প্রেমের তাজমহল_২ পর্ব-৩৪

0
17

#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব৩৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

গভীর রাত্রিতে শুনশান পরিবেশ। সাফেদ রঙা বেডে নিস্প্রান হয়ে পড়ে আছে আনায়া। বিগত দশ ঘন্টা যাবত মেয়েটার জ্ঞান নেই। অর্ণব মলিন চোখে তাকিয়ে আছে ওর মায়াবতীর পানে। এই তো কয়েক ঘন্টা আগেও মেয়েটা খিল খিল করে হাসছিলো, রে*গে অর্ণবের সাথে ঝগড়া করছিলো। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মেয়েটা অবচেতন অবস্থা হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। অর্ণবের চোখের কোনে পানি টলমল করছে এই বুঝি ঝরে পড়লো বলে। বুক ফেটে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। কয়েক ঘন্টা আগের ঘটনা,

আনায়া রে*গে মেগে অর্ণবের দিকে আসতে নিলো। হুট্ করে গু*লির শব্দ শোনা গেল। মুহূর্তের ব্যবধানে আনায়া লুটিয়ে পড়তে নিলো। অর্ণব দৌড়ে যেয়ে আঁকড়ে ধরলো আনায়াকে। পিঠে হাত রাখতেই হাত ভিজে উঠলো তাজা র*ক্তে। অর্ণব হাত সামনে আনার সাহস পাচ্ছে না। কাঁপা কাঁপা হাত সামনে রাখতেই মাথা ঘুরে গেল। আনায়া ততক্ষনের জ্ঞান হারাচ্ছে। অর্ণব কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না। কি থেকে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।

গু*লির শব্দে স্টাফরা সবাই এদিকে ছুটে এসেছে। ওদের সাথে তাপসও আছে। তাপস সব সময়ই অর্ণবের আশেপাশে থাকে। ছেলেটা ওকে কখনো একা ছাড়তে চায় না। অর্ণবকে এভাবে আনায়ার মাথা কোলে নিয়ে নিস্পলক চেয়ে থাকতে দেখে তাপস এগিয়ে এসে বলল,
“ভাই ভাবির তো গু*লি লেগেছে ভাবিকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। ভাই উঠুন”

তাপসের কথায় অর্ণবের ধ্যান ভাঙলো। এক ঝটকায় আনায়া কে কোলে তুলে নিয়ে উদভ্রান্তের ন্যায় এগিয়ে গেল। তাপস স্প্রিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে। অর্ণব আনায়ার মাথা কোলে নিয়ে অনবরত ডেকে চলেছে কিন্তু আনায়ার সারা শব্দ নেই। অর্ণব ডেকেই চলেছে। হসপিটালে নিয়ে এলে আনায়াকে সাথে সাথে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ণব কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। ওর গাঁয়ের অ্যাশ কালার শার্ট র*ক্তে মাখামাখি হয়ে আছে। তাপস অর্ণবের অবস্থা বুঝতে পারলো। পকেট থেকে ফোন বের করে কল লাগলো অহনার নাম্বারে। সংক্ষেপে ওকে ঘটনা বলে কল কেটে দিলো।

কিছু ক্ষণের মাঝে হসপিটালের করিডরে সিকদার বাড়ি আর খান বাড়ির মানুষে ভরে গেল। অর্ণব হাতের ওপর মুখ ভর করে অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আছে। তাপস ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণব বারবার নিজেকেই দায়ী করছে। বিড়বিড় করে বলছে,
“কোনো আমি খেয়াল করলাম না? কোনো? আমি যদি খেয়াল করতাম তাহলে এমন কিছুই হতো না। সব আমার নিজের ভুল। আমি আমার মায়াবতীকে রক্ষা করতে পারিনি। আমি একজন ব্যর্থ প্রেমিক, ব্যর্থ স্বামী। আমি পারিনি তাকে রক্ষা করতে, আমি পারিনি”

