প্রেমের সমর পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0
401

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_৩৯
লেখনীতেঃঅলকানন্দা ঐন্দ্রি

ছুটি প্রায় বেলা বারোটা করেই ঘর ছেড়ে বাইরে বের হলো। আবিরের বাসার প্রত্যেকটা মানুষের সাথে দেখা হতেই খেয়াল করল কেমন করে যেন চেয়ে আছে। ছুটি প্রত্যেকবারই এক একটা বোকা হাসি উপহার দিল তাদের দৃষ্টি দেখে৷ পরমুহুর্তেই কেমন চুপসে গেল। সবাই কি অন্যকিছু ভাবছে? এতোটা সময় যাবৎ রুমে থাকার দরুণ অন্য ভাবনা চিন্তা মাথায় ডুকিয়েছে? ছিঃ ছিঃ! ছুটির এই মুহুর্তে লজ্জা লাগে বিনা কারণেই। মস্তিষ্কে অতরিক্ত ভাবনা চিন্তায় নিজেই যখন বিরক্ত হয়ে রুমে আবার ফেরত যাবে ঠিক দেখা হলো আবিরের দাদীর সাথে। সরু চাহনিতে চেয়ে থেকে মুখ টিপে হাসলেন উনি। ঠোঁট রাঙ্গানে আছে পানের রসে। শুধালেন,

“ ঘুম হলো ঠিকমতো রে? ”

ছুটি ভ্রু উঁচিয়ে তাকাল। কন্ঠটা শুনে মনে হলো খোঁচা মেরে বলল যেন। শুধাল,

“ ওভাবে হাসছো কেন বুড়ি? ঘুম না হওয়ার মতো নিশ্চয় কোন কারণ ছিল না যে তুমি এভাবে হাসছো।”

দাদী ফের মুখ টিপে হাসলেন। পান চিবোতে চিবোতে বলে উঠলেন,

“ একেবারেই ছিল না? তো এত বেলা অব্দি ঘুমাইয়া কি করলি শুনি? গোসলই বা না করে বের হলি কেন শুনি? ”

গোসলের প্রসঙ্গ আসতেই ছুটির মাথায়কিছু একটা ডুকল যেন। বুঝে উঠেই লজ্জ্বা পেল। তবুও শুধাল,

“ হ্ হু? ”

দাদী হাসে। ছুটিকে একটু আধটু লজ্জ্বা পেতে দেখে সন্দেহী স্বরে শুধায়,

“ লজ্জ্বা পাচ্ছিস নাকি? ”

ছুটি মুহুর্তেই অস্বীকার করল। বলল,

“ আজব! লজ্জা কেন পাব? গোসল করা স্বাভাবিক বিষয়। এতে লজ্জ্বা পাওয়ার কি আছে শুনি? ”

দাদী তবুও হাসে। বলে,

“ আচ্ছা? তাহলে যা। জলদি গোসল সেরে আয়। আর হ্যাঁ, আমার দাদুভাইটিকেও একটু কান ধরে টেনে নিয়ে আসিস বাইরে। আমি তো তার মুখটাই দেখতে পেলাম না আজ একটিবার। ”

“ আমি কেন নিয়ে আসব? তোমার নাতি। তুমি গিয়ে দেখে আসতেই পারো৷ ”

দাদী হেসে হেসে উত্তর করল,

” কারণ নাতিটি এখন আপনার দায়িত্বেই আছেই ছুটিসাহেবা!”

ছুটি দাদীর সাথে সেটুকু কথা বলেই লজ্জ্বায় সংকোচে ইতস্থত করে রুমে ফিরে এল ফের। খাটের এককোণায় বসে ভাবল আনমনে। সবাই নিশ্চয় এত দেরিতে ঘুম ছেড়ে উঠাতে ভেবে নিয়েছে ওদের মধ্যে কিছু হয়েছে। এবং গোসল সেরে বের না হওয়াতেই বোধহয় সবাই ওভাবে তাকিয়ছিল এটাই মনে মনে ভাবল ছুটি। সাথে সংকোচ জাগল। মুখটা চুপসে গেল কেমন। এককোণে বসে এসব ভাবতে ভাবতেই ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এল আবির। চুলগুলো ভেজা তারর।পরণে একটা সাদা তোয়ালের ব্যাতীত কিছুই নেই৷ বিন্দু বিন্দু পানির কণা অবশ্য শরীরময় অবস্থিত। ছুটি বুঝল এই আবির ব্যাটা গোসল করে বেরিয়ছে। তারও এখন গোসল করতে হবে। দাদী বলেছে। বাকিসবও কি না কি ভাবছে তার চাইছে গোসল করে ফেলাটা উত্তম মনে হলো ছুটির। কিন্তু জামাকাপড়? ছুটি তো ব্যাগপত্রর তেমন আনেনি। ছুটি মুখ কুঁচকে বসে থাকে। কিছুই বলে না। আবির তা দেখে এগিয়ে আসে। কিছুটা ঝুঁকে নিজের ভেজা চুলে হাত দিয়ে ঝাড়া দিতেই জল গিয়ে পড়ল ছুটির চোখে মুখে। ছুটি চোখ বুঝে।আবির তখনই বলে উঠল,

“ সমস্যা কি? এমন পেঁচার মতো মুখ করে বসে আছিস কেন? ”

ছুটি তাকায় নিভু নিভু দৃষ্টিতে। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর করে,

“ আমি বাসায় যেতে চাচ্ছি আবির ভাই। দিবেন যেতে? ”

আবির উত্তরটা আশা করেনি। তবুও এই কথাটা কেন বলা হলে তা নিয়ে ভাবল সে। শুধাল,

“ কোন বাসা? ”

“ আমার বাসা। ”

আবির তৎক্ষনাৎ দৃঢ় স্বরে বলে,

“ প্রয়োজন নেই। ”

ছুটি করুণ চাহনিতে তাকায়। বলে,

“ দুই মিনিটের পথই তো আবির ভাই। যাব আসব। জামা কাপড় আনব কেবল । ”

আবির গলল না। বরং ছুটির থুতনিতে হাত রেখে গলা দৃঢ় করে বলে উঠে,

“ এক সেকেন্ডের পথ হলেও যাওয়ার দরকার নেই। গুণে গুণে আটদিন থাকব আর। এই আটদিনে এক সেকেন্ডও যদি আমার থেকে দূরে থাকার পরিকল্পনা করিস ফল খারাপ হবে ছুটি। ”

ছুটি তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন ছুড়ে,

“ আটদিন কেন? ”

আবির হাসে এবারে। বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ছুটির থুতনিতে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,

“ তুই চাইলে সম্পূর্ণ জীবনটাই থেকে যেতে পারি তোর সাথে।তোর ইচ্ছায়। ”

ছুটির শরীর শিরশির করে কথাটায়। কন্ঠটা অতিরিক্ত জড়ানো যেন। আবির ভাই তাকে দুর্বল করে ফেলছে আপাদমস্তাক!ভেবেই ছুটি সরে বসে। বলে,

“ আজকাল কি মেয়েদের পটানোর ট্রিকস শিখেছেন কোথাও থেকে?আগে তো দেখতাম কথাও বলতেন না। ”

আবির এবারে ছুটির পাশেই বসে। বলে,

“ আগে বউ ছিলি না, এখন বউ হোস। ”

মুহুর্তেই ছুটি প্রশ্ন ছুড়ল,

“ আগে ভালোবাসতেন না, এখন কি ভালোবাসেন?”

