#প্রেমের_সমর
#পর্ব_২৪
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
তখন রাত।মৃদু ঠান্ডা হাওয়া বইছে বাইরে। বোধহয় কিছু সময় পর বৃষ্টি নামবে। যার কারণে আকাশে চাঁদটাও আজ অনুপস্থিত!সুহা বেলকনিতে বসে কিছুটা সময় চাঁদবিহীন সে আকাশই দেখল। পরপরই রুমে এল। ভেবেছিল স্বচ্ছ ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমিয়ে পড়লে তারই ভালো। নয়তো স্বচ্ছর জাগ্রত অবস্থায় ওরই সামনে এক বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে আবারো স্বচ্ছর খোঁচা শুনতে হবে। কারণ ওদের বাসায় যখন স্বচ্ছ গিয়েছিল তখন সে স্বচ্ছকে এক বিছানায় ঘুমাতে দেয়নি৷ সুহা হতাশ হয় এদিক দিয়ে। স্বচ্ছকে উদাস ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখে বলল,
“ এমন বানর মুখ করে বসে আছেন কেন? আপনি না অসুস্থ?ঘুমাননি কেন এখনো? ”
“ যে বউ অসুস্থ স্বামীকে বসিয়ে রেখে বেলকনিতে গিয়ে চাঁদ দেখায় মরিয়া হয় সে বউ জেগে থাকার কারণ জানার অধিকার রাখে না। ”
আকস্মিক এই উত্তর পেয়ে সুহার কপালে ভাজ পড়ে। ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায় সে। বলে,
” কোন বউ অধিকার রাখে তাহলে? বউই বা কয়টা? বিয়েই বা কয়টা করেছেন আপনি? ”
সুহার সন্দেহ দেখে স্বচ্ছর হাসি আসে যেন। তবুও বলে,
“ একটাই করেছিলাম তাও কি নিষ্ঠুর বউ!ভালোবাসে না। ”
সুহা রাগ নিয়ে শুধায়,
“ নিষ্ঠুর? ”
“ অবশ্যই। হসপিটালে যখন আমার কথা বলার বোধই ছিল না তখন কি ভালোবাসাময় কথা! চুমও দিয়েছিলে। আর যখনই আমি একটু সুস্থ হয়ে আসলাম তখনই ফের তোমার দাদাজানের মতো ভয়ংকর রূপ ধারণ করে ফেললে? গিরগিটি কোথাকার!”
সুহা ফের রাগ নিয়ে বলে,
“ আমি গিরগিটি? ”
“ তা নয়তো আমি? ”
সুহা তখন রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতেই উত্তর দেয়,
“ আপনি তো ভাই উন্নতমানের গিরগিটি৷ ফুসলিয়ে ফুসলিয়ে আমাকে প্রেমে ফেলে বিয়েটা করে দৌড় মেরেছিলেন। ভুলে গেছি আমি? ”
একই কথা আবারো শুনে স্বচ্ছর ইচ্ছে হয় নিজের কপালে নিজে থাপ্পড় মারতে। কে বলেছিল? কে বলেছিল তখন সে ছেলেমানুষিটা করতে? কে? এখন সারাজীবন তার খোঁচা শুনতে হবে তাকে। স্বচ্ছ হতাশার ন্যায় দৃষ্টি রাখে। বলে,
“ অতীত ওটা। ভুল করেছি। কয়বার বলব আমি? সেবার যেমন চলে গিয়েছিলাম এবার তো তেমন ভালোবাসার টানে থেকেও যাচ্ছি। দেখো না কেন তা? নাকি এখনও শিউর না যে সত্যি সত্যিই ভালোবাসি কিনা?”
কথাটা বলেই সে সুহার দিকে তাকায়।উত্তরের অপেক্ষা করে। সত্যিই কি এখনোও শিউর না সুহা? সত্যিই এখনো তার ভালোবাসাকে বিশ্বাস করে না? উত্তর দিচ্ছে না কেন? স্বচ্ছ আবারও শুধায়,
“ নাকি এবারে সত্যি সত্যি মরে গিয়ে বিশ্বাস করাতে হবে? বলো? কি করলে বিশ্বাস করবে যে ভালোবাসি? ”
সুহার ইচ্ছে হলো এই ছেলেটার গালে একটা থাপ্পড় বসাতে। এখনও সুস্থ হয়নি। কয়েকদিন আগেই মৃত্যুর সাথে লড়ছিল এতগুলো মানুষকে দুঃশ্চিন্তায় রেখে। অথচ এখনও মরার কথা মুখে আনে। খারাপ লোক!সুহা মনে মনে একগুচ্ছ বকাঝকা করেই গম্ভীর কন্ঠে জানায়,
“ বিশ্বাস না করার মতো পথ রাখেননি। সেদিন এক্সিডেন্টটা করেই ফাঁসিয়ে দিয়েছেন আবার। নয়তো আমি জীবনেও বিশ্বাস করতাম না আপনাকে। ”
স্বচ্ছর মন বোধহয় গদগদ করে উঠল খুশিতে। তবুও প্রকাশ করল না। টানটান স্বরে বলল,
“ এখন করো? নাকি ভাবো যে এক্সিডেন্টটাও আমার প্ল্যান করা?সব নাটক? ”
সুহা কেমন করে যেন চায়। খাটের এককোণায় বসে ছোট শ্বাস ফেলে। স্বচ্ছ কি কথাটা খোঁচা দিয়ে বলেছে? বলল,
“ আমি আপনার মতো এতোটা গর্দভ নই স্বচ্ছ।গাড়ি ড্রাইভার চালাচ্ছিল। তার নিজের জীবনও ঝুুঁকিতে ছিল। যদিও এখন সুস্থ! তো যদি প্ল্যানের অংশ হয়ও তাহলে আপনি বা উনি নিশ্চয় জীবনের ঝুঁকি জেনেও এই দুর্ঘটনা ঘটাত না তাই না? ”
স্বচ্ছ বিপরীতে বলে,
“ ভাগ্যিস এক্সিডেন্ট টা হলো আমার। নয়তো তোমার মতো নির্দয় রমণীর নিষ্ঠুর মন জীবনেও নরম হতো না। জীবনেও আমার দিকে ফিরে চাইতে না তুমি। ভাগ্যিস! এক্সিডেন্টটা হলো। আরো হোক এমন এক্সিডেন্ট। এটলিস্ট ভালোবাসা জুটবে তোমার। ”
সুহা এবারে স্বচ্ছর দিকে ঝুঁকে আসে।রাগে কটমট স্বরে বলে,
“ এক ঘুষিতে মুখের সব দাঁত ফেলে দিব স্বচ্ছ। একবার দুবার এসব কথা ভালো লাগে না। ”
স্বচ্ছ এই পর্যায়ে হাসে। নিজের চোখের খুব সামনেই সুহাকে রাগ মিশ্রিত চাহনি নিয়ে চেয়ে থাকতে দেখে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয় সুহার কপালে আসা চুল। বাম হাতে সুহার মুখে এনে বুলিয়ে দিয়ে শুধায়,
” বিশ্বাস করো, তোমাকে রাগতে দেখলে বিনা কারণেই চিনচিনে এক অনুভূতির ফিল পাই সুহাসিনী। ইউ নো হোয়াট? তুমি রাগলে আমি শুধু শুধুই প্রেমে পড়ে যাই।হার্টবিট বাড়ে। কোনদিন না জানি অ্যাটাক করে ফেলি।তার আগে আগেই প্রেমটা করবে তো রমণী? ”
স্বচ্ছর এত সুন্দর কথার বিনিময়ে সুহা এক বালতি হতাশা ঢেলে দিয়ে বলে উঠে,
“ শখ নেই আমার। ”
কথাটা বলেই স্বচ্ছর পাশেই কাত হয়ে শুঁয়ে পড়ল সুহা। বলল,
“ ফ্লার্টিং স্কিল ভালো আপনার। কিন্তু এই মুহুর্তে ঘুমান। গুড নাইট। ”
.
