#প্রেমের_সমর
#পর্ব_১০
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
স্বচ্ছ তখনো সে ছাদের দরজাটাতেই দাঁড়িয়ে। আলো আবছায়ায় দাঁড়িয়ে দৃষ্টি রেখেছে শুধু সুহার দিকেই। অন্যদিকে সাদাফ তখনো স্বচ্ছর বাহুবন্ধনে। সেভাবেই তার চোখের উপর হাত দিয়ে রেখেছে স্বচ্ছ। সাদাফ বিরক্ত হয়। কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলে,
“ তোর বউয়ের গানও শেষ হয়েছে বহু ক্ষন। এবার তো চোখ ছাড়। কসম! তোর বউয়ের দিকে নজর দিব না ভাই।”
স্বচ্ছ হাসে। সাদাফের চোখ থেকে হাত সরায়।ছাদের দরজায় হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে। বলে,
“ নেক্সট টাইম থেকে ভাবি বলে ডাকবি। মনে থাকবে?”
সাদাফ মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে,
“ এক দেখাতেই মনে হচ্ছে বউয়ের প্রেমে লাড্ডু হয়ে বসে আছিস। ”
স্বচ্ছ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“ বউকে প্রেমে ফেলতে হবে না?তার প্রস্তুতুি নিচ্ছি।”
কথাটা বলার সাথে সাথেই স্বচ্ছ দেখল সুহা উঠে গিয়ে ছাদের অপর কোণায় গিয়েছে। সেখানে সিয়া,তিহান আর সুহার বান্ধবী নিতু ও আছে। সুহা সহ গিয়ে বোধহয় খাবারের আয়োজনে হাত মিলাল। স্বচ্ছ সেটুকু দেখে স্থির থাকলেও পরমুহুর্তেই আরো একটা যুবক ছেলেকে সেখানে দেখে ভ্রু বাঁকায়৷ ছেলেটা সুহা যাওয়ার সাথে সাথেই সুহার দিকে এই নিয়ে তিনবার তাকিয়েছে৷ স্বচ্ছ বিরক্তিতে কপাল কুঁচকাতেই সাদাফ তার পেটে ধাক্কা দিল। বলল,
“ দোস্ত? ”
স্বচ্ছ অমনেযোগী স্বরে বলল,
“ বল। ”
সাদাফ বলল,
“ গান তো আরেক মেয়েও গাইছে। সেইম সেইম! দুইজনই লাল জামা, দুইজনের চোখ ও মিল মিল লাগতেছে।”
আবির বলল,
“ সেইম গলা না? ”
সাদাফ বলল,
“কি আশ্চর্য! জমজ নাকি দুজনে? গলা সেইম কেন থাকবে বল? ”
আবির বলল,
“ কনফিউজড করতে চাইছে না তো আমাদের? ”
আবির ফের আবার বলে,
“ কিভাবে করবে? দেখেছে নাকি আমাদের?অবশ্য দেখবে কিভাবে? এদিকটায় তো অন্ধকার দোস্ত! ”
হ্যাঁ। স্বচ্ছরা যেদিকটায় দাঁড়িয়ে আছে সেদিকটায় অন্ধকার। এই যে তিনজন এতোটা সময় ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছে কারোরই চোখে পড়ে নি। কারণ হয়তো বা সবাই তখন হৈ হুল্লোড়ে মত্ত বলেই নয়তো অন্ধকার বলে। স্বচ্ছ ছোট শ্বাস ফেলে। এত এত কথার ভীড়ে এতক্ষনে গিয়ে বুকে হাত গুঁজে বলে,
” জানি না, তবে আগেরটাই আমার বউ এটা জানি।”
সাদাফ সন্দেহী গলায় বলে,
” মানে আগেরটাই আমাদের ভাবি? ”
স্বচ্ছ বলে,
“ মন বলছে আগের গলাটাই সুহাসিনীর।”
আবির হাসে এবারে। যে কারণে সে ছাদে এসেছিল তা ভুলে বন্ধুর বউ খোঁজার আনন্দে আনন্দিত হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল এতক্ষন সবকিছু। জ্ঞানীর মতো করে বলল,
“ আমারও মন বলছে তোর বউ ওটাই হবে কারণ তোকে ঘড়ি গিফ্ট করার সময় কালো গোলাপ ও দিয়েছিল। আবার সেদিন ঐ কালো গোলাপ গাছটা সেদিন এনারই বলেছিল। ”
সাদাফ বন্ধুর পিঠে চাপড় মারে। বলে,
“ গুড! কত লজিক্যালি কথা বলিস বন্ধু। এবার চল, তোর ছুটির কি ঘটনা তা জেনে আয়। ”
আবির হঠাৎ মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে বলে উঠল,
“ তোদের চক্করে ভুলেই বসেছিলাম।”
কথাটুকু বলেই এগিয়ে গেল সে৷ যেখানটা সব কয়জন গোল হয়ে বসে গান শুনছে ঠিক সেখানে গিয়েই দাঁড়াল। মাঝখানে বসে থাকা মেয়েটা রাহা। গান ধরেছে। একদম সুহার মতোই গলা মেয়েটার। আবির তার মধ্যেই গিয়ে বলে উঠে,
“ ছুটি? এই বেয়াদব!”
