয়ে আছে আনায়ার দিকে। মেয়েটা চেতনা হারিয়ে পড়ে আছে হসপিটালের বেডে। মুখটা কেমন শুকিয়ে গিয়েছে। অর্ণব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সব সময় যেই দৃষ্টিতে আনায়ার জন্য একরাশ মুগদ্ধ দেখা যায় সেই দৃষ্টি এখন মলিন। আনায়ার অপারেশন শেষে ওকে বেডে দিয়ে গেছে অনেকক্ষন। কিন্তু এখনো ওর জ্ঞান ফিরছে না। কেবিনে অন্য কেউ নেই সবাই বাহিরে অপেক্ষা করছে। অর্ণব ডক্টরের সাথে অনেক জোরাজুরি করে থেকে গেছে। অর্ণব এক মুহূর্তের জন্য আনায়াকে দৃষ্টির অগোচর হতে দিতে চায় না।
অর্ণব বসে বসে ভাবছে সেই সময়ের কথা। মুহূর্তের ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেল? অর্ণব অহনাকে খেপাচ্ছিলো। অহনা একটা শাড়ি কিনেছে। আনায়াকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাবি বলতো শাড়িটা কেমন হয়েছে? সুন্দর না? আমাকে পড়লে মানাবে?”
আনায়া মিষ্টি হেসে বলল,
“শাড়িটা ভীষণ সুন্দর হয়েছে। তোমাকে পড়লে মানাবে। অনেক সুন্দর লাগবে তোমাকে”
অর্ণব মাঝে ফোড়ন কেটে বলল,
“শাড়িটা সুন্দর, তবে তোকে মানাবে না। শাক*চু*ন্নিদের গাঁয়ে এতো সুন্দর শাড়ি বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালার মতোই লাগবে”
“দেখ ভাইয়া একদম উল্টাপাল্টা বলবি না”
“একটুও উল্টাপাল্টা কথা না, একদম খাঁটি সত্য কথা”
এই নিয়ে দুই ভাইবোন কথাকাটাকাটি করছিলো। অন্য কোনোদিকে ওদের খেয়াল নেই। আচমকা ধাক্কা খেয়ে অর্ণব অবাক হলো। সাথে সাথে পাশ থেকে গুলির শব্দ হলো। অর্ণব নিজেকে সামলে পিছু ঘুরতেই ও থমকে গেল। আনায়া ততক্ষনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। অর্ণব কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝতে পারলো না। সময় পার হলো মিনিট দুই অর্ণব এখনো একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। অহনা ততক্ষনে আনায়ার মাথা উঠিয়ে নিজের কোলে নিয়ে ওকে ডাকছে। আনায়ার কোনো সারা শব্দ নেই। অহনা তাকিয়ে দেখল আনায়ার বা হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। অহনা রক্ত দেখে চিৎকার করে উঠল। অহনার চিৎকারে অর্ণবের ধ্যান ভেঙেছে। হাঁটু মুড়ে বসে আনায়ার মাথা নিজের কোলে নিয়ে নিল। গালে হাল্কা চাপর দিয়ে ডাকল,
“আনায়া, এই আনায়া উঠো। এই মেয়ে উঠো না। কি হয়েছে তোমার?কথা বলো? কি হলো কথা বলছো না কোনো? এই প্রিয়সী চোখ খোলো না প্লিজ”
অর্ণবের আকুল আবেদন আনায়ার কান পর্যন্ত পৌছালো না। অহনা বলল,
“ভাইয়া দেখো ভাবির হাত থেকে রক্ত পড়ছে। ভাইয়া ভাবির কি হয়েছে?”
