প্রেমের সমর পর্ব-২১+২২+২৩

0
2

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_২১
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

সুহার কপালে চোট লেগেছে। সামান্যতম অংশ কেঁটে রক্তও বের হয়েছে যার দরুণ কপালে ব্যান্ডেজ। হাতে পায়ে যে অংশ গুলো ছিলে গেছে তাতে ঔষুধ লাগানো। এই সামান্যতম আঘাত পেলেও সুহা এখনও হসপিটালের কেবিনে। ঘুমের মেডিসিন দেওয়া হয়েছে ওকে। সুহা এই হঠাৎ হওয়া অঘটনটা মেনে নিতে না পেরে এই নিয়ে তিনবার জ্ঞান হারিয়েছে। যতবার জ্ঞান ফিরেছে ততবারই তোতলানো কন্ঠে কেবল স্বচ্ছর অনেকগুলো রক্ত বের হওয়ার ঘটনাটাই বলছিল। কান্না করছিল। পাগলামি করছিল। উপায়ে না পেয়ে নার্সরা ওকে কেবিনে নিয়ে ঘুমের ইঞ্জেকশন ফুস করেছে। অপরদিকে স্বচ্ছর অবস্থা ক্রমশ জটিল ঠেকছে।গাড়ির ড্রাইভারের ও অবস্থা ক্রমশ জটিল । আবির সাদাফ খবর পেয়েই এসেছে এখানে। পথচারীরাই কল করে জানিয়েছেন। তারপর আবির আর সাদাফের থেকেই পরিবারের মানুষজনও খোঁজ পেয়ে ছুটে এসেছেন। ডক্টর জানিয়েছেন স্বচ্ছর প্রচন্ড রক্তক্ষরণ এবং মাথায় বেশ আঘাত পেয়েছে৷ যার দরুণ রক্ত দিতে বলা হয়েছে। ভাগ্যবশত স্বচ্ছর রক্তের গ্রুপ আর আবিরের রক্তের গ্রুপ এক হওয়াতে ব্লাড দিতে আবিরই গেল। আবির থমকায়। এই প্রথম তার কষ্ট হচ্ছে স্বচ্ছর জন্য। আজীবন ছেলেটাকে দেখেছে ছন্নছাড়া এলোমেলো জীবন কাঁটাতে। পরিবার থেকে দূরে দূরে। হুট করেই এই আকস্মিক অঘটনটা ঘটার কি খুব প্রয়োজন ছিল? খুব বেশি?সবেই তো ছেলেটা এক রমণীর প্রেমে উম্মাদ হয়েছিল। আশা রেখেছিল মেয়েটাকে সে পাবে। সৃষ্টিকর্তা মেয়েটাকে তো দিলই না উল্টো জীবনটাই কেড়ে নেওয়ার পর্যায় এনেছে। আবিরের চোখ ভিজে আসতে চায়। তবুও কাঁদে না। ছেলেদের তো কাঁদতে নেই। বাইরে বেরিয়ে এসে স্বচ্ছর বাবাকে আশ্বস্ত করে বলল,

“ আঙ্কেল, চিন্তা করবেন না। আমাদরর স্বচ্ছ ঠিক হয়ে যাবে আঙ্কেল। ”

স্বচ্ছর বাবা শক্ত মানবের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। আবিরের কথাটা শুনেই এমনভাবে তাকালেন যেন উনি এতোটা সময় পর নিজের শক্ত খোলসটা ভাঙ্গার সুযোগ ফেলেন। আবিরকে জড়িয়ে কেঁদেই ফেললেন এক মুহুর্তে। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে উঠলেন,

“ ডক্টরদের বলো না আব্বা স্বচ্ছটাকে যাতে ভালো করে দেয়। আমি আর ওকে কখনো বকবো না আব্বা। আমার আব্বাটাকে এনে দাও। একটাই ছেলে আমার আব্বা। ছোট থেকেই ছন্নছাড়া ছেলেটা। যখন যা চেয়েছে করেছে, যা চেয়েছে পেয়েছে। আমার ছেলেটা, আমার ছেলেটার অনেক কষ্ট হচ্ছে আব্বা! ”

আবির বাকহারা! কি সান্ত্বনা দিবে? যে মানুষটার বাসায় এতদিন থাকা স্বত্ত্বেও ছেলের উপর রাগ করে ছেলের বন্ধুদের সাথেও কথা বলেনি। সে মানুষটাই আজ ছেলের বন্ধুকে আব্বা সম্বোধন করছেন। বাচ্চাদের মতো জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। আবিরের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। কাঁপা হাতে পিঠে হাত রেখেই বলল,

“ আঙ্কেল! ও ভালো হয়ে যাবে। ও সত্যিই ভালো হয় যাবে। কাঁদবেন না আঙ্কেল। ”

ততক্ষনে সাদাফ বাইরে থেকে ছুটে এসেছে প্রয়োজনীয় ঔষুধ নিয়ে। পাশেই আবিরদের বাসা। স্বচ্ছর মা এবং সিয়াকে সেখানেই পাঠানো হয়েছে অনেক কষ্টে। কারণ হসপিটালে এতজন থেকে ভীড় জমবে। তার উপর ওরা কান্না করছিল প্রচুর! সাদাফই ওদের নিয়ে গেল সেখানে। আসার সময় ডক্টরদের দেওয়ার প্রয়োজনীয় সব কিনে আনল। আবির সাদাফকে দেখামাত্রই বলল,

“আন্টিরা শান্ত হয়েছে? ”

“কান্না করছে এখনো। আন্টি ওখানে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে আবির৷ ”

“ সিয়া? ওর কি অবস্থা? ”

“ চুপচাপ আছে। তবে কান্না করছে। ”

আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এর বাইরে কি বলা উচিত বুঝে আসে না তার। কিই বা বলবে? বলার মতো কিছু তো কন্ঠ দিয়ে বের হচ্ছে না তার। কন্ঠরোধ হয় আসছে।এক্সিডেন্টের পাঁচ ছয় ঘন্টা পেরিয়েছে! অথচ স্বচ্ছর জ্ঞান ফিরছে না। ডক্টররা বলছে অবস্থা ক্রমশ জটিল হচ্ছে। সারাবছর হাসি আনন্দে তিন বন্ধু কাঁটিয়ে দিলেও ঠিক এইমুহুর্তে এসে আবির এবং সাদাফ দুইজনই টের পায় তারা তিনজন একে অপরকে ছাড়া কতটা শূণ্য। কতোটা হারানোর ভয়? কতোটা বন্ধু হারানোর শোক!

.