ছুটির সাথে আবিরের আর কথা হয়নি।মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞাও করল মেয়েটা। আবিরের জন্য সে আর পাগলামো করবে না। আর না তো আবিরকে সে অনুভূতি প্রকাশ করবে। আর না তো হ্যাংলামোপনা করবে।ছুটি নিশ্চুপ হয়ে আছে তখন থেকে। বেলকনিতে বসে বসে ভাবছিল তার কি দোষ ছিল? এই যে এতকাল এত অপেক্ষা করল তবুও তো তার এতোটা কষ্ট হলো না। কিন্তু যখনই শুনল আবির ভাই তার অনুভূতিকে নিয়ে খেলেছে, অনুভুতিকে ব্যবহার করেছে তখনই থেকেই আবির ভাইকে তার আর ভালো লাগছে না। তিক্ত লাগছে সব। নিজেকেই বিরক্ত লাগছে তার। ছুটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে যখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল ঠিক তখনই পাশে আসল রাহা। কিছুক্ষন ছুটির সাথে কথা বলেই রাহা চলে গেল। ছুটি তারপরও অনেকটা সময় বেলকনিতে কাঁটাল।তার কিছুটা সময় পরই তার ফোন বাঁজে। ছুটি ভ্রু কুঁচকে তাকায় । আবির কল দিয়েছে৷ ছুটি প্রথম দুবার কল না তুললেও শেষের বার কল উঠাল। নিরব স্বরে বলল,
“ এতরাতে কল দিয়েছেন কেন আবির ভাই? কাল তো চলে যাবেন। গোছগাছ করছেন না?”
ছুটি তার প্রশ্নের উত্তর পেল না। তবে সাথে সাথেই আবির রাগ রাগ স্বরে প্রশ্ন ছুড়ে,
“ এতরাতে কার জন্য বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছিস?তোর জাস্টফ্রেন্ড সাদের জন্য? ”
ছুটি অবাক হয়। হঠাৎ আবিরের রাগের কারণ বুঝা গেল না যেন। আবার সাদকে টানার বিষয়টাও বুঝা হলো না। তবে ছুটি চারপাশে একবার চোখ বুলায়। বলে,
“ বেলকনিতে দাঁড়াতেই পারি। সাদের জন্য হলে সাদের জন্য। অসুবিধা কি আপনার?”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে শুধায়,
“ তুই জানিস না অসুবিধা কি?”
“ না।”
আবির ফের বলে,
“ জানিস তুই। খুব ভালো করেই জানিস ছুটি!এখন বলবি না যে তুই এই সাদের কারণেই বিয়ের প্রপোজালটা পিঁছিয়ে নিয়েছিস? ”
ছুটি এবারে হাসে৷ যে ছেলেটা তার অনুভূতিকে ব্যবহার করেছে নিজের স্বার্থে তার থেকে এমন প্রশ্ন বোধহয় সত্যিই হাস্যকর! বলে,
“ ইগোতে লেগেছে নাকি আপনার? ”
আবির রেগে শুধায়,
“ মুখে মুখে কথা বলা শিখেছিস? ”
ছুটি চুপ থাকে। তারপর অনেকটা সময় পর বলে,
“ ধরুন আমি সাদকে ভালোবাসি। এতদিন আপনার সাথে নাটক করেছি৷ওর কারণেই বিয়ের প্রোপোজাল পিঁছিয়েছি। তো? কি করবেন? ”
আবির এই পর্যায়ে উত্তর দেয়,
“ এতবছর কেউ নাটক করতে পারে না। সে ছোট থেকে দেখছি আমি তোকে। বোকা,ইমোশনাল ছুটি ছিলি তুই৷ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতি। ”
ছুটি হাসে। নিজের দুর্বলতার কথা শুনে নিজের প্রতি বিরক্তও হয়। বলে,
“ এইজন্য এখন অনেকে বোকা বানায় আমায়। যায় হোক, এখানে এসেছেন কেন? নিশ্চয় আমার জন্য নয়? ”
আবির রাগের সহিত উত্তর করে,
“ ইয়েস!তোর জন্য নয়।এখানে আরো বিভিন্ন মেয়ে আছে বুঝলি?ওদের দেখার জন্য এসেছি। ’
“ বুঝেছি। ”
আবির বলে,
“ বুঝলে ভালো!”
কথাটা বলেই কল রাখে সে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে সে। দৃষ্টি ছুটিদের বেলকনিটায়। যেখানে ছুটির ছায়া স্পষ্ট৷ আবির ছুটিকে খুব ভালোভাবে চেনে, খুব ভালোভাবে জানে। যার দরুণ ছায়াটা দেখে বুঝেও নেয় এটা ছুটি। কিন্তু বিরক্তির বিষয় হলো আবির যখন এখানে এসে দাঁড়াল ঠিক তখনই এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল আরও একজনকেও। ছেলেটা সাদ। দৃষ্টি ছুটিদের বেলকনিতেই। আর বেলকনিতে তখন ছুটিই দাঁড়ানো। যা আবিরকে রাগিয়ে দিতে যথেষ্ট৷ আবির দুইজনের দিকেই পরপর কয়েকবার চাওয়াচাওয়ি করে সাদের কলার টেনে ধরে। কাহিনী সুবিধার ঠেকে না তার। পরমুহুর্তেই কল লাগায় ছুটিকে। অতঃপর সাদের সামনেই ছুটির সাথে কথা বলে। বোচারা সাদ এর আগে একবার মার খেয়েছে। আক্কেল হয়ে গেছে তার। তাই কল রাখার সাথে সাথেই বলে উঠল,
“ কসম ভাই! আমি ছুটির জন্য দাঁড়িয়ে নেই। আমি তো এমনিই এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম রাহাকে দেখতে পাব কিনা। ”
আবিরের জন্য বিশ্বাস হয়না। বলে,
“ শিওর? রাহাই? ”
সাদ সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়ায়। শুধায়,
“ হ্যাঁ, হ্যাঁ। শিওর! রাহাই। ”
“ প্রমাণ? ”
সাদ কি প্রমাণ দিবে বুঝে উঠে না। তবে অনেকটা সময় পর ফোনে কথা বলার বিষয়টা মাথায় এল তার। কারণ সরাসরি তো সে কখনোই রাহাকে বলেনি নিজের দুর্বলতার কথা। সাদ শুকনো ঢোক গিলে। ফোন নিয়ে কল দিতে গিয়েই বুঝতে পারে যে তার ব্যালেন্স নেই৷ সাদ নিরস চাহনিতে তাকায় আবিরের দিকে। আবির তা দেখে বলে,
“ কি হইছে? ”
সাদ বোকা বোকা স্বরে বলে,
” ব্যালেন্স নেই।আমার ফোনটা দিবেন ভাই?”
আবিরও নির্দ্বিধায় ফোনটা দিল। সাদও এগিয়ে নিয়ে রাহার নাম্বারে কল দিল। রিসিভড হতেই চুপ থাকে সে। ওপাশ থেকে রাহা কর্কশ স্বরে বলে,
“এটা নিশ্চয় আপনিই? প্রতিদিন রাতে কল করে চুপ করে থাকের যে সেই তাই তো? পান কি এসব করে? ”
সাদ কন্ঠটা লাউড স্পিকারে দিয়েই শুনাল। পরমুহুর্তেই কল রেখে দিতে গিয়েও বলে,
“ আপনাকে দেখতে এসেছিলাম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।বেলকনিতে আসবেন একটু?”
