প্রেমের সমর পর্ব-১৮+১৯+২০

0
2

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_১৮
লেখনীতেঃঅলকানন্দা ঐন্দ্রি

স্বচ্ছ একটু সুস্থ হতেই শুরু হলো তার বলদময় কান্ডকারখানা। সকাল সকাল উঠেই ঘরময় পায়চারি করে সে গুগলে সার্চ দিয়েছে কিভাবে মেয়েদের মন জয় করা যায়। অতঃপর বিভিন্ন সোর্স খোঁজাখোঁজি করে সে উপহার দেওয়া এবং বউয়ের প্রশংসা করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু এইখানেও বিপত্তি। কি উপহার দিবে?এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই রাহাকে পেল।তারপর রাহাকে নিয়ে বের হয়ে সারা বিকেল ঘুরঘুর করে রাতে ফিরল স্বচ্ছরা।সুহা যখন দরজা খুলল? এমন ভাবে চাইল যেন স্বচ্ছকে গিলে খাবে। স্বচ্ছ বোকাবোকা চোখে তাকায়। চোখে হেসে বউয়ের প্রশংসা করার উদ্দেশ্যে বলে,

“ সুহাসিনী? এভাবে তাকাচ্ছো কেন? রেগে তাকালে তোমায় সুন্দর লাগে।প্রেমে পড়ে যাই। ”

স্বচ্ছ যদিও মন থেকেই প্রশংসাটা করল কিন্তু সুহা বিরক্ত হলো।অহেতুক এই প্রশংসায় সে গলে গেল না। বরং বোনের আর স্বচ্ছর হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ দেখে বিরক্ত গলায় শুধাল,

“ এতক্ষন সময় ধরে দুইজনে কোন রাজকার্য উদ্ধার করলেন? আর হ্যাঁ, আপনার না জ্বর? পরশু তো উঠে বসে খেতেও পারছিলেন না। ”

স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে হেসে দেয়। তৎক্ষনাৎ উত্তর করে,

“ বউয়ের সেবা পেয়ে সু্স্থ হয়ে গেছি। একেবারে ফাইন। দেখো কপালে হাত দিয়ে। জ্বর নেই। ”

“ভালো, তাহলে কাল সকালে এখান থেকে চলে যাবেন। দাদাজান পছন্দ করছেন না আপনার থাকাটা। আর পাড়া-প্রতিবেশিও অনেক কিছু বলে বেড়াবে আপনি এভাবে থাকলে। ”

স্বচ্ছর খুশিখুশি মনটা এক মুহুর্তেই বোধহয় নিরব হয়ে এল। চাপা রাগ লাগল

“ তুমি খুব অহংকারী সুহাসিনী। সবসময় এমন ভাবে অপমান করো যেন মনে হয় আমাকে একটা সাধারণ মানুষ হিসেবেও গণ্য করো না তুমি। ”

সুহা সরু চোখে তাকায়। ফোঁস করে বলে,

“ গণ্য করার পথ রাখেননি। তাই। ”

কথাটা বলেই সুহা বিরক্ত মুখে চলে যায় সেখান থেকে৷ স্বচ্ছ তপ্তশ্বাস ফেলে। একনজর সুহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পরমুহুর্তে রাহাকে বলে উঠে,

“ সবসময় মেজাজের বারোটা বাজিয়ে দেয় তোমার বোন। কতসুন্দর প্রেম নিবেদন করে গিফ্ট করতাম শাড়িগুলো। তা না! আমার প্রেম নিবেদনের আর মুডই রাখে নি। ”

রাহা হেসে উঠে। বিনিময়ে বলে উঠে,

“রাগ করবেন না ভাইয়া। আমি আছি তো। আপু শেষ অব্দি আপনার হবেই। চিন্তা করবেন না। ”

স্বচ্ছ হতাশ হয়ে শ্বাস টানে। কিড়মিড় করে বলে উঠে,

“ ঐ ভিলেইন দাদাজান তো চায় না। মনে হয় না শেষ অব্দি তোমার বোনরে সে আমায় দিবে। আচ্ছা যদি ওর বিয়ে অন্য কোথাও দিয়ে দেয় তোমার ঐ ভিলেইন দাদাজান? ”

“ আপনার সাথে তো ডিভোর্স হয় নি এখনো। কি করে দিবে?”

স্বচ্ছ দাদাজানের প্রতি রাগ ফুঁসে। নাক ফুলিয়ে নিয়ে বলে উঠে,

“ দিতে চাইলে কিন্তু আমি সোজা বউ নিয়ে ভাগব। একচুলও ছাড় দিব না। সাহস কত, আমায় নোটিশ পাঠাল। ”

রাহা ফের হাসে। বলে,

“ নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ এমনিতেও কার্যকর হবে না। আপনার হাতে আরো অনেকদিন দুলাভাই। চেষ্টা করে যান, আপু ঠিক রাজি হবে। ”

স্বচ্ছ বিড়বিড় করে বলে উঠে,

” ৯০ দিনকে কমিয়ে তোমার দাদাজান ষড়যন্ত্র করে ১৫ দিন বানিয়ে দিয়েছে। শা’লা ষড়যন্ত্রকারী দাদাজান! ”

রাহা এবারে হেসে জিজ্ঞেস করে,

“ ভালোবাসেন আমার আপুকে? ”

স্বচ্ছ চুপ থাকে। প্রশ্নটা নিজেই নিজেকে করে থমকে যায়। তার কপালে কি এই অস্থিরতা, এই দুর্বলতা আসার কথা ছিল? সে তো ভাবেই নি কখনো এভাবে সে দুর্বল হয়ে যাবে কোন নারীর প্রতি। স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলে উঠে,

“ ভালোবাসলে কি কি প্রমাণ করা লাগে রাহা? ”

রাহা উত্তর করে,

“ ভালোবাসা প্রমাণ করার বিষয় নয় দুলাভাই, ভালোবাসা হলো অনুভবের বিষয়।”

.

তখন রাত। স্বচ্ছকে আলাদা রুমে অর্থ্যাৎ দাদার সাথে থাকতে দেওয়া হলেও রাহার সাহায্য নিয়ে সে কিছু সময়ের জন্য সুহার রুমে গেলে। পা টিপটিপ করে বিছানায় বসে সুহার জন্য কিনে আনা শাড়িগুলা রাখল সুহার মাথার কাছেই। পরমুহুর্তেই একটা চিরকুট রাখল। স্বচ্ছ তাকায় ঘুমে থাকা মেয়েটার দিকে। অল্প আলোয় নিঃসন্দেহে মায়াবী বোধ হচ্ছে। স্বচ্ছ একটু ঝুঁকে। কয়েক সেকেন্ড এক পলকে তাকিয়ে থেকে শুধায়,

“ তুমি আমার প্রথম অস্থিরতা সুহাসিনী, তুমি আমার প্রথম অনুভূতি। তুমিই প্রথম যার কথা আমি ঘুমাতে গিয়েও ভাবি। বউ না তুমি? বউ হয়েই থেকো আমার। অন্য কারোর বউ হতে কিন্তু আমি দেব না সুহাসিনী। মাইন্ড ইট। ”