দাদাজান ও রাহা এসেছে আরো আগেই। তবে দাদাজান ইচ্ছে করেই স্বচ্ছর বাবার সামনে পড়ে নি। কারণ ইতোমধ্যেই যে সকল আচরণ তিনি স্বচ্ছর বাবার সাথর করেছে তারপর এই ঘটনা ঘটার পর উনি নিজেই নিজের কাছে ছোট হয়ে আছেন। তাই তো একবারও দেখা করেননি নিজ থেকে। তবুও দেখাটা হয়েই গেল। স্বচ্ছর বাবা দেখামাত্রই করুণ কন্ঠে বলে উঠল,

“ আমার ছেলে আপনার নাতনিকে আর জ্বালাবে না চাচা। আপনি ওদের ডিভোর্স চেয়েছিলেন না? ও কিন্তু এক প্রকার মুক্তই এখন। আমি জানি না আমার ছেলে ফিরবে কিনা। যদি ফেরে আমার ছেলের জন্য আপনার নাতনিটাকে দিবেন? আমি ওর বাবা তো। ছোটকাল থেকে যা চেয়েছে সব দিয়েছি। শুধু এইবেলাতেই আমি ইচ্ছে করে এড়িয়ে গিয়েছি। তা দেখেই হয়তো অভিমান করে চোখ খুলছে না ছেলেটা। ”

দাদাজান কেমন করে যেন চাইলেন। বোধহয় বুক ব্যাথা করল একজন বাবার আকুতি দেখে। মনে পড়ল নিজের ছেলেকে হারানোর মুহুর্ত । যেদিন সুহা আর রাহা বাবাহারা হয়েছিল! দাদাজান দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। কিছু বলতে নিবেন ঠিক তখনই রাহা ছুটে এল। বলল,

“ দাদা,আপু তো আবার কেমন করছে। কান্নাকাটি করছে। ঘুম ছেড়ে উঠে বসেছে দাদাজান।”

কথাটা বলেই ফের ছুটে যায় রাহা। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে বোনের দিকে। পরনের জামাটায় কত জায়গায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ! মনে মনে নিজেকে বকেও সে। যদি সে আজ তার আপু আর দুলাভাইাে আসতে না দিত? তাহলে নিশ্চয় এই অঘটনটা ঘটতই না। রাহা দীর্ঘশ্বাস টানে। সুহার কপালে হাত রাখতেই সুহা কাঁপা স্বরে বলে উঠে,

“ র্ রক্ত!উনাকে বাঁচাতে হবে রাহা। কত রক্ত! ”

রাহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফের। যে তিনবার সুহার অজ্ঞাস হয়েছে সে তিনবারেরই আগে এবং পরে সুহা এসব প্রলাপ বকেছে। সবচেয়ে বিস্ময় জনিত কথা হলো সুহা কেঁদে উঠে নিজে নিজেই। পাগলের মতো আহাজারি করে কেঁদে উঠবে।রাহা জানে সুহা এই মুহুর্তেও কেঁদে উঠবে। আকুতি করবে স্বচ্ছকে দেখার। জানতে চাইবে স্বচ্ছ বেঁচে আছে কিনা।রাহার ভাবনা মিথ্যে হলো না। সুহা ঠিক তাই তাই করল। পাগলামি করল। রাহা হতাশ শ্বাস ফেলে বোনকে সামলানোর চেষ্টা চালায়। ঠিক তখনই আবির আসে। নরম স্বরে রাহাকে জানায়,

“ স্বচ্ছর জ্ঞান ফিরেছে রাহা। সুহাকে খুঁজল। আপনি চাইলে সুহাকে বুঝিয়ে ওখানে আনতে পারেন। তবে সিনক্রিয়েট না করলে ভালো হয়। ”

রাহা শুনল। দীর্ঘশ্বাস টেনে বোনের মাথায় হাত বুলায়। পরমুহুর্তে গাল আঁকড়ে ধরে বলে,

” আপু? তুই তো দেখতে চেয়েছিলি ভাইয়াকে তাইনা? ভাইয়া ভালো আছে। শুধু মাথায় একটু ব্যাথা পেয়েছে।তুই কি দেখতে যাবি আপু?”

সুহা থামে। স্বচ্ছ ঠিক আছে শুনে আচমকা পাথরের মতো শক্ত হয়ে তাকায়। বলল,

” উনি ঠিক আছে? মিথ্যে বলছিস না তো? সান্ত্বনা দিচ্ছিস আমায় রাহা? ”

আবির তা দেখে। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে জানায়,

“ ও আপনাকে মিথ্যে বলছে না। সত্যিই স্বচ্ছ ভালো আছে। যাবেন ওর কাছে? ”

সুহা তাকায়।জড় পদার্থের ন্যায় উত্তর করল,

“ যাব। ”

“ তাহলে কান্না করবেন না। ওখানে কান্না করলে স্বচ্ছর ক্ষতি হবে না? ”

সুহা যেন বুঝে উঠে। মাথা নাড়াল। পরপর আবিরের পিঁছুপিঁছু যায় স্বচ্ছর কাছে। ওখানে শুধু সুহাকেই ডুকতে দিল। সুহা ড্যাবড্যাব করে তাকায়। ও ডুকতেই নার্সটা বেরিয়ে যায়। ডক্টর যে আছে সে থাকে। সুহা পা বাড়ায়। ওরা যে বলল স্বচ্ছ ভালো আছে? ভালো থাকলে কারো মাথায়ভর্তি ব্যান্ডেজ থাকে? মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো থাকে? সুহা বুঝে। ওরা ওকে সান্ত্বনায় দিল। যায়হোক সুহা পরিপক্ব রমণী। বয়সে তো সে খুকি নয়।এটুকু বুঝবে না?সুহার কান্না পায়। চোখ ভেঙ্গে কান্না আসতে চায়। তবুও আটকায় সে। ধীর পায়ে এগোয়৷ একদম স্বচ্ছর কাছে গিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। স্বচ্ছ তা দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসে যেন। হাত নাড়ায় একটু। সুহা বুঝল হয়তো হাত ধরতে ইশারা দিল। সুহা তাই করল। দুইহাতে আলতো করে হাত ধরল। ঝুঁকে গিয়ে ফিসফিস স্বরে স্বচ্ছর কানের কাছে বলল,

“ আমায় শাস্তি দেওয়ার কথা ভাববেন না স্বচ্ছ। আমি কিন্তু রেগে যাব। আমায় কষ্ট দিবেন না। আপনি জানেন? আমার কষ্ট হচ্ছে? বুকের ভেতর কেমন লাগছে? আমার দমবন্ধ হয়ে আসতে চাইছে স্বচ্ছ। এসব কি আমার শাস্তি? ”

স্বচ্ছ উত্তর দিতে পারে না। সুহার চোখ টলমল করে। আবিরকে কথা দিয়ে আসল সে কাঁদবে না অথচ এখানে এসেই সে সে কথাটা রাখতে পারল না। কেঁদে দিল নিরবে।এক হাত রাখল স্বচ্ছর গালে। হালকা হাত বুলিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে আটকানো স্বরে বলল,

“ আমি জীবনে একটা ছেলেকেই ভালোবেসেছি স্বচ্ছ! একটা ছেলের প্রতিই মুগ্ধ হয়েছি বারংবার! একটা ছেলের জন্যই কতকাল ধরে অপেক্ষা আমার। সেটা আটনি স্বচ্ছ। উপরে উপরে শত রাগ ঘৃণা করলেও আমি আপনাকে ভালোবাসি স্বচ্ছ। আপনি আমার প্রথম অনুভূতি।”

স্বচ্ছর চোখমুখ এই পর্যায়ে উচ্ছাসিত দেখাল। যেন কিছু বলতে চায় সে। কিন্তু বলতে পারল না। সুহা সে অস্থিরতা দেখে বলল,

“ আমি শুনব। অপেক্ষায় আছি শোনার জন্য। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান স্বচ্ছ। আমি অপেক্ষায় আছি আপনার প্রেম গ্রহণ করতে।”

কথাগুলো বলেই পরমহুর্তে স্বচ্ছর দিকে পুরোপুরি ঝুঁকল। স্বচ্ছর ব্যান্ডেজ করা কপালে আলতো চুমু খেয়ে বলল,

“ স্বচ্ছ? আমি আজীবন আপনার সুহাসিনীই থাকব। আপনারই! ”

.