কথাটা বলেই সাদ কল রাখে। আবিরকে বলে,
“ দেখলেন তো ভাই? এটা ছুটির কন্ঠ না। বিশ্বাস হলো তো? তাও বিশ্বাস না হলে বেলকনিতে তাকান। রাহা হয়তো আসবে কৌতুহল থেকে। ”
কথাটা বলার একটু পরই বেলকনিতে আরো একটা ছায়ামূর্তি দেখা গেল যা রাহার। বেলকনিতে এসেই চারপাশে চোখ বুলিয়ে কিছু খুুজছিল যেন সে৷ ছুটি তা পরখ করেই বলে উঠল,
“ কি হলো? কি খুঁজছিস তুই?”
রাহা খুঁজতে খুঁজতেই বলে,
“একজন কল দিল মাত্র। ”
ছুটি কৌতুহল নিয়ে বলে,
“ কে কল দিল?”
“যে কয়েকদিন পরপর অচেনা নাম্বার থেকে কল করে চুপ করে বসে থাকে,ভালোবাসার কথা বলে সেই লোকটা।”
ছুটি হাসে এবারে। বলে,
“ ভালো তো। তো কে সে বেচারা? ”
রাহা ফোন এগিয়ে ধরল। নাম্বারটা দেখিয়ে বলে,
“ জানি না তো। এই নাম্বার থেকে কল এল আজ। ”
ছুটি প্রথমে খেয়ালই করল না। পরমুহুর্তেই নাম্বারটা খেয়াল করে চোখ গোলগোল করে তাকায়। এই নাম্বারটাই? এটা তো আবির ভাইয়ের নাম্বার। তার মুখস্থ আছে।ছুটি তবুও নাম্বারটা মিলাল মনোযোগ দিয়ে। দ্বিধান্বিত স্বরে বলে,
”এটাই?শিউর এটাই নাম্বার?”
“ হ্যাঁ! একটু আগেই তো কল দিল। সে নাকি আমায় দেখতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে আপু।”
রাহা যেন এবারে দুয়ে দুয়ে চার মিলাতে পারল। আবির তাহলে এই কারণেই এদিকে এসেছে? এইকারণেই? আবির ভাই তো তাকে ভালোবাসে না। ওটা তো একটা খেলা খেলল কেবল। যদি রাহাকে ভালো বাসেও ক্ষতি কি? ছুটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চোখ টলমল করে তার। এই প্রথম তার মনে হলে তার জীবনের কোন ভ্যালু নেই। কেন অর্থ নেই।সে এক গুরুত্বহীন মানুষ এই পৃথিবীতে যাকে কেউ কখনো ভালোবাসেনি। যার ভালোবাসার গুরুত্ব কেউ কখনে দেয়নি।
.
সকালের আলো ফুটেছে। স্বচ্ছর ঘুম ভেঙ্গেছে বহু আগেই৷ এতোটা সময় ধরে সে এক দৃষ্টিতে মনোযোগ দিয়ে দেখে যাচ্ছে তারই সুহাসিনীকে। ঘুমন্ত মুখটা বড্ড মায়াবী লাগে যেন।বড্ড আকৃষ্ট হয় সে। স্বচ্ছ বাম হাত বুলিয়ে সুহার মুখে আঙ্গুল চালায়।পরমুহুর্তেই হতাশ শ্বাস ফেলে। বড্ড আদর আদর লাগছে মুখটা। একটা চুমু খেলে কি অপরাধ হবে তার? ঘুমন্ত অবস্থায়?তারই তো বউ! স্বচ্ছ নিজেকে সামলাল। কিন্তু পরমুহুর্তেই চোখ যায় সুহার গলায়।ফর্সা গলাটায় কিছু চুল এলোমেলো হয়ে আছে। স্বচ্ছ হাত বাড়ায় এবারে। সুহার চুল গুলো গলা থেকে সরিয়ে দিতেই দৃশ্যমান হলো ফর্সা গলাটা।তর্জনী আঙ্গুল ছুঁইয়ে গলায় আঙ্গুল বুলাল সে। যা স্থির হয় গলার তিলটায়। সুহা ঘুমন্ত অবস্থাতেই পুরুষালি হাতের মৃদু স্পর্শে কেঁপে উঠে। ঘুম ছেড়ে কেমন করে স্বচ্ছর দিকে চাওয়ার আগেই স্বচ্ছ ঝুঁকে গেল। শুকনো ঢোক গিলে বার কয়েক। পরপরই নিজের ঠোঁটজোড়া নিঃশব্দে সুহার গলায় ছোঁয়ায়। সদ্য ঘুম ভাঙ্গা সুহা পুরুষালি পুরু ওষ্ঠের স্পর্শ বুঝতেই শিহরিত হয়৷ শিরশিরে এক অনুভূতি হয় শরীরময়। হৃদস্পন্দনও বেড়ে এল এই একটা ছোঁয়াতেই। সুহা বুঝে উঠতেই মুহুর্তেই লাফ মেরে দূরে সরে। চোখজোড়া তখনো ঘুমোঘুমো।কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে থম মেরে থাকে সে। পরমুহুর্তেই গলায় হাত রাখে। বলে উঠে ঝাঝালো স্বরে,
“ কিসব করছেন? খুব ছুুঁইছুঁই স্বভাব না আপনার ? যেই মেয়ে দেখলেন সেই ছোঁয়াছোঁয়ি করছেন এখন? সুযোগ নিচ্ছেন স্বচ্ছ? ”
স্বচ্ছ হাসে ঠোঁট বাঁকিয়ে। বলে,
“ চুমুর শোধবোধ করছিলাম। তবুও যদি আমার ছোঁয়া পেয়ে তোমার মনে হয় যে সুযোগ নিচ্ছি ওকে ফাইন! পরবর্তীতে সুযোগই নিব। ”
#চলবে…
#প্রেমের_সমর
#পর্ব_২৫
লেখনীতোঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
আকাশ মেঘলা। ঘোলাটময় পরিবেশ। আশপাশে জুড়েছে শীতল বাতাস।নাসারন্ধ্রে অনুভূত হয় মৃত্তিকাময় সুভাস। বোধহয় ধরনী তার উদাস মনের পরিচয় দিল মেঘলা আবহাওয়াতে। ছুটি সে মেঘলা আবহাওয়ায় গা না ভাসিয়ে ভার্সিটিতে গেল। অথচ সেখানে গিয়েই তার মন উদাস উদাস লাগল। কেবল আজকের দিন! আজকের দিনটা পার হলেই তার আবির ভাই চলে যাবে অন্য দেশে। আর চাইলেও তার সাথে ছুটির দেখা হবে না। কতোটা দূরের পথ! অন্য একটা দেশ!ছুটির মন খারাপ হয়। উদাস মনে দুটো ক্লাস করে যেই না বাসায় ফিরতে নিবে সেমাত্রই পৃথিবীতে নামল ঝুম বৃষ্টির বিচরণ৷ ছুটি সাথে ছাতাও আনে নি। আচমকা এমন ঝুম বৃষ্টি যে হবে তা বোধহয় আশাতেও রাখে নি সে। তাই তো ছাতা আনে নি। কিন্তু তবুও আজ বৃষ্টিতে ভিজতে খারাপ লাগছে না তার। বৃষ্টির পানি যখন শরীর ছাপিয়ে ভিজিয়ে দিল পুরোটা শরীর তখনই প্রথম ছুটি কেঁদে দিল। ভাবল, এত অবসন্নতা, এত দুঃখ, এত কষ্ট কার জন্য?কার জন্য আজ এত উদাসীনতা? মানুষটাই তো তার নয়! তাকে ব্যবহার করল কি নিখুঁত ভাবে।