#প্রেমের_সমর
#পর্ব_০৬
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
চিকন একটা মেয়েলি হাত।স্বচ্ছ আড়চোখেই তাকিয়ে দেখল জামার আড়ালে থাকা সুহার হাতটা। সুহা এখনও আবিরের সামনে হাত মেলে দেয় নি। তবে যেভাবে আছে সেভাবেই স্বচ্ছ দেখল।ছবির হাতের সাথে মিলাতে পারল না যেন। অবশ্য ওভাবে আড়চোখে দেখে বুঝা যায়? স্বচ্ছ ছোট শ্বাস ফেলতেই আবির আবারো সুহার হাত দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে বলে উঠল,
“ আপু? আমরা আসলে একজনকে খুঁজছি। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার হাতটা দেখান প্লিজ! ”
সুহা তখনও কানে ফোন চেপে দাঁড়িয়ে। আবিরের কথা শুনে মহা বিরক্ত হয়েছে এমন ভাব করে অবশেষে বলল,
” জ্যোতিষি নাকি আপনি? হাত দেখে মানুষ খুঁজে বের করতে পারেন? ”
আবির, সাদাফ, স্বচ্ছ আর নিধি চারজনই বুঝে নিল এই মেয়ে ত্যাড়ামি দেখাবেই। স্বচ্ছ বিরক্ত হয়। এই মেয়েকে বেশিবার হাত দেখাতে বললে নির্ঘাত ভাব বেড়ে যাবে। খুব মুখ চালাবে। তাই বুদ্ধি করে সুহার নাম্বারেই কল করল সে মুহুর্তে। অন্তত ফোন বেঁজে উঠলে তো বুঝতে পারবে এটা সুহা কিনা?তাই সেই মোতাবেক চ্যাক করল ফোন বেজে উঠে কিনা। অথচ দুই তিনবার কল দেওয়ার পরও ফোন বাঁজল না। স্বচ্ছ যেন মনে মনে নিশ্চিত হলো এই বেয়াদব মেয়েটা সুহাসিনী না। দুনিয়ায় এত মেয়ে থাকতে তার বউ নিশ্চয় এমন একটা বেয়াদব মেয়ে হবে না? মনে মনে মেয়েটাকে দু চারটা কথা শুনানোর উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে গেল সে। বিরক্ত স্বরে বলল,
“না, ও আসলে হাত দেখে বলতে পারে কার মাথায় কয়টা তার ছিড়া আছে। যায় হোক, আপনার মাথার সব তার যে ছিড়াই তা আমাদের জানা কথা আপু!এখন যান, আপনার হাত দেখার দরকার নাই আমাদের।”
অপমানে সুহার ফর্সা মুখ লাল হয়ে এল। মুখ বিকৃত করে তেজ নিয়ে জবাব দিল,
“ আশ্চর্য! আমি কি গলা ফাঁটিয়ে চিল্লাইয়ে বলতেছিলাম যে, ‘আসুন, আমার হাত দেখে যান। আমার হাত না দেখলে আমি গড়াগড়ি দিয়ে কান্না করব।’ বলেছি?”
স্বচ্ছ ফোঁড়ন কেঁটে উত্তর দিল,
“ আপনার যা গলা এতে চিল্লানোর প্রয়োজন নেই। এলাকার মানুষ এমনিতেই শুনবে। ”
সুহা দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর করল,
“ আর আপনাদের যা চরিত্র তাতে আমি এতটুকু অন্তত বুঝেছি মেয়েদের বিরক্ত করা ছাড়া আর কোন কাজকাম নাই আপনাদের। সব কয়টাই ইভটিজার! ”
“এই হ্যালো! ইভটিজার বলছেন কাকে? কিছু করেছি আপনার সাথে?”
সুহা হাত চালানে ভঙ্গিতে বলে উঠল,
“ এ্যাঁ! আমার সাথে কিছু করার সুযোগ দিব নাকি?মে’রে কোমড় ভেঙ্গে দিব একেবারে।”
স্বচ্ছর হাসি আসে। এই এইটুকু দেখতে মেয়ে কিনা তার মতো ছেলের কোমড় ভেঙ্গে দিবে? যা মুখেই কথা এই মেয়ে! তাই তো হেসে হেসে উপহাস করে বলে,
“ ঐদিনের মতো ঐটুকু ঘুষি দিয়ে কোমড় ভাঙ্গবেন? ”
মুহুর্তেই পেঁছন থেকে ভেসে এল অট্টহাসির আওয়াজ। সুহা ফিরে দেখল। ছেলেটা সুহার স্টুডেন্ট, ওরফে স্বচ্ছর কাজিন তিহান।তিহানদের বিল্ডিং আর স্বচ্ছদের বিল্ডিং পাশাপাশিই! সে হিসেবে প্রায়সই যাতায়াত হয়। আর সে যাতায়াতের বিষয় ধরেই তিহান কথাগুলো শুনে ফেলেছে এবং অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছেে।সুহা হাসির আওয়াজ শুনেই ক্ষিপ্র দৃষ্টিতে তাকায়। স্বচ্ছকে এই মুহুর্তে সহ্য হচ্ছে না তার। সত্যিই মে’রে কোমড় ভেঙ্গে ফেললেও সে নিজেকে দোষারোপ করবে না এই মুহুর্তে। তবে তা করল না সে। উল্টো তিহানের দিকে তাকিয়ে সুন্দর ভাবে ডাকল,
“ একটু এদিকে আয় তো তিহান!”