গানে গানে মেতে ছিল ছুটি। হাতে তালিও দিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ আবিরের পুরুষালি গলায় ভড়কাল সে। শুধু সেই নয়। উপস্থিতি সবগুলো মেয়েই ভড়কে গেল। অবাক হয়ে চাইল আবিরের দিকে। আবির এবারে মাথা চুলকাল। ভদ্র ভঙ্গিতে বলল,
“ আপনারা কন্টিনিউ করেন আপু। আমার একটু ছুটির সাথে কথা আছে তাই।এই ছুটি? উঠে আয়। ”
ছুটি স্প্রিং এর ন্যায় উঠে দাঁড়াল। গদগদ হয়ে আবিরের সামনে দাঁড়িয়ে উৎসাহ নিয়ে উৎফুল্ল স্বরে শুধাল,
“ কি বলবেন আবির ভাই?”
আবির এত উৎসাহের পাত্তা না দিয়ে মোবাইল বের করল। হাতের ছবি দেখিয়ে তীর্যক স্বরে বলে উঠে,
“ এই হাতটা কার যার হাতটা তোর হাত ধরে আছে? এত প্রেম কিসের হাত দুটোতে?”
ছুটির মুখটা একটু আগে যেমন গদগদ খুশিতে ভরপুর হয়েছিল এখন ঠিক ততোটাই চুপসে গেল। মুখটা কালো হয়ে গেল। কিন্তু পরমুহুর্তেই আবার জ্বলে উঠে চঞ্চল সুরে বলে,
” ছিঃ আবির ভাই! আমার প্রেম শুধু আপনার সাথে। অন্যের হাতের সাথে কেন প্রেম হবে বলুন? বিশ্বাস করুন, আপনি আমাকে ভালোবাসের কথাটা জানার পর থেকে দিনরাত আপনাকেই স্বপ্ন দেখছি আমি। খুশিতে উড়ে বেড়াচ্ছি আমি।এতদিন কেন বললেন না কথাটা আবির ভাই? কতোটা কষ্ট পেয়েছি এতকাল। ”
আবির দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
“ তোর কষ্ট তোর তোর কাছেই রাখ। আগে বল এসব কি ধরণের বেয়াদবি?”
“ কোন সব? ”
“ এতক্ষন রাতে ছাদে এসেছিস কেন? ”
ছুটির সহজর সরল উত্তর,
“ বার্থডে পার্টি সেলিব্রেশন করতে। ”
আবির ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,
“ শুধু বার্থডে পার্টি সেলিব্রেশন করতে? নিচে যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে তার জন্যও নিশ্চয় নেচে নেচে নিচে যেতি এখন তুই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে লুতুপুতু ভঙ্গিতে ছেলেটা তোকে উইশ করত? ”
ছুটি বেশ হতাশ স্বরে বলল,
” ছেলেটা আমার বন্ধু সাদ আবির ভাই। আপনারা তো আমার বন্ধুটাকে মেরে ভর্তা বানিয়ে দিয়েছেন। ”
ব্যস! আবিরের যেন এবার রাগটা আরেকটু চাপল। বলল,
“ বেশ করেছি। তোকে হানি ডাকছিল কেন ও? ”
ছুটি বিস্ময় নিয়ে বলল,
” আমাকে? ”
“ তো কাকে? ”
ছুটি মুহুর্তেই বলে,
“ এই না না! নিশ্চয় রাহাকে বলেছিল! ও তো রাহাকে পছন্দ করে আবির ভাই।তুমি ভুল বুঝছো আমায়। ”
“ রাহা কে? ”
ছুটি আঙ্গুল উঁচিয়ে রাহাকে দেখিয়ে দিয়ে বলে,
“ সুহার বোন। ঐ যে? গান গাইছে যে? ওরই তো আজ বার্থডে। আমার নয় আবির ভাই। ”
আবির ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়ে। নিশ্চিন্ত হয়। মুখে বলে,
“ যাক, বেঁচে গেছিস। নাহলে আজ মার একটাও তোর গালের বাইরে পরত না। ”
ছুটি হাসে। আবির ভাই তাকে নিয়ে এতোটা ভাবছে বা তার জন্য এতোটা জ্বেলাস এটা ভেবেই গদগদ ভঙ্গিতে বলে,
“ এতোটা ভালোবাসেন আবির ভাই? আগে তো কখনো টেরই পাইনি? এত জ্বেলাস আপনি?”
আবির যেতে যেতে বলে,
“ জ্বেলাস? তাও তোকে নিয়ে? মোটেও না।”
.
স্বচ্ছ মিনিট দুই হচ্ছে সুহার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বুকে হাত গুঁজে মেয়েটাকে দেখে যাচ্ছে। সাথে রেগে উঠছে। কারণ সুহা ঐ অপরিচিত ছেলেটার সাথে কাজ করছে। আর সে ছেলেটা ড্যাবড্যাব করে তার বউাে দেখছে বিষয়টা স্বচ্ছর ভাল্লাগল না। ইচ্ছে হলো মেরে গাল ফাঁটিয়ে দিকে। অথচ স্বচ্ছ সুযোগই পাচ্ছে না। অবশেষে যখন ছেলেটা খাবার হাতে ছাদের অপর পাশে গেল আর সুহাকে একা পাওয়া গেল তখনই স্বচ্ছ সামনে এসে দাঁড়াল। সুহা বিরক্ত হলো যেন। ঝাঝাল গলায় বলে উঠল,
“ কি আশ্চর্য! চোখে দেখছেন না? পথ আটকাচ্ছেন কেন ভাই? ”
স্বচ্ছ ঠোঁট চাপে। ছাদের কার্নিশেই দাঁড়ানো মেয়েটা। দু পা এগিয়ে সুহার দু পাশ দিয়ে ছাদের রেলিংয়ে হাত রেখে বলে,
“ কে ভাই? ভাই মনে হয় আমায়?”
