#প্রেমের_সমর
#পর্ব_১২
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
নিজের সামনেই নিজের বউয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসাটা ঠিক কতখানি অপমানের তা স্বচ্ছ বুঝে উঠল না। শুধু চোখ মুখ লাল করে তাকিয়ে থাকল ফ্লোরের দিকে। স্বচ্ছর বাবা শাহরিয়ার সাহেব গম্ভীর স্বরে জানালেন,
“ কি বলো? সব ঝামেলা শেষ করতে রাজি তো তুমি নাকি? ”
স্বচ্ছ গম্ভীর ভাবে তাকায়। সুহা বিবাহিত এটা জানার পরপরই তিহানের সেই কাজিন তার বাবা মাকে নিজের আশা ভঙ্গের কথা জানাল। অথঃপর তার বাবা মা খোঁজ নিয়ে জানল যে সুহা আর স্বচ্ছর নামমাত্রই বিয়ে হয়েছিল। এইছাড়া আর কোন সম্পর্কই নেই। এমনকি বিয়ের সম্পর্কটাও খুব তাড়াতাড়ি বিচ্ছিদে পরিণত হবেে।ব্যস! উনারা যেন সুযোগ পেয়ে বসলের। হুড়মুড় করে স্বচ্ছর বাবামার কাছে সুহার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলেন। স্বচ্ছ তা দেখে দাঁতে দাঁত চাপে। বলে,
“ কিসের ঝামেলা আব্বু?বিয়ে হয়েছে, বউ চাইছি৷ এসব তোমার কাছে ঝামেলা মনে হলো আব্বু? ”
শাহরিয়ার সাহেব গম্ভীর গলায় জানায়,
“ সুহার পরিবার চায় না ও তোমার সাথে সংসার করু। শুধু ওর আম্মুর একটু মত আছে। নয়তো ওর দাদা দাদী তোমার নামই শুনতে পারে না। আমাদের খুব বড়বড় কথা বলার মুখও তুমি রাখো নি স্বচ্ছ। কাজেই কি করতে পারি? উনারা চাচ্ছেন অন্যত্র্য বিয়ে দিকে। তার মানে তিহানের খালাত ভাই রিফাতও দারুণ একটা ছেলে। নিঃসন্দেহে সুহার সাথে ওর খুব ভালো মানাবে। ”
স্বচ্ছ কপাল কুঁচকে বলে,
“ ছিঃ আব্বু! তুমি বাপ হয়ে ছেলের সামনে ছেলের বউকে অন্য কারোে সাথে ভালো মানাবে এটা বলছো? ছিঃ!”
শাহরিয়ার সাহেব শান্তস্বরে বললেন,
“ তুমি সত্যিই এবার সিরিয়াস? সত্যিই সুহাকে নিয়ে ভাবছো তুমি? নাকি এটাও তোমার হেয়ালিপনা? ”
“ তোমার কি মনে হয় আব্বু? ”
“ কিছুই মনে হচ্ছে না। তুমি মনে হওয়ার মতো কোন রাস্তাই রাখোনি। ”
স্বচ্ছ রেগে নিজের রুমে চলে যায় এবারে। রুমে এসেই রাগ হাঁসফাঁস করতে করতে সাদাফকে শুধায়,
“ তুই বল? ঐই ছেলের কি মেরে হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া উচিত? ”
সাদাফ বন্ধুকে আরেকটু প্রশ্রয় দিয়ে গদগদ স্বরে বলে উঠে,
“ অবশ্যই বন্ধু! সাথে মাথাও ফাটানো উচিত। ”
.
স্বচ্ছর হাতে একটা খাম। দুইঘন্টা আগে পেয়েছে সে এই খাম। ভেতরের কাগজটা পড়ে যা বুঝল এটা ডিভোর্সের নোটিশ। স্বচ্ছর চোয়াল শক্ত হয়। কালই বিয়ের জন্য প্রস্তাব এল ঐ তিহানের কাজিনের থেকে আর আজ কিনা ডিভোর্সের নোটিশ? স্বচ্ছ মেনে নিবে? রাগে হুড়মুড় করতে করতে গেল তিহানের সে কাজিনটার কাছেই। দাঁতে দাঁত চেপে প্রথমেই দুটো দানবীয় চড় বসাল ছেলেটার গালে। পরপর ইচ্ছে মতো মার দিল। আকস্মিক আক্রমনে বোধহয় ছেলেটা হতভম্ব! অথচ স্বচ্ছর খেয়াল নেই। রাগ নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে কোথা থেকে একটা স্ট্যাম্প খুঁজে এনেও মারল। তারপর বোধহয় রাগ মিটল। অনেকটা সময় পর ছেলেটার কলার টেনে শাসিয়ে বলল,
“ অন্যের বউকে বিয়ে করার সাহস করবি না। মনে থাকবে? নাহলে কিন্তু পরিণতি আরো খারাপ হবে। ”
কথাগুলো বলেই স্বচ্ছ ফের বাসায় এল। রাগে হাঁসফাঁস করছে সে। শরীর ঘামছে। অতঃপর অনেকটা সময় পর নিজেকে শান্ত করে কল লাগাল সুহাকে। একনাগাড়ে অনেকগুলো কল দিয়ে যখন রিসিভড হলো তখন গম্ভীর গলায় বলল,
“ একটা খাম এসেছে সুহাসিনী। ”
“ তো? পড়েছেন খামের ভেতরে থাকা কাগজ? ”
স্বচ্ছ দাঁতে দাঁত চেপে জানায়,
“ আমার এখন রাগ হচ্ছে। এতদূর যাওয়া বোধহয় তোমার উচিত হয়নি।আমাকে? আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার সাহস দেখাচ্ছো সুহাসিনী?”
