প্রেমের পরশ পর্ব-২০+২১

0
218

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ২০(বোনাস পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ছোয়া ছাদে দাড়িয়ে আমানের বলা কথা গুলো নিয়েই ভাবছিল এমন সময় কেউ তার সামনে এসে দাড়ায়। ছোয়া সেদিকে নজর দিতেই দেখে জান্নাতুল খাতুন তার সামনে দাড়িয়ে। তাকে দেখে ছোয়া কিছুটা থমকে যায়৷ অতঃপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘বড় আম্মু আপনি? কিছু কি বলবেন?’

তিনি গম্ভীর মুখ করে বলেন,
‘আমান তোমাকে কি বলেছে সবটাই আমি শুনেছি।’

জান্নাতুল খাতুনের কথাটা শুনে ছোয়া অস্থিরতা বোধ করতে থাকে। একেই সে নিজের চিন্তায় মগ্ন ছিল তার উপর এখন এই নতুন সমস্যার সৃষ্টি হলো যা তার জন্য খুবই চাপের। ছোয়া কিছু সময় নিয়ে বলল,
‘আসলে আমান ভাইয়া,,,,’

জান্নাতুল খাতুন তাকে থামিয়ে দিয়ে রাগী স্বরে বললেন,
‘আমি সব শুনেছি ছোয়া। তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। আমি এমন কিছুই আন্দাজ করেছিলাম। আগুন এবং ঘি এক সাথে থাকলে এমনই হওয়ার কথা।’

ছোয়া মাথা নিচু করে থাকে। নিজের হয়ে কিছু যে বলবে তার সুযোগই পাচ্ছিল না। এরই মাঝে জান্নাতুল খাতুন বলে উঠলেন,
‘তুমিও কি আমানকে পছন্দ করো ছোয়া? কি হলো চুপ করে আছ কেন বলো।’

ছোয়া উত্তরে বলল,
‘নিজের অনুভূতি নিয়ে আমি সত্যি খুব সন্দীহান কিন্তু আমি আমান ভাইয়ার জন্য হয়তো কিছু ফিল করি।’

জান্নাতুল খাতুন এবার আদেশের সুরে বলে উঠলেন,
‘তুমি আমানকে গিয়ে না বলো। এমনটা হলেই ভালো হবে। দেখো আমানের সাথে আদরের এনগেজমেন্ট অলরেডি হয়ে গেছে। এখন যদি তোমার কারণে এই এনগেজমেন্ট ভেঙে যায় তাহলে আমার ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ভেঙে যাবে৷ তুমি নিশ্চয়ই এটা চাও না? তাছাড়া তুমিই তো বললে নিজের অনুভূতি নিয়ে তুমি সন্দীহান। তাহলে আমানকে মিথ্যা আশা দেওয়ার দরকার নেই। তুমি ওকে না বলে দাও তাহলেই সব দিক বজায় থাকবে।’

ছোয়া কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে বলে,
‘আপনি হয়তো ঠিকই বলছেন বড় আম্মু। আমি আমান ভাইয়াকে না বলে দিবো। এটাই ভালো হবে।’

জান্নাতুল খাতুন হঠাৎ এমন একটি কথা বললেন যা ছোয়াকে অনেক বেশি হতবাক করে দিল। তিনি বললেন,
‘আজ যা হলো তারপর আর তোমার এই বাড়িতে থাকতে হবে না। তুমি বাড়িতে আপাতত বলো যে, তোমার এখান থেকে ভার্সিটি যেতে অসুবিধা হয় তাই তুমি হোস্টেলে থেকে পড়বে। আমানের বিয়ের পর তুমি ফিরে আসিও। কারণ নাহলে আমানের তোমার প্রতি দূর্বলতা বৃদ্ধি পাবে।’

ছোয়া কিছুটা থমকে গেলেও জান্নাতুল খাতুনের যুক্তিকে সঠিক মনে করে এবং মেনে নেয়।

৩৯.
ছোয়া অনেক ভেবে অবশেষে আমানের রুমে আসে। আমান সবেমাত্র গোসল করে বাথরুম থেকে বাইরে এলো। এমন সময় ছোয়াকে দেখে সে বলে ওঠে,
‘অবশেষে তাহলে তুই এলি। বল তোর সিদ্ধান্ত কি? তুই কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস বল আমায়।’