অহনার কথায় অর্ণব তাকিয়ে দেখল সত্যি আনায়ার হাত থেকে রক্ত পড়ছে। কিন্ত রক্ত পড়ছে কোনো? কি হয়েছে? অর্ণব আর কিছু ভাবার সময় নিল না। এক ঝটকায় কোলে তুলে নিল আনায়াকে। হাঁটা দিলো গাড়ির দিকে। অহনাও পিছু পিছু গেল। আনায়াকে সাবধানে সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে বসল ড্রাইভিং সিটে। আনায়ার মাথা নিজের কাঁধে রেখে গাড়ি স্টার্ট দিলো। অর্ণব খুব স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। ওর কাছে এখন একটু খানি সময়ও অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছে। হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে আনায়াকে কোলে নিয়ে নেমে গেল। ডক্টর আনায়ার অবস্থা দেখে ওকে অপারেশন থিয়েটারে নিতে বলল। আনায়াকে নিয়ে যাওয়া হলে অর্ণব ধুপ করে ফ্লোরে বসে পড়ল। ও আবারও ব্যর্থ হলো ওর প্রিয়সীকে বাঁচাতে। অর্ণব সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করছে। মাথার চুল খামচে ধরল। “কোনো আমি খেয়াল করলাম না? কোনো? আমি যদি খেয়াল করতাম তাহলে এমন কিছুই হতো না। সব আমার নিজের ভুল। আমি আবারো আমার প্রিয়সীকে রক্ষা করতে পারিনি। আমি একজন ব্যর্থ প্রেমিক, ব্যর্থ স্বামী। আমি পারিনি তাকে রক্ষা করতে, আমি পারিনি”
অর্ণব মনে মনে বিলাপ করছে। ঘন্টা খানেক পেরিয়ে গেছে ডক্টর এখনো বের হচ্ছে না। অর্ণব পায়চারি করছে। অহনা মাথা নিচু করে বসে বসে কাঁদছে। কিছুক্ষন পর ডক্টর বের হলো। অর্ণব এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ডক্টর আনায়ার কি হয়েছে? ওর হাতে রক্ত এলো কি করে? কি হলো ডক্টর কিছু তো বলুন”
ডক্টর অর্ণবকে চিনতে পেরেছে। এই সময়ের ইয়াং এমপি বলে কথা তাকে কে না চিনে?
“স্যার আপনি একটু শান্ত হন। ম্যামের হাতে গুলি লেগেছে। ম্যামের হাত থেকে অনেক রক্ত পড়েছে তাই ইমার্জেন্সি দুই ব্যাগ এ নেগেটিভ রক্ত প্রয়োজন। আমাদের ব্লাড ব্যাংকে এখন এ নেগেটিভ রক্ত নেই। আপনি তাড়াতাড়ি কোথাও থেকে রক্তের ব্যবস্থা করেন। ম্যামের অবস্থা ভালো না”
অর্ণব কি করবে কিছুই ওর মাথায় আসছে না। কোথায় পাবে রক্ত? হটাৎ আবিরের কথা মাথায় আসতেই আবিরকে কল দিলো। আবির রিসিভ করতেই ওকে কিছু বলতে না দিয়ে বলা শুরু করলো,
“দোস্ত তোর রক্তের গ্ৰুপ কি? তোর পরিচিত কারো রক্তের গ্ৰুপ এ নেগেটিভ আছে?”
“কোনো?কি হয়েছে? আমার রক্তের গ্ৰুপ এ নেগেটিভ”
“তাহলে তুই তাড়াতাড়ি সিটি হসপিটালে চলে আয় ভাই। যত তাড়াতাড়ি পারিস আয়, খুব ইমার্জেন্সি”
“কিন্ত বলবি তো কার কি হয়েছে? তুই ঠিক আছিস? বনু ঠিক আছে তো? কি হলো কিছু বলছিস না কেনো?”
“এখন এতো কথা বলার সময় নেই তুই তাড়াতাড়ি আয়”
অর্ণব ফোন কেটে দিল। বিশ মিনিটের মাথায় আবির এলো। অর্ণবকে এমন বিধ্বস্ত রূপে দেখে অবাক হলো। অর্ণবের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে তোর অবস্থা এমন কোনো? কি হয়েছে? কার রক্ত লাগবে?”
অর্ণব ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আবিরকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেল। আবির রক্ত দিয়ে এসে অর্ণব কে আবারও প্রশ্ন করতে লাগলো। অর্ণব এক পর্যায়ে আবিরকে সব কিছু খুলে বলল । বোনের এমন অবস্থার কথা শুনে আবির কিছু বলতে পারছে না। আবিরের অনুভূতি শুন্য। ওর এতো আদরের বোন। অর্ণবের কলার ধরে বলল,
“তুই আমার বোনকে রক্ষা করতে পারলি না? তোকে বিশ্বাস করে তোর হাতে আমার বোনকে তুলে দেওয়াই কি আমার ভুল ছিলো? তোর কাছে আমার বোনকে না দিলে আজকে আমার বোনের অবস্থা এমন হতো না। তুই পারিসনি আমার বোনকে রক্ষা করতে। আমি আমার বনুকে আর কখনো তোর হাতে তুলে দিবো না। কখনো না”