সুহা বিরক্ত নিয়ে বলে,
” না, বোন মনে হচ্ছে। আসুন, আপনাকে মেকাপ করিয়ে দিই। ”
স্বচ্ছ আহত গলায় বলে,
“ এত ঝগড়ুটে কবে হয়ে গেলে সুহাসিনী? এত বেয়াদব তো আগে ছিলে না। দিন দিন দেখি ডেঞ্জারাস হয়ে উঠছো। ”
সুহা শুকনো ঢোক গিলে। চিনে ফেলল নাকি? বুঝে ফেলল সে যে সুহাসিনী? কন্ঠ কাঁপে তার। তবুও কাঁপা কন্ঠেই বলে উঠল,
“ক্ কে সুহাসিনী?”
স্বচ্ছ এই প্রথম সুহাকে ভড়কে যেতে দেখে হাসে। বলে,
“ আসলেই তো, কে সুহাসিনী?”
সুহা এবারে বুঝতে দেয় না। কথা এড়িয়ে প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য দ্রুত বলে উঠে,
“ মজা নিচ্ছেন নাকি ভাই? পথ ছাড়ুন, দ্রুত পথ ছাড়ুন। যেতে হবে আমায়। এভাবে আটকে রেখেছে হাত একটা মেয়েকে। লজ্জা হচ্ছে না? ”
“ তোমাকে দেখার পর থেকে তো নির্লজ্জ হতে মন চাইছে সুহাসিনী! ”
সুহা আবার বিরক্ত হয়েছে এমন করে তাকায়। বলে,
“ কিসব আবোল তাবোল বকছে? মে’রে মুখ ফাঁটিয়ে দিব। যেতে দিন বলছি। ”
” থেকে যাও আজ। ”
সুহা এবারে হালকা রাগান্বিত স্বরেই বলে,
“ মার খাবেন? ”
স্বচ্ছ হেসে বলে,
“ তোমার রাগ আগেও দেখেছি,বিরক্ত লাগত। ভাবতাম এই বেয়াদব মেয়ে কোথায় থেকে উদয় হলো? কিন্তু আজ এই রাগটাও ভালো লাগছে আমার।। মিশ্র এক অনুভূতি বইছে। কারণ কি বলো তো সুহাসিনী? ”
সুহা ভ্রু বাঁকিয়ে বলে এবারে,
“ একা মেয়ে পেয়ে ফ্লার্ট করছেন? ”
“ কি মনে হয়? ”
সুহার হৃদ স্পন্দন বাড়ছে। এতোটা কাছে প্রিয় পুরুষ, তার উপর নিজে যে ধরা পরে গেছে এই বিষয়টা পরিষ্কার। বুকের ভেতর অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। অথচ সে স্বপ্নেও ভাবেনি এতোটা সহজে যে স্বচ্ছর সামনে ধরা পরে যাবে। এতেটা সহজে সে ধরা দিয়ে দিবে।সুহা নিজের ভেতরের অনুভূতিটাকে লুকিয়ে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে শুধায়,
“ পথ ছাড়ুন বলছি। ”
স্বচ্ছ ছাড়ল। বরং ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলে,
“ ইচ্ছে হচ্ছে না কেন জানি। ”
কথাটা বলেই পাশে থাকা সাতা গোলাপ গাছটা থেকে একটা গোলাপ ছিড়ল। পরমুহুর্তেই গোলাপটা সুহার কানে গুঁজে দিয়ে বলে,
“ বাহ! সুন্দর তো! রক্তিম সুন্দরীর সাথে সাদা গোলাপ। মানিয়েছে। ”
সুহার সহ্য হলো না এসব। মনে হলো যেন এসব স্বচ্ছর কোন চাল। হয়তো তাকে দুর্ল করতে চাইছে।স্বচ্ছর প্রেমে ফেলতে চাইছে। বিষয়টা মনে উঠতেই রাগে থিতিয়ে উঠে মন। কানে গুঁজে দেওয়া গোলাপটা এক মুহুর্তেই ছুড়ে ফেলে ছাদের এক কোণায়। বলে,
“ ভালোয় ভালোয় বলছি সরে দাঁড়ান। নাহলে মেরে দিব কিন্তু। ”
স্বচ্ছ বুকে হাত দিয়ে বলে,
“ গোলাপটা ছুড়ে দিয়ে তো হৃদয়েই আঘাত দিয়ে দিলে। তাও মারো প্লিজ। যদি পারো আমার বন্ধন মুক্ত হতে। ”
সুহা তীর্যক চাহনিতে তাকায়। দুই হাতে ইচ্ছে মতো আঘাত চালায় স্বচ্ছর বুকে। শেষ মুহুর্তে ঘাড় বরাবরও বসাল এক ঘুষি। অথচ কাজ হলো না। স্বচ্ছ নড়ল না। বরং হেসে বলল,
“পারলে? যায় হোক, এখন বলো ও কেন তোমার দিকে চাইছে? ”
ততক্ষনে ছেলেটা আর তিহান খাবার সার্ভ করে আবার এদিকে ফিরে আসছে। স্বচ্ছ ওকে দেখেই উপরোক্ত কথাটা বলে। সুহা তাকায় ছেলেটার দিকেে।এটা তিহানের খালাতো ভাই।দুয়েক মাস পরপরই এখানে আসে। গত দুই বছর যাবৎ তাকে পছন্দ করে আসছে। পরিচয়টা অবশ্য তিহানকে পড়ানোর সূত্রেই। অথচ এই ছেলেটা যে নিরবে সুহাকে দুই দুইটা বছর পছন্দ করে আসছে তা সুহা বাদে আর কাউকেই জানায়নি। সুহাও জানায়নি। ভদ্রভাবে বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে কথা বলে।অথচ এই বিষয়টা যো স্বচ্ছর চোখে প্রথমেই ধরা পড়েছে তা ভোবে সুহা বলে,
“ ওর চাইতে ইচ্ছে হচ্ছে ও চাইছে। আমি কিভাবে জানব? আমি কি মাইন্ড রিডার? ”
কথাগুলো সুহা রেগেই বলে। স্বচ্ছর কেন জানি মনে হলে সুহা ছেলেটাকে প্রশ্রয় দিল। ওর তো জানার কথা ছেলেটা ওকে পছন্দ করে কিনা। কিভাবে দেখে ছেলেটা৷ তবুও কথা বলে কেন? স্বচ্ছ রাগ নিয়েই বলে,
“ এত রাগ কেন হুহ?”