কথাগুলো বলেই স্বচ্ছ পা বাড়াল রুমে বাইরে। তার ঠিক মিনিট দুয়েক পরই রুমে এল রাহা। ইচ্ছে করেই সুহাকে জাগিয়ে দেওয়ার জন্য ঠেলে বলে উঠল,

“ আপু?এই আপু?তুই কি ঘুমের মধ্যে শপিংয়ে গিয়েছিস? তোর কাছে এতগুলো শপিং ব্যাগ কেন? ”

ছোটবোনের ডাকে সুহা বিরক্ত হয়। চোখ কাচুমুচু করে উঠে বসতেই রাহা আলো জ্বালাল। শপিং ব্যাগ সামনে রেখে বলল,

“ দেখ দেখ, এগুলা তোর মাথার কাছে ছিল।”

সুহা তাকায়। মনোযোগ দিয়ে দেখে বুঝতে পারে এগুলো স্বচ্ছর হাতে থাকা সে শপিং ব্যাগ গুলোই। আর রাহার হাতে যেগুলো ছিল ঐগুলো রাহার জন্য কিনে দিয়েছে সম্ভবত। সুহা রাহা এবং স্বচ্ছর এই নাটক বুঝে উঠে বিরক্ত কন্ঠে বলে,

“ কি শুরু করেছিস এসব? তুই নিজেই ঐ লোকের হয়ে এগুলো এখানে রেখে এখন নাটক করছিস? মার লাগাব? ”

“ আপু? দেখ, দেখ না ভেতরে কি আছে৷ দেখা না কি দিয়েছে.. ”

“ দেখাব না। তোকে কি দিয়েছে তা কি জানতে চেয়েছি আমি? ”

“ আমাকে? আমাকে তো শুধু তিনটা শাড়ি দিয়েছে আপু। বেশি না। ”

তিন তিনটা শাড়ি! তাও কিনা বেশি না। সুহা রাগ ফুঁসে। তাকে আগে গিপ্ট না করে তার বোনকে কেন গিফ্ট করবে? কি সম্পর্ক তার বোনের সাথে হুহ?পুরুষমাত্রই ছুঁকছুঁকে স্বভাব। বিশ্বাস নেই। সুহা বাঁকা চোখে তাকায় বোনের দিকে। কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই রাহার ফোন বাঁজে। রাহা যেন বিরক্ত হয়। নিরাস স্বরে বলে,

“ কোন ছাগল যে এই রাত বিরাতে আমায় কল দিচ্ছে এটাই বুঝে উঠছি না আপু। কল যখন দিচ্ছিসই কথা তো বলবি নাকি। অথচ কথাই বলছে না। কল করে চুপ করে বসে আছে। ”

কথাগুলো বিরক্ত হয়ে ঝাঝালো স্বরে বলতে বলতেই রাহা জানালার পাশে গেল। ঠান্ডা বাতাস শরীর ছুঁয়ে যেতেই কল রিসিভড করল সে। বিরক্ত হয়ে বলে,

“ সমস্যা কি ভাই?কে আপনে? রাতদুপুরে কল দিয়ে বিরক্ত করছেন কেন বলুন? ”

ওপাশের মানুষটা কথা বলে না৷ শুধু নিঃশ্বাসের শব্দই ভেসে আসে। রাহা ফের বিরক্ত হয়ে কল রাখল। অথচ একটু পর আবারও কল এল।রাহা ফের কল তুলল। কিন্তু এবারেও নিরবতা। কোন শব্দ নেই, কথা নেই, কেবল নিঃশ্বাসের আওয়াজ!

.

রাহা ঘুমিয়ে পড়তেইসুহা শাড়িগুলো দেখল নিজে একা একাই। শাড়ির সাথে অবশ্য মিলেছে কাজল, আলতা,হাতের চুড়ি, রূপোর নুপূর এবং একটা শুকনো বেলিফুলের মালা। সাথে একটক চিরকুট। সুহা বুক ধুকপুক করে। বোকা লোকটার বোকা কান্ডকারখানা দেখে তার ইচ্ছে হয় বকাঝকা করতে। একসাথে এতকিছু গিফ্ট করে কে? যেন মনে হচ্ছে বিয়ের কেনাকাটা করেছে সে। সুহা মনে মনে হালকা হাসেও। চিরকুট মেলে পড়া শুরু করে,

“ সুহাসিনী,আজকের রাতটায় তোমায় শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখতে পারি? একটা বার দর্শন দিবে? অপেক্ষায় থাকব ছাদে। ”

সুহা পুরো রাতটা এই চিরকুট হাতে নিয়েই কাঁটিয়ে দিল তীব্র অস্থিরতায়। সে শাড়ি পরবে? ছাদে যাবে? নাকি পরবে না? এই দ্বিধা নিয়েই সারাটা রাত কাঁটল তার। পরমুহুর্তেই কি বুঝে মায়া হলো যখন প্রায় ভোর হয়ে আসবে তখন। হুট করেই হৃদয় গলল তার। একটা লাল শাড়ি হাতে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল সে। তারপর যত্ন নিয়েই শাড়িটক পরল।এলোমেলো খোলা চুলে গুঁজল বেলিফুলের মালাটা। চোখে কাজল। পুরো এক নির্ঘুম রাত্রির অস্থিরতা নিয়েই সে রুম ছেড়ে বের হলো। হৃদয়ে তখন ধুকপুক করা অনুভূতি। এই প্রথম সে ঐ মানুষটার কথা রাখতে নিজেকে শাড়িতে সাঁজিয়ে তার সামনে যাচ্ছে! এই প্রথম!

.

তখনও সকালের আলো ফুটে নি। আধো অন্ধকার। দূর রাস্তায় দুয়েকটা গাড়ি ছুটছে। আশপাশে কোথাও শোনা যাচ্ছে কুকুরের গলার শব্দ। সুহা পা বাড়িয়ে ছাদে গেল। আশপাশে ছাদে তাকাল। নাকে এল নিকোটিনের তীব্র গন্ধ। কানে এল স্বচ্ছর গলা,

“ সুহাসিনী?অবশেষে একটা পুরো রাত অপেক্ষা করিয়ে দেখা দিলে বলো? ”

সুহার বুকের অস্থিরতা আরেকটু বাড়ল বোধহয়। প্রতিদিনের সাহসী সুহাকে আজ একটু নড়বড়ে দেখাল। কেমন যেন অপ্রস্তুত। তাকিয়ে দেখল স্বচ্ছকে। ঠোঁট এলিয়ে হেসে পরমুহুর্তে নিজেকে শক্ত দেখানোর উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

“ এখনও ছাদে থেকে গেছেন আপনি? কি করছেন এখানে? ”

স্বচ্ছ নিরব দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। মৃদু আলোয় সুহাকে লাল শাড়িতে পরখ করে মনোযোগী হয়ে। মেয়েটাকে শাড়িতে বোধহয় আরেকটু বেশিই সুন্দর বোধ হলো স্বচ্ছর। তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে হলো। বুকের ভেতর অনুভূতির শিহরণ জাগল। স্বচ্ছ পা বাড়ায়। সামনে এসে সুহার কানের কাছে চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে ঘোরলাগা স্বরে বলে,