আবিরের মাথা ঠিক নেই। কি বলছে বা কি করছে তার ঠিক নেই। অর্ণবকে ছেড়ে ফোন বের করলো। বাড়িতে ফোন করে জানালো। অহনা আগেই ওদের বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই দুই পরিবারের সবাই হসপিটালে এসে হাজির হলো। সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে করিডরে।অপারেশন এখনো শেষ হয়নি। আশালতা বেগম কেঁদে কেটে একাকার অবস্থা। তার একমাত্র আদরের মেয়ের এমন অবস্থা উনি সহ্য করতে পারছে না। বিলাপ বকেই যাচ্ছে। মেহনাজ বেগম আর নীলিমা মিলে ওনাকে সান্তনা দিচ্ছে। আরো কিছু সময় পর ডক্টর বের হলো। সবাই মিলে তাকে ঘিরে ধরল। একেক জন একেক প্রশ্ন করছে।
“আপনার চিন্তা করবেন না। অপারেশন সাকসেস ফুল। ম্যামের এখনো জ্ঞান ফিরেনি। এখন ওনাকে কেবিনে শিফট করা হবে। আশা করি দুই তিন ঘন্টার মাঝেই জ্ঞান ফিরবে। জ্ঞান ফিরলে আপনারা দেখা করতে পারবেন। এখন ওনাকে অবজার্ভশনে রাখা হবে”
ডক্টর চলে গেল। কিছুক্ষন পর আনায়াকে বের করা হলো অপারেশন থিয়েটার থেকে। অর্ণব নিষ্প্রভ চোখে তাকালো প্রিয়সীর মুখপানে। হাস্যজ্জল মুখটা কেমন চুপসে গেছে। মুখ ফেকাশে হয়ে গেছে। কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে মেয়েটার কতটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। অর্ণবের মায়া হলো। অবরাধ বোধ জেগে উঠলো ওর মনে। অর্ণব ডক্টরকে রিকোয়েস্ট করে কেবিনে ঢুকল। আনায়ার পাশে বসে ওর হাত আঁকড়ে ধরে বসে আছে। অর্ণবের চোখে পানি টলমল করছে। মুহূর্তের ব্যাবধানে অর্ণবের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। আনায়ার করুণ অবস্থা দেখে ওর মনে হিংস্রতা জেগে উঠল। ও তাকে ছাড়বে না যার জন্য ওর এতো সাধের বউয়ের এই অবস্থা। অর্ণব পকেট থেকে ফোন বের করলো। ডায়াল করলো কারো নাম্বারে। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই বলা শুরু করলো,
“যেই কুত্তার বা*চ্চা আমার বউকে গুলি করেছে আমি ওকে চাই। এক ঘন্টার মধ্যে আমি ওকে আমার আমার আস্তানায় দেখতে চাই। ওর কলিজা কেটে কুচি কুচি করে আমি কুকুর কে খাওয়াবো। জানোয়ারের বাচ্চার এতো সাহস ও আমার বউয়ের দিকে নজর দেয়। ওকে আমি খু*ন করে ফেলবো”
#চলবে?
#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৩১
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
গোধূলি বিকেলে আকাশ সূর্যের আলোয় রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। বিকেলের শেষ প্রহর সূর্য অস্ত যাচ্ছে পশ্চিম আকাশে। অর্ণব এখনো আনায়ার হাত ধরে বসে আছে। কিন্তু আনায়ার জ্ঞান ফিরার নাম নেই। অর্ণব অপেক্ষার প্রহর গুনছে। হটাৎ অর্ণবের ফোন বেজে উঠতেই ও সাথে সাথে ফোন সাইলেন্ট করে দিল।প্রয়োজনীয় ফোন না ধরলেই নয় তাই অর্ণব কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। কেবিনে বসে কথা বললে আনায়ার সমস্যা হবে। অর্ণব যাওয়ার আগে নীলিমাকে আনায়ার পাশে থাকতে বলে গেল। বাহিরে জানালা দিয়ে কেউ একজন তাকিয়ে আছে আনয়ার দিকে। চোখ তার ছলছল করছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চলে গেল।
নীলিমা বসে আছে হটাৎ খেয়াল করলো আনায়ার চোখের পাঁপড়ি নড়ছে। আনায়া ধীরে ধীরে চোখ খোলার চেষ্টা করছে । নীলিমা সাথে সাথে নার্সকে ডেকে বলল। নার্স ডক্টর কে ডেকে নিয়ে এলো। ডক্টর আনায়াকে চেক করে বলল,
“ম্যাম আউট অফ ডেঞ্জার। এখন আর কোনো ভয় নেই। আপনার এখন উনার সাথে দেখা করতে পারেন। তবে ওনার আশেপাশে ভীড় করবেন না। এক এক করে দেখা করবেন। ওনাকে বেশি প্রশ্ন করবেন না। উনি যেন উত্তেজিত না হয়। ওনার এখন রেস্ট প্রয়োজন, তাই ওনাকে রেস্ট নিতে দিন”
ডক্টর চলে গেছে। আনায়া পিটপিট করে তাকাচ্ছে। ওর আশেপাশে সবাই আছে তবে একটা মানুষ নেই। কোথায় সে? সুস্থ আছে তো? আনায়ার মনে অর্ণবকে ঘিরে হাজার প্রশ্ন। এখানে ওর সকল আপনজন রয়েছে তবুও কেউ যেনো নেই। আনায়া অর্ণবকে না দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“এমপি সাহেব কোথায়? উনি ঠিক আছে তো? তোমার সবাই এখানে উনি কোথায়? উনাকে দেখছি না কেনো? কি হলো কেউ কিছু বলছো না কোনো?”