তার অনুভূতির সুযোগ নিল। কথাগুলো মাথায় ঘুরতেই ছুটির রাগ হয়। চোখ লাল হয়ে উঠে। আর নোনতা পানিগুলো বয়ে যায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে! ছুটি দীর্ঘশ্বাস টেনে অনেকটা সময় বৃষ্টিতে ভিজে। পরমুহুর্তেই রিক্সা নিয়ে উঠে পড়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু যেমাত্রই সে বিল্ডিংয়ের সামনে রিক্সা নিয়ে নামল সেমাত্রই দেখা গেল রাস্তার ধারে একটা গাড়ি। আর গাড়িটা থেকেই ছাতা নিয়ে নেমে আসতে দেখা গেল আবিরকে।ড্রেসআপ ফর্মাল। উপরে ব্লেইজার। সুন্দর দেখাচ্ছে আবিরকে। ছুটি অন্য সময় হলে ড্যাবড্যাব করর তাকিয়ে থাকত কিন্তু আজ ভ্রু কুঁচকায়। আবিরকে এগিয়ে আসতে দেখে ভাড়াটা মিটিয়েই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চায়। কিন্তু চলে যাওয়ার আগেই আবির সামনে এল। ঘড়ি দেখিয়ে বলল,
” দীর্ঘ দুইঘন্টা যাবৎ এখানে অপেক্ষা করছি। কোথায় ছিল এই বৃষ্টিতে হুহ?আর এইভাবে ভিজে এসেছিসই বা কোন আক্কেলে? ভালো দেখাচ্ছে এভাবে তোকে? ”
কথাটা বলার সাথে সাথেই ছুটি নিজের দিকে তাকায়।এতক্ষনে বুঝে উঠতে পারে যে তার জামা শরীরের সাথে ভিজে লেপ্টে আছে। দেখতে নিশ্চয় বিশ্রী দেখাচ্ছে এই দৃশ্য? ছুটি মুহুর্তেই আশপাশে তাকিয়ে দেখল কোন ছেলে আছে কিনা। পরমুহুর্তে আবিরের রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে ওড়নাটা ঠিক করে সারা শরীর আবৃত করার চেষ্টা চালাতে চালাতে বলে,
“আমার জন্য তো আপনার দুইঘন্টা অপেক্ষা করার কথা নয় আবির ভাই৷ যদিও দুইঘন্টার অপেক্ষার কারণটা আমি জানি। অনেকদিনের জন্য চলে যাচ্ছেন, মনের মানুষকে না দেখে গেলে কিভাবে হয় বলুন?”
আবির কথাগুলো পাত্তা দিল না। বরং ছটি ওড়না ঠিক করা দেখে বিরক্ত হয় যেন। এক হাতে ছাতাটা ধরে অন্য হাতে নিজের পরণে থাকা ব্লেইজারটা খোলার চেষ্টা করে। পরপরই খুলে ছুটিকে দিকে এগিয়ে বলে উঠে,
“গর্দভ!কাজ করার আগে না ভেবে এখন আমার সামনে ভাবাভাবি দেখাচ্ছিস?
ছুটি সরু শ্বাস টানে।ব্লেইজারটা হাত বাড়িয়ে নেওয়ার আগেই আবির ছাতাটা কাঁধে আটকিয়ে দুইহাতে টানিয়ে দিল তার গায়ে। বলল,
“এতবছর আমার জন্য পাগলামো দেখিয়েছিস। ভালোবাসা দেখিয়েছিস৷ অথচ আমি চলে যাব শুনে তোর একটু পাগলামো নেই। একটু ও কষ্ট নেই। বরং নেচে নেচে ভার্সিটি মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজে আসছিস? ”
ছুটি সবটাই শুনল। পরমুহুর্তেই হেসে বলল,
“ আপনার ব্লেইজারটা? ভিজে গেল তো। পরে ফেরত কি করে দিব? আপনি তো চলে যাচ্ছেন আজ। ”
আবির ভ্রু উঁচু করে বলে,
“ এমন ভাবে বলছিস যেন আর দেখা হবে না? ”
ছুটি ক্লান্ত চাহনিতে তাকায়। হেসে বলে,
“ নাও হতে পারে।আর হলে তো ভালোই। ফেরত দিয়ে দিব তাহলে। ”
আবিরের এই মুহুর্তে কপালে ভাজ পড়েে।মেয়েটা কেমন করে যেন কথা বলে এই কয়েকদিন।কেন যেন মনে হয় মেয়েটা তাকে ইগ্নোর করতে চাইছে। আবির শুধায়,
“ নাও হতে পারে মানে? তোর কথা গুলো কেমন জানি শোনায় এখন। তোকেও কয়েকদিন বুঝে উঠছি না আমি। এমন কেন হচ্ছে? ”
ছুটি হেসে জানায়,
“ জানি না তো।”
আবির এবারে কঠিন স্বরেই বলে উঠে,
“ আমায় ঠকানোর কথা ভুলেও ভাববি না ছুটি। ভুলেও না। খুব খারাপ হবে তাহলে।”
ছুটি তাচ্ছিল্য করে জানায়,
“ আপনাকে? ঠকলে আমি ঠকব আবির ভাই তবুও ভুলেও আপনাকে ঠকতে দিব না।”
“ আমার কেন মনে হচ্ছে তুই আর ভালোবাসিস না আমায়? আগের মতো চেয়ে থাকিস না কেন? আগের মতো আগ্রহ দেখি না কেন তোর? ”
“ বেশি আগ্রহ দেখালে নিজের মূল্য থাকে না আবির ভাই। যায় হোক, নিজের যত্ন নিবেন। ভালো থাকবেন আবির ভাই! আপনি দেশে আসলে জানাবেন। ব্লেইজারটা পার্সেল করে পাঠিয়ে দিব। ”
আবির ভ্রু কুঁচকে শুধায়,
“ পার্সেল? দেশে ফিরলে তোকে সহই পার্সেল করে নিয়ে আসব ছুটি। খালি ওয়েট করিস একটু আমার জন্য। ”
ছুটি হাসে। মনে মনে ভাবে, কি নিখুঁত অভিনয়! এত সুন্দর অভিনয় কেউ করে? কেনই বা করছে এই অভিনয়টা এখন? এখন তো নিশ্চয় কোন স্বার্থ জড়িয়ে নেই? তাই না?তাহলে তো বলেই দিতে পারে৷ ছুটিও অভিনয়ে তাল মেলাল। হেসে বলল,
“ হু! ভালো থাকবেন। যত্ন নিবেন নিজের।”
আবির যেন কেমন করে তাকাল। সে দৃষ্টিতে দৃঢ়তা রেখে বলে,
“ আরো কিছু বলার কথা বোধহয় তোর। বল, ওটা শোনার জন্যই আসা। ”
ছুটি চুপ থাকে। যদিও জানে আবিরের সব কটা কথাই অভিনয় তবুও আলতো স্বরে বলে উঠে,
“ভালোবাসি।”
আবির যেন এবারে শান্তি পেল। মুখে ফুটে উঠে হাসি। ছাতাটা ছুটির দিকেও নিয়ে গিয়ে কাছাকাছি দাঁড়াল সে৷ কিঞ্চিৎ ঝুঁকে ঠোঁট ছোঁয়াল ছুটির ভেজা কপালে। বলে,
“ অপেক্ষায় থাকিস। ”
.