ততক্ষণেই ছেলেটা এসে দাঁড়িয়েছে তাদের পাশে৷ স্বচ্ছ আর সুহাকে এভাবে দেখে স্বচ্ছর পিঠে চাপড় দিল। বলল,
“ হেই ব্রো? তুমি ওকে এভাবে চিপকে রেখেছো কেন? অসুবিধা হচ্ছে তো ওর। ”
স্বচ্ছর এই পর্যায়ে দ্বিগুণ রাগ লাগল। পিঁছু ফিরে ছেলেটার গালে সজোরে এক থাপ্পড় বসাল সে৷ পরমুহুর্তেই গালে আঙ্গুল বুলিয়ে হেসে হেসে বলল,,
“ আমার বউয়ের সুবিধা অসুবিধা সম্বন্ধে আমি ভালো জানব নাকি তুমি ভালো জানবে ব্রো? যাও, বউয়ের সাথে একটু প্রেম করতে দাও প্লিজ।আর হ্যাঁ, এটা ডিস্টার্ব করার জন্য। ডোন্ট মাইন্ড হুহ?”
ছেলেটা চোখ গোল গোল করে তাকায়। বউ? সুহা যে বিবাহিত তাই তো সে জানে না। স্বচ্ছ যেন ছেলেটার দৃষ্টি বুঝতে পারে।ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,
“ কি? বিশ্বাস হচ্ছে না? ”
কথাটা বলেই পরমুহুর্তে সুহাকে কোলে তুলল সে৷ আচমকা এহেন কান্ডে সুহার চোক গোলগোল হয়ে এল। কি কান্ড শুরু করেছে এই ছেলে? ছিহ! সুহা হাত পা ছড়াতেই স্বচ্ছ হাসে। যেতে যেতে ছেলেটার কানে কানে বলল,
“ বউ রাগ করেছে তো তাই। বাই দ্যা ওয়ে, তোমার বিশ্বাস হলো তো ব্রো? ও কিন্তু আমার সত্যিই একটামাত্র বউ!”
স্বচ্ছ সুহাকে কোলে করে যখন ছাদ পার হলো ঠিক তখনই হাসতে হাসতে সাদাফ এল। ছেলেটার কাঁধে হাত রেখে বলে,
“ কি ব্রো? চোখ গোল গোল করে কি দেখছো ব্রো? ওটা আমাদের স্বচ্ছর বউ,তোমার ভাবি। হুহ?”
ছেলেটা ভ্যাবাচ্যাঁকা স্বরে বলে,
“ ভাবি? সিরিয়াসলি?”
#চলবে….
#প্রেমের_সমর
#পর্ব_১১
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
সুহাকে কোলে তুলে স্বচ্ছ যখন ছাদ পেরিয়ে সিঁড়ির দুটো ধাপ নেমে এল ঠিক তখনই নাকে প্রচন্ড আঘাতের টের পেল। বুঝতে পারল যে সুহা সজোরে ঘুষি বসিয়েছে তার নাকে। যার দরুণ এক হাতে সুহাকে ধরে অন্য হাত নাকে রাখল স্বচ্ছ। সুহা তখন সুযোগ পেয়েই নেমে দাঁড়ায়। ঝাঝালো স্বরে বলে,
“ এসব কোন ধরণের অসভ্যতা? আমি আপনাকে অনুমতি দিয়েছি কোলে তুলার? সবার সামনে দিয়ে এভাবে অভদ্রের মতো কোলে তুললেন কেন? ”
স্বচ্ছ নাকে চিনচিনে ব্যাথায় নাক চেপে ধরেছিল। সে অবস্থাতেই বলল,
“ ঐ ছেলেটাকে দেখানোর জন্য। কে সে? কেন তোমার দিকে ওভাবে তাকাচ্ছিল হুহ?মে’রে দিব কিন্তু। ”
সুহাও গা জ্বালিয়ে দিতে উত্তরে বলল,
“ প্রেমিক হয়। তাই বোনের জম্মদিন উপলক্ষ্যে ইনভাইট করেছি। সমস্যা? ”
স্বচ্ছ এবারে নাক ছেড়ে সুহার দিকে তাকায়৷ দৃষ্টিতে শীতল রাগ মিশিয়ে দাঁতে দাঁত চাপে। এক হাতে সুহার ডান হাতটা চেপে ধরে ক্ষোভ নিয়ে উত্তর দেয়,
“ অবশ্যই সমস্যা। একজনের বউ হয়ে অন্যজনকে প্রেমিক বলছো কোন আক্কেলে?ইচ্ছে হচ্ছে তোমার গালে একটা থা’প্পড় বসাই সুহাসিনী। ”
সুহা ঠোঁট এলিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। পরমুহুর্তেই ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ তো চারবছর এই বউ বউ করাটা কোথায় ছিল অস্বচ্ছ সাহেব? আর হঠাৎ এই বউয়ের প্রতি সচেতনতাই বা বেড়ে গেল কেন? জাস্ট কয়েকটা হাতের ছবিতেই? ”
স্বচ্ছ ভাবে। আসলেই তো। এতকাল তো সে বউ বউ করেনি। এমনকি এতকাল তো সে বউ নিয়ে সিরিয়াসও ছিল না। শুধু জানত মেয়েটাকে সে হারিয়েছিল। জেদ রেখেছিল। তারপর? তারপর বিয়ের এতবছর পর হুট করেই বউ বউ করে মরছে কেন সে? এই মেয়ে লাস্ট দুই মাসে তাকে কি করল যে এখন বউয়ের সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারছে না? এটাও কি শুধু তার ইগো? স্বচ্ছ বুঝে উঠে না যেন। বলে,