আনায়া উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। উত্তেজনা ওর জন্য ক্ষতিকর। নীলিমা ওকে শান্ত হতে বলল।
“অর্ণব এতক্ষন এখানেই ছিলো। এক মুহূর্তের জন্যও তোমাকে কাছ ছাড়া করেনি। হটাৎ একটা জরুরি ফোন আশায় বাহিরে গেছে। এক্ষুনি চলে আসবে”
আনায়া কিছুটা শান্ত হলো। একে একে কেবিন থেকে সবাই বেরিয়ে গেল। রয়ে গেল শুধু নীলিমা, মিহি আর অহনা। সেই সময় কেবিনে অর্ণব প্রবেশ করলো। আনায়ার জ্ঞান ফিরতে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসল। অর্ণবকে পাশে বসতে দেখে আনায়া উঠে বসার চেষ্টা করলো। অর্ণব ধরে উঠিয়ে বসালো সাবধানে। আনায়া সাথে সাথে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরল। অর্ণব আচমকা এভাবে জড়িয়ে ধরায় একটু পিছিয়ে গেল। নিজেকে সামলে অর্ণব নিজেও আনায়াকে জড়িয়ে ধরলো। নীলিমা, মিহি আর অহনাকে ইশারা দিয়ে বেরিয়ে গেল। মিহি আর অহনাও নীলিমার পিছু পিছু চলে গেল। দুজনকে একা ছেড়ে দিলো। একই ভঙ্গিতে নিঃশব্দে একে অপরকে জড়িয়ে রাখলো দুজন । আনায়া ধীর কণ্ঠে বলল,
“এমনপি সাহেব আপনি ঠিক আছেন তো? আপনার কিছু হয়নি তো?”
অর্ণব অবাক হলো। মেয়েটা এই অসুস্থ অবস্থায়ও ওর কথা ভোলেনি। ওকে সরিয়ে নিজে ওর জায়গায় গুলি খেল। এখন এইযে নিজে অসুস্থ তার কোনো খবর নেই, উল্টো ও কেমন আছে সেটা জিজ্ঞেস করছে। অর্ণবের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। অর্ণবকে কিছু বলতে না দেখে বলল,
“কি হলো? কিছু বলছেন না কোনো? আপনার কিছু হয়েছে নাকি? দেখি ছাড়েন তো কি হয়েছে আপনার?
“শান্ত হও মেয়ে,এতো উত্তেজিত হয়ো না। উত্তেজনা তোমার শরীরের জন্য এখন ভালো না। তোমার এমপি সাহেব একদম সুস্থ আছে । এইতো তোমার চোখের সামনে বসে আছে। কিন্তু তোমার এই অসুস্থতা তোমার এমপি সাহেবের বুকে তীরের মতো বিধছে। ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে তার হৃদয়। বুকে চিন চিন ব্যথা হচ্ছে। তুমি কি করবে এই ব্যথার অবসান, রাখবে কি এই বুকে মাথা? প্রশান্তি দিবে এই বুকে?”
আনায়া চুপটি করে অর্ণবের বুকে মাথা রাখলো। এই বুকেই তো ওর সকল শান্তি নির্হিত। অর্ণবের উথাল পাথাল বুকে এক পাশলা বৃষ্টি হানা দিল। এতক্ষনে একটু খানি শান্ত হলো মন।
ডক্টর আবার এসে আনায়াকে দেখে গেছে। বলেছে কয়েক দিন হসপিটালে থাকতে হবে। কিন্তু অর্ণব তা মানতে নারাজ ও কোনো মতেই আনায়াকে হসপিটালে রাখবে না। ও আনায়াকে আজকেই বাড়িতে নিয়ে যাবে। অতঃপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো আনায়াকে ওদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। আবির কোনোমতেই আনায়াকে ছাড়বে না। ওর কথা আনায়া ওদের বাড়িতে ওর চোখের সামনেই থাকবে সুস্থ হলে নাহয় ও বাড়ি যাবে। এখানে আশালতা বেগম,নীলিমা,মিহি সবাই মিলে সেবা করলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। অর্ণব প্রথমে অমত করলেও পড়ে রাজি হয়ে গেল।
আনায়ার জন্য নীলিমা সুপ বানিয়ে এনেছে। নীলিমা সুপের বাটি হাতে নিয়ে আনায়াকে খাওয়াতে গেলে আনায়া বলল,
“ভাবি আমাকে দাও আমি নিজেই খেয়ে নিচ্ছি”
“আমি খাইয়ে দিচ্ছি চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো খাও”
“আমার ডান হাত তো ঠিকই আছে, তুমি আমাকে দাও।আমি..”