সুহা বাঁকা স্বরে বলে,
“ আপনি কোথাকার কোন মহারাজা অস্বচ্ছ সাহেব যে আপনাকে ডিভোর্স দেওয়ার সাহস দেখাতে পারব না? ”
স্বচ্ছ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“ ওয়েট, জাস্ট ওয়েট সুহাসিনী! তোমার মনের মহারাজা হয়ে দেখাব। ”
“নিজেকে কি ভাবেন? এতোটা আস্থা কেন নিজের প্রতি? ”
“ কারণ আমি আমিই! ”
সুহা হাসে। তাচ্ছিল্যের হাসি। বলে,
“ আর আমি খুবই স্বস্তা? খুবই মূল্যহীন? তাই না? ”
স্বচ্ছ চুপ থাকে এবারে৷ অনেকটা সময় চুপ থাকে। কপালে স্লাইড করে রাগ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালায়। অতঃপর অনেকটা সময় পর বলে,
“ স্বস্তা হলে তোমার পিছু পড়তাম না সুহাসিনী। মূল্যহীন হলে তোমার জন্য এক ছেলেকে মেরে আধমরা করে বাসায় ফিরতাম না। ”
সুহা আতঙ্কিত হয়। সেদিন সাদকে যেভাবে মেরেছে এরপর এই কথাটা অবিশ্বাস্য নয়৷ আতঙ্কিত স্বরেই বলে উঠে,
“ কাকে মেরেছেন? কাকে মেরে আধমরা করেছেন স্বচ্ছ? ”
“ তোমার প্রেমিককে!তিহানের খালাত ভাইকে। ”
সুহা অবাক হয়ে বলে,
“ কি?”
“ হু।”
সুহার রাগ হয়।একপ্রকার চেঁচিয়ে বলে,
“এসব কি ধরণের পাগলামো স্বচ্ছ?এসব কি আমায় দেখানোর জন্য? নাকি নিজের স্বার্থে ফাটল পড়ছে তাই?ইগোতে লেগেছে? শুধু শুধু তিহানের খালাতো ভাইকে মেরে হাত পা নাক ফাটানোর মানে কি জানতে পারি?নাকি ঢং করছেন?”
স্বচ্ছ এবারে ঠোঁট এলিয়ে হাসে। উত্তর দেয়,
“ ঢং যদি হয় তোমার জন্য তবে ঢংই করলাম নাহয়। ”
.