“ ঐ হাতের ছবি পাঠিয়েই তো কি এক জ্বালায় ফাঁ’সিয়ে দিলে। এতকাল তো আমি বউ বউ বলে পাগল হইনি। এখনই হচ্ছি। কাহিনী কি? কি করেছো বলো তো? ”
সুহা বিরক্ত হয়ে তাকায়। প্রশ্ন ছুড়েছে সে। কোথায় উত্তর দিবে, উল্টো তাকেই আবার জিজ্ঞেস করছে। সুহা স্বচ্ছর চেপে ধরা হাতটা ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,
“ জোর করে অধিকার খাটাতে আসবেন না।হাত ছেড়ে দিন। ”
স্বচ্ছ ছেড়ে দিল। বলল,
“ ছেড়ে দিলাম। কিন্তু ঐ ছেলের আশপাশে থাকবে না। যদি আশপাশে দেখি তাহলে কিন্তু ঐ ছেলের হাড় ভে’ঙ্গে দিব।”
সুহা তেজ নিয়ে বলে,
“ হাত আমারও আছে। পাল্টা মা’র আমিও দিতে পারব যেমনটা এখন দিলাম। ”
“ ঐ হ্যাংলা কাঠির জন্য এত টান?”
কথাটা বলতে বলতেই স্বচ্ছ এবারে নাকে হাত দিয়ে চ্যাক করে। অল্প তরল অনুভূত হতেই বুঝতে পারে বউয়ের ঘুষিতে কতোটা শক্তি। রক্ত বেরিয়ে গেছে।স্বচ্ছ অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ,
” রক্ত? সোজা নাক ফাঁটিয়ে দিলে সুহাসিনী? এতোটা নির্দয় তুমি? স্বামীর প্রতি এইটুকু মায়াও হলো না? ”
সুহা ফের তাচ্ছিল্য করে বলে,
“ সো কল্ড স্বামী শব্দটা ব্যবহার করবেন না অস্বচ্ছ সাহেব। ঘৃণা আসে আমার। ”
স্বচ্ছর মন খারাপ হলো। এতই ঘৃণা? কেন জানি না তার ভালো লাগল না। বলে,
“ এত ঘৃণা? ”
সুহার রাগ যেন ক্রমশ বাড়ছেই। প্রশ্নটা শুনেই এমন ভাবে রাগ নিয়ে তাকাল যেন সে পারলে স্বচ্ছকে খেয়েই ফেলবে। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
“ কেন? ঘৃণা জম্মানোর কথা নয়? ”
স্বচ্ছ বউয়ের আগুনঝরা দৃষ্টি দেখে মিনমিন করে তাকায়। এত কঠিন কঠিন কথা শুনে বুকে হাত রাখে।পরমুহুর্তে মুখ ফুলিয়ে শ্বাস টেনে বাচ্চাদের মতো করে বলে,
“ একটু তো ভালোবেসেও তাকাতে পারো সুহাসিনী। সবসময় এমন রাগ দেখাও যেন মনে হয় তোমার রাগের আগুনে জ্বলসে যাচ্ছি। ”
“ শুধু জ্বলসে যাচ্ছেন? আমার তো ইচ্ছে করছে আপনাকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে স্বচ্ছ। ”
“ ফেলে দাও।বউয়ের হাতে শহীদ হলেও শান্তি! ”
সুহা রাগ নিয়ে বলে,
“ শহীদ হবেন না, বড়জোর হাত পা ভাঙ্গবে।”
“ ভাঙ্গুক, তুমি তো আছো সেবা করার জন্য।”
রাগে সুহার নাক ফুলছে। স্বচ্ছর আজেবাজে কথা শুনে ইতোমধ্যে রাগ আকাশ ছুঁয়েছে। অতএব রাগ ফুসতে ফুঁসতে বলে,
“ সো কল্ড বউদের মতো মনে হয় আমায়?সেবা তো দূর উল্টো হাড় গুড়ো গুড়ো করে দিব আমি। ”
স্বচ্ছ মন খারাপ করে তাকায়।কি নির্দয় তার বউ? আব্বা আম্মা কি করে জেনে বুঝে এই নির্দয় মেয়েটির সাথে তার বিয়ে দিয়েছিল? স্বচ্ছ মন খারাপি গলাতেই বলল,
“ কি নির্দয় তুমি।”
সুহা ভাবলেশহীন ভাবেই বলল,
“হ্যাঁ নির্দয়।শুনুন?আমি ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি , আপনার কাছে খুব শীঘ্রই আইনি নোটিশ আসবে অস্বচ্ছ সাহেব৷ ”
স্বচ্ছর দাঁত চিড়চিড় করে রাগে। বলে,
“ নোটিশ আসলেই আমি নেচে নেচে ডিভোর্স দিয়ে দিব নাকি? ”
“ বলেছেন দেখা হওয়ার পর আর পিছুটান নেই।দেখা তো হলোই? আর তো কোন কারণ থাকার কথা নয়। আশা করি এবার ভালোই ভালোই সম্পর্কের ইতিটাও টেনে নিবেন।”
“ ওহ, এইজন্যই চাইছিলে যাতে দেখা না হোক? কারণ দেখা না হলে বিচ্ছেদ হবে না এই কারণে?”