সাদাফকে ডক্টর ডেকেছে নিজের চ্যাম্বারে। আকস্মিক এই ডাকার মানেটা তারা কেউই বুঝে উঠে না। তবুও বুক টিমটিম করে। আবির আর সাদাফ দুইজনই বোধহয় আসন্ন বিপদ বার্তা বুঝে গেল। দুইজনই দুইজনের দিকে চাইল করুণ চাহনিতে! কিন্তু স্বচ্ছর বাবাকে তখনো জানাল না কথাটা। ধীর পায়ে সাদাফ ডক্টরের চ্যাম্বারেই গেল। ঘামছে সে দুঃশ্চিন্তুায়। চোখ লাল হয়ে আসছে৷ সাদাফ, আবির দুটো ছেলেরই আজকের রূপটা বেহাল। দেখে মনে হচ্ছে ওরা কোনকালে গোছানো কোন ছেলে ছিল। চুলগুলো উষ্কুখুষ্কু এলোমেলো ঠেকছে দুইজনেরই, চোখ লাল চিন্তায়, ঘামে চুপসে আছে একেকজনের শার্ট! বোধহয় ঘামের গন্ধটাও ছড়াচ্ছে দুইজনের শরীর থেকে৷ অথচ সময়টা কেবল পাঁচ ছয় ঘন্টা! এই পাঁচ ছয় ঘন্টাতেই তাদের কত কি পরিবর্তন!

#চলবে…

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_২২
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

সাদাফকে ডেকে নিয়ে ডক্টর এটুকুই জানিয়েছে যে রিপোর্টে স্বচ্ছর ব্রেইনের একটা ধমণীতে ড্যামেজ দেখিয়েছে। যার কারণে স্বচ্ছর জ্ঞান ফিরলেও সারভাইভ করাটা নিয়ে তারা নিশ্চিত করতে পারছেন না। ফলস্বরূপ ডক্টররা আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিলেন একটা অপারেশন করার। তবে এই অপরেশনটা রিস্কি! হতে পারে স্বচ্ছ প্রাণ আর ফিরলইনা অপারেশনটা করার পর। আবার হতে পারে স্বচ্ছ এরপর একদম সুস্থ জীবন যাপন করল। এই দুই চিন্তায় ডক্টররা যখন কঠিন সিদ্ধান্তটি নিতে পারছিল না তখনই সাদাফ এবং আবিরকে বিষয়টা জানাল। যেহেতু এসেছে পর্যন্ত এই দুটো ছেলেকেই রোগীর জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে দেখেছেন তারা। ভেবেই নিলেন এরা রোগীর ভাই হয়তো। কিন্তু যখন শুনল বন্ধু হয় তখনই স্মিত হাসলেন ডক্টর মাহবুব!বললেন,

“ তোমাদের বন্ধু বোধহয় খুব ভাগ্যবান যে তোমাদের মতো দুইজন বন্ধু পেয়েছে সে। ”

আবির মৃদু হাসে। চোখে তার হাজার ক্লান্তি। কান্না পাচ্ছে কেমন তার। সাদাফ তখন ভাঙ্গা চাহনিতে আবিরের দিকে তাকায়। এই অনিশ্চায়তার সংবাদ স্বচ্ছর বাবাকে কিভাবে দিবে বোধহয় তাই প্রশ্ন। আর সুহা? মেয়েটাতো স্বচ্ছর সাথে দেখা করার পর থেকে কেমন কঠিন হয়ে আছে। আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখে আশ্বাস দিয়ে বের হয়৷ রাহাকে ডেকে শান্ত চাহনিতে বিষয়টা বুঝানোর চেষ্টা করে বলে। যখন পুরো বিষয়টা রাহার সাথে আলোচনা চলছিল ঠিক তখনই সেখানে এল ছুটি। বোধহয় অনেকদূর জার্নি করেই এসেছে। চুল এলোমেলো দেখাচ্ছে মেয়েটার। অন্য সময় বোকাবোকা চাহনিতে আবিরের দিকে চেয়ে থাকলেও আজ থাকল না। এসেই আবির আর রাহাকে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে রাহাকে জিজ্ঞেস করে,

“ সুহা কেমন আছে রাহা? আর দুলাভাই? কেমন আছে এখন? ”

রাহা ছোট ছোট চোখে তাকায়। ছুটির সাথে দেখতে পায় সুহাদের ফ্রেন্ড সাদকেও। রাহা কোনরকমে অবস্থার কথা জানিয়ে জানায় সুহা কোথায়। ছুটি সব শুনে। পরমুহুর্তেই আবিরের দিকে চোখ যায় তার। কেমন লালচে রক্তিম দেখাচ্ছে চোখজোড়া। যেন কতোটা বিষাদ! ছুটির কেন জানি না আবিরকে দেখেই মনে হলো এক বিধ্বস্ত আবির এ। এক ক্লান্ত আবির দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। ছুটির মায়া হয়। এক হাতে আবিরের একটা হাত ধরে ক্লান্ত গলায় বলে উঠল,

“ চিন্তা করবেন না আবির ভাই। আমাদের সুহা স্বচ্ছ ভাইয়াকে অনেকটা ভালোবাসে। সে ভালোবাসা পূর্ণতা না পেতে দুলাভাইয়ের কিছু হতেই পারে না বুঝলেন? উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। আপনাদের আবার আড্ডা জমবে। আবারও আপনারা আপনাদের শয়তানি বুদ্ধি ফলাতে পারবেন। চিন্তা করবেন না আবির ভাই। এভাবে ভঙ্গুর আবিরকে আমি কখনো দেখিনি আবির ভাই। ”

আবির হাত টেনে নিল। বোধহয় সবার সামনে হাত ধরাটা সে পছন্দ করেনি। ছুটিও তাই আর সান্ত্বনা দিতে গেল না। তবে রাগবশত হাত সরিয়ে নিয়েছে কিনা তারজন্য কৈফিয়ত স্বরূপ বলল,