“ ভাগ্যিস ছিলাম। নাহলে তো তোমায় শাড়িতে দেখা হতো না। ”

সুহা কেমন যেন কেঁপে উঠে কন্ঠটা শুনে। ঘাবড়ানো স্বরর বলে উঠে,

“ আমি ভেবেছিলাম আপনি চলে যাবেন তাই এসেছি। ”

স্বচ্ছ হাসে তার সাহসী বউয়ের এমন কথা শুনে৷ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,

“ শিওর? আমার তো মনে হচ্ছে আমি আছি বলেই তুমি এসেছো সুহাসিনী। ”

সুহা চুপ থাকে কিয়ৎক্ষন। নার্ভাস ফিল হয় তার। স্বচ্ছ এমনভাবে তাকিয়ে আছে কেন? কি দেখছে এভাবে তাকিয়ে? সুহার তো অস্বস্তি লাগছে এই দৃষ্টিতে। হাত পা ঘামছে। সুহা কিছুটা পিছু সরে কথা ঘুরাতে বলে,

“ রাত জেগে কি কেবল সিগারেটই টেনেছেন? গন্ধে তো থাকা যাচ্ছে না। ”

স্বচ্ছ হেসে উঠে।হেসে বলে,

“ কি করব বলো, যাদের বউ থাকে না তাদেরকে সিগারেট দিয়েই শান্তি খুঁজতে হয়। আর বাসায় হলে তো তোমার ভিলেইন দাদাজান আবার নেশাখোর বলে লা’থি মেরে বের করর দিত। তাই ছাদই বেস্ট। ”

কথাটা বলেও ফের হাসে স্বচ্ছ।তাকিয়ে দেখে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। স্বচ্ছ বুঝে উঠে এটা কিসের বৃষ্টি। সারা রাত সে জেগে থাকল, ভ্যাপসা গরমে সিগারেট টানল অথচ বৃষ্টি নামল না। আর যখনই তার সুন্দরী প্রেয়সী শাড়ি সামনে উপস্থিত হলো তখনই বৃষ্টি নামল। এটা কি প্রেমের বৃষ্টি? নাকি আকাশ ও তার বউয়ের এরূপ রূপ দেখে মুগ্ধ? তাই বৃষ্টির মাধ্যমে বুঝাচ্ছে? স্বচ্ছ ফের বলে,

“ এই অসময়ে বৃষ্টিটা কিসের বলো তো? প্রেমবৃষ্টি? নাকি বউবৃষ্টি? ”

সুহা কেমন করে তাকাল এবারে। যেন রেগে খেয়ে নিবে স্বচ্ছকে। স্বচ্ছ তা দেখে হাসে। কিঞ্চিৎ ঝুঁকে গিয়ে সুহার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল সে। বিড়বিড় স্বরে বলে,

“এভাবে রেগে চাইবে না। কলিজা কেমন করর আমার। মন বলে এই রাগী মুখটা দেখার জন্য হলেও মেয়েটাকে ধরেবেঁধে জীবনে রেখে দেওয়া উচিত। আমি আবার খুব ভালো নই। জেদী মানুষ ছোট থেকে। জেদ ছাপলে জোরজবরদস্তি করেই তোমাকে নিয়ে চলে যাব, নিজের করে রেখে দিব। আর এখন তো আরো নিশ্চিত যে তোমার মনে আমার জন্য এইটুকু হলেও অনুভূতি আছে সুহাসিনী। নয়তো শাড়ি পরে এখানে আসতে না তো। আমি শুধু কতটুকু আমার যাওয়া উচিত তা বুঝে নিতে এটা পরীক্ষা করেছি সুহাসিনী। নাও আই গট মাই আন্সার। ”

কথাগুলো এক টানে বলেই স্বচ্ছ পা বাড়ায়৷ ঠোঁট গোল করে শিষ বাড়ায়।

.

দুপুর বারোটা।

দাদাজান কার সাথে যেন ঘন্টাখানেক আলাপ জুড়েছে৷ আলোচনার বিষয়বস্তু হলো সুহা। সুহাকে কোন পরিবারের পুত্রবধূ করা নিয়েই কথা বলা হচ্ছে। তাও স্বচ্ছকে শুনিয়ে শুনিয়েই। স্বচ্ছ ধৈর্য্যসহিত এতক্ষন কথাগুলো শুনলেও এক পর্যায়ে উঠে দাঁড়ায়। হেঁটে গিয়ে পকেটে হাত গুঁটিয়ে একদম সোজা হয়ে দাঁড়াল সুহার সামনে। সুন্দর করেই বলল,

“৫ মিনিট সময় আছে। তোমাকে নিচে যেতে বলেছে সুহাসিনী। এটা কিন্তু তোমার দাদাজানই বলেছে।সুতারাং পাঁচ মিনিটেই তৈরি হয়ে নাও। নয়তো দাদাজান রাগ করে বসবে আবার। ”

সুহার বিশ্বাস হলো না যেন। কেমন করে তাকাল। দু পা বাড়িয়ে দাদাজানের কাছে যেতে নিতেই স্বচ্ছ হাত আটকে দাঁড়ায়। ইশারায় রাহাকে কিছু বুঝাতে রাহাও বলে উঠল,

“ আরেহ হ্যাঁ, দাদা তো মাত্রই আমাকে যেতে বলল। চল,চল। নিচে চল। দুজনকেই যেতে বলেছে। ”

স্বচ্ছ হাসে। সুহার সন্দেহ দূর করতে বলে উঠে,

“ বিশ্বাস হচ্ছে না? বললাম তো দাদাজান বলেছে। দাদাজান গাড়ি আনতে গেছে। তোমাকে নিয়ে বেরুবেন তো। দেরি হলে কিন্তু রেগে যাবে। ”

সুহা জানে দাদাজান দেরি করা পছন্দ করে না। কিন্তু তবুও খটকা লাগে তার।উপায় না পেয়ে সে নিচে গিয়েই দাঁড়ায় স্বচ্ছ তখন হাসে। দাদাজানের কাছে গিয়ে বলে,

“ হেই ভিলেইন দাদাজান! কথা ছিল পনেরোদিন। আমি কিন্তু তিনদিনের মধ্যেই আপনার নাতনির মতামত পেয়ে গিয়েছি। কিভাবে পেয়েছি তা বলব না। এখন কথা হচ্ছে এই যে আমার চোখের সামনেই আমার বউকে পাচার করার ষড়যন্ত্র চলছে এসব আমি সহ্য করব? মোটেও না। বউকে এখন নিয়ে যাব নিজের সাথে। তারপর একসাথে সংসার করব। হ্যাপি থাকুন হুহ?”

দাদাজান রেগে উঠলেন,

“ এই ছোঁখরা! আমার সাথে শয়তানি দেখাচ্ছো?মেরে না হাড় ভেঙ্গে দিব। ”

স্বচ্ছ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,

“ এত সহজ? যদি একটাও মার দিন তাহলে আপনার নাতনিকে ডিভোর্স দেওয়া তো দূর সারাজীবন আঠার ন্যায লাগিয়ে রাখব। আপনার আশা তখন কিছুতেই পূরণ হবে না বুঝলেন। ”

কথাগুলো বলেই রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিল স্বচ্ছ। ভেতর থেকে শোনা যাচ্ছে দাদাজানে রাগত স্বর। স্বচ্ছ হাসে। আপাতত তার কাজ হলো নিচে গিয়ে তার বউটাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া! আপাতত এটাই তার একমাত্র কাজ!