সুহা কঠিন চাহনিতে তাকায়। ফের সিঁড়ি মাড়িয়ে ছাদে উঠতে নিয়ে বলে,
“ আপনার মতো মানুষের সামনে সুহাসিনী হয়ে দাঁড়িয়ে আবারও আপনার সেই ঘৃণ্য নাটক দেখতে চাইনি৷ সে কারণেই চাইছিলাম দেখাটা না পান। ”
.
সুহা যাওয়ার মিনিট দুই পরই আবির আর সাদাফ ছুটে এল স্বচ্ছর কাছে। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে স্বচ্ছর মুখটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করতেই চোখে এল স্বচ্ছর নাকের কোণায় লেগে থাকা অল্প রক্ত। সাদাফ মুহুর্তেই অবিশ্বাস্য চোখে তাকায়। বিস্ময় নিয়ে বলে উঠে,
“ প্রথম দিনই মেরে নাক ফাঁটিয়ে দিল ? কি সাংঘাতিক রে দোস্ত! ”
স্বচ্ছ ভোঁতা মুখ নিয়ে তাকাল। নিজের দুঃখে নিজেই মরে যাচ্ছে সে আর এরা এসেছে কাঁটা গায়ে নুন ঢালতে। স্বচ্ছ বিরক্ত হয়। রাগ নিয়ে তাকায় ওর দিকে। সাদাফ সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধুর রাগমিশ্রিত দৃষ্টি দেখে বলে,
“ এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? ”
স্বচ্ছ দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
“ তোকে মাথায় তুলে রাখার জন্য। আয়, সামনে আয়। ”
সাদাফ নিরাশ হয় বলে,
“ আমার দোষ কি? মারল তো তোর বউ। ”
“ তাতে তোর কি?তোর কেন এত মাথা ব্যাথা? বউও আমার, নাকও আমার। ”
আবির চাপা হাসে। এতক্ষনে গিয়ে হাসি চেপে রেখে বলে,
“ দোস্ত ভাবছি যে কোনদিন যদি তোদের মাঝে রোমান্স হয়। মানে তুই তোর বউয়ের কাছে গেলি আর তোর বউ সোজা এভাবেই নাক বরাবর ঘুষি মেরে তোর রোমান্সের বারোটা বাঁজাল। কি করবি তখন? ”
স্বচ্ছ কপাল কুঁচকায়। শক্ত গলায় বলে,
“ কিছুই করব না,তোর ঐ ছুটিকেও এই ট্রিকস টা শিখিয়ে দিতে বলব আমার বউকে। যাতে তোর রোমান্সেরও বারোটা বাজাতে পারে। ”
.
সুহারা পুরো রাতটা না ঘুমিয়েই কাঁটাল। ব্যস্ত শহরে মাঝেমাঝে আনন্দ খুঁজে নেওয়াটা জরুরী তা হোক কোন উপলক্ষ্যে কিংবা বিনা কারণেই। সে হিসেবে তাদের জন্য রাহার জম্মদিন উপলক্ষ্যে এই সময়টা খুব ভালোই কাঁটল।তারপর যে যার মতো ফিরে এল। তিহানদের বিল্ডিংটা স্বচ্ছদের বিল্ডিংয়ের পাশাপাশি হওয়াতে ছাদ দিয়ে লাফ দিয়েই পেরিয়ে গিয়েছে তিহান আর তিহানের সেই কাজিন ছেলেটা। তারপর সিয়াকে ওর বাসায় দিয়ে বাকি পাঁচজন মেয়ে নিজেদের বাসায় এল। ফ্রেশ হয়ে যখন আবার পাঁচজনে বসল তখন রাহাই প্রথমে বলল,
“ আপু! তোর বরটা কি সুন্দর রে। সেদিন বেলকনিতে বসাতে শিষ বাঁজাল। ভাবলাম বেয়াদব হবে। কিন্তু আজ তো সামনাসামনি দেখে ক্রাশড আমি! ”
সুহা রেগে তাকায়। বলে,
“ তো? ”
রাহা ঠোঁট চেপে হাসে। ফিসফিস স্বরে বলে,
“ আপু? একটা কথা! তোকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে কি করল রে আপু? চুমু টুমু দিয়েছে নাকি? ”
সুহা মুহুর্তেই চোখ গরম করে তাকায়।বলে,
“ এক থাপ্পড়ে গাল লাল করে দিব বেয়াদব। তুই ছোট ছোটর মতো থাক। ”
রাহা মুখ ভোঁতা করে চুপ করে। কিন্তু এরপরই সুহার অপর বান্ধবী নিতু বলল,
“ ও নাহয় ছোট। আমরা তো বড়, আমাদের বল প্লিজ। এত সুন্দর দুলাভাই, নিশ্চয় সুন্দর কাজই করেছে বল? ”
ছুটি সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছাস নিয়ে বলে,
“ আমি তো দুলাভাইকে সামনাসামনিই বলে এলাম যে আমি তার উপর ক্রাশ খেয়েছি।”
অপরজন নিহা বলে,
“ সেইম! আমি তো প্রথমদিন দেখেই মনে মনে মাশাল্লাহ বললাম। যদিও এতদিন বলিনি কিন্তু আজ বলছি দুলাভাই সত্যিই সুন্দর। সুহার সাথে বিয়ে না হলে আমি লাফ মেরে বিয়ে করে নিতাম। ”
চারপাশে সবগুলো মেয়ের মুখে স্বচ্ছর রূপের প্রশংসা শুনতে শুনতে ভেতরে ভেতরে রাগে ফেটে পড়লেও বাহিরেও সুহাকে দেখাল খুব শান্ত। কন্ঠে চাপা রাগ মিশিয়ে নিহাকে বলল,
“ প্লিজ, বিয়েটা করে নে৷ আমায় তবু মুক্তি দে এই ছেলের থেকে। তুই যদি চাস আমি পরিচয় করিয়ে দিব তোর সাথে৷ কি বল? দিব পরিচয় করিয়ে? ”
নিহা কাচুমাচু করে বলল,
“ রেগে যাচ্ছিস কেন? মজা! মজাই তো করলাম। ”
.