স্বচ্ছ প্রায় রাত দুটোর পরই শ্বশুড়ের বাসার সামনে এসে পৌঁছাল। চারদিকে তখন অল্প নিরবতা। স্বচ্ছ এপাশ ওপাশ চায়। পরমুহুর্তে ফোন বের করে একজনকে কল দেয়। সে আর কেউ নয়, রাহা। নাম্বারটা স্বচ্ছ ছুটির থেকেই নিয়েছে। তাও বহু বার বলার পরে। তারপরে রাহার সাথে একবার কল করে ভাব জমিয়েছে খুব করে। অতএব এই মাঝ রাত্রিতে এসে শালিকাকে কল করা। রাহাও গদগদ হয়ে বেলকনিতে আসে৷ দুলাভাইকে দেখে নেচে নেচে নিচে এসে গেইটও খুলে দেয়৷ তারপর স্বচ্ছ পা বাড়ায়৷ যেতে যেতেই রাহা বলে,
“ আপু তো ঘুমমম ! দাদা দাদীও ঘুম। আম্মা জেগে আছে শুধু।”
“ মানে শ্বাশুড়ি আম্মু? ”
“ হু হু। আপনার শ্বাশুড়ি আম্মুই। ”
স্বচ্ছ অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। শুধায়,
“ যদি যেতে না দেয় বউয়ের কাছে? ”
রাহা হেসে উঠে বলে,
“ দিবে দিবে। আম্মুর তেমন কোন অসুবিধা নেয়। আম্মু শুধু চায় আপু যাতে ভালো থাকে। এবার সেটা আপনার সাথে কিংবা অন্য কারোর সঙ্গে।”
কথাগুলো বলতে বলতেই বাসার দরজায় আসল দুইজনে। অথচ স্বচ্ছ ঢুকে না। প্রথমে রাহাই গিয়ে মায়ের থেকে অনুমতি নিয়ে এল। তারপর বলল,
“ আম্মু অনুমতি দিয়েছে। ভেতরে আসুন দুলাভাই। ”
স্বচ্ছ বাসায় পা রাখে। এদিক সেদিক চোরের মতো চোখ বুলিয়ে শুধায়
“ কোথায় শ্বাশুড়ি আম্মু? ”
রাহা হাসে। উত্তরে বলে,
“ রুমে চলে গেছে। আপনি চাইলে আপুর রুমে যেতে পারেন দুলাভাই। দেখুন মানাতে পারেন কিনা। আমি কিন্তু খুব খুশি হবো আপনাদের জুটিটা একসাথে থাকলে। ”
স্বচ্ছ পা বাড়ায় ধীর পায়ে।দূর থেকে দেখা যায় সুহার ঘুমন্ত মুখ। স্বচ্ছ আরো আস্তে পা বাড়ায় যেন বউয়ের ঘুম না ভাঙ্গে। এই প্রথম সে একঘরে ঘুমন্ত সুহাসিনীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সুহা নিশ্চিয় জেগে গেলে তেতে উঠবে? তার উপর একগাধা রাগ দেখাবে নিশ্চয়? স্বচ্ছ ছোটশ্বাস টানে। খাটের এককোণায় বসে ড্যাবড্যাব করে তাকায় সুহার দিকে। মেয়েটা জেগে থাকলে যেমন রাগ দেখায় এখন ঠিক ততোটাই শান্ত, শীতল মনে হচ্ছে। আদুরে লাগছে। স্বচ্ছর ইচ্ছে মেয়েটার নরম গালে হাত বুলাতে। অথচ হাত এগোয় না। যদি বউ জেগে যায়?কিন্তু ঐ যে? মস্তিষ্ক আর মনের মত্যে যুদ্ধে অবশেষে মনকে মানাতে পারল না। আলতো হাতে যখন সুহার গাল ছোঁয়াল ঠিক তখনই সুহা জেগে উঠল। স্বচ্ছর তখন যাচ্ছে তাই কান্ড! হবে কি একটু পর?না জানি তার মাথাটাই না ফাটিয়ে দেয় এই মেয়!
#চলবে…
#প্রেমের_সমর
#পর্ব_১৩
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
সুহার চোখেমুখে রাগের আভাস। দৃষ্টিতে আগুনে জ্বলসে যাওয়ার মতো পূর্ভাবাস। সুহা রাগে ফোঁসফোঁস করে। তীর্যক ভ্রু করে তাকিয়েই প্রথমে খপ করে স্বচ্ছর সে হাতটাকেই চেপে ধরল যে হাতটা স্বচ্ছ সুহার গালে ছোঁয়াল। এমনভাবেই ধরল যে সুহার হাতের নখ গুলো ধেবে গেল স্বচ্ছর হাতের তালুতে। সুহা ঠোঁট বাকিয়েই বলে,
“মেয়ে দেখলেই ছুুঁতে ইচ্ছে করে না? ঘুমে থাকার সুযোগ নিচ্ছিলেন না অস্বচ্ছ সাহেব?”
স্বচ্ছ ছোট শ্বাস ফেলে। হাতের দিকে চেয়ে সুহার নখ ধাবানো দেখে হালকা হেসে পাল্টা প্রশ্ন করল ,
“ তুমিও আমায় ছুঁয়েছো সুহাসিনী। সুযোগ নিচ্ছো? ”
সুহা উঠে বসে। পরনের ওড়না ঠিক করে শক্ত স্বরে বলে উঠল মুহুর্তেই,
“ সুযোগ নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছি না আমি। ”
“ তাহলে ছুঁয়েছো কেন?”
সুহা দাঁতে দাঁত চেপে তাকায়।বলে,
“ মেরে ফেলার জন্য!”