আবির দীর্ঘশ্বাস টানে। এখন ভালোবাসি বললেও যে মেয়েটা বিশ্বাস করবে না তা ভালো করেই জানে সে। বলে,

“ ভালোবাসি বললেও তুই যে বিশ্বাস করবি তার নিশ্চায়তা নেই। আর আবিরের ভালোবাসাটা ফেলনা নয় যে বারবার বলেকয়ে তোর তাচ্ছিল্যের কারণ বানিয় এটাকে মূল্যহীন করব। ”

ছুটি হাসে। তাচ্ছিল্যের হাসি। আবিরের চোখের দিকে সরাসরি চেয়ে থেকে বলে,

“ যদি ভালোবাসতেন তাহলে সেটা অবশ্যই আমার কাছে পৃথিবীর সবচাইতে মূল্যবান বস্তু হতো আবির ভাই। ”

আবির চুপ থাকে। ছোটশ্বাস টেনে মনে মনে বলে উঠে,

” অথচ তুই জানিসই না সে মূল্যবান অনুভূতিটা তুই কবেই জয় করে নিয়েছিস ছুটি। ”

কথাটা মনে মনে আওড়ালেও বাইরে শুধায় না। বরং প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে,

“ গুড! তো হঠাৎ জামাকাপড়ের প্রয়োজন পড়ল কেন? ”

“ গোসল করতে হবে,আপনি তো গোসল করে নিয়েছেন সাধু পুরুষের মতো। আর এইদিকে মানুষ ভাবছে আমি গোসল করিনি। ”

আবির ভ্রু উঁচাল। বলল,

“ গোসল না করাটা তো চরম অপরাধ বলে মনে হচ্ছে না। ”

ছুটি দাঁতে দাঁত চেপে তাকাল। এমন সাধু সাঁজছে যেন কিছুই জানে না। ছুটি ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে,

“জানি না, দাদী বলেছে গোসল করতে। ”

আবির কারণ বুঝে উঠে হাসে তবে আড়ালে। হেঁটে গিয়ে নিজের টাউজার এবং টিশার্টটা নিতে নিতে গম্ভীর স্বরে বলে,

“ বলে দিতি, গোসল করার মতো কিছু হয়ে উঠে নি আমাদের। ”

ছুটি ফের ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে,

” এটা তো আমিই জানি কেবল যে গোসল করার মতো কিছু হয়নি আমাদের মাঝে। ”

আবির ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়।ভ্রু উঁচু করে বলে,

“ গোসল করার মতো কিছু ঘটে গেলে কি খুশি হতি তুই? মনে মনে চাস যে কিছু হোক?”

ছুটি এই পর্যায় হেসে উত্তর করল,

” আপনার আমার মাঝে কোনদিন কিছু হবে না যে এইটুকু আমি শিওর আবির ভাই। অন্তত আপনি মানুষটা তেমন নন। হয়তো কোন কারণে বিয়েটা করেছেন, একটু আধটু বিভ্রান্ত করার জন্য মাঝেমাঝে চুমু দিচ্ছেন তবে এতোটাও বিবেকভ্রষ্ট আপনি হবেন না যে একটা মেয়ের সাথে হাবিজাবি কিছু করে ফেলবেন শুধুমাত্র স্বার্থের জেরে বা নিজস্ব কোন কারণে।”

এতগুলো কথা এক টানে শুনলেও মানতে পারল না আবির। মুহুর্তেই বলল,

“ নিজস্ব কারণেই হাবিজাবি করব, তাও তোর সাথেই! একপ্রকার স্বার্থপূরণ ভাবলেও এটাতে কিছু করার নেই। তবে তুই এতোটা নিশ্চিত কি করে যে কিছুই হবে না? পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছিস নাকি আমার? ”

ছুটি মুখ চোখ কুঁচকে বলে উঠে,

“ ছিঃ!”

আবির বিরক্ত হয়। ফের ছুটির সামনে এসে ঝুুকে গিয়ে বলল,

“ ছিঃ এর কি হলো? বিয়ে করে বউ এনেছি ঘরে। বউ হোস এখন, অন্য মেয়ে না। একদিন ছেড়ে দিয়েছি মানে প্রতিদিনই ছেড়ে দিব ভাবাটা বোকামো। অবশ্য কাল রাতেও কিছু না হওয়ার পেছনেও দোষীটাই তুই-ই কেবল ছুটি!”

ছুটি বুঝে উঠে না যেন।বলে,

“ আমি দোষী? কি করেছি?”

আবির হাসে ঠোঁট কাঁমড়ে। বিছানায় ঝুঁকে গিয়ে দুই হাত রাখল ছুটির হাতের দুই পাশে। নজর রাখে একদমই ছুটির নজরে। যা এতোটাই দৃঢ় এবং প্রখর যে ছুটি দৃষ্টি রাখতে পারল না। আবির মুখ গম্ভীর করে সেভাবে থেকেই দৃঢ় স্বরে বললো,

“ তুই যদি দোষী না হতিস তোকে কালকের রাতটা অবশ্যই ভিন্ন কাঁটাতে হতো ছুটি। ছেড়ে দিতাম না নিশ্চয়? কারণ আমার অনুভূতি বহুদিনের,বহু গাঢ়!অনুভূতিরা এতকাল প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষায় ছিল! তুই যদি নির্দোষ হতিস আমার এতকালের অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতাম তোকে ছুটি। এবং আমি শিওর যে তোকে হিমশিম খেতে হতো আমার অনুভূতি সামলাতে গিয়ে। ”

.

রাত তখন অনেক। হুট করেই মাঝরাতে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখেই সুহার ঘুমটা ভাঙ্গল। স্বপ্নটা এমন যেখানে সুহার আর স্বচ্ছর বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। সুহা সে স্বপ্ন মস্তিষ্ক ধারণ করেই ঘুম ছেড়ে উঠে বসে। কিছুটা সময় ঘুমন্ত স্বচ্ছকে অবলোকন করে উঠে আসে বেলকনিতে। তারপর দীর্ঘ চারবছরের প্রত্যেকটা ঘটনা একের পর এক সে ভাবতে থাকে। কত অপেক্ষা, কত প্রতীক্ষা! অবশেষে এ মানুষটাকে সে পেল। সুহাে কান্না পায় এই মুহুর্তে। চোখ টলমল করে। অথচ বাইরে আজ পূর্ণচাঁদ। হালকা হলদে দেখাচ্ছে চাঁদটিকে। সুহা আনমনেই অনেকটা সময় যাবৎ সেভাবে আকাশে তাকিয়েই থাকতেই হুট করে টের পেল পেছনে থেকে কেউ তার কাঁধে মাথা রেখেছে। দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে নিয়েছে আদুরে পুতুলের ন্যায়৷ কি সু্ন্দর নরম গলায় জিজ্ঞেস করল,

“ মন খারাপ? ”

সুহা চোখ টলমল করছিল এতক্ষন। এখন যেন তা আহ্লাদ পেয়ে আরো গতিশীল হলো। গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে। সুহা বলে,

“মন খারাপ হওয়ার তো কারণে নেই স্বচ্ছ। আমার সুখ সুখ লাগছে। এই যে এতাল যার জন্য অপেক্ষা করলাম সে মানুষটা আমার হয়ে গেছে ভাবতেই চোখ টলমল করছে আমার।”

স্বচ্ছ বউ কান্না করছে এটা টের পেয়েই নিজের দিকে ঘুরায়। মুখটা দুই হাতে আগলে নিয়ে চোখের পানি মুঁছে। পরক্ষণেই বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,

“ ভেবেছিলাম আমার বউটা সাহসী, দুরন্ত,শক্ত! এখন দেখি সে অল্পতেই কেঁদে ফেলে। কারণটা কি আমিই সুহাসিনী?”