“ সাদ আমার বন্ধুই। একটু দূর তো। একা একা আসতে পারতাম না। তাই ওর সাথে চলে এসেছি। আমার কথাগুলো খারাপ লেগে থাকলে স্যরি। তবে আপনাকে সত্যিই বিধ্বস্ত লাগছে আবির ভাই। আমি সেকারণেই আপনাকে মনোবল দিতে চেয়েছিলাম। স্যরি! ”

কথাগুলো এক টানে বলেই সাদ সহ সুহার কাছে গেল ছুটি। অপর দিকে আবির তাকিয়ে রইল বোবা দৃষ্টিতে। ইশশ! ছুটি যদি বুঝত তার মনের ভেতর কতোটা অনিশ্চায়তা এখন খেলা করছে। কতোটা চিন্তা!ছুটি যখন তার হাত ধরে এসব বলছিল তখন ইচ্ছে হচ্ছিল মেয়েটাকে এক টানে জড়িয়ে নিক। বুকের ভেতর আগলে রাখুক কিছুটা সময়। তবুও যদি চিন্তা কমে? তবুও যদি শান্তি লাগে? অথচ তা তে সম্ভব নয়। তাই তো আবির ওভাবে হাত সরিয়ে নিল। আর মেয়েটা বোধহয় তার এই কাজে কষ্ট পেল শুধু শুধু!

.

স্বচ্ছর অপারেশনের সিদ্ধান্তটা নেওয়ার জন্যই ওর বাবাকে সবটা জানানো হলো। উনি বুঝে উঠলেন না যেন কি করা উচিত। পরমুহুর্তে ডক্টরের সাথে অনেকটা আলোচনা করেন সিদ্ধান্ত নিলেন অপারেশনটা হবে। পরদিনই হবে! বিষয়টা সুহাকেও জানানো হলো। সুহা কেমন যেন থমকানো দৃষ্টিতে তাকায়। অপারেশনের পর যে স্বচ্ছর বেঁচে থাকার অনিশ্চায়তাটার কথা তা আবির আর সাদাফ সুহার থেকে লুকাতে চাইলেও লুকানো গেল না। সুহা নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে। ফ্যাসফ্যাস স্বরে বলে,

“ যদি উনি না ফিরেন আর? কি করব আমি?”

উপস্থিত আবির, সাদাফ আর রাহা তিনজনই নিশ্চুপ থাকল। উত্তর দিতে পারল না। সুহা হাসে হালকা এবারে। পরমুহুর্তেি অনুরোধ নিয়ে বলে উঠে,

“ আমাকে কি আরেকটাবার স্বচ্ছর সাথে দেখা করতে দিবেন? আমাকে কি উনার সাথে আর কিছুটা সময় কাঁটাতে দিবেন? প্লিজ!কিছু করব না কথা দিচ্ছি। ”

কেউই না করল না। বরং আবিররা ডক্টর আর নার্সদের সাথে কথা বলল যাতে কাল অপারেশনটা হওয়ার আগ অব্ধি সুহাকে ওর সাথে থাকতে দেয়। রাজিও হলেন উনারা। সুহা একটু হাসে। অনুমতি পাওয়া মাত্র স্বচ্ছর কাছে গিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে স্বচ্ছকে দেখতে থাকে সে। চোখ বুঝে আছে ছেলেটা। ঘুমোচ্ছে। মুখে দেখা যায় অক্সিজেন মাক্স। সুহার চোখ টলমল করে। ঝুঁকে গিয়ে স্বচ্ছর মুখে আঙ্গুল বুলায়। বিড়বিড় স্বরে বলে,

“ শাস্তি আপনার প্রাপ্য ছিল স্বচ্ছ। কষ্ট আপনি দিয়েছেন আমায়। তাহলে ? সবসময় আমিই কেন ভুগব? সবসময় আমিই কেন কষ্ট পাব স্বচ্ছ? আমার প্রতি এতোটা অবিচার কেন হবে বলুন? ভালোবাসি বলে?”

সুহা বিড়বিড় করে কথাগুলো বলেই থামে। স্বচ্ছর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,

“ আমি ভয় পাচ্ছি স্বচ্ছ। আমি জানি, আমি জানি তো আপনি আমায় ছাড়বেন না। আপনি আমায় একা ফেলে যাবেন না৷ এত বড় শাস্তি নিশ্চয় আমার প্রাপ্য নয় স্বচ্ছ? বলুন? এতোটা শাস্তি কি আমার প্রাপ্য? ”

স্বচ্ছ শুনে না। চোখ মেলে তাকায় না৷ সুহার চোখ টলমল করে। দুয়েক ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে স্বচ্ছর মুখেও। অথচ স্বচ্ছ তখনও চোখ বুঝা। সুহা শুকনো ঢোক গিলে। সেভাবেই স্থির বসে থাকে স্বচ্ছর কাছে। স্বচ্ছর হাতটা সেভাবেই আগলে রাখে নিজের হাতের মুঠোতে। এভাবে কতোটা সময় যে পার হলো সুহা নিজেই জানে না। এখন এই অবস্থায় সময়জ্ঞাস টুকু নেই তার। তবুও সময় যখন মাঝরাত্রিতে ঠিক তখনই স্বচ্ছ চোখ মেলে তাকায়। সুহাকে সেভাবে আলোআঁধারে বসে থাকতে দেখে মৃদু হাসে যেন। যে হাতটা সুহার হাতের মুঠোয় রাখল সে হাতটা একটু নড়চড় করে বুঝাল সে সুহার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সুহাও তাকাল।বলল,

“ স্বচ্ছ? ”

স্বচ্ছ তাকিয়ে থাকে। কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই তার। তবুও সে ঠোঁট এলিয়ে হাসে। চোখে চোখে হাসি খেলে যায় যেন। সুহা হাত চেপে ধরে। বলে,

” আমাকে বিয়ে করেছিলেন স্বচ্ছ। একবার বিয়ে করে ফেলে চলে গিয়েছিলেন। এইরকম ভুল দ্বিতীয়বার করার সাহস করবেন না স্বচ্ছ। খু’ন করে ফেলব আপনাকে। কখনোই ক্ষমা করব না, কখনোই না। ”

স্বচ্ছ এবারেও সুহার কথা শুনে হাসে৷পরমুহুর্তেই টের পায় সুহা কাঁদছে কথাগুলো বলতে বলতে। টলমল করছে চোখজোড়া। স্বচ্ছ হাত এগোতে চায় সুহার চোখের পানি মোঁছার জন্য। কিন্তু পারল না। ব্যর্থ হলো। সুহা তা বুঝে মুখটা স্বচ্ছর হাতের কাছে আনে। গালে হাত ছুঁইয়ে বলে,

“ একটা মেয়ে আপনাকে ভালোবেসে একবার ঠকে গিয়েছে স্বচ্ছ। দ্বিতীয়বার ঠকাবেন না প্লিজ। প্লিজ স্বচ্ছ। ”