কথাটা বলেই সুহার টনক নড়ল। এতক্ষন ঘুম থেকে উঠেই স্বচ্ছকে দেখে এসব প্রতিক্রিয়া করেছিল। এখন যেন মস্তিষ্ক কিছু বুঝে উঠল। বিভ্রান্ত স্বরে বলে উঠল সঙ্গে সঙ্গে,
“ এক মিনিট! আমার রুমে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে কে আপনাকে? আমার রুমে ঢোকার সাহস হলো কি করে আপনার? ”
স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে হাসে। হাতে সুহার নখের চাপ গুলো দেখতে দেখতেই পরমুহুর্তেই সুহার দিকে তাকায়।ঠোঁট এলিয়ে ভাব নিয়ে বলে,
“ আমি তো বরাবরই সাহসী সুহাসিনী! সাহসীদের আর নতুন করে সাহস করার কি আছে বলো? ”
“ এসব বড় বড় কথা আমার সামনে বলবেন না। মেরে দিব জাস্ট। ”
“ মেরে দাও। ”
সুহা এবারে দুই হাতে চেপে ধরে স্বচ্ছর গলাটা। চোখের দৃষ্টিতে যেন আগুন ঝরছে মেয়েটার। সুহা চোখে আগুন ঝরানো দৃষ্টিতে তাকিয়েই স্বচ্ছকে দুই হাতের শক্তি দিয়ে ঠেলে ফেলল। মুহুর্তেই বেচারা স্বচ্ছ খাট ছেড়ে পড়ে গেল রুমের ফ্লোরে। কোমড়ে বোধহয় ব্যাথাও পেল। সুহা হাসে। উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
“ ভাববেন না মেরে দিতে পারব না। ”
স্বচ্ছ অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। কোমড়ে হাত রেখে ভ্যাবাচ্যাকা দৃষ্টিতে বলে,
“ নির্দয় রমণী তুমি। মনে দয়ামায়া নেই। ব্যাথা পেলাম তো। কোমড়টা ভেঙ্গে দিলে সুহাসিনী! ”
সুহা ফোসঁফাঁস করে বলে,
“ মাথাটাই ফাটিয়ে দেওয়া উচিত ছিল না কি? ”
স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে বলে,
“ প্লিজ ফাঁটিয়ে দাও। ”
সুহা মুখ ভেঙ্গায়। বলে,
“ নাটক! ”
মুখ ভেঙ্গিয়ে কথাটা বলার সাথে সাথেই যেন সুহা মস্তিষ্কে খেলে গেল আরো একটা প্রশ্ন। দ্বিতীয়বার টনক নড়ল। মুহুর্তেই শুধাল,
“ এক মিনিট, এটা আমার বাবার বাসা।ঠিকানা মনে থাকার তো কথা নয় এতদিন। তো? ঠিকানা কে দিয়েছে আপনাকে? ”
স্বচ্ছ হাসে। ফ্লোরে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো শুঁয়ে পড়ে বলে উঠে,
“ ভালোবাসা থাকলে ঠিকানা এমনি এমনিই চলে আসে সুহাসিনী! ”
সুহা বিড়বিড় করে রাগ ঝাড়ে। ঘড়িতে দেখে রাত দুটোর উপরে। বিড়বিড় স্বরে বলে উঠে,
“ রাত দুটোর উপর! ”
স্বচ্ছ শুনে। মাথার নিচে ওভাবেই হাত রেখে আরাম আয়শ করে শোঁয়ে সে। বলে,
“ ভালোবাসার কাছে রাত দুটো তো কিছুই নয়। ”
সুহা এবারে চুপ থাকে। কিয়ৎক্ষন পায়চারি করে ভাবে স্বচ্ছকে কি করা যায়?পরমুহুর্তেই রুম ছেগে বেরিয়ে বুঝে সবাই ঘুমোচ্ছে। ঘুম থেকে ডেকে তোলাটাও ভালো দেখায় না। সুহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বাসায় তাদের রুম তিনটেই। দাদা দাদী একঘরে, তার আম্মু একঘরে আর সে আর বোন একঘরে। কিন্তু এখন তো বিপাকে সে। স্বচ্ছকে কোথায় ঘুমোতে দিবে এই রাতে? সুহা রাগে হাসফাঁস করতে করতে পুণরায় রুমে এসে বলে উঠে,
“ তিহানের কাজিনকে মেরেছেন কেন? ওকে যেভাবে মেরেছেন আপনাকে ও যদি সেভাবে মেরে বসিয়ে রাখি ভালো হবে? ”
স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে উত্তর দেয়,
“বউয়ের হাতের মাইর হলে অবশ্যই ভালো হবে। আমি রাজি মার খেতে। ”
সুহা নাক ফুলায়। টানটান স্বরে বলে,
“ উনাকে স্যরি বলবেন, এক্ষুনিই। ”
স্বচ্ছ ও টানটান স্বরে এবারে জানায়,
” বলব না। ”
দৃঢ়স্বরে উত্তর আসে,
” বলবেন। ”
