#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৩১
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
সুহার পরনে একটা হালকা রং এর শাড়ি। আঁচলটা কোঁমড়ে গুঁজে রাখা। স্নিগ্ধ তখন তার দাদীমার সাথে খেলা করছে। সুহা তখন কাজে ব্যস্ত। স্নিগ্ধর কাঁথাগুলো ধুঁয়ে আনল। তারপর এক হাতে কাপড়ের বালতি নিয়ে এগোতে লাগল ছাদের উদ্দেশ্যে। অতঃপর হুট করেই সামনে পড়ল স্বচ্ছ। ছাদ থেকে নেমে আসছিল। পথে সুহাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাল সুহার দিকে। কোঁমড়ে আঁচল গুঁজে রাখার দরুণ দৃশ্যমান হলো পেটের কিছু অংশ এবং মেদহীন কোমড়। স্বচ্ছ তাকায়৷ সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে একদম সুহা যে সিঁড়িটায় দাঁড়িয়ে সে সিঁড়িটার উপরের সিঁড়িটায় এসেই সামনাসামনব দাঁড়াল। তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে শুধাল,
“ প্রথমে হাজব্যান্ডকে পাত্তা দিলে না, পরবর্তীতে হাজব্যান্ডের থেকে পাত্তা না পেয়ে এখন কী অন্যদের পাত্তা পেতে চাইছো তুমি সুহাসিনী? অন্যদের পাত্তা পেতে হলেও তোমায় এতোটা নিচে নামতে হবে কেন? তুমি যথেষ্ট সুন্দরী সুহাসিনী। ”
সুহা কপাল কুঁচকাল। শুধাল,
“মানে? ”
স্বচ্ছ এবারে মুখ এবং চাহনি কঠিন করল। সিঁড়ির আরো একধাপ নেমে একদম সুহার বরাবর দাঁড়াল। অতঃপর সুহাকে একদম দেয়ালে ঘেষিয়ে রেখে এক হাত রাখল দেওয়ালে।অন্য হাত পরমুহুর্তেই গিয়ে ঠেকল সুহার কোঁমড়ে। খিচে ধরে আঁচলটা টেনে নিল সে। অতঃপর বলল,
“ এভাবে পেট পিঠ দেখিয়ে ছাদে যাচ্ছো? কি কারণে? আমাকেও জানাও। ”
সুহার কেন জানি না কান্না আসে। সে যথেষ্ট শক্ত মনের মেয়ে। তবুও স্বচ্ছর মাঝে কোন একটা পরিবর্তন অবশ্যই লক্ষনীয়। স্বচ্ছ তার সাথে কথা বলছে, বাচ্চা কোলে নিচ্ছে তোর কোল থেকে, একসাথে ঘুমোচ্ছে তবুও কি যেন একটা আগের স্বচ্ছর মতো দেখাচ্ছে না সে। আগের স্বচ্ছ কি কখনো ভাবতে পারত সুহা অন্য লোকের মনোযোগ পেতে পেট পিঠ দেখিয়ে বেড়াচ্ছে? এখনকার স্বচ্ছও কি আসলেই মন থেকে ভেবেছে সবটা? নাকি মুখে বলেছে কেবল?সুহা নিরব চাহনিতে তাকিয়ে বলল,
“বাচ্চার কাঁথা ধুঁয়ে দিয়েছিলাম শুধু স্বচ্ছ৷ কাপড় কোঁমড়ে গুঁজে কাজ করতে সুবিধা লাগছিল তাই… ”
স্বচ্ছ মুহুর্তেই বলল,
“ বাচ্চার কাঁথা ধোয়ার জন্য লোক আছে না? তুমি কেন?”
“ খালা আজ আসেনি। তাই। ”
“ গুড। কিন্তু এভাবে নেক্সটটাইম থেকে যেন আর না দেখি সুহাসিনী।”
সুহা অনেক যান্ত্রিক দৃষ্টির মতো তাকিয়েই বলল,
“ হু, মনে থাকবে। ”
” গুড!”
এটুকু বলেই স্বচ্ছ চলে যেতে লাগল সিঁড়ি পেরিয়ে। সুহা মুহুর্তেই বলে উঠল,
“স্বচ্ছ? ”
স্বচ্ছ ফিরল। উত্তর করল,
“ হু। ”
সুহা কান্না দমিয়ে ফের বলে,
“ স্বচ্ছ ! ”
“বলো সুহাসিনী৷ ”
“ আমার প্রতি এত রাগ কেন পুষছেন? কেন? ”
আকস্মিক সুহার কন্ঠে স্বচ্ছ হকচকিয়ে উঠে। মেয়েটা কান্না করর দিবে হয়তো। বহুকষ্টে দমিয়ে রেখে বোধহয়৷ সে বলল,
“ কে বলল? ”
সুহা টলমলে চোক নিয়েই বলে উঠল দৃঢ় স্বরে,
“ খুব বেশি ভুল না করলে আমায় আপনি সহ্যই করতে পারছেন না। ”
স্বচ্ছ তাকায়৷ টলমলে লাল টকটকে চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে তার হৃদয় কাঁপে। সে কাঁদাতে চায় না মেয়েটাকে। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,
“ যাও বাচ্চার কাঁথাগুলো ছাদে দিয়ে এসো। ”
এটুকু বলেই স্বচ্ছ ফের পিছু ঘুরতে নিল। সুহা কাপড়ের বালতিটা রেখে এবারে হাত টেনে ধরল। বলল,
“ দাঁড়ান। ”
“ দাঁড়ালাম সুহাসিনী।”
এরপর পরই সুহা স্থান কাল ভুলে আঁকড়ে ধরল স্বচ্ছর শার্ট। কান্নায় ফুঁফাতে নিয়েও পা উঁচিয়ে আঁকড়ে ধরল স্বচ্ছর ঠোঁটজোড়া। দুই হাত রাখল স্বচ্ছর কাঁধে। স্বচ্ছ বোধ হয় মনে মনে মজাই পেল এমন কান্ডকারখানায়৷ শুধু দাঁড়িয়ে থেকে দেখে গেল প্রিয় নারীর পাগলামো। সুহা ঠোঁট ছেড়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতেই স্বচ্ছর শার্টের কলার আঁকড়ে ধরে দৃঢ় স্বরে জানাল,
“ আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে, বহুবার কষ্ট দিয়েছি আমি আপনাকে। এড়িয়ে গিয়েছি, ভুল বুঝেছি। আপনার মতো ভালোবাসতে পারিনি,তাই বলে এভাবে আমার প্রতি বিতৃষ্ণা দেখাবেন সময়ের পর সময় ধরে? বিরক্তি দেখাবেন? কেন? আমার প্রতি রাগ অভিমান সব মানতে পারব, কিন্তু আমি এটা মানতে পারছি না।”
বিতৃষ্ণা, বিরক্তি? সুহার প্রতি? মোটেই না! সুহা নিজেও হয়তো জানে না তার প্রতি স্বচ্ছ কখনোই বিরক্ত হতে পারবে না। কখনোই না৷ স্বচ্ছ উত্তর করল হতাশ গলায়,
“ ভুল স্থানে, ভুল সময়ে আমায় এভাবে লক্ষভ্রষ্ট না করলেও তো পারতে সুহাসিনী। ”
সুহা কথার অর্থ বুঝার চেষ্টা করল না। মস্তিষ্ক এটাতেই তখন বিশ্বাস করে আছে যে স্বচ্ছ তার প্রতি বিরক্ত এবং একাধারে বিরক্তিই প্রকাশ করে যাচ্ছে। ফের বলল,
“ আমায় এভাবে অসহ্য হওয়া দৃষ্টিতে দেখার অধিকার আপনার নেই স্বচ্ছ। বউ হই আপনার! আপনার উচিত আমার দিকে সর্বক্ষন মুগ্ধ হওয়া। অথচ আপনার চোখে মুখে ফুঁটে উঠছে বিরক্তি। ”
স্বচ্ছ হাসল এবারে। আশপাশে এতক্ষন চোখ বুলিয়ে কেউ আসছে কিনা খেয়াল রাখলেও এখন আর পরোয়া করল না। বউকে কোলে তুলে নিল এক মুহুর্তেই। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“এটা ভুল জায়গা সুহাসিনী, তারচেয়ে বরং আমরা রুমে যাই? তোমার সব হিসেব মেটানো যাক হুহ? ”
.