কথাটা বলেই নিরবে কেঁদে ফেলে সুহা। স্বচ্ছ তা দেখে স্থির চেয়ে থাকে৷ সুহা ফের বলে,

“ কে বলেছিল আমাকে সরিয়ে দিকে গাড়ির ওপাশ থেকে? কে বলেছি আমায় বাঁচিয়ে দিতে? বাঁচিয়ে দিয়ে এই কষ্ট আমি চেয়েছিলাম? আপনি, আপনি আজীবনই ফাঁকিবাজ স্বচ্ছ।খবদ্দার বলছি, আমাকে ভালোবাসার সময়ে এসে যদি ভালোবাসায় ফাঁকিবাজি করবেন ভেবে থাকেন তাহলে কিন্তু খারাপ হবে। আমি শুধু আপনার ভালোবাসা পাব বলে চারটা বছর অপেক্ষা করেছি। ”

স্বচ্ছ সুস্থ থাকলে নিশ্চয় এই কথাগুলো শুনে হেসে মজা নিত। তবে এবারে তা হলো। বরং মৃদু হাসলই কেবল। সুহা ঝুঁকে। স্বচ্ছর মুখটা আগলে ধরে লজ্জা ভুলে চুমু দেয় স্বচ্ছর গালে। বলে,

“ আমি আপনাকে এই নিয়ে দুটো কি তিনটে চুমু দিয়েছি স্বচ্ছ। আর আপনি কেবল সেদিন ছাদের চুমুটাই। চুমুর ঋণ শোধ করতে হলেও আপনাকে আমার সাথে সংসার করতে হবে স্বচ্ছ। নয়তো আমি অন্য কাউকে ধরে এনে চুমু খাব। ”

এমন একটা সিরিয়াস মুহুর্তেও সুহা কথাগুলো বলল যেন স্বচ্ছর মন খারাপ না হয়। স্বচ্ছ যাতে ছেড়ে না যায় এই
কারণেই। স্বচ্ছ এই পর্যায় একটু বেশিই ঠোঁট এলিয়ে হাসে৷ চোখ দিয়ে বুঝাতে চায় যেন, অন্য কাউকে চুমু খেলে সে সুহার ঠোঁটই কেঁটে রেখে দিবে!

.

পরদিন স্বচ্ছর অপারেশনটা সকালেই হয়। কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে অপারেশনের পর স্বচ্ছর তখনও জ্ঞান ফেরেনি। বাইরে যখন সবাই চিন্তায় চিন্তিত ঠিক তখনই আবিরের পেছনে এসে দাঁড়ায় ছুটি।আবির সবার থেকে অনেকটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে দেখে ছুটি এসেছিল। চিন্তায় অস্থির হওয়া আবিরের কাঁধে হাত রেখে সে শুধায়,

“ দেখবেন,একটু পরই ডক্টর এসে বলবে যে অপারেশন সাক্সেসফুল। চিন্তা করবেন না আবির ভাই। ”

আবির চিন্তায় ডুবে আছে ।এই মুহুর্তে সবার মধ্যেই কিন্তু আবড়ালর ফিসফিস স্বরে ছুটির কথাটা তার বিরক্ত লাগল। ছুটি বোধহয় সে বিরক্ত দেখে নিরাশ হয়ে গেল। দ্রুতই আবিরের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিল সে। তখনই রাহাকে হুড়মুড় করেই এদিকে আসতে দেখা গেল। চোখে মুখে উচ্ছাস তার। আনন্দ! রাহা এল দ্রুত। খুশিখুশি মুখে আবিরকে ডেকে তার হাত টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

“ ডক্টর বলেছে অপারেশনটা সাক্সেসফুলি হয়েছে। আপনাকে ডাকছে সাদাফ ভাইয়া। ”

মুহুর্তেই আবিরের মুখে হাসি ফুটল যেন। একটু আগের বিরক্তিটাই পরিণত হলো তীব্র সুখে। ছুটি নিজেও খুশি হলো। তবুও কোথাও যেন তার বিশাল এক মন খারাপ কাজ করল। কেন এই মন খারাপ তার? কেন এই বিষাদ? আবির ভাই তার কথা শুনে বিরক্ত হয়েছে বলে? রাহা হাত ছুঁয়েছে বলে? নাকি রাহার মুখে তাকিয়ে আবির ভাই হেসেছে আর তার মুখে তাকিয়ে বিরক্ত হয়েছে বলে? কোনটা?

#চলবে….

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_২৩
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

প্রায় পনেরো ষোলো দিন পার হওয়ার পরই স্বচ্ছকে বাসায় আনা হলো।স্বচ্ছর মাথায় তখনও ব্যান্ডেজ। হাতের এবং বুকের দুয়েক জায়গায় ক্ষত৷ ডান হাতটায় হাড় ভেঙ্গেছে৷ ডক্টর বলেছে আপাতত সে বিপদমুক্ত।তাই তো বাসায় আনা। তবে এই কয়েকটাদিন সুহা প্রত্যেকটা সময় স্বচ্ছর সাথে ছিল। স্বচ্ছর সব কাজে সাহায্য করেছে। মাঝে কত কি বিষয় নিয়ে রাগ হলো, ঝগড়া হলো। সুহা মনে মনে হাসে। স্বচ্ছর জন্য গরম করা খাবারটা নিয়ে রুমে ডুকল। স্বচ্ছ শুঁয়ে আছে। চোখ বুঝা হলেও সুহার উপস্থিতি টের পেয়েই বোধহয় ঠোঁট এলিয়ে হাসল স্বচ্ছ। ধীরস্বরে বলে,

“ বলেছিলাম আমার প্রেমে আষ্ঠেপৃষ্ঠে আটকাব তোমাকে সুহাসিনী? আটকালে তো শেষে? ”

সুহা ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। একটা মানুষ অসুস্থ থেকেও যে কতোটা শয়তানি মাথায় রাখতে পারে তা এই কয়দিনে সুহার জানা হয়ে গেছে। ছোটশ্বাস ফেলে সে স্বচ্ছর দিকে এগোল। বলল,

“ তো কি আটকাতে দেখেছেন? সুপার গ্লু নাকি ফেবিকল আঠা?”