তিহান বেচারা গদগদ হয়েই সুহার সামনে এসে দাঁড়াল। কিছু বলবে এমন ভঙ্গিতে উৎসুক হয়ে তাকাল সুহার দিকে। উল্টোদিকে সুহা তিহানের দিকে মৃদু হেসে চাইল। তারপর স্বচ্ছর উপর জম্মানো রাগটা এক নিমিষেই ঝেড়ে ফেলল তিহানে সফেদ গালের উপর। এক মুহুর্তেই চড়ের আওয়াজ ভাসল সবার কানে। তিহান বেচারা তখনও বুঝেই উঠতে পারেনি তার সাথে কি হয়েছে। হতবিহ্বল দৃষ্টিতে গালে হাত রেখে সুহার দিকে তাকাতেই সুহা বলল,
“ এবার বল তো তিহান ? ঐটুকুই? নাকি বল আছে আমার হাতে?”
তিহানের গাল জ্বলছে। এই সুহা আপু তাকে চড় মেরে মেরেই পড়া শিখায় বরাবর! তাই বলে সবার সামনে চড় বসাবে তার গালে? মুখ কালো করে গালে ওভাবে হাত রেখেই তিহান জবাব দেয়,
” বল আছে আপু!”
সুহা হেসে বলে,
“ গুড! যদিও আমি ভদ্র মেয়ে।হাত উঠাতাম না সবার সামনে কিন্তু এনাদেরকে প্রমাণ দেখাতেই উঠালাম। ডোন্ট মাইন্ড হুহ?”
পরমুহুর্তেই আবার স্বচ্ছদের উদ্দেশ্য করে বলে গেল,
“ আর শুনুন? নেক্সটটাইম মেয়েদের বিরক্ত করবেন না এভাবে। ফল ভালো হবে না বুঝলেন? ”
কথাগুলো বলেই হনহন করে চলে স্বচ্ছদের সামনে দিয়েই চলে গেল সুহা। আবির, সাদাফ, নিধি তখনও বোকার মতো তাকিয়ে আছে। আর তিহান গালে হাত বুলাচ্ছেে।সাদাফ তিহানের কাঁধে হাত রেখেই স্বচ্ছকে বলে উঠল,
“ কি সাংঘাতিক মেয়ে! স্বচ্ছ?কোন ভাবে যদি এই মেয়ে তোর বউ হয়? ও মাই গড!দিনরাতে মেরে মেরে সব হাড্ডি নরম করে ফেলবে তোর! ”
তিহান মিনমিন করে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে বলে,
“ বউ হওয়ার কি আছে! অলরেডি এই সাংঘাতিক মেয়েই স্বচ্ছ ভাইয়ের বউ হয়ে আছে! শুধু স্বচ্ছ ভাইয়াই জানে না।”
স্বচ্ছ যদিও তিহানের মনের কথক পড়তে পারল না। তবে এগিয়ে এসে তিহানের দিকে চেয়ে বলে উঠল,
“ ছাগল কোথাকার!তুই না পুরুষ মানুষ? মেয়েদের হাতে একটা চড় খেয়েই এমন ভেড়ার মতো করছিস যেন তার গালের হাড্ডি বাঁকা হয়ে গেছে। ”
তিহান বোকা বোকা স্বরে উত্তর দিল,
” ভাইয়া, গালের মাংস ঝলছে এখনো আমার! দোষ করলে তুমি আর শাস্তি পেলাম আমি? আপু আমার সাথে অন্যায় করল এটা! সবসময় আমারে এমন মা’রে আপু! ”
নিধি কৈাতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ কেমন আপু তোমার? ”
” আপু আমার টিচার। পড়ায় আমায়। পড়া না পারলেই এভাবে চগ বসায় গালে। ”
তিহানের উত্তর পেয়েই সবাই হেসে উঠে।নিধি হাসতে হাসতে বলে,
“ এই মেয়ে যদি তোর বউ হয় তাহলে মেরে মেরে সোজা বানিয়ে ফেলবে ভাই। এজ এ্যা স্টুডেন্ট হিসেবে ট্রিট করবে!”