সিয়ার দেওয়া খিঁচুড়িটা সাদ আরাম করেই প্লেটে নিয়ে মুখে তুলল। অতঃপর সবটা খিঁচুড়ি শেষ করে চিৎ হয়ে শুল খাটে। ভাবল অনেক কিছু। সে কি কোনভাবে সিয়ার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে? হয়তো! রাহার পরিবর্তে আজকাল সে সিয়াকে নিয়ে ভাবছে। টুকটাক হিংসে কাজ করছে নিলয়ের প্রতি। অল্পস্বল্প রাগ জমছে সিয়ার প্রতিও! সাদ ছোটশ্বাস ফেলে। কিন্তু এই সম্পর্কেরও তো কোন ভবিষ্যৎ সে দেখতে পায় না। সিয়াকে নিয়ে ভাবারও যে সাহস নেই তার। এভাবে দুর্বল হওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে? দুর্বলতাটাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত? মুহুর্তেই সাদের মস্তিষ্ক জানাল, নাহ! কারণ রাহার মতো সিয়াও উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে৷ উল্টোদিকে সাদ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। এখনো হাতে কোন শক্তপোক্ত জব নেই, ভালো বেতন নেই। নিজের পরিবারে টাকা দিয়ে বাকি টাকা দিয়ে নিজে চলতেই তার হিমশিম খেতে হয়। কি করে হাত বাড়াবে আবার উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ের দিকে। সাদ মনে মনে ভেবেই নিল সে সিয়াকে নিয়ে আর ভাববে না। চিন্তা করবে না।দ্বিতীয়বার একই ভুল সে করবে না। অসম্ভবের প্রতি হাত বাড়িয়ে লাভ নেই। উঠে সিয়ার দেওয়া বক্সটা পরিষ্কার করে রেখে দিল সে। ঠিক সে সময়ই কোথায় থেকে ছুটে এল নিলয়। দ্রুত জানতে চাইল,
“ ব্রো ঐ বক্সটা কই? যেটা সিয়াপাখি দিয়ে গেল আমার জন্য? ”
সিয়া এই সংবাদটা নিলয়কে বলেও দিয়েছে? বাহ! বেশ ভালোই ভাব জমেছে!
তাছাড়া সিয়াপাখি? হোয়াট ইজ সিয়াপাখি? সাদের বিরক্ত লাগল। সাথে তীব্র রাগ! ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ সিয়াপাখি? কোন দেশের পাখি? ডানা থাকে? ”
নিলয় হেসে বলে,
“ আরেহ তোমার স্টুডেন্ট সিয়া মামাহ! ”
” ওকে পাখি ডাকার মতো কোন বৈশিষ্ট্য পেয়েছিস এখনও? ”
নিলয় হুট করেই শুধাল,
” এভাবে কথা বলছো কেন ? ”
সাদ হুট করেই শক্তোপোক্ত চাহনি রেখে নিলয়ের মুখোমুখি বসল৷ গম্ভীর কন্ঠে জানাল,
” নিলয়? সিয়ার থেকে দূরে থাকবি এবার থেকে। তোরও ভালো হবে, সিয়ারও ভালো হবে। ”
নিলয় মুহুর্তেই আপসোসে ফেটে পড়ল। জানাল,
“ এটা কি বলছো মামা? আমার ফার্স্ট লাভ! সম্ভব নাকি দূরে থাকা?”
সাদ বিদ্রুপ হেসে শুধাল,
“ ওহ আচ্ছা তাই নাকি? বাকি সবাই কি তোমার লাস্ট লাভ ছিল নিলয়?”
“ বাকি সবাই এর প্রতি আমার ফার্স্ট লাভ ফার্স্ট লাভ ফিল হয়নি। কিন্তু এইবার সত্যিই এটা ফার্স্ট লাভ! ”
“ আমি শুনেছি তুমি এটা প্রত্যেকবারই বলেছো।এবং মেয়েগুলোকে রুম অব্দি নিয়ে যাওয়ার পর ছেড়ে দিয়েছো। দেখো, সিয়া খুবই সেন্সেটিভ মাইন্ডের একটা মেয়ে।তুমি যদি ভালো ছেলে হতে তাহলে ওর পাশে তোমাকে দেখে আমি এপ্রেশিয়ট করতাম।”
নিলয় হুট করেই মুখ টানটান করে শুধাল,
“ সম্ভব না দূরে থাকা। এতবার বলিস না আর। সম্ভবই না। ”
সাদ এবারে নিলয়ের কলার চেপে ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে তীব্র রাগ নিয়ে বলল,
“ সম্ভব। এটাই ফার্স্ট, এটাই লাস্ট বলছি। ওর থেকে দূরে থাকবি নিলয়।”
নিলয়ও শুধাল,
“ তোর কথা মতো?”
সাদ ও ক্ষেপে বলল,
“ হ্যাঁ, আমার কথা মতোই। ”
.