নীলিমা চোখ রাঙিয়ে তাকালো। আনায়া আর কিছু বলতে পারলো না। ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ বসে রইল। নীলিমা খাওয়াতে নিবে এমন সময় কোথা থেকে অর্ণব এসে ছো মেরে ওর হাত থেকে খাবার টা নিয়ে নিল।
“আমার বউকে আমি খাইয়ে দিবো”
নীলিমা সরে গেল । অর্ণব বসল আনায়ার পাশে। সুপটা খুবই গরম, ধোয়া উঠছে। অর্ণব একটু একটু করে ফুঁ দিয়ে আনায়াকে খাইয়ে দিচ্ছে। আনায়াও ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ খেয়ে নিল। অর্ণব খাওয়ানো শেষে আনায়ার মুখ মুছে উঠতে নিল। আনায়া ওর হাত ধরে আটকে দিলো। অর্ণব জিজ্ঞেস করলো,
“কিছু বলবে?”
“আপনি কিছু খেয়েছেন?”
“তুমি অসুস্থ মানুষ। এতোদিক মাথা না ঘামিয়ে রেস্ট নাও”
অর্ণব উঠে যেতে নিল। আনায়া এবার শক্ত কণ্ঠে বলে উঠল,
“আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই”
অর্ণব কিছু বলবে তার আগেই নীলিমা বলল,
“তোমাকে হসপিটালে আনার পর থেকে অর্ণব এদিক ওদিক ছুটোছুটি করেছে একটুও শান্তি মতো বসেনি। কিছুই মুখেও দেয়নি। ছেলেটা এক ফোঁটা পানিও খায়নি”
অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আপনি এখনই খাবার খাবেন আমি কোনো বাহানা শুনতে চাই না। ভাবি ওনাকে নিয়ে যাও তো”
“আমি কোথাও যাবো না। তোমার এখানেই বসে থাকবো। আমি চলে গেলে তোমার পাশে কে থাকবে?”
“অহনা আছে, ও থাকবে আপনি যান খেয়ে তারপরে আসবেন”
অর্ণব নীলিমা চলে গেল। আনায়া একটু চোখ বুঝলো। ওর শরীর ভালো লাগছে না। হাতে ব্যথা করছে। হাতে ব্যান্ডেজ ও সেলাইন লাগানোর কারণে হাতটা নড়াতেও পারছে না।
সন্ধ্যার দিকে আনায়াকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো। আবির এখনো বোনের সাথে দেখা করেনি। অর্ণব বাহিরে গিয়েছে। এই সময় আবির এলো। আনায়া ঘুমিয়ে আছে। ওকে হাই পাওয়ারের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। আবির নিশ্চুপে এসে বসলো বোনের পাশে। আদরের বোনের এই হাল দেখে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। কিছুক্ষন বসে থেকে আনায়ার কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বেরিয়ে যাবে এমন সময় অর্ণব রুমে ঢুকল। দুজনের চোখেচখি হলো। আবির চলে যেতে নিল।
“কথা বলবি না আমার সাথে?”
আবির দাঁড়িয়ে পড়ল। কিন্তু কি বলবে ভেবে পেল না। অর্ণব আবিরের সামনে দারিয়ে বলল,
“কি হলো কথা বলবি না আমার সাথে? এখনো রাগ করে আছিস? আমি মানছি আমার ভুল ছিলো। আমার কারণেই আনায়ার এই অবস্থা। তোর যা ইচ্ছা তাই বল। তবুও আমার সাথে কথা বল প্লিজ”
আবির হটাৎ অর্ণবকে জাপ্টে ধরল।
“সরি দোস্ত। তখন আমার মাথা ঠিক ছিলো না। বনুর এই অবস্থা দেখে যা মুখে এসেছে তোক তাই বলে দিয়েছি। আমার এগুলো বলা উচিত হয়নি। আমি তো জানি তুই বনুকে কতোটা ভালোবাসিস। আমার নিজের কাছেই লজ্জা লাগছিলো তাই তোর সাথে কথা বলিনি”
“আরেহ সমস্যা নাই। যা হয়েছে হয়েছে, এখন সব ভুলে যা। আমরা সবাই মিলে আনায়ার খেয়াল রাখবো তাহলেই ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে”
অর্ণব একটু থেমে হিংস্রতা নিয়ে বলল,
“তবে ওর এই অবস্থার জন্য যে দায়ী আমি তাকে ছাড়বো না। জীবিত কবর দিবো আমি তাকে”
দুই বন্ধুর মাঝে মান অভিমান শেষ হলো। অর্ণব আবির আরো কিছুক্ষন কথা বলল। কথা শেষ করতেই আবির চলে গেল। অর্ণব রুমে ঢুকতেই নজরে এলো আনায়ার ঘুমন্ত মুখ। কি মায়াবী সেই মুখশ্রী। তাকালেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। প্রিয়সীর এই হাল অর্ণব সহ্য করতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছে। পীড়া দিচ্ছে বুকে।