ছোয়া একটু নার্ভাস ছিল। আমানকে কিভাবে নেতিবাচক উত্তর দেবে সেটাই ভাবছিল সে। তাই সহজে কিছু বলতেও পারছিল না। ছোয়ার এই নিশ্চুপ অবতার আমানকে আরো ধাধায় ফেলে দেয়৷ তার অস্থির মন ক্ষণে ক্ষণে আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠছিল। তাই সে বেশ উদ্দীপনার সাথে ছোয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,
‘তুই দয়া করে আর আমায় এমন অস্থিরতার মধ্যে রাখিস না। হ্যা বা না যাই বলিস না কেন একটু তাড়াতাড়ি বল।’

ছোয়া চোখ বন্ধ করে নিজের মনে শক্তি জোগায়৷ অতঃপর বেশ শক্ত গলায় বলে,
‘দুঃখিত আমান ভাইয়া। আমার উত্তর ইতিবাচক নয়। আপনি যথেষ্ট বড় হয়েছেন, তাই আপনি বুঝবেন জোর করে ভালোবাসা হয় না। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। আর আপনিও নিজের জীবন নিজের মতো করে গুছিয়ে নিন। আমার হাতটা ছাড়ুন লাগছে আমার।’

আমান তার হাতের বাধন হালকা করে বলে,
‘যাকে ধরে রাখার সাধ্য নেই তার হাত ধরে আর কি করবো৷ যা তোকে আজ আমি মুক্তি দিলাম। তোর উত্তর যখন না-বাচক তখন আমিও তোর থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তুই নিজের মতো থাক।’

কথাগুলো বলার সময় আমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছিল। নিজের বুকে পাথর চেপে তাকে কথাগুলো বলতে হচ্ছিল। ভালোবাসার মানুষকে এত কিছু বলার পরেও যখন সেই মানুষটা ভালোবাসা বুঝতে পারে না, অবহেলা করে অনুভূতি গুলোকে তখন যে মন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তেমনটাই ঘটল আমানের সাথে।

এতকিছুর পরেও ছোয়া শক্ত খোলসে আবৃত রাখার চেষ্টা করল নিজেকে। যেন সে এক শক্ত মানবী। তবে মনের দিক থেকে তার অবস্থাও ভালো না। তার মনে চাপ পড়ছে প্রচুর। আমানের প্রতি তো তারও কিছু অনুভূতি রয়েছে। যা সে উপলব্ধি করতে পারছে কিন্তু পরিস্থিতির চাপে স্বীকার করতে পারছে না। ছোয়ার মনে হতে থাকে জান্নাতুল খাতুন যখন চান না তখন এই বিষয়ে না আগানোই ভালো। শুধু শুধু পারিবারিক ঝামেলা তৈরি হবে। যেখানে তারা ছোয়ার এই অসময়ে তাকে আশ্রয় দিয়েছে তখন এভাবে তাদের মধ্যে পারিবারিক ঝামেলা তৈরি করে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিতে পারবে না ছোয়া। তাই আপাতত নিজের মনের অনুভূতি গুলোকেই সযত্নে ব’লিদান করে দিল।

৪০.
ছোয়া আব্দুল হোসেনকে তার হোস্টেলে যাওয়ার ব্যাপারে বলে। আব্দুল হোসেন অমত করে বলেন,
‘এমন কি জরুরি পড়ল যে তোকে হোস্টেলে গিয়ে থাকতে হবে?’

ছোয়া নম্রভাবে বলল,
‘খুব জরুরি জন্যই যেতে চাচ্ছি৷ শুধু তো এক সপ্তাহেরই ব্যাপার।’

আব্দুল হোসেন কিছুতেই রাজি হন না কিন্তু এমন সময় জান্নাতুল খাতুন এসে বলেন,
‘ও যখন যেতে চাইছে তখন তুমি আর আপত্তি করো না। হয়তো খুব বেশি দরকার জন্যই ও যেতে চাচ্ছে।’

জান্নাতুল খাতুন এভাবে বলায় আব্দুল হোসেন আর আপত্তি করতে পারলেন না। ছোয়াকে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন। ছোয়া ঘরে এসে নিজের প্রয়োজনীয় সবকিছু গোছাতে লাগল। মতিয়া বেগম তাকে বললেন,
‘তোর এহন হোস্টেলে যাওনের কি দরকার ক তো আমায়?’

