প্রেমের তাজমহল_২ পর্ব-১২+১৩

0
11

#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব১২
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

আনায়া দাঁড়িয়ে আছে ছাদে। তপ্ত দুপুরে ব্যাস্ত শহরে মানুষের আনাগোনা থেমে নেই। দিব্বি এই কাঠ ফাটা রোদের মাঝে সবাই যার যার কাজে যাচ্ছে, বাহিরে বের হচ্ছে। আনায়া ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেসব দেখছে। রোদের তাপে শরীর জ্বলে যাচ্ছে তাও জেদ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নিচে যাবে না। অর্ণব এসেছে। নিচে আবিরের সাথে কথা বলছে।

মাঝে কেটে গেছে তিনদিন। আনায়া সেদিনের পড় বাড়ি থেকেই বের হয়নি। ভার্সিটিও যায়নি। অর্ণব কাজের চাপে ব্যাস্ত ছিলো। দম ফেলার জো নেই টাইপ। তাও সময় করে যখনই একটু ফাঁক পেয়েছে তখনই কল দিয়েছে। তবে প্রতিবার তাকে হতাশ হতে হয়েছে। অপর পক্ষ থেকে বার বার একই সুর ভেসে এসেছে,
“আপনি যেই নাম্বারে কল করেছেন তা এই মুহূর্তে ব্যাস্ত আছে”

তারমানে মেয়েটা অর্ণবের নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলেছে। অর্ণবের ইচ্ছে হলো আনায়াকে তুলে আ*ছাড় দিতে। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা সম্ভব না। তাই নিজের হাতের ফোনটাই ছুড়ে মারলো। রাগে শরীর জ্ব*লে যাচ্ছে। মেয়েটা এমন কেন? সে কেন বুঝতে চায়না অর্ণবের যে তাকে ছাড়া চলবে না। তাকে চাই মানে চাই। তাই সকল কাজ শেষ করে আনায়াদের বাড়ি এসেছে। কিন্তু আনায়া হচ্ছে হারে ব*জ্জাত মেয়ে। অর্ণব এসেছে শুনেই ছাদে যেয়ে দরজা দিয়েছে। অর্ণবের মেজাজ এখন উত্তপ্ত হয়ে আছে। আনায়াকে সামনে পেলে নিঃঘাত তুলেই আ*ছাড় দিতো। দাঁতে দাঁত চেপে আবির কে বলল,
“তোর বোন কোথায়?”

আবির বেচারা বুঝতে পারছে অর্ণব রেগে ফায়ার হয়ে আছে। কিন্তু ওরই বা কি করার আছে! কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে ও তো সেটাই জানে না। আবির এখন না বোনকে কিছু বলতে পারছে আর না বন্ধুকে। নখ দিয়ে দাঁত কাটতে কাটতে বলল,
“তোর আসার কথা শুনেই ছাদে যেয়ে দরজা দিয়েছে। এতবার ডেকেও দরজা খোলাতে পারিনি। ওর একটাই কথা, কাঠ ফাটা রোদে দাঁড়িয়ে কালা হয়ে যাবে তাও তোর সামনে আসবে না”

“কেন আমি কি বাঘ না ভাল্লুক? তোর বোন আমার সামনে আসলে আমি কি তাকে খেয়ে ফেলবো? আজব”

“আমি কিভাবে জানবো বল! তোদের বিষয় তোরা জানিস। বউয়ের বড় ভাইয়ের সামনে এগুলো বলছিস একটুও লজ্জা করছে না? সম্পর্কে আমি তোর বড় হই সেই হিসেবে একটু তো লজ্জা রাখ”

“বড়’র গুষ্টি কিলাই। তুই তোর বোনকে এনে হাজির কর নাহয় তোর খবর আছে”

আবির বেচারা মুখ করে বলল,
“তোদের ঝগড়ায় আমায় টানছিস কেন ভাই? আমি এক মাসুম ভোলা ভালা ছেলে”

“তোমার মাসুম গিরি আমি বের করব”

অর্ণব আরো কিছুক্ষন ওয়েট করলো তবে আনায়ার আসার কোনো লক্ষণ নেই। এদিকে ওর মিটিংয়ের সময় হয়ে যাচ্ছে। অর্ণব এক বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে তো একবার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে। অবশেষে ওকে হতাশ হয়েই বেরিয়ে যেতে হলো। আনায়া যে নাছোড় বান্দা। একবার বলেছে আসবে না মানে আসবেই না।

ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলো। অর্ণবকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে খুশি হলো। অর্ণব বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছাদের দিকে তাকিয়েছিল একবার তার মায়াবতীর মুখখানা দেখার জন্য। আনায়া সেই আশায় ও পানি ঢেলে দিলো। অর্ণব তাকাতেই আনায়া টুপ্ করে নিচে বসে গিয়েছিল। অর্ণব আশাহত চোখে বাড়ির দিকে তাকিয়ে গাড়িতে যেয়ে উঠে বসলো। আনায়া মনের আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। আর গুন গুনিয়ে গান গাইছে। সামনে পড়লো আবির। আবিরকে দেখেও আনায়া না দেখার ভান করলো। নিজের মতো হেটে যেতে নিলো। পিছন থেকে আবির বলে উঠলো,
“এমনটা না করলেও পারতি বনু। অর্ণব বড্ড আশা নিয়ে এসেছিলো। তোদের মাঝে কি হয়েছে জানি না তবে এটা কথাই বলবো ছেলে হিসেবে অর্ণব মোটেও খারাপ না। যা করবি ভেবে চিন্তে করিস”

“প্লিজ ভাইয়া আমার আর এসব ভালো লাগছে না”

আবির আর কিছু বলল না। আনায়াকে বলেও লাভ নেই। ওর যথেষ্ট জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে নিজের ভালো মন্দ বোঝার। আনায়া নিজের রুমে চলে এলো।
——-

আনায়া ঘুমিয়ে আছে গভীর ঘুমে। গাঁয়ে চাদর জড়িয়ে রেখেছে। বিকেলের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। এমন সময় পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো। আনায়া ঘুমের মাঝেই ভ্রু কুঁচকে নিলো। বালিশ কানে চেপে উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। কিন্তু লাভ হলো না। একের পর এক ফোন বেজেই চলেছে। আনায়া বিরক্ত হয়ে ঘুম ঘুম চোখে কল রিসিভ করে বলল,
“কে ভাই আপনি? এতো রাতে কল দিয়ে মানুষের রাতের ঘুম হারাম করছেন”

“ভাই না তোমার ভবিষ্যত জামাই। আমি তো তোমার এক রাতের ঘুম হারাম করেছি। আর তুমি যে আমার শত শত রাতের ঘুম হারাম করে বসে আছো সে বেলায়?”

আনায়া থতমত খেয়ে গেল। কে এই লোক? রাতের বেলায় কল দিয়ে কীসব আবোল তাবোল বকছে। আনায়া ফোন সামনে ধরলো। অপরিচিত নাম্বার। আনায়া ভ্রু কুচকে ফেলল।
“আবোল তাবোল না বকে নাম বলুন নাহয় আমি রাখছি”

ওপর পাশ থেকে রাশভারী কণ্ঠে ভেসে এলো,
“অর্ণব সিকদার”

আনায়া হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো। চোখের ঘুম যেন নিমিষেই কেটে গেল। সাথে সাথে কল কেটে দিলো। নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলবে তার আগেই ম্যাসেজ এলো,
“নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেললে খবর আছে বলে দিলাম। ফোন রিসিভ করো কথা আছে। আর ফোন রিসিভ না করলে খবর আছে বলে দিলাম”

আনায়া রিপ্লাই দিলো,
“ফোন রিসিভ করবো না। আপনি যা করার করেন”

অতঃপর ফোন সায়লেন্ট করে ফের ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো। কিছুক্ষন পর আনায়ার মনে হচ্ছে ওর বিছানা সহ ও কাঁপছে। তার মানে কি ভূমিকম্প হচ্ছে? কিন্তু এই ভূমিকম্প যে থামার নামই নিচ্ছে না। আনায়া উঠে বসলো। এদিক ওদিক তাকালো। ভূমিকম্প হলে তো পাশে রাখা পানির গ্লাসের পানি কেঁপে উঠলো। সেটা হয়নি। তাহলে! আনায়া খেয়াল করে দেখলো ওর ফোন বাজছে। একটু আগের নাম্বার থেকে কল এসেছে। আনায়া কেটে দিলো। বার্তা এলো,
“২মিনিটের মাঝে ছাদে আসবে নাহয় রুমে চলে আসবো। যদি চাও এই রাতের বেলা পর পুরুষ হয়ে তোমার রুমে আসি তবে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি টুপ্ করে চলে আসবো”

আনায়া শুকনো ঢোক গিললো। এখন কি করবে?কিছুই মাথায় এলো না। ভাবতে ভাবতে কেটে গেল ২ মিনিট সময়। ফোন বেজে উঠলো। আনায়া ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলো।
“তুমি কি চাচ্ছ আমি তোমার রুমে আসি? এই রাতের বেলা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের রুমে গেলে সেটা কিন্তু মোটেও তোমার জন্য ভালো হবে না।তার ওপর জানোই তো এমপিদের চরিত্র ভালো হয়না। আমি কি আসবো?”