“ না, বলব না সুহাসিনী। ”
সুহা জ্বলন্ত চাহনিতে তাকায়। যেন ভস্ম করে দিবে স্বচ্ছকে। বলে,
“ আমি এক্ষুনি তাকে কল করব।হয় আপনি তাকে স্যরি বলবেন নয়তো আমি এক্ষুনি তাকে কল করে বলব আমি বিয়ের প্রস্তাবটা এক্সেপ্ট করে নিয়েছি। ”
স্বচ্ছর রাগ হয় এবারে। নাক লাল হয়ে আসে। উঠে দাঁড়িয়ে সুহার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে শোনায়,
“ চুপচাপ ছিলাম এতক্ষন। ভেবেছিলাম ভালো ভালো কথা বলে বউকে ভাগে আনব। ভালোবাসব। কিন্তু না, তুমি তো ভালো কথার মেয়ে নয় সুহাসিনী। ত্যাড়ামি তোমার শিরায় শিরায় মিশে আছে। ”
“ যখন সহজ ছিলাম তখন ঠকিয়ছিলেন স্বচ্ছ। ”
স্বচ্ছ উত্তর দেয়না। পকেট থেকে সুহার পাঠানো নোটিশ বের করে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে সুহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“ তোমান সো কল্ড ডিভোর্স নোটিশ সুহাসিনী। আশা করি দ্বিতীয়বার এই সাহস করবে না। ভালো হবে না তাহলে। ”
সুহা জেদ নিয়ে বলে,
“ খারাপটা কি হবে তা আমিও দেখে ছাড়ব।”
স্বচ্ছ আর উত্তর করল না। এতদূর জার্নির পর শরীর এলিয়ে দিতে বিছানার এককোণে টানটান হয় শুঁয়ে পড়ল। বালিশে মাথা রেখে যখন চোখ বুঝল ঠিক তখনই সুহা ঝাঝালো স্বরে বলে উঠল,
“ বিছানায় শুঁয়েছেন কেন? একটু আগের আচরণ ভুলে গিয়েছেন? আমি কিন্তু মোটেও অবলা নারী নই স্বচ্ছ। প্রতিবাদ করতে জানি। ”
স্বচ্ছ সেভাবেই চোখ বন্ধ রেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। উত্তরে বলে,
“ বউয়ের প্রতিবাদ মানে পিওর ভালোবাসা সুহাসিনী। এইটুকু সহ্য করা যায়।”
সুহার কথা শুনছে না রাগে জেদে সুহা ফোঁসফোঁস করল। তাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
“ রাগ হচ্ছে। ”
স্বচ্ছ তাকায়। মেয়েটার মুখচাহনিতে সত্যিই রাগ ঝরে ঝরে পড়ছে।নাক ফুলে উঠছে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রাখা। স্বচ্ছর কাছে এই দৃশ্যটাও অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য মনে হলো। মেয়েটাকে রাগতে দেখলেও তার সুন্দর লাগছে।বুক চিনচিন করছে ভালো লাগার আবেশে। স্বচ্ছ বুঝে উঠে না। প্রথমে যখন সুহাকে রাগতে দেখেছিল তখন তো তার এতোটা ভালো লাগে নি। বরং মেয়েটাকে বেয়াদব মেয়ে হিসেবেই ধরে নিয়েছিল। তাহলে এখন? নিজের বউ বলে জানে বলে?স্বচ্ছ বুঝে না। হেসে বলে,
“ রাগলেও তোমাকে সুন্দর দেখতে লাগে। বুঝে উঠছি না এটাই কি প্রেম প্রেম অনুভূতি?”
“আপনার মাথা।”
কথাচা দাঁত দাঁত চিবিয়ে বলেই সুহা আবার বুঝানোর ন্যায় করে বলে উঠে,
“ স্বচ্ছ! বিছানা ছেড়ে নামুন। আপনি আমি দুইজনে এক বিছানায় ঘুমানো যাবে না। আর যেহেতু সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে সেহেতু রুমের ব্যবস্থা করাও যাচ্ছে না। ”
স্বচ্ছ হেসে বলে,
” হাজব্যান্ড ওয়াইফ তো আমরা। এক বিছানাতেই নাহয় ঘুমালাম। ”
সুহা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“ আপনার ঘুম নিয়ে আমি চিন্তা করছি না। আমি এখন ঘুমাব। সুতারাং আপনি বিছানা ছেড়ে নামবেন এক্ষুনি, এবং নিচেই ঘুমাবেন।”
“ নিচে?”
“ অবশ্যই। ”
স্বচ্ছ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
“ নির্দয় রমণী! আমার জন্য এইটুকু ভালোবাসাও মনে রাখলে কি এমন ক্ষতি হতো শুনি? ”
“ অনেক ক্ষতি। ”
.