ছোয়া বলে,
‘অনেক বেশি দরকার।’

মতিয়া বেগম আর কিছু বললেন না। এর মধ্যেই ছোয়া তৈরি হয়ে বের হলে আব্দুল হোসেন বলেন,
‘তোর একা যাওয়ার দরকার নেই। আমান তোকে পৌছে দিবে।’

ছোয়া অমত করতে চেয়েও পারে না। বাধ্য হয়ে আমানের সাথেই আসে। আমান গাড়িতে করে ছোয়াকে পৌছে দেয়। পুরো রাস্তায় সে কোন কথাই বলে না ছোয়ার সাথে। যা ছোয়াকে অবাক করে। এমনকি ছোয়াকে নামিয়ে দিয়েও আমান কিছু না বলে চলে যায় গাড়ি নিয়ে। ছোয়া হোস্টেলের সামনে দাড়িয়ে অস্ফুটস্বরে বলে,
‘এত অভিমান আপনার আমান ভাইয়া!’

এদিকে আমান গাড়িতে করে যাওয়ার সময় বলে,
‘যে আমার থেকে এক হাত দূরত্ব তৈরি করে তার থেকে আমি দশ হাত দূরে সরে আসি ছোয়া। ‘

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ছোয়া আজ ভার্সিটি থেকে সোজা চলে এলো নাদিয়ার সাথে ঘুরতে। তার মন মেজাজ ভালো নেই। তাই ভাবল ঘুরলে হয়তো মনটা একটু ভালো হবে। নাদিয়া ছোয়াকে প্রশ্ন করল,
‘আচ্ছা তুই বল আমায় কি এমন প্রয়োজন পড়ল যে, তুই বাড়ি থেকে হোস্টেলে এসে উঠলি?’

নাদিয়ার প্রশ্নের উত্তরে ছোয়া বলল,
‘সেসব অনেক কথা। তোকে পরে বলবো। এখন চল একটু রমনার ঐদিকে যাই।’

নাদিয়া বলে উঠল,
‘আচ্ছা ঠিক আছে। তবে তার আগে তোকে আমি জরুরি কিছু বলতে চাই।’

‘কি বলবি বল।’

নাদিয়া ছোয়াকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আচ্ছা তোরাব ছেলেটা কি সত্যিই ভালো না?’

নাদিয়ার মুখে তোরাবের নাম শুনে বেশ অবাক হলো ছোয়া। খানিক সময় নিয়ে ভেবে বলল,
‘তুই এই বিষয়ে কেন প্রশ্ন করছিস বল তো?’

নাদিয়া প্রসঙ্গ এড়ানোর জন্য বলে,
‘ঐ যে দেখ একটা রিকশা আমি দাড় করাচ্ছি।’

নাদিয়া রিকশা দাড় করায়। অতঃপর তারা দুজনে রিকশায় উঠে রমনার দিকে রওনা দেয়। রাস্তার তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প গুজব করে। এসব আলোচনার মধ্যে তোরাবের প্রসঙ্গ ধামাচাপা পড়ে যায়।

অবশেষে রমনায় এসে পৌছায় দুজনে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দুজনে ঘোরাঘুরি শুরু করে। কিছুক্ষণ ঘুরেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে নাদিয়া। অতঃপর ছোয়াকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘চল না এখান থেকে। কিছু খেয়ে আসি।’

ছোয়া বিরক্তির সুরে বলে,
‘এই এক্ষুনি তো এলাম আমরা। এর মধ্যে তোর খিদেও পেয়ে গেল, পেটুক একটা। আচ্ছা চল পাশেই একটা বিরিয়ানি হাউজ আছে। সেখানে গিয়ে বিরিয়ানি খেয়ে পেট ভড়া।’

নাদিয়া ছোয়াকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে। মৃদু হেসে বলে,
‘এইজন্যই তো তোকে এত ভালোবাসি।’

‘থাক, আর তেল মা’রতে হবে না।’

দুজনে বিরিয়ানি হাউজে বসে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেরিয়ে আসতে যাবে এমন সময় ছোয়া লক্ষ্য করে আদরকে। বিরিয়ানি হাউজের পাশেই একটি কফিশপে আদর বসে আছে। বারবার মোবাইলে সময় দেখছে, খুবই অস্থির লাগছে আদরকে। দেখে মনে হচ্ছে আরো জন্য অপেক্ষা করছে। ছোয়ার বেশ কৌতুহল জাগে ব্যাপারটা নিয়ে। ছোয়া ভাবে,
‘এক সপ্তাহ পরেই ওনার বিয়ে এরমধ্যে এভাবে কফিশপে কার জন্য অপেক্ষা করছেন?’