সুহা সেভাবেই বুকে লেপ্টে থাকে। ফিসফিস স্বরে বলে,

“ আমার ভয় হয় স্বচ্ছ। আপনি তো আবারও চলে যাবেন। ভুলে যাবেন না তো আমায়? এত প্রেম ভালোবাসা সব যদি আবার ও ঠুনকো হয়? ”

স্বচ্ছ হাসে।সুহার মাথায় চুমু দিয়ে বলে,,

“তুমি চাইলে যাব না আর। যা যোগ্যতা আছে এখানে ভালো মানের জব পেয়ে যাব ম্যাম। ”

সুহা নাকোচ করল মুহুর্তেই।বলে,

“যাবেন। ”

স্বচ্ছ আবারও হাসে। বলে,

“ কিন্তু তোমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে সুহাসিনী। মেবি আমায় জাদুটাদু করে ফেলেছো । তুমি ছাড়া থাকতে হবে ভাবলেই অস্থির অস্থির লাগে আজকাল। ”

সুহা মাথা তুলে তাকায় এবারে। বলে,

“ জাদু করতে পারলে আপনাকে চার বছর আগেই যাদু করে টেনে আনতাম বুঝলেন? কষ্ট সইতাম না এভাবে৷”

স্বচ্ছ ছোটশ্বাস টানে৷ বলে,

“ দোষটা তোমারই। কি হতো চারবছর আগে যাদু করে টেনে আনলে? আজকে তাহলে চারবছরের একটা সংসার হতো আমার। তুমি ভাবতে পারছো সুহাসিনী? বউকে ভালোবাসার দিক দিয়ে আমি চারবছর পিছিয়ে গিয়েছি! চারটা বছর! জীবন আর কতটুকুই আমার। এই এইটুকু জীবনে আমি বউয়ের সাথে চারটা বছর কাঁটাতে পারলাম না। ও মাই গড!চার চারটা বছর সুহাসিনী। কতগুলো দিন হারিয়ে গেল আমার। ”

সুহা তাকায়। স্বচ্ছর কথা শুনে ভ্রু উঁচিয়ে বলে,

“ তো? এমন অস্থির হচ্ছেন কেন?”

স্বচ্ছ চুপ থাকে। হুট করেই এই মাঝরাতে পকেট হাতড়ে কল লাগাল তার বাপকে। জানাল বিয়েটা দুইতিনদের মধ্যেই আয়োজন করতে। শাহরিয়ার সাহেব বোধহয় এতে প্রচুরই বিরক্ত হলেন।একই বাসায় থেকেও এই মাঝরাতে এই ছেলেকে কল করে এভাবে এসব বলতে হবে? অনুষ্ঠানটা তো কয়দিন পর হচ্ছেই।তবুও ধৈর্য্য নেই? অবশ্য ধৈর্য্য কতটুকুই বা আছে? যে ছেলে কথাটক কাল সকালে বলা যাবে জেনেও এই মাঝরাতেই বাপকে কল করে জানায় তার ধৈর্য্য আর কতটুকুই বা হবে?শাহরিয়ারর সাহেব এতে প্রচন্ডই বিরক্ত বুঝা গেল। কোন রকমে ছেলেকে দুইতিনদিনের মধ্যে অনুষ্ঠান করবেন বলে কল রাখলেন৷ স্বচ্ছ অবশ্য উনার বিরক্তিতে গুরুত্ব দিল না। বরং সুহাকে অতি গম্ভীর গলায় বলে,

“ আমি এত সময় পিছাতে চাইছি না। জলদি জলদি বিয়ে করে বউকে ভালোবেসে বাচ্চাকাচ্চার বাবা হয়ে যেতে চাই সুহাসিনী। বয়স তো হচ্ছে বলো!

সুহা পুরোটা কাহিনী ফ্যালফ্যাল করে দেখল। কি দরকার ছিল এখন কল করে এসব বলার? কি ভাবছেন স্বচ্ছর বাবা?সুহা উত্তরে কিছুই বলল না। স্বচ্ছ আবারও ফের বলে,

“সুহাসিনী? বিয়েটা গুণে গুণে আরো তিনদিন এগিয়ে নিব।তোমার দাদাজান নিশ্চয় মেন নিবেন। ”

সুহা ছোটশ্বাস টেনে শুধায়,

“ দাদা কষ্ট পেয়েছেন যেতে দেন নি বলে। ”

স্বচ্ছ গুরুত্ব দেয় না। বলে,

“ পেলে পাক। ভিলেইনরা কষ্ট পেলে দুঃখ করতে নেই। ”

সুহা নাক ফুলিয়ে বলল এবারে,

“ কথায় কথায় দাদাকে খারাপ কথা বলাটা বন্ধ করবেন স্বচ্ছ। ”

স্বচ্ছ তখনই দাঁতে দাঁতে চেপে বলে,

“ এটা খারাপ কথা ? তোমার ঐ ভিলেইন দাদাজানকে কখনো আমি ভুলব বলো? আমার বউ নিয়ে অন্য কোথাও বিয়ে দিয় দিতে চাইছিল। কত বড় হা’রামি তোমার দাদাজান । ”

#চলবে…..

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_৪০
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

সুহার আর স্বচ্ছর বিয়েটা এগিয়ে আনা হলো।একদিনের মধ্যে তড়িঘড়ি করে করা হলো সমস্ত শপিংয়ের কেনাকাঁটা। সব কাজকর্ম গোছানো হয়ে গেলেও ঘাড়ত্যাড়া স্বচ্ছ সুহাকে ঠিক বিয়ের একদিন আগেই ছাড়বে বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে। এর আগে না। সুহা এই নিয়ে কেনাকাটা করে এসে একটা ছোটখাট ঝগড়াও করে নিয়েছে। অভিযোগ শুধু একটাই যে নিজের বিয়েতেই নিজে একদিনের জন্য অতিথি হয়ে উপস্থিত থাকবে?স্বচ্ছ অবশ্য নিজের জায়গা থেকে নড়চড় করেনি। যা বলেছে তাই! কাল দুপুরেই দিয়ে আসবে সুহাকে৷ সুহা এই দুঃখে সন্ধ্যা থেকেই থমথমে রূপ ধারণ করল। অবশেষে যখন দেখল পরিবেশ শীতল, বৃষ্টি আসার আগ মুহুর্তটা অনুভব করতে দৌড়ে এল ছাদে। এসেই ভাবতে লাগল স্বচ্ছর পাগলামো গুলো। এই যে তাকে যেতে দিচ্ছে না এটাও স্বচ্ছর৷ একটা পাগলামো বই কিছুই না। সুহা একদিক দিয়ে রাগ করলেও অন্যদিকে হাসে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছোটশ্বাস ফেলে এসব ভেবে। পরমুহুর্তেই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আপনমনেই হেসে বলে উঠে,