স্বচ্ছ রাতে নিচেই ঘুমাল। কোনদিন নিচে না ঘুমানো ছেলেটাই বউয়ের কথা রেখে নিচে ঘুমিয়েছে। এখন ঘুমে কাঁদা হয়ে আছে। সুহা ঘড়ি দেখে। দিনের বারোটা বাঁজে। অথচ স্বচ্ছ তখনও ঘুম। সুহা তবুও ডাকে না। অথচ সুহা ডাকে নি তো কি, সুহার দাদাজান সে দায়িত্ব নিয়েছে। নিজের বাঁশের লাঠিটা নিয়ে সুহার ঘরে গিয়েই যখন স্বচ্ছকে ফ্লোরে চিৎ হয়ে পড়ে থাকতে দেখল ঠিক তখনই লাঠি দিয়ে বসাল এক ঘা ছেলেটার পিঠে। স্বচ্ছ তখনও ঘুমে। আচমকা আঘাতে হুড়মুড় করে উঠে বসতেই শ্রবণ হলো,
“ কিরে হতচ্ছাড়া! চারবছর আমার নাতনিকে ঘুরিয়ে এখন ঢং দেখাতে এসেছিস? আমার নাতনিকে জ্বালাচ্ছিস? মে’রে একেবারে পিঠের চামড়া উঠিয়ে নিব।”
বেচারা স্বচ্ছ ঘুমের মধ্যেই আতঙ্কে উঠে বসল। পিঠে হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠল,
“ এবার বুঝা যাচ্ছে আমার বউটা এমন ডাকা’ত কেন! সব এই বুড়োরই জিনের দোষ! এক ডাকা’ত দাদা আরো ডাকা’ত নাতনি!”
#চলবে….
#প্রেমের_সমর
#পর্ব_১৪
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
সারারাত ফ্লোরে গড়াগড়ি করার দরুণ স্বচ্ছর শরীরময় ব্যাথা অনুভব হলো। কোন রকমে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসেই তাকাল সুহার দাদার দিকে। হাত বাড়িয়ে বেহাল ভাবে বলল,
“ ডিয়ার দাদাজান, চারবছর তো আপনার নাতনিকে আপনার কাছেই আমানত রেখে গেলাম। কিন্তু তাই বলে এখনও আমাকে এখন এভাবে অপমান করবেন?”
সুহার দাদা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। লাঠির ঠকঠক আওয়াজ তুলে বলে,
“ এই হতচ্ছাড়াকে এখানে থাকার অনুমতি দিল কে? ”
সুহা ছোট ছোট চোখে তাকায়। স্বচ্ছ ততক্ষনে উঠে দাঁড়ায়। দাদাজানের সামনে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুঁজে বলে উঠে,
“ শ্বশুড়বাড়ির জামাই শ্বশুড়বাড়িতে থাকবে। তাতে আবার অনুমতি দিবে কে বলুন? এইটুকু অধিকার তো আমার আছেই না? ”
দাদাজান গম্ভীর স্বরে উত্তর করলেন,
“ না নেই, তুমি যদি এখানে থাকোই তাহলে ছাদের চিলেকোঠার ঘরটাতে থাকবে। বাসায় থাকার অধিকার তোমার নেই। ”
স্বচ্ছ ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠল,
“ ছিঃ দাদাজান! আপনার নাতজামাই হই আমি। ”
দাদাজান এবারে লাঠি দেখালেন। চোখ রাঙ্গিয়ে বলে উঠলেন,
“ দেখেছো? যদি পিঠে এটার মার না চাও তো ওখানেই থাকবে। আর নয়তো আজই এখান থেকে চলে যাবে। ”
.