কথাটা বলতে বলতেই নিধি হাসল। স্বচ্ছ গম্ভীর গলায় বলল,
“ আমার বউ এত বেয়াদব হবে কি করে মনে হলো তোর? আমার বউ অতি ভদ্র আমি যতটুকু জানি। নেহাৎ এখন সে অভিমানে, অনুরাগে ফুলে আছে বলে একটু ঘুরাচ্ছে। নয়তো বিয়ের আগে একমাস কথা বলে আমি এইটুকু তো বুঝেছিলাম যে সে খুব ভালো মেয়ে। ”
আবির গলা নামিয়ে বলল,
“ শিওর তুই? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই মেয়েই তোর বউ! ”
স্বচ্ছ জবাব দিল,
“ এই মেয়ে আমার বউ হলে আমি যখন কল দিলাম, রিং হলো। ওর হাতে ফোন ছিল তবুও আওয়াজ হলো না। রিং বাঁজল না। তাহলে? ”
সাদাফ সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চিন্ত হলো এমন ভঙ্গিতে বলে উঠল,
“ যাক তাহলে চিন্তামুক্ত যে এই মেয়ে আমাদের ভাবি না! ”
.
সময়টা সন্ধ্যার অনেকটা পরের। আকাশে আঁধার ছেয়ে এসেছে তখন। প্রকৃতিতে শীতল হাওয়া। সুহা বেলকনিতে বসে সে হাওয়া উপভোগ করছিল। গিটারে টুং টাং সুর উঠাচ্ছে।কিন্তু বেলকনিতে আলো জ্বলছে না। স্বচ্ছ সুদূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল সে বেলকনিটায়। যখনই এক মেয়েলি ছায়া বুঝে উঠত পারল তখনই বুকের ভেতর কেমন করল যেন। মনে হলো এটাই সুহা। এটাই সে সুহাসিনী। বোধহয় হাতে গিটারও! স্বচ্ছ দূর থেকেই ছায়া দেখল। কিন্তু সুর ভেসে আসছে না। চায়ের টং দোকানটা থেকে চায়ের কাপ যখন ঠোঁটে ছোঁয়াল ঠিক তখনই তার ফোনে কল এল। স্বচ্ছ বেলকনিটায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই কল তুলল।ওপাশ থেকে কেউ বলল,
“ এখন কি দিনরাত এই বেলকনিতে নজর রেখেই কাঁটাবেন অস্বচ্ছ সাহেব? কিসব পাগলামো এসব?”
স্বচ্ছ চায়ের কাপে চুমুক দেয়। বুঝে নেয় যে বেলকনির মেয়েটাই সুহাসিনী।তাকে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে আলোতে দেখেই হয়তো কল দিয়েছে।স্বচ্ছ কিছু সময় পর উত্তর দিল,
” সারাদিন অনেকগুলো কল করা হয়েছিল তোমায়। রেসপন্স করো নি কেন? ”
“ রেসপন্স করার প্রয়োজন বোধ করিনি। আপনাকে বলেছিলাম যে এসব পাগলামি না করতে। তবুও দাঁড় করিয়ে করিয়ে হাত চ্যাক করছিলেন! ”
স্বচ্ছ ছোটশ্বাস ফেলে উত্তর দেয়,
“ পেয়েছি দুইজন মেয়েকে। তার মধ্যে কেবল একজনের হাত চ্যাক করেছি সুহাসিনী। আরেকজন তো চরম বেয়াদব! তুমি এই মেয়ের সাথে একই বাসায় থাকো কি করে? কি ঝগড়ুটে! ”
সুহার হাসি আসল। তবুও বলল,
“ কেন? কি করেছে সে? ”
“ এই নিয়ে দুইতিনবার ঝগড়া করেছে মেয়েটা৷ ”
সুহা বলে,
“ ঝগড়া করার মতো কাজ করেছিলেন? ”
“ আমি কি ঝগড়া করার জন্য মরিয়া হয়ে আছি নাকি? ”
সুহা চাপা হাসে। শ্বাস টেনে বলে,
“ এসব বাদ দিন এবারে। ”
স্বচ্ছ ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে,
“ কোনসব? ”
“ বউ খোঁজাখুঁজি। ”
“ দেখা দিয়ে দাও তাহলে। ”
“ দেখা পাওয়ার এতোটা আগ্রহ কেন?”
স্বচ্ছ গম্ভীর গলায় বলে,
“ তুমি একটা খেলা খেলছো আর আমি সে খেলার গুঁটি হয়ে যাচ্ছি দিনদিন। তোমার ইচ্ছেমতো ঘুরাচ্ছো আমায়। আমি কিছুই করতে পারছি না। ”
সুহা চুপ থাকে। এতোটা আগ্রহ অথচ সে আগ্রহটাও শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। একটু ভালোবেসে আগ্রহ দেখালে কি হতো?সুহা ভাবে।তারপর অনেকটা সময় পর জড়ানো সুরে বলে,
“ কখনো সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখেছেন স্বচ্ছ? স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্ট অনুভব করেছেন? নিজেকে অবহেলায়, অপমানে এক নির্জীব বস্তুর মতো ভেবেছেন কখনো? ভাবেন নি। আমি ভেবেছি। আমি এখন স্বপ্ন দেখতে পারি না, বিশ্বাস করতে পারি না, ভালোবাসতে পারি না। আমার সব অনুভূতিই পরাজিত আজ!”