ঝুম বৃষ্টিতে শীতল আবহাওয়া জুড়েছে আশপাশে। স্বচ্ছ সেই শীতল আবহাওয়ায় বেলকনিতে বসে ছুটি আর আবিরের দৃশ্যটা দেখল। বিড়বিড় স্বরে বলে উঠল,
“ ওরা বিয়েই করল না। অথচ রাস্তায় দাঁড়িয়ে চুমু খাচ্ছে। আর আমি? বিয়ের চারবছর পরও এই চার দেওয়ালের ভেতর বউকে চুমু খেতে গেলে আতংকে থাকা লাগে। কখন না জানি বউ যুদ্ধ ঘোষণা করে দেয়।”
কথাটা বলেই স্বচ্ছ কপাল ঠেকায় বেলকনিতে।পরনে তার তখন একটা তোয়ালে কেবল। একটু আগেই তার আব্বু চেঞ্জ করিয়ে দিবে বলে হাওয়া হয় গিয়েছে। স্বচ্ছর বিরক্ত লাগে। বেলকনি ছেড়ে হেঁটে এসে রুমে আসে। হালকা চেঁচিয়ে বলে,
“আব্বু?আব্বু? ”
হঠাৎ স্বচ্ছর এমন স্বরে ছুটে এল স্বচ্ছর মা আর সুহা৷ স্বচ্ছকে এমন চেঁচাতে দেখে ওর মা বলে উঠল,
“ তোর আব্বা মাত্র বাইরে গেল। ষাড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেন বাপ?”
স্বচ্ছর মায়ের মুখে স্বচ্ছর সম্বন্ধে এমন সম্বোধন সুহার হাসি পায় পেট ফেটে। তবুও হাসি চেপে রাখে। স্বচ্ছ কোনরকমে বাবার উপর রাগ দেখিয়ে বলে,
“ তোমার বরের উপর রাগ হচ্ছে আম্মু।আমায় চেঞ্জ করানোর কথা ছিল। ”
স্বচ্ছর মা তাকায়। সত্যিই তো। আবির সাদাফের পর স্বচ্ছকে চেঞ্জ করার দায়িত্বটা স্বচ্ছর বাবাই নিয়েছে। অথচ এখন ছেলেটার কোমড়ে একটা তোয়ালে পেঁছানো কেবল। স্বচ্ছর মা ছোট শ্বাস টানে। বলে,
“ তোকে দেখতে এল কয়েকজন বাসায়। তোয়ালে পড়েই থাকবি? নাকি চেঞ্জ করবি? তোর আব্বা তো বাসাতেও নেই।”
স্বচ্ছ বিরক্ত নিয়ে বলে,
“আমি কি মেয়ে? আমায় কেন দেখতে আসবে?আজব!”
“পাগল। তুই অসুস্থ! তাই দেখতে এসেছে তুই কেমন আছিস। তুইও না। ”
স্বচ্ছ তখনও অসন্তুষ্টু। বলে,
“ উনাদের দেখাতে কি আমি সুস্থ হবো?যাদের দেখার তারাই তো দেখছে না। যেমন তোমার বর? সে তো আমায় একটা তোয়ালে পড়িয়ে দিয়ে চলে গেছে। আমার বউ আমায় ফ্রেশ করাবে বলে চলে গেছে। আজ অসুস্থ বলে সবাই আমায় পাত্তা দিচ্ছো না। হারে হারে মনে রাখছি আমি। ”
স্বচ্ছর মা চোখ ছোটছোট করে তাকাল। বলল,
“ সুহা? একটু দেখো না ছেলেটাকে চেঞ্জ করিয়ে দিতে পারো কিনা। বুঝোই তো আত্মীয়। তিহানদের ফেমিলি। না দেখা করলে বেয়াদবি বলবে। ”
সুহা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। সে তো চেঞ্জ করায়ই৷ তবে শুধ শার্ট। কিন্তু পেঁচানো তোয়ালে খুলে চেঞ্জ করাবে নাকি এখন? ছিঃ ছিঃ! সুহা মনে মনে একবার ভেবেই কেমন করে। ততক্ষনে অবশ্য স্বচ্ছর মা চলে গিয়েছে অনুরোধ করে কথাটা বলে। সুহা বিরক্ত হয়ে বলে,
“ একটা তোয়ালে পরে একটা মেয়ের সামনে বসে আছেন। লজ্জা লাগে না। ”
স্বচ্ছ কেমন করে যেন তাকায়। বলে,
“ এটা আব্বু করেছে। আমার দোষ নেই।আমি এক হাতে নিশ্চয় চেঞ্জ করতে পারব না তাই না? ”
সুহা এগিয়ে আসে। স্বচ্ছর শার্টে হাত দিয়ে বোতাম খুলে প্রথমে। বুক পিঠ মুঁছিয়ে দিতে দিতে বলে,
“আমার নামে আপনার আম্মুর কাছে বিচার দিচ্ছিলেন নাকি অভিযোগ যে ফ্রেশ করাব বলে করাইনি? ”
“ কোনটাই না। ”
সুহা সরু চোখে তাকায়। মুুছিয়ে দিতে দিতে পিঠ মুঁছানোর উদ্দেশ্যে কাঁধ বরাবর ঝুকল। মুহুর্তেই সুহার অল্প ভেজা খোলা চুলগুলো গিয়ে পড়ল স্বচ্ছর মুখেচোখে। এতোটা কাছে সুহাকে সে আজ প্রথম অনুভব করছে না। যখন থেকেই সে অসুস্থ হওয়ার পর সুহা এই কাজ করছে তখন থেকেই এই মুহুর্তটাতে সে খুব মনোযোগ দিয়ে সুহাকে অনুভব করে৷ তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে। আজও তাই। তবে চুলগুলো মুখচোখে পড়তেই চোখ বুঝে সে। মুগ্ধ হয়ে ঘ্রাণ নেয়। পরমুহুর্তেই কেমন স্বরে জানায় তার মুগ্ধতা,
“ একটা স্মেল তোমার চুলে সুহাসিনী। যদিও কোনদিন কোন মেয়ের চুলের ঘ্রাণ নেইনি তবে শুনেছি আমি। এখন মনে হচ্ছে এটা সত্যিই সুন্দর! ”
সুহা বিরক্তি নিয়ে তাকায়। স্বচ্ছর মুগ্ধতাতে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে সরে গিয়ে বলে,
“ চুলের কোন নিজস্ব ঘ্রাণ নেই ভাই৷ ওটা শ্যাম্পুর ঘ্রাণ। ”
স্বচ্ছ কেমন করে তাকায়। সুহা ততক্ষনে সরে দাঁড়িয়েছে।যাতে স্বচ্ছর মেজাজ বিগড়ে যায়। বিরক্ত গলায় বলে,
“ ভাই? কে ভাই ? ভাই হলে সারাক্ষন বউ বউ হয়ে ঘুরঘুর করছো কেন আমার আশপাশে? বলেছি আমি ঘুরঘুর করতে? ”
“আপনার কথা অনুযায়ী ঘুরঘুর করব নাকি?”
স্বচ্ছ ভ্রু বাঁকিয়ে শুধায়,
“ কার কথা অনুযায়ী করবে? ”
“সুহা কারো কথা অনুযায়ী চলে না। ”
“ ভালো!”
