প্রেমের ধাঁরায় পর্ব-২৮

0
289

#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ২৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আরশাদ এগিয়ে আসে ভীষণ ক্রোধের সহিত। এসেই রাগী চোখে তাকায় ধীরাজের দিকে। অতঃপর নিজের নানা আলমগীর পাটোয়ারীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনি এমন প্রস্তাব দিতে পারেন না। ধৃতির সাথে আকাশের বিয়ে হতে পারে না৷ কারণ ধৃতি শুধুই আমার।”

আলমগীর পাটোয়ারী বলেন,
“তোমার মুখের কথায়? ধৃতির জীবনে তোমার আর কোন যায়গা নেই এটা ধৃতি অনেক আগেই পরিস্কার করে দিয়েছে। তারপর তাহলে তুমি আর কোন মুখে এসব কথা বলো?”

ধীরাজ বলে ওঠে,
“আপনারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবেন না। আমার মনে হয় ধৃতির জীবনের সিদ্ধান্ত ওর ওপরই ছেড়ে দেয়া উচিৎ। একবার আমি ওকে নিজের পছন্দের…যাক সেসব কথা। অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি আমি আর করতে চাই না৷ এজন্য আমি চাই, এবার ধৃতি সিদ্ধান্ত নিক ও জীবনে কি বেছে নেবে। যদি ও আকাশকে বিয়ে করতে চায় তাহলে আমি ওর সেই সিদ্ধান্তকে সাপোর্ট করব আবার যদি ও আরশাদের জীবনেও ফিরতে চায় সেক্ষেত্রেও আমার বাঁধা নেই।”

আরশাদ বলে ওঠে,
“আমি জানি, ধৃতি আমাকেই চাইবে৷ কারণ ও আমায় ভালোবাসে। হয়তো কিছু কারণে ও আমার উপর রাগ করে আছে কিন্তু দিনশেষে ও আমাকেই বেছে নেবে।”

আলমগীর পাটোয়ারী বলেন,
“এতটা আত্মবিশ্বাসী হবার কিছু নেই৷ আমি এই ক’দিনে ধৃতিকে যতটা চিনেছি তাতে ধৃতি আর যাই করুক আরশাদকে বেছে নেয়ার মতো ভুল করবে না। এই ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত।”

এরইমধ্যে সেখানে উপস্থিত হয় আকাশ। আকাশকে দেখেই আলমগীর পাটোয়ারী বলে ওঠেন,
“এই তো আকাশ দাদুভাই চলে এসেছে। আমার অহংকার, আমার গর্ব ও।”

আকাশ বলে,
“দাদু, আমি বাবা-মার সাথে কথা বললাম। তারা জানাল, আমার মত থাকলে তাদের এই সম্মন্ধ নিয়ে কোন আপত্তি নেই। বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হলে তারা এসে ধৃতিকে দেখে যেতে চান।”

আলমগীর পাটোয়ারী বলেন,
“এই জন্য তো আমার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমার গর্ব হয়। ওরা নিজেদের সন্তানের সিদ্ধান্তে সবসময় পাশে থাকে। তোমার বাবা-মার সিদ্ধান্তে খুশি হলাম৷ এখন শুধু ধৃতি সবুজ সংকেত দিলেই আমি এই নিয়ে কথা আগাবো। ”

বলেই আলমগীর পাটোয়ারী ধীরাজের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তুমি ধৃতির সাথে কথা বলো। কথা বলে শোনো ও কি চায়৷ ও যা চায় আমিও সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেব। কারণ আমি জানি, ধৃতি নিজের ভালোটা বুঝবে।”

এরইমধ্যে সেখানে উপস্থিত হয় ধৃতি। ধৃতিকে দেখেই আরশাদ এগিয়ে গিয়ে বলে,
“এই তো ধৃতি চলে এসেছে। ধৃতি তুমিই বলো তুমি কি চাও।”

ধৃতির মন মানসিকতা এমনিতেই কিছুদন থেকে ভালো যাচ্ছে না। তার উপর হঠাৎ এরকম প্রশ্ন শুনে সে বিরক্তির সুরে বলে,
“মানে? এটা কেমন প্রশ্ন?”

“তুমি কি এই আকাশকে বিয়ে করবে নাকি আমায়?”

ধৃতির এবার ভীষণ অস্বস্তি বোধ হয়। সে বলে,
“এটা কি ধরনের কথা? আপনারা কি শুরু করেছেন এসব!”

আকাশ বলে ওঠে,
“আপনি শান্ত হন মিস ধৃতি। আমি বুঝতে পারছি, আপনার মানসিক অবস্থা বর্তমানে খুব একটা ভালো নয়। তাই আপনি একটি শান্ত থাকুন। এখন এসব ব্যাপারে আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না। আপনি বিশ্রাম নিন।”

আরশাদ বলে,
“মোটেই না। এখন ওকে বিশ্রাম করতে বলে পরবর্তীতে ওর ব্রেইনওয়াশ করার পরিকল্পনা করছ তাই না তোমরা? আমি এটা মানবো না। ধৃতিকে এভাবে ব্রেইনওয়াশ করার সুযোগ আমি দেব না। ধৃতির যা বলার তা এখনই বলুক। ধৃতি তুমি বলো আমাকে বেছে নেবে নাকি আকাশকে?”