ঐ ঘটনার পরের পুরোটা সময়ই আবির গম্ভীর রূপ ধারণ করে থাকল। ছুটির দিকে তাকাল না অব্দি। বেরও হলো না বাসা থেকে। ইভেন্টে অংশগ্রহণ ও করল না। ছুটি অবাক হয়ে শুধু চেয়ে চেয়ে থাকে। বহুবার চেষ্টা করেছে এই পুরুষটির মনোযোগ আকর্ষনের, মান ভাঙ্গানোর। কিন্তু পারল না। ছুটির মন খারাপ লাগে যেন। অতঃপর রাতেও দেখা গেল আবির নিজে খেয়ে অন্য রুম টাতেই ঘুমিয়ে পড়ল। ছুটি অপেক্ষা করল, ভাবল আবির আসবে এই রুমে। অথচ এল না। ছুটি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়েই থাকে। এতোটা আঘাত তো সে করতে চায়নি মানুষটাকে। কোনভাবেই না। ছুটির কষ্ট লাগে।মান ভাঙ্গানোর সর্বশেষ উপায় হিসেবে সে একটা লাল শাড়ি জড়াল শরীরে। ভাবল শাড়িতে তাকে দেখেই এই পুরুষটি আর রেগে থাকবে না। তাই তো টিপটিপ করে পা ফেলে ওই রুমের দরজাটা ঠেলে নিতেই দেখা গেল আবির শুঁয়ে আছে শরীর টানটান করে। বোধহয় ঘুমিয়েও গেছে। ছুটি পা এগোয়। তারপর বিছানায় এসে ধীরেসুস্থেই গুঁটিশুঁটি হয়ে শুঁয়ে পড়ে আবিরকে জড়িয়ে নিয়েই। একদম বুকের মধ্যিখানে অবস্থান করল যেন তার মাথা।তাকিয়ে থাকে আবিরের গলার বিশেষ অংশ, অ্যাডামস অ্যাপলের অংশটায়।পরক্ষণেই হাত এগিয়ে ছুঁয়ে নিল আবিরের গলা, অ্যাডামস অ্যাপল! আঙ্গুল বুলায়। আবিরের ঠোঁট তখন আপনাআপনিই বাঁকা হয়ে আসে ছুটির স্পর্শ পেয়ে। তখনও তার চোখ বুঝা। এমন না যে সে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। ঘুমানোর ভান করছিল কেবল। আবির চোখ খুলে না। আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করে ছুটি কি করে দেখার জন্য। ছুটি ততক্ষনে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। প্রতিদিন যেভাবে আবির তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় সে অবস্থানেই উল্টোদিক ঘুরল। পিঠটা তখন আবিরের বুকে ঠেকল। আর আবিরের হাতটা রাখল নিজের উম্মুক্ত উদরের অংশটায়। অতঃপর অনেকটা সময় সে ঘুমানোর চেষ্টা করে সেভাবেই। আর অন্য দিকে আবির আড়াল হতে দেখছিল মেয়েটার কার্যকলাপ। পরনে শাড়িও জড়িয়েছে।সম্ভবত এটা তার রাগ ভাঙ্গিয়ে তাকে ফাঁসানোর দ্বান্ধা মেয়েটার। আবির ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলাল। ইচ্ছে হলো ছুটিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে কয়েকটা চুমু বসাতে। কিন্তু সম্ভব হলো না। যার দরুণ ঘুমানোর ভান করে মুখটা একটু ঘেষে রাখল ছুটির ঘাড়ে। উষ্ণ পুরু ঠোঁটজোড়া একবার ছোঁয়াল। ছুটি ভাবল এটা ঘুমন্ত আবিরের কাজ।হয়তো খেয়াল নেই। ঘাড় কাঁত করে তাকিয়ে পরখ করল। পরমুহুর্তেই কি বুঝে ফিসফিস করে ডাকে,
“ আবির ভাই, আবির ভাই? শুনছেন? ঘুমিয়ে গেছেন? ”
অন্য বার ভাই ডাকলে যেমন আবির রেগে বসে আজ তেমন কিছুই হলো না। ছুটির উপর রাগ দেখাল না।শুধু চোখ খুলে নিজের হাতটা ছুটির উদর থেকে সরিয়ে রাখল। কিছুটা দূরত্ব রেখে দূরে সরল। ছুটি ভেবেছিল এই লোক হয়তো ভাই বলা নিয়ে রাগ দেখাতে হলেও কথা বলবে। অথচ বলল না। তাকাল দৃষ্টি সরু করে। ছুটি উল্টো ঘুরে তার দিক হয়ে শুধাল,
“ আগে না আপনার জড়িয়ে না ধরলে হতে না? আজ দূরে সরে যাচ্ছেন? আমায় একটু জড়িয়ে ধরুন না আবির ভাই। ঘুম আসছে না আমার। আমার সম্ভবত আপনার অবহেলায় নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে। আমায় একটু জড়িয়ে ধরুন , আবির ভাই! অনুরোধ করছি। ”
কি গভীর আকুতি। আবিরের ইচ্ছে হলো জড়িয়ে ধরতে। আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে মেয়েটাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলতে। অথচ করল না সে তা। নিরব দৃষ্টি ফেলে তাকাল কেবল।
#চলবে…
#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৩২
লেখনীতেঃঅলকানন্দা ঐন্দ্রি
ছুটিকে এক সমুদ্র অবহেলা উপহার দিয়ে আবির অন্য দিকেই মুখ করে ঘুমাল। কিন্তু বারবার এই মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছে মানাতে না পেরে হতাশ হলো। ভাবল ছুটি ঘুমিয়ে গেলে সে সুযোগ জড়িয়ে ধরবে। অথচ ছুটি ঘুমাল না। কেমন ফ্যালফ্যাল করে আবিরকে চেয়ে চেয়ে দেখছে। আবির দুইতিনবার যতবারই মুখ ঘুরিয়ে ছুটি ঘুমিয়েছে কিনা তা দেখার জন্য তাকিয়েছে ততবারই চোখে পড়েছে ছুটির সে অসহায় চাহনি। আবিরের নিজেরও বোধহয় খারাপ লাগল। নিজের ভেতরে ইচ্ছেকে আর এই মেয়ের এমন চাহনি ঠেকাতে সে হঠাৎই উঠে দাঁড়াল। এই রুম ছেড়ে আগের রুমেই গিয়েই শুঁয়ে পড়ল। বিড়বিড় করে বলল,
“ আস্ত একটা যন্ত্রনা আমার এই মেয়েটা। আমায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করতে আর কিছুর প্রয়োজন নেই, এই একটা মেয়েই যথেষ্ট! ”
অন্যদিকে ছুটি ওখানে পড়ে থাকল অবহেলিত কোন জড়বস্তুর ন্যায়। সে বিশ্বাস করতে পারল না যেন আবিরের এভাবে চলে যাওয়াটা৷। প্রত্যাখান করল তাকে? এভাবে? সে বেহায়ার মতো এই ঘরে শাড়ি পরে এল, জড়িয়ে ধরল, তবুও মন গলল না? ছুটির কান্না পায় ভীষণ। উঠে গিয়ে একবার ও রুমের দরজাও ঘুরে আসে সে। আবির বিছানায় শুঁয়ে আছে! নিষ্ঠুর! নিষ্ঠুর! ছুটি বার কয়েক বিড়বিড় করে ফের এখানে এসে বসে থাকল থমথমে ভাব নিয়ে। অতঃপর যখন কেঁদে ফেলল বাচ্চা মেয়ের মতো ঠিক তখন গাঢ় গম্ভীর স্বরে আওয়াজ আসল,
“ আর দুই মিনিটও যদি তোকে জেগে থাকতে দেখেছি ছুটি, সোজা বাসা থেকে বের করে রাস্তায় ফেলে আসব৷ ”
এইটুকু বলেই ফের পাশে শুয়ে পড়ল আবির। ছুটি তাকায়। একবার ও রুম, একবার এ রুম করছে কেন? চোখের কান্না আটকানোর চেষ্টা চালিয়ে বলে,
” আমায় এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন? কি কঠিন অপরাধ করেছি আমি? ”
ফের আবার বলল সে,
“ তখন দূরে সরিয়ে দিয়েছি বলে? ওভাবে আপনার কাছে টেনে নেওয়ার মাঝে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি বলে এমন করছেন?”