“ আপনি একটা পাগল স্বচ্ছ! আপনার মতো একটা পাগল কপালে জুটিয়ে দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ বিধাতাকে। ”

স্বচ্ছ তখন মাত্রই ছাদে এসেছিল সুহাকে খুঁজতে খুঁজতে। বউ যে রাগ করেছে তা সে জানে। কিন্তু রাগ করে কোথায় উধাও হয়ে গেল তা নিয়েই চিন্তা। তাই তো খুঁজতে খুঁজতে এই অব্দি এল।অথচ আশপাশে অল্প ঝড়ো হাওয়ার আভাস তখন। আকাশে কালো মেঘে উপস্থিতির দরুন চাঁদের দেখা তো দূর একটক তারারও দেখা মিলল না বাতাসে তখন অদ্ভুব কর্দমক্ত বৃষ্টি বৃষ্টি ঘ্রাণ। সব মিলিয়ে মুহুর্তটা বৃষ্টির অগ্রিম বার্তার। প্রকৃতি তখন বর্ষণকে বরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে রমরমা হয়ে। এই এত সুন্দর শীতল পরিবেশটাতে স্বচ্ছর মনটা আরেকটু ভালো হয়ে গেল যখন সে তারই বউয়ের মুখে এমন বিড়বিড় স্বরে কথাটা শুনতে পেল। স্বচ্ছ হাসে। একদম স্বাভাবিক ভাবেই ছাদের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে বুকে হাত রাখল গম্ভীর মানবের রূপ নিয়ে। শুধায়,

“ হে বিধাতা? আমার কপালে আস্ত এক প্রেমময় সুহাসিনীকে দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।”

সুহা খেয়াল করে উঠেনি তখনও স্বচ্ছকে। প্রকৃতিতে ডুবে ছিল সে। কিন্তু এখন স্বচ্ছর কন্ঠে কথাগুলো শুনে চমকাল সে৷ সময়টা সন্ধ্যার একটু পরের মুহুর্ত। যার দরুণ ছাদের মৃদু আলোতে ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। সুহা প্রথমে ভয় পেয়ে উঠলেও ঘাড় বাঁকা করে তাকায়। তাকিয়ে স্বচ্ছকে চাপা হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকায় সে। বলে,

“ ওভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসার মানে কি? ”

স্বচ্ছ বুকে হাত দিয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। শুধায়,

“ এই যে আমি একটা পাগল তাও একটা মেয়ের কারণে এই পরিণতি! ”

সুহা মুহুর্তেই ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠে,

“ কোন মেয়ে? ”

স্বচ্ছ হাসির স্বরে উত্তর করে,

“ জানো তুমি। ”

সুহা এগিয়ে দাঁড়ায়। বলে,

“ আমার ধারণা আপনি জম্মগতই পাগল স্বচ্ছ। আমার কারণে এই পরিণতি নয় বুঝলেন? ”

“তোমার কারণে বললাম কখন সুহাসিনী? ”

সুহা ভ্রু বাঁকায়। প্রশ্ন ছুড়ে,

“ অন্য কেউ? ”

স্বচ্ছ এবারে হাসে। একইভাবে তাকিয়ে বলে,

“ কষ্ট পাবে নাকি অন্য কেউ হলে? ”

সুহার টানটান গলার স্বর,

“ অতোটা ইমম্যাচিউরড নই আমি স্বচ্ছ! ”

“ ইমম্যাচিউরড নও বলেই বাবার বাড়ি যেতে দিচ্ছি না বলে মন খারাপ করে ছাদে চলে এসেছো।”

সুহা মুখ ফুলায়। ফের রাগ হয়। বলে,

“ অতিথিদের ও বিয়েতে দশদিন আগে আসতে বলা হয় স্বচ্ছ। আর আমি আমার বিয়েতে এটেন্ড করব কেবল মাত্র একটা দিন আগে। হাও নাইস! ”

“অতিথিরা ও তাদের বউ নিয়ে আনন্দে সময় কাঁটাবে সুহাসিনী, অযথা আমি কেন বউহীনা দুঃখে মরে যাব বিয়ের আগ দিয়ে বলো?”

“দুঃখে মরে যাবেন? বউহীনা কেউ দুঃখে মরে যায় শুনেছেন স্বচ্ছ? ”

স্বচ্ছ গর্বের সহিত উত্তর করল,

“কারণ এর আগে কেউ আমার মতো বউকে ভালোবাসে নি। ”

আচমকা স্বচ্ছর উত্তরটা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধরণীতে নেমে ঝুম বৃষ্টির বিচরণ। ভারী বর্ষণে মুহুর্তেই ভিজে কাক হওয়ার জোগাড় যেন। স্বচ্ছ সুহার হাত টেনে ধরে।বলে,

“নিচে চলো, বৃষ্টি পড়ছে। অসুখ বাঁধলে আবার আমার বিয়ে পিছাবে। ”

সুহার হঠাৎ কি হলো কি জানি। চোখ বুঝে নিল আপন মনে। ছাদের মৃদু আলোয় মেয়েটার ভেজা মুখে চোখ বুঝে থাকার দৃশ্যটা স্বচ্ছর কাছে নিদারুণ লাগল। হাত বাড়িয়ে সুহার গালে হাত রাখতেই সুহা নরম স্বরে বলল,

“ ভিজব স্বচ্ছ। ”

স্বচ্ছ মানল না। আঙ্গুল দিয়ে সুহার মুখে আঙ্গুল বুলিয়ে বলে,

“ ভিজবে না।অসুখ বাঁধবে সুহাসিনী। ”

সুহা মুখ ফুলায়। চোখ খুলে বলে,

“ আপনি চলে যান। ”

” না গেলে? ”

“ বাঁধা দিবেন না বৃষ্টিতে ভিজতে। ”

স্বচ্ছও আচমকা বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে যাওয়া রমণীটির দিকে তাকিয়ে মত পাল্টে ফেলল। স্নিগ্ধ মুখটায় চেয়ে হালকা ঝুঁকে চুমু আঁকল সুহার কপালে। মৃদু হেসে জবাবে বলল,

“ দিলাম না বাঁধা। ”

সুহা হাসে অল্প। চোখজোড়া বুঝে রাখা। মনোযোগ কখন বৃষ্টিতে ভেজায়। অথচ একটিবার যদি চোখ মেলে সে সামনের পুরুষটির চোখে তাকাত তাহলে বুঝতে পারল সে দৃষ্টিকে কতোটা প্রেম,কতোটা আগ্রহ, কতোটা মুগ্ধতা!সুহা তাকায় আরো সময় পরে। বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে গিয়ে চোখ মেলে। সামনের পুরুষটির দৃষ্টি তখন তার মস্তিষ্ককে ভাবায়নি। নিজ মনে হাত বাড়িয়ে পুরুষটির ভেজা চুল ঝেড়ে দিয়ে বলে,