কথাগুলো বলেই সুহা কল রাখল।পরপরই বেলকনি থেকে উঠে চলে যায় রুমে। স্বচ্ছ চুপচাপ বসে থেকে তা দেখে। আনমনে ভাবে যে, মেয়েটা কি কাঁদছিল? কেন কাঁদছিল? স্বচ্ছর কেন একটা চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে মেয়েটার জন্য? কিসের কারণে? সে তো মেয়েটার প্রতি দুর্বল নয়। তবুও? কেন? নাকি এসবের জন্য কেবলই সে দায়ী বলে? মেয়েটাকে একটা সময় প্রচুর কষ্ট দিয়ে ফেলেছিল বলে?
#চলবে….
#প্রেমের_সমর
#পর্ব_০৭
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
দিন চার পার হলো। সুহা এই চার দিনে কলে বা ম্যাসেজে স্বচ্ছর সাথে কোন যোগাযোগ করে নি৷ এমনকি বেলকনি থেকে কোন গানের সুর ও ভেসে আসে নি স্বচ্ছর কানে। স্বচ্ছ বুঝে উঠে না, মেয়েটা কি হাওয়া হয়ে গেল? আশ্চর্য! রোজ রোজ রাতে সে বেলকনিতে এসে বসে থাকে। সিগারেটের ধোঁয়া উড়ায়। অপেক্ষায় থাকে নিচ থেকে বোধহয় গিটারের টুংটাং সুর আসবে কিংবা মেয়েলি গলার অস্তিত্ব! অথচ স্বচ্ছকে হতাশ করে দিয়ে কিছুই আসে না। এমনকি একটা সিঙ্গেল ম্যাসেজ অব্দি আসে না সুহার থেকে৷ স্বচ্ছ কতগুলো কল করেছে , কতগুলো ম্যাসেজ দিল! একটা ম্যাসেজও সিন হলো না, একটা কলেরও রেসপন্স এল না৷ মেয়েটা তাকে ইগ্নোর করছে নাকি? স্বচ্ছ বুঝে উঠে না। তবে হা হুতাশ করতে করতে বোনের কাছে যায় অবশেষে। উশখুশ করতে করতে সিয়াকে বলে উঠে,
“ সিয়া? তোর ভাবির কি কিছু টিছু হয়েছে? দুই মাস টানা কলে ম্যাসেজে জ্বালিয়ে এখন হাওয়া হয়ে গেছে যে? বেঁচে আছে তো মেয়েটা?”
স্বচ্ছর কথা শুনে মনে হলো সে অতি সিরিয়াস। কিন্তু সিয়া ভাইকে অতি বাউন্ডুলে ছেলে হিসেবে জানে বলেই কথাগুলো সিরিয়াসলি নিল না। ফোঁড়ন কেঁটে বলল,
“ মরে গেলে তুমি খুশি হবে? ”
স্বচ্ছ নাকোচ স্বরে মুহুর্তেই বলল,
” ছিঃ! মানুষ আমায় মরা বউয়ের জামাই বলবে না? ”
সিয়া খুব ব্যস্ত এমন ভঙ্গিতেই ফের বলল,
“ বললেই বা কি? ”
স্বচ্ছ বোনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। পকেট থেকে দুটো কিটক্যাট চকলেট বের করে বোনের হাতে দিয়ে অনুরোধ স্বরে শুধায়,
“ বোন না, বলে দে না বউ কই আমার? ”
“ জানো তো তুমি, নিচের বাসাতেই থাকে ভাবি। ”
স্বচ্ছ হতাশ শ্বাস ফেলে জানায়,
” সেটা তো জানি, কিন্তু বউ কোনটা আমার? ”
” এটা বললে ভাবি কথা বলবে না আমার সাথে। ”
স্বচ্ছ কপালে ভাজ ফেলে। মুহুর্তেই জিজ্ঞেস করে,
” তুইও এই প্ল্যানের অংশ?”