গভীর রাত্রে সবাই ঘুমে মগ্ন। আবছা আলোয় আলোকিত ঘর। চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে একটা যুবককে। তার সামনে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে এক সুদর্শন যুবক। তবে তাকে দেখে এখন খুবই ভয়ংকর লাগছে। অর্ণব পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
“কু*ত্তার বাচ্চা সত্যি করে বল তোকে কে পাঠিয়েছে? কার কথায় তুই আমার বউয়ের ওপর গুলি চালিয়েছিস। সত্যি কথা বললে তোর শাস্তি কম হবে। তাড়াতাড়ি বল, নাহলে এইযে বন্দুক দেখছিস এর মধ্যে যতগুলো গুলি আছে সব গুলো তোর মাথায় চালান করে দিবো”
এই নিয়ে চারবার অর্ণব ছেলেটাকে প্রশ্ন করলো তবে প্রতিবারই একই উত্তর। অর্ণব ভাবলো এবার হয়তো ছেলেটা অন্য কিছু বলবে। তবে ওকে ভুল প্রমান করে ছেলেটা বলল,
“আমাকে কেউ পাঠায়নি। আমি নিজেই গুলি করেছি। আমাকে কেউ পাঠায়নি, কেউ না”
অর্ণবের মাথা গরম হয়ে গেল। ওর দলের ছেলে আরিফকে ইশারায় কিছু বলল। আরিফ একটা সুইচ টিপ দিতেই ছেলেটা গগণবাদী চিৎকার করে উঠল। অর্ণব বাঁকা হাসলো। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতে হয়। সুইচ অফ করা হলে ছেলেটা তড়িঘড়ি বলা শুরু করলো,
“আমি বলছি কে আমাকে গুলি করতে বলেছিলো”
অর্ণব বাঁকা হেসে বলল,
“এইতো লাইনে এসেছিস তবে। তাড়াতাড়ি বল”
ছেলেটা তোতলাতে তোতলাতে বলল,
“আমাকে পাঠিয়েছে…”
#চলবে?
#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৩২
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
“আমাকে পাঠিয়েছে নিশান স্যার।তবে ম্যামকে না আপনাকে সুট করার জন্য। আপনাকে সুট করার সময় ম্যাম আমাকে দেখে ফেলে আর আপনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। তাই গুলি গিয়ে ম্যামের গাঁয়ে লাগে”
অর্ণব আগেই আন্দাজ করেছিল এটা নিশানের কাজ। কিন্তু শিওর ছিলো না। রাজনীতি তে শত্রুর অভাব নেই। তাই শিওর না হয়ে কিছু করতেও পারছিলো না। অর্ণব বাঁকা হেসে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোর সাহস আছে বলতে হবে নাহলে এমপি অর্ণব সিকদারকে মা*রতে আসিস। কিন্তু এই সাহসই যে তোর ধ্বংস ডেকে আনবে । তোর একবারও বুক কাঁপলো না? একবারও ভাবিসনি অর্ণব সিকদার জানতে পারলে তোর কি হাল করতে পারে। নিজের এই দুঃসাহসিকতার ফল ভোগ করার জন্য প্রস্তুত হো”
অর্ণব একটা ছেলেকে ইশারা দিলো। ছেলেটা সায় জানাতেই অর্ণব বেরিয়ে এলো বাহিরে। ভিতর থেকে আতর্নাদ শোনা যাচ্ছে। করুন সেই আর্তনাদ। অর্ণব বাঁকা হাসলো। ওকে শেষ করতে যে আসবে তাকে নিজেকে শেষ হতে হবে। পকেট থেকে ফোন বের করলো। ডায়াল করলো কারো নাম্বারে। রিসিভ হতেই বলা শুরু করলো,
“নিশান আহমেদ কে আমার চাই, এই মুহূর্তে চাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে আমার সামনে দেখতে চাই , গট ইট”
ওপর পাশের জনকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দিলো। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এখনো চোখের সামনে আনায়ার সেই রক্তাক্ততার ঘটনা ভেসে উঠে। অর্ণব এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।
ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালানো হলো। আলোর ঝলকানিতে মুহূর্তেই চারিপাশ আলোকিত হয় উঠল। ফ্লোরে চোখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে এক যুবক। অর্ণব একপা একপা করে এগিয়ে গেলো কাছে। খুলে ফেলল চোখের বাঁধন। ছেলেটা চেঁচিয়ে বলল,
“তুই? তুই এখনো ম’রিসনি? তুই এখানে কিভাবে? তোর তো এতক্ষনে টপকে যাওয়ার কথা। তুই ম’রে গিয়ে ভুত হয়ে আসিসনি তো? আমাকে এখানে এভাবে এনেছিস কোনো? কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছিস না কোনো?”