এইটুকু বলেই আবিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ল মেয়েটা। আবিরকে জড়িয়ে ধরার প্রচেষ্টা চালিয়ে কান্নারত মুখটা আবিরের বুকে লেপ্টে রেখে বলে উঠল,
“ আপনি যা তখন চেয়েছিলেন তা আমি এখন চাইছি।শাড়ি পরেছি, কাছ ঘেষছি আপনার। বুঝতে পারছেন না? কাছে টানছেন না কেন আমায়? আপনার স্পর্শ চাইছি, প্রেম চাইছি,আপনাকে চাইছি আবির ভাই। এড়িয়ে যাবেন না আমায়। আমার কষ্ট হয় আপনার এমন আচরণে। ”
আবির সরাতে নিল ছুটিকে। ছুটি এবার ছাড়ল না। বরং আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে আবিরের জেগে থাকা অবস্থাতেই মুখ উঁচিয়ে বলে উঠল,
“ আপনি কি কোন ভাবে আমার প্রতি আর ইন্টারেস্টেড নন? অন্য কাউকে পছন্দ হয়েছে? তাই এমন করছেন? ”
আবির ভ্রু বাঁকায়। হালকা একটু রাগ দেখালেই বউয়ের প্রতি তার ইন্টারেস্ট সব হারিয়ে যাবে? এই ছুটির প্রতি? সম্ভব? শান্তিতে একটু রাগও দেখাতে পারবে না সে?আবির বড্ড হতাশ! নারীমন! এই যে অল্প এতটুকুতে ছুটি এতদূর পর্যন্ত ভেবে ফেলছে এর দায় সে কাকে দিবে? আবির শক্তপোক্ত ভাবে সেভাবে থেকেই গম্ভীর গলায় বলল,
“ তোকে প্রেম দিয়ে, ভালোবেসে ছুঁয়ে তোর বিরক্তির কারণ হতে চাইছি না। ঘুমা। ”
ছুটি ছাড়ল না। আবিরকে খামচে ধরে রেখে মুখ ছোঁয়াল আবিরের বুকে। নাক ঘষে আবিরের গলার কাছটায় আচমকা ঠোঁট ছোঁয়াল সে। বলল,
“ আমি আপনার ছোঁয়াতে বিরক্ত হই না। ”
আবিরের হাসি পেল। ঠোঁট বাঁকা হতে নিল। ইচ্ছে হলে ছুটিকে জ্বালাতে। কিন্তু বর্তমান রাগ অভিমান দেখাতে গিয়ে তা আর পেরে উঠল। তবুও গম্ভীর হয়ে বলল,
“ কি হোস তাহলে? ”
ছুটি এর সঠিক উত্তরটা দিতে পারল না। সম্ভবত সে নিজেও জানে না আবিরের ছোঁয়াতে তার কি হয়ে যায়। এক মিষ্টি অনুভূতি! মুখে বলল,
“ জানি না। ”
আবির হাসল মনে মনেই। উপরে মুখ গম্ভীর করে বলে,
“ ঘুমা বোকাপাখি। ছাড় আমায়। ”
ছুটি ঘুমাল না। আগের থেকেও শক্তপোক্ত ভাবে জড়িয়ে আছে আবিরকে। আবির ভেতরে ভেতরে এই জড়িয়ে ধরাটায় বড্ড শান্তি অনুভব করলেও উপরে উপরে শুধাল,
” এভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে আছিস কেন? বিরক্ত হচ্ছি তো আমি। দূরে সরে ঘুমা।”
আচমকা শক্তপোক্ত ধমকে ছুটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে,
“ হ্ হু? ”
আবির উঠতে নিল। বলল,
“ ঐ রুমে যাচ্ছি। তুই এখানে ঘুমা। ”
ছুটির চোখ টলমল করে উঠে যেন এই নিরব প্রত্যাখানে। কি এমন করেছে সে? আবিরের দেরি হচ্ছে দেখেই তো তখন দূরে সরাতে এমন করল। এমন তো নয় যে সে আবিরের স্পর্শ অনুভব করছিল না, এমন তো নয় আবিরের সান্নিধ্যে থেকে সে বিরক্ত হচ্ছিল। আবির তার চোখমুখ দেখে বুঝে নি? ছুটি এক হাতে আবিরের শার্টটা আঁকড়ে ধরল। আবির উঠতে নিয়েও ঝুঁকে পড়ল ছুটির উপর। ছুটির অতোসব না ভেবে বলল,
“ এমন কেন করছেন? কি এমন করেছি আমি?ভুলে যান না তখনকার ঐ ছোট্ট ঘটনা। আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি আপনাকে হার্ট করার জন্য বা ছোট করার জন্য কিছু বলিনি তখন। বিশ্বাস করুন ”
আবির ওভাবে ঝুঁকে থেকেই ছুটির দিকে তাকাল। গম্ভীর স্বরেই জানাল,
“ কেমন করছি আমি? ”
“ আমাকে অনেকঘন্টা যাবৎ এড়িয়ে যাচ্ছেন। এমন একটা ভাব দেখাচ্ছেন যেন আমি কেউ নই। আপনি আমায় চেনেনই না। সবচেয়ে বড় কথা,আপনি এখন আলাদা রুমে থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কি এমন করেছি আমি? একবার আপনাকে দূরে সরিয়েছি এটাই অপরাধ? এখন কাছ ঘেষছি, আপনি পাত্তা দিচ্ছেন না।জড়িয়ে ধরাতে হাত সরিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিদিন জড়িয়ে ধরে ঘুমান আমায়।আষ্ঠেপৃষ্টে এমন ভাবে থাকতেন যেন নিজের ভেতর ডুকিয়ে নিবেস। নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসত তবুও ছাড়তেন না। ওভাবেই ঘুমাতে হতো।অথচ আজ ব্যাতিক্রম।কেন বলুন? ”
আবির গম্ভীর ভাবেই জবাব দিল,
“ অন্যদিন তুই বিরক্ত হতি না, আজ বিরক্ত হয়েছিস! দূরে সরিয়ে দিয়েছিলি ধাক্কা দিয়ে তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি নিজ থেকে তোকে আর কাছে টানব না। ”
ছুটি মুখ উঁচু করল। বলল,
“ আমি নিজে থেকে কাছে আসলাম। ”
“ কিভাবে বুঝব? ”
“ কি করলে বুঝবেন? ”
“নাথিং!”
