প্রেমের ধাঁরায় পর্ব-২৭

0
233

#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ২৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আরশাদ ও মালিনী পাটোয়ারী ছুটে আসেন হাসপাতালে ধৃতিকে দেখার জন্য। হাসপাতালে এসেই ধীরাজের মুখোমুখি হয় তারা। আরশাদ ধীরাজকে জিজ্ঞেস করে,
“ধৃতি কেমন আছে ভাইয়া?”

ধীরাজ বলে,
“জানি না। ভেতরে ওর চিকিৎসা চলছে। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।”

একই সময় আকাশও ছুটে আসে হাসপাতালে। তার সাথে তার দাদা দাদিও এসেছিল৷ তারা এসে ধীরাজের কাছে ধৃতির খোঁজ খবর নেয়। এদিকে আকাশকে দেখে আরশাদ একটুও খুশি হয়নি৷ বরং তার চোখেমুখে ক্ষোভ এবং ঈর্ষা ফুটে উঠছে। আকাশ অবশ্য ধৃতির অবস্থা জানতে বেশি আগ্রহী তাই আরশাদের দিকে কোন খেয়াল নেই তেমন একটা৷ এরইমধ্যে ডাক্তার বেরিয়ে আসায় আকাশ উদ্বিগ্ন হয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে,
‘আচ্ছা, মিস ধৃতি এখন কেমন আছেন?’

ডাক্তার বলেন,
“উনি এখন সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত তবে..”

“তবে কি?”

“এভাবে সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে ওনার মিসক্যারেজ ঘটেছে। ওনার পেটের বাচ্চাটিকে বাঁচানো যায়নি।”

ধৃতির কিছু হয়নি এটা শুনেই সবাই স্বস্তি পায়। মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“যাক ধৃতির কিছু হয়নি এটাই অনেক। এমনিতেও ঐ বাচ্চা একটা অভিশাপ ছিল৷ সন্তান হয় মা-বাবার ভালোবাসার প্রতীক কিন্তু ওটা ছিল ধৃতির উপর হওয়া অত্যাচারের প্রতীক। তাই এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। এমনিতেও এটা একপ্রকার জারজ সন্তানই ছিল।”

আকাশ বলে,
“এখন এসব কথা আলোচনা করার দরকার নেই ফুফু। আমাদের এখন মিস ধৃতির ব্যাপারে খোঁজ নেয়া উচিত। উনি ঝু্ঁকি মুক্ত হয়েছেন ঠিকই কিন্তু এখনো তো সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন নি। আমাদের উচিৎ ওনার সুস্থতার জন্য দোয়া করে।”

মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“ঠিক বলেছ তুমি।”

আরশাদ হঠাৎ করে ক্ষোভ দেখিয়ে বলে,
“তুমি কেন এমন ভাব দেখাচ্ছ যে ধৃতিকে নিয়ে তুমি একটু বেশিই চিন্তিত?”

আকাশ বলে,
“কারণ আমি সত্যিই ওনাকে নিয়ে চিন্তিত।”

আরশাদের রাগের মাত্রা বাড়ে। সে বলে,
“তোমায় ধৃতিকে নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না। ওর জন্য চিন্তা করার জন্য আমরা সবাই আছি।”

“মানে? এটা কেমন কথা বলছ তুমি আরশাদ? তুমি সম্পর্কে আমার ফুফাতো ভাই হও। কিন্তু তাই বলে তুমি আমায় এভাবে বলতে পারো না। মিস ধৃতির জন্য কি আমার চিন্তা থাকতে পারে না?”

“না, পারে না। কারণ ধৃতিকে নিয়ে চিন্তা করার অধিকার শুধু আমার আছে। ও আমার বাগদত্তা ছিল এবং ভবিষ্যতে শুধু আমারই বউ হবে।”

মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“এসব নিয়ে এখন তর্ক করে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। তোমরা শান্ত হও।”

এবার আলমগীর পাটোয়ারী বলেন,
“তোমার ছেলে তো দেখছি বেশ উগ্র হয়েছে। অবশ্য হবে না-ই বা কেন। রক্তের দোষ বলেও তো কিছু একটা আছে।”

আরশাদের যদিও ভীষণ রাগ হয় তবু সে নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে বলে,
“আপনি আমার গুরুজন। তাই আপনার সাথে আমি কোন রুঢ আচরণ করতে চাই না। তবে আপনার এমন অবিবেচকের মতো কথা বলা উচিৎ নয়। আমি জানি, আমার উপর আপনার রাগ আছে। কারণ আপনি মনে করেন আমার জন্য আপনার মেয়ে অর্থ্যাত আমার মা জীবনে সুখী হতে পারি নি। আমি আমার মার জন্য পিছুটান ছিলাম। হ্যাঁ, এটা সত্যি। আমি অস্বীকার করবো না
আমার জন্যই মা সংসারের পিছুটান ছাড়তে পারে নি। কিন্তু সেই ক্ষোভ থেকে আপনি এমন মন্তব্য করতে পারেন না।”

আলমগীর পাটোয়ারী মালিনী পাটোয়ারী কে উদ্দ্যেশ্যে করে বলেন,
“শুনলে তোমার ছেলের কথা? ছেলেকে কি শেখাও নি বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়?”