ছোয়ার ইচ্ছা ছিল আর কিছুক্ষণ সেখানে থেমে থাকার। কিন্তু নাদিয়া তাড়া দেওয়ায় সে দ্রুত চলে যেতে বাধ্য হলো।

৪১.
সময় এবং স্রোত দ্রুত বহমান। কখনো কারো অপেক্ষায় থাকে না। বয়ে চলে আপন গতিতে। এভাবেই দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। আজকে আমানের গায়ে হলুদ। ছোয়া হোস্টেল থেকে ইতিমধ্যে বাড়িতে চলে এসেছে আমানের বিয়ে উপলক্ষ্যে। এই বাড়িতে এসেছে থেকে দেখছে আমান তাকে এড়িয়ে চলছে। ব্যাপারটা নিয়ে ছোয়ার অবশ্য তেমন সমস্যা নেই। এমনিতেই আমান কালই অন্য কারো সাথে আজীবনের জন্য নিজেকে জড়িয়ে নিতে চলেছে। তাই তাকে নিয়ে আর কিছু ভাবা নিরর্থক। ছোয়া মেনে নিয়েছে বাস্তবতাটাকে।

আমানের গায়ে হলুদের জন্য হলুদ নিয়ে আসা হয়েছে। একে একে অনেকেই তার গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে। ছোয়া একটু দূরে দাড়িয়ে ছিল, আলিয়া তাকে টেনে নিয়ে আসলো। আলিয়া ছোয়ার দিকে হলুদের বাটি বাড়িয়ে বলল,
‘নাও আপুনি, আমান ভাইয়াকে হলুদ মাখিয়ে দাও।’

ছোয়া কাপা কাপা হাতে হলুদের বাটি থেকে কিছুটা হলুদ হাতে নিল। অতঃপর সেই হলুদটা ছুইয়ে দিল আমানের গালে। পুরো সময়টা আমান দৃষ্টি নিচে স্থির রেখেছিল। একটি বারের জন্যেও ছোয়ার দিকে তাকায় নি। তবে ছোয়া তাকিয়ে ছিল আমানের দিকে। আমান তার দিকে তাকাচ্ছেনা দেখে ছোয়ার মনটাও খারাপ হয়ে যায়।ছোয়া দূরে সরে আসে জলদি।

আমান মনে মনে বলে,
‘তোর প্রেমের পরশ পেতে চেয়েছিলাম আমি ছোয়া কিন্তু তুই আমাকে সেই সুযোগটা পর্যন্ত দিলি না। দূরত্ব যখন তৈরি হয়েই গেছে তখন সেটা হয়তো আর কখনোই ঘোচানো যাবে না। তুই আমার ব্যর্থতায় ভড়া কাহিনি হয়েই থাক।’

ছোয়া নিজের রুমে এসে বসে থাকে। কেন জানি আজ খুব কান্না পাচ্ছে তার। আমানকে নিয়ে তার মনে থাকা দ্বন্দগুলো যেন ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাচ্ছে। ছোয়া এখন বুঝতে পারছে তার মনের অনুভূতি গুলোকে। আসলে দাত থাকতে কেউ দাতের মূল্য দেয়না কথাটা প্রকৃত অর্থেই সত্য। তাই তো যখন আমানকে পাওয়ার আশা ছিল তখন ছোয়া কোন চেষ্টা করে নি। আজ যখন আমানের বিয়ে হতে চলেছে তখন কেন জানি ছোয়ার মনে হচ্ছে আমানকে হারিয়ে ফেলবে! আমানকে ছাড়া থাকতে পারবে না। তবে এখন এসব অর্থহীন।