আবির যখন কথাটা বলে মুখটা সরিয়ে নিবে ঠিক তখনই ছুটি লাজলজ্জ্বার মাথা খেয়ে আবিরের মাথার চুলে হাত রাখল। মুখ উঁচিয়ে ঠোঁটজোড়া দিয়ে আঁকড়ে নিল আবিরের। অতঃপর আবির বেচারাকে এক উষ্ণ অনুভূতির পরশ দিয়ে মুখটা আবিরের গলায় নিয়ে বলে উঠে,
“আপনার মতো করে কাছে আসলে আপনি কাছে আসা ভাবেন নিশ্চয়? ”
আবিরের আসলেই হাসি পায় ছুটির পাগলামো দেখে। মনে মনে হেসে বলল,
“ আমার কন্ট্রোলের বারোটা বাঁজাচ্ছিস ছুটির বাচ্চা ছুটি? শাড়ি পরে এলোমেলো শাড়ি নিয়ে সামনে পড়ে আছিস। তার উপর এসব ডা’কা’তি! আমার ধৈর্য্যের আর কত পরীক্ষা? ”
কিন্তু মুখে বলল,
“ এমন করলে কিন্তু তোর কপালে কঠিন কিছু আছে ছুটি। তোর মুখ আমার গলা থেকে সরা বলছি এক্ষুনি! ”
“ আপনার অবহেলার থেকে তো কঠিন কিছু নয়। আমায় আপনার এই তীব্র অবহেলা থেকে মুক্তি দিন।”
আবির উত্তর করে না। শুকনো ঢোক গিলে। এই মেয়েটা যে তাকে অর্ধউম্মাদে পরিণত করতে চাইছে তা যেন সম্পূর্ণ টের পাওয়া গেল। অথচ আবির সম্পূর্ণ ভাবে চাচ্ছে নিজের অবস্থানে স্থির থাকতে। অথচ এই ছুটি যা শুরু করেছে তাতে তা সম্ভব? তার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছে এই মেয়ে? নাকি তাকে কন্ট্রোলল্যাস করে দিয়ে এই মেয়ে সুখ পায়?অন্যদিকে ছুটি আবিরকে চুপ থাকতে দেখে ফের বলে,
“ কথা বলছেন না কেন? আমার প্রতি আর ইন্টারেস্টেড নন আপনি তাই না? ”
আবির ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়ল। এই পর্যায়ে হুট করেই ছুটিকে চেপে ধরল যেন। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে শুধাল,
“ আমার কন্ট্রোলের বারোটা বাজানোর চেষ্টা করছিস? কন্ট্রোলল্যাস হলে এখনকার মতো ভদ্ররূপ দেখাব তোকে আমি? ভেবে চিন্তে তারপর আমার কাছে এসেছিস এখন তাই না? তোকে তো আবার আমার কাছে আসতে নাকি ভাবনা চিন্তা করে আসতে হয়? তাই না?”
ছুটি ছোটশ্বাস টানে এইবারে। আবিরের দিকে চেয়ে বলল,
“ আমি আপনার স্পর্শ আজীবন চাই। আজীবন আপনাতে হারাতে চাই। আজীবন আমি আপনাকেই চেযে এসেছি, চাই। ভেবেচিন্তে দেখার হলে আমি কিশোরী বয়স থেকে আপনার জন্য নিজের জীবন উৎস্বর্গ করতাম না আবির ভাই। ঐ কথাটার এত গভীর অর্থও ছিল না যতোটা আপনি ভাবছেন। ”
“ শিওর? ”
ছুটি উত্তর করে,
“ শিওর। ”
আবির ঠোঁট বাঁকায়। হুট করেই আঁকড়ে ধরে ছুটিকে। নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। অতঃপর ছুটির থেকে দ্বিগুণ আগ্রাসী হয়ে ছুটিকে কাছে টানল। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
“ আমি ধৈর্য্য হারালে তোকে তোর শাস্তির কানায় কানায় বুঝিয়ে দিব ছুটি। ”
.
রাহা অফিস জয়েন করলেও দাদাজানের আশাস্বরূপ সে বিজন্যাসে কোন কাজই করল না। দুদিন যাবৎ অফিসে সে শুধুশুধুই আসছে আর যাচ্ছে৷ সময় কাঁটাচ্ছে, আবার চলেও যাচ্ছে। রোহান সবকিছুই খেয়াল করল সূক্ষ্ম নজরে।অতঃপর নজরদারি করতে করতে হঠাৎ দেখা গেল রাহা সাদিয়ার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেছে। সাদিয়ে এই দুইদিনে দুইবার এসেছে কেবল এবং এই দুইবারের অধিকাংশ সময়ই রাহা সাদিয়ার সাথে ছিল। কি এত গল্প করল কি এত জানল রোহান নিজেও জানে না। অন্যদিকে রাহা আজ সকাল থেকেই থমথমে মুখ করে বসে আছে। সকাল বেলাতেই তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রোহান সাদিয়াকে নিয়ে বাইরে গিয়েছে। লাঞ্চ করে এসেছে বাইরে থেকে। এমন কি সাদিয়ার সাথে ভাব জমিয়ে সে এইটুকু বুঝতে পেরেছে তাদের দুইজনের খুবই গভীর সম্পর্ক। খুবই ক্লোজ! তাই তো। ক্লোজ না হলে লিপস্টিকের দাগ থাকত? লাঞ্চ করত? রাহা সবই বুঝল, সবই মানল তবুও কোথাও তার একটা চাপা রাগ করছে। রোহানকে ইট মেরে মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। উপায় না পেয়ে সে এক পরিচিত বড়ভাই যে কিনা এই অফিসেই কর্মরত আছে তাকে নিয়ে বেরিয়েছে। এই খবরটা রোহান পেল তার একটু খানি পর। স্টাফটা মেয়ে হলে রোহান গুরুত্ব দিত না কিন্তু কথা হলো সে ছেলে। এবং এসেছে পর্যন্তই রাহাকে এই ছেলেটার সাথে কথা বলতে বেশি দেখা গিয়েছে।ছেলেটা রাহার কি হয় তাও অবশ্য অজানা। এদিকে রোহানকে একটু পরই একটা মিটিং এ জয়েন করতে হবে। রোহান যখন রাহার পিছনে নিজের পি এ কে লাগিয়ে দিয়ে মিটিং এর জন্য প্রস্তুত হলো ঠিক তখনই একটা ম্যাসেজ এল রাহার। রোহান ভ্রু কুঁচকায়। মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখতে চেখে পড়ে,