অর্ণব পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। এর মাঝেই অহনা ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাইয়া ভাবি কোথায়? ভাবির কি হয়েছে? এই ভাইয়া কিছু তো বলো”

অর্ণব একবার অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকালো অতঃপর চোখ নামিয়ে নিলো। তাপস সবাইকে ঘটনা খুলে বলল। আশালতা বেগম,মিহি কান্না কাটি করছেন। আশালতা বেগম আহাজারী করে বলেছেন,
“সব বিপদ কেন আমার মেয়ের ওপরই আসে। ও তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি”

নীলিমা, মেহনাজ বেগম, অহনা মিলে ওনাদের সামলাচ্ছেন। একটু পড়েই আবির আর আয়ান একসাথে প্রবেশ করলো। দুজনই অফিসে ছিলো। আবির সোজা এসে অর্ণবের শার্টের কলার ধরে বলা শুরু করলো,
“কিরে কথা দিয়েছিলি না আমার বোনকে সব কিছু থেকে আগলে রাখবি? এই তোর কথার মূল্য? এই তু্ই আমার বোনকে রক্ষা করেছিস?”

অর্ণব কোনো উত্তর করলো না। এর মাঝে অপারেশন থিয়েটার থেকে ডক্টর বেরিয়ে এলো। সবাই এগিয়ে গেল ডক্টরের কাছে। আবির জিজ্ঞেস করলো,
“আমার বোন কেমন আছে ডক্টর? ওর কি অবস্থা?”

ডক্টর তাড়াহুড়ো করে বলল,
“রোগীর অবস্থা তেমন ভালো না। অনেক র*ক্ত ক্ষরণ হয়েছে। র*ক্ত লাগবে। ইমার্জেন্সি এ নেগেটিভ র*ক্তের ব্যবস্থা করুণ”

“আমার এ নেগেটিভ র*ক্ত। আমি দিবো আমার বোনকে র*ক্ত”

আবির চলে গেল র*ক্ত দিতে। সবাই করিডরে বসে আছে। আশালতা বেগমের অবস্থা ভালো না। আবির র*ক্ত দেওয়া শেষে বের হয়ে ফের অর্ণবকে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো,
“তুই আমার বোনকে রক্ষা করতে পারলি না? তোকে বিশ্বাস করে তোর হাতে আমার বোনকে তুলে দেওয়াই কি আমার ভুল ছিলো? তোর জন্য আজ আমার বোনের এই অবস্থা। আমার বোনটা নিথর হয়ে হসপিটালের বেডে পড়ে আছে। তোর কাছে আমার বোনকে না দিলে আজকে আমার বোনের অবস্থা এমন হতো না। তুই পারিসনি আমার বোনকে রক্ষা করতে। আমি আমার বনুকে আর কখনো তোর হাতে তুলে দিবো না। কখনো না”

আবির কি বলছে তার ঠিক নেই। অর্ণব একটা কথার প্রতি উত্তরও করলো না। আয়ান আবিরকে সরিয়ে নিয়ে গেল। ঘন্টা খানেকের মাথায় ডক্টর বেরিয়ে এলো। অর্ণব এতক্ষনে মুখ ফুটে জিজ্ঞেস করলো,
“আমার বউ কেমন আছে ডক্টর? ওর কি অবস্থা?”

“আলহামদুলিল্লাহ অপারেশন সাকসেস ফুল। গু*লিটা পিঠে লেগেছে বলে বেশি কিছু হয়নি। আশা করি কয়েক ঘন্টার মাঝেই জ্ঞান ফিরে আসবে”

ডক্টর চলে গেল। অর্ণব ধপ করে বসে পড়লো। একটু পড়েই অর্ণব পা*গলামো শুরু করলো ও আনায়ার কাছে যাবে। মানা করলেও কে শোনে কার কথা। ও ভিতরে যেয়ে কোনো শব্দ করবে না চুপচাপ বসে থাকবে। ওর পা*গলামো দেখে ডক্টর পারমিশন দিয়ে দিলো। অর্ণব কেবিনের দরজার ঢেলে ভিতরে প্রবেশ করলো। আনায়ার মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে বুকে মোচর দিয়ে উঠলো। নিজেকে ব্যার্থ মনে হচ্ছে। আসলেই তো ও ব্যার্থ!
——