“ অসুখ বাঁধবে না এখন?ভিজছেন কেন? ”

স্বচ্ছ তখন অন্য মুগ্ধকায় ভেসে বেড়াচ্ছেে।যেন অন্য জগৎ এ। দৃষ্টি তার নিবদ্ধ একজনেতেই। সে একজনেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে স্বচ্ছ গাঢ় স্বরে বলে,

“ কারণ সুহাসিনীও বৃষ্টিতে মেতেছে। ”

সুহা হাসে মৃদু। কিছুটা এগিয়ে স্বচ্ছর সামনে পা উঁচিয়ে দাঁড়ায় নে।ছাদের মৃদু আলোতে নজর দেয় স্বচ্ছে গলার অ্যাডামস অ্যাপলে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে বলে উঠে,

“ দুইজনেই অসুখ বাঁধিয়ে বিয়ে করব অস্বচ্ছ সাহেব?”

স্বচ্ছ হাসে সুহার পাগলামো দেখে। অথচ মেয়েটা নিজেও জানে না নিজের কপালটা সে নিজের হাতেই খুঁড়ছে। এই যে সামনের পুরুষটির চোখে এতোটা মুগ্ধতা তারপরও এই পাগলামে দিয়ে পুরুষটিকে বোসামাল করার চেষ্টা করাটা কি ঠিক? স্বচ্ছ নির্নিমেষ চেয়ে থাকে। বৃষ্টিরা ছুুয়ে যাচ্ছে তার সুহাসিনীর শরীর। লেপ্টে গিয়েছে পোশাক। বর্ষণের শীতলতায় পাতলা মিহি ঠোঁট কেঁপে উঠছে একটু পরপরই৷ সাথে বৃষ্টির প্রবাহ বইছে মুখের সাথে সাথে অধরের উপর দিয়েও। স্বচ্ছ তা চেয়ে দেখে। এই মুহুর্তে এসে আপসোস হয় তার। একটাই বউ তার! ছুঁয়ে দেখার সাহস করে না সে।অথচ বৃষ্টিরা কি নিদারুন ভাবে অনুমতিবিহীন ছুঁয়ে দিচ্ছে তার প্রিয়তমাকে।স্বচ্ছ ইর্ষান্বিত হয়ে শুধায়,

“হিংসে হচ্ছে সুহাসিনী। বৃষ্টিকেও তুমি কত করে চাও, ছুঁয়ে যায় তোমার সমস্ত কায়া!অথচ কেবল আমারই অনুমতি জুটে নি তোমাকে ছোঁয়ার। ”

সুহা বোধহয় হাসে। শুধায়,

“ স্বামী হোন স্বচ্ছ। অনুমতি ছাড়াই আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে ছোঁয়ার। ”

স্বচ্ছ ঝুঁকে। সুহার কপাল কপাল ঠেকিয়ে বলে,

“ তুমি চাইছো আমি ছুঁয়ে দিই? ”

সুহা তখন পা উঁচু করে দাঁড়ায়। স্বচ্ছকে জ্বালাতে ঠোঁট টিপে হেসে বলে উঠে,

“ আমিই ছুঁই?আপনার গলাটা নামাবেন স্বচ্ছ? ”

স্বচ্ছর গলাটা ঝুঁকিয়ে রাখাই ছিল। যার দরুণ কষ্ট হলো না। সুহা নিজেই গলা আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে মুখ উঁচু করে চুমু দিল স্বচ্ছর গলায়। একটা নয়! পরপর তিন চারটে। অন্যদিকে স্বচ্ছর তখন বেহাল দশা। গলা শুকিয়ে আসছেে। নারী অধরের ছোঁয়া পেয়ে অবাধ্য ইচ্ছেরা উঁকি দিচ্ছে মনের ভেতর। ঠোঁট কামড়ে ধরে স্বচ্ছ নিজেকে সামলানোর উদ্দেশ্যে। অথচ ধূর্ত সুহা স্বচ্ছকে জ্বালানোর উদ্দেশ্যে ঠোঁটজোড়া ধীরে ধীরে স্বচ্ছর ঠোঁটের দিকে আনল। স্বচ্ছ তখন সুহার কোমড় জড়িয়ে ধরে।রোধ হওয়া স্বনে বলে,

“দুটোদিন মাত্র। দুটোদিন আমায় কন্ট্রোলে থাকতে দিন জনাবা। এমন হলে তো পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে এখনই আপনাকে কাছে টানতে হবে আমার।”

আচমকা কথাটায় সুহা থেমে গেল রোবটের ন্যায়। এক মুহুর্তেই কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলে,

“ ওকে, দূরত্ব টানলাম। দুটোদিন আশপাশও ঘেষবেন না। ”

স্বচ্ছ মুহুর্তেই প্রশ্ন ছুড়ে,

” ঘেষব না? ”

“ মুখও দেখবেন না। ”

“ দেখব না? ”

“ না।”

স্বচ্ছ হাসে এবারে ঠোঁট কামড়ে। বলে,

“ এত রাগ? ভালোবাসার বিনিময়ে মোঁছা যাবে জনাবা? ”

“ উত্তর? ”

সুহা চলে যেতে যেতে শুধাতে চায়,

“ রাগ নেই৷ ”

অথচ স্বচ্ছ যেতে দিল না। শক্ত করে সুহার কোমড় চেপে ধরে বলে,

“ রাগ না থাকলেও আমি এই মুহুর্তে আপনার রাগ মেটাতে চাইছি জনাবা। অর্ধেক উম্মাদ করে দিয়ে এখন পালাবেন না নিশ্চয়?”

কথাটা বলেই সুহার কম্পমান পাতলা মিহি ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্ত্বে নিল সর্বপ্রথম। পরমুহুর্তেই নিজের উম্মাদনা সামলাতে ব্যর্থ হয়ে মেয়েটাকে কোলে তুলে নিল সে। চলতে চলতে বাঁকা হাসে সে। মনে তখন অন্য চিন্তা। ভিন্ন চিন্তা! সুহা হালকা রাগে শুধায়,

“ এসব কি? ”

স্বচ্ছ যেতে যেতে উত্তর করে,

“ অপরিকল্পিত কাছে টানা। বহু কষ্টে নিজেকে এতগুলো দিন সামলে এসেছিলাম সুহাসিনী!প্ল্যান ছিল ভিন্ন, কিন্তু বাস্তবতাও আমায় ভিন্ন কিছুতে এনে ফেলেছে।স্যরি সুহাসিনী! মানিয়ে নাও বরং আজ। বহু তো মানিয়ে নিয়েছি আমি বলো?”