স্বচ্ছ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে যেন। চোখে খেলে যায় দুষ্টুমি। বলে,

“ চুমুর আঠা। ”

সুহা এবারে ফোঁস করে উঠে। কেমন করে তাকিয়ে রাগ প্রকাশ করে। সঙ্গে সঙ্গেই স্বচ্ছ হালকা আওয়াজ তুলে হাসে। বলে,

“ কে যেন বলেছিল আমায় চুমুর ঋণ শোধ করতে হবে? সত্যি বলব? আমি কিন্তু শুধু তোমার চুমুর ঋণ শোধ করার জন্য বেঁচে ফিরেছি। কেবল সুযোগটা দাও সুহাসিনী, প্রমিজ করছি, এইটুকুও ঋণ বাকি রাখব না আমি। ”

সুহার নিজের কপালেই নিজে চড় মারতে ইচ্ছে হলো। কোন দুঃখে সে সেদিন স্বচ্ছকে চুমু দিয়েছিল? কোন দুঃখে সে সেদিন কথাগুলো বলেছিল? এখন রোজ রোজ স্বচ্ছ কথা শুনাবে। রোজ রোজ সুহাকে হারিয়ে দিবে এই কথাটা দিয়ে। সুহা সেদিন লজ্জ্বা না পেয়ে কথা গুলো বললেও আজ তার লজ্জা হচ্ছে। তবে সে প্রাণপন চেষ্টা চালাল সে লজ্জ্বামুখো মুখ প্রকাশ না পাওয়ার। রাগ নিয়ে বলল,

“ চুমু নিয়ে খব দক্ষ মনে হচ্ছে আপনাকে। কয়জনকে চুমু দিয়েছেন এর আগে? ”

স্বচ্ছ আকাশ থেকে মাত্র পড়া এক শিশু যেন এমনভাবেই তাকাল। বিস্মিত স্বরে উত্তর করে,

“ ছিঃ ছিঃ বউ! কিসব বলে বেড়াচ্ছো এসব। আজ পর্যন্ত কোন মেয়েকে চুমু তো দূর জড়িয়েও ধরিনি। বিশ্বাস করো সুহাসিনী৷ ”

সুহা বাঁকা চোখে তাকায়। খাবারে চামচ দিয়ে স্বচ্ছর মুখে দিতে দিতে বলে উঠে,

“ দেখে তো মনে হয় না এতোটা ভোলাবালা ভদ্র ছেলে আপনি। ”

স্বচ্ছ খাবার মুখে নেয়।ভ্রু উঁচিয়ে বলে,

“ তো কি মনে হয়?তিন বাচ্চার বাপ আমি? নাকি তিন মেয়ের জামাই আমি? ”

“ তিন মহিলার শ্বশুর লাগে। ”

স্বচ্ছ ফের ফুঁসফুঁস স্বরে বলে উঠে,

“ শ্বশুর? ওটা তো তোমার ভিলেইন দাদাজানকে লাগে সুহাসিনী। ডেঞ্জারাস মানুষ তুমি আর তোমার দাদাজান। ”

সুহা চুপ থাকে একটু। স্বচ্ছকে খাইয়ে দিতে দিতে বলে উঠে,

“ দাদাজান ভালো মানুষ।উনি আমাদের ভালো চায় বলেই ওরকম করেছেন। ”

“ তেমন ভালো চাওয়ার মানে কি যেখানে বর থেকে বউ দূরে থাকবে? অসুস্থ মন মানসিকতা তোমার দাদাজানের! খালি সুস্থ হতে দাও। তোমার দাদাজান থেকে তোমার দাদীকে যদি দূরে না আনি। ”

সুহা এই পর্যায়ে বিরক্ত হয় যেন। একটা ছেলে অসুস্থ অবস্থায় এতোটা বকবক কেন করবে? এখনও তো পুরোপুরি সুস্থ নয়। মাথায় চাপ পড়লে? সুহা বিরক্ত স্বরেই বলে,

“ দাদাজান আপনার মতো ছাগল প্রজাতির পুরুষ নয়। নিজের বউ নিজের আওতায় রাখতে জানে সে। ”

স্বচ্ছ কেমন করে তাকায় এবারে। বউ সামলাতে অক্ষম সে? এমন অপবাদ দিল তাকে? এমন অপবাদ স্বচ্ছর সহ্য হবে। গা টগবগ করল। বলল,

“ আমি জানি না?”

সুহাও উত্তর করল,

“ অবশ্যই জানেন না। ”

স্বচ্ছ এবারে ভ্রু বাঁকিয়েই তাকায় সুহার দিকে। শোনায়,

“ তাই নাকি?দেখাব পারি কিনা?”

স্বচ্ছ সেভাবেই ভ্রু বাঁকিয়ে সুহার দিকে তাকিয়ে থাকল কথাটা বলে। পরপরই সুহার মাথার পেছনে বাম হাতটা দিয়ে এগিয়ে আনল নিজের দিকে। পরমুহুর্তেই ঠোঁট এগিয়ে নিতে যাবে সুহার মুখের দিকে ঠিক তখনই সুহা সরে গেল। রেগে ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

“ গলা চেপে ধরব বলে দিলাম একদম। এমনিতে তো রোগী হিসেবে আছেন তখন শ্বাসকষ্টের রোগী বানিয়ে দিব। ”

স্বচ্ছ নিরব কষ্ট নিয়ে চেয়ে থাকে। সাদাফের কথাটা বারবার মনে পড়ছে যে, “এই ডেঞ্জারাস মেয়েটা রোমান্সের সময় তোর কি অবস্থা করবে বন্ধু?” স্বচ্ছর এখন সত্যিই মনে হলো যে তার কপালে প্রেম নেই। সত্যিই নেই। যা আছে তা কেবল মারামারি আর বউয়ের শাসানো স্বর!স্বচ্ছ যখন মিনমিনে চোখে চেয়ে আছে ঠিক তখনই সুহার চোখ পড়ল স্বচ্ছর মুখে এবং শার্টে। আকস্মিক টেনে নেওয়াতে চামচের খাবারটুকু স্বচ্ছর মুখে এবং শার্টে পড়েছে। সুহা ছোট শ্বাস টানে। বলে,

“ আপনার জন্য এমনটা হলো। খাবারটুকু নাহলে পড়ত না এভাবে। এবার শার্টটা চেঞ্জ করাতে হবে।”

স্বচ্ছ বাঁকা স্বরে শোনায়,

“ নিজেই তো বউ আওতায় রাখার কৌশল দেখাতে বলেছো। ”

সুহা তখন রাগে ঝলঝল করে বলে উঠে,

“ আমি? ”

স্বচ্ছও বলে,

“ তো কি আমি? ”

“ আপনার ভূত! ”

কথাটা বলেই পানি আর কাপড় আনল। পরপরই স্বচ্ছর শার্টের বোতামে হাত রাখল। বোতাম গুলো খুলতে যখন ব্যস্ত তখনই স্বচ্ছ হাসে। ফের বলে,

“ দুদিন আগে আমায় তো ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছিলে। দুদিন পর এখন আমার শার্ট খুলতে জিজ্ঞেসও করো না লজ্জ্বা পাওয়া তো দূর! ”

সুহা কথায় কান দেয়না। বরং বলে,

“ হসপিটালেও আপনার শার্ট চেঞ্জ করেছি। শুধু পুরোপুরি চেঞ্জ করার বেলায় আবির ভাই আর সাদাফ ভাই সাহায্য করত৷ ”

“ তুমি চাইলে তুমিও তো করতে পারতে। করো নি।”

সুহা সরু চোখে তাকায়।ইচ্ছে হয় এই ছেলেটার মুখে আঠা লাগিয়ে দিতে। রাগ নিয়ে বলে,

“ করলে তখন বলতেন বেহায়ার মতো সুযোগ লুফে নিচ্ছি। ”