#চলবে..

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_১৯
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

সুহা দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে। সাথে অবশ্যও রাহাও আছে। ভোর রাতে বৃষ্টি হওয়ার দরুণ পরিবেশ শীতল, ঠান্ডা। অন্যদিনের মতো রোদ উঠে নি আজ। আবহাওয়া উত্তপ্ত নয়। সুহার কাছে পরিবেশটা ভালোই লাগল। রাহার দিকে চেয়ে বলল,

“ দাদাজান এখানে কেন দাঁড়াতে বলল? কি কারণ? কিছু জানিস? ”

রাহা মোবাইলে সময় দেখে। কিছুটা সময় চুপ থেকে বলে,

“ তুই বল আপু? দাদাজান কি সঠিক কাজ করছেন? আর যায় হোক আমি আর আম্মু কিন্তু জানি যে তোর প্রথম ভালোবাসা স্বচ্ছ ভাইয়াই! বোধহয় তুই এখনও উনাকে ভালোবাসিস নয়তো বিয়েটা ভাঙ্গাতে তোর অনীহা থাকত না। তাই না আপু?”

সুহা চোখ সরু করে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এখন এসব বলার মানেটা কি?রাহা কি বুঝাচ্ছে? গম্ভীর স্বরে জানায়,

“ ওসব কিছু না। এটা শুধুই মায়া। মায়া কাজ করছে আমার। কারণ সে আমার প্রথম অনুভূতি। মস্তিষ্ক বলছে দাদার কথা মেনে নেওয়া উচিত, হৃদয় বলছে তাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসা পসিবল না। ”

রাহা মনোযোগ দিয়ে বোনের কথা শুনে। বুঝানোর ন্যায় বলে উঠে,

“ তার মানে এখনও ভালোবাসিস তাকে? তাই তো এতকাল স্বচ্ছ ভাইয়ার অপেক্ষায় ছিলি। এতকাল চাইছিলি যে স্বচ্ছ ভাইয়াও তোকে ভালোবাসুক। তোদের বিয়েটা টিকে থাকুক। আচ্ছা, যদি উনি সত্যি সত্যিই তোকে ভালোবাসে এমনটা শুনিস তাহলে কি করবি আপু? ”

সুহা ক্লান্ত চোখে তাকায়। উত্তরে বলে উঠে,

“ কিছুই করব না। কারণ এখন আমার হাতে কিছু নেই রাহা। স্বচ্ছ যদি দেশে ফেরার পরপরও আমার প্রতি একটু সিরিয়াসন্যাস দেখাত আমি দাদাজানের কাছে অনুরোধ করতাম। কিন্তু স্বচ্ছ বরাবরই বাউন্ডুলে। ওর মধ্যে এসব ভালোবাসা, প্রেম, সংসারের ছিঁটেফোঁটাও নেই৷ সে ছন্নছাড়া। ”

“ তোর মধ্যে তো আছে! নয়তো শাড়ি পরে ছাদে যেতি তুই? নাকি শাড়িগুলো ভাইয়া গিফ্ট করেছে বলেই শুধু কথা রাখার জন্য তুই শাড়ি পরে ছাদে গিয়েছিস? ”

সুহা আনমনে ভাবে। কেন গিয়েছিল সে ছাদে? কি দরকারে? কোন বাধ্যবাধকতা তো ছিল না। সুহা চাইলে সারা রাত স্বচ্ছকে বিনা কারণেই ছাদে অপেক্ষা করাতে পারত। চাইলে যে মুহুর্তে স্বচ্ছ তার কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল সেই মুহুর্তেই সজোরে একটা থাপ্পড় বসাতে পারত। কি হলো হঠাৎ? গত দুইদিনের জ্বরে পড়ে থাকা স্বচ্ছর সেবা করতে করতে দুর্বল হয়ে গেল? দুর্বল তো সে বরাবরই। কিন্তু প্রকাশ করে ফেলল? স্বচ্ছর সারা রাত অপেক্ষা করবে এটা ভেবে তার মায়াই বা হলো কেন? দুদিন পর সম্পর্কটা থাকবে না বলে? নাকি কয়েকটা শাড়ি গিফ্ট করেছে বলে গলে গিয়েছে? লোভী মেয়েদের মতো গিফ্ট পেয়েই নরম হয়ে গিয়েছে?সুহা নিজেই নিজের মনকে এতগুলো প্রশ্ন করে থমকে যায়। অন্যদিকে ফিরে বলে,

“ জানি না কেন গিয়েছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, যাওয়া উচিত হয়নি। আমি কি করে এইরকম কাজটা করতে পারলাম ভেবেই পাচ্ছি না। রাগ হচ্ছে। ”

সুহা কথাটা বলে শেষ করতেই পেছন থেকে শোনা গেল চেনা পুরুষালি কন্ঠ,

“ কারণ তুমি আমায় ভালোবাসো সুহাসিনী। ”

সুহা নাক ফুলায় রেগে। সবসময় স্বচ্ছর এই অতি কনফিডেন্স বা অহংকারী ভাবটা সহ্য হয় না তার। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,

“ ভুলেও না। আমি আপনাকে ভালোবাসি না অস্বচ্ছ সাহেব। ঘৃণা করি। ”

স্বচ্ছ পকেটে হাত গুঁজে হাসে। ঠোঁট এলিয়ে বলে,

“ আমি যে বিপরীত দেখতে পাচ্ছি? ”

সুহার গা জ্বলে যেন। নিজের এহেন পরাজয় সহ্য করতে না পেরে শুধাল,

“ অসহ্য লাগছে আপনার হাসিটা। ”

ততক্ষনে গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে স্বচ্ছদের সামনে। গাড়িটা ভাড়া করা৷ স্বচ্ছ একটু আগেই কল করে বলেছিল। চলে এসেছে দেখে স্বস্তি মিলল। কখন না জানি ডেভিল দাদাভাই এসে সমস্যা বাঁধিয়ে দেয়। বলা তো যায় না। স্বচ্ছ ছোটশ্বাস ফেলে বলে,

“ গাড়ি চলে এসেছে। উঠে বসো। ”

সুহা এদিক ওদিক তাকায়। দাদাকে না দেখতে পেয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,

“ দাদা কোথায়? ”

স্বচ্ছ মুহুর্তেই একটা মিথ্যা বলল। জানাল,

“ তোমার দাদাজান বলেছে আমার সাথে যেতে। ”

সুহা মেনে নেয় না। বরং বলে,

“ দাদাজান এটা কখনোই বলবে না। ”

“ রাহা তুমি বলো? বলেছে কিনা? ”

রাহাও গোলগোল চোখে তাকায়। কি বলবে? দাদা বলেছে এটা বলবে?বুঝে উঠে না। একবার স্বচ্ছ তো একবার সুহার দিকে তাকাতেই স্বচ্ছ ফোন বের করল। বলল,

“ তোমার দাদাজানকেই কল দিচ্ছি ওকে? উনিই বলুক।”

তারপর কল দিল। সুহা আর রাহার থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে ফোন কানে চেপে হাসল। দাদাজান কল তুলতেই হেসে বলল,

“ডিয়ার দাদাজান? রুম থেকে বের হয়েছেন?”

