#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব১৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
অহনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। আবির যে এতো সহজে ওকে মনের কথা বলে দিবে অহনা ভাবতেই পারেনি। আবির কথা গুলো বলে এক মিনিটও দাঁড়ালো না। গট গট পায়ে হেটে চলে গেল। সেদিনের পর থেকে আবির অর্ণবদের বাড়িতে খুবই কম যেত। ও ভেবেছে অহনা হয়তো ওকে অপছন্দ করে। সেই জন্যই যতোটা সম্ভব নিজেকে দূরেই সরিয়ে রেখেছে।
মাঝে কেটে গেছে দুটো মাস। অহনা আবিরকে দেখতে না পেয়ে মিস করছে। তাকে দেখার জন্য মনটা অস্থির হয়ে আছে। অহনা মাঝে মাঝে দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি দেয় তবে আবিরের দেখা নেই। অহনা মন খারাপ করে নিজের রুমে ফিরে আসে।
একদিন আবির অর্ণবদের বাড়ি এসে এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা অর্ণবের রুমের দিকে হাঁটা দিলো। অর্ণব ডেকেছে জরুরি কথা বলার জন্য।ড্রয়িং রুমের সোফায় বসা অহনা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। ছেলেটা ওর দিকে একবারও তাকালো না। ইগনোর করে সোজা চলে গেল! অহনা পিছন থেকে আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আবির অর্ণবের সাথে কথা বলে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। হটাৎ নিজের সামনে কারো অস্তিত্ব অনুভব করতে পেরে মুখ তুলে চাইলো। অহনাকে সামনে দাঁড়াতে দেখে ফের মাথা নিচু করে বলল,
“সামনে থেকে সরো”
অহনা এক চুল পরিমানও সরলো না। ঠায় দাড়িয়ে রইল। কোমরে হাত গুঁজে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি আমায় ইগনোর করছেন?”
“ইগনোর করছি কোথায়?”
“এইযে আগের মতো বাসায় আসছেন না। আসলেও ভাইয়ার সাথে কথা বলেই চলে যাচ্ছেন। আশেপাশে কারো দিকে খেয়ালই দিচ্ছেন না”
“আশেপাশে কারো দিকে খেয়াল দেওয়ার কথা ছিলো কি?”
“ছিলো না?”
“হয়তো”
আবির চলে যেতে নিলে অহনা মৃদু কণ্ঠে বলে উঠলো,
“ভালোবাসি ভাইয়ার বন্ধু”
আবিরের পা যেন সেখানেই থেমে গেল। অহনা কি সত্যিই কথাটা বলল নাকি ও কানে ভুলে শুনলো? আবিরের মনে হচ্ছে ওর কান তব্দা লেগে গেছে। নিজেকে সামলে কোনো মতে এগিয়ে এলো। অহনার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কিছু বললে?”
“বললাম ভালোবাসি”
“সত্যি?”
“সত্যি, সত্যি, সত্যি। তিন সত্যি”
সেকেন্ড দুই একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল। অতঃপর আবিরের খুশি দেখে কে! ও পারে না খুশিতে লুঙ্গি ডান্স দেয়। এভাবেই শুরু আবির অহনার প্রেম কাহিনী। প্রেমের দীর্ঘতা যতো বাড়ছে আবির যেন নতুন এক অহনাকে আবিষ্কার করছে। আগের অহনা বড্ড শান্ত, ভদ্র, কম কথা বলা লাজুক স্বভাবের ছিলো। আর এখন টাস টাস কথা বলে। আবির এদিক থেকে একটু সেদিক গেলেই ধমকা ধমকি আর শাস্তির শেষ নেই। আবির মাঝে মাঝে নিজেই ভুলে যায় ও বড় নাকি অহনা! মেয়েটা ওকে যেভাবে শাসন করে তাতে মনে হয় অহনাই ওর বড়। কোনো মেয়ের দিকে তাকাতে পারবে না, কথা বলতে পারবে না, সারাদিন তাকে সময় দিতে হবে। আবিরের বিন্দু মাত্র ইচ্ছেও নেই অন্য মেয়েদের দিকে তাকানোর। তবে আবির একটু ব্যাস্ত থাকলেই হলো মেডাম গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে। তারপর আরকি সরি বলে চকলেট দিয়ে তার রাগ ভাঙাতে হবে। আবির প্রথমে ভেবেছিল এমন ভদ্র মেয়ের সাথে প্রেম করলে ওর কথায় উঠবে বসবে এখন ঘটনা হচ্ছে উল্টো। আবিরকে অহনার কথায় উঠবস করতে হয়। আবির মাঝে মাঝে আফসোস করে বলে,
“কোন দুঃখে যে প্রেম করতে গিয়েছিলাম এখন প্রেমিকার অ*ত্যাচার সহ্য করছি। আগেই তো ভালো ছিলো। ভাইয়ের বন্ধু হিসেবে কি সুন্দর ভদ্র মেয়ের মতো মিষ্টি স্বরে কথা বলতো। আর এখন কিছু বলার আগেই চুপ করিয়ে দেয়। হায়রে ফাটা কপাল আমার”
আবির কান ধরে রেখেছে। পাক্কা দুই মিনিট হলে অহনার বেচারার প্রতি মায়া হলো। আশেপাশে অনেক মেয়েরা আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। একজন আরেকজন কে বলছে,
“দোস্ত দেখ ছেলেটা কি সুন্দর গার্লফ্রেন্ড এর রাগ ভাঙানোর জন্য কান ধরে রেখেছে। ইসস আমার যদি এমন একটা বয়ফ্রেন্ড থাকতো”
আরেকজন বলছে,
“ছেলেটা দেখতেও কি সুন্দর। একদম চকলেট বয় টাইপ”
অহনা রাগে গজ গজ করছে। তবে আবিরকে কিছুই বলল না। আবিরকে কান ছেড়ে দিতে বললে আবির কান ছেড়ে অহনার গাল টেনে দিয়ে বলল,
“আমার কিউটি”
দুজন গল্প করছে এর মাঝেই খাবার চলে এলো। অহনা আবির যার যার মতো খাচ্ছে। কি মনে করে অহনা আবিরের সামনে খাবার ধরলো। আবির খাবারটা মুখে নিলো। নিজেও অহনাকে খাইয়ে দিলো। অহনা ইচ্ছে করেই এমনটা করছে। মেয়ে গুলোকে দেখানোর জন্য। আবির ভালো করেই বুঝলো অহনা এগুলো মেয়েগুলোকে দেখানোর জন্য করছে। একটু আগে তার কানেও কথা গুলো এসেছে। প্ৰিয়তমার বাচ্চামো স্বভাবে আবির হাসলো।
——-
“এবারের নির্বাচনে যুবক নেতা অর্ণব সিকদারের বিপরীতে হেরে যাওয়া নিজাম আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোপন সূত্রে জানা গেছে তিনি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। মাদক ব্যবসার মাধ্যমে গড়েছেন তার টাকার সাম্রাজ্য। তার জন্য শত শত যুবক আজ মাদকে আসক্ত। গোপন সূত্রে এই তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ নিজাম আহমেদের গোডাউনে তল্লাশি চালালে সেখানে থেকে কয়েক কোটি টাকার মাদক দ্রব্য উদ্ধার করেন। অতঃপর পুলিশ সকল প্রমানের ভিত্তিতে নিজাম আহমেদকে গ্রেফতার করেন। বিস্তারিত জানতে হলে চোখ রাখুন আমাদের চ্যানেলে”
প্রতিটা চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে নিউজ। নিজাম আহমেদ কে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । তার বাড়ির আশেপাশে জমেছে সাংবাদিকদের ভীড়। সবাই লাইভ টেলিকাস্ট করছে। পুলিশ নিজাম সাহেবকে হাত কড়া পড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
নিজাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা বাদের জন্য একটা রুমে রাখা হয়েছে। সেখানেই আগমন ঘটলো অর্ণবের। অর্ণব পুরো তার স্টাইলে আছে। নিজাম আহমেদের বরাবর যেয়ে দাঁড়ালো। ঠোঁটের কোণে উপহাস মুলুক হাসি ফুটিয়ে সুধালো,
“শশুর বাড়ি কেমন লাগছে নিজাম সাহেব?”
নিজাম সাহেব দাঁত কিড়মিড়ি দিলো। রাগে তার শরীর ফেটে পড়ছে। অর্ণবের হাসি যেন তার গাঁয়ে জ্বালা ধরাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চিপে বলল,
“এসব তোর কাণ্ড তাই না?”
“এতো সহজে বুঝে গেলেন? গুড । আমি আবার খুব দয়ালু মানুষ ভাবলাম বুড়ো মানুষ অনেক দিন শশুর বাড়ি যান না তাই আপনাকে শশুর বাড়ি ঘুরিয়ে আনি। ভালো করেছি না বলুন?”
“তোকে আমি খু*ন করবো হা*রাম জাদা। আমার সাম্রাজ্যে যার আগমন হবে তাকেই আমার পথ থেকে সরিয়ে দিবো। কি ভেবেছিস আমায় আটকে রাখবি? সেটা সম্ভব না”
নিজাম সাহেব তেড়ে এসে কথা গুলো বললেন। অর্ণব খুব শান্ত কণ্ঠে বলল,
“বুড়ো বয়সে এতো উত্তেজনা ঠিক না। এখন আপনার বউও বেঁচে নেই যে আপনার উত্তেজনা সামলাবে। যদিও আপনার মতো মানুষদের তো অভাব পড়বে না। সেসব বাদ দেই। একটু আগে যেটা বললেন সেটা জীবনেও করতে যাবেন না। অর্ণব সিকদার কিন্তু মোটেও ভালো লোক না। তাকে খু*ন করতে এসে যেন নিজের ম*রার ফাঁদে না নিজেই পা দেন। আর আমি মোটেও আমার বাবার মতো ভালো লোক নোই। আমার বাবা ছেড়ে দিলেও আমি কিন্তু ছেড়ে দিবো না। আপনার পাপের সাম্রাজ্য শেষ করতে আমার দুই সেকেন্ড সময় ও লাগবে না। আর যেই কয়েক বছর বাঁচতেন সেই হায়াৎ ও কমে আসবে বলে দিলাম। সো মাইন্ড ইট”
অর্ণব কথা গুলো বলে পাঞ্জাবীর হাতা গুটাতে গুটাতে বেরিয়ে এলো। সবে তো খেলা শুরু। ধ্বংসের খেলায় নামিয়েছে তাকে। এখন ধ্বংস তো নিশ্চিত। এখনো কতো কিছু বাকি! অর্ণব সিকাদারের সাথে লাগতে আসলে কি হতে পারে তা হারে হারে বুঝবে।
——
আনায়া বসে বসে বিরক্ত হচ্ছে। বিরক্তি তে কপাল কুঁচকে আসছে। এইযে সামনে বই রেখেও পড়া মাথায় ঢুকছে না। এর চেয়ে বিরক্তির বিষয় কি আছে? ইচ্ছে করছে বই টই ছেড়ে ছুড়ে কোথাও একটা চলে যেতে। কিন্তু এই রাতের বেলা সে যাবে কোথায়? দিন হলেও নাহয় একটা কথা ছিলো। আনায়া বসে বসে বিরক্ত হচ্ছে এমন সময় পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে “অ*সভ্য এমপি” নামটা। আনায়ার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। খুশি মনে ফোন রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে পুরুষালি কণ্ঠে ভেসে এলো,
“কেমন আছো মায়াবতী?”
#চলবে?
#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব১৫
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
নিস্তব্ধ রজনী নিকষ কালো আঁধারের চাদরে ঢাকা। নিস্তব্ধতার মাঝেও জোরে জোরে বিট করছে আনায়ার হৃদস্পন্দন। বেসামাল হচ্ছে মনের নিয়ন্ত্রণ। অপর পাশের মানুষটার কণ্ঠ আনায়ার হৃদয়ে তুলেছে অনুভুতির ঝড়। এই ঝড় থেকে কি আনায়া মুক্তি পাবে? নাকি তার সমস্ত কিছু এক নিমিষেই গ্রাস করে ফেলবে? আনায়া যেন বহু প্রতীক্ষায় বসে ছিলো মানুষটার কণ্ঠস্বর শোনার জন্য। আনায়ার ভয় হচ্ছে অপর পাশের মানুষটা যদি বুঝে যায় তার আকুলতা। ওর কাছে মনে হলো মন আঙিনায় যেন এক পশলা বৃষ্টি ছুঁয়ে গেল। এতো মাতাল করা কেন মানুষটার কণ্ঠ! আনায়া উত্তর করলো,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?”