শেষের কথা গুলো অর্ণব স্লো ভয়েসে বলল। আনায়া শিউরে উঠলো। হুড়মুড় করে বলে উঠলো,
“আমি আসছি। আপনার আসার দরকার নেই। আসছি আমি”

কল কেটে গেয়ে সুন্দর মতো ওড়না জড়িয়ে ছুটলো ছাদের দিকে। ছাদের দরজায় পা রাখতেই চোখে পড়লো কালো রঙের টিশার্ট, টাউজার পরিহিত অর্ণবকে। টাউজারের পকেটে হাত গুঁজে ছাদের দরজার দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। আনায়া ওকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে খানিকটা ভরকে গেল। পিপিলিকার মতো পিলপিল পায়ে হেটে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অর্ণব এক পলক আনায়াকে ঠিক করে দেখে নিলো। হুট্ করে আনায়ার বাহুতে ধরে ঘুরিয়ে ওকে রেলিংয়ের সাথে চেপে ধরলো। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,
“কি সমস্যা? ইগনোর করছো কেন? কি ভুল করেছি আমি? যেই ভুলের সাজা দিচ্ছ আমায়”

আনায়া চুপ। তবে অর্ণব চুপ রইল না,
“তোমার পিছনে পা*গলের মতো ঘোরাই কি তবে আমার অপরাধ? আমায় মানুষ মনে হয় না? আরে একটা বিড়ালও যদি মানুষের পিছনে সারাদিন রাত ঘুর ঘুর করে তাহলে সেই মানুষটার বিড়াল টার ওপর মায়া হয়। আর আমি তো মানুষ। তাও তোমার আমার প্রতি মায়া হচ্ছে না? সারাটা দিন এদিক সেদিক ছুটোছুটি করেও সময় করে তোমার খোঁজ নেই। তাও তোমার আমার প্রতি মায়া জন্মায় না? এতো কষ্ট দিয়ে কি শান্তি পাচ্ছ তুমি শুনি? আমি মানুষটা কি এতটাই খারাপ?”

আনায়া তাও চুপ। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অর্ণব খানিকটা জোরেই আনায়ার বাহু চেপে ধরেছে। অর্ণবের সেদিকে খেয়াল নেই।
“কি হলো? উত্তর দেও”

আনায়ার কোনো সারা শব্দ না পেয়ে অর্ণব থামলো। নিজের রাগ কন্ট্রোল রার চেষ্টা করলো। আনায়ার থুতনিতে হাত রেখে মুখ ওপরে তুলল। প্রেয়সীর চোখে পানি দেখে রাগ গলে নিমিষেই জল হয়ে গেল। ব্যাকুল হয়ে উঠলো প্রেয়সীর অশ্রু থামাতে।
“এই মেয়ে কাঁদছো কেন? আমি কি তোমায় মে*রেছি? তুমি আমায় ইগনোর করবে, কষ্ট দিবে তারপর নিজেই কাঁদবে। এটা কোন ধরণের নিয়ম শুনি?”

আনায়ার কান্না থামার নাম নেই। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে। অর্ণব এই প্রথম মেয়েটাকে কাঁদতে দেখলো। হাত বাড়িয়ে মুছে দিলো অশ্রু। তাও গড়িয়ে পড়ছে। অর্ণব আর কোনো উপায় না পেয়ে আনায়াকে জড়িয়ে ধরলো। আনায়ার কান্না এক নিমিষে থেমে গেল। নিজের অস্তিত্ব অর্ণবের বাহুডোরে উপলব্ধি করতে পেরে থমকে গেল। অর্ণব আনায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্ত স্বরে সুধালো,
“আমায় ইগনোর কেন করছো বলো? আমার তো কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি আমার কষ্ট উপলব্ধি করতে পারছো না?”