দাদাজান রাগ ফুঁসে যেন। দাঁতে দাঁত চেপে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠে,

“ হতচ্ছাড়া!”

স্বচ্ছর তখন পেট ফেটে হাসি পায়। বলে,

“ শুনুন, আমার হাতে পনেরো দিন সময় দিয়েছেন? আমি মেনে নিয়েছি ভদ্র ছেলের মতো। হিসেব অনুযায়ী আপনার নাতনি এখনও আমার বউ। আমাদের বিচ্ছেদ হয়নি। আপনার কথানুযায়ী আমি যেভাবেই হোক পনেরো দিনের মধ্যে আপনার নাতনির মন জয় করতে পারলেই হবে। তাই না? সে অনুসারে বউ নিয়ে যেতে চাচ্ছি। যে কয়টা দিন সময় আছে সে কয়টা দিনই সে আমার সাথে থাকবে। এরপর আপনার কাছে পাঠিয়ে দিব। তারপর তার মতামত শুনে আপনি বিচার করবেন যা ইচ্ছে।ওকে? ”

দাদাজান রেগে শুধায়,

“ ফাজলা’মো করছো?”

“ ফাজলামো তো আপনি করছেন। এখনও সে আমার বউ। আর আপনি একজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে থাকা অবস্থাতেই অন্য কোথাও অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন। তা নিয়ে আবার আমারই সামনে আলোচনা করছেন। সাহস কত? একজনের বউ অন্যজনের সাথে বিয়ে দেওয়ার মতো নোংরামো দুনিয়াতে আর হয়?বলুন? আমি চাইলে বউহরণের কেইস দিয়ে আপনার নামে মামলা ঠুকতে পারি দাদাজান। ”

দাদাজান পাল্টা রাগ নিয়ে মুহুর্তেই বললেন,

“ এক থা’প্পড় দিব বেয়াদব ছেলে। ”

স্বচ্ছ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। বলে,

“ যেটাই দিন, এখন বউ নিয়ে যাওয়র অনুমতি দিন। যদি না দেন তাহলে কিন্তু কিডন্যাপ করে নিয়ে যাব। নিরুদ্দেশ হয়ে যাব বছর খানেকের জন্য। যা যা অধিকার খাটানো যায় সব খাটাব।তারপর তিন বাচ্চার বাপ হয়ে আপনার সামনে হাজির হবো। এবার বলুন কোনটা পছন্দ আপনার? ভালো পথ? নাকি বাঁকানো পথ?”

এরপর কয়েক মুহুর্ত দাদাজান চুপই থাকলেন। তারপর কি বুঝে শুনে অনেকটা সময় পর মুখ খুললেন,

“ আমার নাতনির উপর আমার বিশ্বাস আছে। কয়েকটা দিন তোমার সাথে থাকলেই তোমার উপর সে গলে যাবে না। সেহেতু অনুমতিটা দিচ্ছি নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু শর্ত আছে। ”

“ কি শর্ত?”

গম্ভীর স্বরে ভেসে আসে,

“ ওর সাথে জোরজবরদস্তি করতে পারবে না। কোনরকম অধিকার খাটাতে পারবে না। ও তোমার বউ এটা সঠিক হলেও বউগত অধিকার প্রয়োগ করলে কিন্তু তোমার পুরুষত্বকেই আমি ভ্যানিশ করে দিব। মনে থাকবে? ”

স্বচ্ছ হাসে। হেসে শুধায়,

“ আপনি একটু বেশিই ফার্স্ট দাদাজান। বউ নিয়ে যাচ্ছি বলেই যে বাসর সেরে ফেলব এটা তো বলিনি। স্বচ্ছ অতোটাও কন্ট্রোলল্যাস না। ”

“ জিভ টেনে ছিড়ে ফেলব অসভ্য ছেলে। ”

“যা ইচ্ছে ছিড়ে ফেলতে পারুন, আপাতত আপনার নাতনিকে বলুন আমার সাথে যেতে। শত হোক সে তো আপনারই নাতনি, আস্ত এক ঘাড়ত্যাড়া। ”

কথাটুকু বলেই দু পা বাড়িয়ে সুহাকে ফোন দিল। দাদাজান ফোনে সুহাকে কি বলল তা শোনা গেল না ঠিক তবে তারপর পরই সুহাকে গাড়িতে উঠে বসতে দেখা গেল। একদম চুপচাপ হয়ে। পাশাপাশি স্বচ্ছও বসল। গাড়ি চলল আপনগতিতে। সুহা অনেকটা সময় চুপ থাকার পরই হঠাৎ স্বচ্ছর দিকে তাকাল। বলল,

“ আবারও খেলছেন? আমি কি খেলার বস্তু স্বচ্ছ? আপনি আর দাদাজান আমায় নিয়ে খেলছেন? প্রতিযোগিতায় নেমেছেন? ”

স্বচ্ছ তাকায়। খেলছে? সে তো সুহাসিনীকে নিয়ে খেলছে না। খেলাটায় নেমেছেই সে সুহাসিনীকে পাওয়ার জন্য। স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস টেনে শান্ত স্বরে জানায়,

“ উদ্দেশ্য যখন তুমি তখন সবকিছুতেই রাজি আমি। খেলায় জিততেও। ”

সুহা হতাশ। জানায়,

“ তাই বলে আমায় খেলনা বানাচ্ছেন? নিচে নামাচ্ছেন? ”

“ তুমি খেলনা নও সুহাসিনী। তুমি তো বিচারক । দিনশেষে তোমার সিদ্ধান্তেই বিজয়ী ঘোষিত হবে। বিশ্বাস করো, আমি এক বিন্দুও জোর করব না তোমায়। এক বিন্দুও ছুঁবো না। এইটুকু বিশ্বাস অন্তত রাখো আমার প্রতি। ”

সুহা মৃদু হাসে। জানালার ধারে তাকিয়ে জানতে চায়,

“ যদি বিজয়ী না হন? কি করবেন? ”

স্বচ্ছ হাসে। হেসে বলে,

“ সর্বপ্রথম প্লেনের টিকেট কাঁটব। দেশ ছেড়ে চলে যাব আবারও। যখন দেশে মাঝেমাঝে ফিরব তখন তোমাকে অন্যের স্ত্রী রূপে দেখব দুয়েক পলক। আড়ালে- আবড়ালে। ”

কথাটুকু বলেই দীর্ঘশ্বাস টানে সে। আসলেই সুহাসিনীকে অনঢ কারোর স্ত্রী রূপে দেখতে পারবে সে? রাগে টগবগ করবে না শরীরের সমস্ত রক্তকণিকা?স্বচ্ছ ফের শান্ত স্বরে বলে,

“ ভালোবেসে যদি আমায় চাও আমিও তোমায় ভালোবেসে আজীবন আগলে রাখব সুহাসিনী। এতোটা ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখব যে ফের কখনো অভিযোগ করতে পারবে না, ঘৃণা করতে পারবে না। ”