সুহার গলা শুকিয়ে আসে এবারে আসন্ন বিষয়টা বুঝতে পেরে। স্বচ্ছর দিকে তাকায় সে৷ কি বলবে বুঝে উঠে না। বাঁধা দিবে? না করবে?সুহা বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজায়। কি বলবে কি বলবে ভাবতে ভাতেই স্বচ্ছ সুহাকে নিয়ে বাসায় এল। তারপর রুমে। মাঝে অবশ্য সিয়া দেখেছে তাদের এই অবস্থায় তবে স্বচ্ছ পাত্তা দেয়নি। রুমে এসেই বিছানায় ভেজা শরীরেই সুহাকে রাখতে সুহা সাহস করল কিছু বলার। কাঁপা স্বরে শুধায়,

“ দুটোদি…”

স্বচ্ছ বাঁকা হাসে। সুহার অযুহাত দেখে ঝুঁকে গিয়ে বলে,

“ বলেছিলাম প্রথমে। ভাবোনি তখন তা। এখন আর অযুহাত দিয়ে লাভ হবে না জনাবা।ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে।”

সুহা ফের বলতে লাগে,

“ আমি ভাবিনি আপনি এমনকিছুর কথা…”

সুহাকে বাকিটা বলতে দেওয়া হলো না৷ স্বচ্ছ তার আগেই ঠোঁটে আঙ্গুল রাখেে।হিসহিস স্বরে কেমন জড়ানো গলায় শুধায়,

” ভাবোনি যখন এখনও ভাবতে হবে না সুহাসিনী। নাও প্লিজ ফোকাস অন দি ক্রেজিন্যাস অফ ইউর পার্সোনাল ম্যাডম্যান’স মিসেস সুহাসিনী!”

কথাটা বলার সাথেই সাথেই স্বচ্ছ ঠোঁট ছোঁয়ায় সুহার জলসিক্ত মুখে, গালে, ঠোঁটে! আর্দ্র নরম ত্বকে একবার নয়,বারকয়েক চুমু এঁকে মুখ নামায় মেয়েটার গলার দিকে। উম্মাদনা ক্রমশ প্রবলতর হয়ে উঠে যেন। সুহা চোখ বুঝে নেয় লজ্জায়, সংকোচে, জড়তায়।স্বচ্ছ তখন হাসে। নিজের অস্থিরতার জানান দিতে মেয়েটাকে নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে নেয়৷ জানান দিতে থাকে নিজের এতদিনের বেসামাল অনুভূতির কথন!

.

ওপাশে ভিডিও কলে সাদাফের দাঁত কেলানো হাসির প্রতিচ্ছবি। এপাশে আবির গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। যেন খুব সিরিয়াস সে। পাশে অবশ্য ছুটিও বসা। ছটি কিছুই বুঝে উঠে না। একবার ফোনের স্ক্রিন তো একবার সাদাফের দিকে তাকায় সে৷ আবির সে কৌতুহল বুঝে উঠেই বলে,

“ সাদাফের বাচ্চা সাদাফ! তোর জন্য বিয়ে করেও সংসার করতে পারছি না আমি। সন্ন্যাস জীবন কাঁটানো লাগতেছে। তুই এক্ষুনি সবটা খুলে বলে সব ঠিক করবি আর নয়তো ফিউচারে তোর আর নিধির বিয়েতে একমাত্র বিলেইন আমি থাকব। ”

সাদাফ এবারেও হাসে। তবুও বন্ধুর সংসারের প্রতি মায়া দেখিয়ে সবটুকু ঘটনার বিশ্লেষণ করে ছুটির কাছে। তার অনুভূতি ব্যবহার করার কথাটা যে পুরোপুরি সত্য নয় তাও বুঝায় এবং এটা যে সাদাফেরই প্ল্যান ছিল তাও!অথচ তবুও ছুটির মুখে দেখা গেল এক তাচ্ছিল্যময় হাসি। আবির তা খেয়াল করে। সাদাফ ফোর রেখে দিলেও শুধায়,

“ বিশ্বাস হয়নি সাদাফের কথা? তবুও তোর মনে হচ্ছে আমি তোর অনুভূতি ব্যবহার করেছি?”

ছুটি হেসে বলে,

“ করেননি বলছেন?”

আবিরের রাগ হয়। এত চেষ্টা করছে মেয়েটার ভুল ভাঙ্গাতে। অথচ ফলাফল শূণ্য! ছুটি তো সরাসরি তাকে কিছু বলবেও না। ঘাড়ত্যাড়া।আবির রাগে দাঁতে দাঁত চাপে।বলে,

” করলে আমি প্রথমেই করতাম। ”

” হয়তো তখন প্রয়োজন পড়েনি। ”

আবির এই পর্যায়ে নিজের স্বীকারোক্তি রাগ নিয়েই জানাল,

“ তোর প্রতি অনুভূতি আমার অনেক আগ থেকেই ছিল ছুটি। কাজেই যার প্রতি অনুভূতি আছে তার অনুভূতি নিয়ে স্বার্থ পূরণ করব এতোটা নিচে নামতে পারিনি এখনও।”

ছুটি তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসে৷ বলে,

“অনুভূতি ছিল?অনেক আগ থেকেই?হাস্যকর শোনাল আবির ভাই।”

আবিরের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। দাঁতে দাঁত চাপে সে৷ শান্ত হয়ে চেয়ে থাকেে।একটা মেয়েকে আর কিভাবে সে মানাবে? এর চাইতে সরল বোধহয় আবিরের দ্বারা হওয়া সম্ভব নয়। তার শান্ত চাহনি দেখেই ছুটি ফের বলল,

“ অন্য একটা মেয়েকে গুরুত্ব দিলেন, অন্য একটা মেয়ের প্রতি অনুভূতি রাখলেন, এতো প্রায়োরিটি দিলেন, লুকিয়ে চুরিয়ে মেয়েটাকে কল করে, ম্যাসেজ করে ভালবাসা প্রকাশ করলেন!তার সামনে আমার প্রতি আপনার সবসময়ই বিরক্তি, অবহেলা ছাড়া কিছুই দেখিনি। যেন তাকে পেলে আপনার কিচ্ছু লাগে না। অথচ এখন বলছেন আমার প্রতি আপনার অনুভূতি অনেক আগ থেকে?হাস্যকর নয় আবির ভাই?”

আবির ভ্রু কুঁচকায়।কোন মেয়ে? কিসের কথা? কার সাথে সন্দেহ করে বসে আছে এই মেয়ে? আবির ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠে,

“ সন্দেহ করছিস? ”

ছুটি ফের হেসে বলে,

“ নিজের চোখেই তো দেখেছিলাম আপনি কল করেছিলেন মেয়েটাকে আবির ভাই! ভালোবাসার কথাও পাঠিয়েছিলেন। ”

আবির এই পর্যায়ে চোখ লাল করে তাকায়। ছুটির বাহু আঁকড়ে ধরে রাগত স্বরে বলে,

“ আমি? কাকে? কোন সে মেয়ে?”

#চলবে….