মালিনী পাটোয়ারী কিছু বলবেন তার আগেই ডাক্তার বলে ওঠেন,
“আপনারা প্লিজ শান্ত হন। ভুলে যাবেন না এটা একটা হসপিটাল। এখানে আপনারা ঝগড়া করছেন কেন? আপনাদের যদি ঝগড়া করার হয় বাইরে গিয়ে করুন। হাসপাতালের পরিবেশটা শান্ত রাখুন প্লিজ।”

তার কথায় সবাই চুপ হয়ে যায়। এরইমধ্যে হঠাৎ করে আরশাদ এর ফোন বেজে ওঠে। আরশাদ ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে কেউ বলে ওঠে,
“আপনি কি মিস্টার আরশাদ পাটোয়ারী বলছেন?”

“জ্বি, কেন?”

“আমি মতিঝিল থানা থেকে বলছি। আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মতিঝিল থানায় চলে আসুন।”

“থানায় কেন?”

“আপনার দাদি মিসেস গুলশেনারা বেগম এখন আমাদের জিম্মায় আছেন। উনি আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন!”

“দাদি!”

“হুম, আজ আমর ওনাকে ওনার বোনের বাসা থেকে এরেস্ট করেছি। আপনাদের বাসায় খুঁজতে গিয়েছিলাম পাইনি পরে ওনার বোনের বাসায় ওনায় পেলাম। ওনার উপর বেশ অনেক দিন আগের একটা মাডার কেইস আছে। আপনি জলদি আসুন।”

ফোন রেখে দিতেই মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“কে ফোন করেছিল আরশাদ?”

“থানা থেকে কল করেছিল।”

“কেন?”

“দাদিকে পুলিশ এরেস্ট করেছে। আমাকে থানায় যেতে হবে।”

“আমিও যাব তোর সাথে। ”

” আচ্ছা, চলো।”

দুজনেই থানার উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।

★★★
“আপনার দাদির উপর নয়না খাতুন নামের এক মহিলাকে খুনের অভিযোগ আছে। নয়না খাতুন সম্ভবত আপনার বাবা আশরাফ পাটোয়ারীর প্রথম স্ত্রী এবং আরহাম শান্তর মা।”

আরশাদ অবাক হয়ে বলে,
“কিন্তু উনি তো টাইফয়েড হয়ে মারা গেছিলন শুনেছিলাম।”

“এতদিন সবাই তা জানত। তবে আপনার বাবা আশরাফ পাটোয়ারীকে গ্রেফতার করার পর অনেক চাঞ্চল্যকর সত্য বেরিয়ে আসে। আপনার দাদি গুলশেনারা বেগমই ডাক্তারকে দিয়ে ভুল চিকিৎসা করিয়ে এবং ভুল ওষুধ দিয়ে নয়না খাতুনকে পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ উনি ক্রমাগত আশরাফ পাটোয়ারীকে চাপ দিচ্ছিলেন ওনার কাছে চলে আসার জন্য। নিজের পরিবারের আভিজাত্য বজায় রাখার জন্য আপনার দাদি এত বড় একটা অন্যায় করেছিলেন। এমনকি উনি নিজের মুখেই এটা স্বীকার করেছেন আমাদের কাছে যে উনি নয়না খাতুনের খুনি।”

মালিনী পাটোয়ারী বলেন,
“ছি! আম্মা এত নিচু কাজ করবেন আমি ভাবি নি।”

“উনি আপনাদের সাথে দেখা করতে চান।”

আরশাদ জানিয়ে দেয়,
“ওনাকে জানিয়ে দেবেন ওনার মতো পাপী মহিলার সাথে দেখা করার ইচ্ছা আমাদের নেই। উনি যা পাপ করেছেন তার জন্য অনেক গুলো জীবন এলোমেলো হয়েছে। এখন উনি তার শাস্তি পাক।”

বলেই আরশাদ চলে আসে। সাথে মালিনী পাটোয়ারীও।

★★
ধৃতি এখন অনেকটাই সুস্থ এখন তাকে বাসায় আনা হয়েছে। আজ আরশাদ এসেছে ধৃতির সাথে দেখা করার জন্য। সুস্থ হবার পর এই প্রথম। তার হাতে একটি ফুলের তোড়া। আরশাদ সেটা দিয়ে ধৃতির কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে চায়।

কিন্তু ধৃতির বাড়িতে প্রবেশ করেই আরশাদ এমন কিছু শুনল যা তাকে রাগিব তুলল। আরশাদ শুনল আলমগীর পাটোয়ারী ধীরাজকে বলছে,
“আমার একটি প্রস্তাব আছে তোমার কাছে। আমার নাতি আকাশের জন্য আমি একটা ভালো মেয়ে খুঁজছি। এজন্য আমার ধৃতির কথাই আগে মনে পড়েছে। আকাশের সাথেও আমি কথা বলে জানতে পেরেছি ওর ধৃতিকে ভালো লাগে। এখন তোমরা চাইলে ওদের চার হাত এক করে দেই।”

তার কথা শুনে আরশাদের হাত থেকে ফুলের তোড়া পড়ে যায়। সে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“নাহ! এটা হতে পারে না।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