সুহা হাসে। অবহেলা নিয়ে বলে,

“ সেই আশা অপূর্ণই থাকবে।বর্তমানে আমি আপনাকে শুধু ঘৃণাই করি স্বচ্ছ।আর ঘৃণা করার কারণটা হলো আপনার ছন্নছাড়া, বাউন্ডুলে স্বভাবটা। এসব খামখেয়ালিপনা করে জীবনে কখনো দুঃখ না করলেই হয়। ”

” ঘৃণাও ভালোবাসার রূপ। ”

“ ভালোবাসার রূপ, কিন্তু ভালোবাসা নয় স্বচ্ছ। যাকে ঘৃণা করা যায় তার প্রতি শুধু তিক্ততাই কাজ করর। যেমনটা আপনার প্রতি কাজ করে। ”

স্বচ্ছ এই পর্যায়ে গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দেয়। বুকে হাত গুঁজে ক্লান্ত চোখে তাকায় সুহার দিকে। চোখেমুখে একগুচ্ছ বিরক্তি আর ঘৃণা। স্বচ্ছর বুক কেমন করে। এই এত এত ঘৃণার মাঝে সে ভালোবাসা কুড়িয়ে নিতে পারবে? এই কয়টা দিনে সুহাসিনীর কঠিন হৃদয় যদি না গলে? হারিয়ে ফেলবে? সুহাসিনী অন্য কারো হয়ে যাবে? স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। করুণ চাহনিতে চেয়ে থেকে মনে মনে ভাবে,

“সুহাসিনী? আমায় কি সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না আর?সত্যিই ভালোবাসা যায় না আর? শুধুই ঘৃণা করা যায়? ঘৃণা করে হলেও শুধু আমারই থেকে যাও না সুহাসিনী। অন্য কারোর না হও। ”

.

ছুটি গত দুয়েকদিন হলো সাদকে এড়িয়ে গিয়েছে কেবলই আবিরের জন্য। সাদ কেন? দুনিয়ার কোন পুরুষের দিকেই তাকায়নি অব্দি সে। বিনিময়ে চেয়েছে আবিরের কন্ঠ শোনার আবদার। একটু খানি কথোপকোতন। অথচ আবির তো আবিরই৷ বরাবরের মতোই এড়িয়ে যায় ছুটি মেয়েটাকে। ছুটি যখন কল দিতে দিতে ক্লান্ত ঠিক তখনই এক পড়ন্ত বিকেলে আবিরের কল এল। জানাল,

“ ছুটি? দুই সপ্তাহ পর আবারও দেশ ছাড়ব। ছুটি নেই বেশিদিন। আমি চাইছিলাম বিয়ে করতে। ”

আচমকা ঝটকায় ছুটি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আবির ভাই বিয়ে করতে চাইছে? কাকে বিয়ে করবে? তাকেই? ছুটি মিনমিনে স্বরে বলে উঠল,

“ বিয়ে করবেন? ”

আবির লম্বা শ্বাস টানে। বলে,

“ তুই কি দুই সপ্তাহের জন্য আমার বউ হবি?”

ছুটি বিস্ময়ে চোখ গোল গোল করে তাকায়। কিসব কথাবার্তা। বিশ্বাস হয় না তার। অস্থির লাগে। শুধায়,

“ বউ? আমি?”

আবির চাপা রাগ নিয়ে বলে,

” অন্য কেউ হলে খুশি হবি? ”

ছুটি ফের বিস্ময় এবং অবাকের সাথে শুধায়,

“ তুমি সত্যিই বলছো আবির ভাই?আমার কাছে সব কেমন নাটকীয় মনে হচ্ছে। ”

“ কেন? ”

ছুটি কিছুক্ষন নিরব থাকে। অতঃপর বলে,

” এতকাল তো ইগ্নোর করলে তুমি।আমাকে এমন ভাবে রেখেছিলে জীবনে যেন তুমি আমাঢ চেনোই না। তারপর হুট করেই ভালোবাসার কথা বলা, তারপর বিয়ের কথা। কেমন যেন অবিশ্বাস্য নয়? ”

আবির ফোঁস করে শ্বাস টানে। রাগ রাগ কন্ঠে বলে,

“ বিশ্বাস করতে পারলে বলিস। রাখলাম। ”

কথাটুকু বলেই কল রাখল আবির। ছুটি তখনও ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে। আবির ভাই কি বলল তাকে? বউ হতে বলল? ছুটি বিড়বিড় করে ফোনের দিকে চেয়ে শুধায়,

“ রেখে দিল? কি বলল আবিরভাই? ”

#চলবে…..

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_২০
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

গাড়ির যে সিটটাতে স্বচ্ছ বসা ছিল সে সিটটা ফাঁকা আছে মিনিট বিশ হলো। গাড়িটা সাইড করে এক জায়গায় রাখা হয়েছে। আর তারপরই স্বচ্ছ গাড়ি থেকে নেমে যে কোথায় গিয়েছে কে জানে! সুহা বিরক্ত হয়। এপাশ ওপাশ চেয়ে গাড়ি থেকে যখন নেমে দাঁড়াবে ঠিক তখনই দেখা মিলল স্বচ্ছর। খাবারের তিন তিনটা প্যাকেট হাতে। একটা প্যাকেট সামনের ড্রাইভারের হাতে তুলে দিয়ে খেতে বলে বাকি দুটো প্যাকেট নিয়ে স্বচ্ছ গাড়িতে উঠল। পানির বোতলের ডাকনা খুলতে খুলতে তাকাল সুহার দিকে। পরপরই মুখে পানি ঢালে। গিলে নিয়ে কৌতুক স্বরে বলে উঠে,

“ ইশশ! আমার অপেক্ষা করতে করতে তো তোমার মুখটা চুপসে গিয়েছে একেবারে সুহাসিনী। এত বেশি চোখে হারাও আমায়? ”

সুহা কেমন করে তাকায়। বিরক্ত স্বরে বলে উঠে,

” ভূতে পেয়েছে আমায় যে আপনাকে চোখে হারাব আমি? ”

স্বচ্ছ ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,

” হারাও না? ”

সুহা তখন ফোঁসফোঁস করতে করতে উত্তর করে,

“ দরকার পড়লে হরর মুভির ভূতগুলোকে চোখে হারাব স্বচ্ছ। তবুও আপনাকে নয়। ”

স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে হাসে।মজা করে বলে,

” তাহলে তোমার জন্য ভূত হতেও রাজি আছি। ভূত হলে চোখে হারাবে তাহলে? ”

“ আপনি একটা পাগল স্বচ্ছ!”