ধৃতি কিছুই বলে না। আরশাদ ধৃতির হাত ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলে,
“কি হলো? চুপ করে আছ কেন? বলো না, কি চাও তুমি?”

ধৃতি চেচিয়ে বলে ওঠে,
“আমার শুধু একটু শান্তি চাই। দয়া করে আমায় একটু শান্তিতে থাকতে দিন আর নাহলে একটু মরতে দিন..এছাড়া আর কিছু চাওয়ার নেই..”

বলেই ধৃতি নিজের রুমে চলে যায়। আকাশ পাটোয়ারী বলে,
“এজন্য আমি বলেছিলাম ওনাকে একটু স্পেস দিতে।”

আরশাদ রাগী স্বরে বলে,
“তোমাদের পরিকল্পনা আমি বুঝতে পারছি। তোমরা এভাবে ধৃতিকে ব্রেইনওয়াশ করতে চাইছ? এটাই হচ্ছে আসল কথা। আমি তা হতে দেব না।”

“তখন থেকে এসব কি বাজে কথা বলে চলেছ তুমি আরশাদ? আমরা কেন এমন কিছু চাইব। তোমার বুঝতে কোথাও হচ্ছে। আমরা সবাই ধৃতির সিদ্ধান্ত ওনার ওপরই ছেড়ে দিতে চাই। আর কিছু না।”

“তাহলে কেন ধৃতিকে বলতে দিলে না ও কি চায়?”

“ধৃতিকে ভাবার জন্য একটু সময় তো দাও। এত অধৈর্য হচ্ছ কেন? তোমার যদি এতই আত্মবিশ্বাস থাকে যে ধৃতি তোমাকেই বেছে নিবে তাহলে একটু অপেক্ষা করো।”

আরশাদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। কিন্তু এখন এছাড়া আর সে করার মতোও কোন পন্থা খুঁজে পায় না।

★★★
ধৃতি নিজ কক্ষে বসে ছিল৷ গত কিছু দিন থেকে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা ভাবনা চিন্তা করে দেখছিল সে। আরশাদের সাথে প্রথম দেখা, তার করা ভালো ব্যবহার সাথে অবিশ্বাস আর চরম অপমানের মুহুর্ত গুলোও মনে পড়ছিল। একই সাথে আকাশের তার বিপদের মুহুর্তে পাশে থাকা। ধৃতির উপর ভরসা রাখা এই বিষয়গুলোও ছিল তার ভাবনার মাঝে।

ধৃতির এমন ভাবনার মাঝেই ধীরাজ তার রুমে আসে। নিজের ভাইকে দেখে ধৃতি বলে,
“ভাইয়া তুমি!”

“হ্যাঁ, তোর সাথে কিছু কথা বলতে এলাম।”

“হুম, বলো।”

“তোর মানসিক অবস্থা টা আমি বুঝতে পারছি। তবে তোকে এটাও বিবেচনা করে দেখতে হবে যে, কোনটা তোর জন্য ভালো৷ আজ তোর সিদ্ধান্তের উপর কিন্তু অনেক কিছু নির্ভর করছে। মনে রাখিস, আজ তুই যেই সিদ্ধান্তটা নিবি সেই সিদ্ধান্তটা তোর ভবিষ্যত জীবন গড়ে উঠবে। তাই তাড়াহুড়ো করে বা আবেগের বশে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিস না। নিজের মনকে জিজ্ঞেস করে দেখ, তোর মন কি চায়।”

“তোমার পরামর্শ জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। তোমার কথা আমি অবশ্যই বিবেচনায় রাখব।”

এরপর ধীরাজ উঠে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর মালিনী পাটোয়ারী ধৃতিকে ফোন করে। ধৃতি ফোনটা রিসিভ করতেই তিনি বলেন,
“কেমন আছ ফুল?”

“জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?”

” আমিও আলহামদুলিল্লাহ। কিছু জরুরি কথা বলার জন্য তোমায় ফোন করলাম।”

“জ্বি, বলুন।”

“আমার ছেলে আরশাদ, ও ভীষণ জেদি এবং একগুয়ে স্বভাবের। ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছে তা নিজের করে পেয়েই ছেড়েছে। জন্ম থেকে ব্যর্থতা নামক শব্দ বা না পাওয়ার সাথে ও পরিচিত হয়নি। আমি জানি, ও এটা মেনেও নিতে পারবে না। তোমাকেও ও খুব করে চায়। আমি এটাও জানি, তোমাকে না পেলে এটা ওর জীবনের সব থেকে বড় ব্যর্থতা হবে এবং এটা ও কখনোই মানবে না।”

“…”

“তবে তার মানে এই না যে এসব বলে আমি তোমায় আমার ছেলেকে বেছে নিতে বলব৷ আমি তোমার সিদ্ধান্তকেই সম্মান জানাবো ফুল। তুমি নিজের ভালোটা বুঝে নেও। তুমি যেই সিদ্ধান্তই নিবা সেটায় আমি সমর্থন করব। যদি এতে আমার ছেলে কষ্ট পায় তবুও। কারণ আমার ছেলেকে আমি হয়তো সামলে নিতে পারব কিন্তু আবেগের বশে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমি যদি অহেতুক কষ্ট পাও সেটা আমার ভালো লাগবে না। এজন্য সেটাই করো যা তোমার মন চাইছে।”

“ধন্যবাদ, আন্টি। আমার নিজের পথ আমি বেছে নিয়েছি। এখন আমি সেই সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দেব।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