যেহেতু রাহার আজ জম্মদিন সে কারণেই সুহা আর রাহা মিলে সাতসকালে তৈরি হয়ে নিল বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। যদিও নিজ শহরে শেষ বার গিয়েছে মাস দুয়েক হলো। তবুও সুহার মনে হলো কতগুলো দিন সে দাদা দাদীকে দেখে না। কতগুলা দিন সে মাকে দেখে না। এত এত দিন পর নিজ শহরে ফেরার আলাদা এক আনন্দ হচ্ছে তার। সুহা তৈরি হয়। রাহাকে বকাঝকা করিয়ে জলদি করে তৈরি হতে বলে। অতঃপর রাহাও তৈরি হয়। তারপর প্রায় দিনের সাড়ে এগারোটার দিকেই তারা ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে বাসা ছেড়ে বের হলো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্য দাঁড়াল এককোণে।
স্বচ্ছ তখন গোসল সেরেছে। কোমড়ে শুধু একটা টাওয়াল। চুল দিয়ে টপাটপ পানি পরছে তখনও। স্বচ্ছ হেলতে দুলতে গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি জড়িয়ে ভেজা শার্টটা বেলকনিতে মেলে দিতে গিয়েই চোখ পড়ল রাস্তায়। এক কোণে সুহাকে আর ওর বোনকে ব্যাগপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই কলিজায় দিল মোঁচড়। এত কষ্ট করে বউ খুঁজে পেয়েছে সে। এখন কিনা বউ তাকে না জানিয়েই পালিয়ে যাচ্ছে ব্যাগপত্র নিয়ে? স্বচ্ছ আবার খুঁজবে কোথায় এই মেয়েকে? স্বচ্ছ রিস্ক নিতে চায়না আর। এই মেয়ে যে ডেঞ্জারাস, হতেই পারেই যে স্বচ্ছ আর জীবনেও এই মেয়েকে খুঁজে পেল না।বিড়বিড় করে বলল,
“ এসব কি? সাতসকালে বউ চলে যাচ্ছে আমার। কিসব শুরু হলো বল তো। সব অত্যাচার আমার উপরই কেন হুহ?”
কথাগুলো বলেই স্বচ্ছ আর ভাবল না। পরনের তোয়ালেটা এক হাতে শক্ত করে চেপে ধরে দৌড় লাগাল দ্রুত। যত দ্রুত পারে তত দ্রুতই সিঁড়ি পেরিয়ে নিচে যেতে চাইল। অবশেষে গেল ও। সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি আর তোয়লে পরনে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়াল সুহাদের সামনেই। সুহা প্রথমে ওভাবে না তাকালেও পরমুহুর্তেই স্বচ্ছকে এই অদ্ভুত পোশাকে তোয়ালে ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হয়। ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
“কি সমস্যা? ”
“ কোথায় চলে যাচ্ছো? ”
সুহা ত্যাড়া স্বরে উত্তর করল,
“ যেখানে ইচ্ছে। ”
“ বললেই হলো? যেতে দিব? আমি কিন্তু আবার কষ্ট করে খুঁজতে পারব না সুহাসিনী।”
“ খুঁজতে তো বলিনি আমি। ”
স্বচ্ছ কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই সামনে এল রাহা। এতক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্বচ্ছকে দেখছিল সে। এখন এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে গদগদ স্বরে বলে উঠল,
“ দুলাভাই? আমি রাহা! আপনার বউয়ের একমাত্র ছোটবোন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আপনার বউ না হওয়াটা আমার ভুল হয়ে গেল। ”
রাহা কথাটা মজা করেই বলল। সাথে দাঁত বের করা হাসি। স্বচ্ছ সে হাসিতে হাসি মিলিয়ে বলল,
“ না ছোটবোন, যিনি বউ হয়েছে তিনিই এনাফ। একই রকমের আরেকটা ডেঞ্জারাস মেয়ে বিয়ে করে নিজের কপালের বারোটা বাঁজাতে চাই না। ”
রাহা প্রশ্ন ছুড়ে,
“ ডেঞ্জারাস কেন? কি করলাম বলেন? আপনার এহেন রূপ দেখে একটু চাইলামই তো কেবল। ”
স্বচ্ছ তখন সুহার দিকে তাকায়৷ সুহা কেন তাকে দেখছে না?কেন তাকাচ্ছে না? হতাশ স্বরে বলে,
“ তোমার বোন তো তাকাচ্ছে না। এই দুঃখই কি আমার জন্য এনাফ না বলো? ”
সুহা এবারে তাকায়। টানটান গলায় বলে,
“ নিজেকে যে অবস্থায় এখানে এনেছেন তাতে কি নিজের সৌন্দর্য ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে পরছে মনে হচ্ছে? যে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকব? অবশ্য সৌন্দর্য ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে পরলেও আমি ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকতাম না আপনার দিকে। ”