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_৪১
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

ছুটির মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি বিদ্যমান। দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে সে আবিরের কথাগুলোকে উপহাসই করছে। আবিরের চোখ লাল হয়ে আসে। শরীর চিরচির করে নিরব রাগে। বাইরের শীতল বৃষ্টিতেও রাগে- ক্ষোভে তার অসহ্য লাগে। মুহুর্তেই ছুটির থুতনিতে হাত রেখে মুখ উপর করে সে। শীতল স্বরে রাগ মিশিয়ে বলে উঠে,

“ বল, কোন মেয়ে? কাকে ভালোবাসার কথা পাঠিয়েছি আমি? ”

ছুটি এবারেও উত্তর দেয় না। বরং নিরব চেয়ে থাকে সেভাবেই। আবিরের এই মুহুর্তে মেয়েটার গালে দু দুটো চড় বসাতে ইচ্ছে হয়। রাগে দুঃখে শরীর বিষিয়ে উঠে তার। এক হাতে ছুটির গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে এবারে,

“ ফাইজলামি করছি তোর সাথে? কথা কানে যায় না? ”

নরম গালে শক্ত হাতের চাপ পড়ায় ব্যাথা অনুভূত হলেও ছুটি স্থির থাকে। প্রকাশ করে না।দৃষ্টি থাকে আবিরের মুখচাহনিতেই স্থির। চোখ টলমল করে নিস্তব্ধ প্রকৃতির ন্যায়।অতঃপর ছোটশ্বাস ফেলে শুধায়,

“ যাকে আপনি খুব করেই চেনেন তার নাম আমার কাছে জানতে চাওয়াটা কেমন হাস্যকর ঠেকছে আবির ভাই।”

আবির আবারও দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর করল,

“তোর কাছে যেটা হাস্যকর লাগছে সেটা আমার কাছে হাস্যকর ঠেকছে না। সুতারাং ফটাফট বলে ফেল কে সে মেয়ে? ”

ছুটি ভ্রু উঁচিয়ে বলে,

“ সত্যিই চেনেন না? ”

আবির ছোটশ্বাস ফেলে। ছুটির গাল থেকে হাত সরায় তৎক্ষনাৎ। মেয়েটার গালে আঙ্গুলের লালচে চাপ দৃশ্যমান। আবিরের মায়া হয়। নিজেকে মনে মনে দোষারোপও করল রেগে যাওয়ার জন্য। অতঃপর গম্ভীর স্বরে বলল,

“ যে মেয়েটাকে ভালোবাসি বলে মনে হয়েছে সেটা তুই। এই ব্যাতীত অন্য কোন মেয়ের নাম যেহেতু আমার মাথায় আসছে না সেহেতু আমি চিনি না! ”

ছুটি হাসে। আবিরের মুখেে দিকে স্থির চেয়ে থেকে বলে,

“ রাহাকে ভালোবাসতেন না বলছেন?”

রাহা?নামটা শুনেই আবির ভ্রু কুঁচকে ফেলে সঙ্গে সঙ্গে। রাহাকে ভালোবাসবে কেন সে. ছুটি কি রাহার সাথে সন্দেহ করে এসেছে এতদিন? ছিঃ! আবির ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,

“ রাহা? ”

ছুটি তাচ্ছিল্য করে বলল,

“ শুনেননি নামটা?ওকে, নবনী আহমেদ রাহা? এবার বলুন, শুনেছেন নামটা নিশ্চয়?”

আবির গলা শক্ত রেখে বলে,

“ শুনিনি,তবে রাহার নামটা শুনেছি।স্বচ্ছর শালিকা!”

“ গুড। তাও অবশেষে চিনতে পারলেন আবির ভাই।”

আবির ফের বলে,

“ রাহাই সেই মেয়েটা? যাকে আমি ভালোবাসার কথা বলেছি বলে তোর ধারণা? ”

“ বলেননি শিওর? ”

আবির সঙ্গে সঙ্গেই দৃঢ় স্বরে বলে,

“ শিওর বলিনি। মনে করিয়ে দে কবে বলেছি? ”

ছুটির চোখ টলমল করে। এতোটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে মানুষ মিথ্যে বলে কিভাবে? আবির ভাই এত দক্ষতার সহিত মিথ্যে বলতে পারে বলে তো তার ধারণাই ছিল না।ছুটির গলা রোধ হয়ে আসে। বলে,

“ নিজ চোখে দেখেছিলাম আবির ভাই!”

আবির কপাল কুঁচকে। নিজ চোখে? আবির কখনো রাহাকে সে নজরে দেখেইনি যে ভালোবাসি বলার প্রশ্ন উঠবে। এদিকে ছুটি যেভাবে বলছে বিষয়টা যেন অবশ্যই সত্য। আবির কপাল কুঁচকে শুধায়,

“ নিজ মুখে বলেছি? ”

ছুটি ছোটশ্বাম টানে। বলে,

“আপনার নাম্বার থেকেই এসেছিল ওর ফোনে কল। যেদিন আমাকেও কল দিলেন? ঐ যে দেশ ছাড়ার আগের দিন আবির ভাই। নিশ্চয় রাহাকে দেখতেই ওদিকে গিয়েছিলেন। তারপর আমাকে দেখে বোধহয় আমায়ও কল করেছিলেন। যায় হোক আপনি যে প্রায়সই ওকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল করে ভালোবাসার কথা জানাতেন তা আমি সেদিনই জেনেছিলাম। কারণ আপনার নাম্বারটা আমার চেনা ছিল । ”

আবিরের কাছে এবার যেন সবটাই স্পষ্ট। সেদিন তো সাদ কার ফোন থেকে রাহাকে কল করেছিল। আর বোকা ছুটি বোধহয় সাদকেই আবির ভেবে বসে আছে। আবির দীর্ঘশ্বাস টানে। সাথে হাসিও পায়। কার ছুটিটা কতো বোকা। একদম বোকাপাখি!আবির হাসে। মেয়েটার মুখ আগলে ধরে সামান্য ঝুঁকে। গালের যে অংশে আঙ্গুলের লালচে দাগ সেখানটাতেই চুমু এঁকে বলে,

“ বোকাপাখি! তুই আসলেই আজীবন বোকাই থাকবি ছুটি। ”

ছুটি হতবিহ্বল নজরে শুধায়,

“ হ্ হু?”

আবির স্পষ্ট হতে ফের বলে নেয়,

” প্রথম কারণটা আমি তোর অনুভূতিকে ব্যবহার করেছি,দ্বিতীয় কারণটা আমি রাহাক ভালোবাসি এই ধারণা? এই দুটোই তো কারণ? পরে আর কারণ বাড়াবি না তো বোকাপাখি?”

“ বুঝিনি…..”

“ আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার এই দুটোই তো কারণ? আর কোন কারণ নেই তো? ”

ছুটি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,

“ এই দুটো কারণকে এতোটা সামান্যভাবে দেখছেনই বা কিভাবে?”

আবিরের হাসি পায়। দুটো কারণ!অথচ একটারও ভিত্তি নেই। বলে,

“ বৃহৎ রূপে দেখব? ”

উত্তর এল,

“ আমার কাছে এই দুটো কারণই অনেকটা বৃহৎ আবির ভাই! এবং আর কোনদিন আপনাকে আমি আগের মতো চাইতে পারব কিনা তাও সন্দেহ! ”

“ আর যদি এসব মিথ্যে হয়?”

“ নিজের চোখ, কান মিথ্যে হবে? ”

আবির হাসে। ছুটির মাথায় এলোকেশী চুলে চুমু বসিয়ে বলে,

“ বোকা,বোকাপাখি আমার! অনেক সময় চোখ কানও আমাদের ভুল বুঝায়। হতে পারে তুই চোখে যা দেখছিস তা সত্য কিন্তু দৃশ্যটার বর্ণনা অন্য রকমও হতে পারে!পরেরবার থেকে একটু যাচাইবাচাই করে রাগ করিস প্লিজ।”

.