আনায়ার জ্ঞান ফিরলো অনেক সময় পর। আনায়ার জ্ঞান ফিরতেই অর্ণব আনায়াকে জড়িয়ে সেকি কান্না। আনায়া বেক্কেলের মতো তাকিয়ে দেখছিলো মানুষটার বাচ্চাদের মতো কান্না। কেউ যে ওকে হারানোর ভয়ে এতটা কাঁদতে পারে অর্ণবকে না দেখলে জানতোই না। আনায়া মনে মনে ভাবলো এই মানুষটাকে জীবনে না পেলে ভালোবাসার আসল মানে টাই হয়তো জানা হতো না। এভাবেও ভালোবাসা যায়? অর্ণবের সাথে আনায়াও কান্না করে দিলো।

একে একে সবাই আনায়ার সাথে দেখা করে গেল। অর্ণব সবাইকে চলে যেতে বলেছে। আশালতা বেগম যেতে রাজি হয়নি। নীলিমা আর আশালতা বেগম রয়ে গেছেন।

পরের দিন সকালে অর্ষা এলো দেখা করতে। ও খবর পেয়েছে রাতে। রাতে তো আর আসা সম্ভব না তাই সকাল হতেই চলে এসেছে। অর্ষা এসেই কান্না কাটি শুরু করেছে। অর্ণব একটু বাহিরে গেছে ডক্টরের সাথে কথা বলতে। নীলিমা আর আশালতা বেগম গেছেন বাড়িতে। তাপস আনায়ার পাশেই ছিলো। ছেলেটা আনায়াকে বড় বোনের মতো সম্মান করে। এর মাঝে অর্ণব চলে এলো। আনায়াকে ওষুধ খেতে দিয়ে বলল,
“ওষুধটা খেয়ে নেও”

আনায়াও বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিলো। কাল থেকে অর্ণব আনায়াকে ছেড়ে একটু সময়ের জন্যও নড়েনি। ওষুধ খাওয়ার পাঁচ মিনিটের মাথায় আনায়ার চোখ বুজে আসছে। কড়া ডোজের ওষুধ হওয়ায় ঘুমিয়ে গেল। আনায়া ঘুমিয়ে গেলে অর্ষা বলল,
“ভাইয়া আমি তাহলে এখন আসি। আবার বিকেলে এসে ওকে দেখে যাবো”

অর্ষা বেরিয়ে এলো। ওর সাথে বেরিয়ে এলো তাপস। দুজন পাশাপাশি হাটছে। আচমকা তাপস একটু ঝুঁকে অর্ষার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
“কাঁদলে তোমায় বড্ড বিশ্রী দেখতে লাগে ধনী লঙ্কা। এরপর থেকে আর কাঁদবে না”

কথা গুলো বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। অর্ষা বেক্কেলের মতো তাপসের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
——-

কেটে গেছে সপ্তাহ খানেক সময়। আনায়া এখন আগে থেকে অনেকটাই সুস্থ। তিন দিনের মাথায় জোর জবরদস্তি করে বাড়ি চলে এসেছে। ওর নাকি হসপিটালের ফিনাইলের গন্ধ সহ্য হয়না। আবির আনায়াকে ওদের বাড়িতে নিয়ে এসেছে। ওর একটাই কথা ও আনায়াকে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও ছাড়বে না। যতো দিন না আনায়া সুস্থ হয় ততদিন এখানেই থাকবে। অর্ণবও দ্বিমত করেনি। আনায়া ঘুমিয়ে আছে। আবির ওর রুমে ঢুকলো। বিছানার পাশে বসে বোনের মাথায় খানিক ক্ষণ হাত বুলিয়ে দিলো। অতঃপর চুমু একে দিলো বোনের কপালে। ওর কতো আদরের বোনটা! অর্ণব ব্যালকনি থেকে রুমে এলো। অর্ণবকে দেখে আবির চলে যেতে নিলে। অর্ণব বলে উঠলো,
“সরি!”