৪২.
আরো একটি দিন চলে গেল। আজ আমান ও আদরের বিয়ের দিন। ছোয়া খুবই উতলা হয়ে উঠেছে। সে আল্লাহর কাছে এখন শুধু এটাই চাচ্ছে যেন কোন ভাবে বিয়েটা আটকানো যায়। কিন্তু এখন যেন এটা আকাশ কুসুম কল্পনা হয়ে দাড়িয়েছে। ছোয়া বুঝতে পারছে হেলায় কি হারালো সে। আমানের প্রতি অনুভূতি গুলো এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে। ছোয়া বুঝতে পারল তার মনের গহীনে আমানের জন্য অনুভূতি ছিল। এখন আর কোন দ্বন্দ নেই তার মনে।

একটু পরেই বরযাত্রী বেরিয়ে যাবে। ছোয়া এই দৃশ্য সহ্য করতে পারবে না। তাই সে বাড়ি থেকে দূরে চলে এলো। তাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি পার্কে এলো। পার্কের ব্রেঞ্চে গিয়ে বসলো। ছোয়া পার্কে বসতেই লক্ষ্য করল তার পাশে একটি ছেলে এসে বসলো। ছোয়া নিজের চিন্তায় ব্যস্ত থাকায় ছেলেটার দিকে খেয়াল করে না।

ছেলেটা খুবই উত্তেজিত হয়ে কাউকে ফোন করল। ফোন রিসিভ হতেই সে বলল,
‘তুমি এটা কিভাবে করতে পারো আদর? তুমি তো আমাকে ভালোবাসো। এভাবে অন্য কাউকে কিভাবে বিয়ে করতে পারো?’

আদরের নামটা কানে আসতেই ছোয়া সজাগ হয়ে যায়। বিস্মিত চোখে ছেলেটির দিকে তাকায়। ছেলেটি আবারো বলে উঠল,
‘আমার এত বছরের সম্পর্ক আর তুমি এখন বলছ তুমি নিজের ফুফাতো ভাইকে বিয়ে করবে। সবথেকে বড় কথা হলো তুমি আমার সন্তানের মা হতে চলেছ।’

আর কিছু না কথা হলো না৷ ছোয়া বুঝল বিপরীত দিক থেকে হয়তো কল কে’টে দেওয়া হয়েছে। ছোয়া এবার ছেলেটির দিকে লক্ষ্য করল দেখল তার চোখে জল। ছেলেটি উঠে যেতে নেবে এমন সময় ছোয়া বলল,
‘আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি। প্লিজ কথাটা একটু শুনুন। কথাটা শোনা খুব দরকার।’

ছেলেটি থেমে গেল। ছোয়া জিজ্ঞেস করল,
‘আপনি এক্ষুনি কার সাথে কথা বলছিলেন?’

ছেলেটি বলল,
‘আমার প্রেমিকার সাথে। জানেন মেয়েরা অনেক স্বার্থপর হয়। এত ভালোবাসাকে অগ্রাহ্য করে দিল শুধুমাত্র টাকার জন্য। আমি এখনো বেকার, পড়াশোনা করছি। তাই আমার প্রেমিকা তার ফুফাতো ভাইকে বিয়ে করছে।’

ছোয়া উদ্বীগ্ন হয়ে বলে,
‘কিন্তু আপনি যে বললেন আপনার গার্লফ্রেন্ড প্রেগন্যান্ট!’

ছেলেটি বলল,
‘হুম। আমরা একে অপরকে খুব ভালোবাসি৷ তাই নিজেদের সামলাতে পারিনি। তারই ফল এটা,,,এই কারণেই মূলত ও এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাচ্ছে। ওর পরিবার আমি বেকার জন্য আমাকে মেনে নেবে না। আবার ও নিজের প্রেগ্যান্সির কথাও কাউকে বলতে পারছে না, ওর বাড়ির সবাই অনেক অর্থোডক্স। সবটা জানলে হয়তো ওকে মে’রেই ফেলবে। তাই ও এত তাড়াহুড়ো করে নিজের পরিবারকে বিয়ের কথা বলেছে। তারপর নাকি নিজের ফুফাতো ভাইকে অনুরোধ করে বিয়ের ডেটও এগিয়ে নিয়ে এসেছে। কি যেন নাম বললো ওর ফুফাতো ভাইয়ের হ্যা আমান। ঐ ছেলেটার জন্য আমি নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেললাম। ওকে আমি দেখে নেবো।’

ছোয়া বলে উঠল,
‘সর্বনাশ! আমান ভাইয়ার এত বড় ক্ষতি আমি হতে দিবো না। এই বিয়েটা আমাকে আটকাতেই হবে।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