অর্ণব রয়ে সয়ে বলল,
“কুল ব্রো কুল। এতো হাইপার হওয়ার কিছুই নেই। এক এক করে সব প্রশ্নের উত্তর পাবি। এখন এতটুকু জেনে রাখ আমি বেঁচে আছি আর তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি”
অর্ণব একটা চেয়ার নিয়ে নিশানের বরাবর বসল। একপা তুলে রাখলো আরেক পায়ের ওপর।
“আমাকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছিলি কিন্তু কোনো? আমি তো তোর কোনো ক্ষতি করিনি, তাহলে আমাকে মারতে চাইছিস কোনো?”
“হ্যাঁ আমি ই তোকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছি। তোকে আমি শেষ করে দিতে চাই, একদম খু’ন করে ফেলতে চাই তোকে। তোকে আমার সহ্য হয়না, সহ্য হয়না তোকে আমার”
নিশান ক্ষিপ্ত স্বরে কথা গুলো বলে থামলো তবে অর্ণব একদম শান্ত। ঝড় আসার আগে পরিবেশ যেমন শান্ত থাকে তেমন শান্ত।
“মারতে চাস ঠিক আছে তবে কারণটা কি শুনি?”
“কারণ তুই আমার কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়েছিস, সব কিছু। ছোটো বেলা থেকে আমি সব সময় সব কিছুতে ফার্স্ট হতাম। কখনো সেকেন্ড হয়নি। কিন্তু তুই স্কুলে আসার পর থেকে আমি সব সময় সেকেন্ড হতাম। আমার ফ্রেন্ডরা আমায় নিয়ে মজা নিত। যেই সকল টিচার আমাকে ভালোবাসতো তারা তোকে বেশি প্রায়রিটি দিতো। আমার সব কিছু তোর হয়ে যাচ্ছিলো। আমার জায়গাটা তুই কেড়ে নিয়েছিলি।যেটা আমি মোটেও সহ্য করতে পারতাম না। তোকে দেখে আমার হিংসে হতো। আমি আমার জিনিসে অন্যেকারো ভাগ্য কখনো মেনে নিতে পারিনা। তোর মনে আছে স্কুলে তুই একবার সিঁড়ি দিয়ে পড়ে গিয়েছিলি? সেদিন আমি তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম। কেউ না দেখলেও সেদিন ইমন সেটা দেখে ফেলে ও আমাকে ব্ল্যাকমেল করে ও সবাইকে বলে দিবে তখন আমি ওকে ভয় দেখাই বলি ও যদি সত্যি কথা বলে দেয় তাহলে আমি ওকে ফাঁসিয়ে দিবো। ওর কাছে তো কোনো প্রমান নেই। সবাই ওর থেকে আমাকে বেশি বিশ্বাস করবে। সেই ভয়ে ও চুপ করে যায়। সেই বার পরীক্ষায় আমি ফার্স্ট হই। তখন আমার মাথায় আসে তুই না থাকলেই আমি আমার সব কিছু ফিরে পাবো। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নেই আমি তোর সাথে মিশে তোকে শেষ করবো । তাইতো নিজে সেধে তোর সাথে বন্ধুত্ব করেছিলাম। তুইও আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিলি। তোর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে আমি অনেক বার তোকে শেষ করতে চেয়েছিলাম তবে পারিনি। প্রতিবারই তুই কোনো না কোনো ভাবে বেঁচে যেতি। মনে আছে একবার আমরা বন্ধুরা বন্ধুরা মিলে নদীর পারে পিকনিক করতে গিয়েছিলাম? তুই পা পিছলে পানিতে পড়ে গিয়েছিলি। সেদিনও আমিই সেখানে পানি দিয়ে জায়গাটা পিচ্ছিল করে রেখেছিলাম। আমি জানতাম তুই সাঁতার পারিস না। ভেবেছিলাম তুই পানিতে ডুবে ম’রে যাবি। তবে সেদিনও তোর ভাগ্য তোর সাথে ছিলো। তাই সবাই তোকে টেনে পানি থেকে তোলে। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি তোর থেকে তোর সব চাইতে প্ৰিয় জিনিসটা কেড়ে নিব। প্রতি বারের মতো সেবার আর আমি হেরে যায়নি। তোর থেকে তোর প্ৰিয় জিনিসটা কেড়ে নিয়েছিলাম। তারপর তোর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তোকে ভার্সিটি থেকে বের করেছি। এরপর তুই চলে গেলি দেশের বাহিরে। তবে এবারও তোর ভাগ্য তোর সাথে ছিলো তাই তুই পুনরায় তোর প্ৰিয় জিনিসটা নিজের করে পেয়েছিস। তাই এবার আমি ভেবেছি তোকে একেবারে মেরে ফেলবো। না থাকবে বাঁশ, না বাজবে বাঁশি। তবে অবাক করা বিষয় দেখ এবারও তুই বেঁচে গেলি। আর আমি প্রতিবারের মতো হেরে গেলাম”