স্বচ্ছকে কান টেনে দাদাজান ছাদের সেই চিলেকোঠার ঘরটাতেই নিয়ে গেল। শাস্তিস্বরূপ দিয়ে গেল রোদে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি। স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জীবনেই একটাই বিয়ে করেছে, একটাই বউ তার। সে বউকে পেতেই কি না কি করছে সে। ছোট শ্বাস টেনে দাদাজানের কথামতো রোদের দাঁড়িয়ে থেকেই সিগারেটে আগুন ধরাল। মুখে তুলে ধরতেই পেছন থেকে শুনতে ফেল,
“ দুপুর হলো। ক্ষিধে লাগে নি যে সিগারেট ফুঁকছেন? ”
স্বচ্ছ তাকায়। সুহাকে নাস্তা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিগারেটের ধোঁয়া উড়ায় অন্য পাশে। পরমুহুর্তেই সদ্য আগুন ধরানো সিগারেটটা পায়ে পিষে ফেলে বলে উঠে,
“ লাগলেও খেতে দিবে কে? তোমার দাদাজান নিষ্ঠুর মানুষ। রোদে দাঁড় করিয়ে চলে গেছে। আর তুমি তো নির্দয় মহিলা। দেখা যেত বিষ মিশিয়ে খাবার খাইয়ে দিতে।”
সুহা হতাশ শ্বাস ফেলে। রেগে না গিয়ে খাবার গুলো স্বচ্ছর সামনে ধরে বলে উঠে,,
“ আম্মু পাঠিয়েছে। শতহোক আমরা মানুষ তো স্বচ্ছ, কেউ আমাদের বাসায় আসলে আপ্যায়ন না করে পারি না। ”
স্বচ্ছ ভ্রু বাঁকায়। ভ্রু বাঁকিয়ে বলে উঠে,
“ এটা আপ্যায়ন ? যায় হোক, খাবারটা দাও, পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে আমার। ”
কথাটা বলেই খাবারটা হাত টেনে নিল স্বচ্ছ। দু পা বাড়িয়ে চিলেকোঠার ঘরটায় যেতেই দেখল ময়লা হয়ে আছে। ধূলোবালিতে তার এলার্জি। মোট কথা তার থাকার যোগ্য নয়। তবুও স্বচ্ছ একটা গাছের টুল টেনে নিয়ে বসল। খেতে লাগল। সুহা তা দেখল। স্বচ্ছকে এমন বেমানান পরিবেশে দেখে নরম স্বরে বলল,
“ স্বচ্ছ? চলে যান এখান থেকে। দাদাজান খুব একটা সহজ মানুষ নন। জ্বালিয়ে মারবে আপনাকে। একটা নামমাত্র সম্পর্কের জন্য জ্বলে তো লাভ নেই বলুন? ”
“ তোমার দাদাজান তোমাকে আমার হাতে না তুলে দেওয়া অব্দি যাব না। ”
“ কখনোই তুলে দিবে না। আর তুলে দিলেও আমি কখনো আপনার হবো না স্বচ্ছ। কখনোই না। এখন ও মনের মধ্যে আপনার জন্য ঘৃণা পুষি। ”
স্বচ্ছ তাকায় বাঁকা চাহনিতে। ভ্রু নাচিয় বলে উঠে,
“ কোনদিন ভালোবাসতে চাইবে না তো? ”
সুহা তৎক্ষনাৎ বলে,
“ জীবনেও না। ”
কথাটা বলেই দ্রুত পা চালাতে নিতেই উষ্টা খেয়ে পড়তে নিল সুহা। স্বচ্ছ মুহুর্তেই হাতের থালাটা রেখে সুহার হাত টেনে ধরল। বলল,
“ পরলে তো ব্যাথা পেতে। ”
সুহার ত্যাড়া গলা,
” পেলে পেতাম। ”
স্বচ্ছ হাসে। নিচে বসে সুহার পায়ে হাত রাখে। তারপর উষ্ঠা খাওয়া বুড়ো আঙ্গুলটাতেই হাত বুলিয়ে বলে,
“ ব্যাথা লাগল বেশি? আমি যখন বিরক্ত করব তখন মারতে হবে তো আমায়। ব্যাথা পেলে মারবে কিভাবে? ”
সুহা ফোঁসফোঁস শ্বাস টানে। মুহুর্তেই পা টা সরিয়ে নিয়ে বলে,
“ না বলে পায়ে হাত দিবেন না কখনো। ”
কথাটা বলেই সুহা বেরিয়ে যায়।স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চোখ বুঝে বিড়বিড় করে বলে,
“ সুহাসিনী?যদি পায়ে হাত দিয়ে ভালোবাসা প্রার্থনা চাই? তবুও কি ফিরিয়েই দিবে?”
.