“মায়াবতীর কণ্ঠস্বর শুনলে অসুস্থ আমি টাও যেন এক ঝটকায় সুস্থ হয়ে যাই। ক্লান্ত আমিটার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। মায়াবতীর সংস্পর্শে এলে অশান্ত আমিটা শান্ত হয়ে যাই। কেন বলো তো?”
“আমি কিভাবে জানবো বলুন?”
“কারণ মায়াবতীর সংস্পর্শে মায়া আছে তাই। মায়াবতী তার মায়ার পরশে ভুলিয়ে দেয় সব কিছু। তার মায়ায় ঘায়েল হয়ে আমি মাঝে মাঝে নিজেকেই ভুলতে বসি”
আনায়ার মুখে যেন কুলুপ এটে গেল। অর্ণবের কথার কথার বিপরীতে বলার জন্য ওর শব্দ ভান্ডার শুন্য। এই মানুষটার কথা এতো মাধুর্য পূর্ণ কেন? তার সামনে শক্ত খোলসে থাকতে চাওয়া আনায়াও মানুষটার কথার মুগ্ধতায় পড়ে যায়।
“আপনার এমপি না হয়ে কবি বা সাহিত্যিক হওয়া দরকার ছিলো”
“হলে ভালোই হতো তোমার আর আমার নামে পুরো একটা উপন্যাস লিখে ফেলতাম। উপন্যাসের প্রথম পাতায় লেখা থাকবে,
“আমি এক মায়াবতীর প্রেমে উন্মাদ”
আর শেষ পাতায় লেখা থাকবে,
“মায়াবতী আমার। শুধু এবং শুধুই আমার”
আনায়া এক মনে অর্ণবের পা*গলামো কথা বার্তা শুনে যাচ্ছে। মানুষটা মনে হচ্ছে আজকেই তার সকল আবেগ অনুভূতি ঢেলে দিবে আনায়ার ওপর। তবে আনায়া এতো আবেগ, অনুভূতি সামলাবে কিভাবে? নিজেই যে বেসামাল হচ্ছে ধীরে ধীরে। মনের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে প্রতি নিয়ত। অশান্ত মনটা বারবার অপর পাশের মানুষটার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে। মানুষটা নিজে তো পা*গল হয়েছেই এখন সেই সাথে ওকেও পা*গল বানানোর পয়তারা করছে। পাজি লোক একটা।
“আর যদি শেষ পৃষ্ঠায় বিচ্ছেদ লেখা থাকে তবে?”
অর্ণব শান্ত কণ্ঠে বলল,
“প্রণয়ের পাতায় বিচ্ছেদ বেমানান, বড্ড বেমানান। বিচ্ছেদ হলে যে আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো। তাই এসব কথা ভুলেও মুখে এনো না মায়াবতী”
আনায়ার লোকটার কথায় মায়া হলো। একটা মানুষকে কতটা চাইলে তার বিচ্ছেদে নিঃশেষ হওয়ার যায় আনায়া তা জানে না। তবে অর্ণবকে দেখলে খানিকটা তার আভাস পাওয়া যায়। অর্ণব চুপ মেরে গেল। আনায়া বুঝলো তার এভাবে বলা ঠিক হয়নি। তাই কথা ঘুরাতে জিজ্ঞেস করলো,
“ইদানিং অন্য মেয়েদের লাইন মারা শুরু করেছেন নাকি এমপি সাহেব?”
“এমনটা মনে হওয়ার কারণ?”
“বিগত কয়েক দিন যাবত পাত্তা কম দিচ্ছেন মনে হচ্ছে? অন্য মেয়ে পেয়ে গেছেন নাকি? এই জন্যই বলি এমপিদের চরিত্র একটুও ভালো হয়না”
অর্ণবের বুঝতে দেরি হলো না আনায়া ওকে জ্বালানোর জন্যই এসব বলছে। তবে অর্ণব সিকদার যে জ্বলার মানুষ না সে জ্বালানোর মানুষ। ওপরের ঠোঁট দ্বারা নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে সুধালো,
“আর ইউ জেলাস?”