“ হ্যাঁ।”
স্বচ্ছ বোনের উপর রাগ করেছে এমন ভাব করে বলল,
“ ঠিকাছে, বলতে হবে না। বিয়ের কোন ছবি তোলা হয়নি আমাদের? তাই দেখা। ”
এবারে সিয়া উত্তর দিল না। কিন্তু পেছন থেকে তিহান এসে উত্তর দিল,
” তোলা হয়েছে, তবে তোমায় দেখানোর নিয়ম নেই স্বচ্ছ ভাই। ”
স্বচ্ছ ভ্রুঁ উঁচু করে তাকায় তিহানের দিকে। বলে,
“ তুইও একই দলে নাকি? ”
” অবশ্যই! ”
স্বচ্ছ অবাক, বিস্মিত এমন ভাব ধরে বলে,
“ তোরা কার ভাই বোন? আমার নাকি সুহাসিনীর? ”
সিয়া তিহান দুইজনই বলে উঠল,
” অবশ্যই তোমার। ”
” তাহলে ঐ মেয়ের পক্ষে কেন তোরা? ”
“ কারণ সে আমাদের ভাবি! ”
স্বচ্ছ চোখ কেমন করে তাকায়। যেন এই বিশ্বাসঘাতকতা সে মেনে নেবে না তাই বুঝাল সে দৃষ্টিতে। বিরক্ত হয়ে পা ফেলে নিজের রুমে আসতেই ফোনে কল এল। সাদাফের কল। স্বচ্ছ কল তুলতেই ওপাশ থেকে সাদাফ বলল,
“ দোস্ত?হুবুহু একই দেখতে হাত। তোর বউকে পেয়ে গেছি দোস্ত। ”
স্বচ্ছ এক মুহুর্তে বিশ্বাস করে উঠতে না পেরে বলল,
“ মানে?”
” ঐ বাসারই একটা মেয়ে। আমি আর নিধি বাইরে গিয়েছিলাম না? ফেরার পথে মেয়েটাকে পেলাম।হাত একদম একইরকম দেখতে। তুই নিচে আয় দোস্ত। ”
স্বচ্ছ বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। সত্যিই সুহাসিনীকে পাওয়া গেছে? এত সহজেই? স্বচ্ছ বিছানায় শুঁয়ে থাকা আবিরকে বলেই দ্রুত হাঁটে,
“দোস্ত! বউ পেয়ে গেছি। ভাবি দেখতে হলে তাড়াতাড়ি পিছু আয়।”
আবির অলস চোখে তাকিয়ে চোখে চশমা চাপায়। তারপর আস্তে আস্তে পা বাড়ায়। অপরদিকে স্বচ্ছর পা তখন দ্বিগুণ চলছে। দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতেই চোখে পড়ল একটা মেয়েকে। এই মেয়েটাকে সে সেদিন ঐ বাসার চারজন মেয়ের মাঝে দেখেছিল। স্বচ্ছ সঙ্গে সঙ্গেই তাকায় মেয়েটার হাতের দিকে। হুবুহু একই হাত দেখে মুহুর্তেই বলে,
“ তুমিই সুহাসিনী? ”
মেয়েটা সোজাসুজিই উত্তর দিল,
“ না!”
সাদাফ সঙ্গে সঙ্গেই বলল,
“ তাহলে কে আপনি? ”
” যেই হই! আমায় আটকে রেখেছেন কেন ভাইয়া? আমি কি আ’সামী?”
সাদাফ জোর গলায় বলল,
“ আপনি আমাদের বন্ধুর বউ। ”
স্বচ্ছর পছন্দ হলো না সাদাফের কথাটা। মেয়েটাই যে সুহাসিনী তা তো এখনো প্রমাণিত নয়।তার আগেই বন্ধুর বউ বলার দরকার ছিল? স্বচ্ছ বিরক্ত হয়ে তাকাতেই মেয়েটা উত্তরে বলল,
” আমি তো জীবনে বিয়েটাই করলাম না ভাই। এভাবে বিবাহিত ট্যাগ দিয়ে দিবেন না প্লিজ!তবে আপনার বন্ধু দেখতে কিউট আছেন। ক্রাশ খেলাম। ”
স্বচ্ছকে দেখে ক্রাশ খাওয়া অসম্ভব ব্যাপার নয়। তবে তা নিজ মুখেই এভাবে বেহায়ার মতো বলে ফেলবে তা নিশ্চয় স্বচ্ছর বউ নয়? স্বচ্ছ সাদাফের কান টেনে ধরল। একপাশে নিয়ে এসে বিড়বিগ স্বরে বলল,
“ এই বেহায়া মেয়ে আমার বউ হবে? মনে হলো কি করে তোর? ”
সাদাফ কপাল কুঁচকে বলে,
“একটা শান্তশিষ্ট, সেও তোর বউ হবে না। আরেকটা বেয়াদব, সেও তোর বউ হবে না। আরেকটা বেহায়া, সেও তোর বউ হবে না। আসলে তোর বউটা কে ভাই? ”
নিধি দুই বন্ধুকে ফিসফিস করতে দেখেই মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল,
” এটা তোমার হাত আপু? ”
মেয়েটা সুহার শেখানো বুলিই আওড়াল,
“ না, এটা সুহার হাত। ”
“ তাহলে তোমার হাতের সাথে মিলছে কেন আপু?”
মেয়েটা মোবাইলে হাতের ছবি গুলো দেখতে দেখতেই বলল,
“ বুঝে উঠছি না ঠিক।”
মেয়েটা যখন এই কথাগুলো বলছিল মোবাইলে ছবি দেখতে দেখতে ঠিক তখনই সেখানে উপস্থিত হলো আবির। মেয়েটাকে দেখেই বিস্মিত হয়ে স্বচ্ছকে বলল,
” এই শা’লা! এ কি করে তোর বউ মানে আমার ভাবি হয়?ঐটুক পিচ্চি! ওর আবার বিয়ে হলো কবে?বিয়ে হলে তো আমি জানতামই! ”
মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গেই মাথা তুলে চাইল। যেন বহুদিন পর এই কন্ঠ শুনছে সে। ফ্যালফ্যাল করে কন্ঠের মালিকের দিকে তাকাতেই আবির চোখ গরম করে তাকাল। বলল,
“ ছুটি? তুই এখানে? ”
ছুটি তখনও ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।আবির ভাই?এতদিন পর? স্বপ্ন নয় তো? ছুটি হাতে চিমটি কাঁটে। যখন বুঝতে পারে এটা বাস্তব তখনই খুশিতে চকমক করে উঠে মুখ। বলে উঠে,
“ আবির ভাইয়া? আপনি না স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ ফুরুৎ হয়ে গেলেন আমার যন্ত্রনায়? তারপর তো আর যোগাযোগ করেননি। একদম হাওয়া! কত খুঁজেছি আপনাকে।”
“ তোর যন্ত্রনায় না। স্কলারশিপ পেয়েছিলাম তাই মূলত দেশ ছেড়েছিলাম। তুই? বাসা ছেড়ে এখানে থাকিস নাকি? ”
ছুটি হেসে বলে,
“ কি করব বলুন! বাসায় থেকে তো আর আপনার দেখা মিলে না এখন। আর বাসা থেকে ভার্সিটিও দূরে হয়। তাই এখানে থাকা।”
আবির ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠে,
“ এক মিনিট,তুই স্বচ্ছর বউয়ের ফ্রেন্ড নয়তো?মানে স্বচ্ছর শালিকা?”
” না, না! আপনার বউ হবো তো ভবিষ্যৎ এ !মানে উনার ভাবি হবো।”
সাদাফ বিড়বিড়িয়ে বলে,
“ কি ফ্লার্টবাজ মেয়ে রে বাবাহ! ”
স্বচ্ছ হাসে। আবিরের মুখটা দেখার মতো লাগছে।এগিয়ে এসে বলে,
” আচ্ছা বলুন,সুহাসিনীকে চিনেন আপনি?”
“ চিনব না কেন? অবশ্যই চিনি। ”
সাদাফ বলল,
” আমাদেরকে চেনাতে পারবেন? ”
ছুটি আবিরকে ইঙ্গিত করে বলে উঠে,
” আপনার বন্ধুকে দিবেন? তাহলে চিনিয়ে দিব! ”
সাদাফ সঙ্গে সঙ্গেই আবিরকে ঠেলে দিয়ে বলে,
” দিয়ে দিলাম।”
“ উহ, এভাবে দিলে হয় না। আপনার বন্ধু আমার পেছনে পেছনে ঘুরবে, ইম্প্রেস করবে তারপর বিয়ে করবে তারপর সংসার…! ”
আবির বাকি কথা না বলতে দিয়েই বিরক্ত স্বরে বলে,
“ থাক , তোকে আর চিনিয়ে দিতে হবে না। বাসায় যা এখন বিচ্ছু। ”
ছুটি ঠোঁট উল্টাল। পরমুহুর্তেই ওদের সামনে দিয়ে চলে গেল। সাদাফ আর স্বচ্ছ তখন আবিরের ঘাড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। সন্দেহী দৃষ্টি। সাদাফ বলল,
“ দোস্ত কাহিনী কি? কবে থেকে? মেয়েটা তোর উপর ফিদা! তুই চাইলে এই মেয়েরে দিয়ে স্বচ্ছর বউ এর খোঁজটা বের করে নিতে পারিস। ”
আবির মানল না। বলল,
“ স্বচ্ছর বউয়ের খোঁজ নিতে ওর দুর্বলতাটা ব্যবহার করব? ”
” সমস্যা কি? সিরিয়াস প্রেম তো আর করছিস না। ”
আবির নাকোচ করে বলল,
” প্রথমত আমি স্বচ্ছ না। দ্বিতীয়ত ও একটা বোকা মেয়ে। বরাবরই!পরে সামলাতে পারবে না। ”
সাদাফ বিরক্ত হয়ে বলে,
” আরেহ দুদিনে কি গভীর প্রেম হয়ে যাবে পাগল! আমরা ঠিক পরে বুঝিয়ে দিব ঐ মেয়েরে। ”
.
সুহা গুণে গুণে চারদিন কথা বলে নি স্বচ্ছর সাথে। কারণ আছে। সেদিন স্বচ্ছ তাকে একটা মেয়ের হাত ধরে রাখা ছবি দিয়েছে। ঠিক যেভাবে সে এতকাল ছবি দিয়ে জ্বালিয়েছে স্বচ্ছকে ঠিক সেরকমই করতে চাইল যেন স্বচ্ছ। পরপর বেশ কয়েকটা ছবিও পাঠাল কপোত কপোতি টাইপ। ছবিগুলো স্বচ্ছর আর নিধির। সুন্দর! কাপল কাপল লাগছিল। স্বচ্ছ আরোও একটা ছবি দিল যাতে স্বচ্ছর হাতে একটা রিং আর নিধির হাতে একটা রিং জ্বলজ্বল করছিল। সাথে সে ছবিটায় লিখল,
“ তোমার ধারণাই ঠিক সুহাসিনী। আমরা এইংগেইজড!তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর তোমায় আমার পিছনে ঘুরিয়ে মিশন কম্প্লিট করেই আমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করব। ”
সুহা সে ম্যাসেজটা দেখার পরও বেশ দাম্ভিকতার সাথে রিপ্লাই করেছে যাতে স্বচ্ছ না বুঝে যে সে এসব দেখে কষ্ট পেয়েছেে।স্বচ্ছও ভেবেছিল সব নরমাল। অথচ পরদিন থেকেই যে সুহা তাকে ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিবে সে জানত না৷ হু, সুহা সত্যিই স্বচ্ছকে ভুলে যাওয়র সিদ্ধান্ত নিল মনে মনে। সুহার বাবা নেই।মা আর দাদা-দাদী আছে। দাদা দাদী সেকেলে মানুষ। তিনজনই সমানে এই চারবছরে তাকে উপদেশ দিয়েছে এই সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসতে। পারিবারিক আলোচনা করে ডিভোর্স দিতে। সুহা বহুবার বুঝিয়েছে সে স্বচ্ছকে ভালোবাসে। তবুও পরিবার তো! মেয়ের ভালোর কথা ভেবেই পারিবারিক ভাবে আলোচনা করেছে ডিভোর্সের বিষয়ে। শেষমেষ তো একটা ছেলেও দেখেছিল তার দাদা দাদী। যার দরুণ সুহা না পেরে স্বচ্ছর সাথে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নিল। ইচ্ছে করেই স্বচ্ছকে ফেরানোর জন্য ছুটির হাতের ছবি পাঠাত অন্য একটা ছেলের সাথে। সুহা ভেবেছিল স্বচ্ছ বুঝি শুধরে যাবে।অথচ স্বচ্ছ শোধরানোর নয়।আজীবন সে ছন্নছাড়াই থাকবে। সুহা পরিবারকে বহু বুঝানো সত্ত্বেও পরিবার এখন তাকে শুধায়,
“ ছেলে দেশে ফিরেছে। তবুও সংসার নিয়ে সিরিয়াস সে? তোমায় নিয়ে সিরিয়াস? তবুও তুমি ঐ ছেলের জন্যই পড়ে থাকবে সুহা?”
সুহা নিজেকেই একই প্রশ্ন গুলো করে। এত এত হাসি তামাশার ভীড়ে এটা তো সত্যিই যে স্বচ্ছ তাকে নিয়ে সিরিয়াস না। উল্টে অন্য একটা মেয়র সাথে সম্পর্কে আছে। সুহা হতাশার শ্বাস ফেলে। নিচে ছুটিকে এভাবে আটকে রেখেছিল শুনে স্বচ্ছকে কল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সঙ্গে সঙ্গেই বেলকনি দিয়ে চোখে পড়ে নিচে হাঁটতে থাকা নিধি আর স্বচ্ছকে।নিধি সুন্দর! স্বচ্ছর পাশপাশি হাঁটলে বেশ সুন্দর মানায়।তবে এই সুন্দর দৃশ্যটাও সুহার কাছে বিশ্রী লাগল। রাগ হলো তার। গা জ্বলছে যেন। কেন এমন হচ্ছে জানে না। তবে রাগে গিজগিজ করতে করতেই নিজের রুমে গেল সে। স্বচ্ছকে কল দিল।প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কল রিসিভড হলো।।টানটান স্বরে বলল,
” আবারও হাত চ্যাক করছিলেন বন্ধুরা মিলে? বউ খুঁজতে বেহায়ার মতো বন্ধুদের লে’লিয়ে দিয়েছেন? লজ্জা করে না? ”
স্বচ্ছ দুদিন পর বউয়ের ফোন পেয়ে পাল্টা রাগ নিয়ে বলে,
” দুদিনে এতগুলো কল, এতগুলো ম্যাসেজ চোখে পড়ে নি তোমার? ইগ্নোর করছিলে আমায়?কোন সাহসে? ”
সুহা তাচ্ছিল্য নিয়ে বলল,
” আমি ইগ্নোর করলে আপনার কিছু যাওয়া আসার কথা নয় স্বচ্ছ। আগে বলুন, যে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিশ্চায়তা নেই সে সম্পর্কে জড়িত মেয়েটাকে খোঁজার এত প্রয়োজন কি? আপনি তো আর আমার সঙ্গে সংসার করবেন না। তাই না? তাহলে হাতের ছবি নিয়ে বেহায়ার মতো হাত দেখছেন কেন মেয়েদের? ”
স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কেন খোঁজ করছে মেয়েটার? কেন? এর উত্তর বোধ হয় নিজের কাছেও নেই। তবে ভেতরে ভেতরে ক্রমশ মেয়েটাকে দেখার আগ্রহ প্রবল হচ্ছে। আজকাল মেয়েটাকে কল্পনায় ভাবার চেষ্টাও করছে সে। এমনিক মেয়েটা ইগ্নোর করলে মেনে নিতে পারছে না। এই যে দুটো দিন এত চাওয়া সত্ত্বেও সে যোগাযোগ করতে পারেনি এতে তার কেমন কেমন অস্থির লাগছিল যেন। অসহায় লাগছিল। বলল,
“ জানি না,তবে খুব ভুল না হলে আমি এটুকু নিশ্চিত হাত গুলো ঐ ছুটি মেয়েটারই।তুমি আমায় অন্য মেয়ের হাতের ছবি দিয়ে এসেছো এতকাল? ”
সুহা বলল,
“ তো?”