অতঃপর একটা অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিময় রাত্রি!দুইজন মানব-মানবীর অপূর্ণ কিছু অনুভূতির প্রকাশ। সুহার চোখে তখন সমুদ্রসমান লজ্জা। অথচ স্বচ্ছকে দেখা গেল না এইটুকুও লজ্জা পেতে। সে নিজের মতো ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখেছে বাঁকা হাসি। সুহায় যখন লজ্জায় কথাই বলতে পারছিল না তখন স্বচ্ছ বেফাঁস কথা বলতে বলতেই সময়টা কাঁটাচ্ছে।সুহা ছোটশ্বাস ফেলে। পেট গুড়মুড় করছে ক্ষিধায়। ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বুঝে এখন রাত সাড়ে দশটা! সন্ধ্যা থেকে এখন অব্দি তারা ঘরে বন্দি ভাবতেই সুহার মনে আবারও লজ্জা ঝেকে বসে। বাইরে সবাই কি ভাবছে? সিয়া, আব্বা-আম্মা সবাই কি বলছে? ছিঃ ছিঃ! সুহার এই মুহুর্তে মন চায় লজ্জায় মরে যেতে। মুখ দেখাবে কি করে সে সবার সামনে? স্বচ্ছ অবশ্য সুহার এমন লজ্জ্বায় মরিমরি অবস্থা দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। নাকে নাক ঘষে বলে,

“ সুহাসিনী? বিয়ের অনুষ্ঠানের দুদিন আগেই বাসর ডান!বোধহয় আমরাই এমন… ”

সুহা রেগে তাকায়। কন্ঠ শান্ত রেখে বলর,

“ আমরা নই। আপনি স্বচ্ছ। ”

স্বচ্ছ হাসে চাপা। সুহার রাগ বুঝে উঠে ভ্রু উঁচিয়ে বলে,

“ আমি একা? শিওর?”

সুহা সমুদ্রসমান অভিযোগ নিয়ে স্বচ্ছর দিকে তাকায়। বলে,

“ আপনি চাইলে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারতেন। ”

স্বচ্ছ হাসে। সুহার নাকে গাঢ় চুমু বসিয়ে বলে,

“ উপায় রাখেননি আপনি। আর এখন আমার দোষ সুহাসিনী? ”

সুহার কান্না পেল এবারে। লজ্জায় সংকোচে রোধ হওয়া স্বর নিয়ে বলে,

” সবাই কি ভাববে? সন্ধ্যা থেকে এতক্ষন রুমে কি করছিলাম জিজ্ঞেস করলে?ছিঃ! ”

স্বচ্ছ হেসে উঠে। সুহার দিকে চেয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,

“ যা করছিলে তাই বলবে। ছিঃ এর কি আছে?”

সুহা রেগে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“স্বচ্ছ!”

স্বচ্ছর পেট ফেটে হাসি পায়। তবুও না হেসে গম্ভীর মুখ করে উত্তর দেয়,

“ হু বলো সুহাসিনী। ”

সুহা অসহায় গলায় বলল,

“ সবাই কি ভাবছে?আপনি, আপনি এই সময়টায়…

স্বচ্ছ হাসে। উত্তরে বলে,

“ যা ভাবার তাই ভাববে।”

“ ছিঃ! মুখ দেখাব কি করে? ”

স্বচ্ছ এবারেও উত্তর করে,

“ যেভাবে মানুষ মুখ দেখায় সুহাসিনী। আর ওরা জানে প্রেমে পড়লে মানুষ সময় ক্ষণ ভুলে বসে। বুঝলে? সুতারাং ওরা কিছুই মনে করবে না। রিল্যাক্স! ”

কথাটা বলেই স্বচ্ছ বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। একপাশে অবহেলায় পড়ে থাকা নিজের টিশার্টটা নিয়ে গায়ে জড়াতে জড়াতেই কাপড় নিয়ে গেল ওয়াশরুমে। অতঃপর মিনিট পাঁচ পর গোসল সেরে ভেজা চুলে আর একটা টিশার্ট আর টাউজার পরে বেরিয়ে এল। এসেও সুহাকে সেভাবে থাকতে দেখেই হেসে বলে,

“ গোসল সেরে আসো সুহাসিনী, খাবার আনছি। ”

কথাটুকু বলেই স্বচ্ছ রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল। সুহা যেন স্বস্তি পায়৷অতঃপর নিজেকে আলগোছে গুঁছিয়ে নিয়ে অন্য জামা নিল।শরীরময় তখন সুপ্ত ব্যাথা জানান দিচ্ছে একটু আগেকার স্বচ্ছর পাগলামোর কথন। দুনিয়ার অবাধ্য কাজকর্ম ছেলেটার!সুহা স্বচ্ছর অবাধ্য কাজকর্ম আর পাগলামোর কথা মনে করেই লজ্জায় হাঁসফাঁস করে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে উঠে দাঁড়ায় আলগোছে। অতঃপর দ্রুত জামা নিয়ে পা বাড়ায় ওয়াশরুমে। তারপর অনেকটা সময় নিয়ে গোসল সারে। তারপর জামা পরে যখন ওয়াশরুমের আয়নাটার সামনে দাঁড়াল ঠিক তখনই চোখে পড়ল গলায় কিছু লালচে দাগের অস্তিত্ব!এমনকি গলার নিচেও! বেচারি সুহা মুহুর্তেই স্বচ্ছকে বিড়বিড় করে বকতে থাকে। হিসেব মতো দুদিন পরই তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান৷ অথচ আজই! সুহা ছোটশ্বাস ফেলে ওড়না দিয়ে ঘোমটা টানে মাথায়। একদম মাথা, বুক, গলা সব ডেকে নেয় সে।তারপর যখন বের হলো দেখল স্বচ্ছ খাবার নিয়ে বসে আছে। তার দিকে চেয়েই ক্রুর হেসে বলে উঠে,

“ মনে হচ্ছে আমার ভালোবাসা পেয়ে তোমার রূপ বেড়ে গেছে সুহাসিনী৷ ফের কাছে টানব?”

সুহা রেগে তাকায় এবারে। স্বচ্ছ হাসে। বলে,

“ স্বামীর ভালোবাসা পাওয়া প্রতিটি নারীর সৌভাগ্য সুহাসিনী৷ সেদিক থেকে তুমি নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে না করে রেগে যাচ্ছো?নির্দয় রমণী! ”

সুহা ফের রেগে তাকায়। এগিয়ে এসে ওড়না সরিয়ে লালচে দাগগুলোকে সাক্ষী করে বলে,

“ নির্দয় পুরুষ! করেছেন কি আমার? এইসব যদি সবাই দেখে মানসম্মান থাকবে আমার? ”

স্বচ্ছ হেসে খাবারের গ্রাস এগিয়ে ধরেে।ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,

“ এইগুলো ভালোবাসার চিহ্ন সুহাসিনী। ”

#চলবে…