স্বচ্ছ বলে,

“ শার্ট চেঞ্জ করানো টাও তো একপ্রকার সুযোগ নিচ্ছো। আমার সুন্দর বুক, পিঠ,গলা ড্যাবড্যাব করে গিলে নাও চোখ দিয়ে। বুঝি না আমি? ”

সুহা এবারর হাত থামায়। রাগের সহিত বলে,

“ নিজেই চেঞ্জ করুন।পরবর্তীতে করাব না আর। ”

স্বচ্ছ হাসে এবারে। সুহার হাতটা সেভাবেই বাম হাত দিয়ে চেপে রেখে বলে,

“ উহ!করাবে সুহাসিনী। বর হই তোমার। ”

সুহা তাকায়৷ স্বচ্ছর হাস্যোজ্জ্বল চাহনি বা কথাটাতে বোধহয় কিছু ছিল যা সুহাকে মানিয়ে নিল একমুহুর্তে। সুহাও আর রাগ দেখাল না। কোন কিছুই বলল না। নজর সরিয়ে দ্রুত কাজে লাগল। শার্ট খুলে কাপড় ভিজিয়ে মুঁছে দিতে লাগল যে যে জায়গায় শরীরে লেগে। মুখ মুঁছিয়ে গলায় নামল। তারপর হুট করেই সুহা অন্যমনস্ক হলো। তাকাল স্বচ্ছর দিকে। দৃষ্টিটা তার দিকেই তখনো। কেমন যেন দৃষ্টিটা। যেন কতকালে আগ্রহ এই চোখজোড়ায়। সুহা তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরায়।শুকনো ঢোক গিলে গলায় হাত রাখতেই চোখে পড়ে স্বচ্ছর গলার উঁচু জায়গাটা। অ্যাডামস অ্যাপল! স্বচ্ছে শুভ্র গলাটায় সুন্দর মানাচ্ছে। আলাদা আকর্ষণ!সুহার যেন ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হলো। অবশ্য তা করল ও সুহা। হাত দিয়ে ছুঁয়ে নিল উঠা নামা করা অ্যাডামস অ্যাপল! একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিক পানে।স্বচ্ছ সে দৃষ্টি খেয়াল করে নিজেই সুহার হাতটা সেখানে চেপে ধরে৷ বলে,

“এভাবে তো একটু আমার দিকেও তাকাতে পারো সুহাসিনী। একটু তো দয়া করতেই পারো নির্দয় রমণী! ”

পরপরই আবার বলে,

“ অ্যাডামস অ্যাপল!তুই আমার শরীরের অংশ হলেও তোর প্রতি আমার হিংসে হচ্ছে৷”

সুহা মুহৃর্তেই হাত সরায়। পরক্ষণেই স্বচ্ছর শার্টটা নিয়ে পা এগুলো ওয়াশরুমের দিকে।

.

আবিরের সাথে রাহার পরিচয়টা হসপিটাল থেকেই খুব ভালো আকারে পৌঁছিয়েছে৷ সে হিসেবেই যতদিন হসপিটালে ছিল ততদিন তাদের বিভিন্ন বিষয়েই কথা হতো৷ ছুটি দুয়েকদিন হসপিটালে গিয়ে তা দেখেছেও। তবে যে দুয়েকদিন সে এরপর গিয়েছিল সে দুয়েকদিস সে নিজ থেকে আবিরের সাথে কথা বলেনি। যদি আবির এগিয়ে এসে কথা বলত তখনই বলত তাও হেসে হেসে৷ আবির হয়তো বুঝলই না মেয়েটার মনে কতটুকু অভিমান জমা হয়েছে। আজও বুঝল না। আবির, সাদাফ, সিয়া আর রাহাকে ছুটি ছাদে কথা বলতে দেখেছে। অথচ আবির তার সাথে একবার ও নিজ থেকে যোগাযোগ করেনি এই কয়েকদিনে বিষয়টা অদ্ভুত নয়? অবশ্য আগেও করত না যোগাযোগ। সবসময়ই তো আবির ভাই তাকে ইগ্নোরই করত। কিন্তু আবির তো তাকে কয়েকদিন আগে বিয়ের প্রস্তাব দিল। সে বিষয়ে? সে বিষয়টা কি ফাও? এরপর তো আর জিজ্ঞেসও করল না। ছুটি বুঝে উঠে না আবিরকে। যখন মন খারাপ করে বিছানার কোণায় বসে আছে ঠিক তখনই রাহা বাসায় এল। ছুটিকে দেখেই বলে উঠল,

“ ছুটি আপু? তুমি কি আবির ভাইয়ার কাজিন হও? ”

ছুটি তাকাল। রাহার উচ্ছাস তার পছন্দ হলো না। কেন এতোটা হাসিখুশি উচ্ছাস দেখাবে রাহাকে? মনে মনে সে নিরাশ হলেও আগ্রহ নিয়ে বলল,

“কেন? ”

“আবির ভাই বলল তুমি তার কোন আঙ্কেলের মেয়ে হও। ”

ছুটি এবারে ছোটশ্বাস টানে। কোন আঙ্কেলের মেয়ে? অথচ ম্যাসেজে জানাল সে তাকে ভালোবাসে। ফোনে জানাল বউ হবে কিনা। সব কি মজাই করল? ছুটি ছোটস্বরে বলল,

“ ওহ! ”

রাহা হাসে। ছুটির পাশে বসে বলে,

“ আবির ভাইয়া তোমায় ডাকল আপু। কেন ডাকল বলো তো? ”

ছুটি গোলগোল চোখে তাকায়। বলে,

“ জানি না তো। তোকে বলে নি? ”

“ না। শুধু বলল তোমায় যেতে। ”

“ ওহ! ”

ছুটির মনের মধ্যে শত বিষাদেও যেন একটু আনন্দ আসে। আবির ভাই তাকে যেতে বলল? নিজ থেকে? আনন্দে উচ্ছ্বাসিত হয়ে ছুটি যখন যেতে নেয় তখন রাহা বলে,

“ আপু? আবির ভাইয়া যদি তোমার কাজিন হয় তাহলর প্লিজ আমারে একটু সাহায্য করবা। আমি উনার ব্যাক্তিত্বে ফিদা। ”

এই একটা কথাই ছুটির আনন্দটা নাকোচ করতে যথেষ্ট। ছুটি ঢোক গিলে। কৌতুহল নিয়ে শুধায়,

” উনিও?”