সুহা ছোট শ্বাস টানে। পরমুহুর্তে বলে,
“ উঠুন! আপনাকে একগাধা মেয়েলোক দেখতে এসেছে। তোয়ালে পরে গেলে অবশ্য বেশিই অ্যাটেনশন পাবেন। তবে আপনার আম্মু যেহেতু বলেছে সেহেতু চেঞ্জটা করিয়ে দেওয়াটা উচিত। ”
“ নাকি মেয়েগুলা আসবে এসে আমায় এই অবস্থায় দেখবে আর তাকিয়ে তাকিয়ে থাকবে তা সহ্য হবে না তোমার? ”
“ সুহার অতোটা খারাপ সময় আসেনি স্বচ্ছ।একটা সময় ছিল আপনাদের পাড়ার এত এত মেয়েদের থেকে আপনার রূপের প্রশংসা শুনেছি। এই পাড়ার অর্ধেক মেয়ে আপনার রূপে মোহিত আমি জানি তখন থেকেই। সুতারাং তখন যেহেতু সহ্য হয়েছে এখনও সহ্য হবে। ”
“ সব মেয়ে মোহিত অথচ তুমি ফিরেও চাও না। নিষ্ঠুর নিষ্ঠুর! ”
“ বেশি কথা বলেন। উঠুন।”
স্বচ্ছ উঠতে উঠতেই বলে,
“ এখন কি তুমি চেঞ্জ করিয়ে দিবে সুহাসিনী? ”
সুহা মাথা নাড়িয়ে শুধায়,
“ কেন? সমস্যা হবে ?”
” আমার তো এক হাত ভালো আছেই। দাঁড়াতে,হাঁটতে সবই পারি। তুমি কেবল একটু সাহায্য করলেই হবে। ”
“ আমি সাহায্য করব৷ কিন্তু তোয়ালে খুলবেন না একদম। কিংবা কোন ফাজলামো করবেন না। মে’রে দিব তাহলে। ”
সুহা কথাটা বলতেই স্বচ্ছ হাসে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
” খুললেও কি? তোমারই তো বর তাই না?অধিকার রাখো তুমি। ”
সুহার কান গরম হয়ে উঠে। উষ্ণ ধোঁয়া বের হয় যেন নাক মুখ দিয়ে। রক্তিম ঠেকে মুখটা। তবুও স্বচ্ছর কথার উত্তর করল না। নিশ্চুপ থেকে স্বচ্ছর প্যান্টটা হাতে নিল৷তারপর স্বচ্ছ বিছানায় বসতেই সুহার সাহায্য নিয়ে প্যান্টের দু পা ডুকিয়ে যখনই উঠে দাঁড়াতে নিল ঠিক তখনই আচমকা ঘটে গেল এক বিপর্যয়। সাদা তোয়ালেটা ডিলে হয়ে পড়ে গেল এক মুহুর্তেই ফ্লোরে। স্বচ্ছ মুহুর্তে চোখ গোল গোল করে তাকায় সুহার দিকে। মেয়েটা চোখ খিচে নিয়েছে। রাগে দুঃখে লজ্জায় রক্তিম হয়ে দুই হাত চেপে ধরে স্বচ্ছর গলায়।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
“ বলেছিলাম না তোয়ালে যেন না পড়ে। বেয়াদব, নির্লজ্জ লোক আপনি। কি করেছেন হুহ?”
স্বচ্ছ প্রথম দফায় কিঞ্চিৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও এই মুহুর্তে সুহার রক্তিম চোখ বুঝে রাখা মুখটা দেখে হাসি পায়। এভাবে চোখ খিচে রেখে কে রাগ দেখায় হু?তার বউই দেখাতে পারে। স্বচ্ছ হাসি চেপে ফের খোঁচাতে বলে উঠে,
“দেখে নিয়েছো? সত্যিই দেখে নিয়েছো সুহাসিনী? ”
সুহা আরেকটু জোরে চেপে ধরে স্বচ্ছর গলাটা। বলে,
“ নির্লজ্জ, বেহায়া পুরুষমানুষ! ”
স্বচ্ছ হাসে এবারে। বাম হাতে প্যান্ট টেনে কোমড়ে উঠিয়ে নিতে নিতে বলে,
“ নিষ্ঠুর! আমার অসুস্থতায় ও একটু মায়া নেই তোমার। ”
#চলবে…
#প্রেমের_সমর
#পর্ব_২৬
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
মাস খানেক পেরিয়েছে৷ স্বচ্ছ বর্তমানে সুস্থ। আর এই সুস্থ হওয়ার পর থেকেই বর্তমানে তার এক এবং এক মাত্র দায়িত্ব ঠেকেছে সুহাকে জ্বালানো। সুহাকে সামনে পেলেই তার কথা বলা বেড়ে যায়। সুহাকে রাগাতে যেন আলাদাই মজা।অপরদিকে সুহা কেবল তাকে অবহেলাই ঠেলে দিল৷ এতগুলো দিন পার হলো। তবুও স্বচ্ছ সুহার মন জয় করতে পারল না এই আপসোসে স্বচ্ছ কপাল চাপড়ায়। সুহা কেন তাকে কেবল অবহেলা করে এই দুঃখেরও শেষ নেই তার। তার মধ্যে যুক্ত হয়েছে তিহানের কাজিন রোহান। স্বচ্ছকে ম্যাসেজ দিয়ে দিয়ে বুঝাতে চাইছে যে সে যে কোন মূল্যেই তার সুহাসিনীকে তার থেকে কেড়ে নিবে। বিয়ে করবে। স্বচ্ছ অবশ্য পাত্তাই দিল এই ছাগলমতো ছেলেটাকে। ছাগল?ছাগল নাহলে কি সে অন্যের বউয়র পিছে দৌড়াত? স্বচ্ছ ঘড়ি দেখে। বেরিয়েছিল সে বাসার বাইরে। টানা দুইঘন্টা বাইক চালিয়ে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করার পরই হুট করেই তার ফোনে একটা ম্যাসেজ এল। ম্যাসেজটা ঐ ছেলেটারই। রোহানের। লিখেছে,
” বড়ভাই? নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন না আপনার এলাকায় প্রবেশ না করার? এবার আমিও দেখাব যে আপনার এলাকায় প্রবেশ করে আপনার বউ নিয়ে কিভাবে পালাই।একটা এক্সিডেন্টে আপনার বউ আপনার প্রতি মায়া দেখিয়েছে ঠিক কিন্তু ভালো তো বাসে নি বলুন? ”
স্বচ্ছর মেজাজ খারাপ হয় এমন ম্যাসেজ দেখে। বের হয়েছিল সে মন ফুরফুরে করতে। অথচ এই ম্যাসেজ দেখে মেজাজ ফুরফুরে হওয়া তো দূর তার মেজাজ বিগড়ে এল যেন। দাঁতে দাঁত চেপে ম্যাসেজের রিপ্লাইটা না করেই যখন রেখে দিচ্ছিল ঠিক তখনই দুটো ছবি এল। সুহা আর ঐ ছেলেটা অর্থ্যাৎ রোহান রেস্টুরেন্টে বসে আছে। ঠিক কি আলোচনা চলছে জানা নেই। তবে ছবিটা দূর থেকে কেউ তুলেছে। নিশ্চয়এই রোহান শয়তানই ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে সুহাকে নিয়ে গিয়েছিল, আর তারপরই কাউে দিয়ে দূর থেকে ছবিটা তুলিয়েছে৷ স্বচ্ছ মনে প্রাণে তাই বিশ্বাস করল। বিনিময়ে গা জ্বালানো ভঙ্গিতে টাইপ করল,
“ আমার বউ বেশি সুন্দর তো তাই অনেকেই আমার বউয়ের সাথে একটু রেস্টুরেন্টে খেতে পারলেও ছবি তুলে মেমোরি রেখে দেয়। বুঝতে হবে তো! স্বচ্ছর বউ বলে কথা!”