স্বচ্ছ বিকালেও সিগারেট ফুঁকতে ব্যস্ত ছাদে বসে। রুমটা মোটামুটি থাকার মতো করে পরিষ্কার করেছেে।কিন্তু ঐ যে ধুলোবালিতে তার এলার্জি? তার দরুণই একটু পরপর হাঁচি কাশি দিচ্ছে সে। সাথে সিগারেট৷ ঠিক সেই মুহুর্তেই ছাদে এলে সম্মানীয় দাদাজান। স্বচ্ছ তা দেখেই চিলেকোঠার একটা ভাঙ্গা চেয়ার এগিয়ে দিলেন। সেভাবেই দাদাজানের সামনে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে বলল,
“ দাদাজান? আপনার নাতনিকে পেতে হলে কি কি করা উচিত আমার? সাজেশন দিন কিছু। ”
দাদাজান কঠিন মুখচাহনিতে তাকালেন। রাগে মুখ লাল হয়ে উঠছে উনার। বেয়াদব ছেলে!তার সামনেই সিগারেট টানছে। রেগে বললেন,
” আমাকে কি বন্ধু লাগছে তোমার? ”
স্বচ্ছ হাসে। মজা করে বলে,
“ একদমই নাহ! আমার মনে হচ্ছে আমি আপনার নাতনির প্রেমে পড়ে গিয়েছি। কি একটা বাজে অনুভূতি টের পাচ্ছি। সে অন্য কারোর হয়ে যাবে ভাবলেই দমবন্ধ লাগছে, রাগ লাগছে। ”
“ এসব বললে কি আমি গলে যাব তোমার প্রতি? চুল আমার এমনি এমনি পাঁকে নি। ”
“ আজকাল সত্যি কথার দাম নেই। কি এক আজব পৃথিবী! চারবছর আগে যখন ভন্ডামি করলাম তখন আপনার নাতনি গলে জল হয়ে গেল। এবার যখন সত্যি সত্যিই বেহায়াপনা দেখাচ্ছি তখন আপনার নাতনি আমায় ধারে কাছেই ঘেষতে দিচ্ছে না। ”
দাদাজান কঠিন স্বরে বললেন,
“ আমার নাতনিকে আমি অন্যত্র বিয়ে দিব। তোমার সাথে সংসার করতে দিব না বেয়াদব। ”
“ পারবেন? ”
দাদাজান কপাল কুঁচকালেন। কঠিন চাহনিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে,
“ আমার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করছো তুমি? ”
স্বচ্ছ হেসে বলে,
“ না, শুধু এইটুকু বলে রাখছি যে আমার বউকে অন্য কারোর সাথে বিয়ে দেওয়ার সাহস আপনি করতে পারবেন না। ভালো হবে না। ”
দাদাজান রাগে থমথমে হয়ে বলে,
“ কতটুকু বয়স তোমার? ভালো খারাপ শেখাচ্ছো আমায়? ”
“ আপনি আর আপনার নাতনি দুইজনই সেইম সেইম। বলুন, আপনাকে কিভাবে পটানো যায়? আমি নিশ্চিত আপনাকে পটাতে পারলে আপনার নাতনিকেও পটাতে পারব আমি। ”
দাদাজান রাগ সামলাতে পারলেন না যেন। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে উঠলেন,
“ মেরে মুখ ভেঙ্গে দিব বেয়াদব ছেলে। ”
.
স্বচ্ছ চিলেকোঠার ঘরে নিচে বিছানা করেছে৷ অসুবিধা হচ্ছে তার৷ সাথে মশার কামড় খাচ্ছে। শরীরটা জ্বরজ্বরও লাগছে। কপালটাও ব্যাথা করছে৷ বউ খুঁজতে এসে শরীরের এই তীব্র বেঈমানিতে বিরক্ত হলো স্বচ্ছ। সাদাফকে কল করে বিরক্তি নিয়ে জানাল,
“ একটাই বউ। তাও ভালোবাসে না আমায়। আমার দুঃখটা বুঝিস দোস্ত? ”
সাদাফ ওপাশ থেকে হেসে উপহাস করে বলে,
“ আহারে, আবার মেরেছে নাকি তোকে? কি কারণে মারল এবারে? ”
“ ওকে ঘুমালে সুন্দর লাগে। এতোটা সফট বাচ্চা বাচ্চা লাগে যে শুধু হাত ছোঁয়ালাম গালে। ব্যস! ”
সাদাফ মুহুর্তেই হাসিতে ফেটে পড়ে। বলে,
“ মেরে দিল? মার খেয়েও পড়ে আছিস ওখানে?ছিঃ! ”
“ ছিঃ?”
“ ভালো টালো বাসিস? ”
স্বচ্ছ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকে। সত্যিই তো। সেই ভালোবাসে মেয়েটাকে? ভালোবাসার সংজ্ঞা তো এমনই? শেষমেষ সে মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলল? স্বচ্ছ বুঝে উঠেও না বুঝার ভান করে বিড়বিড় করে বলে,
“ বুঝে উঠছি না।একটা মেয়েকে কিভাবে ভালোবাসতে হয় জেনেও উঠছি না। ওকে ভাবলেই মস্তিষ্ক শূণ্য হয়ে আসছে। মাথা কাজ করছে না। শুধু এইটুকু মনে হয় যে ওকে অন্য কারোর হতে দেওয়া যাবে না দোস্ত। ওকে দেখতে ভালো লাগে, উপস্থিতি ভালো লাগে, ঝগড়া ভালো লাগে এমনকি মার দেওয়াও ভালো লাগে। এবং ওকে জ্বালাতেও ভালো লাগে। ”
ওপাশ থেকে সাদাফ তখন বলে,
“ ঘটনা তাহলে জন্ডিস। তুই বোধহয় কঠিন রকমের প্রেমে ট্রেমে পড়ে গিয়েছিস দোস্ত। ”
#চলবে….
[ কেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ]