#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৪০
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
“ আপনার বোন একটু আগেই মা’রা গেছে। ডক্টর চ্যাক করে জানালেন পালস নেই। আপনারা প্লিজ তাড়াতাড়ি হসপিটালে আসুন। ”
স্বচ্ছরা তখনও গাড়িতে। যখন কল করার পর ঐ ব্যাক্তি জানাল মহিলাটি স্বচ্ছর কি হয় তখনই স্বচ্ছ জানিয়েছিল সে তার বোন হয়। এবং লোকটাকে বারবার করে বলেছিল হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অপেক্ষা না করার জন্য। দয়া করে হসপিটালে নিতে।ওখানকার কিছু লোক মিলে তা করলও। নিয়েও গেল হসপিটালে। অথচ হসপিটালে নেওয়ার মিনিট পাঁচ পর কল করে উপরোক্ত কথাটা বলা মাত্রই স্বচ্ছর পাগল পাগল লাগল। অস্থির লাগল। কি উত্তর দিবে তা বুঝে না উঠেই সে একবার পেছনের সিটে বসে থাকা সুহা আর মায়ের দিকে তাকাল।পাশের সিটে বসে থাকা সাদও উদ্গ্রীব হয়ে চেয়ে আছে ফোনের দিকে।হসপিটাল অব্দি এইটুকু পথ যেন আজ শেষই হচ্ছে না। তীব্র অস্থিরতা নিয়ে আর অপেক্ষা করতে না পেরে এবারে বলেই ফেলল সে,
“ কি হলো ভাইয়া? সিয়া ঠিক আছে তো?ঠিক আছে ও?”
স্বচ্ছ উত্তর করতে পারে না। বুকের ভেতর কেমন ভার হয়ে আসে তার। সে ছোট থেকে নিজের ছোটবোনকে এত এত আদর দিয়ে যেখানে বড় করেছে সে বোনটাকে সৃষ্টিকর্তা এভাবে নিয়ে নিতে পারল? সৃষ্টিকর্তা এই কাজটা কি করে করতে পারল? যে মেয়েটা শুধু কষ্ট পেল এতগুলো বছর। পরিবারের আদুরে মেয়েটি ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা পেল না। অবশেষে এতগুলো বছর পর যখন নিজের বোনের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের বোনের হাতে তুলে দিবে ঠিক তখনই সৃষ্টিকর্তা নিজের পাষান রূপটা দেখাল? স্বচ্ছ চোখজোড়া লালাভ হয়ে উঠে। গাড়ি চালাতে নিয়ে আচমকাই একটা এক্সিডেন্ট ঘটাতে নিল। আর একটুর জন্যই রক্ষা পেল যেন। সাদ এবারে অস্থির হয়েই শুধাল,
“ স্বচ্ছ ভাই? একবার বলুন না, কি বলল ঐ লোক? সিয়া ঠিক আছে না? বলুন না ভাই…”
এইটুকু বলতে বলতে সে নিজেই স্বচ্ছর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল। কল লিস্টে গিয়ে আবারও কল দিল। মুহুর্তেই ওপাশ থেকে লোকটা কল তুলল। জানাল,
“ আপনারা চলে এসেছেন? উনার ডেডবডি…. ”
বাক্যের বাকি অংশটুকু সাদ শুনতেই পেল না যেন। ডেডবডি? সাদের গলা রুদ্ধ হয়ে আসে। নিঃশ্বাস আটকে আসে। বুকের ভেতর তীব্র অস্থিরতা নিয়ে সে শুধায়,
“ ডেডবডি? কিসব বলছেন? সিয়া ঠিক আছে না? ”
মুহুর্তেই লোকটা সাদকে আবারও নিরাশ করে দিয়ে জানাল,
“ ভাই আপনাকে তো জানালামই, আপনার বোনের পালস পায়নি ডক্টর। উনারা জানিয়েছেন আপনার বোন মা’রা গেছে। ”
সাদ এই পর্যায়ে আর উত্তর দিল না। পেছন থেকে সিয়ার মা ততক্ষনে কান্না জুড়েছে আওয়াজ তুলে। সুহার চোখেও কান্না তবে শ্বাশুড়িকে সামলাতে ব্যস্ত সে। অথচ এত কোলাহলের মধ্যেও সাদ নিশ্চুপে জমে থাকা কোন পাথরের ন্যায় বসে থাকল। প্রথম দফায় এই সত্যটাকে বিশ্বাস করতে মন না চাইলেও পরের দফায় তার সত্যিই নিজেকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষটি মনে হলো। চোখজোড়া রক্তিম হয়ে উঠল। গলা যেন অবরুদ্ধ। সাদ চোখ বুঝল। ভেসে উঠল সিয়ার সেদিনকার মুখটা। শাড়ি পরিহিতা সিয়া! সে স্নিগ্ধ মুখ চাহনি। সাদের কান্না আসল হঠাৎ। পুরুষ মানুষ হয়েও তার ইচ্ছে করল আহাজারি করে কান্না করতে। সিয়াকে পাওয়ার জন্য লোভ করা কি তার অন্যায় হয়েছে? আজীবন তো সে দূরে সরেই ছিল। সিয়াকে প্রশ্রয় পর্যন্ত দিল না। সিয়ার মতো মূল্যবান রত্নকে নিজের সাধারণ জীবনে সামলে নেওয়ার ক্ষমতা নেই বলে সে কাপুরুষের মতো পালিয়েও গেল। অবশেষে যখন বুঝতে পারল সিয়াকে আগলে রাখার সামর্থ্য তার হয়েছে, সিয়ার মতে মূল্যবান রত্নটিকে তার জীবনে সে রাখতে পারবে তখনই তো সে এই রত্নটির দিকে হাত বাড়াল। বড্ড পাপ হয়ে গেল তা? সৃষ্টিকর্তা কেন চাইল না এই রত্নটা তার হোক? কেন কেড়ে নিল? সাদ কি আজীবন এই তীব্র যন্ত্রনা বইতে পারবে? একটিবার নিজের মনের ব্যাকুলতা জানাতে না পারার দুঃখ কি সে সারাজীবন বয়ে যেতে পারবে? সিয়া কেন চলে গেল এভাবে? একটিবার কি তাকে সুযোগ দিতে পারত না? একটিবার? একটিবার তে সাদ সিয়াকে জানাতে পারত নিজের হৃদয়ের কথা। জানাতে পারত, সাদ কখনো তাকে অবহেলা করেনি। গোপনে হৃদয়ে খুব যত্নেই আগলে রেখেছিল এই মেয়েটিকে। সাদের চোখ জুড়ে সত্যিই পানি নামল। লাল রক্তাভ চোখজোড়া যখন মেলল তখনই তা গড়িয়ে পড়ল গালে। ইশশ! সাদ যদি একটিবার জানত সেদিনকার দেখাটাই সিয়ার সাথে শেষ দেখা তবে সে সত্যিই সিয়াকে মনের কথাটা বলত। বেহায়ার মতোই বলত। একটিবার সুযোগ চাইক এই স্নিগ্ধ রমণীকে আলিঙ্গনের। এই সমস্ত জীবনে সে এই তীব্র না পাওয়ার দুঃখ নিয়ে কি করে বাঁচবে? তাও তো ভালো, সে দূরত্ব বেঁছে নিয়ে এই যন্ত্রনা থেকে পালিয়ে বাঁচছিল৷ কিন্তু এখন? যাকে পাওয়ার আশা পেয়েও পেল না, এই দুঃখ কি সে ভুলতে পারবো? এই আপসোস কি তার জীবনে শেষ মুহুর্ত অব্দি থাকবে না?
.
আবির একটা দরকারেই এসেছিল সোনার দোকানে।এক পরিচিতে বিয়েতে গিফ্ট কেনার জন্য। অতঃপর গিফ্ট কিনতে কিনতে চোখে পড়ল একদম ছোট্ট একজোড়া চুড়ি। আবির হাতে নিল। একটা ছোট্ট চুড়ি। একদম নবজাতক বাচ্চার হাতের সাইজমতোই। আবির তা দেখল। কল্পনা করল তা আদুরে ছোট্ট মেয়েটার হাতে আদুরে এই চুড়ি। মিষ্টি ছোট্টো ছোট্ট আঙ্গুল গুলো নাড়াচ্ছে সে। আবিরের মুখে স্পষ্টই ফুটে উঠল এক অজানা খুশি। মুহুর্তেই হেসে জানাল,
“ ভাই এটাও কিনব। দিয়ে দিন। ”
অতঃপর তা নিয়েই বাসায় আসল সে। ছুটিকে দেখা গেল বিছানায় শুঁয়ে ঘুমোচ্ছে। রাতভর এ পাশ ওপাশ হতেই যে মেয়েটার ঘুম ভেঙ্গে যায়, পায়চারি করে তার আজকাল সন্ধ্যের পরপরই ঘুমানোর অভ্যেস হয়েছে। আবিরের অন্যদিন ঘুম ভাঙ্গানোর ইচ্ছে না হলেও আজ সে এগিয়ে গেল। তখনও ফ্রেশ হয়নি। কেমন এক খুশি খুশি অনুভূতি নিয়ে সে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসল। ছুটির ঘুমন্ত মুখটা মুগ্ধ করা দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে পরপরই মেয়েটার আলুথালু গালগুলোতে চুমু দিল। একটা, দুটো,পরপর কয়েকটা চুমু এঁকেই সে বিড়বিড় করল,
“ আমি সম্ভবত এত খুশিতে পাগল হয়ে যাব ছুটি। আমার কাছে তুই নামক আস্ত একটা সুখ আছে, আমার পিচ্চিটাকে দিয়ে আরেকটা সুখের রাজ্যে ভাসিয়ে দিয়েছিস বোকাপাখি। এত খুশি আমি কোথায় রাখব বল? আজকাল যখনই আমি তোদরর কথা ভাবছি তখনই আমি আনন্দে হারিয়ে যাচ্ছি। আমার এত সুখ সুখ লাগে তোদের মা মেয়ের কথা ভাবতে! আচ্ছা? ও কবে আসবে? আর অল্প কয়টা দিন? আমি বোধহয় ওর জম্মালে খুশিতে পাগল হয়ে যাব রে ছুটি! ”
এটুকু বলেই আবির এবারে ছুটির পেটের দিকটায় গিয়ে বসল। ঘুমন্ত ছুটির মুখের দিকে একবার তাকিয়েই মুখ গুঁজল ওর ফুলো পেটে।পেটের উপর থেকে কামিজের অংশটা তুলে বার কয়েক চুমু আঁকল। মুহুর্তেই তার আম্মুটা ভেতর থেকে সাড়া দিল। নড়চড় দিয়ে বুঝাল বোধহয় সে আব্বুর উপস্থিতি টের পেয়েছে। আবির বরাবরের মতোই ড্যাবড্যাব করে মেয়ের নড়চড় দেখে। উপলব্ধি করে। পেটের যে অংশে যে অংশে মেয়ের নড়চড়ে ফুলে উঠল সেসব অংশে আদুরে স্পর্শ দিয়ে চুমু আঁকল। অতঃপর আদর দিয়ে বলল,
“ আব্বু তোমার জন্য চুড়ি এনেছে আম্মু। তাড়াতাড়ি চলে আসে আব্বুর কোলে,আর কত অপেক্ষা করাবে বলো? আব্বু তোমায় আদর করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আম্মু। ”
ছুটি যে এই পুরুষটার পাগলামো টের পায়নি এমন নয়। প্র্যেগনেন্সির পর থেকে সামান্য পর্দা নড়লে পর্যন্ত ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। ছুটি এতক্ষন নিরবেই অনুভব করছিল এই পুরুষটার পাগলামো। অতঃপর আবিরের চুড়ি আনার কথা শুনে শুধাল,
“ আপনাকে না অনেকবার বলেছি যে ও জম্মানোর আগে কিছু কিনবেন না?তবুও কিনেছেন? কেন কিনেছেন? নিষেত করেছিলাম না? ”
আবির তাকাল। ফের আরেকবার পেটে চুমু দিয়ে উঠে যেতে যেতে বলল,
“ আমার মেয়ে, আমি কিনব। তোর কি?হিংসে হচ্ছে তোর জন্য কিনিনি বলে? ”
ছুটির দৃষ্টি দেখার মতো। তার হিংসে হবে? মেয়ের প্রতি? মোটেই না!
.
সিয়া বাসায় ফিরল একটু আগেই। আসার পরই দেখল বাসায় তালা ঝুলছে। সিয়া কপাল কুঁচকাল। বাসার লোককে কল দেওয়ার জন্য ব্যাগ থেকে ফোন নিবে ঐ মুহুর্তেই টের পেল তার ব্যাগে ফোন নেই। আশ্চর্য! সিয়া ব্যাগটা ভালোভাবেই খঁজে দেখল। সবটাই! অথচ ফোন নেই। সিয়ার কপাল কুঁচকে এল ফের। ফোন কোথায় গেল?
#চলবে….
#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৪১
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
হসপিটালে পৌঁছিয়ে যখন সেই সাদা কাপড়ে মোড়ানো দৃশ্যটা সাদের দৃশ্যমান হলো ঠিক তখনই সাদ থেমে গেল। অদ্ভুতভাবে তার মনে হচ্ছিল সে আর পা বাড়াতে পারছে না। দমবন্ধ হয়ে আসছে। বুকের বামপাশে তীব্র ব্যাথা হৃদপিন্ড খুবলে ধরেছে যেন। সাদ সত্যিই নিঃশ্বাস নিতে পারল না। অসম্ভব ভাবে তার হাত পা কাঁপতে লাগল যেন। চোখজোড়া লাল টকটকে হয়ে উঠল ক্রমশ। সুহা কেবল খেয়াল করছিল সাদকে। চোখজোড়া দেখে সত্যিই শিউরে উঠে। অতঃপর যখনই সাদকে জিজ্ঞেস করতে নিবে ও ঠিক আছে কিনা তখনই দেখল সাদ বুকের বা পাশটায় হাত দিয়ে চেপে রেখেছে। রক্তিম চোখজোড়া বেয়ে ফের পানি গড়াল তখনই। সুহা ছোটশ্বাস ফেলে। সে নিজেও কাঁদছে। পাশে তার শ্বাশুড়ি মাকে সামলাতেও তার হিমশিম খেতে হচ্ছে তবুও কেন জানি পৃথিবীর বুকে থাকা এই সাদ ছেলেটার জন্য তার অদ্ভুত কষ্ট হলো। বন্ধু বলে কথা!সাদ জীবনে ভালোবাসা নামক বস্তুটার একটিবারও মুখ দেখল না ভেবে তার দ্বিগুণ কান্না এল যেন। ছেলেটা প্রথমবার নিঃস্বার্থভাবে যাকে ভালোবাসল সে চোখের সামনেই অন্যের হলো, আর যাকে দ্বিতীয়বার ভালোবেসে নিজের জীবনে চাইল তাকে সৃষ্টিকর্তা কেড়ে নিল। কি নিষ্ঠুর! সুহার চিন্তা ভাবনাকে ভঙ্গ করে এই পর্যায়ে সাদ জ্ঞান হারিয়ে আচমকায় লুটিয়ে পড়ল হসপিটালের ফ্লোরে। সুহা চমকে উঠে। শ্বাশুড়িকে ছেড়ে এবারে দৌড়ে গিয়ে ধরতে নিল সাদকে। স্বচ্ছ তখন সাদা কাপড়ে মোড়া লা’শটার কাপড়টা উঠাতে নিবে ঠিক তখনই সাদের এই দৃশ্যটা দেখে তার দিকে এগিয়ে আসতে নিল। ঠিক তখনই তার কল এল। স্বচ্ছ তখন কল ধরার হুশে নেই। দৌড়াদৌড়ি করে সাদের কাছে যেতেই যখন আবারও কল এল তখনই কপাল টানটান করে বিরক্তই হলো। আচমকা কি বুঝে কল তুলল। ঠিক তখনই ওপাশ থেকে সিয়া বলে উঠল,
“ ভাইয়া? কোথায় তোমরা সবাই? আশ্চর্য! বাসায় তালা কেন হু?”
স্বচ্ছর কানে কন্ঠটা যেন চমৎকার কোন যাদু এসে ছুঁয়ে গেল মনে হলো। এক মুহুর্তের জন্য বিশ্বাস হলো না এই কন্ঠটা তার বোনেরই। স্বচ্ছর হঠাৎ চোখ বেয়ে জল গড়াল বোনের কন্ঠ শুনে। হৃদয়ে জেগে উঠল অফুরন্তত আশা আর সুখ সুখ অনুভূতি। স্বচ্ছ মুহুর্তেই উদ্গ্রীব হয়ে শুধাল,
“ সিয়া? এই সিয়া? কথা বল, তুই ঠিক আছিস তো সিয়া? বোন আমার… ”
সিয়া ততক্ষনে ভ্রু কুঁচকাল। ভাইয়ের এমন প্রশ্ন আর স্বর শুনে মুহুর্তেই শুধাল,
“ আমি ঠিক আছি ভাইয়া। তবে সম্ভবত আমার ফোনটা আমি কলেজের এক টিচারের কাছে ফেলে এসেছি ভুলে। উনি ফোন নিয়ে যাননি আজ,হাজব্যান্ডকে কি দরকারে কল দেওয়ার ছিল। আমি আমার ফোনটা দিয়েছিলাম ফেরার সময়ে। তারপর একসাথে বাসায় ফেরার জন্য রিক্সায় উঠলাম। উনিও উনার হাজব্যান্ডের সাথে কথা বললেন। তারপর রাস্তায় কি নিয়ে কথা বলতে বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম ফোনটা নিতে, উনিও হয়তো গল্পের মধ্যে প্রতিদিনের মতো নিজের ফোন মনে করে ব্যাগে নিয়ে নিয়েছেন। একদমই ভুলে গেছি ফোনটা নিতে। ”
স্বচ্ছর বুক হালকা হয়ে আসে। সুখ সুখ অনুভূতিতে তারও ইচ্ছে করে মায়ের মতে আহাজারি করে কান্না করতে। তার বোনটা বেঁচে আছে। বেঁচে আছে! ইশশ! এরচাইতে সুখের যেন আজ কিছুই নেই এই পৃথিবীতে। স্বচ্ছ চোখ বুঝে। মুহুর্তেই বোনকে শোনায়,
“ সে টিচার রিক্সায় করে বাসায় ফিরে গিয়েছিল বোন? ”
আজ তার বারবারই সিয়াকে “সিয়া” নয়, বরং বোন বলে ডাকতে ইচ্ছে হচ্ছে। তার একটামাত্র বোন। একমাত্র আদুরে বোন!সিয়া ভাইয়ের আদুরে স্বরে কিছুটা বিস্মিত হলেও হাসল। জানাল,
“ বাসায় তো ফেরেনি, তবে মাঝপথে উনার কিছু কেনাকাটা আছে বলে নেমে পড়েছিলেন ভাইয়া। কেন? তুমি কি আমার নাম্বারে আর কল দিয়েছিলে? উনি রিসিভ করেছিলেন? ”
স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অতঃপর গম্ভীর শান্তস্বরে জানাল,
“ সম্ভবত সে টিচার মা’রা গেছে বোন। তুই একবার হসপিটালে আসবি? উনার কোন আত্মীয়ের নাম্বার থাকলে কল করে জানানো উচিত। ”
সিয়া আকস্মিক খবরটা পেয়ে কেঁপে উঠল যেন। যে মানুষটার সাথে এতটা পথ এত গল্পগুজব করে হেসে হেসে কথা বলে এল সে মানুষটা আর বেঁচে নেই শুনে বিশ্বাস করতে মন চাইল না মেয়েটার। অবিশ্বাস্য স্বরে বলল,
“কিসব বলছো ভাইয়া? জ্বলজ্যান্ত মানুষটা কি করে মারা যেতে পারে? আশ্চর্য! ”
স্বচ্ছ সবটাই খুলে বলল। সিয়া ছোটশ্বাস ফেলে।সবটা বুঝে উঠে তাড়াতাড়ি সে রিক্সা নিল। ভাই এর থেকে হসপিটালের নাম জেনে নিয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা হলো দ্রুত।
.
সাদের জ্ঞান ফিরেছে। তার পরপরই তাকে সুহা জানিয়েছে যে সিয়া বেঁচে আছে। সিয়া মারা যায় নি। সাদ বিশ্বাসই করল না সে কথাটা। ভেবে নিল সুহা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেে।পাগলের মতো হসপিটালের করিডোর থেকে হন্তদন্ত পায়ে সেই সাদা কাপড়ে মোড়ানো লা’শটার দিকে যেতে নিতেই আচমকা দেখা মিলল সিয়ার। মাত্রই প্রবেশ করছিল। পরনে বরাবরের মতো শাড়ি, কাঁধে ব্যাগ। কপালে কিছু চুলে ঘামে লেপ্টে আছে। বোধহয় এতোটা পথ ছুটে আসার কারণেই মুখচোখ ঘামে আধভেজা। সাদ দৃষ্টি স্থির রেখেই তাকাল। এক পাও বাড়াল না আর। বুকের ভেতর জ্বলন্ত সেই আগুন আচমকায় শীতল হয়ে এল। নিভে এল যন্ত্রনা। সাদের চোখ জ্বলজ্বল হয়ে উঠে। এই মেয়েটা বেঁচে আছে এই সত্যটুকু গ্রহণ করে সে চোখ বুঝে ফেলল অতি সুখে। কি সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে তার! সৃষ্টিকর্তা যদি আজ এই দৃশ্যের সম্মুখীন না করত তবে বোধহয় সে টেরই পেত না সিয়াকে এই এা পলক দেখতে পাওয়ার সুখ এতোটা গাঢ়! এতোটা প্রখর! সাদ ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের। অতঃপর সিয়া যখন তাকে অতিক্রম করে চলে যেতে নিবে ঠিক তখনই সাদ চোখ বুঝে থাকা অবস্থাতেই সিয়ার হাতটা আঁকড়ে ধরল। চোখ বুঝেই কি ভীষণ তীব্র আহ্বান নিয়ে ডেকে উঠল,
“ সিয়া? ”
সিয়া চমকায়। এই পুরুষটিকে সে খেয়ালই করেনি। অথচ কন্ঠটা তার চিরচেনা কন্ঠস্বর! সিয়া মুহুর্তেই তাকাল। সাদকে ওভাবে চোখ বুঝে, ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায় সে। নিজের হাতটা সাদের হাতের বাঁধনে টের পেয়ে শুধাল,
“ সাদ ভাই? আপনি? এখানে?আপনার কেউ হসপিটালে এডমিট আছে সাদ ভাই?”
সাদ মুহুর্তেই চোখ খুলল। তীব্র লাল রক্তিম চোখজোড়া দেখে সিয়া বিস্ময় নিয়ে তাকাল। সাদের নাকের অগ্রভাগও কি ভীষণ লাল দেখাল। সাদের কি কান্না পাচ্ছে? ঠোঁট কাঁমড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে? সিয়ার মাথা অতোশত প্রশ্নের ঘুরপাক খেতেই আচমকা সাদ বলল,
“ সিয়া? আমি প্লিজ একবার তোমায় জড়িয়ে ধরব? নিষেধ করো না…”
সাদ জিজ্ঞেস করল ঠিক। তবে অনুমতি টুকু নেওয়ার আগেই সে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল সিয়াকে। এতোটা শক্তপোক্ত ভাবে জড়িয়ে নিল যেন সে পারলে মেয়েটাকে নিজের বুকের ভেতরে ডুকিয়ে রাখবে। সাদ এতোটাই শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরল মেয়েটাকে।মুখ গুঁজল সিয়ার গলার অংশটায়।জড়িয়ে ধরেই তার চোখের পানিটা এবার তীব্র বেহায়ার মতো তৃতীয়বারের মতো নিজের উপস্থিতির জানান দিল। আকস্মিক ঘটনায় সিয়া প্রথমে হতভম্ব হলেও পরমুহুর্তেই নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল।গলার দিকে উষ্ণ তরলের উপস্থিতি টের পেয়ে সে ভ্রু ও কুঁচকাল। অতঃপর দ্রুত বিরক্তস্বরে বলে উঠল,
“কি হচ্ছে কি সাদ? ছাড়ুন। আমি আপনার ওয়াইফ নই,ছাড়ুন আমায় সাদ। ”
সাদ ছাড়ল না সিয়ার তীব্র অবহেলা পেয়েও। বরং আরো শক্ত করেই মেয়েটাকে চেপে ধরল নিজের সাথে। যেন খুব খুব করে চাইল এই মেয়েটাকে শক্তপোক্তভাবে জড়িয়ে ধরে নিজের হৃদপিন্ডের ভেতর ডুকিয়ে নিতে। সিয়া যখন ছটফট করল তাকে ছাড়ার জন্য সাদ তখন তার গলার দিকে মুখ গুঁজে কেবল এইটুকুই বলল,
“ আমার এই না পাওয়ার জীবনে অপূর্ণতার অংক বহু সিয়া। তুমি অন্তত আমার পূর্ণতা হয়ে ধরা দাও। তুমি অন্তত আমার হয়ে আমায় পূর্ণতার সুখ দাও। এটুকুই আবেদন তোমার প্রতি সিয়া। আজকের মতো নিষ্ঠুরতা আর কক্ষনো করার সাহস তোমার না হোক। কক্ষনো না! ”
কথাটুকু বলেই সাদ চুপ থাকল। সিয়া ততক্ষনে স্থির হয়ে গেল। বুঝার চেষ্টা করল সাদ কি বলল? কি বুঝাল? সাদ কথাগুলো বলার পরও কতোটা সময় তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ছিল। অতঃপর মুখ তুলল। সিয়াকে আর একটা শব্দও না বলে, সিয়ার দিকে আর একটিবারও না তাকিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরল নিজের মতো করে। সিয়া অদ্ভুত, অবাক হওয়া দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে থাকল। কি হলো এই পুরুষটার? এভাবে জড়িয়ে রাখল কেন এতোটা সময়? লোকটা কি কাঁদছিল? তার গলায় উষ্ণ তরল? মুহুর্তেই সিয়া গলায় হাত রাখল। হ্যাঁ, সত্যিই তো। তরল!তার মানে,,, সাদ কাঁদছিল? কান্না করতে করতে বলছিল কথাগুলো? কেন? সাদ কি বিয়ে করেনি এখনো?
.
রোহান বিছানায় শুঁয়ে আছে।তার বুকের উপরই বেশ আরাম করে বসে পড়েছে তার একমাত্র মিষ্টিমতো মেয়েটা। অতঃপর দুই হাত বাড়িয়ে নিজের আব্বুর চুলগুলো মুঠো মুঠো করে ধরে যেন আলাদা আনন্দ মিলছে তার। রোহান নিজের একমাত্র কন্যার এহেন কান্ডে ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠছে একটু সময় পরপরই। অথচ তার মেয়ের আলাদাই আনন্দ এতে। একটু সময় পরপরই মুঠোভর্তি চুলগুলো দিচ্ছে টান। রোহান হতাশ হয়ে চোখ ছোটছোট করেই তাকাল। বলল,
“ মা, আব্বুকে ব্যাথা দিয়ে কি মজা পাচ্ছো?”
কথাটা বলামাত্রই রাহা হেসে উঠল খিলখিল করে। বিছানায় রোহানের পাশাপাশিই বসল।মেয়েকে বাহ্ বা দিয়ে মুহুর্তেই বলে উঠল,
“ সাব্বাশ! এইনাহলে আমার মেয়ে? আরো বেশি বেশি করে চুল টানো আম্মু। আম্মু তোমার পাশে আছে। ”
ছয়মাসের এইটুকু মেয়েটা বেশ আগ্রহ নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকাল মায়ের দিকে৷ মায়েে হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে সেও হাত নাড়িয়ে মুহুর্তেই হেসে উঠল যেন। পরমুহুর্তেই পরম আগ্রহে দুই হাত জোড়া এগিয়ে থাবা বসিয়ে আঁকড়ে ধরল মায়ের লম্বা চুলগুলোর একাংশ। দুইহাতে সেই লম্বা চুলগুলো টেনে নিয়েই যেন সে বড্ড খুশি। মুহুর্তেই প্রফুল্লময় হাসি উপহার দিয়ে বাবার বুকে হাত পা নাড়িয়ে হৈ চৈ করে উঠল সে। আর রাহা তখন বহু কষ্টে মেয়ের হাতের মুঠো থেকে নিজের চুল ছাড়াতে ব্যস্ত। রোহান হাসে রাহার অবস্থা দেখে। অতঃপর মেয়ের গালে হাত রেখে বড্ড মিষ্টি গলায় বলল,
“ আম্মু? মা কষ্ট পায় না? ছেড়ে দাও। আমরা বাইরে থেকে ঘুরে আসব। ”
রোহানের ঐটুকু মেয়ে কথাটা বুঝল না হয়তো, তবে বাবার আদর পেয়ে মুহুর্তেই ছেড়ে দিল মায়ের চুল। রোহান হাসল। রাহা বিড়বিড় করে বলল,
“বাপ বেটি দুইজনই মীরজাফর! ”
রোহান হেসে উঠল উচ্চআওয়াজে। তার মেয়েটা বাবার এমন হাসি খুব আগ্রহ নিয়েই তাকিয়ে দেখল। রোহান অবশ্য পরপরই মেয়েকে কোলে নিয়ে উঠে বসল। রাহাকে ফিসফিস করে বলল,
“ মীরজাফর হলেও আপনার প্রতি ভালোবাসার কোন কমতি নেই মহারাণী।”
.
সন্ধ্যে হয়ে আসার সময়টাতে ছুটি পায়চারি করছিল রুমে। বিকাল থেকেই পেটে একটু চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছিল তার। এদিকে আবির তখনও বাসায় আসেনি। সে পরিচিত আত্মীয়ের বিয়েতে গিয়েছে। যদিও যেতে চায়নি, ছুটি নিজেই নিশ্চিন্ত করে পাঠিয়েছে।অথচ আজই এমন পেটের ব্যাথা হবে কে জানে? ছুটি প্রথমে কাউকে বলবে কি বলবে না বুঝে উঠল না।কিন্তু ক্রমশ যখন ব্যাথা বাড়তেই লাগল তখন আর সহ্য করতে পারল না মেয়েটা। দ্রুত জানাল বাসার লোকজনকে। বাসার সবাইও দ্রুত হসপিটালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। আবিরকে জানানো হলো ফোনেই। গাড়িতে রাস্তা থাকায় অবস্থাতেই আবির বারবার কল দিল। ছুটি সবটা সময়ই ব্যাথা সহ্য করে কানে ফোন নিয়ে রাখল। আবির শুধু বলে গেল,
“ ছুটি?তোর খুব কষ্ট হচ্ছে না প্রাণ?খুব বেশি যন্ত্রনা হচ্ছে না? এই ছুটি? কথা বল না?তুই স্ট্রং না? এই ছুটি?”
আবির খবরটা পাওয়ামাত্রই ফেরার জন্য রওনা হয়েছিল। সে ড্রাইভ করছিল নাকি বউয়ের চিন্তায় পাগল হয়ে শুধু এসব বলে যাচ্ছিল কে জানে।ছুটি যদিও কয়েকবার আশ্বাস দিয়ে বলেছে,
“ চিন্তা করবেন না, আমি সহ্য করে নিব। আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি ফিরুন। অপেক্ষা করছি। ”
আবির দ্রুতই ড্রাইভ। যতোটা তাড়াতাড়ি পারে যেন সে পৌঁছানোর চেষ্টা করল। অতঃপর হসপিটালে পৌঁছানোর আর একটু আগেই সম্মুখীন হলে জ্যামের। আবির নিজের মুখেই গা’লি দিল ভাগ্যকে নিয়ে। বারবার ফোন দিয়ে খবর নিচ্ছিল। অতঃপর একটু পর ফিরতি কল এল । আবির দ্রুতই কল তুলল। ছুটি এবারে কেঁদে উঠল আচমকায়৷ ভেজা স্বরে শুধাল,
“ আমি একটাবার আপনার দেখা পেতে চেয়েছিলাম।আপনি তো এলেন না। আমি আপনি না আসা পর্যন্ত ভেতরে যাব না।”
আবিরের কলিজাটা যেন কেমন করে উঠল। এই সময়টা ছুটির তাকে প্রয়োজন। খুব করে প্রয়োজন। অথচ সে নেই। আবিরের যে কি দমবন্ধ লাগে সে বুঝাতে পারে না যেন। আবির ঠান্ডাস্বরে বুঝানোর চেষ্টা করে বলল,
“ বোকাপাখি? আর একটু, এইতো চলে আসছি আমি। আর একটু অপেক্ষা কর প্রাণ। ”
ছুটি ব্যাথা সহ্য করতে পারে না। আহাজারি করে উঠে। আবির সে আহাজারি শুনে চোখ বুঝল। বুকে তীব্র যন্ত্রনাময় একটা অনুভূতি নিয়ে বলল,
“ তোর খুব কষ্ট হচ্ছেনা? আমি, আমি যদি তোর কষ্টটা ভাগ নিতে পারতাম…. আমার পাগল পাগল লাগছে ছুটি। আমি আর কক্ষনো বাবা হতে চাইব না, কক্ষনো না৷ আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে। আমি বোধহয় তোকে এভাবে দেখলে সত্যিই সহ্য করতে পারতাম না। ”
কথাগুলো বলতে বলতেই আবির ফোনের ওপাশ থেকে অন্য কারোর কন্ঠ শুনল,
“ মিঃ আবির? উনাকে বুঝান। উনি এক্ষুনি ও.টি. রুমে না গেলে ক্ষতি হবে। উনার এবং উনার বাচ্চার দুইজনেরই। আপনি কখন আসবেন তা তো শিওর নই আমরা, প্লিজ উনাকে বুঝান। ”
আবির রিস্ক নিতে পারল না। ফোনটা ছুটিকে দিতে বলে বুঝিয়ে গেল কতোটা সময়৷ বলে গেল অনবরত সে দ্রুত ফিরছে, ছুটি যাতে ভেতরে নিয়ে যেতে নিষেধ না করে। সে দ্রুতই ফিরছে! ছুটি শেষমেষ মেনে নিল। যন্ত্রনায় কাঁতরাতে কাঁতরাতে শেষবার শুধু আবিরকে বলল,
“ শুনুন, আমার শেষ কথাটা…যদি আমার কিছু হয়, আমার মেয়েকে আপনি কখনো অনাদর করতে পারবেন না। কখনোই না। দ্বিতীয় বিয়ে করার হলে আমার মেয়েটাকে আমার আম্মুর কাছে দিয়ে যাবেন। আমার মেয়েকে কখনো কষ্ট দিবেন না।”
আবির থম মেরে থাকল। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল হৃদয় থেকে। বলল,
“ তোর কিছু হবে না ছুটি। তোকে অবশ্যই আমার মেয়েসহ ফিরতে হবে। আমার মেয়েসহ ফিরে না এলে আমিও মেয়েকে আদর করব না। তুই সহ একসাথে আদর করব।মাইন্ড ইট। ফিরতে হবে তোকে। ”
শেষ বাক্যটা আবির কিছুটা শক্ত স্বরেই বলল৷ আবির অতিরিক্ত চিন্তায় অস্থির হয়ে কপালে আঙ্গুল চালিয়ে শিথীল করার চেষ্টা করল। বারবার সৃষ্টিকর্তাকে বলে গেল তার স্ত্রী এবং সন্তানকে যাতে সুস্থ রাখে।
অতঃপর আবির যখন হসপিটালে এল তখন ছুটিকে ভেতরে নেওয়া হয়েছে। ছুটি নাকি অনেকবার তার সাথে দেখা করার জন্য পাগলি করেছে। তাকে কল করার আগেও অনেকবার জানতে চেয়েছে আবির কখন আসবে। আবিরের পাগল পাগল লাগল যেন নিজেকে। কেন তাকে ঐ পরিচিতের ইনভাইটেশন রক্ষার্থে সে বিয়েটায় যেতে হলো? কেন? আবির ছটফট করে। অস্থিরতায় অস্থির হয়ে বারবার মাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল আর কতক্ষন লাগবে? তার ছুটিটা ফিরবে তো? তার আম্মুটা ঠিকমতো জম্মাবে তো? আবির চিন্তায় অস্থির হয়ে বারবার যখন পায়চারি করছিল ঠিক তখনই অপর পাশ থেকে ভেসে আসল তীব্র আহাজারি আর ক্রন্দনের আওয়াজ। আবির ফিরে চাইল। একটা মেয়েলি শরীর পড়ে আছে চোখ বুঝে, নিথর দেহ! আর তাকে আঁকড়েই কেঁদে যাচ্ছে এক যুবক। বারবার বলছিল কি করে তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারল? আবির বুঝল, যুবকটি মেয়েটির স্বামী। এবং মেয়েটি যে মা’রা গেছে তাও বুঝতে পারল। আবির সেই দৃশ্যটা দেখার পর আচমকাই টের পেল তার বুকের ভেতর তীব্র মোঁচড়! একটাবার ঐ যুবকের জায়গায় সে নিজেকে বসিয়ে অস্থিরতায় অস্থির হয়ে উঠল। না, সে বাঁচতে পারবে না। ছুটিকে ছাড়া তার বেঁচে থাকা সম্ভবই নয়। কি করে বাঁচবে সে? আবিরের শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হয়ে এল।হৃদয়ের ভেতর কি তীব্র ব্যাথা, যন্ত্রনা, চাপা অস্থিরতা!এই এইটুকু সময়, মাত্র কয়েক মিনিট! এই কয়েক মিনিটকেও তার কাছে এই মুহুর্তে বিশাল সময় লাগছে। যেন সময় ফুরিয়ে আসছেই না।আবির বারবার প্রার্থনা করল কেবল তার জীবনের বিনিময়ে হলেও তার স্ত্রী এবং কন্যার জীবনটা যাতে সুরক্ষিত রাখে তার জন্য। অতঃপর একটা সময় পর আবিরের কানে আরো একটা ক্রন্দনরত স্বর ভেসে এল। তবে এটা নবজাতকের কান্নার আওয়াজ। চিকন সরু কন্ঠের কান্না। আবির বুঝে উঠল না তার হৃদয়ে কি বয়ে গেল। তবে তখনও তার অস্থির হৃদয় শান্ত হলো না। জ্বলন্ত শিখার ন্যায় তখনও বুকের ভেতর কি যেন দাউদাউ করে জ্বলতে লাগল। আবির দ্রুতই তার আম্মুকে জিজ্ঞেস করল,
“ আম্মু? কান্নাটা? আমার মেয়ের না? ছুটি আর ও ঠিক আছে না আম্মু? ডক্টর আসছে না কেন? আমি একবার ছুটির কাছে যাব আম্মু,একবার…আমার ছুটিটা কতোটা যন্ত্রনায় ছিল আম্মু। কতোটা কষ্ট হচ্ছিল আমার ছুটিটার আম্মু। ”
এইটুকু বলতে বলতেই একজন নার্স এলেন। কোলে সদ্য জম্মানে বাচ্চাটিকে নিয়ে আবিরের দিকে এগিয়ে ধরে বললেন,
” আপনার মেয়ে। মাশাল্লাহ , কি মিষ্টি! ”
আবিরের দিকে এগিয়ে ধরলেও আবির কোলে তুলল না তার মেয়েকে। বরং তীব্র আগ্রহ আর ব্যাকুলতা নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,
“ ছুটি? ছুটি কেমন আছে? আমি ওর কাছে যাব নার্স। আমার ছুটিকে আমায় দেখতে হবে…”
#চলবে…
#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৪২
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
আবির সেইসময়েই হুলস্থুল বাঁধিয়ে ছুটির কাছে গেল৷ অতঃপর ছুটিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে কেমন করে তাকায় যেন সে। বুকের ভেতর কি যেন বিশাল কিছু ছুটির মুখটা দেখামাত্রই সরে গেল। আবির দ্রুত নিজের প্রিয় নারীটির মুখ আগলে ধরে। চোখমুখ ভিজে আছে মেয়েটার। ঘাম কিংবা কান্নায় ভেজা দেখাচ্ছে মুখ,গলা, নাকের অগ্রভাগ।বড্ড ক্লান্তি যেন ভেসে উঠছে মুখটায়। তবুও কোথাও একটা প্রাপ্তির সুখ!আবির অপেক্ষা করে না। উপস্থিত ডক্টর আর নার্সের সামনেই মাথা নিচু করে দ্রুত চুমু আঁকল ছুটির গালে, কপালে,নাকে।বড্ড অস্থিরতা নিয়ে নিজের প্রিয় নারীর মুখ আগলে ধরে শুধাল,
“ তুই ঠিক আছিস না ছুটি? তোকে কতোটা কষ্ট পেতে হয়েছে। আমি আর কখনোই বেবি নিব না ছুটি। ”
উপস্থিত এতগুলো মানুষের সামনে আবির যে এমন একটা কান্ড করে বসবে ছুটি টেরই পায়নি। আড়ষ্ট হয়ে সে দুয়েকবার ডক্টর আর নার্সদের দিকে তাকাল। সবাই কেমন করে তাকিয়ে যেন হাসছে। ছুটি দৃষ্টি সরাল দ্রুতই৷ আবিরের দিকে চেয়ে বলল,
“ কোলে নিয়েছেন ওকে? সুস্থ তো ও পুরোপুরি? ”
আবির এবার থতমত খেয়ে গেল। মেয়েকে তো কোলেই তোলে নি সে। ভালো করে দেখেওনি মেয়েটাকে। কি বলবে? ছুটি নিশ্চয় কষ্ট পাবে কোলে নেয়নি শুনলে? আবির যখন এসব ভাবতে লাগল ঠিক তখনই উপস্থিত ডক্টরটি কিছুটা হাসলেন। এগিয়ে এসে আবিরকে বললেন,
“ আপনার স্ত্রী ঠিক আছে মিঃ আবির। আপনি এবার দয়া করে বাইরে গিয়ে মেয়েকে কোলে নিন৷ আমাদেরকে আমাদের কাজটা করতে দিন। উনাকে কিছুক্ষন পরই কেবিনে দেওয়া হবে। হু?”
আবির বুঝে উঠল। ছুটির দিকে তাকিয়ে আবারও তার কেমন প্রশান্তি কাজ করল। ডক্টরকে শুধাল,
“ স্যরি, স্যরি ম্যাম।যাচ্ছি আমি। আমার ওয়াইফ সুস্থ আছে না? হু?”
ডক্টর সাহেবা হেসেই শুধালেন,
“ একদম সুস্থ। এবার যান।”
আবির তবুও যাচ্ছে যাচ্ছে বলে যায় না। আরও একবার ঝুঁকে গিয়ে ছুটির কপালে ভালোবাসার পরশ দিল। ফিসফিস স্বরে বলল,
” বোকাপাখি? ভালোবাসি। ”
এটুকু বলেই পরমুহুর্তে সে পা বাড়াল যাওয়ার পথে। ছুটি নিজের এত কষ্টের মাঝেও এবার হাসল কিছুটা। ডক্টর তখন ছুটির হাসিটা খেয়াল করে দ্বিগুণ হেসে বললেন,
“আপনারা দুইজনই পাগল। একজন হাজব্যান্ড আসা ছাড়া ও.টি রুমে আসতে চাইলেন না, আরেকজন বউ এর চিন্তায় অস্থির হয়ে নিয়ম ভেঙ্গে ও.টি.রুমে চলে এসেছে।”
.
ছুটি শুনতে পেয়েছে আবিরকে যখন বাচ্চা কোলে নেওয়ার জন্য বলা হলো আবির নাকি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে কোলে তুলেনি। বরং বউ এর খবর জিজ্ঞেস করেছে। এইটুকু খবর পেয়ে অন্য বউরা কেমন খুশি হয় তা ছুটির জানা নেই, তবে ছুটি মা হিসেবে খুশি হতে পারল না। তার এইটুকু বাচ্চাটা! সবেমাত্র দুনিয়ায় এল। কি ভীষণ মিষ্টি! ওকে কোলে তুলল কেন ওর বাবা? এটুকু দুঃখে ছুটি তখন থেকে দুঃখ করছে। যদিও এর পরের সময়টা তার ছোট্ট বাচ্চাটা তার বাবার কোলেই আছে। এমনকি, এখনও। ছুটি ফোঁসফোঁস করছে। আবিরের মাকে দেখতে পেয়ে মুহুর্তেই শুধাল,
“ মেয়ে জম্মালে নাকি খুশিতে পাগল হয়ে যাবেন উনি। অথচ মেয়েকে কোলে পর্যন্ত নেননি প্রথমে আপনি? নিষ্ঠুর! আমার মেয়ে, আমার কোলে দেওয়া হোক। ভুলেও উনার কোলে দিবে না আর মামনি। ”
আবিরের মা হাসল। ছুটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“ এমন করছিস কেন? আমার ছেলেটা তোর চিন্তায় অস্থির ছিল।”
ছুটি নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“ তো? তাই বলে আমার মেয়েটা ফেলনা নাকি? জন্মের পর মায়ের কোলে না থাকুক, বাবার কোলে থাকার তো অধিকার ওর ছিল। অথচ উনি, উনি কতোটা খারাপ। আমি বলেছিলামও উনাকে যাতে আমার মেয়েকে কষ্ট না দেয়। ”
আবির ছোট ছোট চোখে চেয়ে ছিল। এতক্ষন মেয়েকে সযত্নে কোলে নিয়ে মেয়ের মুখের দিকে চেয়েছিল সে৷ হুবুহু ছটির মুখের আদর।চোখ মুখ, এমনকি ঠোঁটটাও কি মিষ্টি!আবির ছুটির কথা শুনে শুধু হাসল। মেয়েকে প্রথম দফায় কোলে না নেওয়ার অপরাধে তখনই ছুটির থেকে ফিরে মেয়েকে কোলে নিয়ে স্যরি বলেছে সে। তবুও মেয়ের মা যে কিভাবে খবর পেল। আবির শান্ত চাহনিতে চেয়ে শুধু তার মাকে বলল,
“ আম্মু? ওকে বলো। এটা আমারও মেয়ে। ও কেবল ওর মেয়ে ওর মেয়ে করছে।”
আবিরের মা হাসল কেবল। যেতে যেতে বলে গেল,
“ তোরা পারিসও বটে! মেয়ের বাপ মা হয়েছিস। এবার তো বুঝতে শিখ। ”
ছুটি অবশ্য বুঝল না। ঠোঁট উল্টে শুধাল,
“ আপনি কি করে পারলেন ওকে উপেক্ষা করতে? ”
আবির হতাশ শ্বাস টানে। ছুটির পাশে তার এইটুকু বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বসে শুধাল,
“ দোষ টা তোর। ফোনকলে শেষবার আমায় কি কি বললি? কিছু হয়ে গেলে মানে? ওটুকু কথাই কি যথেষ্ট নয় আমার তখনকার বাবার হওয়ার সুখ উপলব্ধি না করার জন্য? তুই ঠিক আছিস কিনা ঐটুকু না জেনে আমি ওকে কোলে নিয়ে সুখ সুখ উপলব্ধি করতে পারতাম না তো। আর ওর ও তো মন খারাপ হতো বাবার কোলে এসে বাবার মন ভালো হয়নি দেখলে তাই না?”
ছুটি শুধাল,
“ উচিত করেননি। ”
আবির হাসল। বলল,
“ ঠিক আছে!অনুচিত কার্য করার জন্য ক্ষমা চাইছি। আপনার এবং আমার ছোট্ট মায়ের কাছে। দুইজনের কাছেই! ”
ছুটি অন্যদিকে ফিরে জানাল,
“ দিলাম না ক্ষমা। ”
আবির হাসে কেবল। ফের বলল,
“ আমার মেয়ে দিলেই হবে। তোরটা আমি আদায় করে নিব নাহয়। ”
ছুটি কেমন করর যেন চাইল এবারে।
“ ওভাবে তাকাচ্ছিস কেন?”
ছুটির হুট করেই যেন কান্না পেল। কেন সে নিজেও জানে না। মন খারাপ হয়। নিজের মেয়ের দিকে আরেকবার তাকিয়ে সে উত্তর করল,
“ জানি না। ”
আবির ছোটশ্বাস ফেলে। জানাল,
“ মন খারাপ? ”
ছুটির উত্তর আসে না। আবির ফের বলল,
“ আমি কিন্তু সত্যিই অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো খুশি হয়েছি। কিন্তু অজ্ঞান হচ্ছি না। বুকে হাত রাখ, দেখ কেমন টিপটিপ করছে এখনো। ”
কথাটা বলেই ছুটির একটা হাত টেনে রাখল বুকের বা পাশে। ছুটি তাকাল কেমন করে যেন। আবির হাসে। মেয়েকে একটা চুমু দিয়ে পরমুহুর্তে মেয়ের মাকেও চুমু দিল। বলল,
“ আমার না এখন সত্যিই খুশিতে অজ্ঞান হওয়ার মতোই ফিল হচ্ছে। আমার লক্ষী মেয়েটা একদম তোর মতো হোক বোকাপাখি। আমার আরেকটা ছোট্ট ছুটি! ”
.
সিয়ার সেদিনটা ব্যস্ততাতেই কাঁটল। ঐ টিচারটার হাজব্যান্ডকে জানানো, এরপর ওখানে থাকা৷ অনেকটা সময়ই!টিচারটার সাত বছরের মেয়েটাকে ভুলিয়ে রাখা সহ বহু ব্যস্ততা! অতঃপর যখন প্রায় সন্ধ্যার পরপর সময়টাতে সে বাড়ি ফেরার জন্য রিক্সার জন্য অপেক্ষা করল ঠিক তখনই আবারও দেখা মিলল সাদের সাথে। সাদ বোধহয় এখানেই ছিল, অপেক্ষা করছিল। সিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বারবার দেখা হচ্ছে কেন এই লোকের সাথে? সাদ এগিয়ে এসেই শুধাল,
“ সিয়া? ”
সিয়া তাকায়। উত্তর করে,
“ হু? ”
“ কোন একদিন তোমায় কথা দিয়েছিলাম রাতের শহর দেখাব। দুর্ভাগ্যবশত সে কথাটা রাখার আগেই পালিয়ে গিয়েছিলাম একপ্রকার। আজ কি এই সন্ধ্যের আকাশটাই ভাগ করবে আমার পাশে হেঁটে?”
সিয়া প্রথমে কি বলবে বুঝে উঠল না। অতোগুলো বছর পর এই কথাটা মনে রেখেছে? আশ্চর্য! কেন? সিয়া ভেবে উত্তর করল,
” করাই যায়, যদি না আপনার স্ত্রী রাগ করে। তবে রাগ করার সম্ভাবনাই বেশি। যেঁচে কারোর সংসার ভাঙ্গতে চাই না। ”
সাদ হাসল। বলল,
“ সংসারই নেই যেখানে, ভাঙ্গবে কি করে? ”
“ মানে? ”
“ কিছুই নয়। আমি জানি তুমি ক্লান্ত, তবুও আজ হেঁটেই বাসায় ফিরবে প্লিজ? ”
সিয়া এবারে সম্মত হলো। বলল,
“ দশ মিনিটেরই তো ব্যাপার। পারব। চলুন। ”
সাদ হাসে। পথ চলতে চলতে ভাবল কিভাবে কি বলা উচিত। অথচ সাদ কিছুতেই কিছু গুঁছিয়ে উঠতে পারছে না। তারপর হঠাৎই শুধাল,
“ সিয়া? আমার প্রতি আজও অনুভূতি কিছু রেখেছো কি? আজও কি আমায় ভালোবা…”
সিয়া শব্দটা পুরোপুরি বলতে দিল না। মুহুর্তেই বলল,
“ পাগল নাকি! অন্যের বরকে ভালোবাসব এখনো? ছিঃ! দেখুন আর যায় করি না কেন, অন্যের বর,অন্যের বয়ফ্রেন্ড এসব নিয়ে টানাহেঁছড়া করার মতো মন মানসিকতা আমার নেই সাদ ভাই। আমার ব্যাক্তিত্বটা এতেটা লেইম না। ভালোবাসায় শত বেহায়াপনা একসময় করলেও এতোটা বেহায়া আমি নই যে অন্যের বরের প্রতিও দুর্বলতা রাখব।”
সাদ চোখ মিনমিন করে তাকায়। বলে,
“ আমি বোধহয় তোমার প্রতি দুর্বলতা রেখেছি। এরজন্য কি করণীয়? ”
সিয়া মুহুর্তেই নাক মুখ কুঁচকাল।বলল,
“ ছিঃ! বিবাহিত আপনি সাদ ভাই। নিজ স্ত্রী ব্যাতীত অন্য একটা মেয়েকে এমন কথা বলা শোভনীয় নয়। ”
সাদ সে ছিঃ এর ধার ধারল না। হঠাৎ বলল,
“ আমার সে স্ত্রীটা তুমি হবে সিয়া? ”
সিয়া আকস্মিক কথাটায় কেমন করে তাকায়। বলে,
“ হু? ”
সাদ হেসে মাথা চুলকে বলল,
“ বারবার বিবাহিত বলছো। অথচ আমি আজ পর্যন্ত সচক্ষে নিজের বউ এর দেখা পাইনি। তুমি যদি সে বউ হয়ে আমার লাইফে আসো তাহলে নাহয় স্বীকার করে নিলাম এবারে যে আমি বিবাহিত! ”
সিয়া বুঝে উঠে না যেন। বলে,
“ মানে? আপনি বিবাহিত নন? ”
সাদ জানাল,
“ এখনও তো নই। ”
“ কেন? ”
এই পর্যায়ে সাদ সিয়ার চোখের দিকে তাকিয়েই হাসল। বলল,
“ যে কারণে তুমিও অবিবাহিত। ”
সিয়া ভাবে কেমন। সেদিন রিক্সায় তাহলে? বলল,
“ আপনার সাথে একজনকে দেখেছিলাম আমি। ”
সাদ এই প্রশ্নটারই অপেক্ষায় ছিল যেন। মুহুর্তেই উত্তর করল,
“ বোন হয়। ”
“ ওহ। ”
এরপর কথা হলে না। নিরবেই হাঁটল দুইজনে। অতঃপর যখন সিয়া বাসা অব্দি পৌঁছাল সাদ বলল,
“ মতামত জানিও। ”
“ কিসের? ”
সাদ বড্ড মিষ্টি হেসে বলল,
“ অবিবাহিত থেকে বিবাহিত হওয়ার পথে সঙ্গী হওয়ার প্রস্তাবের। ”
সিয়ার কপাল কুঁচকানো। লোকটা কি আজ এতবছর পর পাগল হয়েছে? নাকি আন্দাজে বকছে? বলল,
“ আমি জানি না আপনি মজা করছেন কিনা।”
সাদকে হঠাৎ গম্ভীর দেখাল।জানাল,
“ তোমার সাথে কখনো তেমন মজা আমার হয়নি সিয়া। ”
“ হু। ”
সাদ নিজের গম্ভীরতা বজায় রেখেই আবার বলল,
“ তবে ভবিষ্যৎ এ হলে হতে পারে। ”
সিয়া কেমন করে যেন তাকায়। বুঝার চেষ্টক করে। পরমুহুর্তেই বলে,
“ আমাকে যেতে হবে সাদ ভাই। ”
সাদও দ্রুত বলল,
“ ওকে, অপেক্ষায় থাকলাম মিস সিয়া। ”
#চলবে….