“জেলাস আমি তাও আপনাকে নিয়ে? মোটেও না”
“তাহলে আমি তোমায় পাত্তা দিলেই কি না দিলেই কি তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না”
আনায়া তীব্ৰ অভিমান নিয়ে বলল,
“হ্যাঁ সেটাই তো আমার কি?”
আনায়ার অভিমান বুজতে পেরে অর্ণব হেসে দিলো। মেয়েটা যে নিজের ফাঁদে নিজেই পড়ে গেছে। এইটু খানি পিচ্চি মেয়ে এসেছে অর্ণব শিকাদারকে জ্বালাতে তাও কি সম্ভব! ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখেই বলল,
“শোনো মেয়ে অর্ণব সিকদারের জীবনে একজন নারী ব্যাতিত অন্য কোনো নারীর অস্তিত্ব নেই। সে এক নারীতে আসক্ত পুরুষ। সেই এক নারীর জন্য সে হাজার হাজার নারীকে এক নিমিষে প্রত্যাখান করতে প্রস্তুত”
আনায়া মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। তবে কেন সেটা ও নিজেও বুঝলো না। অর্ণব তো তার নাম উচ্চারণ করেনি তাও কেন তার এতো আনন্দ উল্লাস? ইচ্ছে করলো টুপ্ করে অর্ণবের গালে এক খান চুমু এঁকে দিতে। পর মুহূর্তেই নিজের ভাবনায় নিজেই নিজেকে গা*লি দিলো। ছি! ছি! কি বিচ্ছিরি চিন্তা ভাবনা তার। আনায়া মাথা থেকে ঝেড়ে সকল চিন্তা বাদ দিলো। এই লোককে নিয়ে ভাবতে গেলে শেষে দেখা যাবে তার ভাবনা আর এ জীবনে শেষ হবে না। এভাবেই দীর্ঘক্ষণ চললো দুজনের কথোপকথন। পুরোটা সময় আনায়া মন দিয়ে শুনলো অর্ণবের কথা গুলো। তার আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা সব। আনায়া বারংবার মুগ্ধ হয় মানুষটার কথায়। অর্ণব যেন এক ম্যাজিকের নাম যে আশেপাশে থাকলে আনায়া খুশি থাকে।
——-
সকাল সকাল আনায়া তৈরি হচ্ছে। অনেক গুলো দিন হয়ে গেছে ভার্সিটি যাওয়া হয় না। সামনে পরীক্ষা এখন ভার্সিটি গিয়ে ফ্রেন্ডসদের কাছ থেকে সকল নোট সংগ্রহ করতে হবে। নাহয় ফেল নিশ্চিত। ওর ফেল কেউ আটকাতে পারবে না। অর্ষা সোফায় বসে ফোন দেখছে। প্রায় দিন ওকে এসে বসে থাকতে হয় আনায়ার জন্য। যদিও ও ইচ্ছে করেই আগে আগে চলে আসে। ওর শখের পুরুষটা যে এই বাড়িতেই অবস্থা করে। তার মুখ দেখে দিনের সূচনা না করলে দিনটা কেমন পানসে পানসে লাগে অর্ষার নিকট। অর্ষা ফোন দেখছে এমন সময় সিঁড়ি দিয়ে কারো নেমে আসার শব্দ শুনতে পেল। অর্ষা ফোন থেকে চোখ তুলে ওপরে তাকালো। ওর এই তাকানোই যেন ওর ধ্বংস ডেকে আনলো। সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট, গলায় টাই হাতে কোর্ট ঝুলানো। শার্টের হাতা কোনোই পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা। সব মিলিয়ে আবিরকে ফর্মাল ড্রেসে দারুন লাগছে। অর্ষা কয়েক সেকেন্ডের জন্য পলক ফেলতে ভুলে গেল। মানুষটা এতো সুন্দর কেন? এইযে অর্ষা নামক এক রমণী তার দিকে ক্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে আছে সে খেয়াল কি তার আছে? উহু, মোটেও নেই। তাই জন্যই তো এতো সাচ্ছন্দে ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে নিচে নামছে। আবির যেয়ে বসলো টেবিলে। আশেপাশের কোনো কিছুর দিকেই তার খেয়াল নেই। আবিরের অপর পাশে বসা আয়ান ডেকে উঠলো,
“অর্ষা সকালে খেয়েছো? না খেলে এসো আমাদের সাথে বসে যাও”
অর্ষার ঘোর কাটলো। ওর নজর গেল অপর পাশে বসা আবিরের দিকে। লজ্জায় মাথা নামিয়ে বলল,
“না ভাইয়া আমি খেয়ে এসেছি। আপনারা খান”
আবির একবার ফিরেও তাকালো না। অর্ষার মাঝে মাঝে কষ্ট হয়। মনে প্রশ্ন জাগে,
“একতরফা ভালোবাসায় এতো কেন কষ্ট? এই কষ্ট না যায় সওয়া না যায় কাউকে বলা। এতো কেন পোড়ায় ভালোবাসার অনুভূতিগুলো?”