“ মিঃ রোহান ফারাবী?আমার ডিভোর্স চাই!প্লিজ তালাক বলে দিন মুখে। ”
আকস্মিক এই ছোট্ট ম্যাসেজটায় রোহান সর্বপ্রথম বিস্মিত হলো। এটা কেমন বার্তা? হুট করে এই সিদ্ধান্তেই বা আসবে কেন এই মেয়ে? রোহান দাঁতে দাঁত চাপল! কল ব্যাক করল রাহাকে। অথচ মুহুর্তেই জানতে পারল রাহার ফোন অফ! আচমকা রোহান রাগে চিড়বিড় করে উঠল। ইম্পোর্টেন্ট মিটিং ফেলে রেখে সে দ্রুত বের হলো গাড়ি নিয়ে। পি এর থেকে জানতে পারল রাহা এতক্ষনে বাড়ি পৌঁছিয়েছে। সে অনুযায়ী রোহান বাড়িতেই গেল। থমথমে মুখে দ্রুত পা ফেলে রুমে আসতেই দেখা গেল রাহা ব্যাগ গুঁছিয়েছে। আর কয়েকটা জিনিসপত্র ছোট ব্যাগটায় নিচ্ছেে রোহান কপাল কুঁচকে গিয়ে দ্রুত চেপে ধরল রাহার হাতটা। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ হোয়াট ইজ ইওর প্রবলেম নবনী? ”
রাহা হঠাৎ হকচকিয়ে উঠলেও নিরব দৃষ্টি ফেলে। সামলে নিয়ে বলে,
“ কোন প্রবলেমই নেই। আমি একটু আপুর বাসায় যাচ্ছি। ওখান থেকে ভার্সিটিতে যাব। ”
একের পর এক মাথা খারাপ করা কথায় রোহান ফুঁসে উঠে। বলে,
“ বলেছিলাম না যেতে পারবে না? ”
রাহা নির্লিপ্ত স্বরেই বলে,
“ বাট হোয়াই? ”
শক্ত স্বরে উত্তর আসে,
“ বলতে ইচ্ছুক নই। কিন্তু তুমি যেতে পারবে নাহ। ”
রাহা হকত বোধহয় পিস্ট হচ্ছে রোহানের হাতের বন্ধনে। তবুও দৃঢ়স্বরে বলে,
“ কী আশ্চর্য! গেলে তো আপনার অসুবিধা হচ্ছে না মিঃ রোহান ফারাবী! বরং সুবিধাই হবে। ”
“ কি বলতে চাচ্ছো? ”
“ দেখুন লাইফে একটা বিয়ে করার দরকার ছিল দাদাজানের কথাতে সে বিয়েটা করে ফেলেছি ইতোমধ্যেই৷ এখন আর কোন চাপ নেই তাই এই বিয়ে থেকে চলে যেতে চাচ্ছি। ”
রোহান দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে উঠল,
“ এত সহজ? বললেই হলো? তোমায় অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে নবনী, সময় দিয়েছি নাগালে পাওয়ার। তুমি সেই সুযোগটা কাজেই লাগালে না। স্যরি, স্যরি নবনী!”
#চলবে…
#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৩৩
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
রোহানের দৃষ্টি স্বাভাবিক ঠেকল না যেন। রোহান সরু চাহনিতে তাকাতেই রোহান তার শক্ত বন্ধনী থেকে রাহার হাতটা ছেড়ে দিল। বিনিময়ে আরেকটু কাছে এসে টেনে নিল রাহাকে। আগ্রাসী হয়ে রাহার ঠোঁটজোড়া দখলে নেয়। রাহা তখন বিরক্তে হাত পা ছুটে। অথচ লাভ হলো না। রাগে ক্ষোভে ক্ষ্রিপ্ত সে পুরুষকে সে দমাতে পারল না। রোহান ক্ষনিক বাদেই ছাড় দিল তার ঠোঁটজোড়া। পরমুহুর্তেই মুখটা যখন রাহার গলার দিকে নিতে লাগল ঠিক তখনই বাঁধা দিল রাহা। মুহুর্তেই রাগী সুরে বলে উঠে,
“ খবদ্দার বলছি মিঃ রোহান ফারাবী, এর থেকে বেশব করলে আমি কিন্তু খুব খারাপ কিছু করব। ”
রোহান শুনে না। ঠিকই মুখ এগোল। ঠোঁট ছোঁয়াল রাহার গলায়। মসৃন গলার ত্বকে ঠোঁট দাবিয়ে চুমু আঁকলে। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে শুভ্র মসৃন গলায় দাগ বসাতে একটা কাঁমড়ও আঁকল। রাহা তখন ব্যাথায় দাঁত চাপে। অপর দিকে রোহান হেসে বলে,
“ নিজের বউ চলে যাওয়ার থেকে বউকে ভালোবেসে আগলে নেওয়া বেটার না নবনী? নয়তো লোকে আমায় বউ চলে যাওয়া পুরুষ হিসেবে চিনবে। ”
রাহা ওভাবেই চোখ বুঝে রাখে। যেন সে সহ্য করতে পারছে না। ফুঁসে উঠে রাগী স্বরে বলে উঠে,
“ অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে আমার সাথে বাসায় এসব নোংরামো করার মানে কি? শর্ত ছিল কি বিয়ের? এখন ওসব ভুলে আমার সাথে এই ধরণের ফাজলামো করার মানে কি? ”
রোহান খুব একটা পাত্তা দিল না কথাগুলোকে। রাহার এই ছোট্ট ভুলটা সে কোন এক সময় ঠান্ডা মাখায় ভাঙ্গিয়ে দিবে নাহয়। তবে এই যে তার বিয়ে করা বউ বারবার চলে যাবে চলে যাবে বলে তার অস্থিরতা বাড়ায়, এখন তো আবার সোজা ডিভোর্সেও চলে গেছে! এর জন্য রোহানের কাছে একমাত্র সমাধান মনে হলো রাহাকে কাছে টেনে আপন করা। তাই থামল না সে। এক আঙ্গুল রাহার থুতনিতে বুলাতে বুলাতে উত্তর করল,
” মানে তুমি বুঝো। ”
রাহা ঘৃণায় যেন দাঁত খিচে নেয়। বলে,
“ একদমই না। আমি বুঝতে পারছি না। উল্টো গা গুলিয়ে আসছে আমার। অন্য একটা মেয়ের প্রেমিক আমায় ছুঁয়ে যাচ্ছে আমি এটা মানতে পারছি না।আমার বমি পাচ্ছে… ”