আবির শুনলো তবে উত্তর করলো না। অর্ণব ফের বলল,
“কিরে আমার সাথে কথা বলবি না? আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে। আমি তোকে কথা দিয়েও কথা রাখতে পারিনি। তাই বলে তু্ই আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিবি?”

আবির এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলল,
“সরি ইয়ার। সেদিন মাথা গরম থাকায় তোকে উল্টো পাল্টা বলে দিয়েছি। আমায় মাফ করে দিস। আর কেউ না জানুক আমি তো জানি তু্ই বনুকে কতটা ভালোবাসিস। আমার ভুল হয়ে গেছে”

“হয়েছে আর সরি বলতে হবে না যা হয়েছে সব ভুলে যা”

“তু্ইও”

অর্ণব আবির একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।
——-

অন্ধকারে ঢাকা কক্ষে টিমটিম করে আলো জ্বলছে। ঘর্মাক্ত শরীরে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো অর্ণব। ওর সামনে নিজাম সাহেব পড়ে আছে। নিজাম সাহেব ছেলের বদলা নিতে আনায়ার ওপর গু*লি ছোড়েন। এই বয়সে এসেও হা*রামির হা*রামি পনা কমেনি। অর্ণবের ইচ্ছে করছে একে জানে মে*রে ফেলতে। ছেলেটাকে তো আধম*রা করে ছেড়েছিল। একে একেবারে মে*রে ফেলতে ইচ্ছে করছে। হুংকার দিয়ে বলল,
“কু*ত্তার বাচ্চা কি ভেবেছিলি অর্ণব সিকদারের কলিজায় আঘাত করে পার পেয়ে যাবি? পাতালে লুকিয়ে থাকলেও তোকে সেখান থেকে খুঁজে বের করতাম আমি। তোর খুব শখ না অর্ণব সিকদারের প্রাণ ভোমরা কেড়ে নেওয়ার? আজ আমার হাতে তোর প্রাণ। পারলে নিজেকে বাঁচিয়ে দেখা”

অর্ণব হাতে ব*ন্দুক তুলে নিলো। নিজাম সাহবের দুপায়ে গু*লি ছুড়লো। গু*লির আঘাতে লোকটা চি*ৎকার করে উঠলো। তবে অর্ণবের মনে সামান্য সহানুভূতির ছিটে ফোঁটাও জেগে উঠলো না। উল্টো ওর মনে শান্তি লাগছে। অর্ণব আবার নিজাম সাহেবের দুই হাতের তালুতে গু*লি ছুড়লো। তিনি যন্ত্রনায় পুনরায় আর্তনাদ করে উঠলো। অর্ণব উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। এবার ব*ন্দুক তাক করলো কপাল বরাবর। একটা গু*লি আর শেষ খেলা। অর্ণব ট্রিগার টেনে ধরলো। গু-লি করতে যাবে এমন সময় তাপস ওকে আটকে দিলো। অর্ণব ক্রুব্দ চোখে তাকালো ওর দিকে। শক্ত কণ্ঠে বলল,
“তাপস সামনে থেকে সর”

“আইন হাতে তুলে নিবেন না ভাই। ওর শাস্তি আদালত করবে”

পুলিশ প্রবেশ করলো সেখানে। তাপস তাঁদের বলল,
“নিয়ে যান এই জঞ্জাল কে”

পুলিশ নিজাম সাহেবকে নিয়ে চলে গেল। অর্ণব হাতে থেকে ব*ন্দুক গেলে ধপ করে বসে পড়লো।
——

সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। বয়ে চলে নিজ গতিতে। আনায়া এখন প্রায় সুস্থ। হাঁটা চলা সব নিজে নিজেই করতে পারে। আনায়া বসে আছে অর্ণবের ব্যালকনিতে। একটু আগে অর্ণব বেরিয়েছে। এতো দিন তো ওকে রেখে কোথাও যেতোই না। আর গেলেও কাউকে না কাউকে ওর কাছে রেখে যেত। যেন ওর কোনো সমস্যা না হয়। এই কয়েক দিন আনায়া প্রতিটা মুহূর্তে উপলব্ধি করেছে অর্ণবের ভালোবাসার গভীরতা। ও নিঃসন্দেহে নিজেকে এখন ভাগ্যবতী বলতে পারবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

আনায়ার বিরক্ত লাগছে। তাই ভাবলো বই পড়বে। এগিয়ে গেল বুক সেল্ফ এর কাছে। বেছে বেছে উপন্যাসের বই বের করলো। কপাল কুঁচকে নিয়ে বলল,
“অ*সভ্য এমপি প্রেমের উপন্যাসও পড়ে?”

আনায়া কাউচে বসে বই পড়ছে। ত্রিশ পৃষ্ঠায় যেয়ে আনায়া একটা খাম পেল। খামটা দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো। এটা আবার কিসের খাম? আনায়া আগ্রহ নিয়ে খামটা খুলল। ভিতরে কিছু ছবি আছে। আনায়া ছবি গুলো বের করলো। ছবি গুলো দেখে ওর মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। এগুলো তো ওর ছবি। তাও আবার অনেক আগের। আনায়া যখন ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ে তখন কার ছবি। কিন্তু এগুলো অর্ণবের কাছে এলো কিভাবে? আনয়ার মাথা ভর্তি প্রশ্ন কিলবিল করছে। কিন্তু উত্তর দেওয়ার মানুষ এখন নেই।

রাতে অর্ণব এসে দেখলো আনায়া রুমে নেই। রুমে নেই মানে ব্যালকনিতে আছে এটা নিশ্চত। মেয়েটার আর কাজ কি? অর্ণব এগিয়ে গেল ব্যালকনিতে। আনায়া আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ণব পিছন থেকে আনায়াকে জড়িয়ে ধরলো।
“এই অসুস্থ শরীরে ব্যালকনিতে কি করছো?”

আনায়া জবাব দিলো না। অর্ণবের দিকে ঘুরে ছবি গুলো সামনে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
“এগুলো কার ছবি? আর মেয়েটাই বা কে?”

অর্ণব হুট্ করে আনায়ার এমন গম্ভীর প্রশ্নে ঘাবড়ে গেল। ছবি গুলো হাতে নিয়ে দেখে হেসে দিলো। হাসি মুখে বলল,
“এটা আমার মায়াবতী”

“তার ছবি আপনার কাছে এলো কিভাবে?”

“জানতে চাও?”

“হ্যাঁ”

“তাহলে শোনো।
আমি তখন সবে কলেজের গন্ডি পেরিয়েছি। বন্ধু বান্ধদের সাথে আড্ডা দিয়েই সময় গুলো যাচ্ছিলো। এমনই একদিন আড্ডা দেওয়ার জন্য এক বন্ধুকে তার বাড়ি থেকে আনতে গেলাম। সময়টা ছিলো তপ্ত দুপুর বেলা। তাঁদের ড্রয়িং রুমে বসে আছি এমন সময় আমার অপর পাশের সোফায় কেউ ধপ করে বসলো। শব্দ হওয়ার চোখ তুলে তাকালাম। এই তাকানোই যেন আমার সর্বনাশ ডেকে আনলো। লাল শাড়ি পড়া বাচ্চা একটা মেয়ে। সম্ভবত ক্লাস সেভেনে পড়ে। গোল গোল মায়াবী চোখ, ফোলা ফোলা গাল, লাল শাড়ি পড়ায় একদম লাল টুকটুকে বউ লাগছিল। আমি তার দিকে ক্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে আছি। আমায় এভাবে তাকাতে দেখে মায়াবতী জিজ্ঞেস করলে,
“তুমি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?”