“ হু আমার বেলায় চাইবে কেন? ঐ তিহানের কাজিন হলে তো এতক্ষনে চোখ বের করে তাকিয়ে থাকতে। ”
সুহা তির্যক স্বরে জানায়,
“ হ্যাঁ, থাকতাম। অসুবিধা? ”
“অবশ্যই অসুবিধা। ”
“ আপনার তো সবকিছুতেই অসুবিধা৷ ”
স্বচ্ছ উত্তর করে না এবারে। কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে বউকে না যেতে দেওয়ার পরিকল্পনা করে বলে উঠে,
“ যেখানেই যাও, ভাড়া না দিয়ে যেতে দিব না। ”
“ ভাড়া মাস শেষ হলে এমনিই পেয়ে যাবেন।”
“ তাহলে মাস শেষ হলেই যাবে। ”
সুহা চোখ ছোটছোট করর তাকায়৷ ব্যাগ থেকে কয়েকটা নোট বের করে স্বচ্ছর হাতে দিয়ে বলে,
“ ভাড়াটা এখনই দিচ্ছি। এবার পথ ছাড়ুন। ”
স্বচ্ছ না নিয়ে দ্রুতই বলল,
“ আমরা মাসের শুরুতেই ভাড়া নি না, মাস শেষ হবে, মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত বাসায় থাকবো , ভাড়া দিবে, তারপর যাওয়ার অনুমতি মিলবে। ”
সুহা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলে,
“ আমরা আপনার থেকে ভাড়া নেই নি। আপনার আব্বার থেকে নিয়েছি। আর আপনার আব্বা এমন কোন রুলস আমাদের বলে নি। ”
স্বচ্ছ এবারে ভাব নিয়ে বলল,
“ আব্বা তো আর আপডেট মানুষ না। আমি আপডেট ছেলে। নতুন করে রুলস সংযুক্ত করেছি। ”
স্বচ্ছ যখন কথাটা শেষ করল ঠিক তখনই স্বচ্ছর বাবা শাহরিয়ার সাহেবকে দেখা গেল বাজার হাতে এদিকেই আসতে। সুহা যেন বিচার দেওয়ার সুযোগ পেল। মুহুর্তেই শাহরিয়ার সাহেবের সামনে গিয়ে বলল,
“ আঙ্কেল! আপনার পাগল ছেলেকে কিছু বলুন না। ”
শাহরিয়ার সাহেব তাকালেন। ছেলেকে এহেন অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ গরম করে বললেন,
“ এসব কি স্বচ্ছ? তোয়ালে পড়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তুমি ছোট বাচ্চা? ”
স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,
“ না, বড় বাচ্চা আব্বু। ”
শাহরিয়ার সাহেব গম্ভীর গলায় বলেন,
“ তুমি কোন প্রকারের বাচ্চার মধ্যেই পড়ো না। এবার বলো, বিরক্ত করছো কেন ওদের? ”
স্বচ্ছ কাঁদোকাঁদো দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“ আব্বু? বউ চলে যাচ্ছে আমার। কত কষ্ট করে খুঁজে পেয়েছি বউকে। তুমিই বলো? আম্মু এভাবে চলে গেলে তোমার কষ্ট হবে না? ”
উনি ফের গম্ভীর গলায় বললেন,
“কথায় কথায় তোমার আম্মুকে টানবে না। তুমি যা করেছো তা আমি কখনো করিনি। এখন চুপচাপ বাসায় যাও। মেয়ে দুটো ঠিক ভাবে যেতে দাও। ”
“ যেতে দিব?পরে কোথায় পাব? ”
শাহরিয়ার সাহেব ততক্ষনে রিক্সা ডেকেছেন। সুহা আর রাহাকে রিক্সাটায় উঠতে বলেই স্বচ্ছর দিকে চেয়ে বলল,
“ সেটা তুমি জানো। কিন্তু এই মুহুর্তে ওদের আর বিরক্ত করতে দেখলে তোমার তোয়ালেটা এই রাস্তার মধ্যেই ছুড়ে ফেলে ব্যাকসাইডে মার বসাব ছোটবেলার মতো। ”
কথাটা শুনেই সুহা হেসে উঠে।তবে কয়েক সেকেন্ডের জন্য। স্বচ্ছ সে হাসিটা দেখেই তোয়ালেটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে। ইশশ! বউয়ের সামনে যদি তার আব্বু তার ইজ্জতটা আর না রাখে তাহলে সে আর মুখ দেখাতে পারবে?স্বচ্ছর রাগ হয়। বাবা কি কথাটা অন্য সময়ে বলতে পারত না?সুহাসিনীর সামনেই বলতে হলো? স্বচ্ছ বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
”তোমরা সব কয়জনই ষড়যন্ত্রকারী আব্বু!একদিন এই ষড়যন্ত্রের প্রতিশোধ আমিও নিব। দেখে নিও। ”
#চলবে….
[ বড় পর্ব দিয়েছি। বড় করে দোয়া করে দিবেন আমার জন্য ( কালকে একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাব, তাই ভয়ে আছি)। যায় হোক, বড় পর্ব দেওয়ার জন্য বেশি বেশি দোয়া আর আশির্বাদ করে দিবেন আমার জন্য হুহ?যাতে ভালোয় ভালোয় সব করে আসতে পারি কাল 🥺]