“ দুদিন পর রোহানের বউ হলে কি করবেন বড়ভাই? আরেকটা কথা শুনবেন? আমি কিন্তু তিহানদের ছাদে এখন। আপনার বউয়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছি! ”
রোহানের সাহস দেখে স্বচ্ছ অবাক হয় যেন। যে ছেলেটাকে ইচ্ছে মতো কেলিয়ে এসেছিল সে, হাত পা ভেঙ্গে রেখেছিল সে ছেলেই আবার তার মুখে মুখে কথা বলছে? সাহস কত এই ছেলের। স্বচ্ছ কল করে এবারে। ফোসফোস শ্বাস টেনে বলে উঠে শাসানোর ন্যায়,
“ মে’রে না হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছিলাম? বলেছিলাম না আমাদের এলাকায় যাতে না দেখি?ঠিকমতো ডোজটা পড়েনি তাহলে ব্রো? ওকে, তুমি যদি বলো এরচাইতেও কড়া ডোজের আয়োজন করতে পারি। নিতে পারবে তো? ”
তিহানের কাজিন নিহির তখন হালকা হেসে তাকায়। যেন স্বচ্ছর কথাটায় সে বিন্দুমাত্রও ভয় পেল না। উল্টো হেসে হেসে বলল,
“ প্রথমবার ভদ্র সেজেছিলাম বড়ভাই। কিন্তু এবারও যে ভদ্রতা দেখিয়ে মার খাব তেমনটা ভাববেন না। আপনি যেমন পুরুষ, আমিও তেমন পুরুষ।আপনার রক্ত গরম হলে আমার রক্তও শীতল নয়। আপনি যেমন ভালোবাসা দেখাচ্ছেন হুট করেই? আমিও তেমন দুই বছর যাবৎ ভালোবাসছি মেয়েটাকে। তাহলে বলুন?কার ভালোবাসার বয়স বেশি? ”
স্বচ্ছ মুহুর্তেই বলে উঠল,
“ তোর দুইবছরের ভালোবাসা, আর আমার চারবছরের বউ হয়। ”
ওপাশ থেকে রোহান তখন হেসে বলে,
” চারবছরের বউ ঠিক কিন্তু আপনি তো ভালোবাসেননি ব্রাদার। বরং কষ্ট দিয়েছেন। ভবিষ্যৎ এ যে দিবেন না নিশ্চায়তা আছে তার কোন? আসলে সত্যি বলি বড়ভাই? সুহা আসলে আপনার সাথে সুখী হবে না। আপনি ঠিক ওকে আমার মতো করে ভালোবাসতে পারবেন না। তাই আপনার কাছে ওকে ছাড়তেও আমি একমত হতে পারছি না। আরেকটা কথা বলি? এতদিন শুধু আপনি অসুস্থ ছিলেন বলেই সুহার দাদা বা সুহা কোন স্টেপ নেয়নি। শুধু মায়া দেখিয়েই চুপ ছিল। ”
স্বচ্ছর এই পর্যায়ে এত বেশি মেজাজ খারাপ হয় ফোনটাই এক আঁছাড় মেরে ফেলে খসখসে রাস্তার জমিনে। ভাগ্য ভালো! দামী আর ভালো মানের ফোনটা বলে কিছু হলো না। স্বচ্ছর রাগ কমল না। রাগে হাঁসফাস করতে করতেই স্বচ্ছ বাসায় ফিরল।অথচ বাসায় ফিরেই স্বচ্ছর মেজাজ দ্বিগুণ খারাপ হলো। বাসায় সুহাকে না পেয়ে হুড়মুড় করে সর্বপ্রথম সে ছাদেই গেল। দেখা গেল ছাদের এক কোণে সুহা দাঁড়ানো। অপর ছাদ থেকে কথা বলছে তিহানের সেই কাজিনটাই। স্বচ্ছর গায়ের রক্ত যেন টগবগিয়ে উঠে। সুহার কি দরকার ঐ ছেলের সাথে কথা বলার? কি প্রয়োজন ঐ ছেলের সাথে আড্ডা দেওয়ার? স্বচ্ছ কপাল কুঁচকে চেয়ে থাকে। প্রায় মিনিট পাঁচেক যাবৎ সুহার কথা বলার ধরণ খেয়াল করছিল সে নিরবে। কিছু একটা নিয়ে হেসে হেসে কথা বলছিল। কিন্তু যখনই সুহাকে একটু জোরেই হেসে উঠতে দেখল স্বচ্ছর পায়ের রক্ত মাথায় উঠল যেন।দু পা বাড়িয়ে ওখানে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েই সুহাকে বলে উঠে,
“ এখানে এসে অন্য ছেলের সাথে আলাপ জুড়েছো কেন? ভালোবাসো নাকি ছেলেটাকে? এই কারণেই বুঝি এত অবহেলা আমার প্রতি?দয়া দেখাচ্ছিলে এতকাল আমার প্রতি? বলেছিলাম? বলেছিলাম দয়া দেখাতে? ”
সুহা স্তব্ধ হয়ে তাকায়। স্বচ্ছর কথা বলার ধরণটা তার পছন্দ হলো না একটুও।কেন তাকে এভাবে অন্য একটা ছেলের সামনে বলবে? কেন এভাবে শোনাবে কথাগুলো?স্বচ্ছ থাকতে সে অন্য কোন ছেলেকে ভালোবেসেছিল? ভালোবাসবে? স্বচ্ছ বুঝে না যে সুহা তাকে ভালোবাসে? হয়তো একটু রাগ দেখায়,অবহেলা দেখায় কিন্তু এই ছেলেটাকে তো সে ভালোবাসে। হৃদয়েে সবটুকু দিয়েই ভালোবাসে।সুহা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠে,
“ এমন করছেন কেন আচমকা? সমস্যা কি? রেগেই বা আছেন কেন ?”