স্বচ্ছ খাবারের প্যাকেট খুলতে লাগে। সুহার দিকে এক পলক চেয়ে শুধায়,

“ তুমি একটা আস্ত নেশা সুহাসিনী।”

কথাটুকু বলেই খাবারের লোকমা তুলে ধরল সুহার মুখরর সামনে। আকস্মিক এই কান্ডে সুহা ভ্যাবাচ্যাঁকা খায়। স্বচ্ছ কি তাকে খাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে খাবার মুখের সামনে ধরেছে? নাকি এমনিই? দ্বিধান্বিত চাহনিতে তাকিয়ে থেকে বলে,

“ আমার খাবার? ”

স্বচ্ছ হাসে। আরেকটু এগিয়ে ধরে বলে,

“ খাইয়ে দিব। ”

সুহা তৎক্ষনাৎ বিস্ময় নিয়ে তাকায়। স্বচ্ছ কিনা তাকে খাইয়ে দিবে? তাও এই মাঝরাস্তায় গাড়িতে।এসব কি নতুন রকমের ঢং হু? সুহা সঙ্গে সঙ্গেই সুচালো কন্ঠে বলে উঠল,

“ আমি কি ছোটবাচ্চা? ”

স্বচ্ছ মাথা দুলায়। সঙ্গে সঙ্গেই বাধ্যগত গম্বীর স্বরে উত্তর করে,

” একদমই নয়।বড় বাচ্চা। ’

“ তাহলে? কেন মনে হচ্ছে যে আমি নিজ হাতে খেতে পারব না? ”

স্বচ্ছ করুণ ভঙ্গিতে তাকায়। একটাই বউ তার। কোন জম্মে কোন পাপ করেছিল যে বউটাকে পাত্তা না দিয়ে সে চারবছর আগে বহুত বড় একটা ভুল করে বসেছিল। এমন যদি জানত তাহলে তো সে এই মেয়েটাকে সর্বপ্রথম মুহুর্তটা থেকে মাথায় তুলে রাখত৷ কে জানত যে চারবছর পর এসে এই একটা মেয়েরই প্রেমে স্বচ্ছ এমন বেফাঁস ভাবে ফেসে যাবে?কে জানত?স্বচ্ছ ছোট শ্বাস ফেলে জানায়,

“ খেতে পারবে না তা তো বলিনি। ”

“ তবে?”

স্বচ্ছ না পেরে বউকে খাইয়ে দিতে অযুহাত খুঁজল। কারণ এই মেয়ে জম্মগত ঘাড়ত্যাড়া। দেখা গেল হাতের গ্রাসটুকু তো গিললই না বরং স্বচ্ছর মুখে ছুড়ে মারবে। তাই তো অযুহাত স্বরূপ বলে উঠল,

“তুমি আমায় জ্বরের সময় খাইয়ে দিয়েছিলে সুহাসিনী। আমিও এখন খাইয়ে দিলে শোধবোধ হয়ে যাবে।শত হোক আমি কারোর ঋণ রাখতে চাইনা সুহাসিনী। ”

“ তাই নাকি?”

স্বচ্ছ মাথক নাড়ে। খাবার নেওয়া হাতটা এগিয়ে ধরে বলে উঠে,

“ হা করো। ”

সুহা হা করে। মুখে নেয় স্বচ্ছর হাতের খাবারটুকু। আর তখনই নিজের ঠোঁটজোড়ার স্পর্শ লাগে স্বচ্ছর হাতের আঙ্গুলে। স্বচ্ছ কেমন করে যেন চায়। তাকিয়ে থাকে। সুহার খাবার খাওয়াটাও মুহুর্তের জন্য অপরূপ মনে হলো তার। সঙ্গে সঙ্গে চোখ গেল সুহার ঠোঁটেও। এককেণায় একটা ভাত লেগে আছে। স্বচ্ছ কিছুক্ষন চেয়ে থেকে আঙ্গুল দিয়ে সে ভাতটা সরিয়ে নিয়ে বলল,

“ তোমার ঠোঁটজোড়াও সুন্দর সুহাসিনী। এই প্রথম তোমার ঠোঁটের স্পর্শ পেলাম তাও হাতের আঙ্গুলে। বড়ই দুঃখ। ”

সুহা খাবার খেতে খেতেও রেগে তাকায়। ভরা মুখেই বলে,

“ আপনার মনটা আসলেই অস্বচ্ছ। স্বচ্ছতার কানাকড়িও দেখতে পাচ্ছি না। ”

স্বচ্ছ মুখ ফুলিয়ে খাবারের অপর গ্রাসটা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে,

“ দোষ তো তোমার। ঠোঁট লাগিয়েছো কেন আমার আঙ্গুলে?”

“আপনাকে খাইয়ে দিতে বলেছি আমি? লাগবে না খাইয়ে দেওয়া। ”

“ দিব। আমার যখন মন চেয়ে তখন বউকে অবশ্যই খাইয়ে দিব। ”

সুহা খাবার চিবোতে চিবোতে অন্য পাশ ফিরে বসল। বিরক্ত কন্ঠে শুধাল,

” ছোট বাচ্চাদের মতো বউ বউ করবেন না স্বচ্ছ। বিচ্ছিরি শোনায়। ”

স্বচ্ছ বউ বউ করে না এবারে। চুপ থাকে না। অতঃপর অনেকটা সময় পর সুহার ঠোঁটের কোণে খাবারের ঝোলই লেগে গেল। স্বচ্ছ তা দেখে হেসে বণণ,

“ তোমার ঠোঁটের কোণায় খাবার লেগে আছে। ”

“ তো? ”

স্বচ্ছ এবারে ফিসফিস স্বরেই বলল,

“ যদি ড্রাইভার মামা না থাকত তাহলে তোমার ঠোঁটের খাবার গুলো আমার পেটে চালান করার ব্যবস্থা করতাম। ”

সুহা ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায়। তড়াৎ করে বলে,

” সবকিছুতেই বেশি বকেন। ”

স্বচ্ছ ততক্ষনে হাত বাড়িয়ে সুহার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা ঝোলটুকু আঙ্গুলে নিল। পরমুহুর্তে তা জিভে ছুঁইয়ে মজা করে বলল,

“ টেস্টি। ”

সুহা গা জ্বালানো ভঙ্গিতে বলে,

“ বক্সের খাবার গুলো টেস্টি না? ”

স্বচ্ছ ঠোঁট বাকায়। ফের সুহাকে বিরক্ত আর জ্বালাতে বলে উঠে,

“ বাট তোমার ঠোঁটেরটা বেশি টেস্টি। ”

সুহা হুশিয়ারি দিয়ে বলল,

“ফ্লার্ট করবেন না একদম। মেজাজ খারাপ এমনিতেই!”

স্বচ্ছ হাসে। বলে,

“ আচ্ছা, ফ্লার্ট করব না। প্রেম প্রেম কথা বলব। ”

এই পর্যায়ে সুহা এমন ভাবে তাকাল যেন গিলে নিবে সে স্বচ্ছকে। স্বচ্ছ বুকে হাত রাখে। কাতর গলায় বলে,

” ওভাবে তাকাতে নেই। বুক কেমন করে সুহাসিনী। ”

.