নিশান থামলো। এক সাথে এতো কথা বলায় হাপাচ্ছে। অর্ণব কিছুটা অবাক হয়েছে। নিশান এতবার ওর ক্ষতি করতে চেয়েছে ও সেটা ভাবেও নি। এই সামান্য বিষয় নিয়ে নিশান এতো কিছু করবে এটা ওর ভাবনায়ও ছিলো না। ছোটো বেলা থেকেই ও পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিলো। পড়তে ওর খুবই ভালো লাগতো। সব সময় ক্লাসে ফার্স্টও হতো। স্কুলের সকল টিচার ওকে খুবই আদর করতো। সবাই ওকে অনেক ভালোবাসতো।
তবে এই সমান্য বিষয়ে কেউ যে এতো বড় শত্রুতা করতে পারে ওর জানা ছিলো না। নিশানের জন্য ওর জীবন থেকে কতো কিছু হারিয়ে গেল। অর্ণবের সেসব জিনিসের জন্য আফসোস নেই। তবে বন্ধুত্বের আড়ালে শত্রুতা ছিলো এটা ওর ভাবনারও অতীত।
“তোকে আমি কি বলবো বা আমার কি বলা উচিত সেটা আমি জানি না। তবে তুই যেই কাজ গুলো করেছিস তার জন্য তোকে শাস্তি পেতে হবে। তোর জন্য আজকে আমার বউয়ের এই অবস্থা । তোর জন্য আমি আমার প্ৰিয় জিনিসটা হারিয়েছিলাম। তোর জন্য আমাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। তোকে আমি ছাড়বো না। আমার বউয়ের এই অবস্থার জন্য তুই দায়ী। তোকে আমি ছাড়বো না, একটুও ছাড়বো না”
অর্ণব হাতে মোটা একটা রড নিল। এলোপাথারি মারা শুরু করলো নিশানকে। নিশান আর্তনাদ করে উঠছে। তবে আজকে অর্ণবের মনে একটুও মায়া দয়া হচ্ছে না। ও মেরেই যাচ্ছে নিশানকে। ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে অনেকে তবে কেউ ওকে থামালো না। এক দফা মারার পর অর্ণব থামলো। পাশে থাকা আরিফকে কিছু একটা নিয়ে আসতে বলল। আরিফ জিনিসটা এনে অর্ণবের হাতে দিলো। অর্ণব নিশানের পাশে বসে ওর হাত ব্লে’ড দিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলল। অর্ণব হিংস্র কণ্ঠে বলল,
“তোর জন্য আমার প্রিয়সীর শরীরে থেকে যতটা রক্ত ঝরেছে আমি তোর শরীর থেকেও ততটা রক্ত ঝরাবো”
নিশান ব্যাথায় চিৎকার করছে। তবে সেই চিৎকার অর্ণবের কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। অর্ণব ওকে আঘাত করে যাচ্ছে। একের পর এক আঘাত। অর্ণব যেন নিজের মধ্যে নেই। প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছে। অগণিত আঘাত করে চলেছে। অনেক ক্ষণ পর অর্ণব থামলো। ধপাস করে বসে পড়ল পাশের চেয়ারে। নিশানের অবস্থা খুবই খারাপ। হাত দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়ছে। অর্ণব একবার চাইলো সেদিকে। মুহূর্তেই মুখ ঘুরিয়ে নিল। আরিফকে ডেকে বলল,
“ওকে হসপিটালে ভর্তি করে দিয়ে আয়। আমার বউ যেই কেবিনে ছিলো ওকে তার পাশের কেবিনে রেখে আসবি”
নিশানের সামনে যেয়ে বলল,
“এবার তোকে ছেড়ে দিলাম। তোর প্রাণ ভিক্ষা দিলাম এর পরেরবার তোকে আমার বউ বা আমার আশেপাশে দেখলে খু*ন করে ফেলবো। একদম জানে মে’রে ফেলবো, কথাটা মনে রাখিস। অর্ণব সিকদার ছাড় দেয় তবে ছেড়ে দেয় না”
#চলবে?