স্বচ্ছ আচমকা এই উত্তরটা পেয়ে রাগী চাহনিতে তাকায়৷ তিহানের সেই ড্যাবড্যাব চেয়ে থাকা কাজিনটার সামনেই এভাবে রেগে কথা শোনানো উচিত হলো সুহাসিনীর? এটা বলা কি উচিত হলো? স্বচ্ছ রাগে নাক লাল করে। হাত শক্ত করে উত্তর দেয়,
“ ভেবে বলছো? আমি কিন্তু আবারও জিজ্ঞেস করছি, ভালোবাসো এই ছেলেকে? কি আছে ওর কাছে? আমার থেকেও দেখতে সুন্দর এই ছেলে? ”
ফের আবার ও রাগান্বিত স্বরে জবাব পেয়ে সুহা বিরক্ত হয়৷ কি করেছে সে? বিনা কারণেই তার সাথে এভাবে খারাপ ব্যবহার কেন করবে স্বচ্ছ? সুহা শক্ত চাহনিতে তাকায়। উত্তরে বলে,
“ দেখতে সুন্দর হলেই যে ভালোবাসা যায় তা কে বলল আপনাকে? দেখতে অসুন্দর হলে বুঝি ভালোবাসা যায় না? ”
স্বচ্ছ তখনও রেগে।আর সুহার কথাটা যেন এই পর্যায়ে স্পষ্টভাবেই তার কাছে জানান দিল যে সুহা এই ছেলেটাকে ভালোবাসে৷ সত্যিই ভালোবাসে। স্বচ্ছর দাঁত কিড়মিড় করে। সুহার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেই শুধায়,
“ কথা ঘুরাবে না সুহাসিনী! ”
সুহা তখন টানটান স্বরে জানায়,
“ আপনার কি মনে হচ্ছে? এক বাসার বউ হয়ে ঐ বাসাতে থেকেই আমি অন্য ছেলের সাথে পরকিয়া করব? ”
স্বচ্ছ এই পর্যায়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে৷ অবহেলা নিয়ে বলে,
“ করতেই পারো। হাজার হোক আমাকে ডিভোর্স দিয়ে এই বেয়াদব, ক্যারেক্টারল্যাস ছেলেটার সাথেই তোমার দাদাজান তোমার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ”
সুহার তখনও রাগ লাগে। অকারণে তাকে ভুল বুঝবে কেন এই লোক? সে তো কিছু করেনি। সুহাকে কেউ বিনা কারণে দোষারোপ করলে রাগ লাগে। এবারও রাগ লাগছেে।উত্তর দেয়,
“ তো? এটা দ্বারা কি বুঝাতে চাইছেন? ”
স্বচ্ছ গম্ভীর গলায় উত্তর করে,
“ কিছুই না। এখন থেকে তুমি এক্ষুনি যাবে শুধুু এইটুকু জানি। ”
সুহার তখন চোখ টলমল করে অতিরিক্ত রাগে। জোরে শ্বাস টেনে জানায়,
“ যাব না। কি করবেন? ”
এই পর্যায়ের স্বচ্ছর চাহনি ভয়ানক ঠেকল। উত্তর আসল,
“ আঁছাড় দিব সুহা। যাবে কিনা? ”
আচমকা স্বচ্ছর মুখে সুহাসিনী নামের বদলে সুহা নামটা বিশ্রী ঠেকল সুহার কাছে৷ জঘন্য লাগল। সাথে এক পাহাড় কষ্ট যেন আঘাত করল এক মুহুর্তেই। অথচ স্বচ্ছ অপেক্ষা করল না। সুহাকে কোলে তুলে নিল এক মুহুর্তেই। তারপর ঝটফট পা চালিয়ে চলে যেতে নিয়েও ফের আবার রোহানের দিকে ফিরে বলল,
“ তোকে বলেছিলাম না এই এলকায় যাতে তোকে আর না দেখি? কেন এসেছিস? অন্যের বউ দেখতে? শা’লা ক্যারেক্টারলেস পুরুষমানুষ। অতই যদি ইচ্ছে হয় নিজের বউ আন, বিয়ে কর। আরেকজনের বউ কেন টানাটানি করছিস বল? ”
রোহান হাসে। ঠোঁট এলিয়ে বলে,
“ কারণ আপনার বউটাকেই যে প্রাণ দিয়ে বসে আছি বড়ভাই। আপনি এতকাল পর কেনই বা দেশে আসলেন বলুন? ”
স্বচ্ছ রেগে বলে,
“ না আসলে তো তোর লাভ হতো শা’লা, কু’ত্তা কোথাকার।
রোহান বলে,
“ শিক্ষিত মানুষের ল্যাঙ্গুয়েজ এমন হয়? ”
“ তোর মতো অশিক্ষিতের কারণে মুখ খারাপ করছি। নয়তো করতাম না। ”
কথাটা বলেই স্বচ্ছ পা বাড়ায়। সুহা এতোটা সময় নিশ্চুপ থেকে এসব দেখছিল। স্বচ্ছর মুখচোখ দেখে রাগের পরিমাপটুকু বুঝতে পারল বলেই আগ বাড়িয়ে কিছু বলেনি দুইজনের মধ্যে। পাছে দুইজনের মধ্যে যদি আবার ঝামেলা বেঁধে যায়?স্বচ্ছ সুহাকে নিয়ে বাসার সবার সামনে দিয়েই রুমে নিয়ে এল। কোল ছেড়ে নামিয়ে বসাতেই সুহা শান্ত গলায় শুধাল,
“ যে রিয়েক্টটা আপনি করেছেন তেমন রিয়েক্ট করার মতো কিছুই ছিল না সেখানে। এটা একটা অহেতুক সিনক্রিয়েট।”
স্বচ্ছ হাত রাখে সুহার চিবুকে। দৃঢ় চাহনিতে তাকিয়ে থেকে উত্তর করে,
“ অহেতুক নয়। ”
সুহা ফের বলে,
“ তাহলে এই সিক্রিয়েটটা কি যৌক্তিক মনে হচ্ছে আপনার? ”
স্বচ্ছ ছোট শ্বাস টানে। তার এই মুহুর্তে সুহাকে বিশ্বাস হচ্ছে না। বিশ্বাস হচ্ছে না সুহা তাকে ভালোবাসে। হতেই পারে সুহা তার প্রতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। চারবছর কষ্ট পেয়েছে। কম তো নয়। প্রতিশোধ নিতেই পারে। স্বচ্ছ বৃদ্ধা আঙ্গুলি সুহার চিবুকে বুলাতে বুলাতেই ক্রুর হাসে৷ বলে,
“ অযৌক্তিক বোধ হচ্ছে না। সুহাসিনী? সরাসরি জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি আমায় চাও?আমায় সত্যিই চাও? ”
সুহা এই পর্যায়ে শান্ত চাহনিতে তাকায় স্বচ্ছর চোখে। আজকের স্বচ্ছ একেবারে ভিন্ন। আজকের স্বচ্ছকে চালাক লাগছে। অন্যদিনে স্বচ্ছ বোকা, বাচাল, সুহাকে চোখ বন্ধ করে ভালোবাসে এমন এক পুরুষ। সুহা চোখ বুঝে। বলে,
“ কি মনে হচ্ছে আপনার? ”
স্বচ্ছ শক্ত স্বরে জানায়,
“ আমি আন্সার চেয়েছি সুহাসিনী! ”
“ জানি না। ”
স্বচ্ছ এবারে আঙ্গুল রাখে সুহার চোখের পাতায়। বুলাতে নিয়ে বলে,
“ ওকে ফাইন, ঐ ছেলেকে ভালোবাসো? ”
সুহা চোখ মেলে তাকায়। উত্তরে বলে,
“ ঐ ছেলেকে ভালোবাসলে আমি নিশ্চয় আপনার জন্য এখানে পড়ে থাকতাম না স্বচ্ছ। ”
স্বচ্ছ তাচ্ছিল্য করে হাসল এবারে। পাশে বসে বলে,
“ ভুলাচ্ছো আমায়? ”
“ কেন? ”
স্বচ্ছ উত্তরে বলে,
“ তুমি ছেলেটার সাথে দেখা করেছিলে গতকাল বিকালে রেস্টুরেন্টে। কি নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলে? আরেকটা কথা কি জানো? আমাদের সেদিনকটার এক্সিডেন্টটা সত্যিই প্ল্যানমাফিক হয়েছিল! কিন্তু কার প্ল্যানমাফিক তা কি তুমি জানে সুহাসিনী? ”
সুহা বিস্ময় নিয়ে তাকায়। সত্যিই?সত্যিই প্লানমাফিক? কিসব বলছে? সুহা কি করে জানবে? সুহা উত্তর করে,
“ কে? ”
স্বচ্ছ হেসে শুধায়,
“ তার মানে তুমি জানো না? যাক! ভাগ্যিশ! তুমি জানো না। ”
#চলবে….