আনায়া সময় নিলো। নিজেকে সামলে নিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল,
“রাজনীতি করা মানুষদের লাইফ রিস্ক থাকে। তাঁদের পিছনে শত্রুর অভাব নেই। যে কোনো সময় তাদের কিছু হয়ে যেতে পারে। না পেলে দুঃখ নেই। তবে পেয়ে হারানোর যন্ত্রনা ভীষণ। আমি আপনাকে হারাতে চাইনা, এমপি সাহেব”

#চলবে?

#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব১৩
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

“আমি আপনাকে হারাতে চাই না এমপি সাহেব”

অর্ণব যেন চমকালো, থমকালো, হতোভম্ব হলো। ওর নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না। এতক্ষন কষ্ট লাগলেও এখন মনে আনন্দের দোলা দিয়ে যাচ্ছে। অর্ণবের মনে এক পশলা বৃষ্টি ছুঁয়ে গেল। প্রেয়সীর মুখে নিজেকে হারানোর ভয়ে তটস্ত হওয়ার কথা শুনে কার না ভালো লাগে! হিমেল হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে দুজনকে। অর্ণব আনায়ার মাথাটা নিজের বুকে আরেকটু চেপে ধরে সুধালো,
“তুমি আমাকে হারানোর ভয় পাও মায়াবতী? ভালোবাসো আমায়?”

আনায়া নিজের মাথা অর্ণবের বুকে থেকে সরিয়ে নিলো। সরে আসতে চাইলো অর্ণবের বাহু বন্ধন থেকে। ওর কেমন অসস্তি হচ্ছে। তবে অর্ণব আনায়াকে ছাড়লো না। আনায়া অর্ণবের বুকে আঙ্গুল দিকে খোঁচা দিয়ে বলল,
“এইযে মিস্টার ওখানেই থেমে যান। আগে বাড়লে দেখা যাবে খাঁদে পড়ে যেতে পারেন”

“থামবো কেন? এখন তো আগানোর সময়। প্রেয়সীর নিকটবর্তী হওয়ার সময়”

“আমি বলেছি আপনাকে হারাতে ভয় পাই। তারমানে এই না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি। যদি আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয় এরপর দেখা গেল শত্রুর শত্রুতায় আপনি অক্কা পেলেন। বিয়ের আগেই বিধবা হতে হবে। আমি ভাই এতো তাড়াতাড়ি বিধবা হতে চাইনা”

“অক্কা পেয়ে ভুত হয়ে ফিরে আসবো। তাও তোমার পিছু ছাড়বো না”

আনায়া অর্ণবের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“অ*সভ্য এমপি”

“এখনো তো অসভ্য তা করলামই না এতেই অসভ্য তকমা দিয়ে দিলে? দিয়েই যেহেতু দিয়েছো এখন তো সেটা প্রমান করতে হবে। মায়াবতী এতো ভালোবেসে একটা নাম দিয়েছে আমায়। আর ইউ রেডি মায়াবতী”

আনায়া অর্ণবের কথার মানে বুঝলো না। তাকিয়ে রইল অর্ণবের দিকে। অর্ণব একটু একটু করে ওর মুখ এগিয়ে আনছে আনায়ার দিকে। অর্ণব যখন খুবই কাছে আনায়া তখন বিষয়টা বুঝতে পারলো। তবে ততক্ষনে ওর নিজের ওপর কন্ট্রোল নেই। অর্ণব ওর খুবই কাছে। আনায়ার মনে হচ্ছে ও রোবট হয়ে গেছে। অর্ণবকে নিজের এতটা কাছাকাছি অনুভব করে খেই হারিয়ে ফেলেছে। অর্ণব অগ্রসর হচ্ছে ওর দিকে। আনায়া ভয়ে চোখ বুজে নিলো। সময় গড়ালো তবে কিছুই অনুভব হলো না। আনায়া ধীরে ধীরে চোখ খুললো। চোখের সামনে অর্ণবের মুখশ্রী ভেসে উঠলো। অর্ণব এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার মায়াবতীর দিকে। আনায়াকে তাকাতে দেখে বলল,
“আমার মায়াবতী হচ্ছে স্নিগ্ধ, পবিত্র। আমি চাইনা তার স্নিগ্ধতায় কলঙ্ক লাগুক। আজ হোক কাল হোক তাকে আমার হতেই হবে। তাই এতো তারা নেই”