“ তুমি সবকিছুই একটা জাল দিয়ে আবদ্ধ করে রেখেছো সুহাসিনী। ”
“ রাখলাম। ”
স্বচ্ছ বলল,
” উচিত নয় এটা। ”
সুহা ছোটশ্বাস ফেলে বলে,
”অনুচিত লাগছে না আমার। আমি নতুন কিছু ভেবেছি স্বচ্ছ। মুক্তি দিন। এসব খেলা খেলা আর ভাল্লাগছে না। ”
” মুক্তি দেওয়ার জন্য তো খুুঁজছি না তোমায়।”
সুহক হেসে উঠে। বলে,
” ঘর বাঁধার জন্যও তো খুঁজছেন না। বিজয়ী হওয়ার জন্য খুঁজছেন তাই তো?আসলে আপনিই বিজয়ী। আপনার প্রতি আমার এখনো অনুভূতি আছে। এবার খুশি তো?নিজেকে বিজয়ী ভেবে নিশ্চয় আনন্দ হচ্ছে?যান, এবার একটু খুশি হয়ে পুরোপুরি বিচ্ছেদের কথাটা নিয়ে ভাবুন।প্লিজ! ”
স্বচ্ছ বোকার মতো বলল,
“ মানে? ”
সুহা এবারে চুপ থাকে। ক্লান্ত স্বরে বলে,
“ অলওয়েজ এটা শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে যাচ্ছে যে আপনি আমায় ভালোবাসেন না স্বচ্ছ। ভালোবেসে আমি হেরে গেছি আর আপনি আমাকে পাগল বানিয়ে জিতে গেছেন। সবাই জানে এটা। এমনকি এখনো ইগোর খেলায় নেমেছেন। আমাকে সবাই বলছে আপনাকে ছেড়ে দিতে। এমনকি আপনার বাবা মাও! সবার কাছে এই একটা কথা শুনতে শুনতে আমি এখন ক্লান্ত অনুভব করছি স্বচ্ছ। প্লিজ! সম্পর্কটা পুরোপুরি শেষ করুন।আমায় মুক্তি দিন। ”
স্বচ্ছর রাগ জম্মাল নিজের মা বাবার প্রতি। নিজের ছেলের সংসার নিজেরাই ভাঙ্গতে চাইছে?স্বচ্ছ মনে মনে রেগে গিয়ে মা বাবাকে দোষারোপ করল। বলল,
“ দিব না। তোমার বোধহয় মন খারাপ সুহাসিনী। কল রাখো। ”
“ আমি সত্যিই বলছি স্বচ্ছ, ইতি টানুন এই সম্পর্কের।আর শুনুন?”
” বলো…”
সুহা বলল,
“ আপনার জন্য কেনা একটা জিনিস আমার কাছে চারবছর হলো পড়ে আছে। দিয়ে দিতে চাইছি তা আপনাকে। ”
স্বচ্ছ অন্যমনস্ক স্বরে বলে,
“ হু?”
সুহা ঠোঁট ভিজিয়ে উত্তর দেয়,
“ গিফ্ট ছিল ওটা।চার বছর আগের।এখনও সচল আছে। আপনি চলে যাওয়াতে আর দেওয়া হয়নি আপনাকে। নিবেন?”
” কেন নয়?”
সুহা উত্তর দেয়,
“ কাল সকালে দিয়ে দিব।”
স্বচ্ছ খুশি হয় একটু যেন। বিয়ের চার বছরে না দেখা বউয়ের থেকে গিফ্ট পাবে? নিশ্চয় তার বিয়ে করা বউ স্বয়ং নিজে এসেই গিফ্টটা দিয়ে যাবে? স্বচ্ছ মনে মনে উচ্ছাসিত হয় এই ভেবে যে এবার হয়ো সুহাসিনী নিজে তার সামনে দেখা দিবে!
#চলবে….