তবে প্রশ্নের উত্তর গুলো কখনোই ওর কাছে ধরা দেয় না। সব সময় ধরা ছোয়ার বাইরেই রয়ে যায়। ঠিক ‘আবির’ নামক পুরুষটার মতো। অর্ষা চোখ সরিয়ে নিলো। মানুষটাকে যতো দেখবে ততই তার লোভ হবে। শখের পুরুষকে একান্ত নিজের করে পাওয়ার লোভ। তাই অর্ষা আগে থেকেই নিজেকেই সামলে রাখছে।
আনায়া নিচে নামলো আরো মিনিট দুই পর। আনায়া নেমে আবিরের পাশে বসে খেতে শুরু করলো। আয়ান খাওয়ার মাঝে বলল,
“এতো দেরি কেন? এতক্ষন কি করছিলি? অর্ষা মেয়েটা সেই কখন থেকে তোর জন্য বসে আছে”
“আরে ভাইয়া ও আমার জন্য বসে থাকে না। ও তো বসে থাকে অন্য কারো জন্য”
আয়ান বুঝতে না পেরে বলল,
“মানে?”
আনায়া জিভে কামড় দিলো। কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলেছে! অর্ষার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা ওর দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে। আনায়া শুকনো ঢোক গিললো। অর্ষা ওকে একলা পেলে নিঃঘাত ওর খবর করে ছাড়বে।
“ভাইয়া ওর কথা বাদ দিন তো। আমি শুধু ওর জন্যই বসে ছিলাম”
আনায়াও অর্ষার সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
“আরে ভাইয়া আমি বলতে চেয়েছিলাম ও আমার জন্য না ওর বেস্ট ফ্রেন্ড এর জন্য অপেক্ষা করে। আর ওর বেস্ট ফ্রেন্ড তো আমিই। মজা করছিলাম তোমাদের সাথে”
কথা গুলো বলে আনায়া হাসার চেষ্টা করলো। আয়ান বলল,
“ও আচ্ছা। তাই বল”
এরপর আর কোনো কথা হলো না। আনায়া খাওয়া হলে অর্ষা কে নিয়ে বাহিরে এলো। অর্ষা দুম করে ওর পিঠে কিল বসিয়ে দিয়ে বলল,
“হা*রামি ভাইয়ার সামনে কীসব উল্টোপাল্টা বলছিলি। ভাইয়া কিছু বুঝে গেলে? তখন কি হতো?”
আনায়া পিঠে ডলতে ডলতে বলল,
“বোঝনি তো। তুই এতো টেনশন নিস্ কেন?”
অর্ষা কিছু বলল না। আনায়া ফের বলল,
“আসতে মারবি তো। পিঠ টা জ্বলে যাচ্ছে”
“একদম বেশ করেছি। আরো জোরে মা*রা উচিত ছিলো”
“এরকম করলে তোকে ভাবি বানাবো না বলে দিলাম”
অর্ষা কিছু বলবে তার আগে আবিরের কণ্ঠস্বর শোনা গেল।
“তাড়াতাড়ি আয়। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে”
আনায়া, অর্ষা আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ উঠে বসলো গাড়িতে। আবির সিট্ বেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি চলতে শুরু করলো আপন গন্তব্যে।
#চলবে?