আনায়া অর্ণবের কথা গুলো শুনলো। তবে কোনো প্রতিউত্তর করলো না। দুজনের মাঝে নীরবতা। কারো মুখে কোনো কথা নেই। হটাৎ আনায়ার কিছু মনে হতে জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা আপনি ছাদে এলেন কি করে? মেইন গেট তো আটকানো”

“পাইপ বেয়ে বেয়ে এসেছি। তুমি ভাবতে পারো একজন এমপি কতটা অসহায় হলে পাইপ বেয়ে প্রেয়সীর সাথে দেখা করতে আসে! কিন্তু যার জন্য এসেছি সেতো আর আমায় ভালোবাসে না। আমাকে হারানোর ভয়ও পায়না। সে ভয় পায় বিধবা হওয়ার”

আনায়া বুঝলো অর্ণব ইচ্ছে করে এগুলো বলছে। ওকে শুনানোর জন্য। তবে আনায়া তো এতো সহজে তার এমপি সাহেবের কাছে ধরা দিবে না। আনায়া মিটিমিটি হেসে মনে মনে বলল,
“আনায়ার মনের কথা জানা এতো সহজ না এমপি সাহেব। তার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হবে। মুখ ফসকে বলে ফেলেছি বলে কি ভেবেছেন আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাবো? উহু, মোটেও না”

অর্ণব আনায়াকে ছেড়ে দিলো। দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে এক ফালি চাঁদ দেখা যাচ্ছে। মেঘেদের মাঝ থেকে উঁকি দিচ্ছে। আনায়া মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে চাঁদের পানে। আর পাশে দাঁড়ানো অর্ণব এক মনে তাকিয়ে আছে তার মায়াবতীর পানে। চাঁদের আলোয় মেয়েটার সৌন্দর্য যেন কয়েক গুন বেড়ে গেছে। অর্ণব তো তার থেকে চোখই সরাতে পারছে না। চাঁদের আলো এসে পড়ছে আনায়ার মুখশ্রীতে। কোমর সম খোলা চুল একটু। পর পর হওয়ার তালে তালে দুলছে। অর্ণবের ইচ্ছে করছে আনায়ার চুলগুলো ছুঁয়ে দিতে। বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে আনায়ার দিকে। সময় গড়িয়ে চলেছে আপন গতিতে।
“আপনি বাড়ি যাবেন না?”

“যাওয়া তো দরকার তবে যেতে যে ইচ্ছে কছে না”

“সেটা বললে তো হবে না। আপনিও বাড়ি যান, আমিও রুমে যাই। ঘুম পাচ্ছে”

অর্ণব কথা বাড়ালো না। চলে যেতে নিলো। আনায়া থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আপনাকে কষ্ট করে পাইপ বেয়ে যেতে হবে না। আপনি আমার সাথে আসুন আমি দরজা খুলে দিচ্ছি”

“থাক লাগবে না”

“আরে না বললেই হলো নাকি? পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে পড়ে কোমর ভাঙলে এদেশের নাগরিকরা বলবে আমি তাঁদের এমপির কোমর ভেঙ্গে দিয়েছি। দেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে আমিতো সেটা হতে দিতে পারিনা। আপনি আমার সাথে আসুন”

আনায়া আগে আগে যাচ্ছে। অর্ণব ওর পিছু পিছু আসছে। আনায়া দোতলায় নেমে আশেপাশে ভালো করে দেখে নিলো। কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে আনায়ার মান সম্মান শেষ। যেই ছেলেকে বিয়ে করবে না বলে রিজেক্ট করলো তার সাথেই ওকে এতো রাতে দেখলে বিষয়টা ভালো দেখাবে না। না! আশেপাশে কেউ নেই। আনায়া নেমে যেয়ে দরজা খুলে দিলো।

অর্ণবের যেতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে মায়াবতীর আশেপাশেই থেকে যেতে। কিন্তু সেটা যে সম্ভব না। কোন অধিকারে সে থাকবে? অর্ণব মনে মনে পণ করলো মায়াবতী তার হলে একদিনের জন্যও মেয়েটাকে সে নিজের থেকে দূরে থাকতে দিবে না। পারলে নিজের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে দিবে। অর্ণব দরজা দিয়ে বের হলো। অর্ণব চলে যাচ্ছে আনায়া তার যাওয়ার দিকে তাকিয় আছে। হুট্ করে কি হলো! অর্ণব ফিরে এসে টুপ্ করে চুমু দিলো আনায়ার কপালে। অতঃপর ফিসফিস করে বলল,
“শুভ রাত্রি হবু বউ”