আমি বাক্কেলের মতো প্রশ্ন করে বসলাম,
“আচ্ছা তোমার কি আজ বিয়ে? তুমি এভাবে লাল শাড়ি পড়ে বউ সেজেছো কেন?”

মায়াবতী আমার কথায় হেসে দিলো। সেকি হাসি তার। মাতাল করা হাসি। হাসতে হাসতে বলল,
“আরে বুদ্ধু আজকে আমার স্কুলে ডান্স পারফরমেন্স ছিলো তাই শাড়ি পড়ছি। এতো বড় হয়েও এটা জানো না? বোকা, বোকা”

সত্যিই আমি সেদিন বোকা বনে গিয়েছিলাম। সেই যে আমি ঘোরের মাঝে হারিয়ে গেলাম আর ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারলাম না।
❝মায়াবতীর মায়া আমায় মায়া জালেই আটকে ফেলল❞

ঠিক মতো খেতে পারতাম না, ঘুমাতে পারতাম না, সারাদিন তার মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো। বন্ধুদের বললে ওরা আমার মজা নিলো। হাসতে হাসতে বলল,
“বন্ধু তুমি তো ফেঁসে গেছো? প্রেম রোগে ধরেছে তোমায়”

আচ্ছা তুমিই বলো এই টুকুতেই কেউ প্রেমে পড়ে? কিন্তু আমি পড়লাম। গভীর ভাবে। মেয়েটার ভাইকে জানালাম। সে বলল,
“আগে বড় হো, পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়া। তারপর যেয়ে যদি বলিস তু্ই আমার বোনকে ভালোবাসিস তাহলে তোর সাথে আমার বোনের বিয়ে দিবো নাহয় না”

“তু্ই আমায় কথা দে ততদিন তু্ই আমার মায়াবতীকে দেখে রাখবি। তাকে অন্য ছেলেদের থেকে আগলে রাখবি। সে যেন অন্য কোনো ছেলের প্রতি আকৃষ্ট না হয় সে খেয়াল রাখবি। প্রমিস কর”

“প্রমিস”

সেদিনের পড় আমিও লেগে পড়লাম মায়াবতী কে অর্জন করার লক্ষ্যে। তার কিছুদিন পর স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাহিরে চলে গেলাম। মায়াবতীকে রেখে যেতে ইচ্ছে না করলেও আমায় যেতে হলো। তাকে সারাজীবনের জন্য আমার করে পেতে হলে আমায় তো যেতেই হবে। বুকে পাথর চাপা দিয়ে বিদেশে চলে গেলাম। যাওয়ার আগে মায়াবতীর এই ছবি গুলো কালেক্ট করেছিলাম। তাকে সরাসরি না দেখতে পারি তো কি হয়েছে ছবি তে তো দেখতে পারবো। বিদেশে এই ছবি গুলোই ছিলো আমার একমাত্র সম্বল। অতঃপর সব শেষে মায়াবতী এখন আমার, শুধুই আমার”

আনায়ার চোখে পানি। মেয়েটা কান্না করছে। অর্ণব ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“বোকা মেয়ে কান্না করছো কেন?”

“আপনি আমাকে এতো আগে থেকে ভালোবাসেন আর আমি বুঝতেই পারলাম না?”

“আমি তোমাকে বুঝতে দেই নি তাই বুঝতে পারোনি”

একটু থেমে বলল,
“ভালোবাসি বউ। অনেক অনেক ভালোবাসি আমার মায়াবতীকে”

আনায়া অর্ণবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অর্ণবের বুকে মুখ গুঁজে বলল,
“আপনার মায়াবতীও আপনাকে অনেক অনেক ভালোবাসে এমপি সাহেব”

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)