রাহা লাজুক হেসে উত্তর করে,

” জানি না। তবে যেহেতু উনি বারবার আমার সাথে কথা বলছেন একটা আশা তো আমি রাখতেই পারি বলো? ”

ছুটি মেকি হাসে এবারে। বলে,

“ হ্যাঁ হ্যাঁ৷ তুই তো সুন্দরীও। অবশ্যই আশা রাখবি। ”

কথাটা বলেই ছুটি পা বাড়ায়। সঙ্গে শুকনো ঢোকও গিলে। কেন জানি না তার মনে হচ্ছে আবির ভাইকে পাওয়ার আশা তার ক্ষীণ হচ্ছে। এতকাল আবির ভাইকে একপাক্ষিক জ্বালালেও, একপাক্ষিক ভালোবেসে গেলেও কখনো তার কষ্ট লাগেনি। দিনশেষে বুঝেছে আবির ভাইকে কেউ পেলে সেই পাবে। অথচ সে ছুটিই আজ নিরুৎসাহিত। ধীর পায়ে যখন ছাদে গেল তখন ছাদ থেকে শুনতে পেল সাদাফের স্বর,

“ কি ভাই বল? ঐ ছুটি মেয়েটাকে আই লাভ ইউ তো বলেছিলি জাস্ট স্বচ্ছর বউ কোনটা তা জানার জন্য বল? মেয়েটাও কি অবুঝ! তোর পারতি পুরাই দুর্বল। নাহলে কি তোর হয়ে আমি আই লাভ ইউ বললেও মেয়ে গদগদ হয়ে খুশি হয়ে যেত?যাক! তোরই তো ভালো। মেয়েটার অনুভূতি ব্যবহার করার প্ল্যান আমার থাকলেএ কাজে তো তোর লাগল বল? মাঝখান দিয়ে স্বচ্ছর বউকে ও খুঁজে পেয়ে গেলাম। সব তো শেষই এবার কি বলে দিবি যে সেদিন ঐ ম্যাসেজটা আমি করেছিলাম জাস্ট এজ এ প্ল্যান হিসেবে? এইজন্যই ডেকেছিলি? ”

ছুটির পা স্থির তখনো। কথাগুলো কানে আসা মাত্রই সে নিচে ছুটে আসে। কান্না পাচ্ছে তার। অযথায় চোখ টলমল করছে। আবির ভাই তার মানে তার অনুভূতিকে কেবল ব্যবহার করেছে? তাও সুহাকে খোঁজার জন্য? সবটাই প্ল্যানের অংশ? কোন ভালোবাসা নেই? সত্যিই তো! ভালোবাসা যদি থাকতই তাহলে আবির নিশ্চয় তাকে এতকাল ইগ্নোর করত না। এমনকি এখনও ইগ্নোন করত না। সেদিন আবিরের চোখেমুখে বিরক্তও দেখত না সে। ছুটি কেবল ভাবে। কি বোকা সে। কি বোকা! কিভাবে ব্যবহার করতে চাইল তাকে আর সেও কি! সত্যিই তো! যে ছেলে এতগুলো দিন তাকে ইগ্নোর করেছে সে ছেলে হুট করেই তাকে ভালবেসে ফেলবে এটা কেমন না? ছুটি নিজেকে বুঝায়। চোখের পানি মুঁছে নিজেকে বারংবার বুঝায়। অতঃপর প্রায় অনেকটা সময় পরই সে আবার ছাদে গেল। আবিরকে দেখেই বলে,

“ আবির ভাই? ডেকেছিলেন? ”

আবির তাকাল। ঘড়িতে সময় দেখে বুঝল ছুটিকে ডাকার প্রায় চল্লিশ মিনিট পার হয়েছে। বলে,

“ ডেকেছিলাম। চল্লিশ মিনিট ধরে কি করছিলি বসে বসে? ”

ছুটি অন্যসময় আবিরকে দেখে হেসে হেসে কথা বললেও আজ মন চাইল না। বলল,

“ কিছু না। দুই সপ্তাহ তো পার হলো। আপনি এখনো দেশ ছাড়লেন না যে? ”

আবির এবারর ভ্রু বাঁকায়।বলে,

“ খুশি হতি দেশ ছাড়লে? ”

“ না।”

ছুটি কথাটা বলার পরপরই আবির প্রশ্ন ছুড়ে,

“ উত্তর কি আমার? ”

ছুটি যেন বুঝে উঠে না। বলে,

“ হ্ হু?”

“ ছুটি বেড়েছে আর কয়েকদিন। সে হিসেবে সময় আছে আর একদিন। কাল চলে যাব আমি,সাদাফ আর নিধি।মাঝখান দিয়ে স্বচ্ছর অবস্থা নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম যে তোকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। এখন বলছি, তুই কি বাকি একদিনের জন্য বিয়ে করবি আমায়? ”

ছুটি হাসে।আবির জানেও না সে হাসিটায় কতোটা অবহেলা মিশে আছে? কেউ যদি বিয়ে করতেই চায় তাহলে বুঝি এভাবে প্রশ্ন ছুড়ে? এভাবে জিজ্ঞেস করে?তবুও অন্যসময় হলে হয়তো ছুটি রাজি হয়ে যেত। একদিন হোক বা এক সেকেন্ড ছুটি অবশ্যই আবিরকে চায়। তবে আজ সে রাজি না হয়ে বলল,

“ হুট করে বিয়ে? আপনার কোন প্রয়োজনে লাগবে কি এটা? ”

হুট করেই এই বাক্যটা পছন্দ হলো না আবিরের। বলে,

“ এটা কেন মনে হলো তোর? ”

“ এমনিই! ”

আবির তবুও শুধায়,

“ এমনিই?শিওর? ”

ছুটি বোকা হেসে বলে

“ বোকা হতে পারি তা বলে কি আজেবাজেকথা বলব আবির ভাই? ”

আবিরের কন্ঠ দৃঢ়,

“আমি যা বলেছি তার উত্তর দে। ”

ছুটি এবারে চুপ থাকে। কিয়ৎক্ষন পর বলে,

“ আব্বু বলে যাকে আমরা ভালোবাসি তাকে আমাদের বিয়ে করা উচিত নয়। বরং যে আমাদের ভালোবাসে তাকে বিয়ে করা উচিত। ”

আবির আরেকটু দৃঢ়স্বেে বলে,

“ তো? এটা দ্বারা কি বুঝাচ্ছিস?”

ছুটি হেসে বলে,

“ মানে আমিই তো আপনাকে ভালোবাসি। ”

“ আর আমি বাসি না? ”

“ হ্যাঁ! এটাই। ”

আবিরের মেজাজ খারাপ লাগে। বলে,

“ তো কি বিয়ে করবি না আমাকে? এটাই বললি? রিজেক্ট করছিস আমার প্রোপোজাল? ”

ছুটি মুহুর্তেই মাথা নাড়িয়ে বলে উঠল,

“ না, না! আপনাকে রিজেক্ট করার কথা আমি ভাবতে পারি নাকি? তবে বিয়ের সময় তো চলে যাচ্ছে না আবির ভাই। আমার আব্বা আম্মাও আমায় কখনো জোর করবে না বিয়ে নিয়ে। আমি এক্চুয়েলি বিয়েটা ভেবেচিন্তে করতে চাই। ”

আবির মেনে নিল এবারে। তবে বলল,

” ঠিকাছে।কিন্তু অন্য কারোর হওয়ার চেষ্টা করবি না। ভুলেও না। ”

#চলবে….