অর্ণব চলে গেল। আনায়া সেভাবেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। অর্ণব দৃষ্টি সীমার বাহিরে যেতেই আনায়ার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো মুচকি হাসি।
এমন সময় পিছন থেকে কেউ আনায়ার কাঁধে হাত রাখলো। আনায়া ভয় পেয়ে গেল। এই সময় এখান কে! ভয়ে কেঁপে উঠলো। পিছনে তাকিয়ে দেখলো নীলিমা দাঁড়িয়ে আছে।
“তুমি! আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এভাবেই কেউ হুট্ করে কাঁধে হাত রাখে?”

“তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো?”

আনায়া আমতা আমতা করলো। এখন কোনো মতেই সত্যি টা বলা যাবে না।
“আর বলো না ঘুম আসছিলো না তাই ভাবলাম বাগানে যেয়ে একটু হাটাহাটি করে আসি”

নীলিমা সন্দীহান চোখে তাকালো আনায়ার দিকে। চোখ ছোটো ছোটো করে বলল,
“কিন্তু আমি তো দেখলাম তুমি বাহিরে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছ। কারো সাথে আবার প্রেম করছো নাতো? সে এই রাতের বেলা দেখা করতে এসেছে নাকি”

“আরে ভাবি কি যে বলো না। আশেপাশে দেখে নিচ্ছিলাম আরকি”

অতঃপর হাই তুলে বলল,
“এক আর হাঁটতে ইচ্ছে করছে না ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাতে গেলাম”

“হ্যাঁ যাও। আমিও পানি নিয়ে রুমে যাই। আমারও ঘুম পাচ্ছে”

আনায়া তড়িঘড়ি করে রুমে চলে এলো। দরজা লাগিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। নীলিমা আর একটু আগে এলে আনায়ার কি হতো? ভাগ্গিস অর্ণব যাওয়ার পড়ে এসেছে। না হয় আনায়াকে লজ্জায় পড়তে হতো। যাক বাবা এবারের মতো বেঁচে গেছে এটাই অনেক।
——-

গোধূলি বিকেলে প্ৰিয়তমার সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশের অনেকে তাকে দেখে হাসছে। অনেকে আবার তার ভালোবাসার জন্য তাকে বাহ্ বাহ্ দিচ্ছে। আবিরের সেদিকে নজর নেই তার সকল মনোযোগ তো তার প্রিয়তমার পানে। যে এখন গাল ফুলিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আবিরের চারটা বাজে আসার কথা কিন্তু সে এসেছে সাড়ে চারটায়। সেই জন্য শাস্তি স্বরূপ তাকে পাঁচ মিনিট কানে ধরতে বলা হয়েছে। আবির কিছুক্ষন অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকলো। এরপর কোনো উপায় না পেয়ে কানে ধরলো।

অহনা মেয়েটা বড্ড শান্ত স্বভাবের। আবির যখন অর্ণবের সাথে ওদের বাড়িতে যেত অহনা তখন ক্লাস এইটে পড়া বাচ্চা মেয়ে। আবিরের বাচ্চা মেয়েটাকে ভালো লেগে যায়। কিউট, গুলুমুলু, টসটসে অহনাকে ওর কাছে পুরো রসগোল্লার মতো লাগে। ইচ্ছে করে টুপ্ করে খেয়ে ফেলতে। মেয়েটা এতো কিউট কেন? আস্তে আস্তে আবির মন হারায় বন্ধুর বোনের কাছে। ধীরে ধীরে আবির কিশোর থেকে যুবক হলো অপর দিকে সেই পিচ্চি অহনাও কিশোরী বয়সের পদার্পন করলো। এখন সে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের শিক্ষার্থী। এক দিন অহনার সাথে একটা ছেলেকে দেখে আবিরের সহ্য হলো না। রিয়েক্ট করলো অহনার ওপর। সেদিন অহনা জিজ্ঞেস করেই বসলো,
“কোন অধিকারে আপনি আমাকে এতো কিছু বলছেন? আমায় শাসন করছেন? কোন অধিকারে আপনি আমায় বকছেন?”

আবির চুপ রইল। কি বলবে সে! বলার মতো কি কোনো উত্তর তার কাছে আছে? উহু, নেই তো।
“কি হলো বলুন?”

আবির সেদিন দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিয়েছিলো,
“কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি”

#চলবে?