স্বচ্ছদের গাড়িটা যখন ঢাকায় পৌঁছাল অর্থ্যাৎ বাসা থেকে ঘন্টা খানের দূরত্ব ছিল ঠিক তখনই আচমকা ঘটে গেল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। হুট করেই বা পাশের রাস্তাটা থেকে ছুটে এল অনিয়ন্ত্রিত এক ট্রাক। স্বচ্ছ যখন বা পাশ ফিরে চাইল সর্বপ্রথম এই দৃশ্য দেখে অবাক হয় সে৷ একনজর তাকায় বা পাশে বসে থাকা সুহার দিকে। স্বচ্ছর বুক কাঁপে। এক মুহুর্তেই সুহাকে এনে বসায় ডান পাশে। পরমুহুর্তেই পান পাশের দরজাটা খুলে সুহাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে রাস্তার অমসৃণ জমিটায়। আকস্মিক ঘটনাটায় সুহা স্তব্ধ হয়ে তাকায়।সেকেন্ডের মধ্যে বিরাট রকমের আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকাতেই চোখে পড়ল ট্রাকের সামনে থাকা কারটাকে। বিকৃত আকৃতির দেখাচ্ছে কারটাকে এখন। সুহার কলিজা থমকে যায়। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে গাড়ির এককোণায় স্বচ্ছকে দেখে। গাড়ির দরজাটা খোলা থাকাতে দ্রুত গিয়ে বসে সে। স্বচ্ছকে ভালো করে দেখার আগেই স্বচ্ছ হাত বাড়িয়ে সুহার মুখ ছুঁয়ে। নরম হাতে হাত বুলিয়ে বলে,

“ ঠিক আছো সুহাসিনী? ব্যাথা পেয়েছো? লেগেছে কোথাও? এই সুহাসিনী কথা বলো.. ”

সুহা তাকায়।আকস্মিক রাস্তায় পড়াটাতে হাত পায়ের কিছুটা চিলে গেছে তার৷ ব্যাথা পেয়েছে৷ কিন্তু পরমুহুর্তেই স্বচ্ছর দিকে তাকিয়ে সে থমকে যায়। কপালে কাঁচ ফুটে আছে ছেলেটার। মাথা থেকে গলগল করে রক্ত ঝরছে।মাথার চুল গুলো অব্দি র’ক্তে ভিজে লেপ্টে আছে। সুহার র’ক্তে ফোবিয়া আছে। এত এত র’ক্ত দেখেই তার গা গুলিয়ে উঠে। শরীর নুইয়ে আসে৷ তবুও মস্তিষ্কে ঘুরে, স্বচ্ছর কিছু হবে না তো?ভালো থাকবে তো?সুহা হাত বাড়ায়। কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠে,

“ স্ স্বচ্ছ? এ্ ই স্বচ্ছ?আ্ আপনার এত র’ক্ত? এত র’ক্ত কেন স্বচ্ছ? আপনার মাথা….”

সুহার পাগল পাগল লাগে। কিসব প্রশ্ন করছে বা প্রলাপ বকছে তা হয়তো সে নিজেও জানে না। স্বচ্ছ সুহার এলোমেলো প্রশ্ন শুনে আলতো হাসে। সুহার কপালের দিকে একটুখানি কেঁ’টে গেছে। সে অংশ টুকুতেই আঙ্গুল বুলিয়ে বলে,

“ স্যরি ধাক্কা দেওয়ার জন্য।তোমার কপাল কেঁটে গেছে সুহাসিনী! ব্যাথা করছে? ”

সুহা এবার কান্না করে দেয়। চোখ গলিয়ে পানি বের হয়ে আসে তার। হামলে পড়ে স্বচ্ছর দিকে। আটকে আসা স্বরে বলতে থাকে,

” আ্ আ্ আপনার, আপনার র’ক্ত…স্বচ্ছ? ক্ কতগুলো র’ক্ত । স্বচ্ছ, আপনার কতগুলো রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে। কি করব আমি। কি করব বলুন না…আপনি তো ম’রে যাবেন স্বচ্ছ। র’ক্ত আটকাব কি করে? প্লিজ, প্লিজ স্বচ্ছ সুস্থ থাকুন না। আগের মত, মজা করুন, জ্বালান সব মেনে নিব আমি। প্লিজ!”

স্বচ্ছ সুহার কথা শুনে হাসে। সুহা পাগলের মতো বকছে তখনো। তার নিজের শরীরের ভরও ছাড়ছে স্বচ্ছর শরীরের উপরে। হাত পা কাঁপছে মেয়েটার। স্বচ্ছ হয়তো বুঝতে পারছে নিজের যন্ত্রনা। হয়তো বুঝতে পারছে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবুও মজার স্বরে সুহাকে আশ্বাস দিতে বলে,

“ বোকা মেয়ে! এত সহজে মরব না আমি। তোমার ভালোবাসা পাওয়া বাকি তো আমার।”

সুহা তখনও নিজের মতো প্রলাপ বকছে বিড়বিড় করে,

“ আ্ আপ্ আপনার রক্তগুলা? কি করে থামাব স্বচ্ছ? আপনার সব রক্ত তো বের….”

স্বচ্ছ ফের কথা থামাতে বলে,

” ব্লাড ফোবিয়া আছে তোমার? কাঁপছো তুমি।কন্ঠও কাঁপছে।”

সুহা ডুকরে কেঁদে উঠে। ততক্ষনে চোখে পড়ে সামনের সিটে বসে থাকা ড্রাইভারকেও। রক্তাক্ত দেহ। নড়চড় নেই। সুহা খামছে ধরে স্বচ্ছর রক্তাক্ত শার্ট খানা। কেঁদে কেঁদে বলে উঠে,

“ স্বচ্ছ! আপনার কিছু হবে না। কথা দিন , কিছুই হবে না আপনার। শুনুন, শুনুন আমি আপনাকে ভালোবাসি স্বচ্ছ। দীর্ঘ চার বছর ধরে ভালোবেসে আসছি স্বচ্ছ। ”

স্বচ্ছ অল্প হাসে। যন্ত্রনায় চোখ বুঝে আসছে তার। মাথা চিরচির করছে। চোখ বুঝে আসছে নিমিষেই। তবুও প্রেয়সীর সামনে চোখ বুঝা যাবে না। নয়তো মেয়েটা কান্না করবে, ভেঙ্গে পড়বে। ঠোঁট এলিয়ে বলে,

“ তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না সুহাসিনী। কিন্তু, তুমিও আমার প্রথম অনুভূতি। বিশ্বাস করো এটা মিথ্যে নয়।মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে মিথ্যে বলব না আমি সুহাসিনী। ”

সুহা কাঁদতে কাঁদতেই জড়িয়ে ধরল স্বচ্ছকে।শরীরের ভর ছেড়ে দিল স্বচ্ছর উপর। কয়েক সেকেন্ড যেতেই অতিরিক্ত চিন্তা, অস্থিরতা আর ব্লা’ড ফোবিয়ার কারণে জ্ঞান হারাল সুহা৷ স্বচ্ছ মিনমিনে চোখে চেয়ে থাকে। জড়িয়ে থাকে সুহার শরীরটা।আশপাশে মানুষ চোখে আসে। আওয়াজ ভেসে আসে কানে। আর স্বচ্ছর চোখজোড়া বুঝে আসে ক্রমশ! তবুও স্বচ্ছ চোখ বুঝতে চায় না। যদি এটা শেষবার হয়? যদি আর চোখ খোলা না হয়? তার চাইতে তার সুহাসিনীকে একটু মন ভরে দেখেই নিক নাহয়!

#চলবে…