এতক্ষন যাবৎ এতগুলো কথায় রেহান খুব একটা পাত্তা না দিলেও এবারে দিল। মন মেজাজ খারাপ হয়ে এল একটা কথাতেই। তার ছোঁয়ায় গা গুলিয়ে আসছে? বমি পাচ্ছে? তাও তার মনে সদ্য অনুভূতি তৈরি করা নারীটির কাছেই?রোহান থুতনিতে বুলাতে থাকা আঙ্গুল থামিয়ে এবারে চোয়াল চেপে ধরে। দাঁতে দাতঁ চিবিয়ে নেয়। তবুও শান্ত স্বরে বলে,
“ আবার বলো! ”
রাহার চোয়ালে হালকা ব্যাথা অনুভব করল। তবুও দৃঢ় আওয়াজে তাচ্ছিল্য হেসে উত্তর করল,
“আমি লাইফে কখনো কোনকিছু সেকেন্ড হ্যান্ড বস্তু হিসেবে পাইনি রোহান ফারাবী। আপনাকে মেনে নিয়েছিলাম কারণ আপনার চোখে আপুর জন্য ভালোবাসা দেখেছিলাম। এখন দেখছি আপনি সেকেন্ড হ্যান্ড বস্তু থেকে ও বেশি…. ”
এমন সম্বোধন করাতে বোধহয় রক্তকণিকায় কণিকায় রাগ ছড়াল পুরুষটার। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে প্রশ্ন শুধাল,
“ আমি সেকেন্ড হ্যান্ড বস্তু? ”
“অফকোর্স!শুধু সেকেন্ডহ্যান্ড নয়, ক্যারেক্টারল্যাস ও! একটা মেয়ের সাথে অফিসের সবার সামনে প্রেম করে বেড়াচ্ছেন, সবাই জানে আপনারা কাপল হিসেবে আছেন। আর এখানে আমার সাথে করছেন কি? ছিঃ!একটা মেয়ে ছুঁয়ে ঐ হাত দিয়েই আমাকে ছুঁয়ে বেড়াচ্ছেন, একটা মেয়েটা যে ঠোঁট দিয়ে….! আপনার সবকিছুতে নিশ্চয় ঐ মেয়ের স্পর্শ আছে! ছিঃ! আর আমি সেই সেকেন্ড হ্যান্ড ছেলেরই…… ”
কথাগুলো বলতে বলতে রাগে ঘৃণায় রাহার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল। লাল টকটকে দেখাল চোখজোড়া। রোহান সে চোখে তাকিয়েই বাঁকা হাসল। উত্তর করল,
“ এখন এই সেকেন্ড হ্যান্ড এবং ক্যারেক্টারল্যাস পুরুষটাই তোমায় ছুঁবে নবনী,সরাজীবন ছুঁবে। তুমি তা চুপচাপ সহ্য করবে, সারাজীবন সহ্য করবে। তোমার গা গুলিয়ে আসুক, বমি আসুক যায় হোক তোমাকে এই ক্যারেক্টারল্যাস পার্সনটাকেই সহ্য করতে হবে।ছেড়ে যেতে পারবে না। ”
রাহা ধাক্কা দিতে চাইল। অথচ পারল না। এই রোহানকে সে চিনে না। সত্যিই চেনা লাগছে না এই ক্ষ্রিপ্ত রোহানকে। এতদিন যে রোহানকে চিনে এসেছিল তার থেকেই এই রাগভ রোহান অনেক ভয়ানক। রাহা রোহানকে ক্যারেক্টারল্যাস ভাবলেও এতোটাও খারাপ ভাবে নি যে একটা মেয়েকে জোর করে সে কিছি করে ফেলবে। তার তো ঘৃণা হয়েছিল রোহান ঐ মেয়ের সাথে মিশে, ওদের সাথে কিছু আছে এটা জানার পরই! বেশি রিয়্যাক্ট করেছে কি সে? যার জন্য রোহানের এই ক্ষ্রিপ্ততা? রাহা ভয় পেল মনে মনে যেন। তবে দেখাল না তা। শক্তস্বরে বলে,
“ ছাড়ুন। ”
রোহান হাসল। মুহুর্তেই রাহাকে কোলে উঠিয়ে শুধাল,
“ ছাড়ার কোন পথ আর তুমি বাকি রাখোনি নবনী। আ’ম স্যরি। ”
“ আজকে যদি আপনি সত্যিই কিছু করেন আমি সারাজীবন আপনাকে ঘৃণা করব। ”
রোহান তাকায়। বলল,
“ এমনিতেও তো ঘৃণাই করছো।এতদিন সুযোগ দিলাম তোমায় ভালোবাসার, ভালোবাসলে না তো। উল্টে বারবার আমায় ছেড়ে যাওয়ার প্ল্যান করেছো। কিন্তু তোমার তো খুশি হওয়া উচিত নবনী, তোমার কথাই রাখছি। আমরা বেবির জন্য প্রথমবার ট্রাই করছি ভেবে নাও। ”
“ ওটা আগে ভেবেছি, এখন নয়। এমন ক্যারেক্টারল্যাস ফাদার পেয়ে আমার বাচ্চা খুশি হবে কখনো? ”
“ খুশি না হলেও কিছু করার নেই, তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। এবং তোমার বাচ্চা বাবাও অন্য কাউকে হতে দেওয়ার সুযোগ আমি দিতে পারব না। ”
এইটুকু বলেই রাহাকে বিছানায় রেখে যখন রোহান ঝুঁকে পড়ল রাহার দিকে তখন রাহা দ্রুতই ভয়ে চোখ বুঝল। দ্রুত বলল,
“ আমায় ছাড়ুন রোহান।আপনাকে ভয় লাগছে আমার। ছেড়ে দিন।”
রোহান শুনল না। মনকে প্রশ্রয় দিয়ে শুধাল সামনে যে মেয়েটি আছে সে তার বউ। তার এইটুকু অধিকার আছে। নিশ্চয় আছে। কিন্তু মেয়েটা কি সত্যিই তাকে এতগুলো দিনে একটুও ভালোবাসতে পারে নি? তার ছোঁয়া এতটাই অসহ্য লাগছে? কেন লাগল অসহ্য? রোহান ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়ল। মনে মনে দুয়েকবার ভাবল জোর করাটা উচিত নয়। সে কি রাহাকে চলে যেতে দিবে? ফের পরমুহুর্তেই মন আবার তীব্র রাগ নিয়ে জানাল, কোনভাবেই না। রাহার কানে কানে শুধাল,
“ এতদিন তো কিছু করিনি এক রুমে থেকেও, আজ যেহেতু করছি সেহেতু তুমি হাজারবার বললেও আমি ছাড়ব না নবনী। ভালো হয় তুমি মেনে নাও, এটা জোরজবরদস্তি নয়। স্বামী স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক। তুমি জানো নিশ্চয়? ”
.
নিশুতি রাতে হুট করেই সাদ বাইরে বের হলো। গেইট পেরিয়ে রাস্তার ধারে হুট করেই হাঁটতে হাঁটতে তার মনে পড়ল রাহার কথা। কত রাত সাদ গিয়ে রাহাকে দেখার জন্য বেলকনির পানে তাকিয়ে থাকত। কতগুলো রাত!সাদের বুক ভার লাগে। এখন কেমন আছে মেয়েটা? রাহার কথাটা আনমনে একবার মনে করেই তারপর হুট করেই ঘাড় ঘুরিয়ে সিয়াদের বেলকনিটার দিকে তাকায় সে। অস্পষ্ট অন্ধকার। কাউকেই তেমন দেখা গেল না। সিয়া কি বেলকনিতে বসে? আকাশ দেখে? সাদের মনে হুট করেই জাগা এই অদ্ভুত প্রশ্নটায় সে নিজেই অবাক হলো যেন। অতঃপর হুট করেই সে হাঁটা ধরল সামনের দিকে। ঠিক সেসময়ই কেউ কল করল সাদকে। সাদ বিরক্তি নিয়ে কল তুলল। কানে নিতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলল,
“ একটু দাঁড়াবেন? আমার অনেকদিনের শখ রাতের শহর দেখা। একটু দাঁড়ান সাদ ভাই। ”
সিয়া! সাদ ফের ঘাড় ঘুরিয়ে বেলকনিতে তাকাল। মেয়েটা কি ওখানে থেকে তাকে দেখছে? কিন্তু তার চোখে তে পড়ছে না। সাদ ভ্রু কুঁচকে অনেকটা সময়ই বুঝার চেষ্টা করল ঐ অন্ধকারে কেউ আছে কিনা। অথচ বুঝতে পারল না। সিয়া হেসে বলল,
“ এভাবে বেলকনিতে তাকাচ্ছেন হঠাৎ? কখনো তো তাকান না সাদ ভাই। ”
সাদ গম্ভীর স্বরে উত্তর করল,
“ এমনি। ”
সিয়া ফের বলল,
“ নিচে আসি? নিবেন আমায় সাথে? ”
এবারেও গম্ভীর গলায় উত্তর আসল,
“ না! ”
“ কেন? নিলে ক্ষতি কি? ”
“ বুঝবে না তুমি। ”
সিয়া বড্ড আবদার করেই বলল,
“ যাই না সাদ ভাই। এমন করেন কেন? আমি তো এখন আর আপনাকে ভালোবাসি না, ভালোবেসে তো যাচ্ছি না আপনার সাথে। ”
এই এতটুকু বাক্যটা যে সাদের হৃদয়ে কত বড় আঘাত হানল তা বোধহয় সাদ নিজেও বুঝে উঠল না। “ আমি তো এখন আর আপনাকে ভালোবাসি না। ” কি সুন্দর বলে দিল এই মেয়েটা। সাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“ আমি চাই না তোমার বদনাম হোক সিয়া৷ রাতদুপুরে একটা ছেলে আর একটা মেয়ের একসাথে বের হওয়াটা সমাজ ভালো চোখে দেখে না।”
সিয়া তবুও বলল,
“ পাঁচ মিনিট দাঁড়ান অন্তত? ”
“ দাঁড়ালাম। তবে তোমায় সাথে নিব না আমি। ”
এইটুকু বলেই সাদ ফোন কানে নিয়ে অনেকক্ষন দাঁড়াল। পাঁচ মিনিট ফেরিয়ে বোধ হয় সময় আরো বেশি গড়াল। তারপর হুট করেই নিজের পাশে এক মেয়েলি অস্তিত্ব টের পেল। পরনে শাড়ি। ছেড়ে দেওয়া চুল আর কাজল রাঙ্গা আঁখি! রাস্তার সোডিয়াম আলোতে কি নিদারুণ দেখাচ্ছে মেয়েটাকে তা বোধহয় সে নিজেই জানে না। কিংবা জানে বলেই হয়তো পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে শাড়ি জড়িয়ে, চোখে কাজল এঁকে প্রিয় পুরুষের সামনে এসেছের।সিয়া দ্রুতই ছটফট করে বলল,
“ চলুন, আপনি আগে যান, আমি পিছনেই যাব। আলাদাই যাচ্ছি কেমন? একসাথে না। ”
সাদ দৃষ্টি সরাল। এমনভাবে অন্যদিকে তাকাল যেন সে সিয়ার এই সাঁজ, শাড়ি খেয়ালই করেনি। সিয়া মনে মনে বোধহয় প্রত্যাশা রেখেছিল নিষ্ঠুর পুরুষটি তার দকে মুগ্ধতা নিয়ে তাকাবে। অল্প প্রশংসা করবে। কিন্তু তার কিছুই হলো না। উল্টো গম্ভীর মুখে শুধাল,
“ পাগলামো করবে না সিয়া। ”
সিয়া মুহুর্তেই বলল,
“ পাগলামো না তো। রাতের শহর দেখার ইচ্ছে হলে দেখব না আমি? ইচ্ছেকে মেরে ফেলব? ”
“ আমি তোমায় সাথে নিব না। ”
“ তাহলে আমি একাই যাচ্ছি! ”
এইটুকু বলেই সিয়া পথ বাড়াল।বেশ খানিকটা পথ এগিয়েও গেল। পা থামছে না মেয়েটার। ভয়ও হচ্ছে না? ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। সাদ বিস্মিত হলো সিয়ার সাহস দেখে। এত রাতে একটা মেয়ে এভাবে একা একা যাওয়াটা যে যৌক্তিক নয় তা সিয়া বুঝে না? বুঝেও পাগলামো করছে? সাদের রাগ লাগে। হুট করেই দৌড়ে গিয়ে হাঁটতে থাকা সিয়ার হাত চেপে ধরল সে। রাগে জেদে মুহুর্তেই বলে,
“ এক্ষুনিই সরাসরি বাসা যাবে সিয়া। তোমার যদি খুব বেশিই রাতের শহর দেখার ইচ্ছে হয় তাহলে আমি তোমায় অন্য কোনদিন নিয়ে যাব। এখন বাসায় যাবে তুমি। ”
সিয়া শুধায়,
“ না গেলে? ”
সাদের রাগ তখন কপাল টানটান হয়ে উঠে। জানায়,
“ হাত উঠে যাবে আমার।”
“মারবেন? ”
“প্রয়োজন হলে মারব। ”
মারার কথাটুকু বলতে পারল সাদ? সিয়া অভিমান নিয়ে তাকায়। বুঝিয়ে বললে কি হতো? জেদ নিয়ে বলল,
“ যাব না আমি। আপনাকে তো সাথে যেতে বলছি না, আমি আমার মতো যাচ্ছি। হাত ছাঁড়ুন। ”
এইটুকু বলেই হাত ঝাড়া দিল সে। সাদ হাত ছাড়ল না। উল্টো বলল,
“ ছাড়ব না।”
সিয়া এবার কিছুটা আওয়াজ করেই শুধাল,
“ ছাড়ুন সাদ ভাই। ”
চোয়াল শক্ত হয় সাদের। এই মেয়ে এতোটা অবাধ্য কবে থেকে হলো?এতোটা জেদী?দাঁতে দাঁত চিবিয়ে রক্তিম চোখে তাকিয়ে সে বলে,
“ বাড়াবাড়ি করছো। ”
“ করলাম। সমস্যা কি? ”
এই পর্যায়ে সাদ সত্যিই পারল না। সত্যিই পারল না নিজের হাতকে স্থির রাখতে। হুট করেই একটা চড় বসাল সিয়ার বাম গালে। শক্তস্বরে বলল,
“ অনেকক্ষন বুঝিয়েছি। কানে নাওনি৷ চোখে মানুষ মনে হচ্ছে না আমাকে? এখন সোজা বাসায় যাবে সিয়া৷ বাড়াবাড়ি করলে অন্য গালেও পড়বে। ”
সিয়ার চোখ টলমল করে। আরেকটু হলেই গড়াবে যেন। অভিমান, অভিযোগ নিয়ে তাকিয়ে সাদকে বলল,
“ আপনি নিষ্ঠুর, নিষ্ঠুর সাদ ভাই। আপনার মতো নিষ্ঠুর মানুষের সাথে আমার পরিচয় না হলেই আমি সুখী হতাম। ”
#চলবে….